এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আরে বাবা, দ্যাশটা কি?

    Somen Basu লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ১৯২৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Somen Basu | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:১৫703636
  • দেশপ্রেম, দেশদ্রোহ নিয়ে হইচইয়ের মধ্যে আমার, বিপুলবাবুর কথা ধার করে, 'কচি মনে' একটা সরল প্রশ্ন কুটকুটাচ্ছে। কয়েই ফেলাই। আচ্ছা, দেশ ব্যাপারটা কি?

    ও মা, প্রথমেই অমন তেড়িয়া হয়ে গেলেন কেন গা? কইলুমই তো কচি মন! পুরোটা শুনুন না।। তাপ্পর না হয়।।।! আর আমি তো জানতে চাইছি বই নয়!

    না, না।। দেশের নাম নয়কো! ওটি জানি। ভারতবর্ষ, বর্ষটা অলঙ্কার, ভারত, ইন্ডিয়া, অনেকে আবার হিন্দুস্তান ডাকতেও বেশ পছন্দ করেন। সে যাই হোগ্গে, আমার প্রশ্নটা, ইহা কাহারে কয়?

    প্রথম দেশের সঙ্গে চোখাচুখি হইচিল বোধকরি ফ্রাঙ্ক স্কুল মানচিত্রাবলিতে। ম্যাপ ব্যাপারটা আমার ভালোই লাগতো। তখন ম্যাপ পয়েন্টিং খেলাটা বেশ জনপ্রিয়ও ছিল বুক ক্রিকেটের মতো। ভারতের ম্যাপটা আমার একটা মানুষের মতো লাগতো। টেরিকাটা একপাশে ঢেউখেলানো চুল, দুদিকে হাত ছড়ানো, ঠ্যাংদুটোকে যেন কেউ বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে বেঁধে দিয়েছে। খণ্ডকল্পনাও ছিল। গুজরাটটাকে যেমন আমার বরাবরই মনে হত, একটা মাথা হাঁ করে কামড়াতে আসছে। না না, যাঃ।।। মাইরি বলছি, ও মুখে কোনও দাড়ি ছিলনি।

    যাই হোক, ওইটেই কি দেশ? ওই কত লক্ষ বগ্গোকিমি ভূখণ্ডটুক? মানে মাটি? ওই মাটিটেরে ভালোবাসাই দেশপ্রেম? হতে পারে।।। বললুমই তো বুঝিনে।।। কিন্তু ব্যাপারটার মধ্যে কেমন প্রোমোটার-প্রোমোটার গন্ধ না? না না, আমি কোনও পেশাকে খাটো করছিনে, আচ্ছা ওনাদের না হয় রিয়াল এস্টেট ব্যারনই বললুম, কিন্তু ওনাদেরই দেশপ্রেমিকের রোলমডেল ঠাওরাতে কেমন জানি লাগচে! সেও হতেই পারেন, তবে সেক্ষেত্রে আমার আর দেশপ্রেমিক হওয়া হল না।

    নাঃ, যদি খু-উ-ব সিরিয়াসলিইই ভাবি, তাও দেখুন, মাটি নিয়ে বখেড়া কি কম? মানুষ সেই চাষবাস শেখা ইস্তক এই জিনিসটা নিয়েই কাড়ামাড়ি করেছে সবচে বেশি। পাশের বাড়ির দাদাকে গিয়ে যদি বলি, আহা, এ তো আমারও বাড়ি, কারণ আমার দ্যাশের মাটির ওপর খাড়াইয়্যা আসে, কেলিয়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেবে। ছোট থেকে এটাই দেখে বড় হওয়া আমরা ভেবে নেবো যে ঐ অত্ত লোক্ক বগ্গোকিমির মাটিটা আমার, আর সেটাই আমার দেশ।।। নাঃ, বড্ড চাপ হয়ে গেল না? আর আমরা তো এখন ফ্ল্যাটবাড়ি, মানে মাটিও নাই, স্রেফ শূণ্য! দূর।।। এটা দিয়ে দেশ বোঝা যায়, বুকে হাত দিয়ে বলেন দেখি? ঠিক এইজন্যই কাশ্মীরের মাটি ছাড়ছি না, ছাড়বো না করে যারা মুখে রক্ত তোলে, আমার তাদের সাক্ষাত মহাপুরুষ মনে হয়! নিরাকারের এমন সাধনা মহম্মদও বোধহয় করতে পারেনি!

    মোদ্দা কথায় দাদা, মাটি কেসটা দাঁড়াচ্ছে না, সে যতই রাগ করেন! তাইলে রইলো বাকি, মা আর মানুষ। অ্যাই দ্যাখো, আবার বদামো! ওব্বেসটাই খারাপ হয়ে গেছে। মা বাদ, সে সবারই আছে, নিজের মত করে সবাই তাকে ভক্তিশ্রদ্ধা করে, একটু মানুষ দেখা যাক।

    মানুষ বলতে ওই কাঁটাতারের মধ্যে যারা থাকেন তারাই। মানে তারা যেখানে থাকেন সেটাই আমার দেশ। আর তাদেরকে ভালোবাসাটাই দেশপ্রেম। একটু গোলমেলে হলেও তাও একটা মানে করা যাচ্ছে। শুধু কেউ যেন ঐ কাঁটাতার ডিঙোবেন না প্লিজ। তাহলে যেখানে গিয়ে ঠাঁই গাড়বেন আমাকে সেটাকেও নিজের দেশ ভাবতে হবে! সে ভারি ঝামেলা।

    কিন্তু ঝামেলা কি কমলো আদৌ? এই যে আমার দেশের মানুষ, যারা কাঁটাতারের মধ্যে থাকবে, আর যাদেরকে ভালোবেসে আমি দেশপ্রেমিক হবো, তারা অনেকেই তো দেখি দেশ বলতে ভারতের নামটা মনেই আসে না! মফস্বলের যেসব লোকজন কোলকাতায় কাজ করেন, ছুটিছাটা পেলে বলেন "দেশে যাচ্ছি!" তাদের দেশ মালদা, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর, কোচবিহার।।।। মায় আমি? "তোমার দেশ কোথায়?" "বরিশাল!" ভারত নয়, বাংলাদেশ নয়, বরিশাল!! আচ্ছা লাফড়া! এই যে চাদ্দিকে এত এত দেশপ্রেমিক দেখছি, এয়াঁরা লিচ্চই দেশ জিগালে ভারতই বলেন। আপনারাও শুনেছেন নিশ্চয়ই!

    আচ্ছা, ধরে নিলুম আমরা শুধরে গেলুম, কিন্তু যারা শুধরোবেই না বলে পণ করে রেখেছে? কাশ্মীরী, নাগা, মণিপুরি, মিজো।।। বাব্বা, লিস্টি তো নেহাত ছোট নয়। একটাই ধরা যাক, সবচেয়ে কমন, কাশ্মীরী। এরা ব্যাটাচ্ছেলে কিছুতেই মানবে না, ভারত এদের দেশ। বরং জিদ ধরে বলতেই থাকবে, ভারতে থাকবে না। যদি বলেন, জানলাম কোথায়, বলবো, এটা এতই সিধেসরলসোজাসাপ্টা যে আমার মতো মোটাবুদ্ধিও দিব্যি বোঝে। সেই উনিশশো বাপ্পান্ন সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ কয়েছিল, কাশ্মীরে একটা গণভোট নিতে। ভারত সরকারের সময়ই হচ্ছে না! কিছু গন্ধ তো নিশ্চয়ই পেয়েছেন ওনারা! ওনাদের বুদ্ধি, নাক দুটোই আমার-আপনার থেকে অনেএএক ধারালো।

    যাগ্গে, যেটা বলছিলুম, কাশ্মীরীদের আমি ভালোবাসি, কারণ কাশ্মীর আমার দেশ, কাশ্মীরীরা ভারতে থাকতে চান না, আমি অবশ্যই সেটা সমর্থন করি, ভালোবাসলে করতেই হবে, কারণ এতে আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষের কোনওই ক্ষতি নেই, আর সবচেয়ে বড় কথা, পরস্পরকে, পরস্পরের মতকে সম্মান করাটা ভালোবাসার অন্যতম প্রধান শর্ত।।। এবার কাশ্মীর বেরিয়ে গেল, ফলে কাশ্মীরীরা আর আমার দেশের মানুষ রইলো না, কাশ্মীরও আর আমার দেশ রইলো না!!

    আবার উল্টোদিকে, যাদের কাছে কাশ্মীর আর ভারত প্রায় সমার্থক শব্দ, কাশ্মীরীদের প্রতি যাদের বার্তাঃ 'তোরা দুটাকা কিলো চাল খা, বেয়নেটের গুঁতো খা, গুলি খা, ইত্যাদি খা, প্রভৃতি খা, কিন্তু কিছুতেই ভারত ছাড়ার কথা মুখে আনবি না' তারা আর যাই হোক কাশ্মীরীদের ভালোবাসেন না, ফলে কাশ্মীরীরা তার দেশের মানুষ নন, কাশ্মীর তার দেশও নয়।।।!

    এবার তার সাথে ঐ লিস্টিটা ফেললে।।।। কি দাঁড়াচ্চে রে বাব্বা।।।!!

    দুত্তেরিকা।।।! সব গুলিয়ে গু, থুড়ি গ, ঘেঁটে ঘ হয়ে একশা।।।! চুলদাড়িতে পাক ধরে গেল, কিন্তু আমি আর দ্যাশ বুঝতে পাল্লুমনি।।।! আমার আর কিছু হবেনিকোওও।।।। (হাত পা ছুঁড়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্নার স্মাইলি)!
  • Robu | 11.39.39.226 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৮:২৫703637
  • ভাল হয়নি তেমন লেখাটা ঃ-(
    আমার মতে।
  • dc | 132.164.36.171 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৮:২৯703638
  • কাশ্মীরের আজাদিটা অতো সরল না দাদা, মুশকিল হচ্ছে ওখানে ভারত, পাকিস্তান আর চীন তিনটে দেশের ইন্টারেস্ট ঘোঁট পাকিয়ে বসে আছে। এমনিতে কাশ্মীর আজাদ হলো কি না হলো সেনিয়ে কারুর হয়তো তেমন মাথাব্যথা হতো না, কিন্তু এখন যা অবস্থা তাতে এই তিনটে দেশই জানে যে কাশ্মীর যে দখল করবে সে অন্য দুটো দেশের ওপর কিছু স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভান্টেজ পাবে। ফলে এখন ওই পুরো অঞ্চলটায় যার যা পজিশন তার থেকে একটুও এদিক ওদিক কিছু হবে বলে মনে হয়না। তিনটে দেশেরই আর্মি নিজের নিজের অবস্থানে গেঁড়ে বসে আছে, একটুও সরবে বলে মনে হয়না। কাশ্মীরের লোকেরা নিজেরা কি চায় সেটাও একেবারে আনক্লিয়ার কারন সব কটা দেশই কাশ্মীরের জনমতকে প্রভাবিত করার জন্য হাজারটা প্রক্সি ওয়ার খেলে চলেছে। কাজেই কাশ্মীরের সমস্যা, যেদিক থেকেই দেখুন না কেন, খুব ঘেঁটে আছে। আর এসব ক্ষেত্রে সাধারনত যা হয়, এই স্ট্যাটাস ক্যুও আগামি অন্তত কুড়ি-তিরিশ বছরে কিছু পাল্টাবে বলে মনে হয়না। (কাশ্মীর মানে পুরো রিজিয়নটা ধরে বললাম, জম্মু, পিওকে, আকসাই চীন ইত্যাদি সবটা ধরে)।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন