এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শঙ্খশুভ্র | 127.194.116.105 | ০৯ মে ২০১৫ ২৩:৪৫677300
  • এক কথায় বলা যায় internet.org হলো facebook এর নেতৃত্বাধীন কর্পোরেট নক্ষত্র সমাগমের মস্তিস্কপ্রসূত একটি বিতর্কিত সামাজিক প্রকল্প। internet.org র প্রেরণা, বর্তমান পৃথিবীর দৈনন্দিন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মধ্যে ইন্টারনেটকে অন্তর্ভুক্ত করে নেট এর ব্যবহারকে একটি অধিকার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা। এই দর্শন থেকেই তাদের প্রস্তাব বিশ্বের কাছে বিনামূল্যে ন্যুনতম ইন্টারনেট পরিষেবা পৌছে দেয়া, এর সাথে আছে পরিকাঠামোগত সীমাবধ্যতা ও তথ্য পরিবহন এর ব্যয় সংকোচনের ভাবনাকে মাথায় রেখে উন্নত মানের পরিষেবার প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে গবেষণা।

    আপাত দৃষ্টিতে খুবই যুক্তিপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক চিন্তা সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, তথ্য ও সংযোগ নির্ভর জগতে ইন্টারনেটএর প্রভাব যে
    কোনো স্তরের মানুষের জীবনেই অনস্বীকার্য্য। উদাহরণ হিসাবে ধরা যাক এক ধীবর এর কথা, তার কাছে প্রতিদিনের আবহাওয়ার সংবাদ, পরিবার ও ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়মিত সংযোগ থেকে তার তোলা মাছের বিজ্ঞাপন, প্রয়োজনীয় এই সব ই ইন্টারনেট এর মাধ্যমে আয়াসলব্ধ। একজন চাষি কিংবা পশুপালক আথবা ক্ষুদ্র দোকানী সাবার কাছেই একইভাবে ইন্টারনেটের গুরুত্ব অপরিসীম। আবার একজন শিক্ষার্থী ইন্টারনেটকে ব্যাবহার করতে পারে কোন অনলাইন এনসাইক্লপিডিইয়া বা বিষয়ভিত্তিক টিউটোরিয়াল এর সাহায্যে নিজের শক্তিতে পড়াশোনা করবার জন্য। কিন্তু সমস্যা হল পৃথিবীর বৃহৎ অংশের মানুষের কাছেই প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট সংযোগ অধরা, বিশেষ করে যারা উন্নয়নশীল কিংবা এর নীচে থাকা দেশগুলিতে বাস করেন ও আর্থ-সামাজিক ভাবে প্রান্তীয়। এই অধরা থাকার কারণ মূলত দুটো, প্রথমত ইন্টারনেট ব্যবহার করবার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সঙ্গতির অভাব, দ্বিতীয়ত ইন্টারনেট পরিষেবা দানকারি সংস্থাগুলির গ্রাহকের অভাবে পিছিয়ে পরা এলাকায় পরিকাঠামো তৈরির ব্যাপারে আনুৎসাহ। internet.org চাইছে এই মানুষদের কাছে বিনামুল্যে কিছু ওয়েবসাইট পৌঁছে দেওয়া, যেগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় বলে স্বীকার্য।

    বাহ উত্তম ব্যাপার, তালে বিতর্কের অবকাশ কোথায়? সেটা সনাক্ত করতে গেলে আর একটু বিশদে দ্যাখা প্রয়োজন।
    প্রস্তাবনাতে প্রথমেই একটি শব্দ লক্ষ্যনীয় "বিনামুল্য"। ইন্টারনেটতো শুধুই কিছু নিয়মাবলীর সঙ্কলন তালে সেটা ব্যাবহার করতে মুল্য লাগবে কেন? লাগবে, তার কারন ইন্টারনেটএ তথ্য আদান প্রদান করতে দারকার সংযোগকারী ব্যাবস্থা (তার কিংবা বেতার), ও তার নিয়মিত রক্ষণ, দরকার শক্তির সরবরাহ, এই সবকিছুই ব্যায়বহুল। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার (ISP) দের কাজ এইটাই, কিন্তু নিয়মিত এই ব্যয় সামলে পরিষেবা দিতে গেলে তাকে উপার্জন করতে হবে, যার প্রধান উৎস গ্রাহকদের ইন্টারনেট ব্যাবহারের ভিত্তিতে তাদের থেকে সংগৃহীত অর্থ। ISP ছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ সম্ভব না, সেই চেষ্টাও internet.org করছেনা, তারা বরং চুক্তি করছে কিছু ইচ্ছুক ISPর সাথে, যারা বিনামুল্যে কিছু পূর্বনির্ধারিত ওয়েবসাইট ব্যাবহার করতে দেবে ঠিকই, কিন্তু বাকি নেট দুনিয়াতে প্রবেশাধিকার গ্রাহককে আগের মতই ক্রয় করতে হবে। ব্যবস্থাটিতে প্রধান গলদ দুটো, একদিকে এক দেশের সব ISP চুক্তিতে রাজি হচ্ছেনা, বা চুক্তিবদ্ধ ISPর দেশব্যাপী পরিষেবা দানের ক্ষমতা নেই। ফলে একই দেশের কিছু মানুষ internet.org র সুফল পাচ্ছেন, আবার কিছু মানুষ বিনা কারনে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় সমস্যা হোল প্রত্যন্ত বা নিম্নবিত্ত এলাকায় চুক্তিকারী ISPর পরিকাঠামো নাও থাকতে পারে, সেটা তার চুক্তিবদ্ধ হবার আন্তরায় না, কিন্তু যাদের জন্য প্রকল্পের সৃষ্টি তাদের উপকারটা সুরক্ষিত থাকবে না।উদাহরণ ভারতের ক্ষেত্রে কিছু শহরের মধ্যে সীমিত পরিষেবা প্রদানকারী Reliance একমাত্র internet.orgর সাথে চুক্তিবদ্ধ ISP, ফলে এদেশে প্রকল্পের কোন সুবিধাই বৃহদাংশে উপলব্ধ না।

    ISP দের আর একটা বড় মাথাব্যাথা সংযোগকারী মাধ্যমের তথ্য পরিবহন ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা।অনুন্নত এলাকায় সীমিত পরিকাঠামো নিয়ে তাকে আরও বেশি সংখ্যক গ্রাহককে পরিষেবা দিতে হবে। যেহেতু internet.org ব্যাবহারকারি গ্রাহক বিনামুল্য ও অলাভজনক তাই পরিকাঠামো উন্নতিতে টাকা ঢালা ISPর পক্ষে সম্ভবপর না। কাজেই তাকে উপার্জনের রাস্তা খোঁজার পাশাপাশি তথ্যভার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দুভাবে এটা করা যেতে পারে, একদিকে গ্রাহককে তথ্য ব্যাবহারে অনুৎসাহী করে তুলে, অর্থাৎ internet.orgর বাইরের নেট দুনিয়াতে প্রবেশের এবং ভিডিও ইত্যাদি তথ্যগতভাবে ব্যায়বহুল সম্পদের ক্রয়মুল্য বাড়িয়ে, আর একদিকে তথ্য সংকোচন ও কম শক্তিক্ষয় করে তথ্য পরিবহন সংক্রান্ত উন্নত প্রজুক্তির ব্যাবহার করে। দ্বিতীয়টি Ericossonএর অধীনে internet.org গবেষণা করছে ঠিকই, কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই ISPর কাছে প্রিয় পথ প্রথমটা, প্রযুক্তি উন্নত করার প্রাথমিক ব্যায়ও সামলাতে হলনা, তথ্যও নিয়ন্ত্রিত, উলটে বিনামুল্য পরিষেবার খরচাও উঠে আসবার আশা। ফলে গ্রাহককে internet.orgর ওই খান তিরিশেক ওয়েবসাইট এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। ইন্টারনেট ব্যাবহারকারী ও বৃহত্তর ইন্টারনেটের মাঝখানে একটি অবাঞ্ছিত প্রাচীর গড়ে ওঠা কেবল সময়ের অপেক্ষা ।

    internet.org র বিপক্ষে এগুলি ছাড়াও সবথেকে বড় বিতর্কের যায়গা হল, নেট নিরপেক্ষতার সঙ্গে এর সারাসরি বিরোধ। internet.org কিছু ওয়েবসাইটের বিনামুল্য ব্যাবহারের সুযোগ করার সাথে সাথে বাকি নেট সম্পদ ব্যাবহারের জন্য ISPকে নিয়ন্ত্রনের ছাড়পত্র দিল।
    গ্রাহকের কাছে internet.orgর ওয়েবসাইটের বিকল্প ব্যাবহারের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, কেড়ে নেয়া হল তার ইন্টারনেটের দুনিয়াতে সচ্ছন্দ বিচরণের অধিকার। facebook এর একটি সাম্প্রতিক বার্তায় এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানানো হয়েছে, যাদের কাছে ইন্টারনেট শব্দটাই অপার্থিব তাদের কাছে নেট নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে গিয়ে যদি কোন সুবিধাই না পৌছয় তবে সেটা কাখনই এক্ষেত্রে কাম্য না। একটা সহজ সমাধান প্রথমেই চিন্তাতে আসতে পারে, সেটা হোল, ওয়েবসাইট ভিত্তিক ব্যাবস্থার বদলে তথ্য পরিমাণ ভিত্তিক বিনামুল্য পরিষেবার ভাবনা। সেক্ষেত্রে মানুষ নেট দুনিয়া ভ্রমণ করতে পারবে তার ইচ্ছামত, তার নেট ব্যাবহার এর অধিকারও সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে এই ধরনের কোন বিকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে না। অপরদিকে যদিও প্রযুক্তি উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ক গবেষণা সমগ্র ইন্টারনেটের কথা মাথায় রেখে করাটাই বাঞ্ছনীয় তবু শুধু internet.org র চুক্তিবদ্ধ সংস্থাগুলিও এই বিকল্প ব্যাবস্থায় নিজেদের জন্য গবেষণা চালাতেই পারে, গ্রাহকের পছন্দের অধিকার থাকায় অন্য ওয়েবসাইট রাও নিজেদের প্রজুক্তি উন্নতির চেষ্টা করবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে, ফলে নেট দুনিয়ার সর্বাঙ্গীণ উন্নতিই ঘটবে।

    ফিরে দেখলে internet.org ইন্টারনেট ব্যাবহারের আধিকার দেবে ঠিকই কিন্তু কেড়ে নেবে আবাধ বিচরণ। বিনষ্ট হবে নেট দুনিয়ার সাম্য ও সবথেকে ভয়ঙ্কর ভাবে নেট কুক্ষিগত হবে একটি কর্পোরেট গোষ্ঠীর হাতে। তবে এত বিতর্ক স্বত্যেও internet.org নেটের অধিকার বিষয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা তুলে এনেছে একইসাথে ভেবেছে প্রান্তিকের কাছে ইন্টারনেটকে উন্মুক্ত করে দেবার। একটি স্ববিরোধী কর্পোরেট আত্মপ্রেমী বিষাক্ত প্রকল্পের কাছ থেকে এটুকুই পাওনা।

    বানান সংশোধন : অনুসন্ধানী আবাহন !
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন