এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মনোজ ভট্টাচার্য | 24.99.203.90 | ৩০ মে ২০১৫ ১৪:৪২679485
  • এরকম কি হয় !

    ভবানী শঙ্করএর আশি বছর বয়স হলো । অনেকদিন হলো রিটায়ার করেছেন । শরীর স্বাস্থ্য এখনো মোটামুটি ভালই । পুরানো দু-একজন বন্ধু এখনো আছে - গল্প-গুজবও হয় । ওনার স্ত্রী বিজয়া দেবী প্রায় তিপ্পান্ন বছর একসঙ্গে ঘর করছেন - তারও প্রায় সত্তর বছর বয়স হলো ! এতদিন একসঙ্গে থাকতে থাকতে স্ত্রীয়ের চেয়ে বেশি - সঙ্গী হয়ে গেছেন । দুজনেই দুজনের সুখ-দুঃখ-ব্যথা-বেদনার অংশীদার হয়ে গেছেন !

    দুই ছেলে ও এক মেয়ে -তাদের বিয়ে হয়ে গেছে । ছেলেদের আবার ছেলে-মেয়ে - মোটামুটি ভরা সংসার - আত্মিকতা ও স্বার্থকতা মিলিয়ে সব সময় বাড়ি-ঘর কোলাহলমুখর হয়ে আছে ! উনি সংসারে ঢুকেই বুঝেছিলেন - সব সংসারের মতই এটাও একটা জতুগৃহ ! শাশুড়ি-পিসি-শাশুড়ি-ননদ আর তাদের অত্যাচার নিয়ে সংসার ছিল তার - সে এক দীর্ঘ পরিক্রমা ! যখন সেই পথ প্রায় শেষ - তখন আবার আরম্ভ আধুনিকমনা বউদের মানসিকতার দাপট ! ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন তিনি !

    এখন ভবানী ও বিজয়ার আলোচনার বলতে সংসারের স্মৃতির জাবনা কাটা আর পারলৌকিক সম্পর্কীয় । কে আগে পৃথিবী ছাড়তে পারে তারই একটা বিতর্ক - প্রতিযোগিতা ঠিক নয় ! তবু কে আগে যাবে তারই পরিকল্পনা ! যেন পরিকল্পনা করে পরলোকে যাওয়ার টিকিট কাটা ! দুজনেই মনে করে এই সংসারে একজনের বিহনে আরেকজনের বেঁচে থাকা দুঃসহ - তাই দুজনের একসঙ্গে প্রস্থান করাই কাম্য ! যেমন বিয়ের পর গাঁটছড়া বেঁধে একসঙ্গে এসেছিল - তেমনি একসঙ্গে হাত ধরাধরি করে বিদায় নেওয়া - আরকি !

    এইভাবে দিব্যি চলছিল দুজনের দিন-যাপন ! তারই মধ্যে হঠাত একদিন সকালে ঘুম থেকে আর জাগলেন না ভবানী বাবু । ঘুমের মধ্যেই হৃদরোগে মারা গেছেন । একটু বেলা হতেই ছেলেরা তাদের বউরা - মেয়ে-জামাই - নাতি-নাতনিরা সবাই ভীড় করে ভবানীর বিছানার চারপাশে শোক-প্রকাশ করছে - মেয়ে আর বউরা খুব কান্নাকাটি করছে !

    আর শোকমগ্ন বিজয়া কাছেই সোফায় বসে চিন্তা করতে লাগলো ! - এরকম তো কথা ছিল না ! দুম করে লোকটা চলে গেল ! - পুরুষরা স্বার্থপর হয় বটে ! - আমার কথা একবারও ভাবলো না ! - এইসব সাত-পাঁচ ও কিছুটা ভবিষ্যৎ - ভাবছিলো !

    ' - ওই তো দাদু উঠছে - ! - বাবা চোখ মেলছে ! - বাবা-বাবা দাদু-দাদু - ইত্যাদি নানান শব্দের মধ্যে দিয়ে ভবানী বাবু চোখ মেলে খুঁজতে লাগলেন বিজয়া দেবীকে । বিজয়া দেবী শয্যার কাছে এলেন - দেখলেন ভবানী ওরই দিকে তাকিয়ে রয়েছেন !

    ' - গিন্নি - আমি তোমাকে নেবার জন্যে ফিরে এসেছি ! ভুল করে অনেকটা চলে গেছিলাম - তোমাদের কান্নাকাটি শুনে আবার ফিরে আসতে হলো !'
    ' - চলে গেছিলাম মানে ! কোথায় গেছিলে ?' - বিজয়া অভিমান ভরে জিজ্ঞেস করলো !
    ' - আমি তো স্বর্গে যাচ্ছিলাম ! - তোমার কথা মনে পড়তেই ফিরে এলুম !'
    ' - আমার কথা ! আমার কথা আবার তোমার কবে মনে থাকে ! - নাও এবার উঠে পর ! - সংসারের কাজ সব আটকে আছে - সবাই তোমার জন্যে দাড়িয়ে আছে এখানে - কেউ কোথাও যেতে পারছে না !'
    ' - গিন্নি বুঝতে পারছ না কেন - আমার সময় নেই এখানে থাকার - শুধু তোমাকে নিতে এসেছি ! এখুনি আমার পাশে শুয়ে পরো - আমরা একসঙ্গে যাবো !'
    ' - তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছে - এখনো কান্ড জ্ঞান হলো না ! ঘরভর্তি লোকজন - আর আমি তোমার পাশে গিয়ে শোব ! লোকে কি বলবে !' বিজয়া গজ গজ করতে থাকলো !
    ' - লোকের কথা ছাড়ো - পরলোকের কথা ভাবো ! ভুলে গেছো - আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম - দুজনে একসঙ্গে মরবো ! সবাইকে বাইরে যেতে বলো । আর আমার পাশে এসে শুয়ে পর ! ' ভবানী বাবুর স্বর দৃঢ় শোনালো !

    এই কথায় বিজয়া দেবী খুব দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে চিন্তা করতে লাগলো । উপস্থিত সবাই খুব উত্সাহী হয়ে উঠলো - কোনো একটা অদ্ভুত ঘটনার আশায় বা আশংকায় গুঞ্জন করতে করতে বিজয়া দেবীকে ঘরে রেখে সবাই বাইরে বেরিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো ।

    ' - তুমি এসে আমার পাশে শোও - আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিই - তাহলেই ঘুম আসবে '- !

    এরকম প্রায়ই হয় - রাতে বিজয়া দেবীর ঘুম না এলে ভবানী বাবু মাথায় হাত বুলিয়ে দেন ! বিজয়া দেবী বিছানায় ভবানী বাবুর পাশে শুয়ে পড়লেন - কিন্তু একটা অনিশ্চিত উদ্ব্বেগের মধ্যে ঘুম আসে না - উনি ঠিক বুঝতেই পারছেন না - ভবানী বাবু জীবিত না মৃত । ভবানী বাবু আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলেন । ধীরে ধীরে বিজয়া দেবী ঘুমের কোলে ঢুলে পড়লেন । তখন ভবানী বাবুও শুয়ে পড়লেন ও খানিক বাদেই ঘুমিয়ে পড়লেন ।

    খানিকক্ষন পর সবাই ঘরের মধ্যে ঢুকে দেখল - ভবানীশঙ্কর ও বিজয়া দেবী – দুজনেই পাশাপাশি শুয়ে রয়েছে - মৃত ! ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই আশ্চর্য হয়ে ভাবতে থাকে !

    সত্যিই কি এরকম হয় !

    মনোজ
  • DB | 79.142.0.116 | ৩১ মে ২০১৫ ০৬:৪৮679486
  • সত্যি অদ্ভুত গল্প
  • মনোজ ভট্টাচার্য | 24.96.56.196 | ৩১ মে ২০১৫ ১২:২৯679487
  • বেশ কয়েক বছর আগে একটা চীন গল্পের ছায়া নিয়ে - ভবানীশঙ্কর ও বিজয়া দেবীর ওপর একটা গল্প লিখেছিলাম । মারা যাবার পর স্বামী ভবানীশঙ্কর ফিরে এসে স্ত্রী বিজয়া দেবীকে সঙ্গে নিয়ে যেতে এসেছিলেন ও কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দুজনেই প্রয়াত হলেন !

    অতি সম্প্রতি সেই রকম একটি ঘটনা ঘটল - ওহাইওর ন্যাশপোর্ট শহরে। বিরানব্বই বছরের কেন ফিলামলি - হেলেনকে বিয়ে করেছিল ৭০ বছর আগে । তখন হেলেনের বয়েস ২১ হয়নি । দুজনে ৭০ বছর একসঙ্গে দাম্পত্য জীবন কাটিয়ে ১২ই এপ্রিল, ২০১৩ সালে মারা গেলেন মাত্র ১৫ ঘন্টার তফাতে ।

    ব্যাপারটা কাকতালীয় - হলেও ঘটনাটা ঘটেছে বাস্তবে !

    মনোজ ভট্টাচার্য
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন