এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Bangali | 165.136.184.6 | ২৮ জুলাই ২০১৬ ১৮:২২716815
  • বাংলায় ঘুরে বেরাতে গেলে বাঙালি হওয়া খুব দরকার, অন্তত পক্ষে বাংলা ভাষা জানা খুব ই দরকার। অ-বাঙালিদের পক্ষে কলকাতা আর দার্জিলিং এর বাইরে বাকি বাংলায় ঘোরা খুব ই মুশকিল
  • স্বরাজ দত্ত | 149.5.231.253 | ৩০ জুলাই ২০১৬ ২০:৫৭716816
  • একটা নির্মল কলকল ঝর্নার উপস্থিতি যখন টের পেলাম, তখন অনেকটাই দেরী হয়ে গেছে। শেষ পঁচিশ মিনিট ইয়ারফোনের তার দিয়ে কানের ভিতর ঢেউয়ের মতো আছড়ে পরেছে পন্ডিত শিব কুমার শর্মার স্বর্গীয় সন্তুরে শিবরঞ্জনী রাগ। আবেশটা নিয়েই চোখ বুজে পার হয়ে এসেছি স্টেশনের পর স্টেশন। চমক ভাঙল ঝর্ণার কলকলে।
    ট্রেনের বাদিকের জানালায় আমি আর ডানদিকের জানালায় উল্টোদিকে এক ফুটন্ত গোলাপ কুঁড়ি। বয়স মেরেকেটে বছর দেড়েক। কলকলে হাসি আর খলবলে নাড়াচারা দিয়ে ইতিমধ্যেই অর্ধেক কামড়ার আকর্ষণ নিজের দিকে করে নেয়েছে। অমোঘ আকর্ষণে আমিও মোহিত হয়েছিলাম বেশ কিছুক্ষণ, গোলাপি ফ্রক আর জামায় সে তখন সঞ্জীবনী। কিছু পরে খেয়াল করলাম গোলাপ কুঁড়ির এই উজ্জ্বলতার পিছনে আরো একটা ফ্যাক্টর কাজ করছে প্রবলভাবেই, সেটা হ'ল তার ব্যাকগ্রাউন্ড। মিশমিশে কালো তার রং।
    ছোটদের সাথে আমার ভাব হয় খুব তাড়াতাড়ি। যত ছোট হয় ওরা, ভাব জমতে সময় লাগে তত কম। ইতিমধ্যে দু-চার বার চোখে চোখে কথা হয়েছে তার সাথে। দূরত্বের জন্য আলাপটা জমেনি তখনো, তবু কিছু একটা এক্স-ফ্যাক্টর অনুভব করছিলাম। ট্রেনের জানালা দিয়ে ক্রমশ উল্টোদিকে দৌড়ে পালাচ্ছে সজীব পাট ক্ষেত, আম, কলা, নারকেল আর সুপুরি গাছের সারি। ক্ষাণিক এলোমেলো মেঘ বৃষ্টিও ছরিয়ে গেল কিছুটা। কিন্তু কাহাতক আর এতকিছু ভালো লাগে তার! ঘুরে ঘুরে চোখে চোখে তখন সে মেপে নিচ্ছে কাছাকাছি সকলের মনের সবুজ।
    এতক্ষণ যেটা খেয়াল করিনি, এবার সেই এক্স-ফ্যাক্টরটা নজরে এলো। মিশমিশে সেই কালো ব্যাকগ্রাউন্ড আসলে তার মায়ের হিজাব। শুধু চোখ ছাড়া আর দেহের সমস্ত অংশ তাতেই সমাহিত করেছেন তিনি। আর তার ওপরেই খেলে বেড়াচ্ছে ঝর্ণার মত সেই গোলাপ কুঁড়ি। কনট্রাস্টের কি অদ্ভুত সমাপাতন ঠিক তার পাশের সিটেই আলো করে বসে আছেন গেরুয়া শাড়ি পরিহিতা এক মধ্যবয়স্কা নারী। অদ্ভুত মাতৃসুলভ তার চাউনি, কথা এবং উপস্থিতি। আমার গোলাপ কুঁড়িরও চোখ সবুজ থেকে সরে এসে গেরুয়াতে স্থাপিত হয়েছে ততক্ষণে। প্রথমে অল্প অল্প ছোঁয়া, তারপর শাড়ি, এবং এরপর এক মোক্ষম প্যাঁচে তুলসীর মালা।
    ছেঁড়া তুলসীর মালা কুড়িয়ে নিচ্ছেন সেই বৈষ্ণবী সাধিকা, খলখল হাসিতে গড়িয়ে পরছে গোলাপ কুঁড়ি, আর কিংকর্তব্যবিমূঢ় তার হিজাব পরা মা। বিমূঢ়তা কাটালেন সেই বৈষ্ণবী, দুহাত বাড়িয়ে দিলেন কুঁড়ির দিকে, বোধহয় অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্বকে দূরে ছুড়ে ফেলে কুঁড়িকে এগিয়ে দিলেন তার মা। কেন জানিনা এবার কুঁড়ি অনেক শান্ত, কিন্তু আরো সুন্দর, আরো আপন মনে হ'ল আমার। বাকী আরো কুড়ি মিনিট আমরা সকলে এই সখ্যতা দেখলাম প্রাণ ভরে। হাসনাবাদ স্টেশনে ট্রেন ঢোকার আগে, তিনি তার গেরুয়া পুটলি থেকে বের করলেন আরো দুটি তুলসী মালা, একটি নিজে পরলেন, একটি পরিয়ে দিলেন কুঁড়িকে। চন্দনের একটি ফোঁটা পরিয়ে স্নেহের চুম্বন এঁকে দিলেন কুঁড়ির কপালে।
    স্টেশনে নামার ব্যস্ততায় ছোট গল্পের পরিসমাপ্তি এই পর্যন্তই নির্দিষ্ট ছিল। আমিও তাড়াতাড়ি স্টেশন থেকে বেড়িয়ে ভ্যানের লাইন পেরিয়ে, খেয়াঘাটে দাঁড়িয়ে সিগারেটের মৌতাত সবে শেষ করে পা রাখতে যাব ফেরিঘাটের সিঁড়িতে চোখে পরল খানিক বিব্রত কু্ঁড়ির মা। ডানকাঁধে ঢাউস একটা কালো চামরার ব্যাগ, বাহাতের আলিঙ্গনে গেলাপ কুঁড়ি, আর সামনে রয়েছে আরো একটি বড়সর ব্যাগ। চোখাচোখি হতেই অব্যক্ত কুন্ঠা ঝলক দিয়ে গেল ও চোখে। কিছু বলা উচিত কিনা ভাবতে ভাবতে অজান্তেই এগিয়ে গেলাম, হয়তো কুঁড়ির সেই মোহময়ী টান, আলাপ না হওয়ার সুপ্ত ইচ্ছে। ভাবছিলাম বলব - ব্যাগটা আমি ধরছি, আপনি আসুন, কিন্তু কাছে পৌছানের আগেই রীতিমত ডাইভিং বোর্ড থেকে লাফানোর মতই কুঁড়ির শরীর ছিটকে এল আমার দিকে। আমার কোলে পৌছে আবার সেই মন ভালো করা অনাবিল খলবলে হাসি। আমি শুধু ভাবছি এ কোন এক্স-ফ্যাক্টর????
    চমক ভেঙে উনিই বললেন, 'আপনি যদি একটু......'। কথা না বাড়িয়ে আমরা পায়ে পায়ে এগুলাম জেটির দিকে। সামনে ভরা জোয়ারের ইছামতী, কোলে খলবলে ঝর্ণা।
    ফেরী পার হয়ে পারহাসনাবাদ স্ট্যান্ড, জিও কার-এ খঁ-পুকুর, রামেশ্বরপুর, বরুনহাট, কাটাখালি ব্রিজ, হিঙ্গলগঞ্জ, সান্ডেলের বিল হয়ে রাস্তা হেলে দুলে যত এগিয়েছে, তত হেলেদুলে তাঁর অবোধ্য মিষ্টি ভাষায় গল্প শোনাতে শোনাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে লালে-ঝোলে আমার হাত ভিজিয়ে শান্ত হয়েছে সে। রূপমারীর বাঁকে গাড়ি থামতে পথ যতিচিহ্ন এঁকে দিল। আমার কোল থেকে মায়ের কোলে যাবার সময় ঘুম ভাঙল তাঁর। আমাদের গাড়ির ড্রাইভারও রেডিয়েটারে জল দেবার জন্য সময় নিল কিছু। আমি চেয়ে রইলাম কাঁচা রাস্তার বাঁকের শেষ অবধি।
    কালো হিজাব পরা মায়ের কোলে ফুটফুটে এক আলোর বন্যা। কপালে চন্দন ফোঁটা, সমানে হাত নেড়ে টা টা করে যাচ্ছে সে আমায়, তার হাতে জড়ানো সেই তুলসীর মালা।
    এই আমার প্রিয় সুন্দরবন। আমার প্রতিবার নতুন বাঁচার মহৌষধি।
  • π | ৩১ জুলাই ২০১৬ ২৩:১৪716817
  • ভাল লাগল। হিজাব পরা মায়ের কোলে চন্দন ফোঁটা কাটা তুলসীএর মালা জড়ানো মেয়ে, ভিশ্যুয়ালাইজ করতেও ভাল লাগলো।
    গ্রামেগঞ্জে ধর্ম এভাবে পরতে পরতে জুড়ে আছে, লোকাচার হয়ে, চিহ্ন হয়ে, একের সাথে অন্যে জড়িয়ে মড়িয়ে। এমনিভাবেই থাকলে খুব ক্ষতি কিছু আছে কি ? ঐ মৌলবাদের হাত থেকে বাঁচতে ধর্মকেই সমূলে উৎপাটন করার কথা শুনলে ভয় করে, সেই টানে আরো কত কী উপড়ে যাবে।
  • Manish | 127.214.50.174 | ০২ আগস্ট ২০১৬ ১৬:০২716818
  • পড়ে ভালো লাগলো।
  • aranya | 154.160.226.91 | ০২ আগস্ট ২০১৬ ২২:১১716819
  • সুন্দর
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন