এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ishani | 125.241.69.143 | ১২ মে ২০১৩ ০৯:০৩605368
  • আজ, মাতৃদিবস , তাই...
    .................................

    যেভাবে দোলাও ওই হাতে
    .......................................

    সত্যিই তো ! আমি তো তোমারই অংশ. আর এও সত্যি, তুমিও হয়ত জন্মেছিলে আমার জন্য . তোমার কন্ঠস্বরে শুধু আমারই অধিকার . কী ভীষণ যে চেনা আমার ! আমার কান্না থামাতে , ঘুম পাড়াতে , মন ভোলাতে . তোমার হাত দুটো এমনভাবে নকশা করা..ঠিক যেন দোলনা ! তোমার গায়ের গন্ধ যখন মিশে যায় বাতাসে..সে বাতাসে আমি শ্বাস নিই . সে বাতাসের সুরভি আমার অস্তিত্বকে আরও মধুময় করে তোলে.
    মা, ওইসব প্রায় ভুলে যাওয়া ছোটবেলার দিনগুলোতে আমার মনেই হত না, তোমার একটা নিজস্ব জীবন আছে ! কারণ আমার ছোট্ট জীবনটা তোমার দিনরাতের সঙ্গে এমন সুরে তালে বাঁধা , যে ভাবতাম আমার জীবনটাই তোমারও জীবন.
    এরপর তো কত জলই বয়ে গেল . খানিক ব্যবধান বেড়েছে . আমার খুব একটা ইচ্ছে ছিল না..জানো ...ভয় হত তোমায় চলে যেতে দিলেই তুমি যদি সারা জীবনের জন্য আমায় ছেড়ে চলে যাও .আমার ভয় পাওয়া দেখে তুমি হাসতে . "সারা জীবন কি আমার আঁচলের নীচে থাকবি নাকি ?" বলতে , " একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে তো !তখন কোথায় পাবি আমায় ?"
    মা, মনে আছে. .তুমি হাসতে খুব . আমার কিন্তু একটুও হাসি পেত না. মাঝে মাঝে না বলে কয়ে কোথায় যে আড়াল হতে তুমি ! কিন্তু একটু পরেই আবার তোমার হাসিমুখ . যাওয়া আসা , যাওয়া আসা ...আমি বুঝতাম , জানতাম..তুমি ফিরবে..কিন্তু ভরসা পেতাম না . কিন্তু এভাবেই তুমি আমায় আত্মবিশ্বাস চিনিয়ে দিলে. আমি নিজের ওপর ভরসা করতে শিখলাম .
    তুমি ভাবতে , তুমি আমাকে চেনো . ভুল ভাবতে . আসলে আমি অনেক বেশি চিনতাম তোমায় . ভাবতে , তুমি আমার ওপর নজর রাখছ . আসলে আমি এক মুহূর্ত তোমায় নজরছাড়া করতাম না. প্রতি পলে তোমার ওপর আমার শ্যেনদৃষ্টি . মনে মনে মাপছি , ছবি তুলে রাখছি বুকের ভেতরে. তোমার হাসি , ভ্রূকুটি , চোখের জল , উচ্ছ্বাস ...তোমার অনুপস্থিতিতে তোমায় নকল করতাম খুব . যেভাবে তুমি..গানে আর কবিতায় , রং তুলিতে, কাগজে কলমে ... রান্নাঘরে, বারান্দায়.. বাতাস হয়ে বয়ে যেতে...আমার অস্তিত্বের কণায় কণায়.
    আমি মন দিয়ে দেখতাম, তুমি মাথা হেলিয়েছ একদিকে. আসন্ন পড়ন্ত রোদছাপ ও মুখে তির্যক. আমার রুক্ষ চুল.. বিলি কাটে তোমার আঙুল . তোমার হাত ছোঁয় আমার হাত . আমি আজ বদলে গেছি খুব. জেনে গেছি ," মা আছে."
    তুমি থাকলে মনে হাজার পাখি . তুমি থাকলে উঠোনভাসি ফিনিক ফোটা জ্যোত্স্না , তুমি থাকলে ঝুমরাত্তিরে আনন্দের বান .তুমি থাকলে রোদ্দুরে সাত রং .
    আমি তোমায় বছরের পর বছর..এভাবেই . যখন মনে হয়েছে , তুমি নেহাত সাদামাটা , বড্ড সাধারণ মা আমার... আমার সেই উচ্ছৃঙ্খল যাপনদিনে কত কটু কথা তোমায় ! বড্ড রাগ আমার ! এত কম বোঝো তুমি ! বড় হয়ে বুঝেছি ...কত সহজে কত কথা তুমি না বলতেই বুঝে যেতে !
    এখন আমি বড় হয়ে গেছি . অনেক, অনেক . কিন্তু শেখার ঘরে বেবাক ফাঁকি . আজকের এই দিনে মায়েদের নিয়ে কী তুমুল হইহল্লা ...আর আমি ? আমি স্বার্থপর , মূর্খ, অকৃতজ্ঞ.. অথচ দেখো, তুমি কিন্তু আমাকে ভাঙা কাচকড়ার পুতুলের মতো বাতিল করনি. এখনও তুমি আমার ভেতরে খুঁজে বেড়াও ভালো কিছু !

    বড় বেশি ভালোবাসা
    প্রচ্ছন্ন সোনালি অহঙ্কার
    মিশে আছে অবাধ প্রশ্রয়ে আর
    তাই ভাবি...
    "মা শুধু আমার.."
  • sch | 126.203.198.176 | ১২ মে ২০১৩ ০৯:১৫605369
  • লাইকিয়ে গেলাম
  • রাণা আলম | 111.210.122.230 | ১২ মে ২০১৩ ২২:৫৮605370
  • বিশ্বায়নের দৌলতে ‘মাদার্স ডে’ আজ অন্যতম পণ্যযোগ্য বস্তু।সেই সুবাদেই কিছু স্মৃতিচারণ।
    আমার মা যে স্কুলে পড়ান,সেখানে বিহার থেকে পালিয়ে আসা এক স্বামী-বিছিন্না মহিলা,গীতা নাম তার,তিনি আশ্রয় নেন।স্কুল তখন ঘেরা ছিলনা।স্কুলের টুকটাক কাজ,নর্দমা-শৌচাগার পরিষ্কার থেকে ফাই-ফরমাশ খাটা,সামান্য অর্থের বিনিময়ে সব করতেন গীতা মাসি।তার ছেলের বয়স তখন কয়েক মাস।স্কুলের বারান্দায় রাত কাটতো।বহু ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে গীতা মাসি’র ছেলে আজ এসএসসি’তে চাকরি পাওয়া এক প্রতিষ্ঠিত স্কুল শিক্ষক।যার মাথায় ছাদ জোটেনি,আজ তার দোতলা পাকা বাড়ি।গীতা মাসি যেভাবে ছেলেকে বড় করেছেন তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
    বহরমপুরে,আমার সামনের বাড়ি,টালির চাল,ভদ্রমহিলার অনেককটি সন্তান।ছোটটি পড়াশোনায় ভালো।স্বামী সবজি বিক্রেতা।ছেলেরা টুকটাক কাজ করে।মদ খেয়ে এসে বাড়িতে ঝামেলা করে।ছেলেটি আমার চোখের সামনে বড় হয়েছে।জয়েন্টে র্যা ঙ্ক করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গেল,তার মা খুব কষ্টে বাড়িতে কাজ করে ছেলের খরচ চালিয়েছেন।ছেলেটি গতবছর একটি বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি পেয়েছে।ভদ্রমহিলা আর লোকের বাড়িতে কাজ করেন না।
    করিমপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের একটি ছেলে।ছোট থেকে বিড়ি বাঁধতো।বছরে তিনমাস রাজমিস্ত্রি খেটে টাকা জমিয়ে স্কুলে ভর্তি হত।কোনদিন নতুন বই হাতে নিয়ে দ্যাখেনি।প্রাইভেট টিউশন দূরের কথা,বইপত্তর ঠিকঠাক জুটতো না।পাড়ার লোকে তাকে কাজে যেতে বলতো।ছেলেটির চোখে স্বপ্ন ছিল।তার মা,তাকে আগলে রাখতেন।নিজের সামান্য সঞ্চয় ছেলের হাতে তুলে দিতেন।মাঝারি মেধার ছেলেটি প্রচন্ড পরিশ্রমী ছিল।অনেকখানি লড়াই এর পর বছর তিরিশের যুবকটি আজ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক।আর তার এই লড়াই-এ প্রেরণাদাত্রী হলেন তার মা,এ কথা আমি তার মুখেই শুনেছি।
    আরেকটা ঘটনা দিয়ে শেষ করবো।আজ থেকে বছর চারেক আগের কথা। একটি বেপরোয়া বাউন্ডুলে ছেলে,তার সাথে তার বাড়ি’র সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল না।ছেলেটি স্বভাবে ছিল চাপা।এবং নানা কারণে বাবা-মা’র প্রতি তার সাঙ্ঘাতিক বিদ্বেষ জমে উঠেছিল।ছেলেটি ছুটিতে বাড়ি এলেও বাবা-মা’র সাথে ঠিকঠাক কথা বলতো না।বাড়িতে প্রায়শই নানা ঝামেলা হত।একদিন বাউন্ডুলে জীবনযাপনের দরূণ ছেলেটি খুব অসুস্থ হয়ে বাড়িতে প্রায় অচেতন এবং শয্যাশয়ী।একদিন গভীর রাতে ছেলেটি’ ঘুম ভেঙ্গে আধ-খোলা চোখে দ্যাখে,তার মা,বিছানার পাশে,মেঝেতে নামাজে বসে অঝোরে কেঁদে ছেলের জন্য অস্ফুটে প্রার্থনা করে যাচ্ছেন।ছেলেটির তখন নিজের গালে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করছিল।আজ সে ছেলেটি পেশাগতভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং বাবা-মা’কে নিয়ে তার খুব সুখী সংসার।

    আমার লেখার বাইরেও অজস্র মা আছেন,যাদের কথা এখানে লেখা গেলনা।
    দুনিয়া’র সমস্ত মা’কে ‘সালাম’ এবং ‘কুর্ণিশ’ রইলো।দুনিয়ার সমস্ত সম্পদ দিয়েও একজন মায়ের কর্তব্যের প্রতিদান দেওয়া সম্ভব নয়।
    ভালো কথা,সেই এককালের বাউন্ডুলে ছেলেটি আজ তার মায়ের জন্য গিফট কিনতে যাচ্ছে।
    ‘ফাদার্স ডে’টা কবে আসছে বলুন তো?
  • nina | 79.141.168.137 | ১৩ মে ২০১৩ ০১:৪৩605371
  • সেই ছেলেটাকে বল--এই লেখাটা মাকে দিতে----মায়ের জন্য এই সবথেকে অমূল্য গিফ্ট---সব মায়েদেরই সেই ছেলে আজ দিল এক অমূল্য গিফ্ট----
    সব মায়েদের তরফ থেকে সেই ছেলেকে কুর্ণিশ!

    আর ঈশাণী কেও সালাম--মাতৃদিবসের।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন