এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বঙ্গবন্ধু ও হিন্দুমানস সম্পর্কে তার মূল্যয়ন: তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে

    রাজু
    অন্যান্য | ২৬ নভেম্বর ২০১৬ | ৫১৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রাজু | 173.172.169.34 | ২৬ নভেম্বর ২০১৬ ১৮:৪৫723652
  • আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্যে সরকারী ছুটি পালন করা হয়। আগস্ট মাসের এক তারিখ থেকেই আওয়ামী সংগঠন গুলি শোক দিবস পালনের জন্য নানা কর্মসূচী গ্রহণ করে। অবস্থা দেখে বংগবন্ধু শুধুই আওয়ামী ঘরাণার লোকদের নিজস্ব নেতা। এমন অবস্থা কেন সৃস্টি হলো তা ভাবলে আমার মন দু:খ ও বেদনায় কাতর হয়ে পড়ে। কেউ বা সবাই মানুক বা না মানুক আম মনে করি বংগবন্ধু এ দেশের একজন মহান নেতা। তিনি জীবিত থাকতে চারিদিকে এতো বিতর্ক ও দ্বিমত ছিলনা। তাঁর রাজনীতি ও শাসন আমলের আমি একজন বড় সমালোচক বা ক্রিটিক। তাঁর সাথে আমার খুবই সুসম্পর্ক ছিল। তিনি সত্যিই একজন পিতৃতূল্য মুরুব্বী মানুষ ছিলেন। অপরিসীম আবেগ ও ভালবাসা ছিল তাঁর হৃদয়ে। তিনি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই হৃদয় দ্বারা পরিচালিত হতেন, বুদ্ধি বা মাথা দিয়ে নয়। তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লেই বুঝা যাবে তিনি স্কুল জীবনেই কেমন আবেগী মানুষ ছিলেন। সারা জীবন সাধারন মানুষের জন্যে লড়াই করেছেন। যে কোন কাজেই তিনি সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। হাতে পয়সা নেই তবুও মনের জোরে কাজ এগিয়ে নিতেন।আমার জীবনে তাঁর অনেক স্মৃতি আছে। সময় সুযোগ মতো একদিন সেই স্মৃতির কথা বলবো। তাঁর স্মৃতিকথা পড়লেই জানা যাবে তিনি তাঁর সময়ের সিনিয়র নেতাদের মুরুব্বী মানতেন এবং সম্মান করতেন। এখন তাঁর ভক্তরা তাঁকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসে ,কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া আদব কায়দার চর্চা করেনা। বংগবন্ধু মনে প্রাণে ষোলয়ানা মুসলমান ছিলেন। তাঁর স্মৃতিকথা পড়লেই তা সবার কাছে স্পস্ট হয়ে যাবে। বাল্যকালেই তিনি মুসলিম সেবা সমিতির সম্পাদক ছিলেন। সমিতিটি করেছিলেন তাঁর শিক্ষক কাজী আবদুল হামিদ। এই সমিতি বাড়ি বাড়ি মুস্টি চাল সংগ্রহ করতো।এই চাল বিক্রি করে গরীব মুসলমান ছাত্রদের পড়ার খরচ চালানো হতো। বংগবন্ধু নিজেই লিখেছেন, যারা মুস্টি চাল দিতোনা তাদের বাড়িতে রাতের বেলা দল বেঁধে ইট মারতেন। এ ধরনের কাজের জন্যে তাঁর বাবা তাঁকে শাস্তি দিতেন।

    আত্মজীবনীর এক জায়গায় বংগবন্ধু লিখেছেন, ‘ আমি ভীষণ একগুঁয়ে ছিলাম।আমার দলের ছেলেদের কেউ কিছু বললে আর রক্ষা ছিলনা।মারপিট করতাম।আমার আব্বা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন।১৯৩৮ সালে ১৮ বছর বয়সে বংগবন্ধু সরাসরি রাজনীতিতে হাতেখড়ি নেন। নানা কারণে তিনি একটু বয়স পর্যন্ত স্কুলে পড়েছেন। এ সময়ে শেরে বাংলা বংগদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি শ্রমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে নিয়ে গোপাল গঞ্জে আসার কর্মসূচী নিয়েছিলেন। এ উপলক্ষ্যে গোপালগঞ্জে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। টরুণ শেখ মুজিব স্বেচ্ছা সেবক বাহিনীর দায়িত্ব পেলেন। হিন্দু ছাত্ররা কংগ্রেসের নির্দেশে স্বেচ্ছা সেবক বাহিনীতে থাকলোনা। হিন্দুরা এবং কংগ্রেস নেতারা এই সফরের বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সময়ে গোপালগঞ্জে আশি ভাগ ব্যবসায়ী চিলেন হিন্দু। বাধ্য হয়েই তরুণ শেখ মুজিব শুধু মুসলমান ছাত্রদের নিয়ে স্বেচ্ছ সেবক বাহিনী গঠণ করলেন। এই সময়েই শেখ সাহেবের সাথে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের পরিচয় হয়। তিনি তরুণ শেখ মুজিবকে কাছে ডেকে নিয়ে আদর করলেন। বললেন, তোমাদের এখানে মুসলীম লীগ করা হয় নাই।আমি বললেম কোন প্রতিষ্ঠান নেই। এমন কি মুসলীম ছাত্রলীগও নেই। সোহরাওয়ার্দী সাহেব আর কিছি না বলে শেখ মুজিবের নাম ঠিকানা নোট করে নিলেন। কিছুদিন পরে শেখ সাহেব সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কাছ থেকে একটি চিঠি পেলেন। চিঠিতে তিনি ধন্যবাদ জানালেন এবং বললেন কোলকাতায় গেলে যেন তাঁর সাথে দেখা করি। এ ভাবেই শেখ সাহেবের সাথে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের সম্পর্ক তৈরি হয়। গোপালগঞ্জ শহরে হিন্দু মুসলমানের ভিতর খিটমিট লেগেই থাকতো। এমনি এক ঘটনায় শেখ সাহেব ১৮ বছর বয়সে প্রথম মারপিটের আসামী হয়ে জেলে যান।হিন্দু এসডিও বা মহকুমা হাকিম থাকার কারণে জামিন হয়নি। ৪১ সালে ২১ বছর বয়সে শেখ সাহেব ম্যাট্রিক পাশ করেন। পরীক্ষার সময় খুবই অসুস্থ ছিলেন। তাই পরিক্ষার ফলাফল তেমন ভাল হয়নি। ৪২ সাল থেকে তিনি পুরোপুরি রাজনীতিতে নেমে যান। স্মৃতিকথায় এক জায়গায় শেখ সাহেব উল্লেখ করেছেন যে,প্রখ্যাত ছাত্রনেতা ওয়াসেক সাহেবের বিরুদ্ধে তিনি চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরী সাহেবকে সমর্থন করেন। অন্য এক জায়গায় শেখ সাহেব লিখেছেন, এই সময়ে ইসলামিয়া কলেজে আমি খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করি। অফিসিয়াল ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে তাকে জিতিয়ে আনেন। ১৯৪৩ সালে শেখ সাহেব প্রথমবারের মতো প্রাদেশিক মুসলীম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। সেবারই আবুল হাসেম সাহেব মুসলীম লীগের সম্পাদক নির্বাচিত হন। সোহরাওয়ার্দী সাহেব আবুল হাসেম সাহেবকে সমর্থন করেছিলেন।খাজা নাজিমুদ্দিন সাহেব সমর্থন করেছিলেন খুলনার আবুল কাশেম সাহেবকে। এ সময় থেকেই মুসলীম লীগ দুটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পাকিস্তান হওয়ার পরেও এই বিভক্তিতে আর জোড়া লাগেনি। ওই বিভক্ত মুসলীম লীগই শেষ পর্যন্ত আওয়ামী মুসলীম লীগে পরিণত হয়। আওয়ামী মুসলীম লীগের নেতৃত্বেই ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। অবিভক্ত বাংলার তিনজন সেরা নেতা যুক্তফ্রন্টের হাল ধরেন। এই তিনজন হলেন শেরে বাংলা, মাওলানা ভাসানী ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ফলে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুসলীম লীগের কবর হয়ে যায়। অবাক ও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো মুসলীম লীগ নেতরা জনগণের মনোভাব অনুধাবন করতে পারেননি। মুসলীম লীগের মাঠ কর্মীরাই জেলায় জেলায় আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠণ করেছিল।হাজার হাজার মুসলীম লীগ কর্মী কোলকাতা থেকে ঢাকায় এসে পার্টির কাছে কোন পাত্তা পেলেননা। কেন্দ্রীয় মুসলীম লীগ কর্মী ও সংগঠণ বিহীন মুসলীম লীগ নেতাদের সমর্থন করতে লাগলেন। এক পর্যায়ে ৫৪র নির্বাচিত সরকারকে কেন্দ্রের মুসলীম লীগ সরকার বাতিল করে দিল।৯২ক ধারা জারী করে কেন্দ্রের শাসন জারী করলো কেন্দ্রীয় সরকার। শুরু হলো ষড়যন্ত্রের রাজনীতি।

    বংগবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মনে প্রাণে, চিন্তা চেতনায় ছিলেন বাংগালী মুসলমানের একজন নিবেদিত নেতা। তাঁর স্মৃতিকথার এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, সিপাহী বিদ্রোহ এবং ওহাবী আন্দোলনের(ফরায়েজী আন্দোলন) ইতিহাস আমার জানা ছিল। কেমন করে ব্রিটিশ রাজ মুসলমানদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল, কি করে রাতারাতি মুসলমানদের সর্বস্বান্ত করে হিন্দুদের সাহায্য করেছিল, মুসলমানরা ব্যবসা বাণিজ্য, জমিদারি, সিপাহীর চাকরি থেকে কিভাবে বিতাড়িত হল- মুসলমানদের স্থান হিন্দুদের দ্বারা পূরণ করতে শুরু করেছিল ইংরেজরা কেন? মুসলমানরা কিছুদিন পূর্বেও দেশ আসন করেছে, তাই তারা ইংরেজকে গ্রহণ করতে পারে নাই। সুযোগ পেলেই বিদ্রোহ করত। ওহাবি আন্দোলন কি করে শুরু করেছিল হাজার হাজার বাংগালী মুজাহিদরা? বাংলাদেশ থেকে সমস্ত ভারতবর্ষ পায়ে হেঁটে সীমান্ত প্রদেশে যেয়ে জেহাদে শরিক হয়েছিল। তিতুমীরের জেহাদ, হাজী শরিয়তুল্লাহর ফারায়েজি আন্দোলন সম্বন্ধে আলোচনা করেই আমি পাকিস্তান আন্দোলনের ইতিহাস বলতাম। ভীষণভাবে হিন্দু বেনিয়া ও জমিদারদের আক্রমন করতাম। এর কারণও যথেস্ট ছিল। একসাথে লেখাপড়া করতাম, একসাথে বল খেলতাম, একসাথে বেড়াতাম, বন্ধুত্ব ছিল হিন্দুদের অনেকের সাথে। কিন্তু আমি যখন কোনো হিন্দু বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যেতাম, আমাকে অনেক সময়তাদের ঘরের মধ্যে নিতে সাহস করত না আমার সহপাঠিরা।

    একদিনের একটা ঘটনা আমার মনে দাগ কেটে দিয়েছিল, আজও সেটা ভুলি নাই। আমার এক বন্ধু ছিল ননী কুমার দাস। একসাথে পড়তাম, কাছাকাছি বাসা ছিল, দিনভরই আমাদের বাসায় কাটাত এবং গোপনে আমার সাথে খেত। ও ওর কাকার বাসায় থাকত। একদিন ওদের বাড়িতে যাই।ও আমাকে ওদের থাকার ঘরে নিয়ে বসায়। ওর কাকীমাও আমাকে খুব ভালবাসত। আমি চলে আসার কিছু সময় পরে ননী কাঁদো কাঁদো অবস্থায় আমার বাসায় এসে হাজির। আমি বললাম ননী কি হয়েছে? ননী আমাকে বললো , তুই আর আমাদের বাসায় যাস না। কারণ, তুই চলে আসার পর কাকীমা আমাকে খুব বকেছে তোকে ঘরে আনার জন্যে এবং সমস্ত ঘর আবার পরিস্কার করেছে পানি দিয়ে ও আমাকেও ঘর ধুতে বাধ্য করেছে। আমি যাবনা, তুই আসিস। এই ধরনের ব্যবহারের জন্য জাত ক্রোধ সৃষ্টি বাঙালি মুসলমান যুবক ও ছাত্রদের মধ্যে। শহরে এসেই এই ব্যবহার দেখেছি। হিন্দু মহাজন ও জমিদারদের অত্যাচারেও বাংলার মুসলমানরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। তাই মুসলমানরা ইংরেজদের সাথে অসহযোগ করেছিল। তাদের ভাষা শিখবেনা , তাদের চাকরি নেবেনা, এই সকল করেই মুসলমানরা পিছিয়ে পড়েছিল।আর হিন্দুরা ইংরেজী শিক্ষা গ্রহণ করে ইংরেজকে তোষামোদ করে অনেকটা উন্নতির দিকে অগ্রসর হয়েছিল।পরে হিন্দুরাও ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিল।

    জাতীয় শোক দিবস প্রসংগে কথা বলতে গিয়ে বংগবন্ধুর আত্মজীবনী থেকে বেশ কিছু কথা উল্লেখ করলাম। এর মাধ্যমে তাঁর ভক্ত ও পাঠক সমাজ বুঝতে পারবেন কি প্রেক্ষিত ও পটভূমিতে তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন। ৩৮ সাল থেকে শুরু করে ৪৭ সাল নাগাদ তিনি পাকিস্তান ও মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্যে সংগ্রাম করেছেন। ৪৭ এর পরেও তিনি মুলীম লীগের বিরোধিতা করতে চাননি। মুসলীম লীগ নেতারাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের মুসলীম লীগ নেতা ও কর্মীদের ৮০ ভাগই ছিলেন মধ্যবিত্ত সমাজের। দেশের সাধারন মানুষের সাথে তাঁদের সুসম্পর্ক ছিল। মুসলীম লীগের কোটারী ভাংতে না পেরেই তাঁরা আওয়ামী মুসলীম লীগের জন্ম দিয়েছিলেন। ৪৯ সালের ডিসেম্বরের আগেই শেখ সাহেব তিন বার জেলে গেলেন। তাঁর আত্মজীবনীতে তাই তিনি দু:খ করে লিখেছেন, যে পাকিস্তানের জন্যে জান বাজি রেখে লড়াই করেছেন সেই পাকিস্তানেই তাঁকে বার জেলে যেতে হচ্ছে।পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নবাবজাদা লিয়াকত আলী খান সাহেবতো বলেই বসলেন যারা আওয়ামী লীগ করবে তাদের মাথা গুড়িয়ে দিবেন। আবার বললেন, যারা আওয়ামী লীগ করে তারা ভারতের লেলিয়ে দেয়া কুত্তা।

    জাতীয় শোক দিবসে দেখছি, বংগবন্ধু শুধু আওয়ামী লীগের নেতা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে সরকারও জাতীয় শোক দিবস পালন করছে।আোয়ামী লীগ তাঁকে জাতীয় নেতার মর্যাদা থেকে নামিয়ে একটা দডীয় নেতায় পরিণত করেছে। এমন ভাগ্য তাঁর হওয়ার কথা ছিলনা। তিনিতো সারা জীবন সাধারন মানুষের জন্যে রাজনীতি করেছেন। পাকিস্তান আমলের দীর্ঘ ২৩ বছরই তিনি নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। বাংদেশ হওয়ার পর তিনি আর বেশীদিন বাঁচেননি।তাঁর মৃত্যুও ছিল বড়ই মর্মান্তিক। তাঁর লাশ নিজ বাসভবনের সিঁড়িতেই পড়েছিল। সাদামাটা সাধারন ভাবে তাঁর দাফন হয়েছে। তাঁরই সহকর্মী ও বন্ধু খোন্দকার মোশতাক তখন ক্ষমতায়। কিন্তূ রাজনৈতিক পরিস্থিতি তখন এমনই ছিল যে, তাঁকে যথাযোগ্য মর্যাদায় দাফন করা হয়নি। এ সময় তাঁর কর্মী ও ভক্তদের একাংশ ক্ষমতায় ছিল। বেশীর ভাগ নেতা কর্মীরা পালিয়ে গেছে। বন্ধুরা সবাই তখন তাঁর নিন্দা করতে লেগে গেল। এমন কি বিদেশে অবস্থানরত তাঁর কন্যারাও ভয়ে দেশে ফিরেননি। আশ্রয় নিলেন ভারতে, যা ভারত চেয়েছিল। এত বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ বা বাকশাল মনে হলো হাওয়ায় উড়ে গেছে। ভক্তদের কেউ একটি মিছিলও বের করেনি। আওয়ামী লীগের মতো একটি পার্টির কাছ থেকে যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। কেন যে আওয়ামী লীগ ও শেখ সাহেবের ভক্তরা সামান্যতম প্রতিবাদ করতে পারেনি তা আজও স্পস্ট নয়।জীবিত কালে সবাই তাঁকে গায়ে পড়ে বাপ বাপ করে জিহবা ক্ষয় করে ফেলেছিল। এমন কি বংগবন্ধুর কন্যারাও কেউ দেশে ফিরে আসেননি। হয়ত অনেকেই বলবেন, আসলে হয়ত তাঁদেরও মেরে ফেলতো। তেমন কিছু ঘটলে বংগবন্ধুর কন্যা কিভাবে দুবার প্রধানমন্ত্রী হতেন। এ যুক্তিও একেবারে ফেলে দেয়ার মতো নয়। একজন নামজাদা নেতা মোশতাক সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে দেশের বাইরে গিয়ে বলেছেন, দেশ ফোরাউনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। এ ধরনের আরও বহু ঘটনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বংগবন্ধুর কয়েকজন ভক্ত অবশ্য জীবন বাজি রেখে প্রতিবাদ করার উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। দুয়েক জন প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। ভারত সরকার ওইসব ভক্তদের তেমন জোরালো কোন সমর্থন দেয়নি। দিল্লী থেকে বলা হলো, ভারত সরকার ঢাকার সাথে সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখতে আগ্রহী।

    বংগবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে দেখা যাবে তিনি রাজনীতি শুরু করেছিলেন মুসলমানদের মুক্তির জন্যে। তিনি বিশ্বাস করতেন দেশবিভাগ না হলে মুসলমানদের মুক্তি আসবেনা। মূলত: কোলকাতাতেই তাঁর রাজনীতির হাতেখডি। সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে খুব বেশী মানতেন এবং তাঁর নেতৃত্বেই চলতেন। ছাত্র রাজনীতিতে তাঁর সিনিয়র ও নেতা ছিলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী, শাহ আজিজ, নুরুদ্দিন, মাহমুদ নুরুল হুদা, ওয়াসেক ও আনোয়ার সাহেব। সোহরাওয়ার্দী সাহেবের পরে আবুল হাসেম সাহেবকে নেতা মানতেন। হাসেম সাহেব তখন বেংগল মুসলীম লীগের সাধারন সম্পাদক। কোলকাতা ছেড়ে ঢাকায় এসেও শেখ সাহেব ১৫০ মুগলটুলীতে মুসলীম লীগের অফিসে উঠেছিলেন। সেখানেই থাকতেন। ঢাকায় এসে তিনি নেতা হিসাবে পেলেন মাওলানা ভাসানীকে। ভাসানী সাহেব ছিলেন আসাম মুসলীম লীগের সভাপতি।কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে এসে দলীয় কোটারী ও ষড়যন্ত্রের কারণে দলের ভিতর কোথাও তাঁর স্থান হলোনা ।তিনি ছিলে মহা সংগঠক ব্যক্তিত্ব। পাকিস্তান আন্দোলনের কর্মীদের নিয়ে তাঁর সাথে কাজ করতে এগিয়ে এলেন শেখ সাহেব। মাওলানা সাহেব নিজেও বলেছিলেন, শেখ মুজিব ছিলেন দলের সেক্রেটারী হিসাবে সর্ব শ্রেষ্ঠ। এভাবেই একদিন ১৯৪৯ সালের জুন মাসের ২৩ তারিখে গঠিত হলো আওয়ামী মুসলীম লীগ। মাওলানা সাহেব সভাপতি, সামশুল হক সাহেব সাধারন সম্পাদক আর শেখ সাহেব ও খোন্দকার মোশতাক যুগ্ম সচিব। মুসলীম লীগের বিরুদ্ধে নতুন দল সংগঠিত হতে লাগলো। ৫৪ সালের নির্বা্চনের আগে শেরে বাংলা ও সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে নিয়ে গঠিত হলো যুক্তফ্রন্ট। সময়ের এ দীর্ঘ পরিক্রমায় শেখ সাহেব কখনই ইসলাম বা মুসলমানিত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নেননি। পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এসে ১০ই জানুয়ারী তিনি বলেছিলেন, আমি বাংগালী , আমি মুসলমান। তিনিই পাকিস্তান আমলের ইসলামিক একাডেমীকে উচ্চ মর্যাদা ও ক্ষমতা দিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন করেছিলেন। শেখ সাহেবের এক সময়ের রাজনীতির গুরু আবুল হাশিম সাহেবকে করেছিলেন পারিচালক।৭০ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ওয়াদা ছিল কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোন আইন করা হবেনা। ভারতের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি ৭৪ সালে পাকিস্তান গিয়েছিলেন ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিতে। তখনও তিনি বলেছিলেন, তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলীম দেশের নেতা। সোজা কথায় বলতে গেলে বলতে হবে তিনি কখনই নিজেকে শুধুমাত্র বাংগালী ভাবেননি। বরং বৃহত্তর মুসলমান ক্বওমের অংশ হিসাবে ভেবেছেন। পাকিস্তান আন্দোলনের সময়ও তিনি জানতেন বাংগালী মুসলমানেরা ভারতের অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত। স্বাধীনতা বা মুক্তি তাদের জন্যে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন। হিন্দু রাজা মহারাজা ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের বেঈমানির কারণেই ইংরেজরা বাংলা দখল করতে পেরেছিল। মুসলমানদের প্রতি হিন্দুদের দৃস্টিভংগী কেমন ছিল তা বংগবন্ধুর জীবনী পড়লেই বুঝা যায়।

    (সংগৃহীত। প্রবন্ধ লেখক - আমার লিখালিখির গাইড এবং উৎসাহদাতা প্রিয় বড়ভাই দস্তার রাজদরবার)
  • farabir baba dharabi | 174.100.41.2 | ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ১৫:০১723653
  • এ তো তনিম আহমেদ রাজু বলিয়া বোধ হইতাছে। কি খবর মামু? ঢপ মারার রোগ সারেনি এখনো?
  • দেব | 135.22.193.148 | ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ১৯:০২723654
  • ঢপ কিছু মারেননি। লেখাটা একতরফা কিন্তু ঐতিহাসিক ভাবে ভুল কিছু নয়। একটা সাইড গপ্পো মেরেই যাবে আর অন্যপক্ষ শুধুই শুনবে সে কি আর হয়?
  • Kalotaka | 130.59.36.83 | ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ১৯:৫৭723655
  • Tobe ar ki. Eke mathay tule nachun. BTW er ager post gulo porechen to?? Farabi namer borahonondontir sakshat chela ei lokti.
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন