এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • শর্মিলা কি পারবেন বাঁচতে?

    Dipankar Patra লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১১ আগস্ট ২০১৬ | ২৪৮৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Dipankar Patra | ১১ আগস্ট ২০১৬ ১৮:০৬720458
  • ২০০০ সালের ২রা নভেম্বর ১৭ বছরের একটি সিনম চন্দ্রমণি নামের এক কিশোর মনিপুরের মালোম এর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েছিল তার বন্ধুর সাথে, ফিজিক্সের টুইশনি পড়তে যাবে বলে। এরও ১২ বছর আগে, ১৯৮৮ সালে এই কিশোরের বয়স যখন মাত্র ৫ বছর, তখন সে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হাত থেকে তার নিজের সাইজের প্রায় সমান রঙীন মোড়কে গোলাপি ফিতেয় বাঁধা উপহারের বাক্স নিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শিশুটির গলায় পরিয়ে দিয়েছিলেন ' রাষ্ট্রীয় সাহসিকতা পুরষ্কার' এর সোনালী মেডেল। ওই টুকু বয়সে সে তার এক বন্ধুকে জলে ডুবে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিল, এই পুরষ্কার ছিল তারই স্বীকৃতি।
    বাসস্ট্যান্ডে ছিল আরো বেশ কিছু সাধারণ মানুষ। সেইদিনই কাছাকাছি এক বোমা বিস্ফোরণ হয়। উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মত মনিপুরেও বরাবর অশান্তি লেগে আছে। না, এখানে কোন 'পাকিস্তানী সন্ত্রাশবাদী' নেই। মাওবাদীও নেই। আবার নেই অবশিষ্ট ভারতের সাথে তেমন কোন আত্মিক যোগাযোগ ও। ১৯৫৮ সালে মনিপুর এবং আসামের জন্য তৈরি হয় Armed Forces Special Power (Assam and Manipur) Act, যা AFSPA নামে কুখ্যাত। তখন কাশ্মীরে কেউ এর নামই শোনেনি। যদিও এই সামরিক বাহিনীর প্রায় যা খুশি করার এই মনিপুরে জারী করা হয় ১৯৮০ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর। ৩৬ বছর হয়ে গেল ! এই জানুয়ারি মাসেই সুপ্রীম কোর্ট প্রশ্ন করেছে ভারত রাষ্ট্রকে - আর কত দিন? কোর্ট একটি কমিটি গঠন করেছে গত ৩০ বছরের ওপর সময়ে প্রায় ১৫০০ হত্যার তদন্ত করে দেখার জন্যে, যে হত্যা গুলির অভিযোগ রেকর্ড করতে পুলিশ অস্বীকার করেছে AFSPA র অজুহাতে। অবশ্য এই সব হাই-লেভেল কমিটির রিপোর্ট কি হয় তাও আমরা এতদিনে জানি বৈকি!

    তা সেইদিন বোমা বিস্ফোরণের পরে সাঁজোয়া বাহিনী বেড়িয়ে পড়ে মেশিনগান হাতে। ' চোর চাই, হোক না সে যে কোন লোক ! ' এবং বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষমান নিরীহ শিশু থেকে বৃদ্ধদের দল ছাড়া আর কারাই বা হতে পারে উপযুক্ত শিকার ? অতএব মালোমের বাসস্ট্যান্ড ১০ জন মনিপুরীর রক্তে ভেসে যায়। হ্যাঁ, মনিপুরী, ভারতীয় নয় নিশ্চয়ই। ভারতীয় হলে তো আর রাষ্ট্রশক্তির কোপে পড়ে প্রাণ হারাতে হত না এদের। ১০ জনের মধ্যে ছিল চন্দ্রমণি, তার দাদা রবিনসন এবং তাদের মাসী। রবিনসন এসেছিল মাসীকে বাসে তুলে দিতে।

    এসব আমাদের ভারতে বসে সামান্য গল্পকথাতেও জায়গা পাওয়ার যোগ্য নয় নিশ্চয়ই। এরকম কত অজস্র রাষ্ট্রীয় হত্যাই তো ঘটে থাকে অহরহ। দেশরক্ষার জন্যে সামান্য বলিদান এসব। কিন্তু 'মালোম গনহত্যা' নামে এই ঘটনা ভারতবর্ষের ইতিহাসে স্থায়ী দাগ কেটে দিল এক অসামান্যা নারীর জন্য। ইরম শর্মিলা ছানু। ২০০০ সালের ৫ই নভেম্বর, মালোম হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে এবং মূলত মনিপুর থেকে এই রাক্ষুসে আইন প্রত্যাহারের দাবীতে অনশন আন্দোলন শুরু করেন। তারপর প্রায় ১৬ বছর কেটে গেছে। ২৮ বছরের শর্মিলা এখন ৪৪। মাঝে রাষ্ট্র সব রকম ভয়, লোভ দেখিয়েও তাঁর অনশন ভাঙতে পারেনি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মনিপুর হাইকোর্ট রায় দিয়েছে যে মালোম বাসস্ট্যান্ডে সেদিন মিলিটারির সাথে জঙ্গীদের কোন সংঘর্ষই হয়নি। এটি ছিল পুরোপুরি সাজানো গনহত্যা। ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরনের আদেশ দিয়েছে। যদিও হত্যাকারীদের শাস্তির কোন নির্দেশ নেই কোর্টের আদেশে। গত ৯ ই আগস্ট শর্মিলা তাঁর অনশন প্রত্যাহার করেছেন। জানিয়েছেন তিনি এবার সরাসরি রাজনৈতিক ভাবে, ভোটে জিতে মোকাবিলা করতে চান। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে AFSPA প্রত্যাহারের ব্যাবস্থা করতে চান।

    প্রথাগত রাজনীতিতে এসে শর্মিলা কতদূর কি করতে পারেন সেটা অবশ্যই দেখার। কিন্তু বিস্ময়কর যেটা সেটা হল শর্মিলার অনশন প্রত্যাহারে স্থানীয় মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে। হাসপাতাল থেকে বন্দী জীবন ফেরত যে শর্মিলাকে দেবীর মত বরণ করে নিয়ে রাজনৈতিক গনআন্দোলনের জোয়ার আসা উচিৎ ছিল। অথচ তার বদলে দেখা গেল শর্মিলার মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও নেই! কেউ বলছেন শর্মিলা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন আন্দোলনের সাথে। তাই কি? না কি রাষ্ট্রশক্তির ভয়ে এই অবস্থা। শেষে রেডক্রশের আশ্রয়ে থাকতে হচ্ছে মনিপুরের মানুষের এতদিনের প্রিয় ' মেনঘাওবি ' কে! যারা ভাবছেন বিশ্বাসঘাতকতা, তারা কি আশা করেছিলেন? শর্মিলা এভাবে হাসপাতালেই একদিন শেষ হয়ে যাবেন, আর তাঁর মৃতদেহ নিয়ে মিছিল বার করে ফায়দা লুটবে কিছু কায়েমী স্বার্থ? আন্দোলনে কি তাহলে শর্মিলাকে দরকার নিছকই একটা প্রতীকী পুতুল হিসেবে?

    সময় উত্তর দেবে শর্মিলা এই আরো কঠিন লড়াই জিততে পারবেন কিনা। আমার কেমন যেন সেই ' মেঘে ঢাকা তারা ' য় নীতার কথা মনে পড়ছে। নীতা বাড়ির একমাত্র রোজগেরে সদস্য। তাই যখনই নীতাকে সনৎ-এর সাথে দেখেন নীতার মায়ের চোখে ঝলসে ওঠে বিদ্বেষ, রাগ। গরম কড়াইয়ে জল পড়ে সেই ধোঁয়া আর আওয়াজের ফাঁক দিয়ে তার সেই দৃষ্টির আগুন ধরা পড়ে। অবশেষে নীতার বোন গীতা যখন মায়াবিনী হয়ে সনৎ কে গ্রাস করে নেয়, মা শান্তি পান। তার সংসার টা যে বেঁচে গেল! মানসিক যন্ত্রণাকাতর প্রৌঢ় শিক্ষক পিতার ' I protest ' চিৎকার ব্যার্থ কান্না হয়ে মিলিয়ে যায় মাত্র।

    শর্মিলা কেও কি নীতা হিসাবেই চেয়েছে মনিপুর - মা? শর্মিলার অধিকার নেই বাঁচতে চাওয়ার?
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ১১ আগস্ট ২০১৬ ১৯:৪৫720459
  • পোস্ট উড়ে যাচ্ছে। দী, দ, এদের কমেন্ট উড়ে গেছে।
  • | ১১ আগস্ট ২০১৬ ২০:২৯720460
  • না না আমি কিছু লিখিও নি, ওড়েও নি। উনিই দী নামে টই খুলে দ্নামেপোস্টটা করেছেন। টেকনিক্যালি ওটা সম্ভব মনে হয়।

    যাই হোক পোস্টদাতাকে বলছি এই 'দ' কিম্বা d নিক আমি বহু বছর ব্যবহার করছি আপনি প্লীজ নিকটা একটু বদলে নিন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন