এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • কমিউনিস্ট রাশিয়া তে একচুয়ালি কী হত ?

    একক
    অন্যান্য | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ২৫৬৫৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৯:০৩627809
  • ইশশশ
    :-(
  • lcm | 118.91.116.131 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৯:৫৮627810
  • এক রাশিয়ান বলেছিল, সে তার ভগ্নিপতির সঙ্গে পার্টনারশিপে সফ্‌টওয়ার কোম্পানী খুলেছিল মস্কোতে ১৯৯৩-৯৪ নাগাদ। শুরুতে ঝামেলা, কোম্পানী রেজিস্ট্রেশনের সিস্টেম তখনও ভালো করে চালু হয় নি। আমি বললাম, ভালো তো, তোমাকে ট্যাক্স দিতে হবে না। বলল, কিন্তু মাফিয়াকে পয়সা দিতে হয়, মাসে মাসে। নইলে প্রোগ্রামার হাওয়া করে দেবে। কোনো প্রজেক্টে বেশী প্রোগ্রামার লাগলে নেওয়া মুশকিল, মাফিয়ার এজেন্ট এসে হেডকাউন্ট দেখে যেত, ব্যবসা বাড়ছে কি না। কয়েকজন প্রোগ্রামার নাকি ছাদের কোনায় লুকিয়ে কাজ করত।
  • b | 135.20.82.164 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১০:৫৫627811
  • বাবা গো।
  • de | 69.185.236.53 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১১:০৪627812
  • উফ্‌ফ্‌!!
    ক্ষী অভিজ্ঞতা!
  • সে | 203.108.233.65 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১২:২৯627813
  • আসুন একজনের ফোটো দেখাই।


    ভ্লাদিস্লাভ লিস্তিয়েভ
  • সে | 203.108.233.65 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১২:৪৩627814
  • দেশের এক নম্বর টিভি চ্যানেলে সাড়া জাগিয়েছিলেন এই ভদ্রলোক। প্রোগ্রামের নাম "Поле Чудес"(পোলে চুদেস্‌) , বাংলা করলে দাঁড়ায় "বিষ্ময়জগৎ"।
    সারা দেশ হাঁ করে দেখত সন্ধ্যেবেলায় এই প্রোগ্রাম।
    তারপরে অবশ্য ইনি অন্য একজনের হাতে প্রোগ্রাম তুলে দিয়ে অন্য প্রোগ্রামে চলে যান।
    ভ্লাদিস্লাভ লিস্তিয়েভ -এর মৃত্যু হয় নিজের বাড়ীর দোরগোড়ায়। মাফিয়ার হাতে।
    http://wikileaks.org/wiki/Vladislav_Listyev

  • b | 135.20.82.164 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৪:৩৫627815
  • আমি কিন্তু সিরিয়াসলি বলছি। সে-র লেখা ছবি ছাবা সমেত চটি করে বের করা হোক। পরের বইমেলায় দেখতে চাই।
  • কল্লোল | 125.241.60.42 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৪:৫০627816
  • এ তো ভয়ানক। আমি যতোটা ভয়ানক ভাবতাম তার চেয়ে অনেকগুণ ভয়ানক।
    চটি হোক।
  • সে | 203.108.233.65 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৩:৫৩627817
  • দুর্নীতি বা অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাটা দেশের মানুষের অভ্যেসের বাইরে ছিলো, বিশেষ করে কোনো ঝামেলা/চুরি/ডাকাতি ইত্যাদি হলেও মানুষ সচরাচর এসব নিয়ে স্থানীয় মিলিৎসিয়াকে রিপোর্ট করতে চাইত না। সে ব্যাপারে তাদের ছিলো প্রবল অনীহা। সেই কারণেই প্রচুর ক্রাইম রেজিস্টার্ড হতো না। ছোটোখাটো ক্রাইম। তাছাড়া যেহেতু দেশে ডাক্তার/উকিল এঁদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস নেই, তাই আত্মপক্ষ সমর্থনে (আসামী এবং ফরিয়াদী) কেউই উকিল দাঁড় করাতে পারত না। পুরোটাই মিলিৎসিয়া কীভাবে কেসটা প্রোটোকল করবে এবং সেটার ওপরে বেস করে কে শেষে "আসামী" প্রমাণিত হয়ে জেলে যাবে - এই অনিশ্চয়তার ওপরে দাঁড়িয়ে থাকত। শান্তিপ্রিয় সাধারন জনতা এসবে নিজেদের জড়াতে চাইত না।
    প্রোকুরাতরা ও সুদ (আদালত, ইঃ) এ প্রোকুরর ও সুদ্যিয়া (এঁরা সরকারী আইনজীবী) কেসগুলোকে কোন চখে দেখে কাকে দোষী সাব্যস্ত করবে তা বোঝা ছিলো অসাধ্য। অথচ উচ্চশিক্ষা স্তরে, সমস্ত ডিসিপ্লিনেই আইনের পাঠ ছিলো বাধ্যতামূলক।
    সে যাইহোক, দেশের প্রচুর ক্রাইম রিপোর্টেড না হবার দরুণ, অপরাধীদের একশ্রেণী জানত কেমন করে অন্যায় করেও "বেঁচে" যাওয়া যায়। অন্যদিকে নীরিহ মানুষ "সমস্যা এড়িয়ে" চলাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে জানত।
    অবশ্য খাতায় কলমে সকলেই জানতাম যে কোনো অপরাধ হয়ে থাকলে তা মিলিৎসিয়াকে জানানো সকলেরই কর্তব্য।
    সর্বক্ষনই মিলিৎসিয়া টহল দিতো নানা জায়গায়।
    বুঝতে অসুবিধে হতো না যে এদের কাজের চাপ বেশি নয় ও ফ্রী টাইম প্রচুর।
    উদাহরণ দিই।
    শহরের নানাপ্রান্তে বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তৎসংলগ্ন হোস্টেল। দেশি বিদেশি প্রায় সমস্ত ছাত্রই হোস্টেলেই থাকত, একটা ছোটো পোর্শান স্থানীয় শহরের বাসিন্দা - তারা থাকত নিজেদের বাড়ীতে।
    সারা দুনিয়ায় আঈড (রাশিয়ানে "স্পিদ্") রোগটা তখন খুব উঠেছে।
    দুনিয়া কাঁপিয়ে ঈ-আঈড এর প্রতিরোধে ক্যাম্পেইন চলছে। প্রতিটি ফরেনার (বা যে সব সোভিয়েত নাগরিক বিদেশ সফর করে এসেছে) কে এলিজা টেস্ট করানো হয়েছে বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক ভাবে। কোনো ঈ পজিটিভ বিদেশি ছাত্র পাওয়া যায় নি।
    কে না জানে যে স্পিদ্ হয় তিনটি ক্যাটেগোরির মানুষদের।
    ১। হোমো সেক্সুয়ালদের
    ২। ঈ পজিটিভ গর্ভবতী মায়ের থেকে তার গর্ভস্থ সন্তানের
    ৩। যারা ক্ষণে ক্ষণে সেক্স পার্টনার পাল্টায়, তাদের (খুলে বলতে হবে? - বেশ্যাদের)
    (১ ও ৩ নিষিদ্ধ)

    এই তিনটি মর্মে নিয়ম করে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঈ-আঈড এর অ্যাওয়ারনেস্ জাগিয়ে তোলা হচ্ছিলো। ফুলটু কমিউনিস্ট পার্টির শাসন তখন।
    ফলে প্রথমেই মিলিৎসিয়া এগিয়ে এলো জন হিতার্থে।

    সে অদ্ভুত দৃশ্য। নিজের চোখে না দেখলে লিখে বোঝানো প্রায় অসম্ভব।

    মূল লক্ষ্য স্পিদ কন্ট্রোল কিনা আজও বুঝে উঠতে পারিনি।
    সন্ধের মুখটার যে সব হোস্টেলে ফরেনার রা থাকে তার পেছন দিকে নিঃশব্দে চুপচাপ আলো নিভিয়ে লুকিয়ে থাকত মিলিৎসিয়ার ভ্যান। অল্পবয়সী রুশি (হ্যাঁ অধিকাংশই রুশি) মেয়েরা কোনো ফরেনার ছাত্রের সঙ্গে দেখা করতে এলেই তাকে খপ্‌ করে ধরে জোর জবরদস্তি করে ভ্যানে তোলা। সাত আটটা ( বা কম বেশি ) মেয়েকে ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া হতো স্পিদ্‌-এর "টেস্ট" করাতে।
    বেচারী মেয়েগুলো ছাড়া তো পেতই, কিন্তু মিলিৎসিয়ারা এমনি এমনি তাদের ছেড়ে দিতো না। হয়ত তাদের পাসপোরৎ আটক করে রেখে দিলো (আজ দেব কাল দেব করে ঘোরাবে), নয়ত মারধোর বলাৎকার (মিলিৎসিয়া বলে কথা! এদের বিরুদ্ধে তো আর রিপোর্ট লেখানো চলে না)।

    "ভালো" মেয়েদের তুলে নিয়ে গেলে তাদের খুবই বিপদে পড়তে হতো। ঐ পাসপোরৎ ছাড়া ওদের গতি নেই, সব জায়গাতেই ওটা দেখাতে হয়, আইডেন্টিটি প্রুফ।

    এমনি একটি মেয়ের সঙ্গে একবার গল্প হচ্ছিলো। তার সেই ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা শুনে বললাম, তার পরে কেমন করে ফেরৎ পেলি তোর পাসপোরৎ?
    - আর বলিস না। লোকটা তো আমায় রোজ ঘোরাচ্ছে আজ দেব কাল দেব করে। যখন টাইম দেয়, থানায় যাই, গিয়ে দেখি নেই - কোথায় বেরিয়ে গেছে। অন্য দিন গেলে দেখা হলে বলে কী সব প্রোটোকল লেখা বাকি আছে।
    - তারপর?
    - তারপর আবার কী? এমনি করে দু মাস ঘোরালো। তারপরে একদিন থানার মুখটায় দেখা হলো, সে তখন গাড়ি নিয়ে কোথায় একটা বেরোচ্ছে, গাড়ীতে স্টার্ট দিলো। আমাকে ডেকে গাড়ীতে তুলে নিলো। পথে যেতে যেতে কথা হলো।
    - কী কথা?
    - বলল, দ্যাখো তোমার কেসটা দুমাস ধরে পড়ে আছে, এখন এটা কোর্টে উঠবে, শিগ্‌গিরই তোমার কাছে চিঠি যাবে কোর্ট থেকে। আমার তখন কাঁদো কাঁদো অবস্থা। একবার এইসব মামলায় জড়িয়ে পড়লে আমার জীবনে কালো ছাপ পড়ে যাবে। লোকটা আমার মনে ভাব বুঝে নিয়ে বলল, অবশ্য তুমি যদি বুদ্ধিমতি হও তবে এর ফয়সালা এখনই হয়ে যেতে পারে।
    - হলো ফয়সালা?
    - হলো তো। আমি বললাম কী করতে হবে? সে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসলো। আমি কিছু বললাম না। সে গাড়ি ঘুরিয়ে নির্জন একটা জায়গায় নিয়ে গিয়ে, তার যা কাজ করবার করে নিল।
    - আর পাসপোরৎ? দিল?
    - কেন দেবেনা? পকেটে করে নিয়েই ঘুরত সবসময়। কাজের শেষে সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিলো। এই দ্যাখ্‌!

    দেখলাম পারপোরৎ, নিদাগ। কোনো ভুলভাল স্ট্যাম্প মেরে দেয় নি ভেতরে।

    টানা বেশ কয়েক বছর এইভাবে মিলিৎসিয়ার অত্যাচার চলেছিলো। ভাগ্যিস দেশ ভেঙ্গে গিয়েছিলো, তখন মিলিৎসিয়া আরো ইন্টারেস্টিং কাজ খুঁজে পায়।
  • সে | 203.108.233.65 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৩:৫৮627819
  • ঈ-আঈড* টাইপো হয়েছে - HIV-AIDS হবে।
    ঈ* -HIV
    আঈড* - AIDS
  • de | 190.149.51.68 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৪:০০627820
  • মিলিৎসিয়ারই তো প্রথমে এলাইজা টেস্টের দরকার ছিলো যা দেখছি!
  • সে | 203.108.233.65 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৫:১২627821
  • মুশকিল টা এইখানে, যে রোগ/অসুস্থতাকে ক্রিমিনালাইজ করার চেষ্টা। ত্রাসের সঞ্চার।
    কেভেদে (ত্বক ও যৌন রোগের চিকিৎসালয় - কোঝ্‌নো ভেনেরোলগিচেস্কি দিস্‌পান্সের Кожно-венерологический диспансер) ছিলো একটা ত্রাসের নাম - ভয়ঙ্কর শব্দ। ভয় দেখানোর জন্যে হয়ত নিদান দিলো যে কেভেদে তে নিয়ে গিয়ে "টেস্ট" করানো হবে। সেই "টেস্ট" কীরকম হবে, কত ভয়ঙ্কর, তারপরে সেই "টেস্ট" এর ফলাফলে নিজেকে "নির্দোষ" প্রমাণ করতে কী পরিমান কাঠখড় পুড়িয়ে ও কত নরকের ভেতর দিয়ে যেতে হবে, সেই ভয়ে মানুষ শিউরে উঠত।
    দেশের নিরীহ জনতাকে যখন শাসন করে মিলিৎসিয়া তখন এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই।
    যৌন রোগ যদি কারো হয়েও থাকে, তাতে এত ভয় কেন পেতে হবে? পার্টির সৃষ্টিকর্তারা সকলেই কি রোগমুক্ত ছিলেন? ইতিহাস কি সত্যিই তাই বলে? তবে রোগীকে ক্রিমিনাল বানানোর চেষ্টা কেন? যে রোগী নয় তার ওপরেও মিথ্যা রোগের আরোপ দিয়ে তাকে ভয় দেখিয়ে নির্যাতন ই বা কেন? এই সব প্রশ্নের উত্তর মেলে না।
  • সে | 203.108.233.65 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৫:৩৪627822
  • পয়সা কড়ি চুরি গেলেও সচরাচর রিপোর্ট না করাই ছিলো প্রথা। রিপোর্ট করলে মিলিৎসিয়া আসবে, ফোটো তুলবে, ফিঙ্গার প্রিন্ট খুঁজবে। পেলে ভালো। না পেলে ( বা সুবিধে বুঝে, কেস বাই কেস) যে রিপোর্ট করেছে সেই বিপদে পড়ে যেতে পারে। কোত্থেকে টাকা পেল? সত্যিই অত টাকা হারিয়েছে কিনা, টাকা কেন ঘরে রেখেছিলো, কার টাকা? জমানো না চুরির টাকা, এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে নাজেহাল হয়ে যাবে। নিয়মিত ডাক পড়বে থানায়, তৎসহযোগে মিলিৎসিয়ার জেরা চলবে, যতক্ষণ না কেস ফিরিয়ে নিচ্ছে নিজের অপরাধ স্বীকার করে।
  • সে | 203.108.233.65 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৫:৫৩627823
  • একটা গল্প বলি।
    অশোক বলে একটা ছেলের থেকে একটি মঙ্গোলীয়ান ছাত্র কিছু টাকা ধার নেয়। আন্দাজ ১০০ রুব্‌ল্‌। অনেক টাকা। অশোক ঘাঘু ছেলে - সে জানত যে এই ছেলে টাকা মেরে দিলে মিলিৎসিয়া কে জানিয়ে কোনো ফল হবে না। আবার ছেলেটা ওর বন্ধু, সত্যিই তার টাকার দরকার তাই না দিয়ে পারে নি। কিন্তু পরিবর্তে জামিন হিসেবে তার মঙ্গোলীয়ান পাসপোর্টটি নিজের কাছে রেখে দেয়। দিন যায়, মাস যায়, সেই ছেলেটি আর অশোকের টাকা ফেরৎ দেয় না। চাইলে বলে দিচ্ছি-দেবো। খুব ভদ্র ছেলে, জোরে ধমকালেও উল্টে নরম গলায় নিজের অসুবিধের কথা জানায়।
    কিন্তু অশোক তো এভাবে টাকা ফেলে রাখতে পারে না। তার নিজেরও টাকা চাই।
    এর মধ্যে ছুটির সময় এগিয়ে এলো অনেকেই দেশে-বিদেশে যাবে ছুটিতে। এমন সময় মঙ্গোলীয় দূতাবাস থেকে একটা চিঠি এলো অশোকের নামে। তাকে কন্‌সুলার সেক্‌শান থেকে ডেকে পাঠিয়েছে - সে যেন অবশ্যই ঐ ছেলেটির পাসপোর্ট সঙ্গে নিয়ে দেখা করে সেখানে।
    অশোক ঐ ছেলেটির পাসপোর্ট সঙ্গে নিয়ে, দেখা করল যথাসময়ে।
    খুব উঁচু পদস্থ এক অফিসার অশোককে জিগ্যেস করলেন (খুব ভদ্রভাবে) তার কাছে ছেলেটির পাসপোর্ট আছে কিনা, কারণ সেই ছেলেটি নিজেদের দূতাবাসে এসে জানিয়েছে যে এক ইন্ডিয়ান তার পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছে।
    অশোক তখন সমস্ত ব্যাপারটা খুলে বলল। ওর কাছ থেকে সব জেনে নিয়ে সেই অফিসার বললেন - সত্যিই তো! আপনি পাসপোর্ট আমায় দিয়ে দিন, এভাবে কারো পাসপোর্ট আটকে রাখা উচিৎ নয়, তবে টাকাটা ঐ ছেলেটি ফেরৎ দিতে পারবে বলে মনে হয় না। ওটা আমরাই আপনাকে দিয়ে দেবো।
    অশোক পাসপোর্ট ফেরৎ দিলো।
    এবার সেই অফিসার চার পাতার প্রোটোকল লিখলেন (সমস্ত রাশিয়ান ভাষায়) ও তার নীচে অশোককে সই করতে বললেন। সমস্তই আইনের জটিল ভাষায় লেখা। ঐখানে সই করে তবে তাকে ১০০ রুবল ফেরৎ পেতে হবে।
    ঝামেলা হতে পারে বুঝতে পেরে অশোক ওখান থেকে উঠে চলে গেছলো।
  • সে | 203.108.233.65 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৬:৩৮627824
  • একাই লিখে চলেছি। PTর নয় মেয়ের মাধ্যমিক, kc কিছু লিখুন অন্ততঃ।
  • সে | 203.108.233.65 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৬:৫৪627825
  • ভ্লাদিস্লাভ লিস্তিয়েভ-এর হত্যা কোনো নতুন কিছু নয়। তিনি দেশের খ্যাতনামা সেলিব্রিটি ছিলেন তাই প্রমাণস্বরূপ উইকিলিক থেকে ফোটো রেফার করে এই ধরণের হত্যাকান্ডের সপক্ষে কিছু ফোটো ও তথ্য দেখাতে পারলাম। এমন কেস আকছর হচ্ছিলো ঐ দেশ ভেঙে যাবার সময় থেকে।
    সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছিলো নতুন নতুন ব্যবসাদারেরা। খুব বেশি করে মস্কোয়।
    তখন প্রাইভেট ব্যবসা করা আর বে আইনী নয়।
    খুব স্বাভাবিক গতে এই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হতো।
    মনে করুন মস্কোয় আপনি নতুন ব্যবসা ফেঁদেছেন সমস্ত সরকারী নিয়ম কানুন মেনে। একটা অফিস খুলেছেন, সেইসঙ্গে ঐ শহরেই কোথাও একটা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে বসবাস শুরু করেছেন।
    বিকেলে/সন্ধ্যায় কাজের শেষে অফিস থেকে ফিরে আপনি অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছেন কি করেন নি, বেল বেজে উঠল দরজায়।
    কাচে চোখ লাগিয়ে দেখবেন বাইরে সুবেশ সুট টাই পরা এক ভদ্রলোক। আপনি দরজা খুলে দিলেন। সেই ভদ্রলোক ভেতরে ঢুকে অত্যন্ত ভদ্রসুরে আপনার নাম জিগ্যেস করে মিলিয়ে নিলো। তারপরে নিজের পরিচয় দেবে এইভাবে , হয়ত নিজের কার্ডও পকেট থেকে বের করে ধরিয়ে দিতে পারে আপনার হাতে।
    - আমার নাম অমুক। এই আমার অ্যাড্রেস। আই এই এলাকাটি দেখি। আপনি নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন, বেশ বেশ। কন্‌গ্র্যাচুলেশন্‌স্‌। প্রতিমাসে এই ঠিকানায় দশহাজার (এটা একেক ব্যবসার ক্ষেত্রে একেক রকর অঙ্ক) ডলার মাসের তিন তারিখের মধ্যে পাঠিয়ে দেবেন, কেমন? আজ আসি তবে?

    আপনি হতবম্ব হতে পারেন কিন্তু ঐ অর্থ আপনাকে দিতেই হবে।

    যদি পুলিশে খবর দেন, তবে অনতিবিলম্বে খুন হবেন।
    যদি টাকা দিতে দেরি করেন, তবে নিম্নপ্রকার।

    তারিখ পেরিয়ে গিয়েছে টাকা আপনি দেন নি।
    সকালে অফিসে বেরোবেন বলে বেরোতে যাচ্ছেন। দরজা খুলেছেন কি খোলেন নি, সেই ভদ্রলোক ও আরো এক বা দুজন স্বাস্থ্যবান তরুণ আপনাকে ঠেলে আপনার ফ্ল্যাটে ডুকিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেবে। সময়মতো টাকা না পৌঁছনয়, আপনার কত জরিমানা হয়েছে সেটা জানিয়ে দিয়ে চলে যাবে। এখন জরিমানা সহযোগে আপনাকে অনতিবিলম্বে সেই টাকা পৌঁছে দিতে হবে যদি মনে করেন আরো কিছুদিন বাঁচতে চান।
    এইভাবেই অপারেট করত মস্কোর মাফিয়া।
  • de | 69.185.236.54 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৭:০১627826
  • শিবঠাকুরের আপন দেশ তো!

    আপনি লিখুন - পড়তে খুব ভালো লাগছে!
  • সে | 203.108.233.65 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৭:৩৯627827
  • মাফিয়া-র লেজুড়দের সঙ্গে কেমন করে আলাপ হলো সেইটা বলার আগে একটা ঘটনা লিখি।
    দেশ কিন্তু তখনো ভাঙে নি।
    কী একটা কারণে বিকেলবেলা ইন্‌স্টিটিউটে দিকে চলেছি। গরমকাল, সেদিন বিকেলে কালবৈশাখী গোছের ঝড়বৃষ্টি হয়েছিলো। এল্‌ আকৃতির রাস্তা, পাশেই ভিজে ঘাস ও কাদাভরা মাঠ। পীথাগোরাসকে মনে রেখে মাঠের জলকাদার ওপর দিয়ে শর্টকাট করছি, হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন আমায় ডাকল - মাফ্‌ করবেন, একটু কথা আছে।
    পেছন ফিরে দেখি সেই বাদলার মধ্যে একজন বছর ত্রিশেকের ভদ্রলোক ছিপছিপে চেহারা পরনে দামী সিল্কের সুট-টাই মাথায় আবার ছাতা, আমার পেছন পেছন আসছে। লোকটার জুতো জলে কাদায় ভিজে নোংরা হয়েছে এবং সেসবের পরোয়া না করেই সে আমার পিছু নিয়েছে।
    এসব দেখে হাসি পেলেও, সবসময় হাসা ঠিক কাজ নয়। আমি লোকটার সঙ্গে হেঁটে ইন্স্‌টিটিউটের মধ্যে ঢুকে কথা বলতে লাগলাম।
    লোকটা জানে আমি ভারতীয়। কে বলল তাকে? না, ঐ রাস্তায় কে যেন আমাকে দেখিয়ে তাকে বলেছে যে আমি ভারতীয়।
    হতেই পারে। কিন্তু আমার সঙ্গে তার কী দরকার সেটা জানতে চাইলাম।
    তাতে সে বলল - সে কয়েকদিন পরে ভারতে বেড়াতে যাবে, "ভারত" সম্বন্ধে যদি তাকে একটু সাহায্য করি।
    ও হ্যাঁ মনে পড়েছে, তখন গ্রীষ্মের ছুটি চলছিলো অনেকের, তাই বিদেশিরা সব ছুটিতে দেশে বিদেশে গিয়েছে। আমি যাই নি কারণ প্রোজেক্টের কাজ ছিলো।
    লোকটাকে বললাম, আপনি একটু দুমিনিট দাঁড়ান এখানে, আমি ওপরে অফিস থেকে একটা কাজ সেরে (সম্ভবত স্টাইপেন্ডের টাকা তুলতে) এখুনি আসছি।
    লোকটা রাজি হয়ে গেল।
    স্টাইপেন্ডের টাকা দিলো ফ্লোরা (এর কথা আগেই বলেছি), তারপরে বলল, কী একটা পরীক্ষার জন্যে আমায় নাকি এনরোল করতে হবে। সেটার জন্যে এক প্রোফেসর কে ধরতে হবে এবং সেটা সেদিনই না ধরলে নয়। প্রোফেসর কোথায়? খবর নিয়ে জানা গেল, তিনি তখন শহরের মধ্যিখানে স্টেট লাইব্রেরীর মধ্যে রয়েছেন। ছুটতে হবে তক্ষুনি। জায়গাটায় যেতে ৩০-৪০ মিনিট লেগে যেতে পারে।
    দৌড়ে লিফ্‌ট্‌ ধরে নীচে নেমে দেখি, সেই সুটপরা লোকটা তখনো ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
  • সে | 203.108.233.65 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৮:০১627828
  • লিফ্‌ট্‌ থেকে মূল দরজা অনেকটা বড়ো জায়গা, প্রকান্ড লবি বলা চলে। লোকটা বললাম, আজ আমার খুব জরুরী কাজ রয়েছে, আরেকদিন কথা বললে হয় না?
    সে করুণ মুখে খুব মরিয়া হয়ে বলল, আপনি কাজ সেরে নিন, আমি ওয়েট করব।
    আমি বুঝিয়ে বলি- কাজ এখানে নয়, বহুদূরে এবং আমার হাতে সময় বেশি নেই, আমার দৌড়ে ট্রাম বাস মেট্রো ট্রলিবাস ধরে বদলিয়ে তারপে হেঁটে সেথায় পৌঁছতে হবে। তাতে লোকটা খুব উৎসাহিত হয়ে বলল, কোনো চিন্তা নেই আমি আপনাকে ১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে দেবো, আসুন, আমার গাড়ী রয়েছে।
    তাকিয়ে দেখি সেই কাদামাখা রাস্তার অন্যপ্রান্তে একটা কালো মোটরগাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এবার আমরা পাকা রাস্তার (ফুটপাথের ওপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে গিয়ে গাড়িতে চড়ে বসলাম)। ১৫ মিনিটের সেই যাত্রাপথে লোকটা গাড়ি চালানোর ফাঁকে ফাঁকে ইন্ডিয়া সম্বন্ধে অনেক কিছু জেনে নিলো আমার থেকে।
    বুঝলাম। বেড়ানো তার উদ্দেশ্য নয়, সস্ত্রীক শপিং করতে যাচ্ছে দিল্লীতে।
    আমি মুরুব্বির মতো অনেক উপদেশ দিলাম। লোকটা অনেক ধন্যবাদ দিয়ে, পরে আমি যাতে যোগাযোগ করতে পারি সেই উদ্দেশ্যে তার ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিলো আমার হাতে।
    ভিজিটিং কার্ড সে যুগে একটা অসম্ভব ব্যাপার।
    কার্ডে চোখ বুলিয়ে দেখলাম লোকটার নাম দাভ্রান এবং তার অফিসের ঠিকানা লেখা রয়েছে তাতে। তরুণদের কী একটা অর্গ্যানাইজেশন যেন।
    এদিকে গাড়ীটা স্টেট লাইব্রেরীর দরজার সামনে থামিয়ে দিলো সে। আমিও ধন্যবাদ দিয়ে নেমে গেলাম।
    সেদিন সেই প্রোফেসরের সঙ্গে জরুরী কাজ মিটিয়ে হোস্টেলে ফিরে বন্ধুদের বললাম যে আজ স্টেট লাইব্রেরীর গেট অবধি লিফ্‌ট্‌ দিলো একটা লোক।
    শুনে তারা হেসে বাঁচে না। আমি নাকি মিথ্যে বলছি। যত বলি মিথ্যে নয় তারা বিশ্বাস করে না। তারপরে খেয়াল হলো সত্যিই তো অবিশ্বাস্য। যে খানে লোকটা আমায় গাড়ী থেকে নামিয়ে দিলো তার অন্তরঃ একশো মিটার রেডিয়াসে জায়গাটা নো এন্ট্রি জোন, সারা বছরেই। স্টেট লাইব্রেরী মুখোমুখি যে প্রেসিডেন্টের অফিস। লোকটার কার্ড খুঁজতে গিয়ে দেখি সেটা খোয়া গিয়েছে। কিছুই প্রমান করতে পারলাম না।
    দিন সাতেক পরে একদিন হোস্টেল থেকে বেরোবার মুখে দেখি লোকটা সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। কেমন করে জানলো যে আমি এখানেই থাকি?
    অমায়িক হাসি হেসে আমার কাছে এগিয়ে জিগ্যেস করল - সব খবর ভালো তো?
  • b | 135.20.82.164 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৮:২৩627830
  • এই টই টা-র আপডেটের জন্যে তীর্থের কাকের মত বসে থাকি।
  • ম্যামি | 69.93.195.87 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৯:১২627831
  • সত্যি বলতে, ভ্লাদিস্লাভ লিস্তিয়েভ খুনের ব্যাপারটাও জানতাম না। আজ পড়লাম।
  • byaang | 132.167.242.70 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৯:৩৩627832
  • ও সে , কোথায় গেলেন? রিফ্রেশ করে করে হাত ব্যথা হয়ে গেল যে। এইভাবে এরকম জায়গায় লেখা থামাতে আছে? হাঁ করে বসে আছি।
  • de | 190.149.51.69 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১০:৫১627833
  • তারপর কি হলো?
  • সে | 203.108.233.65 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৪:০৯627834
  • - নমস্কার, নমস্কার। আপনি ভালো আছেন তো?
    এইসব ভদ্রতা বিনিময়ের পরে ভদ্রলোক একটু দুঃখ দুঃখ মুখ করে জানালেন যে ওঁর ইন্ডিয়া ট্রিপ পিছিয়ে যাবে (তা আমাকে জানিয়ে কী লাভ?)। তবু তিনি বলে চলেছেন যে ওঁর স্ত্রী ডাক্তারী পড়ে, সবে সেকেন্ড ইয়ার শেষ করে থার্ড ইয়ারে উঠেছে, আর কদিন পরেই তো ইন্স্‌টিটিউট খুলে যাবে - এখন গেলে ক্লাস কামাই হবে, তাই শীতের ছুটিতে বরং...

    - হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয় নিশ্চয়, শীতেই ভালো

    এরপরে, নমস্কার প্রতি নমস্কার করে আমারা পরষ্পরের থেকে বিদায় নিলাম।
    উনি দেখলাম নিজের গাড়ীতে উঠলেন। এমন সময় সাঁট করে মনে পড়ে গেলো, নো-এন্ট্রি জোনে গাড়ি চালানোর ব্যাপারটা।
    ওমা! সেই ভদ্রলোক দেখি গাড়ি থামিয়ে কী একটা বলতে আমার দিকে ফের এগিয়ে আসছেন।
    এসে বললেন - আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে (এইরে! আমিতো কার্ড হারিয়ে ফেলেছি, ওঁর পদবীও জানি না) আমার অফিসে দেখা করতে পারেন, আমার অফিসটা হচ্ছে..(জায়গাটা বুঝিয়ে দিলেন, একদম চেনা জায়গা, বুঝতে অসুবিধে হলো না) কোনো দরকার হলে বলবেন আমি সাহায্য করব) কিন্তু আমি খামোখা ওঁর অফিসেই বা যাব কেন? আমার তো ওকে কোনো দরকার নেই!)।
    ভদ্রলোক চলে যাবার পরে মনে পড়ল, নো-এন্ট্রিতে গাড়ী চালানোটা জিগ্যেস করতে এবারেও ভুলে গেছি।

    এর পরে পুরো ঘটনাটাই ভুলে যেতে আমার একটা দিনও লাগল না। কারণ সেই সপ্তাহেই শুরু হয়ে গেল ঝামেলা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন অচিরেই টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে গেল। সেই ভেঙে যাবার প্রতিক্রিয়া প্রথম দিকটায় আমরা বিন্দুমাত্র টের পাইনি এবং ক্রমশঃ যখন একটা দুটো করে ঘটনা ঘটছিলো, মোটামুটি নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে মজা দেখতে আমাদের নেহাৎ মন্দ লাগছিলো না। হু হা ইশ্‌ আহা, নানারকম মন্তব্য করতাম বটে, তবে তা নেহাৎ ই লোকদেখানো - ব্যক্তিগত অনুভব থেকে নয়।
  • | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৪:২৫627835
  • তারপর? আবার পেয়েছিলেন এর দেখা?
  • সে | 203.108.233.65 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৪:২৬627836
  • বলছি..
  • সে | 203.108.233.65 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৪:৫৯627837
  • অক্টোবরের মাঝামাঝি ঘরের জানলা দিয়ে প্রত্যক্ষ করলাম মিনি সাইজের যুদ্ধ গোলাগুলি মানুষের মৃত্যু। কুড়ি মিটার দূরত্বের মধ্যে মানুষের লাশ পড়ে গেলে তখন আর জিনিসটা মজা দেখার পর্যায়ে থাকে না।
    আমার দোতলার ঘরের জানলার নীচে চওড়া বাগান গোলাপ ও অন্যান্য ফুলের; সেটা পেরিয়ে পীচের রাস্তা, তার ধারেই গোটা তিনেক ফুটবল গ্রাউন্ডের সাইজের একটা মাঠ। নেড়া মাঠই বলা চলে, মাঝেসাঝে উস্কোখুস্কো গাছ, জমিটাও আংশিক অসমান, দুয়েকটা বেআক্কেলে আপেল গাছ। এইটা ছিলো অনেকের শর্ট্কাটের হাঁটার রাস্তা, খেলবার মাঠ। ঐ পর্যন্তই।
    এক বিকেলে দেখি সেখানে জড়ো হচ্ছে স্থানীয় যুবকেরা। কুড়ি, তিরিশ, পঞ্চাশ, এমনি করে বেড়ে গেল সংখ্যাটা। মিলিৎসিয়া এসে ঘুরে গেল।
    একটা কোরিয়ান মেয়েকে জিগ্যেস করি - কী হচ্ছে আজ এখানে? কোনো ওপেন এয়ার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান? ঠান্ডা লাগবে না খোলা জায়গায়?
    মেয়েটি বিদ্রূপের হাসি হেসে উত্তর দেয়, - ওরা স্ট্রাইক করছে।
    (они забастуют- আনি জাবাস্তুইয়ুৎ)

    এ আবার কেমনধারা স্ট্রাইক রে বাবা? মিটিং করবে মনে হচ্ছে। কিছু প্রতিবাদ করতে চায়। সকলেরই মুখ চোখে সিরিয়াস ভাব।
    আমরা গা বাঁচিয়ে হোস্টেলের সামনে ফোয়ারার পাশে চকচকে মার্বেলে মোড়া রোয়াকে বসে কিছুক্ষণ এই "জাবাস্তোফ্‌কা"র প্রস্তুতি দেখি, তারপরে ধীরে ধীরে হোস্টেলের ভেতরে ঢুকে যাই।
    এর পরে কখন অন্ধকার ঘনিয়েছে সে খেয়াল রাখা হয় নি। হঠাৎ আওয়াজ পাওয়া যায় গোলাগুলির। নিমেষের উৎসববাড়ির মতো গমগমে হোস্টেল বাড়ী নিশ্চুপ হয়ে যায়। ঘরের আলো নিভিয়ে জানলার পর্দা সরিয়ে আমরা দেখতে থাকি যুদ্ধ লেগেছে সেই মাঠে।
    মিলিৎসিয়ার গাড়ি চলছে সেই নেড়া মাঠের মধ্যে দিয়ে। এলোপাতাড়ি দৌড়চ্ছে সেই বিক্ষুব্ধ যুবকের দল। ঠাঁই ঠাঁই গুলির শব্দ। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় সমস্ত দেখা যায় না কিন্তু মিলিৎসিয়ার গাড়ির হেডলাইটের আলো যেখানে পড়ে ক্ষনিকের জন্যে দেখি গুলি লেগে একটা ছেলে পড়ে গেল। টাকে ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে টেনে ঘষ্টে নিয়ে যায় মিলিৎসিয়া। এমনি আরো কয়েকটা। ছেলেগুলো কি বেঁচে আছে, নাকি মরে গেল? গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, তবু নড়তে পারি না। আমরা সকলে হাঁ করে দেখতে থাকি সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য। বেশিক্ষণ নয়, বড়ো জোর ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই ফাঁকা হয়ে যায় মাঠ। একটা দেহও পড়ে থাকে না সেখানে।
    কেন প্রতিবাদ, কীসের প্রতিবাদ, কিচ্ছুটি জানা যায় না। পরেরদিন খবরের কাগজেও এই ঘটনার বিন্দুমাত্র ছাপা হয় না, রেডিও টিভি সকলেই নীরব থাকে এব্যাপারে।
    তবে কি এমন ঘটনা ঘটেনি? সবই আমাদের বানানো গল্প? কষ্ট কল্পনা?
  • সে | 203.108.233.65 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৫:১৭627838
  • বলা বাহুল্য ওপরের এই ঘটনাগুলো কিন্তু রাশিয়ান ফেডারেশনে নয়, অন্য রিপাবলিকে।

    কিন্তু রাশিয়ান ফেডারেশনের দাগিস্তান ও চেচেন-ইঙ্গুশেতিয়ায় তখন সত্যিকারের যুদ্ধ লেগেছে। স্বাধীনতার যুদ্ধ বললে খুব একটা ভুল হবে না যদিও, কিন্তু সেটা বলা হয়ত পোলিটিক্যালি কারেক্ট হবে না।
    চেচ্‌নিয়া থেকে তখন নিরাপত্তার খাতিরে ফরেনারদের বের করে দিচ্ছে। তেমনি বের করে দেওয়া একটা ফরেনার ছেলে এলো আমাদের সেই শহরে। বাঙালী। হেল্প চায়।
    তখন এলোপাতাড়ি ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল সেই সুটেড বুটেট ভদ্রলোকের কথা। কী যেন নাম? কী যেন নাম? রাভশান? ইব্রাহীম? দানিয়ার? ধুস্‌! নাম মনে পড়ে না। কিন্তু অফিসটা তো চিনি।
    রওনা হই তার অফিসের উদ্দেশ্যে।
    অফিসের সামনে দেখি ফলকে লেখা রয়েছে কম্‌সামোলের অফিস। ঢুকতে যাবো চৌকিদার আটকে দেয়, কার কাছে যাবো তার নাম লিখতে হবে তো খাতায়, নাম মনে পড়ে না কিছুতেই।
    ওমা! কেমন করে জানি তখনই সেখান উপস্থিত হন ভদ্রলোক, আমাকে দেখেই আপ্যায়ন করে নিয়ে যান নিজের ঘরে।
    ঘরে ঢুকবার আগে আমি চট্‌ করে দরজায় এঁর নামটা ভালো করে দেখে নিই। দাভ্রান্‌। দাভ্রান্‌ গুলিয়ামভ্‌। নাঃ আর ভুলে যাবো না।
  • de | 69.185.236.54 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৬:১৪627839
  • বেশী তাড়া দিতে কুন্ঠাবোধ হয় -- কি করি!
  • ম্যামি | 69.93.210.142 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৬:২০627841
  • আমিও চুপ করে বসে আছি দে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন