এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আমার জমানো মানুষেরা

    Lama
    অন্যান্য | ১৪ মে ২০১৩ | ২৮৫৫ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Lama | 127.194.224.21 | ১৪ মে ২০১৩ ২৩:০৫604995
  • ছোটবেলায় একবার ডাকটিকিট জমানোর চেষ্টা করেছিলাম। ব্যাপারটা খুব একটা দাঁড়ায়নি। বড় হয়ে টাকাও জমানোর চেষ্টা করেছিলাম। ও লাইনেও বেশি সুবিধে হয় নি।

    আজকাল মানুষ জমাই।

    পেটের জন্য আগরতলা থেকে আহমেদাবাদ ঘুরতে হয়েছে এককালে। সেই ফাঁকতালে অনেক মানুষের সঙ্গে মোলাকাত হয়েছে। অনেককে ভুলে গেছি। কাউকে কাউকে রেখে দিয়েছি – আদর করে, শিকেয় তুলে।

    জীবনখাতায় সেঁটে রাখা সেইসব মানুষের গল্প...
  • Rit | 213.110.246.230 | ১৪ মে ২০১৩ ২৩:৫৫605006
  • হোক লামা দা। ঃ)
  • sp | 217.239.86.106 | ১৫ মে ২০১৩ ০০:৪৪605017
  • চলুক চলুক। ইঁট পেতে গেলাম।
  • Blank | 69.93.244.86 | ১৫ মে ২০১৩ ০০:৫৯605028
  • ছোটবেলার ডাকটিকিট গুলো আমারে গিফট করে দিলেও তো পারো
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ১৫ মে ২০১৩ ০১:১৩605039
  • আর বড়বেলার টাকাগুলো আমায়।
  • | 190.215.87.212 | ১৫ মে ২০১৩ ০১:১৬605040
  • আমার কাছে বেশ কিছু স্ট্যাম্প আছে বুনান ; সামনের বার যখন যাবো তোমাকে দিয়ে দেবো ।
  • Blank | 69.93.244.86 | ১৫ মে ২০১৩ ০১:৪৩605041
  • থেংকু ঃ)
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ১৫ মে ২০১৩ ০২:০৮605042
  • যারা ছোট আছে, তাদেরকেই দিয়ো। এখানে আমি ছোট। কিন্তু বাকি জমানো মানুষগুলো কবে অসবে?
  • nina | 79.141.168.137 | ১৫ মে ২০১৩ ০৬:৩৯605043
  • একটা ভুলে গেলে লামা----- পাঠক জমা করাও তোমার হবি--সার বেঁধে সব্বাইকে বসিয়ে দিয়ে লামাবাবু হাওয়া---
  • byaang | 132.167.225.201 | ১৫ মে ২০১৩ ০৭:১৫604996
  • ওমা, এই টইটা শুরু করার কথা তো আমিও কতবার ভেবেছি। আমারও তো এরকম কতগুলো জমিয়ে রাখা মানুষ আছে। যোগিন্দর, রকিব, বীরেশ, রীতা ব্রিটো, পুনম, যোশিজী, ইন্দ্রাণী, বুরানুদ্দিন, এদের গল্প বলতে চেয়েছি। ল্যাদ খেয়েটেয়ে সেসব লেখা হয় নি। লামার জমানো মানুষদের গল্প পড়লেই আমার ল্যাদ খাওয়ার অপরাধবোধ ধুয়েমুছে যাবে ঠিক জানি। লামার গল্পগুলো তো অমনই হয়। সব ভুলিয়ে দেয়। পড়েটড়ে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকতে হয়। আর মাথার মধ্যে লাইনগুলো ঘুরতে থাকে। এই যে যেমন এই লাইনদুটো - " বড় হয়ে টাকাও জমানোর চেষ্টা করেছিলাম। ও লাইনেও বেশি সুবিধে হয় নি।" ঃ-)
  • | 190.215.83.89 | ১৫ মে ২০১৩ ০৮:১০604997
  • ঠিক আছে। দু জন কেই দেবো খন। ঃ))
  • ladnohc | 116.215.40.194 | ১৫ মে ২০১৩ ০৮:৩৯604998
  • শুরু হোক।
  • siki | 132.177.187.14 | ১৫ মে ২০১৩ ০৮:৪৯604999
  • চরণ ছুঁয়ে যাই ...
  • Rit | 213.110.246.230 | ১৫ মে ২০১৩ ০৯:০৯605000
  • গান্ধীর পর লাইনে আমি। মানে ওর পরে আমি ছোট। ঃ)
  • swati | 194.64.38.52 | ১৫ মে ২০১৩ ০৯:৫১605001
  • এমন একটা মানুষ খুঁজে পেলাম না, যারে জমানো যায়
    এমন একটা ইগো খুঁজে পেলাম না, যারে কমানো যায়--- ঃ)
  • kiki | 69.93.254.118 | ১৫ মে ২০১৩ ২০:২৮605002
  • বৌমা,
    হ্যা হ্যা।।।

    লামা আবার সবাইকে দাঁড় করিয়ে রেখে পালালো।@#$%^&*&^%$#
  • Lama | 127.194.235.41 | ১৫ মে ২০১৩ ২২:৫৪605003
  • [কয়েকজনের সম্পর্কে অন্য টইতে আগে লিখেছি। যদিও কেউ কেউ পড়েছেন আগেই, এটা যেহেতু জমানো মানুষদের এলবাম, এখানেও কপি পেস্ট করে দিলাম। আগে পড়া হয়ে গিয়ে থাকলে স্ক্রোলিয়ে যাবেন দয়া করে]

    সজলকাকু
    **********

    "আমার বড় ছেলে অমুক স্কুলে পড়ে, আর ছোট ছেলে তমুক স্কুলে। তোমার রিকশায় করে ওদের রোজ সকালে বাড়ি থেকে স্কুল আর বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি আনা নেওয়া করতে পারবে?"

    "পারব। মাসে একশো কুড়ি টাকা করে দেবেন।"

    "ওটা একশো করো। কাল থেকেই এসো তাহলে।"

    এইভাবে সজলকাকু এসেছিলেন আমাদের জীবনে। সজলকাকু। রিকশা চালাতেন। রিকশাওয়ালা।

    রোজ সকালে নির্ধারিত সময়ে রিকশার ক্রিং ক্রিং বেল বেজে উঠত। আর আমরা ব্যাগ কাঁধে স্কুলের পথে বেরিয়ে পড়তাম। তিন চার বছরে ব্যতিক্রম হয়েছিল শুধু দুবার। সজলকাকুর তিনকূলে কেউ নেই। শুধু কোথায় যেন এক দূর সম্পর্কের মাসি আছেন। মাসির বাড়ির নাম না জানা গ্রামের গল্প শুনতে শুনতে পৌঁছে যেতাম স্কুলে। যতদূর মনে পড়ে, ভাইয়ের স্কুল আগে ছুটি হত। সজলকাকু তাকে রিকশায় চাপিয়ে নিয়ে আসতেন আমাদের স্কুলের সামনে। আমার ছুটির জন্য অপেক্ষা করতেন। এই সময়টা ভাইয়ের মাঝে মাঝে ক্ষিদে পেয়ে যেত। তখন সজলকাকু বিস্কুট কিনে খাওয়াতেন। আমাদের বারণ করেছিলেন এ ব্যাপারে মা-কে কিছু না জানাতে।

    বড় হয়ে গেলাম। মাসকাবারি রিকশার পালা শেষ হয়ে সাইকেলে স্কুল যাওয়া আসা শুরু হল। স্কুল পেরিয়ে কলেজ। অন্য শহর। কলেজের পর আবার অন্য শহর। সজলকাকুকে ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায়।

    সেদিনের হাফপ্যান্ট পরা স্কুলবালক আজ চল্লিশের মাঝবয়েসী। সজলকাকু তখন পঁচিশের যুবক হয়ে থাকলে আজ নিশ্চয় পঞ্চান্ন বা ষাটের প্রৌঢ়। হয়তো কোথাও আছেন। হয়তো নেই। এখন যদি দেখা হয় কেউ কউকে চিনতে পারব না।

    তাঁকে কখনো কিছু দেওয়া হয়নি। আজ তাই দুটো চারটি কথা সাজিয়ে দিলাম।
  • Lama | 127.194.235.41 | ১৫ মে ২০১৩ ২২:৫৭605004
  • বলরাম
    *******

    আমি যে স্কুলে পড়েছি সেই স্কুলে আমার মাসতুতো মামা মাসীরা পড়েছে, আমার স্বশুরমশাই পড়েছেন, খুড়স্বশুর পড়েছেন। এমনকি আমার বাবাও অল্প কিছুদিন পড়েছেন।

    বলরাম আমার সঙ্গে পড়ত। আবার আমার খুড়স্বশুরের সঙ্গেও পড়ত। আমাদের সময় ফুটবল খেলায় পারদর্শী কিছু ছেলে বছর বছর একই ক্লাসে থেকে স্কুল টিমকে বিভিন্ন খেলায় জেতাতো। কিন্তু বলরাম আদৌ ফুটবল খেলতে জানত না।

    আবার বছর বছর একই ক্লাসে থাকা ছেলেদের বেশিরভাগ বিচ্ছু ধরণের, ফলতঃ শিক্ষকদের কাছে অপ্রিয় হয়ে থাকে। অথবা এত বেশি চুপচাপ থাকে যে তাদের অস্তিত্বই বোঝা যায় না। বলরাম এর কোনটাই ছিল না। বলরাম নিরীহ শান্তিপ্রিয় মানুষ। আবার সদালাপী মিশুকে- আমি থেকে শুরি করে চার বছরের পুরনো প্রাক্তন সহপাঠী, সবার সঙ্গে হেসে কথা বলে।

    তাছাড়া বলরাম স্যরদের মধ্যে, বিশেষ করে অঙ্কের স্যরদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় ছিল। কারণ- আর সব কিছুতে পাশ করুক আর নাই করুক, অঙ্কে বলরামের একশোতে একশো পাওয়া বাঁধ। ওকে জিগ্গেস করলে বলত, "কি করে যেন অঙ্কগুলো মিলে যায়, এমনিতে আমি পড়শোনা খুব একটা বুঝতে টুঝতে পারি না।'

    এহেন বলরাম ক্লাস টেনের মাঝামাঝি একদিন স্কুলে এল না। তার পরদিন এল না। তার পরদিনও না। বলরাম সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চললেও ঘনিষ্ঠতা কারো সঙ্গে ছিল না। সুতরাং আমরা আস্তে আস্তে ভুলে গেলাম ওকে।

    তারপর অনেক বছর কেটেছে। স্কুলের পর কলেজ শেষ হয়েছে। পেটের ধান্ধায় অর্ধেক ভারতবর্ষ ঘোরা হয়ে গেছে। সেবার ভাবলাম পুরনো শহরে একবার যাওয়া যাক।

    গেলাম। রাস্তাঘাট চওড়া হয়েছে, লোডশেডিং কমেছে। শপিং মল পর্যন্ত গজিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা রেললাইন এসে গেছে। তৈরি হয়েছে নতুন রেলস্টেশন।

    এই পর্যন্ত গল্পটা একই রকম। সবার সঙ্গে এরকমই হয়। পুরনো স্কুলে যাওয়া। পুরনো স্যরদের মধ্যে যারা জীবিত তাঁদের প্রণাম করে পরিচয় দেওয়া। কারো কারো চিনতে পারা বা চক্ষুলজ্জায় চিনতে পারার ভান করা। সম্প্রতি বুড়ো হয়ে যাওয়া পুরনো দারওয়ানকে বকশিস দেওয়া ইত্যাদি।

    স্কুল থেকে বেরিয়ে এলোমেলো ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। শহরের মোটামুটি মাঝখানে একটা ব্যস্ত চৌরাস্তা আছে। আমাদের ছোটবেলাতেও ছিল। ফলের দোকান, ফুটপাথে ছিটকাপড়ের দোকান সব মিলিয়ে আগের মতৈ জমজমাট।

    কেউ নাম ধরে ডাকল। দেখি ফুটপাথে গামচা আর রুমাল নিয়ে বসে থাকা হকার। দেখি একমুখ দাড়িগোঁফের মাঝখানে সেদিনের মতই একজোড়া পিটপিটে চোখ নিয়ে আমাদের সেই বলরাম।

    দুজনেই দুজনকে দেখে খুশি। অনেক গল্প হল- আমার গল্পই বেশি। অজকাল আমার বাড়ি গাড়ি হয়েছে, বিলেত ঘুরে এসেছি শুনে বলরাম আন্তরিঅভাবে খুশি। ওর খোঁজখবর, এতদিন কোথায় ছিল, বিয়ে করেছে কিনা এসব জানার আগেই সময় ফুরিয়ে গেল। ফোনে যোগাযোগ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেদিনের মত বিদায় নিলাম।

    কলকাতায় এসে খেয়াল হল ওর কোনো ফোন নাম্বার আছে কিনা জিজ্ঞেস করা হয় নি, আমার নম্বরও ওকে দেওয়া হয় নি।

    আর তারপর আরো অনেক বছর হয়ে গেছে, আমারও আর পুরনো শহরে যাওয়া হয়ে ওঠে নি।

    উত্তর্পূর্ব ভারতের কোন বাঙালীপ্রধান ছোট শহরে বলরাম নামে কোন দাড়িগোঁফওয়ালা গামছা বিক্রেতার সঙ্গে কারো যদি দেখা হয়, আমাকে একটু জানালে উপকৃত হব।
  • Lama | 127.194.235.41 | ১৫ মে ২০১৩ ২২:৫৯605005
  • মরণ

    প্রথমে দেখতে পাই নি। ছিল হয়তো,খেয়াল করি নি। টিফিনের সময় চোখে পড়ল।

    বছরের মধ্যিখানে নতুন ছেলেপুলে ভর্তি হওয়া পাড়াগাঁয়ের স্কুলে এমন কিছু বিরল ঘটনা নয়। তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেইও। প্রথম দিন গোবেচারার মতো পেছনের বেঞ্চিতে বসে থাকবে,কেউ লক্ষ্য করবে না। দিদিমনি নাম জিজ্ঞেস করবেন, জানতে চাইবেন আগে কোন স্কুলে পড়ত। শহরের স্কুল থেকে এসে থাকলে নরম হেসে বসতে বলবেন। আর আরো বেশি পাড়াগাঁয়ের স্কুল থেকে যদি এসে থাকে তাহলে বাঁকা হেসে দু একটা কঠিন প্রশ্ন করবেন।সঠিক উত্তর না পেয়ে ফার্স্ট বয় মানসের দিকে তাকাবেন। মানস গড়গড় করে ঠিক উত্তর বলে দিয়ে নিজের জায়গায় বসবে। দিদিমনিও নতুন ছেলেকে বসতে বলতে ভুলে গিয়ে পড়ানো শুরু করবেন। টিফিনের সময় দু একজন আলগোছে দু একটা প্রশ্ন করবে। তারপর কেউ হয়তো তার পাশের জনকে বলবে "জানিস,নতুন ছেলেটা না...'। তারপর মাস তিনেকের মাথায় তাকে হেডস্যরের ঘরের সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাবে।বোঝা যাবে নতুন ছেলে আর নতুন নেই।

    কিন্তু,এই নতুন ছেলেটা আমাকে বেশ অবাক করল। কারণ, আমার হ্রস্ব ছাত্রজীবনে আমি কোনো ছেলেকে কখনো খালি গায়ে স্কুলে আসতে দেখি নি।

    গুটি গুটি গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,"অ্যাই, তোর নাম কি রে?' ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে টেনে টেনে উত্তর দিল,"মর-অ-অ-ণ'। আরো দু একটা কথা বলার চেষ্টা করতে গিয়ে বুঝলাম আমার কোনোপ্রশ্নের উত্তর দেবার ইচ্ছাই ওর নেই। বা, প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে হয় এই বোধটাই নেই। একটু গুটিয়ে গেলাম।

    টিফিনের পরেই বাংলা ক্লাস। কিছুক্ষণ ক্লাস চলার পর দেখলাম শিবানীমাসি (রোজ সকালে যাকে কলসি করে জল এনে স্কুলের ঢাউস ফিল্টার ভরতে দেখি) এসে ক্লাসে ঢুকল। দিদিমনিকে একটা প্রণাম ঠুকে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল,"জন্মের আগেই বাপ মরল,তাই নাম মরণ।রেখে গেলাম- যদি মানুষের মত মানুষ হয় ...'। দিদিমনি অস্বস্তিতে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললেন, "ঠিক আছে, ঠিক আছে।'

    ছুটির পর বাড়ি ফিরে জানালাম,"আমাদের স্কুলে একটা নতুন ছেলে এসেছে।' আর তার পর দিন থেকে মরণকে (বা শিবানীমাসিকে) আর কখনো দেখতে পাই নি।

    তারপর অনেক বছর হল। সেই স্কুলে কয়েক বছর পড়েছিলাম।সেই স্কুলের কিছু কিছু বন্ধুর সঙ্গে পরেও কয়েক বছর যোগাযোগ ছিল। একজন তো কলেজ পর্যন্ত সঙ্গে ছিল। কিন্তু তিরিশ-বত্রিশ পর, যখন মনে করার চেষ্টা করছি ক্লাস ওয়ানে আমি কাদের সঙ্গে পড়তাম,দুটোমাত্র নাম মনে পড়ছে- ফার্স্টবয় মানস, আর ওই মরণ।

    অনেক বছর পর ছোটবেলার পুরনো শহরে গিয়েছিলাম। সেই স্কুলটাই আর নেই। ভাতের হোটেলের খোঁজে দুপুরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। ব্যস্ত রাস্তায় অনেক গলার আওয়াজ। কে যেন বলল,"রতনদা, দুটো চা-কে চারটে করে।' স্কুলফেরত ছাত্র তার বন্ধুকে বলল, "শুভাশিস,কাল যাচ্ছিস তো? স্যরের বাড়ি?' এমনকি "মানস' নামটাওশুনলাম একজনের মুখে।

    কিন্তু, "মরণ' বলে কাউকে ডাকতে শুনলাম না কাউকেই। তিরিশ বছর আগেও খুব বেশি লোকের "মরণ' নাম হত না। এখন তো আরোই হয় না। এক হিসেবে ভালই হল। যদি মরণ নামে কারো সঙ্গে দেখা হতও, "আপনি কি অমুক সালে এক দিনের জন্য অমুক স্কুলে পড়েছিলেন' প্রশ্নটা খুব বোকা বোকা শোনাত না কি?
  • Lama | 127.194.235.41 | ১৫ মে ২০১৩ ২৩:০২605007
  • পুরনো লেখা কিছু কপি পেস্ট করে দিলাম, যাতে জমানো মানুষদের গল্পগুলো এক জায়গায় থাকে। যেগুলো কখনো লেখা হয় নি সেগুলো এরপর থেকে লিখব
  • nina | 78.34.162.175 | ১৬ মে ২০১৩ ১০:৪৪605008
  • লামাহে
    আবার পড়লাম, আবার ভাল লাগল, আবার গালে হাত দিয়ে বসে রইলাম পরেরগুলোর জন্যে--আবার কতদিন কে জানে----ঃ-(
  • b | 122.79.45.21 | ১৬ মে ২০১৩ ১৭:৫৮605009
  • লামা বরাবরের মতো ই অসাধারণ।

    আরো চরিত্র নিয়ে লেখো প্লিজ।
  • রূপঙ্কর সরকার | 126.203.219.0 | ১৬ মে ২০১৩ ১৮:১০605010
  • লামা - বড় ভাল লিখেছ ভায়া, বড় ভাল। আরও আছে নিশ্চয়ই।
  • নদেরচাঁদ ভড় | 213.132.214.156 | ২৭ মে ২০১৩ ১৭:১১605011
  • আরেকটা পুরনো লেখা- কপি পেস্ট। আসলে, এটার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।

    দ্যাশের লোক
    **************

    একটা বড় টেবিল ঘিরে বসে অনেকজন খাচ্ছে। তাদের মধ্যে আমি একজন। বেশিরভাগ চিনে বলে মনে হয়, তারা নিজেদের মধ্যে দুর্বোধ্য ভাষায় কথাবার্তা বলছে। বাকিরা কে কোনদেশি জানি না, তবে নির্ঘাত এশীয়। তিনজন আমার চেনা- ক্যাপ্টেন হুসেন, ইন্দোনেশিয়ার লোক, তার সহকর্মী তথা চতুর্থ পক্ষের শালা আবদুল্লা, ইন্দোনেশীয়। শ্রীলঙ্কার বীরাসিংঘে তথা উইরা/ বীরা- উইঞ্চ অপারেটর। একমাত্র এর সঙ্গেই আমার একটু আধটু ভাব বিনিময় হয়। ভাষার নমুনা, 'আই টোয়েন্টিফোর হাওয়ার্স ওয়ার্কিঙ্গ। আই নো ম্যান? অ্যানিম্যাল আই?' সকলেই খাচ্ছে ফেনাভাত। দুজন ইংরেজও আছে, তারা ঘরের বাইরে থালা হাতে রোদ পোয়াতে পোয়াতে খাচ্ছে- সম্ভবতঃ সবার সঙ্গে টেবিলে বসে খেলে তাদের জাত যাবে।

    গুজরাটের দাহেজ বন্দরে লিকুইড পেট্রোলিয়াম জেটি তৈরীর বরাত পেয়েছে সিঙ্গাপুরের ইকন কোম্পানী। আমি জুটেছি তিনমাসের চুক্তিতে। সিঙ্গাপুরী বলে কলা হয় কিন্তু কোনো এথনিক মানবগোষ্ঠী সম্ভবত হয় না, তাই সিঙ্গাপুর মেসে খাওয়া বলতে বোঝায় এরকম পাঁচমিশেলি জনতার সঙ্গে খাওয়া।

    আমার বন্ধু তথা গুরু চিফ সার্ভেয়ার দান্তে (দান্তে কাস্তিলো রামোস- বাবা ফিলিপিনো, মা মেক্সিকান) কে দেখা যাচ্ছে না। কারণটা আমার জানা। এই দলটার মধ্যে একজন ডুবুরী আছে যার কাজ ডুবে যাওয়া পাইলের (নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত শক্তপোক্ত লোহার খুঁটিবিশেষ যা মাখে মাঝে ক্রেনের দড়ি ছিঁড়ে সমুদ্রে পড়ে যায়) গায়ে ক্রেনের দড়িদড়া আটকে দেওয়া। সেই লোক নাকি সাঁতার জানে না- কোমরে ভারি পাথর বেঁধে তাকে জলে নামিয়ে দেওয়া হয়, কাজ হয়ে গেলে দড়ি নাড়িয়ে ইশারা করলে টেনে তোলা হয়। আর দান্তের মতে, সে এমন ডুবুরির মুখদর্শন করবে না যে 'ক্যান দ্রাউন বাত কান্ত ফ্লোত' তাই দান্তে খাবারটা নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে আলাদা খায় অথবা দেরি করে খেতে আসে। আমি অবশ্য আজও পর্যন্ত জানি না সেই বিশেষ লোকটি কোনজন।

    খাবার টেবিলে সূক্ষ্ম একটা জাতিভেদ প্রথা আছে, অচৈনিকরা টেবিলের একটা বিশেষ কোণে, ইংরেজরা বাইরে। হুসেন আর আবদুল্লার সঙ্গে আমার প্রাথমিক খারাখারি মিটে গিয়ে সম্প্রতি সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। ভাষার ব্যবধান থাকলেও বীরাসিংঘে লোকটি সদালাপী। টুকটাক গল্প জমে উঠেছে। টেবিলের একদম কোণার দিকে বসে নাম না জানা একজন লোক গভীর আগ্রহ নিয়ে শুনছে আর মৃদু মৃদু হাসছে।

    একটু পরে নাম না জানা লোকটি আমাকে শুধালো "আপনে ভৌমিকদা?"

    আমি তাজ্জব হয়ে হ্যাঁ বলাতে সে বলল "আমার নাম মহম্মদ মুনীর হোসেন, ডাইভার।" বুঝলাম এই সেই তথাকথিত সাঁতার না জানা ডুবুরী।

    তার পর যা কথাবার্তা হল তা থেকে নিম্নলিখিত ব্যাপার স্যাপার জানা গেলঃ

    ১) মুনীর হোসেনের বয়েস বাইশ
    ২) এই কাজ করছে চার বছর হল
    ৩) কখনো স্কুলে যায় নি।
    ৪) তার মামা সিঙ্গাপুরের পুরনো বাসিন্দা
    ৫) মামা অভিজ্ঞ ডুবুরী
    ৬) মামার উদ্যোগেই এই পেশায় আসা
    ৭) সাঁতার সে ভালই জানে

    এবং সর্বোপরি,

    ৮) ময়মনসিংহের যে গ্রামে মুনীরের মামাবাড়ি, ঠিক সেখানে আমারও মামাবাড়ি।

    তারপর একদিনও মুনীরের সঙ্গে দেখা হয় নি। সেদিনই বিকেলে উঁচু প্ল্যাটফর্ম থেকে সটান জলের ওপর পড়ে চোট লেগে ওর শিরদাঁড়া ভেঙ্গে যায় এবং তাড়াতাড়ি আমদাবাদে নিয়ে যাওয়া হয়।

    মোবাইল ফোন তখন ছিল না, তাই নম্বর বিনিময় হয়নি। আশা করি ভাল আছে
  • potke | 132.172.230.203 | ২৭ মে ২০১৩ ১৯:৩৫605012
  • লামা, আজ আর কোন কাজ হবেনা, কাল ও হবে কিনা কে জানে-- এমন মন খারাপ করা লেখনী আপনার!
  • নদেরচাঁদ ভড় | 127.194.237.202 | ২৭ মে ২০১৩ ২২:১৭605013
  • তুলিনু
  • নদেরচাঁদ ভড় | 127.194.231.124 | ২৮ মে ২০১৩ ১৯:৪৮605014
  • ডুবিতে নাহি দিব
  • Lama | 127.194.237.59 | ১১ জুন ২০১৩ ২৩:৪৮605015
  • মুস্তাফিদা
    **************

    'বাবু, আপনারা আমাকে যে নামে ডাকেন সেটা আমার আসল নাম নয়।', মুস্তাফিদা বলত, 'আমার আসল নাম শেখ মুস্তাক। সৈয়দ আর শেখ উঁচু জাত। আপনাদের ব্রাহ্মনদের মতো।'

    মুস্তাফিদা সপ্তাহে দুদিন আমাদের হোস্টেলে আসত। সব ছেলেদের ময়লা জামাকাপড় বোঁচকা বেঁধে নিয়ে যেত, কেচে ইস্ত্রি করে নিয়ে আসত। লন্ড্রির চেয়ে কম পয়সা নিত। লুঙ্গি আর শার্ট পরা, এক মুখ সাদা দাড়ি। বয়স বলত নব্বই বছর, ষাটের বেশি মনে হত না।

    আমাদের সিনিয়ার পন্ডিত সেবারে ফেল করে গেল। মুস্তাফিদা ইস্ত্রি করা শার্টটা বিছানার ওপর রেখে বলল 'বাবু, দুটো টাকা দেবেন।' পন্ডিত বলল 'নেই মুস্তাফিদা। এদিকে পাশও করতে পারলাম না।' মুস্তাফিদা বলল 'সেকি? এত তপস্যা সব বৃথা গেল?' বলে পয়সা টয়সা ভুলে আপনমনে মাথা নাড়তে নাড়তে চলে গেল।

    মুস্তাফিদা কোথায় থাকে আমরা জানতাম না। কিন্তু কখনো মনে হয়নি, ইস্ত্রি করা জামাকাপড়গুলো নিয়ে যদি মুস্তাফিদা ফিরে না আসে তাহলে কি হবে। এটা জানা ছিল যে মুস্তাফিদার বাবা এবং তার বাবা এই কলেজের ছাত্রদের কাপড় কাচতেন। সুতরাং জামাকাপড় নিয়ে মুস্তাফিদাকে কোনো না কোন সময় ফিরে আসতেই হবে।

    একবার দুটো শার্ট কাচতে দিয়েছি, মুস্তাফিদা আর আসে না। এক সপ্তাহ গেল, দু সপ্তাহ গেল, বিরক্ত হয়ে উঠলাম। এদিকে জানিও না ঠিক কোথায় থাকে।

    কদিন পর, দেখি একটা কমবয়েসী ছেলে আমার শার্টদুটো নিয়ে এসে হাজির। বলল 'চার টাকা দিন'। আমি বললাম 'তুমি কে?' বলল 'আমার দাদু এখানে আসতেন।' আমি বললাম 'মুস্তাফিদা? কি হয়েছে মুস্তাফিদার?' ছেলেটা দার্শনিকের মত বলল 'তার সময় হয়ে গিয়েছিল। যাবার আগে কোন শার্টটা কোন প্যান্টটা কত নম্বর ঘরে ডেলিভরি হবে সব আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে।'
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ১২ জুন ২০১৩ ০০:৩৫605016
  • লামাদার লেখা গুলো পরে আর চোখ শুকনো রাখা যায় না। এরকম একটা লাস্ট লাইন। ওফ।
  • + | 213.110.246.230 | ১২ জুন ২০১৩ ০০:৪৩605018
  • আমি লামাদার লেখা পড়ে এটা বুঝেছি লামাদা হেব্বি বাজে লোক, যেকোনোদিন যে কাউকে মন খারাপ (মন ভালো ও ) করিয়ে দিতে পারে
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন