এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পুঁজি বনাম শ্রমঃ মুনাফা বনাম সুরক্ষা

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ২৬ আগস্ট ২০১৪ | ২০১৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ২৬ আগস্ট ২০১৪ ০২:১৭648782
  • ১)
    ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরের থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে অভনপুর মহকুমা অফিস ছাড়িয়ে একটি নির্জন পথে ৫ কিমি এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে প্রায় ৫০ একর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ৫ টি ছোট ছোট কারখান। সবই একস্প্লোসিভের নানান কিসিম বানায়। কোনটা নব্ভারত এক্স্প্লোসিভ (পি) লিমিটেড; কোনটা নবভারত ফিউজ, কোনটা অন্য কিছু।
    মালিক শ্রীমতী নীনা সিং মহোদয়া বিজেপি নেত্রী, যদ্দূর মনে পড়ে ৭৮-৭৯তে বিধায়ক পদের প্রার্থী ছিলেন। তখন ওঁর স্বামী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রিন্সিপ্যাল। কারখানা গুলো ভাল মত অর্ডার ধরেছে। তাই তিন পালিতে কাজ হচ্ছে। কোন শিফটেই জনা চল্লিশের বেশি স্টাফ নেই বলে চোখের দেখায় মনে হল।
    কিন্তু ফিউজ ফ্যাকটরিতে আপাততঃ কাজ বন্ধ। কারণ গত ৩১ জুলাই রাত দুটোর সময় প্রচন্ড বিস্ফোরণে ১০০x ৩০ ফুটের উৎপাদন সাইট ছাত (পাকা) উড়ে দেয়াল ভেঙে মাটিতে মিশে গেছে।
    মেন গেটে নোটিস লাগানো-- সরকারি এক্সপ্লোসিভ ও সেফটি বিভাগের নির্দেশক্রমে কারখানায় উৎপাদন আগামী সূচনা অবধি স্থগিত থাকবে।
    যে কথাটা বলা নেই তাহল-- সেই বিস্ফোরণে পাঁচজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তারমধ্যে একজন কোমল সিংয়ের শরীর আলাদা আলাদা হয়ে উড়ে কোথায় যে পড়েছে, শেষে অনামিকার বিয়ের আংটি দেখে বউ চিনেছে। আরও বলা নেই-- এখন অবধি কেউ অ্যারেস্ট হয় নি। কেন দুর্ঘটনা হল?
    মালিক ও সরকার বলছে-- সেটা তদন্ত সাপেক্ষ।
    ওই পাঁচটি ফ্যাক্টরিতে একটিই ইউনিয়ন। কোন এক ছোটখাট বামপন্থী ইউনিয়নের।
    ওরা কী করছে?
    ওরা বলছে যে দুর্ঘটনা হয়েছে মালিকপক্ষের গাফিলতিতে।
    ওরা কম পয়সায় বে্শি লাভ করতে গিয়ে সিকিউরিটি এবং অন্য নন-টেকনিক্যাল বিভাগের বিনা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মীদের প্রোডাকশন সাইটে মেশিন চালাতে লাগিয়েছে। তাতেই দুর্ঘটনা।
    ফলে প্রোডাক্শন বন্ধ থাকলেও যে যে শ্রমিক হাজিরা দেবে, হাজিরি খাতায় সই করবে তাদের সবাইকে মাইনে দিতে হবে। ম্যানেজার, সুপারভইজার, ক্লার্কের তো মাইনে বন্ধ হয় নি; শ্রমিকেরা কি দোষ করল?
    দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।
    ক্ষতিপূরণের কথা পরে, আগে তাৎকালিক এক্স গ্রাসিয়া সোয়া দুলক্ষ টাকা বিধবাদের হাতে তুলে দিতে হবে। কোন দালালের হাতে নয়।
    সুরক্ষার সমস্ত নিয়ম মেনে ব্যবস্থা করে তবে উৎপাদন শুরু হবে, নচেৎ নয়। এর জন্যে সরকারী বিভাগ, মালিক ও ইউনিয়ন একসাথে বসতে হবে। সুরক্ষার ব্যাপারটা ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে হতে হবে।
  • Ranjan Roy | ২৬ আগস্ট ২০১৪ ০২:৩৫648785
  • ২)
    ছোট ইউনিয়ন, কিন্তু জনপ্রিয়। সীমিত ক্ষমতা নিয়ে প্রাণপণে লড়ছে।
    ফলে মালিকপক্ষ যাই চেপে রাখুক, সব মিডিয়া ও চ্যানেলে নিয়মিত দেখাচ্ছে। অধিকাংশ কাগজ ইউনিয়নের বক্তব্য ছাপছে।
    ইউনিয়ন মহকুমা অফিস পাড়ায় রাজমার্গের পাশে প্যান্ডাল লাগিয়ে ধর্ণা শুরু করেছে--- ১৬ আগস্ট থেকে। আর গোটা মহকুমা শহরে লিফলেট বিলি করেছে যে ৩০ তারিখ অবধি কোন অ্যাকশন না নিলে ৩১ তারিখ থেকে রাজমার্গে চাক্কা জ্যাম; অবরোধ। এটা পুলিশ প্রশাসন, কালেক্টরকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
    মালিক পক্ষ কী কী দাবী মেনেছে?
    এক, পাঁচটি পরিবারকে সোয়া দু'লক্ষ টাকা করে দিয়েছে। আমরা মৃত দের দুটি পরিবারে কথা বলে নিশ্চিত হলাম।
    দুই, শ্রমিকেরা হাজিরা খাতায় সই করলে মাইনে পাবে-- মেনে নিয়েছে।
    কিন্তু ওরা রোজ গেটের বাইরে থেকে হাজিরা খাতায় সই করে ধর্ণা মঞ্চে চলে যায়! তাই আজ রোববার (২৪/৮) শিফটের ওয়ার্কারদের গেটের ভেতরে ঢুকিয়ে সাইন করিয়ে গেটে তালা লাগিয়েছে, ৫ টার আগে গেট খুলবে না। ফলে দুপুরে ধর্ণামঞ্চ প্রায় খালি। বিকেলে ভরবে।
    তিন, দোষীদের শাস্তি! মালিকপক্ষের বক্তব্য -- আগে তো কার দোষে তাই ঠিক হোক! শ্রমিকেরা সেফটি নিয়ম ভেঙে কানে মোবাইল লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে কাজ করে। বিস্ফোরণ তার থেকেও হতে পারে। এসব তদন্ত সাপেক্ষ।
    তিন, ক্ষতিপূরণ। মালিকপক্ষ ১০ লাখ অবধি রাজি হয়েছে। ইউনিয়ন বলছে ২৫ লাখ চাই। ( জানে যে সম্ভব নয়, আশা করে যে চাপে এক-দুলাখ বাড়বে, তাই মন্দ কি!)
    চার, নিহতদের পরিবার পিছু একজনকে চাকরি। মালিকপক্ষ নিমরাজি হয়েছে। বলছে --ইউনিয়ন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বসুক। HR ফর্ম ভরিয়ে দেবে।
    কিন্তু, ইউনিয়ন চায় ত্রি-পাক্ষিক চুক্তি। মালিক-শ্রমিক (ইউনিয়ন- সরকার কলেক্টর)। মালিকেরা এখনো রাজি নয়।
  • bip | 78.33.140.55 | ২৬ আগস্ট ২০১৪ ০২:৪১648786
  • ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটি সিকিউরিটি নিয়ে বহুদিন কাজ করেছি। এখনো কিছু কিছু করি। ভারতে অধিকাংশ কারখানাতে এসব কিছু নেই। পৃথিবীতে সবাই এখন ATEX স্টান্ডার্ডে ইলেক্ট্রনিক্স এবং ইলেক্ট্রইক্যালের ডিজাইন করে যাতে সামান্য কিছু আগুনের সম্ভাবনা থাকলেও আগে থেকেই কারেন্ট শাট ডাউন হয়। এছারাও আগুনের সম্ভাবনা থাকলে এখন আগুন সেন্সর ও বাজারে আছে, যা আগে থেকেই মোবাইলে ওয়ার্নিং দিয়ে দেবে যাতে ওয়ার্কাররা তাড়াতারি ফ্লোর ছাড়তে পারে। ভারতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটি আইন আছে। কিন্ত বিড়ালের গলায় ঘন্টি পড়াবে কে? ইনস্পেক্টরের চামচা মাসোহারা নিয়ে চলে যাবে।

    কিছু ক্ষতিপুরন দিয়ে কি সমস্যার সমাধান হবে?

    এই সব সেফটি মেজারে কোম্পানীর মুনাফা বাড়ে-কমে না। কারন এই ধরনের সেফটি মেজারে গেলে সবার প্রথমে ইন্ড্রআস্ট্রিয়াল অটোমেশন করতে হবে সেন্সর ইত্যাদি দিয়ে। তাতে প্রথমে খরচ বেশী-কিন্ত পরে অল্প খরচে অনেক কম কর্মী দিয়ে বেশী প্রোডাকশন দিতে পারবে। আগুন লেগে বিস্ফোরন হলে মালিকের ও ক্ষতি। শ্রমিকের প্রান যায়। তার থেকে বাবা আগে থেকে কিছু ইনভেস্ট করে অটোমেশন করাই ত ভাল।

    তবে অটোমেশনের খরচ এখনো খুব বেশী-কারন দুটো তিনটে জার্মান কোম্পানীর মনোপলি এখানে। ফলে একটা সেন্সর যা বানাতে ১০ ডলার খরচ-সেটা ফাইনালি যখন বেচে সেটা ২০০০-৫০০০ ডলার হয়ে যায়। আশার কথা এই যে ওয়ারলেস প্রযুক্তির ফলে অটোমেশন কস্ট ৯০% কমবে। সেটাই আশার কথা যদি ভারতে মালিক পক্ষ এই ধরনের সস্তার প্রযুক্তি কেনে।
  • Ranjan Roy | ২৬ আগস্ট ২০১৪ ০২:৫৬648787
  • ৩)
    আমি কী দেখলামঃ
    ফিউজ ফ্যাকটরিতে আমরা চারজন (ইউনিয়নের ৩ ও আমি) গিয়ে সিকিউরিটিকে দুর্ঘটনাস্থল দেখবো বলায় ওরা ভেতরে জিগ্যেস করে গেটের ছোট হিস্যে খুলে ভেতরে ঢুকতে দিল।
    দেখলাম বিস্ফোরণে একটি এয়ার কুলার এখনো একটা গাছের ডালের ফাঁকে প্রায় দশ ফুট উঁচুতে আটকে আছে। দেয়াল ছাদ এমন গুঁড়ো গুঁড়ো যেন কর্পোরেশনের মেশিন এসে অবৈধ নির্মাণ ভেঙেছে।
    শ্রমিকেরা জানাল সুপারভাইজার নিজে নিয়ম ভেঙে সাইটে বাইক নিয়ে কানে আইপড লাগিয়ে ঘুরত, কাজেই কিছু মজদূর ও -এগুলো কিস্যু নয় ভাব করে সেফটি নিয়ম ভাঙত।
    গেটে আরও নোটিস দেখলাম-- অমুক অমুককে প্রোডাকশন থেকে অমুক বিভাগে বদলি করা হল। না আসলে বেতন কাটা হবে, অ্যাকশন হবে। মেরামতের কাজ শুরু হচ্ছে, অমুক অমুক এখনো কাজে জয়েন করেনি, শেষ সুযোগ।
    মজদূরের জোট প্রাঙ্গণে মন্দিরের বারান্দায় কেউ কেউ গাছের নীচে গড়াচ্ছে। ওখানেই জনা ৩০ এর সঙ্গে বসে কথা হল। চা এল।জানলাম যে পাঁচজন মৃত, তারা সবাই অদক্ষ শ্রমিক। অন্য কাজ থেকে সরিয়ে প্রোডাকশনে লাগানো হয়েছিল।
    সেফটি ও এক্সপ্লোসিভ বিভাগের ইনস্পেক্টররা?
    আমরা কোনদিন আসতে দেখি নি। শুনেছি রায়পুরে কর্পোরেট অফিসে গিয়েই খাবার খেয়ে পকেট ভারি করে পরিদর্শনের রিপোর্ট বানায়।
    সব মজুর দশ বছরের বেশি পুরনো। কিন্তু তাদের টেম্পোরারি দেখাচ্ছে। উদ্দেশ্য আইনি প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা।
    জিগ্যেস করলাম-- গড় মাইনে কত? ছ'হাজার।
    নিয়মিত দেয়?
    কক্ষণো না। একমাসেরটা পরের মাসের আদ্দেক পেরিয়ে দেয়। অনেক ঘ্যান ঘ্যান করতে হয়।
    কিন্তু ২৫ বছর ধরে লাভে চলা কারখানাটা যে অনেক বোর্ড লাগিয়েছে।
    তাতে দক্ষ/অদক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা, মাইনে দেবার তারিখ, বকায়া দেবার তারিখ সবই তো লেখা আছে?
    ভাল করে দেখুন তো!
    খালি নিয়মমাফিক হেড গুলো লেখা আছে। কোন হেডের পাশে কোন সংখ্যা দেয়া আছে কি? নিদেনপক্ষে মাইনের তারিখ? শ্রমিকের সংখ্যা? না নেই। সব ঘরগুলো খালি।
  • Ranjan Roy | ২৬ আগস্ট ২০১৪ ০৩:১৭648788
  • ৪) একটা বোর্ড চোখে পড়লঃ
    দক্ষতা বাড়ানোর পাঁচটি মন্ত্র
    -------------------------
    সময়ে কাজ শেষ করা।
    সহ্য করার অভ্যেস বাড়ানো।
    সহযোগ করা।
    সর্বপ্রকার দক্ষতা বাড়ানো।
    সাহস দেখানো।

    ইতিমধ্যে একটি বোলেরো চড়ে ডেপুটি জি এম মিঃ দাস ঢুকলেন। মন্দিরের সামনে গাড়ি থামালেন। রোজ নাকি নেমে এসে মন্দিরে প্রণাম করে যান। আজ লালঝান্ডা ও মজদূরদের দেখে গাড়ি থেকেই ঠাকুর নমঃ সেরে নিলেন। তারপর নিজের চেম্বারে গেলেন।
    জানলাম-এই ইউনিটের লাইসেন্স আসলে এঁর নামেই আছে। ফলে আদৌ পুলিশ ধরলে এঁকেই ধরবে; আসল মালিককে নয়। বোকার মরণ!
    শিফ্ট শেষ হলে ধর্ণায় যাওয়া ও ৩১ তারিখে অবরোধে সামিল হওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ইউনিয়নের নেতারা চললেন পাঁচটি ইউনিটের এইচ আর এর কাছে। আগে থেকে খবর ছিল না। উনি বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। গাড়ি থামিয়ে নেমে এসে আমাদের ওঁর চেম্বারে নিয়ে গেলেন। চা নিয়ে এল যে কর্মচারি তার ডান হাতটা নেই। সে বাঁহাতেই কাজ চালাচ্ছে। সে নাকি ইউনিয়নের ইউনিট ভাইস প্রেসিডেন্ট।
    এইচ আর ভদ্রলোক ব্যবহারকুশল, চতুর। বিহারি টানে হিন্দি বলেন, আমার বাঙালী টানের সঙ্গে বেশ মেলে।
    উনি বল্লেন-- আপনারা আমার নামে কমপ্লেন করেছেন, আমি নাকি নিষেধের নোটিস টাঙিয়ে ভেতরে চাপ দিয়ে কাজ করাচ্ছি?
    মালিক বিশাল সিং সাহেব আমায় ফোন করে বকেছেন। বলছেন একেই মিডিয়া আমার বিরুদ্ধে আর ইউনিয়নের লোকগুলো রোজ পেপারে ধর্ণায় আমার মা-মাসি করছে যেন ওরাই কারখানা চালাবে তারপর তুমি? বলেছি ছেলের মাথায় হাত রেখে --সব মিথ্যে! আপনারা বলুন ভেতরে কাউকে কাজ করতে দেখলেন?
    উনি দ্বিপাক্ষিকে রাজি, ত্রিপাক্ষিকে না। বললেন--দেখবেন অধিকাংশ শ্রমিক, আপনাদের যাই বউক না কেন, পেছনে আমার ফরমূলাই মানতে চাইছে।

    বেরিয়ে আসতে আসতে লজ্জার সঙ্গে অনুভব করলাম আমার আত্মা যেন মজদূরদের থেকে ওই বাকপটু দুনিয়াদারি বোঝা চলতা-পূর্জা এইচ আর এর সঙ্গেই বেশি নৈকট্য বোধ করছে!
  • Ranjan Roy | ২৬ আগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৯648789
  • ৬)
    এবার গেলাম দুই পরিবারের বাড়িতে।
    প্রথম জন ছিলেন ইলেক্ট্রিশিয়ান। গ্রামের বাড়ির আদলে তৈরি পাতলা ইঁটের দেওয়ালের পাকাবাড়ি। দুটো কামরা । বাইরে খোলা ড্রেন। গ্রামের হিসেবে এখানেও বাথরুম-পায়খানা বানানো হয় নি। বড় কাজ মাঠে হয়। রাত্তিরে উঠলে পেচ্ছাপ দরজার বাইরে নালিতে বা পথের ধূলোতে সারা হয়। ফলে সামনের ঘরে একটা গন্ধ লেগেই থাকে।
    মা ও ছেলে শোকের প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে। ঘরে টিভি চলছে।যে টাকা পেয়েছে তা দিয়ে ঘর মেরাম্মত করাচ্ছে। এদের পাঁচ বিঘে একফসলী চাষের জমিও আছে। ধর্ণায় যাবে।
    ২) এই পরিবারের কর্তাটি ছিলেন ডাকাবুকো।মালিকপক্ষ বলেছিলেন ঝগড়ুটে, গাল দেয় খুব। কিন্তু কারখানার কোন ক্ষতি করে নি কখনো।
    স্ত্রী জানালেন-- ওরা রাজপুত। এই সতনামী পাড়ায় ঝগড়া লেগেই থাকে। কেউ যায় না। উনি যাবেনই। এই করে সেবার ছুরি খেলেন।
    তিনটে বাচ্ছা ছ্ড়ে গেছেন। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে রায়পুরের সরকারি কলেজে সায়েন্স নিয়ে পড়ে। এবার বাবার শ্রাদ্ধের কাজে ব্যস্ত থাকায় কলেজের ভর্তির (সেকেন্ড ইয়ার) সময় পেরিয়ে গেছে। প্রাইভেটে দেবে। স্ত্রী বললেন-- নীচুজাতের এই পাড়ায় বাড়ি করতে স্বামীকে বারণ করেছিলাম। উনি শোনেন নি।
    ( জানলাম --উনি একটি বামদলের মহিলা সংগঠনের হয়ে কোলকাতা সম্মেলনে গিয়েছিলেন।)
    স্বামীর পরিবারের সবাই মতলবী, টাকার দিকে নজর; পাঁড় মাতাল। স্বামীর কাজে এসেও আমার থেকে প্রায় ৭০ হাজার খসিয়েছে।
    চাক্কাজামে যাবেন কি না মনস্থির করতে পারেন নি।
    মেয়েটি আগে নাকি ছাত্র সংগঠনে কাজ করেছে। হাসিমুখে বলে-- আমি যাব।
    অবাক করে এগিয়ে আসেন ওর অশীতিপর ঠাকুমা।
    বলেন-- হ্যাঁ, আমার ছেলের সম্মানের প্রশ্ন। নাতনির হাত ধরে আমি যাব। যাবই।
    ইউনিয়ন নেতাটি দু'বাড়ি থেকেই চেয়ে নিয়েছে ডেথ সার্টিফিকেটের জেরক্স ও পাসপোর্ট সাইজের ফোটো।

    এবার রায়পুরে ফেরার পালা। মাথার ভেতরে একরাশ শূন্যতা।
  • aranya | 154.160.226.53 | ২৬ আগস্ট ২০১৪ ০৪:০৭648790
  • পড়ছি, রঞ্জন-দা।
  • dc | 52.104.62.119 | ২৬ আগস্ট ২০১৪ ০৯:৩২648791
  • লেখাটা পড়ে ভাল্লাগলো।

    বিপ আপনি যেসব বললেন সেসব এখনো বহুদূর। প্রথম কথা ৯০% কারখানায় কোনরকম সেফটি প্রভিশনই নেই। তারপরের ৯% কারখানায় যাকিছু আছে সেসব লোকদেখানো। মানে ধরুন স্প্রিংকলার হয়তো আছে, কিন্ত কাজ করেনা। বা জলের ব্যবস্থা নেই। ফার্স্ট এড এর বক্স লাগানো আছে, ভেতরটা ফাঁকা। এরকম লোকদেখানো সেফটি বড়ো বড়ো কোম্পানিগুলোর সাইটেও দেখেছি, যেমন এল্যান্ডটি, মাহিন্দ্রা। এসব সাইটে বড়ো বড়ো সাইনবোর্ড দেখেছি, ওয়ার্কাররা যেন হেলমেট আর গ্লাভস পরে কাজ করে - কিন্তু সত্যি সত্যি হেলেমেট পড়ে আছে, এরকম দুয়েকজন বাদে কাউকে খুঁজে পাবেননা। সমস্ত রকম সেফটি প্রিকশান মেনে কাজ করা হয়, এরকম সাইট বোধায় দেখিনি।
  • dd | 125.241.15.238 | ২৬ আগস্ট ২০১৪ ১১:৩৯648792
  • যে কোনো মাল্টিন্যাশোনাল কেমিকেল কোংএ যাও হে dc। সেফটি দেখে হাঁ হয়ে যাবে। খুব পাওয়ারফুল থাকে সেপটি ডিপাটমেন্ট। সাক্ষাত ব্যাগড়া ডিপাটমেন্ট। এবং খুব মাসকুলার।

    ইউনিয়ন কার্বাইডের পর আর কোনো কেমিকেল কোংই কোনো রকোম রিস্কের মধ্যে যায় না।
  • kc | 204.126.37.78 | ২৬ আগস্ট ২০১৪ ১১:৫৬648783
  • ডিডিদা, এমেনসিতে যেতে হবেনা, রিলায়েন্স বা টিসকোতে যান গেইল বা আইওসিএল যান, ব্যাগড়ার চোটে চোখে সর্ষেফুল দেখতে হবে। সেফটি ইজ অল পাওয়ারফুল।
  • dc | 52.104.62.230 | ২৬ আগস্ট ২০১৪ ১৬:১২648784
  • ডিডিদা আর kc দুজনের কথাই মেনে নিলাম, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি বা খুব বড়ো কোম্পানির সাইটে সেফটি নিয়ে কড়াকড়ি হয়। তবে এল্যান্ডটি আর মাহিন্দ্রা এদের সাইটে কিন্তু নিজে দেখেছি, যতোটা লেখা থাকে কাজে অতোটা করে না। তবে এরাও কাগজে কলমে কড়াকড়ি তো করেই, বিশেষ করে মেশিন ছাড়িয়ে নিয়ে আসার সময়ে পাঁচ হাজার রকম ফর্ম ইত্যাদি নিয়ে ঝামেলা তো করেই। আর মাঝারি বা ছোট কারখানাতেও সেফটির অভাব দেখেছি। তবুও, সাইটে যেহেতু আমি খুব বেশী যাইনা, আপনাদের কথা নিশ্চয়ই মেনে নিলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন