এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • স্বপ্ন।।।খায় না মাখে,নাকি আজও কেউ ভুল করে দ্যাখে!!

    Arijit Sinha লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৮ আগস্ট ২০১৬ | ১৯১৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Arijit Sinha | ০৮ আগস্ট ২০১৬ ১৬:১৬720491
  • দৃশ্য-এক।।।।।
    স্থান-দান্দুলা গ্রাম,অযোধ্যা,পুরুলিয়া।

    পাহাড়ের উপরের এই একচিলতে গেরাম টায় থাকে লক্ষ্মী কুইরি,বাপ মা এর আদরের নক্কী।শিবু আর মালতীর এই একটাই বিটি।ব্যাটাও ছিল বটে একটা।।।সাগুন।হুঁ,ছিল।।।এখন কোন খোঁজখবর নাই।'মাহাবাদী' না কাদের সাথে আরো গভীর জঙ্গলে হারাইন গ্যাছেক।আগে রাত বিরাত এখন তুখন ভারী বুটপরা লোকজন আসত ঘরকে।।।।।সব মালপত্তর হাঁটকে হুটকে,বিছানাপত্তর এলোমেলো করে।।।তারপরে শিবুকে দু চারটা চড় থাপ্পড় মেরে,মালতীর দিকে ট্যাঁরা নজর দিয়ে,আর একপ্রস্ত শাসানি দিয়ে চলে যেত।ড্যাবড্যাব করে ভেলে সব দেখেছে নক্কী।দাদাটা নাকি ভারী বুটওলা লোকগুলো'র গাড়ির তলায় বোম রেখে দেয়।।।।বেশ আমোদের ব্যাপার বট্যে একখান।
    দাদাকে ভালো করে মনেই পড়েনা নক্কী'র,ঐ আবছা আবছা মনে পড়ে কে একটা কাঁধে করে নিয়ে দৌড় মারত হোঁইদিক পানে,হুব্বা করে ছুঁড়ে দিত ওপরপানে।।।।উটাই দাদা বটেক মনে হয়।তবে নক্কী ওরম হবেনা,নক্কী এখন ঐকিক নিয়ম শিখে গেছে,সুর করে রাখাল ছেলে পড়তে পারে,বাংলা থেকে ইঞ্জিরি ট্রানস্লেট করতে পারে।।।।বড় হয়ে নক্কী হোই নিবেদিতা দি'মনির মত হবে।।।।হবেই।

    দৃশ্য-২।।।।।
    স্থান-উইমা,সাউদার্ন প্রভিনেন্স,সিয়েরা লিঁও,পশ্চিম আফ্রিকা।

    দীর্ঘ ১৩টা বছর পার করে আজ আবার উইমা তে পা রাখল জোনসা।স্যামুয়েল জনস্টন,ব্যাব-লু মানে মায়ের বাবা রেখেছিল নামটা,সংক্ষেপে জোনসা।জোনসা তখন বেশ ছোট।।।বাস্কেটবল খেলতে খুব ভালোবাসতো,বিকেলবেলায় এরি,ওয়েস,সালেম।।।সবাই মিলে হইহই করে নকল বাস্কেট বানিয়ে একটার পর একটা শ্যুট করেই যেত।বেশ লম্বা চওড়া ছিল বলে সেন্টারে খেলত জোনসা,শ্যুটিং,পাসিং,ড্রিবলিং, রিবাউন্ডিং।।।কি ভালো পারতো।তখন,কোর্ট কাঁপাচ্ছে মাইকেল জর্ডন,ওই লম্বা ৬'৬" এর লোকটাকে দেখে,প্রতিটা বাস্কেটের পর রাজকীয় ঔদ্ধত্য দেখে গায়ে কাঁটা দিত জোনসা'র।খুব ইচ্ছে ছিল,বড় হয়ে ওর মতো হবার।

    কিন্তু অলক্ষে বোধহয় কেউ বড় আমোদ পেয়েছিলো,জোনসার এই নিরুপদ্রব জীবন দেখে।গৃহযুদ্ধ ত চলছিল অনেকদিনই,কিন্তু ২০০১এ খুব বড় আকার নিলো,তাদের একচিলতে শান্ত গ্রামটাও যুদ্ধের আঁচ এড়াতে পারলনা।চোখের সামনে সালেম আর এরি কে যুদ্ধে টেনে নিয়ে গেল গেরিলাদল।হোরা,ব্যব-লু,উকাই।।।সব্বাই কে যেতে হল যুদ্ধে।।।অনেক কান্নাকাটি করে কেবল মা,জোনসার যুদ্ধে যাওয়া আটকাল।হোরা(বাবা),উকাই(মামা),ব্যব-লু,এরি,সালেম।।।সেই যে গেল,আর এলইনা।ফুস করে যেন মিলিয়ে গেল কোথায়!

    তারপর মা এর হাত ধরে লাইবেরিয়া,এখানে এসে অনেক পড়া,অবসরে পিজা পার্লারে ডিউটি, জর্ডন হবার স্বপ্ন'র টুঁটি চিপে হত্যা।।।।।১৩ টা বছর যেন নিমেষে কেটে গেল।
    আজ ১৩বছর পর ইউনেস্কো র কর্মচারী হয়ে আবার ফিরে এসেছে জোনসা,উইমা'তেই।চাইলেই ইউএস চলে যেতে পারত,একটা আরামের জব,সুখ স্বাচ্ছন্দ্য।।।।। মাইকেল জর্ডন সব তো ছিল ওখানে।
    নাহ,সব ছিলনা।এরি ছিলনা,সালেম ছিলনা,ওয়েস ছিলনা,ছিলনা উকাই,হোরা কেউ।জোনসা কে ত ফিরতেই হত এই উইমা'তে,কে জানে কবে আবার ফিরে আসে এরি,সালেম।।।।এসেই ত হাঁক পাড়বে বাইরে থেকে,"জোনসা,এ জোনসাআআ বিকেল হল,খেলতে যাবি না!।।"।ওরা সব ফিরে এলে আবার টিম বানাতে হবে না,এরি সাইডে,সালেম ফরোয়ার্ড, ওয়েস লিঙ্কে আর সেন্টারে জোনসা।।।কে আটকাবে ওদের।প্রথমে গৃহযুদ্ধ,পরে ইবোলা।।।।সিয়েরা লিঁও পুরো শ্মশান হয়ে গেছে,৭০% মানুষ খেতে পায়না দুবেলা।।।।এদের পাশে থাকবে না তো,কোথায় থাকবে জোনসা!।।
    সারাদিন কাজের পর ফিরে এসে ঘুমন্ত মা'র পাশে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে।।।ইউটিউবে জোনসা চালায় একটা ৬'৬" কৃষ্ণবর্ণ মুণ্ডিতমস্তক লোকের ভিডিও,যে লোকটা কাউকে রেয়াত করেনা,যে লোকটা চরম ঔদ্ধত্যে প্রতিপক্ষকে ফালাফালা করে দেয়,যে লোকটা ওকে স্বপ্ন দেখায়।।।।আজও।জোনসা নিজে হতে পারেনি তো কী।।।।এত এত আট,ন বছরের জোনসা,এরি,সালেম আছে উইমা'তে,সিয়েরা লিঁওতে।।।।একটা জর্ডন কী আর কেউ হতে পারবেনা?।।।।জোনসা জানে হবে,একদিন হবেই।

    দৃশ্য-৩।।।।।।
    স্থান-কোকাই,মানাউস,ব্রাজিল।

    রিও নেগ্রো নদীর একদম গা ঘেঁষে,আমাজনের পেটের ভেতর সেঁধিয়ে আছে এই কোকাই,আর এই গ্রামের সবচেয়ে বড় সাদা বাড়িটা হল ফাদার ডি'সিলভা র অরফ্যানেজ।ওখানেই আজ বছরপাঁচেক হল থাকে লুইসা।।।।ল্যুইজ হেনরিক,দ্য জুনিয়র।আমাজনের সবচেয়ে ছোঁয়াচে,ভয়ানক ইয়েলো ফিভার সাত বছর আগেই মা,বাবা দুজনকেই একসাথে কেড়ে নিয়েছে।তারপর বছরদুয়েক রোরাইমা'তে গ্র‍্যান্ড-পা'র কাছে,আর গ্র‍্যান্ড-পা ও ওদিকপানে রওনা হলে নেগ্রোর ধারের এই অরফ্যানেজ।ফাদার,একসময় গ্র‍্যান্ড-পা র অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল,তাই লুইসা কে একটু বেশীই স্নেহ করেন,লুইসার মনে হয়।
    বিকেলবেলায় সবাই সামনের মাঠে জুতো দিয়ে গোলপোস্ট বানিয়ে ফুটবল খেলে,লুইসা খেলেনা।ও তখন হোমের পেছনের রাস্তাটা ধরে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসে নেগ্রোর ধারে,কী বিশাল নদী!।।।তার দু পাড়ে আমাজন!।।প্রচন্ড সুন্দরী আমাজন।
    নেগ্রোর পাড়ে এসে বসলে লুইসা'র সময় থমকে যায়,ও ভুলেই যায় এই আমাজন কেড়ে নিয়েছে ওর মা বাবা,ওর শৈশব,সব ভুলে যায় লুইসা।আমাজন এত ভয়ঙ্কর অথচ এত সুন্দর,এত মোহময়।।।।।মোহাবিষ্টের মত রিও নেগ্রো'র ওপারে চেয়ে থাকে লুইসা।এর মধ্যেই ও চিনে গেছে অনেক ফলফুল, লতাপাতা,কোন পোকা টা বিষাক্ত,কোনটা নয়,কোন পাতা'র কী ভেষজ গুণ।।।।সব একটু একটু করে চিনে নিচ্ছে লুইসা।
    হোমে একদিন এসেছিলেন সিডনি পাসওয়েলো।।।।সবচেয়ে বড়, জীবিত আমাজন এক্সপ্লোরার।হাঁ করে তাকে দেখছিল লুইসা।।।।।এই সত্তরোর্ধ ভদ্রলোক কী অসীম প্রাণোজ্জ্বল,একজন সাহেব হয়েও আমাজনের আদি অধিবাসীদের জন্য,নিজের বিরাদরের লোকজনের বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়ে যাচ্ছে।ইয়ানোমামি ইন্ডিয়ান,কোরুবু ট্রাইবাল।।।এরা এঁর কে?যে এদের জন্য বহুবার প্রাণঘাতী আক্রমনের পরেও,বুকে বিষাক্ত তীর বেঁধার পরেও এখনো লড়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।আমাজনের জন্য ঠিক কতটা ভালোবাসা থাকলে এরকম আত্মনিবেদন সম্ভব!।।
    নাহ,লুইসা জানেনা।কিন্তু জানতে চায়।জানতে চায় রিও নেগ্রোকে,জানতে চায় আমাজন কে,জানতে চায় আমাজনের বিশাল বিপুল বায়োডাইভার্সিটি,জানতে চায় ব্রাজিলকে।।।।।।আর জানাতে চায় গোটা বিশ্বকে আরে দেখো কোকো,ফুটবল,ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার,সাও পাওলো,রিও ডি জেনেইরো আর সাম্বার বাইরেও একটা ব্রাজিল আছে।জিকা,ইবোলা,ইয়োলো ফিভারের বাইরেও একটা ব্রাজিল আছে।।।।।আছে একটা বিশাল ছায়া,"আমাজন"।

    পৃথিবী র তিনটে ডিফারেন্ট টাইমজোনে,পরস্পরের থেকে হাজার বর্গমাইল দূরে,তিনটে সম্পূর্ণ আলাদা বয়স,ধর্ম,বর্ণ,জাতি,রেস,এথনিসিটি’র মানুষ,তাদের সব আলাদা,সব।।।।।শুধু স্বপ্নগুলো এক।
    অযোধ্যার উপরে কৃত্রিম জলাধারের পেছনে যখন সূর্য ডোবে।।।।।ঠিক সেইমুহূর্তে বহুদূরে রিও নেগ্রোর বুকে থালার মতো ওই সূর্যটাই ওঠে।
    দান্দুলার লক্ষ্মী যখন একবুক স্বপ্ন নিয়ে খেজুরের চাটাইয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে,তখনই ফাদারের হোমে একচিলতে স্বপ্ন নিয়ে চোখ খোলে লুইসা।আর ঠিক তখনই বহু বহু দূরে ঘুমন্ত মায়ের পাশে বসে ব্রাইটনেস টা আরেকটু কমিয়ে,হেডফোন'টা কানে চেপে ট্যাবের স্ক্রিনের দিকে অপলকে চেয়ে থাকে জোনসা।।।।দেখে এক উদ্ধত সাড়ে ফুটি'য়া কে।

    স্বপ্ন'রা তো চিরকালই লাগামছাড়া,স্বপ্ন রা তো চিরকাল সব গণ্ডি পেরিয়ে এভাবেই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।।।।।।চিরকাল।।
  • Arijit Sinha | ০৮ আগস্ট ২০১৬ ১৬:১৬720490
  • দৃশ্য-এক।।।।।
    স্থান-দান্দুলা গ্রাম,অযোধ্যা,পুরুলিয়া।

    পাহাড়ের উপরের এই একচিলতে গেরাম টায় থাকে লক্ষ্মী কুইরি,বাপ মা এর আদরের নক্কী।শিবু আর মালতীর এই একটাই বিটি।ব্যাটাও ছিল বটে একটা।।।সাগুন।হুঁ,ছিল।।।এখন কোন খোঁজখবর নাই।'মাহাবাদী' না কাদের সাথে আরো গভীর জঙ্গলে হারাইন গ্যাছেক।আগে রাত বিরাত এখন তুখন ভারী বুটপরা লোকজন আসত ঘরকে।।।।।সব মালপত্তর হাঁটকে হুটকে,বিছানাপত্তর এলোমেলো করে।।।তারপরে শিবুকে দু চারটা চড় থাপ্পড় মেরে,মালতীর দিকে ট্যাঁরা নজর দিয়ে,আর একপ্রস্ত শাসানি দিয়ে চলে যেত।ড্যাবড্যাব করে ভেলে সব দেখেছে নক্কী।দাদাটা নাকি ভারী বুটওলা লোকগুলো'র গাড়ির তলায় বোম রেখে দেয়।।।।বেশ আমোদের ব্যাপার বট্যে একখান।
    দাদাকে ভালো করে মনেই পড়েনা নক্কী'র,ঐ আবছা আবছা মনে পড়ে কে একটা কাঁধে করে নিয়ে দৌড় মারত হোঁইদিক পানে,হুব্বা করে ছুঁড়ে দিত ওপরপানে।।।।উটাই দাদা বটেক মনে হয়।তবে নক্কী ওরম হবেনা,নক্কী এখন ঐকিক নিয়ম শিখে গেছে,সুর করে রাখাল ছেলে পড়তে পারে,বাংলা থেকে ইঞ্জিরি ট্রানস্লেট করতে পারে।।।।বড় হয়ে নক্কী হোই নিবেদিতা দি'মনির মত হবে।।।।হবেই।

    দৃশ্য-২।।।।।
    স্থান-উইমা,সাউদার্ন প্রভিনেন্স,সিয়েরা লিঁও,পশ্চিম আফ্রিকা।

    দীর্ঘ ১৩টা বছর পার করে আজ আবার উইমা তে পা রাখল জোনসা।স্যামুয়েল জনস্টন,ব্যাব-লু মানে মায়ের বাবা রেখেছিল নামটা,সংক্ষেপে জোনসা।জোনসা তখন বেশ ছোট।।।বাস্কেটবল খেলতে খুব ভালোবাসতো,বিকেলবেলায় এরি,ওয়েস,সালেম।।।সবাই মিলে হইহই করে নকল বাস্কেট বানিয়ে একটার পর একটা শ্যুট করেই যেত।বেশ লম্বা চওড়া ছিল বলে সেন্টারে খেলত জোনসা,শ্যুটিং,পাসিং,ড্রিবলিং, রিবাউন্ডিং।।।কি ভালো পারতো।তখন,কোর্ট কাঁপাচ্ছে মাইকেল জর্ডন,ওই লম্বা ৬'৬" এর লোকটাকে দেখে,প্রতিটা বাস্কেটের পর রাজকীয় ঔদ্ধত্য দেখে গায়ে কাঁটা দিত জোনসা'র।খুব ইচ্ছে ছিল,বড় হয়ে ওর মতো হবার।

    কিন্তু অলক্ষে বোধহয় কেউ বড় আমোদ পেয়েছিলো,জোনসার এই নিরুপদ্রব জীবন দেখে।গৃহযুদ্ধ ত চলছিল অনেকদিনই,কিন্তু ২০০১এ খুব বড় আকার নিলো,তাদের একচিলতে শান্ত গ্রামটাও যুদ্ধের আঁচ এড়াতে পারলনা।চোখের সামনে সালেম আর এরি কে যুদ্ধে টেনে নিয়ে গেল গেরিলাদল।হোরা,ব্যব-লু,উকাই।।।সব্বাই কে যেতে হল যুদ্ধে।।।অনেক কান্নাকাটি করে কেবল মা,জোনসার যুদ্ধে যাওয়া আটকাল।হোরা(বাবা),উকাই(মামা),ব্যব-লু,এরি,সালেম।।।সেই যে গেল,আর এলইনা।ফুস করে যেন মিলিয়ে গেল কোথায়!

    তারপর মা এর হাত ধরে লাইবেরিয়া,এখানে এসে অনেক পড়া,অবসরে পিজা পার্লারে ডিউটি, জর্ডন হবার স্বপ্ন'র টুঁটি চিপে হত্যা।।।।।১৩ টা বছর যেন নিমেষে কেটে গেল।
    আজ ১৩বছর পর ইউনেস্কো র কর্মচারী হয়ে আবার ফিরে এসেছে জোনসা,উইমা'তেই।চাইলেই ইউএস চলে যেতে পারত,একটা আরামের জব,সুখ স্বাচ্ছন্দ্য।।।।। মাইকেল জর্ডন সব তো ছিল ওখানে।
    নাহ,সব ছিলনা।এরি ছিলনা,সালেম ছিলনা,ওয়েস ছিলনা,ছিলনা উকাই,হোরা কেউ।জোনসা কে ত ফিরতেই হত এই উইমা'তে,কে জানে কবে আবার ফিরে আসে এরি,সালেম।।।।এসেই ত হাঁক পাড়বে বাইরে থেকে,"জোনসা,এ জোনসাআআ বিকেল হল,খেলতে যাবি না!।।"।ওরা সব ফিরে এলে আবার টিম বানাতে হবে না,এরি সাইডে,সালেম ফরোয়ার্ড, ওয়েস লিঙ্কে আর সেন্টারে জোনসা।।।কে আটকাবে ওদের।প্রথমে গৃহযুদ্ধ,পরে ইবোলা।।।।সিয়েরা লিঁও পুরো শ্মশান হয়ে গেছে,৭০% মানুষ খেতে পায়না দুবেলা।।।।এদের পাশে থাকবে না তো,কোথায় থাকবে জোনসা!।।
    সারাদিন কাজের পর ফিরে এসে ঘুমন্ত মা'র পাশে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে।।।ইউটিউবে জোনসা চালায় একটা ৬'৬" কৃষ্ণবর্ণ মুণ্ডিতমস্তক লোকের ভিডিও,যে লোকটা কাউকে রেয়াত করেনা,যে লোকটা চরম ঔদ্ধত্যে প্রতিপক্ষকে ফালাফালা করে দেয়,যে লোকটা ওকে স্বপ্ন দেখায়।।।।আজও।জোনসা নিজে হতে পারেনি তো কী।।।।এত এত আট,ন বছরের জোনসা,এরি,সালেম আছে উইমা'তে,সিয়েরা লিঁওতে।।।।একটা জর্ডন কী আর কেউ হতে পারবেনা?।।।।জোনসা জানে হবে,একদিন হবেই।

    দৃশ্য-৩।।।।।।
    স্থান-কোকাই,মানাউস,ব্রাজিল।

    রিও নেগ্রো নদীর একদম গা ঘেঁষে,আমাজনের পেটের ভেতর সেঁধিয়ে আছে এই কোকাই,আর এই গ্রামের সবচেয়ে বড় সাদা বাড়িটা হল ফাদার ডি'সিলভা র অরফ্যানেজ।ওখানেই আজ বছরপাঁচেক হল থাকে লুইসা।।।।ল্যুইজ হেনরিক,দ্য জুনিয়র।আমাজনের সবচেয়ে ছোঁয়াচে,ভয়ানক ইয়েলো ফিভার সাত বছর আগেই মা,বাবা দুজনকেই একসাথে কেড়ে নিয়েছে।তারপর বছরদুয়েক রোরাইমা'তে গ্র‍্যান্ড-পা'র কাছে,আর গ্র‍্যান্ড-পা ও ওদিকপানে রওনা হলে নেগ্রোর ধারের এই অরফ্যানেজ।ফাদার,একসময় গ্র‍্যান্ড-পা র অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল,তাই লুইসা কে একটু বেশীই স্নেহ করেন,লুইসার মনে হয়।
    বিকেলবেলায় সবাই সামনের মাঠে জুতো দিয়ে গোলপোস্ট বানিয়ে ফুটবল খেলে,লুইসা খেলেনা।ও তখন হোমের পেছনের রাস্তাটা ধরে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসে নেগ্রোর ধারে,কী বিশাল নদী!।।।তার দু পাড়ে আমাজন!।।প্রচন্ড সুন্দরী আমাজন।
    নেগ্রোর পাড়ে এসে বসলে লুইসা'র সময় থমকে যায়,ও ভুলেই যায় এই আমাজন কেড়ে নিয়েছে ওর মা বাবা,ওর শৈশব,সব ভুলে যায় লুইসা।আমাজন এত ভয়ঙ্কর অথচ এত সুন্দর,এত মোহময়।।।।।মোহাবিষ্টের মত রিও নেগ্রো'র ওপারে চেয়ে থাকে লুইসা।এর মধ্যেই ও চিনে গেছে অনেক ফলফুল, লতাপাতা,কোন পোকা টা বিষাক্ত,কোনটা নয়,কোন পাতা'র কী ভেষজ গুণ।।।।সব একটু একটু করে চিনে নিচ্ছে লুইসা।
    হোমে একদিন এসেছিলেন সিডনি পাসওয়েলো।।।।সবচেয়ে বড়, জীবিত আমাজন এক্সপ্লোরার।হাঁ করে তাকে দেখছিল লুইসা।।।।।এই সত্তরোর্ধ ভদ্রলোক কী অসীম প্রাণোজ্জ্বল,একজন সাহেব হয়েও আমাজনের আদি অধিবাসীদের জন্য,নিজের বিরাদরের লোকজনের বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়ে যাচ্ছে।ইয়ানোমামি ইন্ডিয়ান,কোরুবু ট্রাইবাল।।।এরা এঁর কে?যে এদের জন্য বহুবার প্রাণঘাতী আক্রমনের পরেও,বুকে বিষাক্ত তীর বেঁধার পরেও এখনো লড়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।আমাজনের জন্য ঠিক কতটা ভালোবাসা থাকলে এরকম আত্মনিবেদন সম্ভব!।।
    নাহ,লুইসা জানেনা।কিন্তু জানতে চায়।জানতে চায় রিও নেগ্রোকে,জানতে চায় আমাজন কে,জানতে চায় আমাজনের বিশাল বিপুল বায়োডাইভার্সিটি,জানতে চায় ব্রাজিলকে।।।।।।আর জানাতে চায় গোটা বিশ্বকে আরে দেখো কোকো,ফুটবল,ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার,সাও পাওলো,রিও ডি জেনেইরো আর সাম্বার বাইরেও একটা ব্রাজিল আছে।জিকা,ইবোলা,ইয়োলো ফিভারের বাইরেও একটা ব্রাজিল আছে।।।।।আছে একটা বিশাল ছায়া,"আমাজন"।

    পৃথিবী র তিনটে ডিফারেন্ট টাইমজোনে,পরস্পরের থেকে হাজার বর্গমাইল দূরে,তিনটে সম্পূর্ণ আলাদা বয়স,ধর্ম,বর্ণ,জাতি,রেস,এথনিসিটি’র মানুষ,তাদের সব আলাদা,সব।।।।।শুধু স্বপ্নগুলো এক।
    অযোধ্যার উপরে কৃত্রিম জলাধারের পেছনে যখন সূর্য ডোবে।।।।।ঠিক সেইমুহূর্তে বহুদূরে রিও নেগ্রোর বুকে থালার মতো ওই সূর্যটাই ওঠে।
    দান্দুলার লক্ষ্মী যখন একবুক স্বপ্ন নিয়ে খেজুরের চাটাইয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে,তখনই ফাদারের হোমে একচিলতে স্বপ্ন নিয়ে চোখ খোলে লুইসা।আর ঠিক তখনই বহু বহু দূরে ঘুমন্ত মায়ের পাশে বসে ব্রাইটনেস টা আরেকটু কমিয়ে,হেডফোন'টা কানে চেপে ট্যাবের স্ক্রিনের দিকে অপলকে চেয়ে থাকে জোনসা।।।।দেখে এক উদ্ধত সাড়ে ফুটি'য়া কে।

    স্বপ্ন'রা তো চিরকালই লাগামছাড়া,স্বপ্ন রা তো চিরকাল সব গণ্ডি পেরিয়ে এভাবেই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।।।।।।চিরকাল।।
  • aranya | 154.160.226.91 | ০৮ আগস্ট ২০১৬ ২৩:২৬720492
  • বাঃ, খুব ভাল লাগল এই লেখাটা
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন