এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শঙ্খ শুভ্র | 55.124.7.253 | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ২১:৪৪718505
  • পায়ের তলায় সর্ষে হেব্বি গোলমেলে জিনিস। হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধন প্রথম কোলকাতায় এসে বুঝেছিলেন কলার খোসা সস্তা হলেও তাতে চেপে বেড়ানো সুবিধের না, উলটে নিজেদেরই চাপা পড়ার সম্ভবনা। তবু সর্ষের কদরই আলাদা, তাই চড়ে বসলে আর ছাড়ান নেই। সেরামই কিছু গল্প নিয়ে বসে পরলুম, মুল লক্ষ্য দু সপ্তা আগের জীবনের প্রথম ট্রেকিং, কিন্তু তার সাথে বেশ লম্বা একটা ভানিতার লোভ সামলাতে পাল্লুম না। সেই সুতোতেই আজ প্রথম কিস্তি।
    হিমালয়ের সাথে পাহেলা মুলাকাত সে তখন বছর বারো কি তেরো আগে। নিজের বয়স্টাও তখন বায়ো কি তেয়োই, সবে পাখনা গজাচ্ছে, রাগ অভিমান ঝুট ঝামেলাগুলোও নিত্তি লেগে। বাবার সাথে জেনারেশন গ্যাপের সাত সতেরো এদিক ওদিক সাথে মায়ের কূটনৈতিক দৌত্য, পড়াশুনো, হাল্কা লেখালেখি, নাটক, সামার ক্যাম্প, টি ভী, আর কাঁচা বাসন্তিক বিলাপের মধ্যে দিন কাটছিল ভালোই। যে কোন বাঙালী নিম্নবিত্ত পরিবারের মতই বাতসরিক জজ্ঞনাথ দর্শন, নন্দনকাননের বাঘ রাতে নাক ডাকে কিনা, কলাপাতায় মাছের গরম টুকরোটা কতটা বেঁটে হয়েছে, কাকাতুয়ার গজার মিয়োনো জায়েজ কিনা এইসব গুরুত্বপূর্ণ আলোচোনার ফিরে ফিরে আসা। কিন্তু সেসবও থেমে ছিল বছর তিনেক, কাজেই একদিন রেগেমেগে ঘ্যান ঘ্যান। বাবা মায়ের সাধ্য না থাক সাধটা ভালোই ছিল, ক্যালেন্ডারে জানুয়ারির শেষদিকে খান পাঁচেক দিনও দেখি জুটে গেল, কাজেই চালাও পানসি থুড়ি স্লিপার। কিন্তু যাওয়া টা হবে কোন চুলোয়? বাবা দেখি সেই পুরী শুনলেই থার্টি টু অল আউট "আহা এদ্দিন এত্তোবার গেছি, জানাশুনো, সত্যি বলতে একটু সস্তাও, বুঝিসই তো"। কিন্তু বাপ কা লাডলা তদ্দিন বিগার গ্যায়া, বসলুম বেঁকে ঘাড় নামিয়ে, মুখ গোমড়া। ও হরি মাও দেখি পুরী শুনে ভ্রু কুঁচকে মনে মনে সাতশো নিরানব্বুই কে অষ্টআশি দিয়ে ভাগ করতে লেগেছে। অতএব বাবা ধার করে আনা ঢাউস ভ্রমণ সঙ্গীর পাতা উল্টোয়। খুঁজে পেতে গ্যাংটক বাকিটা ওখানে গিয়ে ভাবা যাবে। ঠিক হ্যায়, তাই হোক, সিকিমই যাওয়া যাক, একটা পেপসি হবে নাকি সেলিব্রেশন, পুজোর মত?
    তারপর? তারপর আবার কি? দার্জিলিং মেলের রাত্তির, এন যে পিতে গাড়ি, গুঁতোগুঁতি করে আরো সাত জন একইরকম ব্যোমভোলে পার করে দিও বাবা মার্কা মুখের সাথে রাস্তা শুরু। পাকদণ্ডী ব্যাপারটা বইয়ের বাইরে জানতুম না, কাজে দেখি বিশেষ সুবিধের না। বসার ব্যাবস্থা পিছনে, সে আবার লম্বামম্বি মুখোমুখি দুখান সীট, ধরার হ্যান্ডেল খোদার মালুম কে খুলে নিয়েছে। মাথা ঘুড়বে বলে মাকে কে একশো এক সহজ পন্থা বাতলেছিল, দিব্যি গ্যাংটক চলে এলুম, সে আর কম্মে লাগলোনা কারুর। হ্যাঁ সেই প্রথম দেখা তিস্তার সাথে, সেই প্রথমবার ওর গাড় সবুজ জলের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকা। কে জানে কদ্দুর থেকে আমার মত পাথড় কুড়িয়ে আনছিল, আমার মতই কখন একঘেঁয়ে ভেবে ছড়িয়ে ফেলেছে পাশে। একটু রাগী কিন্তু হতভাগা সমুদ্রের মত ভয় দেখায়না বরং চোখ পাকালেও ঠিক আমি আঁটকালে অঙ্কটা নিজেই কষে দেবে। এনার্জেটিক, বেশ মজার, দুষ্টুমি মাখা, গোমড়া হতে গিয়েও খিল খিল করে হেসে ফ্যালা, কেমন যেন স্রেফ ভালো লেগে যায়।
    গ্যাংটককে ভালোবেসে ফেলাটাও তখনি, ছিমছাম, পরিস্কার, গোছানো, সহজ সরল, আর অফ সিসন বলে তিনশো টাকায় হাই ফাই ঘর পাওয়া যায়। একদম পেলিং স্ট্যান্ডের পাশেই, পা ডোবা কার্পেট, জানলা খুললেই কাঞ্চণজঙ্ঘা, উফফ। বাবাই খোঁজ খবর নিয়ে আনল আমরা ইউমথাং যাব, ফিরে ছাঙু লেক। পরেরদিন নেমে দার্জিলিং তারপর বাড়ি, খাশা প্ল্যান। একটা সানগ্লাস লাগবে নাকি, বরফ থাকতে পারে, একটা ব্রাণ্ডির বোতলও লাগবে। সে রাত্তিরেই মালুম হল ব্রান্ডি ব্যাপারটা মোটেই ভালো খেতে না, বিচ্ছিরি তেঁতো, কে আর জানত আর ক বছর পর ওইটেই ভালো লেগে যাবে। যাইহোক পরের দিন আবার বেড়োনো, শেয়ার গাড়ি, সঙ্গে চারটে দাদা, আলাপ জমে গেল, ফেরার পরও বোধহয় কিছুদিন যোগাযোগ ছিল। গ্যাংটকের শেষ রাত্তিরে ওদের চেনা হোটেলেই ছিলাম, নাম ধাম কিছুই মনে নেই এদ্দিনে। আশ্চর্য সে হোটেল তারপর এত্তবার গিয়েও আর খুঁজে পাইনি,খালি তার মাটন কষা টা সেরা ছিল মনে আছে, স্রেফ সেরা। যাইহোক ইউমথাংয়ের গপ্পে ফিরি। লাচুং তখন ছোট্ট একরত্তি গ্রাম, স্কুল ফুটবল মাঠ, কংক্রিটের বাড়ি কোনটাই মিলত না। চুংথামের বাঁধ তখন তৈরি হয়েছে বা হবে কিন্তু লাচুংয়ে আলোর বালাই নেই। নদীর একদম পাশে একটা দোতলা কাঠের বাড়ি তে থাকা। সেই বিকেলে প্রথম অবাক হয়ে দ্যাখা মেঘ কি করে পাহাড় বেয়ে নামে, আর রাতে প্রথম বনফায়ারের আড্ডা। সে বাড়ি আজ কোথায় জানি না, জানতে চাইওনা, মনে আছে আমার বয়সি একটা মেয়ে ছিল, তিস্তার মতই ছটফটে রাগী আর তরতর করে অনর্গল বকে যাওয়া একটা মিস্টি মেয়ে। দুদিনে বোধহয় দুশোবার ঝগড়া হয়েছিল তার সাথে, আমি হিন্দি কিসসু বুঝতাম না আজো বুঝি না তেমন, বলাটা আরো ভয়ানোক। ও ওই দেড়দিনে আমার সে ভাষা কি বুঝত জানি না ওর কথাও আমি বুঝতুম কিনা মনে নেই কিন্তু রাগারাগি হতই। সে আমি ডিম খাবনা বলেই হোক কি সক্কাল সক্কাল বারান্দায় ঠেস দিয়ে ঘুমোনোই হোক, কি সন্ধের আগে বেড়া ডিঙিয়ে নদীটার কাছে আরো একটু পৌছনর চেস্টা দেখে ফেলার পর টেনে এনেই হোক। ইউমথাংয়ে কি দেখেছিলুম ভুলে গেছি, মিলিটারি ক্যান্টিনে সস্তায় পারফিউম কিনেছিলুম আর চকোলেট দিয়েছিল কেউ। বরফ কি সেদিন প্রথম দ্যাখা নাকি তার পরের দিন ছাঙু বা বাবা মন্দিরে সেও আর মনে পরেনা, তবে সেই প্রথম ঘন্টা গড়ালে আকাশের আলো নেভা দেখেছিলুম। মনে রাখার মত ছবি খালি দুটো, ওদের বোধহয় ভোলা যায়না, ভোলা উচিৎ না। এক ছাঙু থেকে ফেরার সময় পুরো মেঘ ঢাকা কিচ্ছুটি না দেখতে পাওয়া রাস্তায় গাড়ির পিছনে বসে বুক ঢিবঢিব। আর দুই লাচুং থেকে ফেরার দিন আমার দেড়দিনের বান্ধবীর হাত নাড়া আর গাড়ি থামিয়ে দৌড়ে এসে হাতে দুটো লজেন্স গুঁজে দেওয়া, একদম চুপ করে, কে জানে সে এখন কোথায়,কি করছে। ব্যাস বাকি আর কোন গল্প নেই এই প্রথমবারের। সিকিম ফিরে গেছি তারপর আরো চার কি পাঁচবার, বন্ধুদের সাথে প্রতিবারই,মাস্টার্সের সময় থেকে নিয়মিত বছরে একবার করে হয়েই যায়। সেই ইউমথাং ই বারবার, গুরুদোংমার টা এত্তবারের চেস্টায় এবছরের মে মাসেই যেতে পেরেছিলুম, সে ঝাঁপি অন্য কোন কিস্তিতে। প্রথম সেই হোটেলটার পাশেই উঠি আজকাল। গ্যাংটক খুব একটা বদলায়নি, সত্যি বলতে আমার চোখে একদমই বদলায়নি, হয়ত বদলাবে কোলকাতার মতই, বা বদলে গেলেও লাচুং য়ের মত নতুন ফূটবল মাঠটায় বসে পাশে সদ্য আলাপ হওয়া মিশকালো কুকুরটাকে আদর করতে করতে পুরোনো গল্পগুলো ঠিক মনে করিয়ে দেবে।
  • Rit | 213.110.242.20 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৩:৫১718506
  • আরো হোক। অনেক অনেক হোক। ঃ)
  • Manish | 24.99.147.116 | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৫:১১718507
  • ভীষন ভালো হচ্ছে
  • পুপে | 131.241.184.237 | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৫:১৪718508
  • পরের কিস্তি কই?
  • pi | 192.66.40.95 | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৫:২০718509
  • কই জে বিগড়া হুয়া বাপকা লাডলা, পরের কিস্তিতে যেসব ঝাঁপি খোলার কথা, তারা কই ?
    খাসা হচ্ছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন