এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • লাভডল

    T
    অন্যান্য | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ৩৯২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • T | 24.139.128.15 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:৪৪648573
  • ১.
    — ‘ভোট দিয়েছ?’
    — ‘হ্যাঁ, এই খানিক আগেই তো দিয়ে এলাম।’
    — ‘তা, নো তে দাগিয়েছ তো?’ মাথা ঝুঁকে এল ব্যানার্জ্জী সাহেবের।
    মৃদু হেসে ফেলল সমরেশ। অবশ্যই। ‘নো’তেই টিক মেরেছে সে। এক্সক্যাভেশনের পক্ষপাতী সে একদমই নয়।
    — ‘কিছু হবে বলে মনে হয় আপনার?’
    — ‘লোকে বলছে তো হবে।’ রুমাল বার করে চশমার কাঁচ মুছতে আরম্ভ করলেন ব্যানার্জ্জী সাহেব। সাদা চেক শার্ট। বুক পকেটে তিন রকম পেন। ভুঁড়ির নীচে বেল্ট। কব্জিতে ট্র্যাকারের বদলে হাতঘড়ি। পদমর্যাদার সুবিধে। কিউবিকলের পাশে সমস্ত আলো আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছেন।

    হরেক রকম লোকজনের খবরাখবর রাখেন ব্যানার্জ্জী সাহেব। পেশার কাজেই রাখতে হয় অবশ্য। খুবই তৈলাক্ত ব্যাপার স্যাপার। সমরেশকে স্নেহ করেন। সময় পেলেই লোক জুটিয়ে গল্পগাছা আর চুকলিবাজি। তো, তাতে অবশ্য এমন কিছু মহাভারত অশুদ্ধ হচ্ছে না।
    — ‘সামনের ইলেকশনে রুলিং পার্টি আর থাকবে না, বুঝলে! তারপর ঐ এক্সক্যাভেশন চুলোয় যাবে। পাকা খবর আছে। এসব ডিগিং ফিগিং এ লোকে খেপে গেছে। আমি মিটিং এ বলেছি, দেখো বাপু দুটো আলাদা ওয়ার্ল্ড! তেলে জলে মিশ কখনো খায়? যে যেখানে আছে, সুখে আছে। সবকটা সোনা মুখ করে শুনেছে সে কথা। ওই সব দুপয়সার ইকোনমিস্টদের কথা শুনেছ কি রসাতলে যাবে হে, রসাতলে যাবে। বুঝলে সমরেশ, গোড়াতেই আটকাতে হবে, না হলে তুমিও গেলে, আমিও গেলাম।’

    কাজে মন দিল সমরেশ। হাতে ঘন্টাদুয়েক আছে। আজ তাড়াতাড়ি বেরোবে। না বেরোলে চিত্তির। পার্কসার্কাসের ট্র্যাফিকে ফাঁসলে গল্প শেষ। অতগুলো টাকা জলে যাবে।

    — ‘ভোট দিয়েছিস?’
    — ‘হ্যাঁ।’
    — ‘নো তে ?’
    — ‘তোকে বলব না।’
    খি খি খি। অলোক বসুর রোগা পাতলা শরীর দুলতে আরম্ভ করল। ‘বলবি না কিরে! আমাকেই তো রজতদা বলল ব্যালটগুলো সাহেবের ঘরে দিয়ে আসতে। খিক খিক। কিসে দাগ মেরেছিস জানি আমি।’
    — ‘তো, তাহলে আবার জিজ্ঞাসা করছিস কেন? একদম হারামি আছিস মাইরি।’
    অলোক বাসু তাকে বাজিয়ে দেখছে। কিস্যু পাবে না। সমরেশ কাঁচা কাজ করে না। অফিসে খামোখা কেন সে একঘরে হতে যাবে।
    — ‘কালকের কেসটা জানিস?’ বাসু দাঁত খুঁটছে।
    — ‘দুজন মারা গেছে তো? হ্যাঁ, শুনলাম তো খবরে। তবে অ্যাকসিডেন্ট বলছে তো। ডিগিং সাইটে নাকি যন্ত্রপাতি দেখতে গেছিল। তখনই নাকি হয়েছে। ওসব অ্যাটাক ফ্যাটাকের খবর নাকি গুলতাপ্পি।’
    — ‘ছাই জানিস তুই। কোনো কারণে নাকি টেম্পারেচার বেড়ে গেছিল। প্রিজার্ভারে ঢোকানোর আগেই নাকি জেগে গিসল। কাঁচ ফাঁচ ভেঙে নাকি হাতের সামনে যাকে পেয়েছে তাকে মেরেছে। অ্যাকসিডেন্টের খবর টবর সব আই ওয়াশ।’
    — ‘ধুর মিনিমাম চার ঘন্টা লাগে শুনেছি। ওরম হঠাত করে জাগে নাকি!’
    — ‘ওটাতো রুম টেম্পারেচারের জন্য। চার ঘন্টা বাইশ মিনিট। ডিগিং সাইট এখন বুজিয়ে দিচ্ছে। ইয়া বড় বড় আর্থ মুভার ভেহিকল গুলো রয়েছে। শালা মাটিতে ধ্বস নাবিয়ে দিলে পুরো যাবে। ওটা ওরা হাইলি করতে পারে।’
    — ‘তোকে কে বলল এসব?’
    — ‘ব্যানার্জ্জীদা। আবার কে। রাজ্যের খবর নিয়ে শালা পুরো খোল হয়ে বসে আছে।’

    সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে অফিসের সামনে একটু জটলা দেখে কৌতুহলী হল সমরেশ। আলো পড়ে এসেছে। সামনের হাইরাইজগুলোর জন্য সন্ধ্যে মাঝে মধ্যেই হামলে পড়ে। একগাদা সাদা কালো জামাকাপড়ের ভীড়ে সে সুনীলকে চিনতে পারল। সুনীল চ্যাটার্জ্জী। ওর মা মারা গেছে গত ডিসেম্বরে। হসপিটালে আলাপ হয়েছিল। হাত নাড়ল সে।

    সুনীল দৌড়ে এল।

    — ‘কোথায় চললে?’
    — ‘ট্রেন ধরব। তুমি এখানে কি ব্যাপার।’
    — ‘আরে আমিও তো। কিন্তু স্টেশন নাকি ধ্বসে গেছে। একশ মিটার দূরে ডিগিং হচ্ছিল। কী ঝামেলা বল তো।’

    সুনীলের উদ্বিগ্ন মুখ। ওর পার্টনার প্রেগন্যান্ট। বাড়ি ফেরার তাড়া আছে। দুঘন্টার রাস্তা। স্টেশন থেকে ট্রামে ফের কুড়ি মিনিট।
    সমরেশ ঘড়ি দেখল। ছটা থেকে পার্ক সার্কাসে প্রোটেস্ট মিছিল। এখনই ট্রেন না পেলে মুশকিল হবে। আমেদকে ফোন করা যাবে না। নো কন্ট্যাক্ট, একদম স্ট্রীক্ট রুলস। ফোন করলেই চুক্তির খেলাপ। খালি হাতে বাড়ি আসতে হবে।

    ভীড়ের মধ্যে অল্পবয়স্ক কিছু উত্তেজিত মুখ। এরা চায় না ওদের সাথে কন্ট্যাক্ট হোক। রিসোর্স ফুরিয়ে আসছে মানতে চায় না। অপটিমাম ইউটিলাইজেশনের জন্য সওয়াল করে। ইনসিকিওরিটি আছে। স্বাভাবিক। নিউ এজ আসছে। সরকারী পলিসির নিত্যনতুন নানান ব্যাখ্যা বেরোচ্ছে মার্কেটে। এসময় বড়ো গোলমেলে।

    — ‘ডিসগাস্টিং! কত কত স্কোয়ার কিলোমিটার এরিয়া ওরা ডিগ করছে জানেন। কত ডিপ জানেন! হান্ড্রেড ফিফটি মিটারস, মশাই। আমার দাদা কাজ করে সাইটে। আমি জানি! কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ হচ্ছে। আজ অবধি কি লাভ হল কিছু শুনেছেন কখনো! আমাদের ডাইরেক্ট কী লাভ বলুন তো। এদিকে দেখছেন তো সব কেমন ধ্বসিয়ে দিচ্ছে!’
    উত্তেজিত মুখগুলো এ ওকে প্রশ্ন করছে।
    — ‘আরে ভাই, আগে যা হয়েছে হয়েছে। অ্যাদ্দিন পেরিয়ে গেছে। আমাদের ঠাকুদ্দার ঠাকুদ্দার সময়ই ডেপথ ছ মিটার ছিল। এখন তো আরো হবেই। কিন্তু কেউ কিছু জানে ওদের ব্যাপারে? কিছু স্টাডি ফাডি হয়েছে? কেউ করে দেখেছে? বেশ ছিলাম জানেন। জুজু মশাই, জুজু। রিসোর্সের নামে জুজু দেখিয়ে হঠাত কি হল খুঁড়তে লেগে গেল।’

    এইসবই প্রতিবাদের বিভিন্ন কম্পাঙ্ক। সমরেশ খানিক্ষণ মন দিয়ে শুনল। তারপর উলটোপথে হাঁটতে শুরু করল। সেন্ট্রাল স্টেশনটা একটু দূরে। তবে ওর কাছাকাছি কোনো ডিগিং সাইট নেই।

    ২.
    ফুটপাথ ধরে সমরেশ হাঁটতে ভালবাসে। সাধারণতঃ সে লোকজনের গা ঘেঁষে চলে। চুপ করে মানুষজনের কথা শোনে। নানান রকম বিষয় আশয়। ইউনাইটেড ক্লাবের ফুটবল থেকে বাড়ির মডগেজ। সেখান থেকে রেঁস্তোরার খাবার তো কারোর ডিভোর্সের উকিলি বাতচিত। কখনো হালফ্যাশানের জামাকাপড়ের খবর তো স্কুলের রেজাল্ট। খেলাটা হচ্ছে যে, কখনো কি এই অনন্ত ঘুতুর ঘুঁ একই সাবজেক্টে ফেরত আসে? তা, সমরেশ সেরকম আজ অবধি শোনে নি।

    আজকে অবশ্য গা এলিয়ে হাঁটার সময় নেই। আজ পা চালাতে হবে। আমেদ আসবে যথাস্থানে যথাসময়ে। সমরেশকেও পৌঁছতেও হবে সময় মতন। টাকাকড়ি আগেই মেটানো আছে। মাল ডেলিভারি নিতে হবে। খুব বেশী তাড়াহুড়োর কিছু নেই। পাঁচটা তেত্রিশে ট্রেন। পার্ক সার্কাস পৌঁছতে কত আর, বড়জোর ছ মিনিট চল্লিশের আশে পাশে। সেখান থেকে কেডীয়া হাইরাইজের পার্কিং লট। বড় জোর আরো তিন মিনিট সতেরো সেকেন্ড। হাইওয়ে ধরে নেবে আজকে। ইস্ট ওয়েস্ট ক্রসিং অবধি তের মিনিট, তারপর ন্যাভিগেশন অফ করতে হবে।

    মৃদু উত্তেজনা অনুভব করল সমরেশ। মোবাইল স্যুইচ অফ করল। ট্র্যাকার স্যুইচ অফ করল। প্রশান্তদা কাল চেঁচামেচি করবে। করুক গে। ওপরের বিলবোর্ডে ডিগিং সাইটের ছবি ভেসে আসছে। ভবিষ্যতের সুরক্ষার জন্য। তাইই বটে।

    কিন্তু অলোক যা বলল সেসব কি সত্যি! চিন্তাটা মাঝে মাঝে চিড়িক দিয়ে উঠছে। আমেদ অবশ্য গ্যারান্টি দিয়েছে। পাক্কা চার ঘন্টা লাগবে পুরোপুরি জাগতে। প্রসেসটা স্লো। কিন্তু চোরবাজারের লোকের আবার গ্যারান্টি। ফেরোশাস হলে বিপদ। ঘরে কোনো আর্মসও নেই। কিছু উল্টোসিধে হয়ে গেলে চাকরি তো যাবেই, সোজা ডিপোর্টেড।

    বাকী পথটুকু সে নিজেকে রিসোর্স মিনিস্টার ভাবার চেষ্টা করল। বসু কমিশনের রিপোর্ট। সর্বক্ষণ মুখের সামনে কাগজওয়ালাদের ছোঁকছোঁকানি। লবিইস্ট। টাইট ব্যাপার স্যাপার। কিন্তু এরা কি প্রয়োজনীয় কন্ডিশনিং চেম্বার কিছু বানাচ্ছে? বিভিন্ন স্ট্র্যাটার লোকেদের সাথে ওরা খাপ খাবে? আর এই টেম্পারেচার ডিফারেন্সটা তো বিশাল ব্যাপার। মাটির নীচে ওরা এটা কিভাবে করছে সরকার জানতে চায়। বেসিক্যালি চাইছে দখল নিতে। ভালো কথা। কিন্তু যতক্ষণ না পুরোপুরি জানছে ততক্ষণ আবার টোটাল অ্যানাইহিলেশন সম্ভব নয়। অকাট্য। কিন্তু এই প্রসেসে যে কোনো ক্যাওস তৈরী হবে না, কি করে জানছে এরা। সব মেপে নিয়েছে তো?

    সবুজ স্ক্রীনগুলোতে ডিগিং আপডেট দিচ্ছে। লাইভ ভিস্যুয়াল। এক একবারে পাঁচশ মানুষ উঠে আসছে। জোয়ান বৃদ্ধ মহিলা শিশু। প্রত্যেকের চোখ বন্ধ। সম্ভবত জ্ঞানহীন। কী গ্যাস কে জানে। ধুসর রকম চেহারা। এদেরকে ক্লীন করে পাঠানো হচ্ছে অজানা কোনো স্থানে। বিরাট বড়ো বড়ো সব সবুজ প্রিজার্ভার। কন্ডিশনড হয়ে গেলে তারপর পরবর্ত্তী পদক্ষেপ।

    সেন্ট্রাল স্টেশনে এসে সমরেশ দেখল এক সন্ত্রস্ত বিরাট ভীড় ধীর পায়ে স্কাইরেলের দিকে চলেছে। নিশ্চিন্ত মনে সে ভীড়ে মিলিয়ে গেল।

    ৩.
    আমেদ অল্প কথার মানুষ। ডিকির ভেতর লম্বা প্রমাণ মাপের কাঠের বাক্সটা ঢোকানোর আগে অবধি সে কোনো কথা বলেনি। একটা নোংরা কাগজে ওখান থেকে হাইওয়ে ধরার শর্টকার্ট ছবি এঁকে বুঝিয়ে দিয়েছিল। খুব দ্রুত। সুইফট।

    সমরেশ তবু একবার না জিজ্ঞাসা করে পারল না।

    —‘নিশ্চিন্তে নিয়ে যান। অনেকগুলো ডেলিভারি দিয়েছি। কোথাও কোনো প্রবলেম হয় নি। তবে, পরে কিভাবে ডিসক্লোজ করবেন সেটা আপনার ব্যাপার।’ আমেদের গলায় আশ্বাস।
    — ‘কানাঘুষোয় শুনলাম, কাল নাকি—’
    — ‘আপনি জানেন না। ভেতরের খবর আচে। কেসটা ঘটিয়েছে গার্ডরা। এরা নয়।’ খুব নিশ্চিন্ততার সাথে কথাগুলো বলে ছিক করে থুতু ফেলল আমেদ। নালায় সামান্য ঢেউ উঠল একটা। সমরেশ কি পুরোপুরি আশ্বস্ত হবে?
    — ‘যদি কিছু প্রবলেম হয়?’
    — ‘টাকা ফেরত পাবেন না। নিতে হয় নিন। আমি খালাশ। শখ আমার নয়, আপনার।’
    সমরেশ একটু হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
    — ‘আরে বাবা, বলছি তো, কিছু হবে না। নিয়ে যান। টেম্পারেচারে ফিরলে একটু কেয়ার দেখাবেন। দুটো ভালো কথা বলবেন। দুটো ভালো খাবার দেবেন। গুড বিহেভিয়ারে প্রবলেম নেই। ফিডব্যাক পেয়েছি। আপনার মতন আরো লোক আছে। হেঃ।’
    — ‘নিয়ে যান। অনেক খচ্চাপাতি করেছেন। কোয়ালিটি মাল দিইচি। অনেকেই তো ব্যবসায় নেমেছে, এরম জিনিস কেউ বার করে নিয়ে আসুক তো দেখি। বেশিরভাগই দেখবেন খেতে পায় না। শুকনো মাল, ধুঁকছে। পোষার খরচ আছে। আপনি টাকা বেশী দিয়েছেন, ভালো মাল দিয়েছি। কত জায়গায় পয়সা খাইয়েছি জানেন? না নিলে আপনার লস। অন্য কাউকে বেচে দেবো। ’

    সমরেশ আর কথা বাড়াল না। ডিকি সশব্দে বন্ধ হল। নিস্তব্ধ ও নির্জন প্রান্তিক আঙিনা জুড়ে সমরেশের গাড়ি ছবি বরাবর পথ চলতে লাগল।

    ৪.
    গ্যারেজ থেকে বাথরুমের দূরত্ব প্রায় ছমিটার। মাঝখানে তিনটে বাঁক আছে। নব্বই, নব্বই এবং নব্বই ডিগ্রী। চল্লিশ দশমিক ছয় কেজির বডিটাকে বাথরুম অবধি টানতে সমরেশ হাঁফিয়ে গেল। তার ধোয়ামোছার বাতিক আছে। আমেদ বলেছিল পরিষ্কার করে দিয়েছে। কিন্তু তাতে সমরেশের চলবে না। সে আগাপাশতলা ভালো করে ধুল।

    কিশোরী। নাম সমরেশ জানে না। জানার দরকারও নেই। স্বাস্থ্য ভালো। দু দিন আগে ডিগিং সাইট থেকে উঠেছে। সেরকম খুব কিছু ধুলোবালি অবশ্য বেরোল না। আমেদ একটা কাপড় মতন জড়িয়ে দিয়েছিল। সেসব ফেলে দিয়েছে সমরেশ। নতুন জামাকাপড় পরিয়ে দিয়েছে। উত্তেজক জামাকাপড়। উত্তেজিত সমরেশ। উত্তপ্ত সমরেশ।

    ঘন্টা চারেক সময় আছে। সমরেশ খেল সকালের রান্না করা মাংস। একটু গান শুনল। বডিটা খাটের ওপর শোয়ানো আছে। দুমাস এভাবে চলুক। মিশ খেয়ে গেলে তারপর ভেবে দেখা যাবে। গোপনীয়তাটা অবশ্য মাস্ট।

    একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বিছানার সামনে বসল সে। হাল্কা ব্রিদিং প্যাটার্ন ফুটে উঠছ মনে হচ্ছে। আর ঘন্টা কয়েক পরে ও ওর জগত থেকে বেরিয়ে আসবে। কমপ্লিটলি। কিভাবে রিঅ্যাক্ট করে দেখতে হবে। মাথার কাছের জানালার শার্সিটা তুলে দিল সে। রাত বাড়ছে।

    মিনিট পনেরো অবজার্ভ করার পর, সমরেশ ওকে ছুঁল। গা হাত পা আগের তুলনায় গরম। একটা মোটা কাপড় চাপা দিয়ে দিল। অস্থির পায়চারী করল কিছুক্ষণ। তারপর একসময় বিছানায় শুয়ে পড়ল সে। চল্লিশ দশমিক ছয় কেজির দেহটার পাশে। তাকে জড়িয়ে ধরে। গলার কাছে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে। আলগোছে টেনে নিল কাপড়। রিমোটে বোতাম টেপামাত্র নেমে এল জানলার কাঁচ। ঘরের স্ক্রীনে ভেসে উঠল রোমাঞ্চকর ছবি। বিভিন্ন ছবি। সমরেশ অপেক্ষা করছে।

    মুহূর্তটা এল ভোরের দিকে। সমরেশের একটু তন্দ্রা এসেছিল। ঘরের মধ্যে স্ক্রীনের লাল নীল ছবি অনেকক্ষণ বন্ধ। পাশের শরীরের মাঝে মৃদু নড়নচড়ন। সমস্ত মস্তিষ্ক জুড়ে জাগরণ হঠাৎই ফিরে এল যেন। ছিটকে উঠতে বেশী সময় লাগে নি।

    কিশোরী উঠে বসেছে। তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে। স্থির দৃষ্টি। অন্ধকার নতুন জগতের মাঝে অন্য এক উত্তপ্ত প্রাণীর দিকে।

    সমরেশ প্রস্তুত এইবার। সে খুব ধীরে ধীরে ওর কাঁধ ছুঁল। স্ট্র্যাপ সরিয়ে দিল হাল্কা হাতে। কপালের উপর থেকে আলগোছে সরিয়ে দিল অবিন্যস্ত চুল। বুকের উপর উঠে এল হাত।

    এবং ঠিক সেই পরম মুহূর্তে একরাশ চাঁদ গলে কিশোরী কন্ঠে ঝরে পড়ল বিচিত্র জিজ্ঞাসা।

    — ‘মা!’
  • একক | 24.99.234.191 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৫:২৩648577
  • ১,২,৩ একদম ! ৪ এ একটু তাড়াহুড়ো । তবে টি সামনের দিকে তাকিয়ে লেখেন | আশা বাড়লো ।
  • d | 144.159.168.72 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১০:০০648578
  • সেরিব্রাল লেখা। ভাল্লেগেছে।
    তবে শেষের অভিঘাতটা ঠিক এলো না। ।
  • de | 190.149.51.67 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৪:৫৮648579
  • দারুণ আইডিয়া!!
  • সে | 203.108.233.65 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৭:১১648580
  • খুব ভালো।
  • T | 24.139.128.15 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৭:২০648581
  • সকলকে ধন্যবাদ। ঠিক জানতাম ছড়িয়েছি।
  • kumu | 52.104.34.125 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৯:৫৪648582
  • ভাল লাগল।৪- একটু সংক্ষিপ্ত।
  • মোহর | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৩648583
  • এখানেই শেষ?
  • T | 24.139.128.15 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫২648584
  • হ্যাঁ।
  • i | 147.157.8.253 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৯:০৮648574
  • টির লেখা দেখেই পড়ার সময় বের করে নিলাম ঠিক। সময় খোঁজা সার্থক হল। সমালোচকের চশমা খুলে রেখেছি অনেকদিন। এখন শুধুই পাঠক। ভালো লাগল।
    দুটি গল্প পড়লাম আপনার এযাবৎ । দুটিতেই নির্মাণে, ভাবনায় মেধার ছাপ সুস্পষ্ট।
    লিখুন।পড়ব।
  • মোহর | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৩:১০648575
  • যাহ! :(
  • তো | 172.136.192.1 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:১০648576
  • *
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন