এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আস্তিকতা, নাস্তিকতা, স্বাধীন ইচ্ছা, চেতনা ইত্যাদি তর্ক

    dc
    অন্যান্য | ১৫ মে ২০১৫ | ৪১৫৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 132.164.185.175 | ১৫ মে ২০১৫ ১০:২৮676022
  • ঈশ্বর আছে না নেই? স্বাধীন ইচ্ছা (free will) আছে না নেই? চেতনা (consciousness) আছে না নেই? আত্ম-চেতনা (self-consciousness) কি আত্মার একরকম বহিঃপ্রকাশ নাকি স্রেফ মস্তিষ্কের নিউরনগুলোর সমষ্টিগত কারসাজি? সমস্ত প্রাণী জগতে কি শুধু মানুষেরই স্বাধীন ইচ্ছা আর চেতনা আছে? একজন মানুষের নীতিগত (ethical) জীবনযাপনের জন্য কি মূল্যবোধের (virtues) দরকার আছে?

    এসব প্রশ্ন বহুকালের, হয়তো মানবসভ্যতার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের বহু দার্শনিক বহু হাজার বছর ধরে এগুলো নিয়ে তর্ক করছেন, কিন্তু এই তর্কের নিরসন হয়নি। এই তর্ক করতে ফিয়ে বিভিন্ন দার্শনিক চিন্তাধারা বা স্কুল অফ থট তৈরি হয়েছে, যেমন determinism, compatibilism, libertarianism, hard determinism, hard compatibilism, indeterminism, incompatibilism ইত্যাদি। এই নানান চিন্তাধারা নিয়ে অল্প অল্প করে কিছু লেখার চেষ্টা করবো। আস্তিক, নাস্তিক, ভোগবাদী, অদৃষ্টবাদী, সবাইকেই নিজের নিজের মতো করে লেখার অনুরোধ করলাম।

    পারস্য দেশের সুফি দার্শনিক জালাল উদ-দিন মহম্মদ রুমির উক্তি স্মরন করে আলোচনা শুরু করা যাকঃ There is a disputation that will continue till mankind is raised from the dead, between the necessitarians and the partisans of free will.
  • dc | 132.164.185.175 | ১৫ মে ২০১৫ ১০:২৯676033
  • তর্ক শুরু করার আগে কিছু সংজ্ঞা পরিষ্কার করে লিখে দেওয়া ভাল। প্রত্যেকের এই সংজ্ঞাগুলো পছন্দ না হতেই পারে, সেক্ষেত্রে নিজের সংজ্ঞাটিও লিখে দিতে পারলে ভালো হয়। আর তর্ক করার সময়ে কে কোন সংজ্ঞার সাপেক্ষে তর্ক করছেন সেটাও একটু বলে দেবেন।

    স্বাধীন ইচ্ছা (free will): যেখানে আমার সামনে বেশ কিছু অপশান আছে, সেখানে আমি নিজের ইচ্ছেমতো কোন একটিকে বেছে নিতে পারি। অবশ্যই এর মানে এই নয় যে আমি সম্পূর্ণ স্বাধীন। নানান বাধা থাকতে পারে, যেমন আমি ইচ্ছেমতো মাধ্যাকর্ষন শক্তি উপেক্ষা করতে পারিনা (জাগতিক নিয়মসমূহের বাধা) বা ইচ্ছেমতো চুরি করতে পারিনা (সামাজিক নিয়মসমূহের বাধা), আমি অন্ধকারে একা থাকতে ভয় পাই (মানসিক বাধা), আমি ঘুষ দিতে ঘৃনা করি (আমার নিজের নীতিগত বাধা) ইত্যাদি।

    ঈশ্বরঃ এমন এক যৌক্তিক (rational) সর্বশক্তিমান (omnipotent) সত্ত্বা যা এই মহাবিশ্ব আর তার ভেতর সব কিছুর জন্ম দিয়েছে।

    ডিটারমিনিজমঃ এই মহাবিশ্ব চলে শুধুমাত্র কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম (well defined laws) মেনে। এর সবকিছু কার্য্যকারন নির্ধারিত। প্রাথমিক ঘটনাবলী (initial events) যদি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় তাহলে তার মাত্র একটিই ফল হতে পারে (law of necessity)। সুতরাং এই মহাবিশ্বে স্বাধীন ইচ্ছার কোন জায়গা নেই।

    compatibilism বা soft determinism: এর জনক ডেভিড হিউম। ওনার মতে ঘটনাবলী যদিও প্রাকৃতিক নিয়মের (natural laws) দ্বারা চালিত, কিন্তু স্বশাসিত শক্তি (autonomous agent) কিছু নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়ে নিজের ইচ্ছেয় (free volition) ঘটনাবলীর ওপর নিজের প্রভাব (influence) খাটাতে পারে। দুরকম কার্য্য হতে পারে, স্বাধী আর শর্তসাপেক্ষ (free action and unfree action) শর্তসাপেক্ষ কার্য্য ডিটারমিনিস্টিক, অর্থাত প্রাকৃতিক নিয়মের অদইন, অর্থাত ডিটারমিনিস্টিক। কিন্তু স্বাধীন কার্য্য (free action) নিজের ইচ্ছেয় নিজের নীতি (morality) মেনে করা যায়।

    libertarianism: ফ্রি উইল আছে, ডিটারমিনিজম একটি ভুল মতবাদ। (এটি লিবারটারিয়ানিজমের দার্শনিক চিন্তাধারার ডেফিনিশন। লিবার্টারিয়ালিজমের একটি পলিটিকাল সংজ্ঞাও আছে)
  • dc | 132.164.27.149 | ১৫ মে ২০১৫ ১০:৪৭676044
  • প্রাচীন গ্রীসে চেষ্টা শুরু হয়েছিল, সব ঘটনাকেই দৈবের ইচ্ছা না বলে প্রাকৃতিক নিয়ম দিয়ে ব্যাখ্যা করার। Anaximander বোধায় প্রথম বলেন যে আমাদের চারপাশে যা ঘটনা ঘটে তার সুনির্দিষ্ট প্রাকৃতিক কিছু কারন (natural causes) আছে। আমাদের চারপাশে যা দেখি তার দুটি ভাগ - প্রকৃতি (cosmos) আর সেই প্রকৃতিকে যে নিয়মগুলো চালায় (logos)। Anaximander কে এই কারনে প্রথম cosmologist বলা হয়।

    Heracletas বলেন যে যা কিছু পরিবর্তন হয় তার সব কিছুই প্রাকৃতিক নিয়মের জন্য। সবকিছু ঐ নিয়ম মেনেই ধারাবাহিক ভাবে বিবর্তিত হয়, জলের মতো বয়ে চলে (panta rhei)।
  • dc | 132.164.42.191 | ১৫ মে ২০১৫ ১২:১৫676055
  • এর পর Democritus আর Leucippus বস্তুবাদী যৌক্তিক (raional) দর্শন প্রচলন করেন। এনারা বলেন যে বস্তু অবিভাজ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র atom দিয়ে তৈরী, আর এই অ্যাটমগুলোর মধ্যে যা আছে তা হলো শূণ্যস্থান (empty space)। এই অ্যাটমগুলো সবসময়ে চলমান, এগুলোর নানারকম গঠন আর সাইজ আছে। এই অ্যাটমগুলোর নড়াচড়ার কোন উপলক্ষ নেই, কোন আদি কারন (prime cause) ও নেই। সুতরাং প্রকৃতি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলে, দৈব প্রভাব বলে কিছু নেই। আমাদের চারপাশে সবকিছু mechanistic। দৈবাৎ কোন কিছুই ঘটে না, চান্স বলে কিছু নেই, কারন পূর্বে যা ঘটেছে তাই দিয়ে ভবিষ্যত সুনির্দিষ্ট।

    কিন্তু Epicurus যোগ করেন যে অ্যাটমগুলো কখনো কখনো নিজেদের সুনির্দিষ্ট পথ থেকে সরে যায় (atoms swerve to the side), যার থেকে সম্ভাবনার জন্ম। কারন অ্যাটমের গতিপথ যদি সম্পূর্ণ সুনির্দিষ্ট হতো তাহলে মহাবিশ্বে সবকিছুই পূর্বনির্ধারিত হতো, কিন্তু তা নয়। মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার সূচনাও এই swerve থেকে। এপিকিউরাসের মতে, সব কিছু পূর্বনির্ধারিত মানতে গেলে এও মেনে নিতে হয় যে মানুষের কাজের জন্য তার নিজের কোন দায় নেই। ভালো কাজ করলে তাকে প্রশংসা করা যাবে না বা খারাপ কাজ করলে তাকে নিন্দে করা যাবে না কারন তার কোন স্বাধীন ইচ্ছা নেই। সুতরাং atomic swerve এর কথা বলে এপিকিউরাস বলেন যে মানুষের কাজের দায় তার নিজেরই।
  • dc | 132.164.42.191 | ১৫ মে ২০১৫ ১২:১৭676066
  • এপিকিউরাস "প্রব্লেম অফ ইভিল" সূত্রেরও জনক। উইকি থেকে গ্রিক স্কেপটিক স্কুলের মূল আর্গুমেন্টটা কপি করে দিলামঃ

    Is God willing to prevent evil, but not able?
    Then he is not omnipotent.
    Is he able, but not willing?
    Then he is malevolent.
    Is he both able and willing?
    Then whence cometh evil?
    Is he neither able nor willing?
    Then why call him God?
  • san | 113.245.12.83 | ১৫ মে ২০১৫ ১৩:২২676077
  • আগ্রহ নিয়ে পড়ছি।
  • dc | 132.164.42.191 | ১৫ মে ২০১৫ ১৫:৩৩676087
  • এবার মঞ্চে প্রবেশ সক্রেটিস, প্লেটো আর অ্যারিস্টোটলের। বঙ্গে রবীন্দ্রনাথ আর খেলার মাঠে ওয়াসিম আক্রামের মতো এঁরা দর্শনের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্লেটো প্রথম "স্বাধীন ইচ্ছা"র কাছাকাছি একটা ধারনা তৈরি করেন, boulesthai। boulesthai মানে হলো কিছু করার ইচ্ছা। বুদ্ধি (intellect) দিয়ে বিচার করে যদি মানুষ মনে করে ভালো একটা কাজ করতে হবে বা যদি মনে করে যে একটা কাজ করলে ভালো হয় (তার নিজের বা সবার) তাহলে যে ইচ্ছা হয় তা হলো boulesthai। অর্থাৎ শুধুমাত্র যুক্তি বা বিচারবোধ (reason) প্রয়োগ করে একজন মানুষ ভালো কিছু করার ক্ষমতা রাখে, এর জন্য ঈশ্বরকে স্মরন না করলেও হবে। প্লেটো আরো বলেন যে মানুষের আত্মার অন্তত দুটি ভাগ আছে (বা তিনটি), তার মধ্যে একটি ভাগ যৌক্তিক (rational) আর বাকি একটি বা দুটি ভাগ অযৌক্তিক (non-rational)।

    ক্ষুধা তৃষ্ণা অযৌক্তিক, কারন এই ইচ্ছেগুলোর সাথে ভালোমন্দের সম্পর্ক নেই। আমার খিদে পেয়েছে তাই খাবো, তাতে হয়তো আমার শরীরে অন্য কোন ক্ষতি হতে পারে (হয়তো আমার কোন রোগ হয়েছে), বা আমার খিদে পেয়েছে তাই খাবো কিন্তু পাশেই একটা অভুক্ত লোক দাঁড়িয়ে আছে - তাই খিদে অযৌক্তিক ইচ্ছে। কিন্তু যদি আমি মনে করি যে আমার খিদে পেলেও আগে পাশের লোকটার ক্ষুন্নিবৃত্তি করবো, অর্থাৎ ভালো কিছু করবো, তাহলে সেটা যৌক্তিক ইচ্ছা। অর্থাত আমরা যে কাজ করি তার পেছনে ভিন্ন ভিন্ন প্রেরণা (motivation) থাকতে পারে আর তার ফলে আমাদের মধ্যে মানসিক সংকটও উদ্ভূত হতে পারে।

    তাহলে আদর্শ মানুষ কিভাবে হওয়া যায়, বা কি কাজ করলে আদর্শ জীবনযাপন করা যায়? প্লেটো বল্লেন এমন এক নীতি অনুসরন করা উচিত যা সদ্গুনাবলীর ওপর ভিত্তি করে রচিত (virtue based ethics)। Virtue হলো সেই গুণাবলী যা দিয়ে সর্বোচ্চ আচরন আর চিন্তা করা যায়, মানুষের পক্ষে ভালোভাবে বেঁচে থাকা যায় (eudaimonia)। প্লেটোর মতে চাররকম সদ্গুন আছে - ন্যায় বা সুবিচার (justice), জ্ঞান (wisdom), সংযম (moderation or self-control) আর সাহস (courage)। সাহস মানে নিজের নীতিতে অবিচল থাকার সাহস।
  • b | 24.139.196.8 | ১৫ মে ২০১৫ ১৫:৩৮676088
  • ডিসি, আলোচনাটা একটু পশ্চিম ঘেঁষা হয়ে যাচ্ছে। স্টিয়ারিংটা এদিকেও ঘোরাবেন স্যার।
  • b | 24.139.196.8 | ১৫ মে ২০১৫ ১৫:৪৭676023
  • এই খেয়েছে। না না, আপনি লিখুন।
  • dc | 132.164.42.191 | ১৫ মে ২০১৫ ১৫:৪৭676089
  • b জানি, পুরোটা পাশ্চাত্য দর্শন নিয়ে লেখা হচ্ছে। তবে প্রাচ্য দর্শন ভয়ানক রকম জটিল আর বহুবিভক্ত, ডিটেলে লিখতে গেলে বেশ কয়েকদিন লেগে যাবে। তাই অন্তত রেনেসাঁ আর তার পর এজ অফ এনলাইটেনমেন্ট পর্য্যন্ত পাশ্চাত্য ধারা অনুসরন করার ইচ্ছে আছে, তারপর ওরিয়েন্টাল শুরু করবো। এর মধ্যে আপনি বা অন্য কেউ প্রাচ্য নিয়ে শুরু করতে চাইলে স্বাগতম।
  • ranjan roy | 192.69.134.43 | ১৫ মে ২০১৫ ২১:০৫676024
  • এত সংক্ষেপে এত সুন্দরভাবে ! চলুক, চলুক।
    অপেক্ষায় আছি কখন লক,, হিউম ও কান্ট আসবেন। তারপর হেগেল।
  • সিকি | ১৫ মে ২০১৫ ২১:২২676025
  • পড়ছি।
  • lcm | 60.242.74.27 | ১৫ মে ২০১৫ ২১:৩৩676026
  • বাহ!
    সেকেন্ড পোস্টে যে সংজ্ঞা গুলি ডিসি দিয়েছে, তাদের মধ্যের কনফ্লিক্ট নিয়ে কখন লেখে তার অপেক্ষায় আছি। আদৌ কনফ্লিক্ট জরুরী কি না, ইত্যাদি।
  • dc | 132.164.42.191 | ১৫ মে ২০১৫ ২১:৪১676027
  • অ্যারিস্টোটল ইনডিটারমিনিসম ধারার প্রবর্তন করেন। উনি বলেন সম্ভাব্যতা (chance) ঘটনা প্রবাহের (stream of events) জনক, কাজেই মহাবিশ্ব ডিটারমিনিস্টিক না। একটি ঘটনা, তার কারন, সেই ঘটনার কারন...এই ভাবে পিছিয়ে গেলে আমরা দেখতে পাবো আদি যে ঘটনাটি ঘটেছিল সেটা একটা আকস্মিক ঘটনা ছিল (কিন্তু দৈবের দ্বারা সূত্রিত ছিলনা)। এই রকম একেকটি ঘটনা প্রবাহের ওপর ভিত্তি করেই মানুষ সিদ্ধান্ত নেয়, আর এই ধরনের কিছু ঘটনা হয়তো সেই ব্যাক্তিটির জন্মেরও আগে ঘটেছে (antecedent cause)। কিন্তু যেহেতু এরকম আক্স্মিক ঘটনাবলী সারাক্ষন ঘটেই চলেছে আর প্রত্যেকটি থেকে একেকটি কার্য্যকারন সম্পৃক্ত ঘটনা প্রবাহ তৈরি হচ্ছে (causal stream of events) তাই সব মিলিয়ে আমাদের মনে হয় বুঝি সব কিছুই ডিটারমিনিস্টিক।

    অ্যারিস্টোটল মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার ওপরও জোর দেন, বোধায় ইচ্ছা (choice) আর দায়িত্ব (responsibility) র যে সম্পর্ক পাশ্চাত্য দর্শনের মূল ধারা হয়ে উঠেছে তারও জনক উনি। অ্যারিস্টোটল বলেন যে সদগুনসম্পন্ন কোন কাজ (virtuous action), সঠিক কাজ, বেশ কয়েকটা বিকল্প আছে তার মধ্যে একটা ভালো কাজ - এগুলো মানুষের নিজের ইচ্ছেয় আসা উচিত (hekon)। জন্তুরা হয়তো স্বাধীনভাবে (voluntarily) কিছু করে, কিন্তু তার পেছনে যুক্তি থাকে না। অন্যদিকে মানুষ অনেকক্ষন ভেবেচিন্তে তারপর স্বাধীনভাবে যুক্তি খাটিয়ে একটা বিকল্প বেছে নিতে পারে। তাই জন্তুদের আমরা তাদের কোন কাজের জন্য প্রশংসা বা নিন্দা কিছুই করিনা। কিন্তু মানুষ যদি সদগুনসম্পন্ন কাজ করে তো তার প্রশংসা প্রাপ্য, আবার যদি খারাপ কিছু করে (vicious action) তো তার নিন্দা প্রাপ্য। অন্যদিকে যদি কাউকে কিছু করতে বাধ্য করা হয়, যাতে তার বিকল্প আর কিছু করার নেই, তাহলে তার সাথে জন্তুর কাজের কোন পার্থক্য নেই, কাজেই নিন্দা বা প্রশংসাও তার প্রাপ্য না।
  • dc | 132.164.42.191 | ১৫ মে ২০১৫ ২১:৪৯676028
  • রঞ্জন বাবু হেগেলও আসবেন, কিন্তু তার জন্য Bonnএ যেতে হবে, অর্থাৎ উনিশ শতকীয় জার্মান দর্শনে পৌঁছতে হবে ঃ-)

    lcm কনফ্লিক্ট আসতে শুরু করেছে, এরপর স্টোইক পিরিয়ড এলেই ডিটারমিনিজম আর ইনডিটারমিনিজমের কনফ্লিক্ট। আবার একই সংজ্ঞার ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোও সময়মতো লেখার ইচ্ছে আছে। তবে আপনি বা কেউ চাইলে এখনি সেগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিতে পারেন। লিনিয়ার ডিসকোর্স হতেই হবে তারো তো কোন মানে নেই, তবে অন্তত বিংশ শতক পর্য্যন্ত ক্রম অনুসারে লেখার চেষ্টা করবো।
  • ranjan roy | 192.69.134.43 | ১৬ মে ২০১৫ ০৬:১৭676029
  • খুব কাজের লেখা। সঙ্গে আছি।
  • dc | 132.164.214.181 | ১৬ মে ২০১৫ ০৯:২৫676030
  • প্রাচীন গ্রিসে ডিটারমিনিসম এর পক্ষে ধারাবহিক জোরদার সওয়াল প্রথম শুরু করেন স্টোইক রা। এনারা মনে করতেন মানুষের যাবতীয় আবেগসমূহ ভুল বা কৃত্রিম সিদ্ধান্তের (judgement) জন্ম দেয়, সুতরাং যিনি প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করেছেন তিনি এই আবেগ এড়িয়ে চলবেন। আর এরকম ব্যক্তি দুঃখে অবিচল থাকবেন, কেবলমাত্র সদগুনসম্পন্ন কাজ করে তিনি খুশী থাকবেন। স্টোইক রা এও মনে করতেন যে ঈশ্বর এই সংসারে সর্বত্র বিরাজমান, সবকিছুতেই তাঁর অংশ আছে, তিনি মানুষের মধ্যেও আছেন। মানুষের আত্মার চালিকাশক্তি hegemonikon ঐশ্বরিক logos এর একটি অংশ মাত্র।

    স্টোইক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা জেনো (Zeno of Citium) বলেন যে প্রাকৃতিক নিয়মসমূহের সাথে সাযুয্য আছে এরকম ইচ্ছা (will) থাকাটাই হলো সদগুন। (ইনি (Zeno of Elea) নন, যাঁর নামে অনেকগুলো প্যারাডক্স চালু আছে আর যিনি dialectics এর প্রতিষ্ঠাতা) এই বিশ্ব শুধুমাত্র প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলে, তাই মানুষের শুধু সেটাই ইচ্ছা করা উচিত যা তার নিজের সাধ্যের মধ্যে আর যা এই নিয়মগুলোর সঙ্গতি (hrmony) নষ্ট না করে। জেনো প্রথম এও বলেন যে প্রতিটি ঘটনার একটি নির্দিষ্ট কারন আছে, আর কারন যদি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় তাহলে একটিই ঘটনা ঘটা সম্ভব।

    স্টোইক স্কুলের আরেক দার্শনিক Chrysippus সরাসরি ইনডিটারমিনিজমের বিরোধিতা করেন। উনি বলেন যে অতীত অপরিবর্তনীয়, আর ভবিষ্যতের পরিবর্তন সম্ভব কিছুটা মানুষের কাজের দ্বারা আর কিছুটা ঈশ্বরের ইচ্ছায়। এই তত্ত্বকে বলে doctrine of co-fated events, পরে এর থেকেই হিউম compatibiism এর সূচনা করেন। ক্রিসিপ্পাস এই তত্ত্বের প্রবর্তন করেন সিসেরোর তর্কের জবাবে। সিসেরো বলেছিলেন সব কিছুই যদি পূর্ব-নির্ধারিত (pre-determined) হয় তাহলে মানুষের কাজ করার কি দরকার? যা হওয়ার তা তো হবেই (lazy argument)! এর উত্তরে ক্রিসিপ্পাস বলেন যে, ধরা যাক আমার অসুখ হয়েছে। ডাক্তার ডাকলে অসুখ সারবে, নাহলে সারবেনা, কাজেই অসুখ সারানোর জন্য ডাক্তার ডাকার কাজ তো আমাকে করতেই হবে। কিন্তু আমি যে ডাক্তার ডাকলাম আর তার পরিণতিতে সেরে উঠলাম এই পুরোটাই পূর্ব নির্ধারিত আর নাতো ঈশ্বরের কৃপায় সম্ভবপর। কাজেই মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা বলে কিছু নেই, আকস্মিক ঘটনাও কিছু নেই।
  • ঈশান | ১৬ মে ২০১৫ ০৯:৪২676031
  • এটা কিন্তু প্রবল স্কেচি এবং অনেক ক্ষেত্রে কনফিউজিং হচ্ছে। একটা উদাহরণ দিই। " প্লেটো আরো বলেন যে মানুষের আত্মার অন্তত দুটি ভাগ আছে (বা তিনটি), তার মধ্যে একটি ভাগ যৌক্তিক (rational) আর বাকি একটি বা দুটি ভাগ অযৌক্তিক (non-rational)" -- কেসটা ঠিক এরকম নয়। প্লেটো আত্মার তিনটে টুকরোর কথা বলেছিলেন বটে। কিন্তু সেটা অনেকটা সাইকোলজির ধরণে। আধ্যাত্ম সম্পর্কিত আমাদের প্রচলিত প্যাটার্নে নয়। প্লেটোর নিজের উদাহরণ দিয়েই বলা যাক। ফেড্রাস (এর সঠিক উচ্চারণ কি ভগবান জানে,) এ প্লেটো মানুষের অন্তস্থলকে একটা রথ বা ঘোড়ার গাড়ির সঙ্গে তুলনা করছেন। সেই রথে আছে একজন চালক, আর দুটো ঘোড়া। এই তিনজন(দুটো ঘোড়া এবং একজন মানুষ) হল মন বা আত্মার তিনটে অংশ।
    একটি ঘোড়া খুব উচ্চমার্গের। সে তেজি এবং বাধ্য। সিধে সামনের দিকে এগোতে চায়। চালক আদেশ দিলেই মেনে চলে। এ হল মানুষের উচ্চ স্পিরিট। যথা উচ্চাকাঙ্খা, ক্রোধ, আক্রমনাত্মক ভাব অর্থাৎ অ্যাগ্রেশন, সাহস, সম্মান, বিশ্বস্ততা, গর্ব, এইসব। (ক্রোধ, অ্যাগ্রেশন এই লিস্টিতে কেন ঢুকল, সে প্রশ্ন করবেননা, তার সঙ্গে গ্রিসের ইতিহাসের সম্পর্ক আছে।)
    দ্বিতীয় ঘোড়াটি বদের বাসা। সে সব সময়ে পিছন দিকে যেতে চায়। অবাধ্যতার চূড়ান্ত। না চাবকালে সে রথকে উল্টেও দিতে পারে। এ হল মূলত মানুষের জৈবিক চাহিদা। শরীরী ক্ষুধা, কামনা, প্রয়োজন, এইসব। এটা একদম পরিষ্কার।
    তৃতীয় জন, অর্থাৎ, চালক হল যুক্তি বা রিজন। তার কাজ হল ঠিকঠাক চাবকে এবং/অথবা নির্দেশ দিয়ে রথটাকে চালানো। এবং পুরো জিনিসটার ব্যালেন্স রক্ষা করা। ব্যালেন্সটা ঠিকঠাক রাখা যাচ্ছে কিনা, এইই হল মানুষের সার্থকতার পরিমাপ।

    এটা আধ্যাত্ম বা দর্শনের চেয়ে ফ্রয়েডের ইদ, ইগো, সুপার-ইগো এই তিনটুকরো মডেলের সঙ্গে বরং তুলনীয়। ইদের সঙ্গে জৈবিক তাড়নার অনেকটা সরাসরি তুলনা করা যায়। বাকিদুটোর ক্ষেত্রে তুলনাটা অবশ্য একটু গোলমেলে। কিন্তু পয়েন্ট হল, মডেল দুটো অনেকটা একই রকম।

    এবং এখানে আরেকটা জিনিস বলা দরকার। এই পুরো সিস্টেমে রিজন কেন চালকের আসনে? এটা কিন্তু আরবিট্রারি নয়। এটা বস্তুত প্লেটোর দর্শনের অন্যত্র ডিডাক্ট করা হয়েছে। বস্তুত প্লেটো যে আদর্শ রাষ্ট্র থেকে কবিদের বার করে দিতে চেয়েছিলেন, তার সঙ্গেও সম্পর্কিত। বস্তুত বাকি দর্শন এবং সেই সময়ের গ্রিক ইতিহাস এবং চিন্তনের অন্যান্য ঘরানা বাদ দিলে পুরোটা বলা অসম্ভব।
  • dc | 132.164.214.181 | ১৬ মে ২০১৫ ১০:০৪676032
  • ঈশান ঠিকই বলেছেন, আমি যে পোস্টগুলো করছি সেগুলো ছোট ছোট সামারি টাইপের। ঈশ্বর, স্বাধীন চিন্তা আর চেতনা নিয়ে কে কি বলেছেন সেগুলো খুব সংক্ষেপে লেখার চেষ্টা করছি। আরো বেশ কিছুটা গিয়ে তারপর সিন্থেসিস করার চেষ্টা করবো, তার আগে সামারিগুলো লিখে রাখতে চাইছি যাতে সিন্থেসিসের সময়ে মোটামুটি পরিষ্কার ধারনা থাকে কার কি বক্তব্য ছিল।

    আর প্লেটোর আত্মা সম্পর্কে ধারনা আমাদের প্রচলিত ধারনার সাথে মেলে, এরকম কিছু বলতে চাইনি তো! গ্রিক বা মধ্যযুগের অনেক দার্শনিকই যে সংজ্ঞার সাপেক্ষে তর্ক করতেন তার অনেকগুলো আমাদের এখনকার সংজ্ঞার থেকে আলাদা। তবে আমি চাইছি সংক্ষেপে মূল বক্তব্যগুলো তুলে ধরতে, যাতে পরে কম্পেয়ার করা যায়। এখনো বহু দার্শনিক বাকি, অ্যাকুইনাস থেকে উইটগেনস্টেইন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে, তাই খুব বেশী ডিটেলে লিখতে গেলে আর তুলনার জায়গায় পৌঁছতে পারবো না। তবে আপনি যেমন কিছুটা লিখলেন, বা রিজন কেন চালকের আসনে জানতে চাইলেন, এরকম লিখলে তো খুবই ভালো হয়।
  • PT | 213.110.243.23 | ১৬ মে ২০১৫ ১০:০৬676034
  • এ হে হে, "Is God willing to prevent evil, but not able?" প্রসঙ্গে এট্টু রাউল সংকৃত্যান হলে বেশ হত। বইটা হাতের কাছে নেই.....
  • dc | 132.164.214.181 | ১৬ মে ২০১৫ ১০:০৮676035
  • PT, লিখে ফেলুন!
  • dc | 132.164.31.52 | ২০ মে ২০১৫ ২২:৫২676036
  • এটা উপরে তুলে দিলাম। কয়েকদিন লিখতে পারিনি, কাল সকাল থেকে আবার শুরু করবো।

    (জানি এভাবে ভয় দেখানো উচিত না, যাই হোক :p)
  • dc | 132.164.180.161 | ২১ মে ২০১৫ ০৯:৫৫676037
  • খৃশ্চান এরা শুরু হওয়ার সাথে খৃশ্চান থিওলজিরও গোড়াপত্তন হয়। প্রথমদিকের খৃশ্চানদের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলেন সেন্ট অগাস্টিন বা অগাস্টিন অফ হিপো, যিনি পাশ্চাত্য ফিলজফিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেন। অগাস্টিন মনে করতেন ঈশ্বর সর্বশক্তিমান আর মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার উৎস। এই স্বাধীন ইচ্ছা কাজে লাগিয়েই মানুষ তার নিজের ইচ্ছামতো কাজ করতে পারে বা বেছে নিতে পারে, আর এই নিজের ইচ্ছেমতো বেছে নেওয়ার থেকেই অশুভর (evil) উৎপত্তি। কাজেই অ্যারিস্টোটলে মতো অগাস্টিনও ইচ্ছা আর তার ফলবর্তী দায়িত্ত্বের (choice and responsibility) ওপর জোর দেন। শুধু তাই না, অগাস্টিন মনে করতেন অসুখবিশুখ বা অন্যান্য প্রাকৃতিক অশুভের উৎপত্তিরও উৎস মানুষের ইচ্ছার আর বেছে নেওয়ার থেকে, কারন যতক্ষন না কোন মানুষ তার নিজের কাজের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ছে ততক্ষন সেই অসুখকে অশুভ বলা যায়না।

    অগাস্টিন বলেন যে মানুষের দুটি ভাগ - শরীর আর আত্মা। শরীরের ত্রিমাত্রিক বা পার্থিব অস্তিত্ব আছে, কিন্তু আত্মার এরকম কিছু নেই। পাশ্চাত্য দর্শনে আত্মা বলতে আমরা এখন যা বুঝি, তার উৎপত্তি মোটামুটি এখান থেকে। তার কারন প্লেটো যেমন আত্মার মেটাফিজিক্স নিয়ে আনেক কিছু লিখেছিলেন, অগাস্টিন সেরকম বিস্তারিত কিছু লেখেননি। ওনার মতে আত্মা শরীরের থেকে আলাদা, আত্মাই শরীরের চালিকা শক্তি, আর ঈশ্বর আত্মাকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য (attribute) দিয়েছে - মেধা, বুদ্ধিমত্তা আর ইচ্ছা (intellect, intelligence, will)। এছাড়াও অগাস্টিন আত্মাকে আরো কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য দেন। যেমন শরীরের অনুভব ক্ষমতা (perception) আর আত্মার বোধশক্তি (ability to perceive), শরীরের কল্পনা করার ক্ষমতা (imagination) আর আত্মার বিশ্বাস (faith), শরীরের স্মৃতিশক্তি (memory) আর আত্মার চিন্তন ক্ষমতা (recollection)।

    কিন্তু মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে অ্যাকুইনাস একটু অন্যরকম বলেছিলেন। তাঁর মতে ভগবান সবকিছু তাৎক্ষনিকভাবে সৃষ্টি করেছিলেন (simultaneously)। জেনেসিসে যে লেখা আছে ছদিনে সৃষ্টির কথা, সেটা অ্যাকুইনাসের মতে একটা আত্মিক বা যৌক্তিক ঘটনাক্রম (logical flow of events) মাত্র। ছদিন মানে ছয়দিনের সময় না, বরং ছয়টি ধাপ পেরিয়ে উৎপত্তি। এমনকি অ্যাডাম আর ঈভকেও ঈশর নশ্বর মানুষ (mortal) হিসেবেই সৃষ্টি করেন, তারা যে পাপ করবে এবং পতন হবে (fall of adam and eve) তাও পূর্বনির্ধারিত। এদিক দিয়ে দেখলে অ্যাকুইনাসের দর্শন অনেকটাই ডিটারমিনিস্টিক। কিন্তু ডিটারমিনিজম আর স্বাধীন ইচ্ছার পরষ্পর বিরোধিতা নিয়ে তিনি কিছু বলেন নি, বরং তিনি সিসেরোর যুক্তি খারিজ করে দেন। সিসেরোর মতে, যদি স্বাধীন ইচ্ছা আছে তো সব কিছু পূর্বনির্ধারিত না, তাহলে ঈশ্বরেরও পূর্বজ্ঞান (foreknowledge) নেই, তাহলে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান না।
  • dc | 132.164.180.161 | ২১ মে ২০১৫ ১০:১৬676038
  • অগাস্টিনের সমসাময়িক পেলাগিয়াস প্রিডেস্টিনেশনের বিরোধিতা করেন। উনি বলেন যে সবকিছুই ঈশ্বরের ইচ্ছায় চালিত হয় তা নয়, অ্যাডামের পথম পাপের ফল সব মানুষকেই ভুগতে হবে তাও না, মানুষ নিজের ইচ্ছায় নিজের ভাগ্য বদলাতে সক্ষম। কাজেই ঈশ্বরের তৈরি নিয়মকানুন (divine law) কিছু নেই, বরং মানুষের উচিত মানুষের বানানো নিয়মের ওপর জোর দেওয়া। মানুষ শুধুমাত্র নিজের চিন্তাশক্তির জোরেই ভালো আর মন্দ কাজের পার্থক্য করতে পারে, এর জন্য ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করার দরকার নেই।

    পেলাগিয়াসের দর্শন প্রথমদিকে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু অ্যাকুইনাস এইসব ধারনার জন্য পেলাগিয়াসকে আর্চ-হেরেটিক (arch-heretic) বলেন। তবুও প্রথমদিকে চার্চ থেকে পেলাগিয়াসকে হেরেটিক বলা হয়নি, কিন্তু পরেরদিকে অ্যাকুইনাস ও আরো অনেকের প্রভূত চেষ্টার ফলে পোপ জোসিমাস চার্চ থেকে পেলাগিয়াসকে বহিষ্কার করেন। পেলাগিয়াসের বইপত্রও আস্তে আস্তে হারিয়ে যায়। অ্যাকুইনাস পন্থীরা জয়ী না হয়ে যদি পেলাগিয়াসপন্থীরা জয়ী হতেন তো পাশ্চাত্য দর্শন আজ কিরকম হতো কে জানে!
  • dc | 132.164.180.161 | ২১ মে ২০১৫ ১০:২২676039
  • এরপর মধ্যযুগ, মোটামুটি ১১০০ থেকে শুরু হয় স্কলাস্টিক (scholastic) আন্দোলন আর স্কলাস্টিক দর্শন। অ্যানসেল্ম (Anselm of canterbury) অ্যাকুইনাসের সাথে মোটামুটি সহমত হয়েও খানিকটা পরিবর্তিত মতবাদ শুরু করেন।
  • 0 | 132.163.43.62 | ২১ মে ২০১৫ ১০:৩১676040
  • বাংলায় সংক্ষেপে পাশ্চাত্য দর্শনের নানান মতের সার কথাগুলো সহজ ভাষায় এভাবে একজায়গায় কি এর আগে সংকলিত হয়েছে ? এগুলো নিয়ে গুরু থেকে একটা চটি পাবলিশ হতে পারে তো। dc আরো আরো লিখুন।
  • dc | 132.164.176.18 | ২১ মে ২০১৫ ১৪:০৭676041
  • অ্যানসেল্ম বলেন যে যৌক্তিক কর্তা দের (rational agents) নিজেদের মেধা আর বুদ্ধিমত্তা আছে, কাজেই তারা নিজেরাই বুঝতে পারে কি করলে স্বাধীন ইচ্ছারও প্রকাশ পাবে আবার কি করলে সদগুনসম্পন্ন কাজও (virtuous action) করা যাবে। কাজেই স্বাধীন ইচ্ছা হলো মেধারই আরেক রপ, যে মেধার ফলে স্বাধীন ইচ্ছা প্রকাশ পাচ্ছে। অ্যানসেল্ম প্রথম দ্বি-ইচ্ছা তত্ত্ব উপস্থাপন করেন (theory of two wills)। অনেক পরে শ্রডিংগার থেকে বেল, এঁরা যে থ্ট এক্সপেরিমেন্ট প্রথা জনপ্রিয় করে তুলেছেন, বলা যেতে পারে অ্যানসেল্ম এই প্রথার পত্তন করেন। অ্যানসেল্ম বলেন, মনে করুন ঈশ্বর দেবদূত বানাচ্ছেন। ঈশ্বর দেবদূতকে সুখী হওয়ার স্বাধীন ইচ্ছা (will to be happy) প্রদান করলেন। তাহলে কি আমরা সত্যিই বলতে পারি যে দেবদূতটি চাইলেই সুখী হতে পারে? না, কারন দেবদূতের আর কোন ইচ্ছেই নেই, ওই একটি মাত্র স্বাধীন ইচ্ছা, কাজেই অন্য কোন স্বাধীন ইচ্ছা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা না পওয়া পর্য্যন্ত আমরা বলতে যে দেবদূতটি নিজের ইচ্ছেয় খুশী হয়েছে। কিন্তু যখন ঈশ্বর দেবদূতটিকে অন্য একটি ইচ্ছা প্রদান করলেন, ধরা যাক ন্যায়ের ইচ্ছা (will to be just), তখন বলা যেতে পারে যে দেবদূতটি নিজের ইচ্ছেমতো খুশী হওয়াকেও বাছতে পারে বা ন্যায্য হওয়াকেও বাছতে পারে। অর্থাত স্বাধীন ইচ্ছা আর বেছে নেওয়ার উপায় (choice), এই দুটো অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। চয়েস না থাকলে ফ্রী উইল থাকেনা।

    অ্যানসেল্ম আরো বল্লেন, কিছু দেবদূত খুশী হওয়ার ইচ্ছাকে বেশী প্রাধান্য দিয়েছে, খুশী হওয়ার জন্য তারা অন্যায় করতেও ইচ্ছুক হয়েছে। আবার কিছু দেবদূত ন্যায়পরায়নতাকে বেশী প্রাধান্য দিয়েছে, অখুশী হয়েও তারা ন্যায় কাজ করেছে। প্রথম দেবদূতের দল পাপ করেছে। কাজেই পাপ ঈশ্বরের থেকে আসেনি, এসেছে স্বাধীন ইচ্ছার থেকে। মানুষের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই।
  • dc | 132.164.176.18 | ২১ মে ২০১৫ ১৪:৩৩676042
  • এর কিছু পরে টমাস অ্যাকুইনাস theory of action এর প্রবর্তন করেন। টমাস বলেন যে মানুষ স্রেফ কাজ করার জন্য কাজ করেনা, তার প্রতিটি কাজের পেছনে কিছু লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে (goal or motivation)। যারা মহৎ (virtuous) তারা ভালো কিছু করার উদ্দেশ্য রাখেন কারন সেটাই তাদের স্বাধীন ইচ্ছার অংশ। এর ফলে এঁদের মধ্যে ভালো কিছু করার প্রবৃত্তি জাগে, তখন এঁরা নিজের বুদ্ধি দিয়ে বিচার বিবেচনা করে একটা রাস্তা বেছে নেন আর সেইমতো কাজ করেন। কাজেই মেধা (intellect) হলো মূল চালিকাশক্তি, যা পরিস্থিতি বিচার করে বেশ কয়েকটা বিকল্পর একটা বেছে নিতে সাহায্য করে।

    টমাস এও বলেন যে স্বাধীন ইচ্ছা মানেই যে ভগবানের পূর্বজ্ঞান অসম্পূর্ণ, তা নয়। কারন ভগবানের অস্তিত্ব স্থান-কালের বাইরে। ভগবান যুগপৎ সব কিছু জানেন, ভূত, বর্তমান আর ভবিষ্যত সব সময়ে একসাথে বিরাজ করেন (eternalism)।
  • dc | 132.164.176.18 | ২১ মে ২০১৫ ১৫:০৫676043
  • টমাস অ্যাকুইনাস বলেছিলেন যে ঈস্বর সর্বশক্তিমান আর সর্বজ্ঞানী হলেও তাকে যুক্তি মেনে চলতে হয়। হাই মিডল এজের আরেক নামকরা দার্শনিক ডান্স স্কোটাস (Duns Scotus) টমাসের প্রায় সব ব্ক্তব্যেরই বিরোধিতা করেন। ডান্স বলেন যে ঈশ্বরকে যে শুধু যুক্তি মেনে চলতে হবেনা তাই নয়, ঈশ্বর কোনরকম প্রতিবন্ধকতা দ্বারাই সীমাবদ্ধ নয়। ডান্স আরও বলেন যে একমাত্র সত্য হলো আমাদের অস্তিত্ব, বা আমরা আছি (univocity of being)। অস্তিত্বই হলো মেধার আসল প্রমান, অস্তিত্ত্ব হলো একটি transcental অবস্থা। এর আগে অ্যাকুইনাস বলেন যে পার্থিব বস্তুসমূহের উপাদান (essence) আর অস্তিত্ব (existence) আলাদা, কিন্তু ডান্স স্কোটাস বলেন এই দুইয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তার কারন আমরা প্রত্যেকে, আমার অস্তিত্ব আর আমার আমিত্বর মধ্যে কোন পার্থক্য করতে পারিনা। তেমনি যেকোন জিনিষের মধ্যে অস্তিত্ব (si est) আর উপাদান ((quid est) এর পার্থক্য নেই।

    ডান্স স্কোটাস টমাসের মেধা তর্কেরও বিরোধিতা করেন। ডান্স বলেন যে মেধা চালিকাশক্তি না, স্বাধীন ইচ্ছা পারিপার্শ্বিকের (environment) ওপর নির্ভরশীল। যেমন ধরা যাক, একটি ছাত্রকে পরীক্ষার পড়া করতে হবে। ছাত্রটির মেধা তাকে সবসময়েই বলবে পড়া করতে, কারন এতেই তার ভালো। তা সত্ত্বেও কিন্তু কিছু কিছু ছাত্র পড়া তৈরি নাও করতে পারে, অর্থাত স্বাধীন ইচ্ছা তার মেধার উপরে। কাজেই মেধা কোন একটি কাজ নির্দিষ্ট করে দেওয়ার পরেও পারিপার্শ্বিকের ওপর বিচার করে স্বাধীন ইচ্ছা সিদ্ধান্ত নেয় সেই কাজ সে করবে কিনা। টমাস মার্সটন পরে ডান্সের এই মত সমর্থন করেন। মার্সটন এও বলেন যে স্বাধীন ইচ্ছার অর্থই হলো স্বাধীন, তার ওপর মেধা বা অন্য কোন কিছু চাপিয়ে দেওয়া মানেই হলো সেটা আর স্বাধীন রইলো না।
  • 0 | 132.163.43.62 | ২১ মে ২০১৫ ১৭:৫২676045


  • একটু ট্রাই নিলাম। একটা ফ্লো-ডায়াগ্রামের মতো কিছু থাকলে সুবিধে হয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন