এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • দশমীর পরের দিন

    Arijit Guha লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১২ অক্টোবর ২০১৬ | ১৯২৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Arijit Guha | ১২ অক্টোবর ২০১৬ ১৭:৪৬720949
  • 'ওম শ্রী শ্রী দুর্গা মাতা সহায় নমঃ' পরপর পাঁচবার।
    ওম শ্রী শ্রী সরস্বতী মাতা সহায় নমঃ
    এই লাইনটাও ঠিক পাঁচবার পরপর।এরপর পর্যায়ক্রমে লক্ষ্মী গণেশ হয়ে ওম শ্রী শ্রী কার্তিকেয় নমঃ দিয়ে পচিশ লাইন লিখে খাতার পাতাটা ছিড়ে নিয়ে ঠাকুরের আসনের নিচে রেখে দেওয়ার পর ছুটি।ছোট পিসিরা আসত নবমীর দিন।পিসেমশাই আর দুই ছেলেকে নিয়ে।ব্যারাকপুরের ঠাকুর দেখার পাট চুকিয়ে নবমীর দিন তাদের কলকাতার ঠাকুর দেখার পালা।তাই নবমীর দিনই অন্য পিসিরা চলে।গেলেও যেহেতু সবাই কলকাতায় থাকত,ছোট পিসিই একমাত্র থেকে যেত একাদশী অব্দি।সেই পিসির দুই ছেলেও আমার সাথে একসাথে ওইগুলো লিখত।লেখালেখির পাট চুকে গেলে এরপর বাড়ির বড়দের সবাইকে প্রণাম করা।দশমীর পরেরদিনের সকালটা শুরু হত এভাবেই।বিসর্জনের পর শূন্য প্যান্ডেলে সারা রাত ধরে জ্বলতে থাকা প্রদীপটা হয়ত ততক্ষণে তেলের অভাবে নিভে গিয়েছে।আরো ছোটবেলায় ওই একেকটা লাইন লিখতে হত কুড়ি বার করে।বিরক্ত আসত না একবারের জন্যও।এই লেখার অংশটার দেখভালটা ছিল কাকুর ওপর।কাকু নিজে না পড়ালেও খুব ভোরে তুলে দিত।তারপর কাকুর সামনে বসে ঘুম চোখে ঢুলতে ঢুলতে বই খুলে পড়তে বসা।নির্দেশ ছিল চিৎকার করে পড়তে হবে।সেই চিৎকারের চোটেই ঘুম পালাত।কাকুর ধারণা ছিল নাকি,ভোরে উঠে চিৎকার করে পড়লেই একমাত্র পড়া মুখস্ত হয় ভালো করে।এই অভ্যাস পড়াশোনা ছাড়ার শেষ দিন অব্দি ছিল।যদিও পরে অতটা শব্দ করে পড়তাম না।লজ্জা লাগত বলে।তবে কাকুর তত্ত্বটা কতটা ঠিক কতটা ভুল জানা নেই,অনেককে পরে দেখেছি চুপচাপ কোন শব্দ না করেও এক মনে নিবিষ্ট হয়ে নিজের পড়া করতে।যাই হোক,দশমীর কথায় আসি।কুড়ি বার করে একেকটা লাইন লেখার যুক্তিটা ছিল হাতের লেখা প্র‍্যাক্টিস হবে এতে।অবশ্য স্কুল থেকে একমাসের ছুটিতে প্রচুর হাতের লেখা প্র‍্যাক্টিস দিত হোমওয়ার্ক হিসেবে,কিন্তু তাও ওই লেখাগুলো লিখতেই হত।বোঝানো হয়েছিল ওটা না লিখলে ঠাকুর রাগ করে।বড় হয়ে যখন বুঝেছি রাগ করা ফরা ঢপের কথা,তাও কিন্তু লেখাটা ছাড়তে পারিনি।অনেক দিন অব্দি এই লেখার ব্যাপারটা রেখে দিয়েছিলাম।আগের দিন থেকেই আত্মীয় স্বজনরা হাতে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে আসতে শুরু করে দিত।সেটা পরেরদিন সকালবেলা তো বটেই,অন্তত ছ সাত দিন ধরে চলত বিজয়ার পালা।ফ্রিজে উপুড় হয়ে পরত মিষ্টির প্যাকেটে।ততদিনে হয়ত ক্যাপ বন্দুকটায় মরচে ধরতে শুরু করেছে।এদিক ওদিক হাতড়ে দু একটা রিল পাওয়া যেত ক্যাপের।সেগুলো আর ফাটানো হয় নি।ফিকে হতে শুরু করেছে ঠাকুর চলে যাওয়ায়ার কষ্টটা।সামনে কালি পুজো।ততদিনে বাজি আসার আনন্দে মন নেচে উঠতে শুরু করেছে।প্ল্যান ছকা হচ্ছে মনে মনে এবার কোন বাজিটা বেশি কেনা হবে।ফুলঝুড়ি চরকি সাপবাজি নাকি ররংমশাল।চকলেট বোম তখনো হাতে নেওয়ার অধিকার জন্মায় নি।ওটা বড়দের বাজি।জামা কাপড়ের ব্যাপারটা যদিও মা ঠিক করে দিত,কোনটা পড়ব কোনটা পড়ব না,কিন্তু চেষ্টা করতাম একটা অন্তত নতুন জামা রেখে দিতে,কালি পুজোর দিনে পড়ার জন্য।হাল্কা কুয়াশার চাদর পরতে শুরু করেছে ততদিনে সকালের দিকে।বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা একটা ভাব হাওয়াতে।স্নান করতে গিয়ে একটু একটু আলসেমি গ্রাস করছে।পুজোর আগে শেষ না করতে পারা আনন্দমেলার কয়েকটা গল্প ততদিনে হয়ত শেষ হয়ে এসেছে।মহালয়ার আগে তাকের ওপর উঠে যাওয়া বই খাতাগুলো ধুলো ঝেড়ে আবার নামতে শুরু করেছে।তবে ঠিক ঠাক ভাবে পড়াশোনা শুরু হবে একেবারে ভাইফোঁটার পর।বোন হওয়ার আগে অব্দি ভাইফোঁটা দিত আমাকে আমার ঠাম্মা।ঠাম্মা মারা যাওয়ার আগে অব্দি আমার কাছে ছিল একাধারে আমার ঠাম্মা আমার দিদি এবং সাথে সাথেই আমার বৌও।বন্ধুর মা আমাকে বলত তুই তোর ঠাম্মাকে বিয়ে করবি।
    স্কুলের ধাপগুলো পেরোতে পেরোতে ততদিনে কমতে শুরু করেছে মিষ্টির প্যাকেট আসা।আত্মীয় স্বজনরা তখন নিজেদের গন্ডীতে বন্দী হতে শুরু করেছে।প্রণাম করার লোকগুলোও কমে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।টুকটাক হয়ত নিজেই তখন নমষ্কার পাওয়া শুরু করেছি।প্রথম প্রথম ভালো লাগত,কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম যে প্রণাম পাওয়ার সংখ্যা যত বাড়বে,প্রণাম করার সংখ্যা ততই কমবে,তখন মনে হত নাহ, আর প্রণাম নিয়ে লাভ নেই।বরঞ্চ উপায় থাকলে সারাটা জীবন যদি প্রণাম করে যেতে পারতাম তাহলে তাই করতাম।আর এখন তো প্রণাম করা বিজয়া করা এসব অনেক স্মার্ট হয়ে গেছে।হোয়াটসঅ্যাপেই বিজয়া সারা হয়ে যায়।ঠেঙিয়ে ঠেঙিয়ে আর কারো বাড়িতেও যেতে হয় না অথচ রিচুয়ালসটা ঠিক বজায় থাকে।ভাইদের সাথে দেখা হয় না বহুকাল।পিসির বড়ছেলে ক্যালিফোর্নিয়ায় সেটলড,আআর ছোট ছেলে আর জি করের ইন্টার্ণ।কেউই সময় পায় না দেখা করার।আমার নিজেরও অবশ্য সময় হয় না পিসির বাড়িতে যাওয়ার।তবে মাঝে মাঝে সেই আনস্মার্ট হয়ে থাকার বয়সটায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন