এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বাংলাদেশের কথাশিল্পী সেলিনা হোস

    Kulada Roy
    অন্যান্য | ২৩ জুন ২০১১ | ৯৯৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ২৩ জুন ২০১১ ১৮:৫৪479032
  • দৈনিক ইত্তেফাকে সেলিনা হোসেনের এই সাক্ষাৎকারটা প্রকাশিত হয়েছে। মনে হল--গুরুচণ্ডালীতে শেয়ার করি। সাক্ষাৎকার কে গ্রহণ করেছেন--জানিনা।
    ............................

    সেলিনা হোসেনের পরিচয় নতুন করে দেওয়ার কিছু নেই। বাংলা কথাসাহিত্যের অসামান্য এই লেখকের সঙ্গে কথা হয় গত ১৪ জুন তাঁর ৬৪তম জন্মদিনে। লেখকের সাক্ষাত্‌কারে তাঁর লেখালেখি নিয়ে আলাপ হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জন্মদিন উপলক্ষে এ আলাপচারিতায় সাহিত্য প্রসঙ্গে না গিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁর জীবনের পথচলায় প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কথা, সর্বোপরি চেষ্টা করা হয়েছে সেলিনা হোসেনের জীবনোপলব্ধিকে তুলে আনার। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আসিফুর রহমান সাগর

    কেমন কাটছে দিনটি? লাজুক উত্তরে বললেন—এভাবে কাটবে ভাবিনি। টেলিফোনে, সেলফোনের এসএমএসে অনেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে, অনেকে বাসায় এসে শুভেচ্ছা জানিয়েছে, কেউ কেউ ফুল এনেছে। চ্যানেল আই সরাসরি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। এমনিতে দিনটির কথা মনে থাকে না। তবে এবার ভুলার সুযোগ হয়নি। মানুষের ভালোবাসাই মনে করিয়ে দিয়েছে আমার দিনটির কথা।

    আপনার ছোটবেলায় কি জন্মদিন পালন করার চল ছিল? বললেন, আমাদের ছোটবেলায় এই জন্মদিন আর কেইবা মনে রাখতো। এসব চলও তখন ছিল না। আমি নিজেই তো জন্মদিন পালন করা শিখেছি আমার সন্তানদের জন্মদিন পালন করতে গিয়ে। ছেলেমেয়েরা বড় হবার পর আমার জন্মদিন পালন করতো।

    গত মঙ্গলবার ৬৪তম জন্মদিনে সলজ্জভাবে, বাধো বাধো স্বরে এসব কথা বললেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

    সেলিনা হোসেনকে আমরা চিনি বিনীত, শান্ত অথচ ঋজু ব্যক্তিত্বের অধিকারিণী হিসেবে। তাঁকে চিনি আলোহীন অধ্যায়ে কথাসাহিত্যের আলো ছড়িয়ে দেয়া অসামান্য লেখক হিসেবে। কিন্তু জন্মদিনে মানুষের উষ্ণ স্পর্শ যেন তার পরিচিত বৃত্তকে খানিকক্ষণের জন্য হলেও ভেঙে দিল।

    দৈনিক ইত্তেফাকের রিপোর্টিং বিভাগের কাজে সংবাদ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান, আলোচনা সভায় আমাদের যেতে হয়। এখানে রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ অনেকের বক্তৃতা থেকে নোট নিতে হয়। নোট নিতে গিয়ে সবার বলার ধরন রিপোর্টারদের নখদর্পণে চলে আসে। মঞ্চের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের বক্তৃতা থেকে নোট নিতে কখনৈ কোন সমস্যা হয় না। ব্যতিক্রম সেলিনা হোসেন। তিনি যখন মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলেন তখন নোট নেয়া যায় না। সবসময় রেকর্ড করা সম্ভব হয় না, তখন মহাবিপদে পড়তে হয়। এমন প্রায়ই করেছি, নোট নেয়া বন্ধ করে তার কথা শুনেছি। পরে স্মৃতি থেকে লিখে আপাকে ফোনে শুনিয়ে ঠিক করে নিয়েছি যে, এমন কথাই তিনি বলেছিলেন কিনা। সেলিনা হোসেনের কথা বলবার সময় শব্দ খুঁজে ফিরতে হয় না। কি বলতে চান আর কি বলবেন না—তা থেমে ভাববার অবকাশ নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। সেই তিনি জন্মদিন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে যেন শব্দ হাতড়ে মরছেন।

    এরপরের প্রশ্নটা ছিল—এই ৬৪ বছরের পথচলা, দেখে আসা এর প্রাপ্তি সম্পর্কে কখনো কি ভেবেছেন? অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, বলতে পারছি না। আবার চুপ। খানিক পরে স্বগতোক্তির মত বললেন, জীবনের অনেকটা সময় গেল। দু:খ, কষ্ট, আনন্দ, আমার লেখালেখি—সবমিলিয়ে আর সবার যেভাবে জীবন কাটে আমার জীবনও তেমনই কেটে গেল।

    কথা উঠলো তার ছাত্রজীবনের। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উঙ্কÄল, উত্তাল দিনগুলির কথা। এবার যেন দ্বিধা কাটিয়ে উঠলেন। বললেন, ছাত্রজীবনে এমন কিছু নেই যে করিনি। শুধু গান গাওয়া ছাড়া। অভিনয়, রাজনীতি, লেখালেখি, নৃত্য—সবকিছু। গিটার বাজাতাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মুন্নুজান হলের জিএস ছিলাম। কিন্তু সব ছেড়ে দিলাম লেখালেখি করবো বলে। অন্য অনেক কিছুই করতে পারতাম। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে লেখালেখি ছাড়া আর কিছুই করবো না। কারণ একটা জিনিস বুঝতে পেরেছিলাম পুরোপুরি মনোযোগ না দিলে কোন কাজেই সফল হওয়া যায় না। সেই যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসিনি। লেখার জগতে এসে যতটুকু আমার ক্ষমতা সেটাকে কাজে লাগাতে পরিশ্রম করেছি। হিজিবিজি কোন লেখা লিখিনি। আমার সাধ্যের শেষ বিন্দু ছুঁতে চেয়েছি। আমার লেখক জীবনকে এভাবে দেখতে পেরেছি বলে লেখার পরিশ্রমকে কখনো কষ্ট মনে হয়নি। এক হাতে আমার লেখালেখি আর এক হাতে পুরোজীবন। লেখার বিষয়ে কখনো আপোস করিনি।

    সেলিনা হোসেনের সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত লেখার মধ্যে ডুবে থাকা। একজন লেখকের সবচেয়ে জরুরি বিষয় কোনটি? সেলিনা হোসেন বললেন, সৃজনশীলতা। মেধাটাই মূল। অভিজ্ঞতা একটি বড় বিষয়। কিন্তু লেখকের জন্য জরুরি হচ্ছে উপলব্ধি। এটা ঠিক জীবনের কষ্ট, একজন লেখককে নাড়া দেয়। কিন্তু সেই কষ্টের বা গভীর বেদনার মুখোমুখি না হলে তিনি লেখক হতে পারবেন না এটা ঠিক না। অনেক সময় গভীর বেদনা, মৃত্যু এসব বিষয় লেখায় ভিন্ন দ্যোতনা নিয়ে আসে। যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনে সন্তান, স্ত্রী, পিতার মৃত্যু দেখেছেন। কিন্তু মৃত্যু নিয়ে তিনি লিখছেন, ‘মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান’। এটা লিখছেন তিনি কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর পর। আবার আমার মেয়ে ফারিয়া লারার মৃত্যু আমাকে কষ্ট দেয়। গভীর রাতে যখন জেগে থাকি বা একলা মুহূর্তে লারার কথা মনে আসে। কিন্তু আমি সচেতনভাবে এই অনুভূতির বিষয়টি আমার লেখার মধ্যে আনি না।

    ‘জীবনের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এলেন—তা নিয়ে কিছু বলবেন? দীর্ঘ জীবন দেখার কোন উপলব্ধি ?’ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখলেন। প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ৬৪ বছরের জীবনে এই উপলব্ধিটা হয়েছে—কোন মানুষের পক্ষেই বেঁচে থাকাটা অর্থপূর্ণ হয় না। নানা সংকট, অবিচার বঞ্চনা জীবন জুড়েই বিরাজ করে। এসব কিছু প্রতিটি ব্যক্তি-মানুষকে নানাভাবে খর্ব করে দেয়। একজন সৃজনশীল মানুষ তার কাজের মধ্যে একটু ভিন্নভাবে বেঁচে থাকতে পারেন সত্যি কিন্তু ব্যক্তিজীবনে সবটুকু পূর্ণতা তার আসে তা বলা যাবে না। রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, বঙ্গবন্ধু—যে কোন বড় মানুষের দিকে তাকালে এটা সত্য বলে মনে হয়। সবকিছু চিন্তা করে অবস্থানটা নির্ণয় হয়তো করা যেতে পারে কিন্তু ব্যক্তির পূর্ণতা অর্জন সম্ভব নয়। আমি ব্যক্তি হিসেবে এভাবে নানা কষ্টের, দু:খের অভিজ্ঞতায় এটা দেখেছি।

    খানিকক্ষণ চুপ করে থাকেন। আবার বলেন এতবড় জীবন পরিসরে অনেক ফাঁক-ফোকরাও তৈরি করেছে। লেখক হিসেবে, বইয়ের সংখ্যা আমার যাই হোক না কেন সব বই ভালো লিখেছি এ কথা তো একদমই বলতে পারবো না। এখানেও ব্যর্থতার কষ্ট আছে। হাসি-কান্না, দু:খ, আনন্দ-উল্লাস নিয়ে যে জীবনযাপন তার খানিকটুকু স্বস্তিময় করে রাখাই মানবজীবনের সত্য বলে মনে হয়।

    রাষ্ট্র ও জনগোষ্ঠীর দ্বন্দ্বকে বড় করে দেখতে চাই না। রাজনীতি এবং সংস্কৃতির অপূর্ণতাকে একইভাবে দেখতে চাই। তারপরও জানি, প্রত্যাশা একরকম, বাস্তবজীবন অন্যরকম। এ দুইয়ের সম্মিলন খুবই কঠিন। দীর্ঘ ৬৪ বছরের জীবনে এ সত্যকেই দেখেছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন