এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • মিথ ও রাজনীতি

    bip
    অন্যান্য | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ | ৮৪৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • bip | 83.200.4.3 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১১:৫০667140
  • মিথ ও রাজনীতি
    (১)
    সেটা ২০০৪। বাজপেয়ি সরকারের "আচ্ছে দিন" জনগণ খেলো না । বিজেপির গণেশ উল্টিয়ে কংগ্রেস ক্ষমতায়।

    ভারতের ইনস্টিউটগুলোতে তখনো হিন্দুত্বের রেশ কাটেনি। বৈদিক গণিত, বৈদিক সমাজতন্ত্র, বৈদিক বিজ্ঞান থেকে বৈদিক রমণ এবং রমণীতে ভা্রতকে ভেজাবার তালটা সবে কাটছে।
    সেই প্রথম আমি সিরিয়াস হয়ে ভাবলাম দেখি ঋকবেদে কি আছে। কেমন ছিল বৈদিক সমাজ। পাশেই ছিল দক্ষিন ক্যালিফোর্নিয়াতে ট্রাবুকো ক্যানিয়নে বেদান্ত সমাজের লাইব্রেরী।

    ঋকবেদের ভাষা সংস্কৃত না -প্রোটো ইন্দোইউরোপিয়ান। অধিকাংশই মাথামুন্ডু বোঝা যায় না বলে অনেক স্তোত্রের একাধিক মানে সম্ভব। যা বুঝলাম পড়াশুনো করে তার মধ্যে বিজ্ঞান ভূগোল কিছুই নেই । আদিবাসীদের পূজো করার মন্ত্র-তাতে সাহিত্যের মতন রূপকের ব্যবহার আছে । বেসিক্যালি গোটা বইটা থেকে একটা আদিবাসী সমাজের চিত্র বেড়িয়ে আসে। যুদ্ধ, পুত্র, বৌ, সম্পতি ইত্যাদির জন্য যাগযজ্ঞ। শুধু প্রগ্রেসিভ দিক যেটা চোখে পড়েছিল-ঋকবেদে কিছু স্তোত্র মেয়েদের লেখা। সেখানে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও প্রতিবাদি ভাষা চোখে পড়ে। মুক্তমনা সাইটে সেটাই ছিল আমার প্রথম প্রবন্ধ ( MYTH OF VEDIC SOCIETY: BETWEEN REALITY, RELIGION AND POLITICS )

    যাইহোক বৈদিক সমাজে প্লাস্টিক সার্জারি, টেস্ট টিউব বেবী, বিমানের অস্তিত্ব থাকাত দূরের কথা ঋকবেদ পড়লে এটাই পরিস্কার হয় সেই সমাজটা ছিল নমাডিক আদিবাসিদের। যারা ঘুরে ঘুরে নানান জায়গায় বসতি স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে স্থানীয় কালো দাশদের হারিয়ে। তাদের সোনা এবং স্ত্রীর হরন করা যে পবিত্রকাজ এটাও ঋকবেদে পাওয়া যাবে -তবে যেহেতু ভাষাটা প্রটো ইউরোপিয়ান, আসল মানে বোঝা কঠিন। আমি যেটুকু বুঝেছিলাম, সেটা বুঝে একটা গল্প লিখি-"পৌলমী" ( তবে এটা প্রথম লেখা ছিল-অনেক বানান ভুল আছে ) ।

    (২)

    রাজনৈতিক সিদ্ধির জন্য মিথকে কাজে লাগানো নতুন কিছু না ।

    কমিনিউস্টরা বহুদিন সোভিয়েত ইউনিয়ানকে শ্রমিক শ্রেনী তথা সাম্যের স্বর্গরাজ্যে বলে চালানোর চেষ্টা করেছে। যদিও বাস্তবে আজ এটাই সত্য হিসাবে প্রমানিত লেনিন এবং স্টালিনের আমলে সোভিয়েত ইউনিয়ান ছিল কৃষক এবং শ্রমিকদের বধ্যভূমি [১]। সোভিয়েত ইউনিয়ানের মিথ ফাটার পর কমিনিউজমের পালে আর হাওয়া নেই ।

    ইসলাম এবং খৃষ্টান ধর্মের রাজনীতিও সম্পূর্ন মিথের ওপর দাঁড়িয়ে।

    ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে হজরত মহম্মদের স্থাপিত স্বর্গরাজ্য। যেখানে নাকি ক্ষমা, ন্যায়, বিচার, সাম্য এমন "পারফেক্ট" ছিল, তেমনটা পৃথিবীর আর দেখেনি কোনদিন। কিন্ত সেখানেও একটু ঘাঁটতে গিয়ে দেখলাম হজরত মহম্মদ চরিত্রটাই কাল্পনিক [২] । আর যদি ধরেও নিই ওই চরিত্র ছিল, তাহলেও দেখা যাচ্ছে তিনি তার সাগরেদদের গণিমতের মাল দাসী হিসাবে ভোগ করার অনুমতি দিয়েছেন। আর সে এমন স্বর্গরাজ্য যে তিনি মারা যেতেই তার বৌ, শিষ্যদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়! এসব জানার পর , পড়ার পরেও অধিকাংশ মুসলমান মহম্মদ এবং তার স্বর্গরাজ্যে বিশ্বাস করে! অবশ্য হিন্দুরা যদি যদি বৈদিক বিমান, বৈদিক টেস্ট টিউব বেবী এবং প্লাস্টিক সার্জারীতে আস্থা রাখে, মুসলমানরাই বা কেন মহম্মদে আস্থাশীল হবে না ?

    কারা বেশী মাথামোটা, সেটা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে। তবে সমস্যা হচ্ছে এই সব মিথ এতই শক্তিশালী তা ভারত বাংলাদেশ পাকিস্তান সহ সব মুসলিম দেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রনের আসনে। এই সব মিথের জন্য এই সব দেশে উন্নয়নের রাজনীতি করা বেশ মুশকিল হচ্ছে আস্তে আস্তে।

    খ্রীষ্টান ধর্মের মিথটা অদ্ভুত শক্তিশালী। সেটা হচ্ছে ভিক্টিমাইজেশনের । মানে আমাদের সবাই ধরে মারছে। আমরা নির্যাতিত। এ হচ্ছে পৃথিবীর সব নির্যাতিতদের একত্র করার মিথ।

    (৩)

    এমন ভাবার কারন নেই শুধু ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলিই মিথের পূজারী।

    গণতন্ত্রে সব শক্তিকেই কমবেশী মিথ তৈরী করতে হয়।

    যেমন মমতা ব্যানার্জি নামে যে চরিত্রটাকে লোকে বিশ্বাস করে ভোট দেয়-সেটা মিথিক্যাল চরিত্র। আজ তাকে আনন্দবাজার সারদার প্রতীক চোরের রাণী বানাচ্ছে-কিন্ত সিপিএমকে তাড়াতে এই মহিলাকেই " সততার প্রতীক" বানিয়েছিল বাংলার মিডিয়া। তার আগের চরিত্র জ্যোতিবসু সম্মন্ধেও মহান ত্যাগী কমিনিউস্ট নেতার একটা মিথ তৈরীর চেষ্টা পার্টির মধ্যে আছে। যদিও পার্টি কখনোই এ উত্তর দিতে পারে নি একজন "মহান" ত্যাগীর কমিনিউস্ট নেতার পুত্র কি করে এত সম্পতি করেন !! অথচ যে লোকটা সত্যই সাধারন সৎ জীবন কাটিয়েছেন-তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য। তিনি এখন বাংলার রাজনীতিতে ব্রাত্য। কারন বুদ্ধদেবকে নিয়ে কোন মিথ তৈরী করার চেষ্টা হয় নি। বা তিনি করেন নি। ফলে তিনি ফেইল্ড!

    আমেরিকাতে মিডিয়াগুলো এ ব্যপারে পেশাদার। এখানে ব্যক্তি কেন্দ্রিক মিথ তৈরীর ব্যপারে জোর দেওয়া হয়। তার জন্যে পেশাদার মার্কেটিং, ব্রান্ডিং এজেন্সি হায়ার করা হয়।

    রাজনীতি মিথ বিহীন হবে এমন ভাবা অন্যায়। কিন্ত মিথের পরিমান যদি এমন হয় যে গল্পের গরু গাছে ওঠে, তাহলে উলটো ফলের সম্ভাবনা । যে গাধাগুলো বৈদিক প্লাস্টিক সার্জারিতে বিশ্বাস করে, তারা এমনিতেই বিজেপিকে ভোট দেবে। কিন্ত সায়েন্স কংগ্রেসে যেভাবে বৈদিক অপবিজ্ঞান চালানোর চেষ্টা হল, এতে বিজেপির ক্ষতি- লাভ নেই । এই স্যোশাল মিডিয়ার যুগে গরুকে আর গাছে তোলা যাবে না এটা তারা যত দ্রুত বোঝেন ভাল -না হলে এই যাত্রায় উলটো ফল হতে বাধ্য।

    [১] কমিউনিস্ট পাপের ইতিহাস
    [২] রাজনৈতিক নেতা না অভিনেতা
  • যম | 181.207.226.43 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ১৯:৩৩667142
  • এ ব্যাপারে চাড্ডি ছাগু এ ওকে বলে আমায় দেখ। এক মাল প্লাস্টিক সার্জারী খুঁজে পায় তো অন্য মাল খুঁজে পায় বিগ ব্যাং।
  • - | 109.133.152.163 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ২৩:১৮667143
  • "সেই প্রথম আমি সিরিয়াস হয়ে ভাবলাম দেখি ঋকবেদে কি আছে। কেমন ছিল বৈদিক সমাজ। পাশেই ছিল দক্ষিন ক্যালিফোর্নিয়াতে ট্রাবুকো ক্যানিয়নে বেদান্ত সমাজের লাইব্রেরী।"
    কিন্তু বেদ তো এই ভাবে "পড়া"র কথা না। সত্যিই সিরিয়াস হলে, গুরুর কাছে সমিৎপাণি হয়ে শিক্ষার জন্য যেতে হয়। ঐ জন্যিই মনে হয় ঠিকঠাক বোঝা হয় নি ঃ-)
    যাগ্গে!
  • কল্লোল | 125.242.176.85 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ১০:৪২667144
  • মিথ ও রাজনীতি আমার খুব প্রিয় বিষয়। এই উপমহাদেশে "রাজনীতি" যবে থেকে সাধারণ মানুষের বিষয় হয়ে উঠেছে (সিপাহী বিদ্রোহের সময় থেকে মোটামুটি) তখন থেকেই অতিকথাগুলি ইতিহাসের অঙ্গ হয়ে গেছে। তার আগে ছিলো না এমন নয়। নানা সময়ে এই উপমহাদেশের নানান অঞ্চলের কৃষক বিদ্রোহেও অতিকথার খুব বড়ো ভুমিকা। সেগুলোকে পাগল-ছাগলের প্রলাপ ধরে নিলে এই উপমহাদেশের ইতিহস বোঝা অসম্পুর্ণ থেকে যাবে।
    কোশম্বী থেকে গৌতম ভদ্র, জ্ঞানেন্দ্র পান্ডে, শাহিদ আমিন, রণজিত গুহ অনেকেই এ নিয়ে খুব ভলো কাজ করেছেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন