এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দেবোত্তম চক্রবর্তী | 11.39.38.100 | ০৮ এপ্রিল ২০১৬ ১৮:২৩704291
  • মহাকাব্যিক পরিসর থেকে যদি চোখ ফেরাই বাংলা কথাসাহিত্যের দিকে তবে দেখব কাকের কমতি নেই সেখানেও। বিচিত্র স্বাদের বিভিন্ন গল্পগুলিতে কখনও সে মানুষের আচার-ব্যবহারের প্রতীক, আবার কখনও সে নিছক কাক হিসাবেই চিত্রিত। আর কাক নিয়ে এমত লেখালেখি তিনপুরুষ ধরে যাঁরা চালিয়ে গেছেন সেই উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার আর সত্যজিৎ-এর লেখনী থেকে বেরিয়েছে বিখ্যাত কাক কাহিনিমালা। উপেন্দ্রকিশোর ‘টুনটুনির বই’-এ লেখেন ‘চড়াই আর কাকের কথা’ যেখানে বন্ধু চড়াই-এর বুক খুঁড়ে খেতে গিয়ে শেষে নিজেই আগুনে পুড়ে মারা যায় এক বোকা কাক। পাই ‘বাঘ-বর’ গল্পে আরও এক কাককে যে ব্রাহ্মণীর রান্না করা পায়েসের ভাগ না পেয়ে প্রতিশোধস্পৃহায় ব্রাহ্মণঠাকুরের মেয়ের সাথে এক বাঘের বিয়ে দেওয়ার ফন্দি আঁটে। শেষাবধি অবশ্য বাঘ আর কাক দুজনেই মারা যায়। এই কাকই আরও অসামান্যভাবে চিত্রিত হয়েছে সুকুমার রায়ের ‘দ্রিঘাংচু’ গল্পে। গল্পের দ্রিঘাংচু অবিশ্যি যে সে কাক নয়, কেননা কেবল রাজার সামনে আসলে তাকে দাঁড়কাকের মতো দেখায়। লোকজন সব তাড়িয়ে কেবলমাত্র দ্রিঘাংচুর সামনে যদি “ হল্‌দে সবুজ ওরাং ওটাং / ইঁট পাট্‌কেল চিৎ পটাং / মুস্কিল আসান উড়ে মালি / ধর্মতলা কর্মখালি ” মন্ত্রটি উচ্চারণ করা যায় তাহলে নাকি আশ্চর্য সব কাণ্ড ঘটতে পারে। শুধু আজ অবধি কেউ তার সন্ধান পায়নি এই যা আফশোস ! তবে বাংলা সাহিত্যে কাককেন্দ্রিক রচনার সম্ভবত শ্রেষ্ঠ নিদর্শন ‘হ য ব র ল’। বস্তুত ‘কাক্কেশ্বর কুচকুচে’ কিংবা ‘হাতে রইল পেনসিল’-এর সাথে পরিচিত নয় এমন বাঙালি বিরল। ‘ঠিক চৌকসমতো কাজ করতে’ কাক্কেশ্বর যখন গোড়ায় বলে নেয় “ ইয়াদি কির্দ অত্র কাকালতনামা লিখিতং শ্রীকাক্কেশ্বর কুচ্‌কুচে কার্যঞ্চাগে। ইমারৎ খেসারৎ দলিল দস্তাবেজ ” তখন কাক্কেশ্বরের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে আমাদের চেনা মানুষজন। অন্যদিকে সত্যজিৎ-এর ‘কর্ভাস’-এ দেখি এক মানবসুলভ বুদ্ধিসম্পন্ন কাককে যে কাক্কেশ্বর-এর মতো শুধু যোগবিয়োগই করে না বরং নিজের নাম ইংরেজিতে লিখতে পারে। এমনকি ইংল্যান্ডের রাজধানীর নাম কিংবা মাস-বার-তারিখও সে লিখতে পারে অনায়াসে। দ্রিঘাংচু ‘কঃ’ ডাকে আর কর্ভাস ‘কা’ না বলে ‘কি’ বলে। এহেন কর্ভাসকে প্রোফেসর শঙ্কু চিলির রাজধানী সানতিয়াগো শহরে সারা বিশ্বের পক্ষিবিজ্ঞানীদের সম্মেলনে নিয়ে যান। শঙ্কুর বক্তৃতা চলাকালীন কর্ভাসের কৃৎকৌশল দেখে চিলিয়ান যাদুকর আর্গাস চড়া দামে তাকে কিনতে চান। না পেরে শেষে শঙ্কুর অনুপস্থিতিতে কর্ভাসকে নিয়ে পালিয়ে যান। শুধুমাত্র বুদ্ধি খাটিয়ে ‘মাইনাস বিশ পাওয়ারের সোনার চশমা’ আর্গাসের চোখ থেকে খুলে নিয়ে তাকে দিশাহারা করে দেয় কর্ভাস। অবশেষে সে ফের ফিরে আসে শঙ্কুর কাছে। কাকপ্রসঙ্গ তির্যকভাবে এসেছে পরশুরামের ‘দাঁড়কাগ’ কিংবা ‘বিরিঞ্চিবাবা’ গল্পেও। আর ‘বুড়ো আংলা’ প্রসঙ্গ তো এ-লেখায় বারে বারেই এসেছে।

    কথাসাহিত্যের পাশাপাশি কবিতার জগতেও কাকের কলরব যথেষ্ট। সবাই নন, কেবলমাত্র যে দু’জন কবির কবিতা নিয়ে এ আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব তাঁরা হলেন জীবনানন্দ দাশ ও সমর সেন। জীবনানন্দের কবিতায় এক পুনরাবৃত্ত প্রতীক বা recurrent motif হিসাবে বারে বারেই ভিড় করে কাকেরা, এমনকী ‘রূপসী বাংলা’য় ‘দাঁড়কাক’ নামে এক সম্পূর্ণ কবিতার মুখোমুখি হই আমরা। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, প্রধানত দাঁড়কাকের সন্ধ্যাবেলায় ঘরে ফিরে আসার ছবিই জীবনানন্দ পরম মমতায় আঁকেন তাঁর বিভিন্ন কবিতায়। তাই ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’-র ‘সন্ধ্যার কাকের মতো আকাঙ্ক্ষায় আমরা ফিরেছি যারা ঘরে’ কিংবা ‘বনলতা সেন’-এর ‘তখন সন্ধ্যার কাক ঘরে ফেরে’ অথবা ‘রূপসী বাংলা’র ‘সন্ধ্যায় যে দাঁড়কাক উড়ে যায় তাল বনে’, ‘এসেছে সন্ধ্যার কাক ঘরে ফিরে’, ‘যখন মেঘের রঙে পথহারা দাঁড়কাক পেয়েছে গো / ঘরের সন্ধান’ ইত্যাদি পঙ্‌ক্তিমালায় আমরা দেখি এই গৃহনিবেদিতপ্রাণ পাখিটিকে। অন্যদিকে ‘নাগরিক কবিয়াল’ সমর সেনের কবিতায় নগরজীবনের কর্কশতা, পঙ্কিলতা, ঊষরতা, ধূসরতা – এ সবকিছুরই চিত্রকল্প হিসাবে কাকের আবির্ভাব। ‘কয়েকটি দিন’, ‘পলাতক’, ‘একটি কবিতা’, গৃহস্থবিলাপ’ ইত্যাদি কবিতাগুলিতে বিচ্ছিন্নভাবে কাকপ্রসঙ্গ এলেও কবির মূল সুরটি যেন ধরা পড়ে ‘অনুর্বর বালুর উপরে / কর্কশ কাকেরা করে ধ্বংসের গান’ (ঘরে বাইরে) কিংবা ‘ও ধ্রুপদী শান্তি আমাদের নয়; / অনিদ্রা থেকে দুঃস্বপ্নে আমাদের যাত্রায় / কাক ডাকে, / রোদেপোড়া উদ্বিগ্ন মুখের কালো শব্দ’ (জন্মদিনে) ইত্যাদি পঙ্‌ক্তিগুলিতেই।

    চিত্রকলাতেও নানাভাবে এসেছে কাক। কালীঘাটের একাধিক পটচিত্রে যমরাজের অনুষঙ্গে কাক এসেছে। এমনকী এইসব পটচিত্রে কালীঠাকুরের বামপাশে রক্তপায়ী শৃগালের পরিবর্তে রক্তপায়ী কাকও দুর্লভ নয়। ঠাকুরবাড়ির অবন ঠাকুরের পাশাপাশি গগন ঠাকুর বা গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরও একসময় জাপানি ওয়াশ পদ্ধতিতে এঁকেছিলেন প্রচুর কাক। আর বর্তমান সময়ের চিত্রকর শুভাপ্রসন্নর কাক-চিত্রাবলী সম্পর্কে অবগত আছেন সব মননশীল বাঙালিই। কলকাতায় জন্মাবধি বড় হয়ে ওঠা এই শিল্পী যখনই নগরজীবনের ছবি এঁকেছেন, তখনই নগরজীবনের অন্যতম চরিত্র হিসাবে কাক তাঁর ছবিতে এক বিরাট জায়গা নিয়েছে। তাঁর নিজের কথায় “ নগর জীবন নিয়ে নগরের পরিকাঠামো নিয়ে যখনই ছবি এঁকেছি, কাকের অস্তিত্ব এসেছে স্বাভাবিকভাবেই। ... তাদের কোনও উড়ে-আসা-পাখি মনে হয় না কখনও। মনে হয় যেন এই কাকের সংসারে আমরা নগরবাসীরাই জুড়ে বসেছি । ”

    চিত্রকলার মতো কাক নানাভাবে এসেছে চলচ্চিত্রেও। কাকমারা সম্প্রদায় অর্থাৎ যাদের জীবিকাই হল কাক মারা এবং সেই মাংস খাওয়া – তাদের জীবনযাপন নিয়ে নির্মিত হয়েছিল গৌতম ঘোষের পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি ‘দখল’। পরিচালক হৃষিকেশ মুখার্জি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বানিয়েছিলেন ‘ঝুট বোলে কাউয়া কাটে’ নামে এক মজার হিন্দি ছবি যেখানে ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে এক প্রৌঢ় তার বাড়িতে এক কাক পোষেন যে কাক মিথ্যা কথা শুনতে পেলেই ‘কা’ ডেকে ওঠে। যদি হলিউডের প্রসঙ্গে আসি তবে অবধারিতভাবে মনে পড়বে আলফ্রেড হিচককের ‘দ্য বার্ডস’ সিনেমাটির কথা যেখানে ছিল সবসুদ্ধ তেরোটি কাক। আর প্রায় বছর কুড়ি আগে হলিউডে মুক্তি পেয়েছিল এক আধিভৌতিক ছবি ‘দ্য ক্রো’, যেখানে কাকেদের ভূমিকা নেহাত মন্দ ছিল না।

    কথায় বলে ‘যে দেশে কাক নেই, সে দেশে কি রাত পোহায় না’ ? অন্য কোথাও পোহায় কিনা জানি না তবে নিউজিল্যান্ডে অবশ্যই পোহায়। কেননা নিউজিল্যান্ড হল পৃথিবীর সম্ভবত একমাত্র দেশ যেখানে কাক নেই। অথচ কাকতালীয় ব্যাপার হল ওদেশের দুই বিখ্যাত ক্রিকেটারের নাম জেফ ক্রো আর মার্টিন ক্রো। আবার পাঁচ-পাঁচটা অস্কার জিতে নেওয়া সিনেমা ‘গ্ল্যাডিয়েটর’-এর নায়কের চরিত্রে অভিনেতার নাম রাসেল ক্রো। ব্যক্তিনামের পাশাপাশি স্থাননামের ক্ষেত্রে কাকের উল্লেখ পাচ্ছি কাকদ্বীপ, কাগমারি ইত্যাদি জায়গার। দার্জিলিং-এ এক ঝরনার নাম কাকঝোরা। আরও কত কাক যে কোথায় লুকিয়ে রয়েছে কে জানে !

    ‘তাই তো কবি বলেছেন ...’ জাতীয় লব্জ প্রয়োগ না করতে পারলে বাঙালির বলা কিংবা লেখা কোনওটাই জুতসই হয় না। কিন্তু বিধি বাম ! রবীন্দ্রনাথ অন্য অনেক কিছু নিয়ে লিখলেও কাক নিয়ে কেন যে দু’-চার কথা লিখলেন না ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ল টেড হিউসের কথা। ইংল্যান্ডের এই রাজকবি অপবাদ-অপযশে ক্ষতবিক্ষত, অপাঙ্‌ক্তেয়,ব্রাত্য এই পাখিটিকে নিয়ে রচনা করেছিলেন একাধিক কবিতা যা ‘ক্রো’ কাব্যগ্রন্থে বিধৃত। এই লেখা শেষ করছি কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী অনূদিত তাঁর একটি কবিতা দিয়ে :
    কাকের পতন
    কাকের রং যখন সাদা ছিল, তখন তার মনে হয়েছিল যে,
    ওই যে সুজ্যি, ওটা বড্ড বেশি সাদা।
    মনে হয়েছিল, বড্ড বেশি ঝক্‌মকে ওর চাউনি।
    কাক তাই ঠিক করল,
    হামলা চালিয়ে ওটাকে সে পট্‌কে দেবে।

    নিজের সবটুকু তাকত সংহত করল কাক।
    নখ দিয়ে খুব খানিকটা আঁচ্‌ড়ে নিয়ে গনগনে রাগে
    ফুলিয়ে তুলল তার রোয়া। তারপর
    সূর্যের একেবারে বুকের দিকে তাক করল তার ধারালো ঠোঁট।

    নিজের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে হেসে উঠল সে।
    তারপর গিয়ে সূর্যের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল।

    কাকের রণহুংকার শুনবামাত্র বুড়িয়ে গেল সব বৃক্ষলতা।
    ছায়া দীর্ঘ হল।

    কিন্তু সূর্য ক্রমেই উজ্জ্বল হতে থাকল, –
    আরও আরও উজ্জ্বল। আর
    কাক ফিরে এল পোড়া কাঠের মতো কালো হয়ে।

    হাঁ করতেই তার মুখ থেকে বেরিয়ে এল অঙ্গার।

    “ওই ওখানে”, ঢোঁক গিলে কাক বলল, “ সাদাই যেখানে কালো, আর
    কালোই সাদা, সেখানে আমিই জিতেছি ”।
  • দেবব্রত | 212.142.125.217 | ০৮ এপ্রিল ২০১৬ ১৯:০৩704299
  • পুরো লেখাটি , মানে বিভিন্ন পর্ব এক জায়গায় করেও দিতে পারেন । খুঁজে খুঁজে পড়ার চাইতে এক জায়গায় পাওয়া যায় , এখানে দেখুন অনেক বড় ধারাবাহিক লেখা সে ভাবে করা আছে । তবে আপনার ইচ্ছা । যথারীতি বেশ ভালো লাগলো ।
  • Abhyu | 81.12.146.97 | ০৮ এপ্রিল ২০১৬ ২২:৫২704301
  • দেবোত্তম বাবু, অত্যন্ত সুলিখিত সুখপাঠ্য লেখা। আরো লিখবেন আশা রইল।
  • দেবোত্তম চক্রবর্তী | 11.39.56.86 | ১০ এপ্রিল ২০১৬ ২৩:০৭704303
  • পাঠকরা তো মন্তব্যই করলেন না তেমন করে। তাই উৎসাহ হারালাম বলতে পারেন। অবশ্য মন্তব্য করার মতো হয়নি নিশ্চই।
  • avi | 233.191.52.103 | ১০ এপ্রিল ২০১৬ ২৩:১৭704304
  • খুব ভালো লাগলো। যেকটা রেফারেন্স চিনতে পারছি, আনন্দ পাচ্ছি। পড়তে পড়তে বেশ নস্টালজিক হলাম। তবে পরশুরামের বিরিঞ্চিবাবা দিলে কৌয়াদিদি দিতেই হবে। আর কাকপ্রসন্ন কই? :)
  • pi | 24.139.209.3 | ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০৫:৫২704305
  • দিব্বি লাগলো !

    পুরো লেখাটা একজায়গায় দিলে পড়তে সুবিধে হত..
  • দেবোত্তম চক্রবর্তী | 11.39.37.207 | ১১ এপ্রিল ২০১৬ ১৯:০৮704306
  • avi কাকপ্রসন্ন নিয়ে জিগিয়েছেন। ওখানেই ছিল – বর্তমান সময়ের চিত্রকর শুভাপ্রসন্নর কাক-চিত্রাবলী সম্পর্কে অবগত আছেন সব মননশীল বাঙালিই। কলকাতায় জন্মাবধি বড় হয়ে ওঠা এই শিল্পী যখনই নগরজীবনের ছবি এঁকেছেন, তখনই নগরজীবনের অন্যতম চরিত্র হিসাবে কাক তাঁর ছবিতে এক বিরাট জায়গা নিয়েছে। তাঁর নিজের কথায় “ নগর জীবন নিয়ে নগরের পরিকাঠামো নিয়ে যখনই ছবি এঁকেছি, কাকের অস্তিত্ব এসেছে স্বাভাবিকভাবেই। ... তাদের কোনও উড়ে-আসা-পাখি মনে হয় না কখনও। মনে হয় যেন এই কাকের সংসারে আমরা নগরবাসীরাই জুড়ে বসেছি । ”

    তবু ভরিলনা চিত্ত ?
  • avi | 113.24.86.119 | ১১ এপ্রিল ২০১৬ ২৩:৪৩704292
  • ওহো সরি সরি, মিস করে গেছি নির্ঘাত। একহাত জিভ বের করার ইমো। ঃ)
  • দেবোত্তম চক্রবর্তী | 11.39.39.106 | ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ১৮:৪৮704293
  • avi, Abhyu, d, dd, Atoz, sosen, dc, সে, Ekak – আরে মশাইরা সব গেলেন কোথায় ? আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিলাম, টইও শেষ কিন্তু আপনাদের কোনও থই পেলাম না। ভোটের বাজারে সবাই বিলকুল ভ্যানিশ নাকি ? যা দিনকাল !
  • Ekak | 53.224.129.50 | ২০ এপ্রিল ২০১৬ ১০:৫৮704294
  • পড়েছি। আপনি ধৈর্য্য ধরে লিখেছেন । তথ্যবহুল সুলিখিত । কেমন লেগেছে জিজ্ঞেস করলে সমস্যায় পরবো । আমার সব মিলিয়ে ভালো লাগেনি । সেটার দোষ আপনার নয় । সমস্যা টেকনোলজির ।আপনার লেখার যা ফর্ম সেটা এরকম দ্বিমাত্রিক খাঁচায় ধরার চেষ্টার ফলেই প্রাপ্র্য মনোযোগ হারাচ্ছে। মুশকিল হলো লেখালেখির জগতে কোনো বহুমাত্রিক খাঁচা এই ২০১৬ সালেও নেই । খুব , খুবই ইম্ম্যাচীয়র একটা জগতের মধ্যে আছি আমরা। এখানে যতই বলি পাঠক তার মত বুঝে নেবে আদতে পাঠকের চক্ষুদান অসম্পূর্ণ ও বসে জিরুতে গেলেই বাবলা কাঁটা। তো সেই টেকনিকাল খামতি কাটিয়ে ওঠার জন্যে লেখক যা করেন তা হলো গাইড এর কাজ । একটা হাওয়া সাপ বানিয়ে ছেড়ে দেওয়া যে লেখাটিকে ধান খেতের মত এপাশ ওপাশ কেটে বেরিয়ে যায় সবকিছু আপাত দৃশ্যমান রেখেও কিন্তু মর্জিমাফিক। মানে ওই দ্বিমাত্রিক মিডিয়াম এই অগ্মেন্ট ও সাসপেন্ড করে করে একটা শেপ এ আনা।

    আপনার লেখায় সেটি অনুপস্থিত। পুরাণ থেকে লোককাহিনী , সিনেমা থেকে বিজ্ঞান সব কিছুই আছে কিন্তু ওই হাওয়া সাপ টি নেই। ফলে পাঠক হঠাত কিছু "মিস " করলেও সেই মিসিং অনুভুতি টা তাকে ঝটিতি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে বাধ্য করেনা।ফলত লেখাটি সুলিখিত তথ্য সংগ্রহ হয়ে থেকে যায়, সবকিছু ছাপিয়ে লেখা হয়ে ওঠেনা। সুরম্য উইকি বলা যায় খানিক ।

    এখন এগুলো আপনার দোষ নয়। যদি সত্যি কোনো বহুমাত্রিক এবং টিউনিংসম্ভব কন্টেন্ট এক্সপ্লোরিং মিডিয়াম আমাদের হাতে থাকত তাহলে যে যার নিজের মত গুর্গুরুতে যেত নির্দ্বিধায়। কিন্তু যতদিন নেই , তদ্দিন , এ একান্তই ব্যক্তিগত মনে হওয়া , যে লেখক এর একটা দায়ীত্ব থাকে চক্ষুদান এর।

    এই আর কি । আমি প্রথমে , আসল এ " সব মিলিয়ে দাঁড়ায় নি , গোটা লেখা টার মধ্যে দিয়ে কোনো কাক উড়ে যাচ্ছে না " লিখে ছেড়ে দিয়েছিলুম। তারপর মনে হলো ওরম আঁতলামো করলে আপনার সৎ প্রচেষ্টার অবিচার হবে । তাই একটু দ্বিমাত্রিক ভাবে লিখলুম যে কেন ভালো লাগেনি।
  • d | 144.159.168.72 | ২০ এপ্রিল ২০১৬ ১১:২৬704295
  • আলাদা আলাদা টই খুলে লেখার ফলে আমি খেই হারিয়ে ফেলেছি, খুঁজেই পাচ্ছি না পর্বগুলো। সবকটা খুঁজে পেলে পড়ে ফেলব।
  • de | 69.185.236.53 | ২০ এপ্রিল ২০১৬ ১১:৫০704296
  • আমিও খুঁজে পাচ্চি না লেখাগুলো - একটু একজায়্গায় রাখা যায় কি?
  • দেবোত্তম চক্রবর্তী | 11.39.37.94 | ২২ এপ্রিল ২০১৬ ২২:০৬704298
  • Ekak,বড়ো ভালো লাগল। না, আমার ‘সৎ প্রচেষ্টার’ প্রশংসা দেখে নয়। বরং আপনার যে লেখাটা ‘সব মিলিয়ে ভালো লাগেনি’ এই সৎ এবং সাহসী উচ্চারণ দেখে। লেখাটার প্রথম দিকে জ একটা হাল্কা ঝাঁকুনি দিয়েছিলেন, তারপর আপনার জোরালো ধাক্কা। খুব দরকার ছিল এটার। লোকে আজকাল নিজের মর্জিমাফিক কিছু না হলেই হয় সস্তা খেউড়ে মাতে, নয়তো এঁড়ে তর্ক করে। আপনি “সব মিলিয়ে দাঁড়ায়নি,গোটা লেখাটার মধ্যে দিয়ে কোনো কাক উড়ে যাচ্ছে না” বলেই দায় সারতে পারতেন। তা করেননি। বেশ বিস্তারিতভাবেই কেন খারাপ লাগল তা বলেছেন । পাঠক তো এমনটাই হবেন, লেখকের পিঠ চুলকে দেওয়ার ঠেকা নিতে তার বয়েই গেছে। তবে আমি কিন্তু অতশত দ্বিমাত্রিক খাঁচাটাঁচা ভাবিইনি লেখার সময়। একটা হতকুচ্ছিত পাখিকে একটু অন্যভাবে চেনাতে চেয়েছিলাম মাত্র। মানে সুকুমার রায় আর কাকপ্রসন্নর টিপিক্যাল খাঁচা থেকে বের করতে চেয়েছিলাম আর কি। আর লেখালেখির জগতে কোনো বহুমাত্রিক খাঁচা এই ২০১৬ সালেও নেই যখন , তখন আর কীই বা করার আছে ? তবে হ্যাঁ, হাওয়া সাপ আর ধান খেতের ধারণাটা বেশ লেগেছে।

    Abhyu কে অসংখ্য ধন্যবাদ সব টইতেই লিংক দিয়ে দেওয়ার জন্য। d কিংবা de বা তাঁদের মতোই আরও অনেকে যাঁরা আলাদা আলাদা টই খুলে লেখার ফলে খেই হারিয়ে ফেলেছেন, এবার তাঁদের সুচিন্তিত মন্তব্য পাওয়া যাবে বোধ হয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন