এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বুরা না মানো -- ফাগুন লেগেছে বনে বনে

    shrabani
    অন্যান্য | ১৭ মার্চ ২০১১ | ১২৯৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • shrabani | 117.239.15.28 | ১৩ মার্চ ২০১২ ১২:৫১469197
  • টেনের রেজাল্ট বেরোনোর পর থেকেই জয় এই শহরের হীরো হয়ে গেল, যে বাড়িতে যাও সেখানেই শুধু তাকে নিয়ে আলোচনা। একদিন দাদার কাছে এসেছিল ফিজিক্সের কী ডিফিকাল্টি বুঝে নিতে। রাস্তায় জিজ্ঞেস করতে দাদাই বাড়িতে আসতে বলেছিল। সে কী বিপত্তি, মা দাদা বৌদি সব এসে জড়ো হল। তার মধ্যে দাদার চিৎকার, "দ্যাখ, এভাবেই ওরকম রেজাল্ট হয়, জয় এসেছে পড়া বুঝে নিতে আর তোকে ডেকে ডেকেও বই নিয়ে বসানো যায়না।" মা সায় দেয়, "শুধু কী তুই, কারুর কাছেই তো পড়তে চায়না, কী যে হবে ওর! এই তো জয় সরাফ স্যরের কাছে অংক করছে, শহরের সব ভালো ভালো ছেলেমেয়েরা তার কাছে অংক করে ইঞ্জিনিয়ারিং মেডিক্যাল পায়। আর এই মেয়ে একদিন গিয়ে বলে, সরাফ স্যর নাক খোঁটে, ওর কাছে পড়বনা। বালাসুন্দরমের কাছে কেমিস্ট্রী পড়বেনা কেন না সে এম কে ইয়াম আর এন কে ইয়ান বলে, কে বি গুপ্তা নাকি বই মুখস্থ করায়। হাজারটা বায়নাক্কা এর, এমন মেয়ে দেখেছিস জয়?"
    চশমার সরু স্টাইলিশ ফ্রেমের আড়ালে ঝকঝকে উঙ্কÄল চোখে সাধারনত গম্ভীর মুখে কি চাপা হাসির আভাস? কিন্তু সে ছাই ভালো করে দেখার উপায় আছে এদের জ্বালায়! কী যে ভাবছে ওর সম্বন্ধে, ধরণী দ্বিধা হও ব্যাপার স্যাপার, ঝিমলি মানে মানে সরে পড়ে সেখান থেকে। ভাবছে কি, হয়ত ভাবছেই না, বয়ে গেছে তার ওর মত বিচ্ছিরি, লেখাপড়ায় ফাঁকিবাজ, কোনোকিছুতেই ভালো নয় মেয়ের কথা ভাবতে!

    বাইরে হোলি পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। উঠোনে চেয়ারে উঠে কিছুক্ষণ সাগুনদের হোলি খেলা দেখল। ওদের চৌবাচ্চাটায় পুরো রঙ গুলেছে, ঝপাঝপ লোকজনকে সে চৌবাচ্চায় ফেলছে। মহিলারা একটু দুরে আলাদা, ঘোমটা টানা, যদিও রঙ মেখে পুরো ভুত। বাচ্চারা অবশ্য ছেলে মেয়ে একসঙ্গেই খেলছে। উঠোনটা পুরো কাদা হয়ে গেছে, কয়েকটা বুড়ো গাছের নীচে বসে হুঁকো টানছে আর কীসব হা হা হি হি করছে। দু তিনটে বড় টিনের বালতিতে বোধহয় ভাংয়ের শরবত গোলা। ছেলেরা সব দু তিনটে গ্লাস ভরে ভরে একে ওকে দিচ্ছে, মহিলারা ঘোমটা আড়াল করে শরবতে চুমুক মারছে খিলখিল করে হাসতে হাসতে। কে একটা জলে কাদায় মাখামাখি হয়ে পাশের ড্রেনে গড়িয়ে পড়ল। দু তিনজন তাকে ঘিরে রইল কিন্তু তোলার চেষ্টা করছে না কেউই। মেয়ের দল রকম দেখে এ ওকে ঠেলতে ঠেলতে হেসে গড়িয়ে পড়ছে। ঝিমলির দেখে শুনে মনে হল ওটা সাগুন, সাগুন দেখা যাচ্ছে এদের পাড়ার একখানা হীরো বিশেষ!

    কারা যেন বেল বাজালো, ঝিমলি ভেতরে ঢুকে মাঝের বেডরুমে বসে রইল। বাইরের দলটা এবার জোরে জোরে ধাক্কা মারছে দরজায়। চুপচাপ বসে রইল, কেমন একটা ভয় করছে আবার বিচ্ছিরিও লাগছে। কী অদ্ভুত, এভাবে সামনে তালা লাগিয়ে ভেতরে বসে থাকা। পড়া তো যা হচ্ছে তা আর বলার মত নয়, এর চেয়ে বেরিয়ে হোলি খেললেই ভালো ছিল। এসব বড়দের কে বোঝাবে! এর চেয়ে কাল রাত থেকে অনুদের বাড়িতে চলে গেলে ভালো হত। ওদের বাড়ি সিভিল লাইন্সে, সামনেই বোট ক্লাব। ক্যাম্পাসের ভেতরে যেমন সরস্বতী মন্দির বাইরে তেমনিই বোট ক্লাব, সব শেষে শহরের তাবড়েরা সেখানে জুটে হোলি খেলে। অনুর সাথে একসাথে পড়তে প্রায়ই যায় ও, এবারে সেরকম বললে বাড়িতে কেউ আপত্তি করত না, অনু বলেওছিল অনেক। একটাই বিরক্তিকর ব্যাপার, রোহিত, অনুর দুবছরের বড় ভাই। এন ডি এ তে ফেল টেল মেরে এখন তাদের সাথে বোর্ড দিতে এসেছে। ফেলতু হলে কী হবে বহুত পপুলার ছেলে, শহরের সব বয়সের সব ছেলেরা ওর বন্ধু, তারা সবাই ওদের বাড়ি আসবে। রোহিত আবার অনু আর ঝিমলির ব্যাপারে ভীষণ কড়া, সবসময় নানাব্যাপারে টুকতে থাকে ওদের, এই করবিনা, ওর সঙ্গে কথা বলবিনা, ঐ ছেলেটা এরকম, ধারেকাছে যাবিনা ইত্যাদি নানা বাধা নিষেধ। অনুদের বাড়িতে গেলে হয়ত রোহিতই ওদের ছাদের ঘরে বন্ধ করে দিত পাছে ছেলেরা এসে ওদের সঙ্গে হোলি খেলতে চায়। নিজে অজস্র মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করে বেড়াবে কিন্তু এই দুই বোনের ধারেকাছে ছেলেদের ঘেঁসতে দেবেনা!

    এবছর হোলিটা কেমন বেকার হয়ে গেল। অন্যান্য বছর হোলি আসবে হোলি আসবে, কী উত্তেজনা, কী হয় কী হয় ভাব। আগের রাতে হোলি জ্বালানোর সময় থেকে শুরু হয় ধুকপুক। সরস্বতী মন্দিরে কত কান্ড, কত গল্পের শুরু, কোথাও আবার শেষও বটে। স্কুল খুললে ব্রেকে বা গেমস পিরিয়ডে ছোট মাঠে বসে নতুন খবরের আদানপ্রদান ও দীপা বন্দনা দিব্যার মত নানা বিশেষজ্ঞের মতামত। বন্দনা দীপা যা মতামত দেয় সেই শেষ কথা হয়, এমনকি অনুও মেনে নেয় সেসব। তাই তো অনুকে কোনোদিন জয়ের কথা বলা যায়নি। দীপা যাকে প্যাংলা প্যাথেটিক বলে তাকে অনু কিছুতেই মেনে নেবেনা।
    তবে মাঝে মাঝে মিলস অ্যান্ড বুনস আর পড়াশোনার ফাঁকে অনু যখন অন্য কোনো বিষয়ে মতামত দেয় (খুবই সামান্য সেসব ফাঁক) তা বেশ চমক লাগানোর মত। যেমন শালিনী থাপরের ব্যাপারটাতে অনু বলল, শালিনী বারো ক্লাসের জন্যে একেবারে আন্ডার প্রিপেয়ারড, শুধু মস্তি করে বেরিয়েছে দুবছর, অথচ ওর বাবা মা খুব কড়া। এখন উপায় না দেখে জয়কে ধরে পার হওয়ার চেষ্টা করছে, জয়ের ব্যাপারে আসলে ও সিরিয়াস নয়। দীপারাও একথা শুনে চট করে কিছু বলতে পারেনি সেদিন। অজান্তেই প্রিয় বন্ধুর মাথা থেকে কতটা বোঝা প্রায় নামিয়েছিল অনু বোধহয় কল্পনাও করতে পারবেনা!
    বেশ কয়েকদিন চলে হোলির পর এইসব নিয়ে। এবারে অবশ্য স্কুলে যাওয়াও নেই। ইলেভেন শুরু হতে হতে হোলির খবর সব বাসী হয়ে যাবে।

    ভেবেছিল বাড়িতে থাকলে না বেরোলেও লোকজন তো আসবেই, যদি জয়ও আসে বাবা মার সাথে। এটাই হয়ত শেষ বছর, তাই আসতেও পারে। একবার সাহস করে একটু আবীর লাগিয়ে দিতে পারবেনা? গতবছর সাদা কুর্তা গায়ে রামধনু র ঙের ওড়না জড়িয়ে হোলি খেলতে গিয়েছিল মন্দিরে। কে যেন মাথায় মুখে লাল আবীর মাখিয়েছিল খুব করে। পরে আয়নায় নিজেকে দেখে লাল আবীর আর মুছতেই ইচ্ছে করছিল না, সুইটি শালিনী থাপরের মত না হলেও নিন্দের নয় একেবারেই, বরং বেশ লাগছিল, কনে কনে।
    জয়কে আবীর দিতে যাওয়ার আগে নিজেই নিজেকে একটু লাল আবীর মাখিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবনায় ছিল। তাই হোলির বাজার করতে গিয়ে মাকে জোর করে লাল আবীর কিনিয়েছিল আর বাড়ি এসে আবীরের প্যাকেট থেকে অনেকটা আলাদা করে নিজের ঘরে লুকিয়ে রেখেছে।

    কত লোকে এসে বেল বাজিয়ে যাচ্ছে, প্রথম প্রথম পর্দার আড়াল থেকে ঘসা কাঁচের মধ্যে দিয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে বুঝতে চেষ্টা করছিল কারা, এখন সে চেষ্টাও ছেড়ে দিয়েছে। একবার ফোন করল অনুকে, বেজেই গেল, ওদের বাড়িতে কেউ ফোন তুলল না। দু:খে চোখে জল এসে গেল, অনুটাও বেরিয়েছে খেলতে অথচ কাল বলল এবারে ওকেও বেরোতে দেবেনা, শুধু রোহিত বাড়ির একমাত্র ছেলে বলে তার ছাড় দাদু ঠাকুমার বদান্যতায়। অনু খুব চেঁচামেচি করছিল এখানে সেই নিয়ে,শেষমেশ দ্যাখো, ঠিক বেরিয়েছে, বিশ্বাসঘাতক!
    সবার ওপরে রাগ হতে হতে খিদে পেয়ে গেল। ডাইনিং টেবিলে গুজিয়া মিষ্টি পায়েস রাখা আছে তার জন্যে, দোলের মিষ্টি, তাই ছুঁতেও ইচ্ছে হল না। ফ্রিজ খুলে দু পিস পাঁউরুটি বার করে তার মাঝখানে একটা সলামী রাখল, তার ওপরে একটা চীজের পাতা। খেতে খেতেই মনে হল গল্পের বই পড়বে, তাকে পড়ার জন্যে হোলি খেলতে দেওয়া হয়নি, তাই সে কিছুতেই পড়ার বই পড়বেনা, বায়োলজি পেপারের যা হয় হোক। খুঁজে পেতে একটাও পড়ার মত বই পেলনা বাড়িতে,পছন্দের বই সব সরানো আছে, ট্রাঙ্কে তুলে তালা দেওয়া, সামনের ঘরের দেওয়াল আলমারিটাতেও তালা। কাঁচের মধ্যে দিয়ে "ডেথ অন দ্য নাইল" তাকিয়ে আছে তার দিকে।
    দাদার ঘরে একখানা পেরী ম্যাসন ছিল, অগত্যা তাই নিয়ে এসে শুল বিছানায়। বিছানার মাথার দিকেও একটা ছোট জানালা আছে রাস্তার দিকের। এখন আর রাস্তা দেখতেও ইচ্ছে করছেনা।
    পেরী ম্যাসন এমনিতে ওর বিচ্ছিরি লাগে, রহস্য তেমন নেই, আইনের কচাকচি। তাও যদি ডেলার সঙ্গে একটু আছোঁয়া না ছোঁয়া প্রেম করত তাহলেও একটু মানুষের মত হত গল্প গুলো।

    একটু পড়তে না পড়তেই ঘুম ধরে গেল। দুরে কোথাও যেন টানা বেল বেজে যাচ্ছে, পাশের বাড়ি বোধহয়। জানালায় ঠকঠক জোরে, ধড়পড়িয়ে উঠে পড়ে। দরজার দিকে যেতে গিয়ে মনে পড়ে সদরে তালা, শব্দ থেমে গিয়ে সব চুপচাপ। চারধারের হোলির হট্টগোলে কিছুটা ভাটা পড়েছে মনে হয়, ঘড়ির দিকে তাকায়। উঠে পড়ার টেবিলে এসে বসল, মায়েদের ফেরার সময় হয়নি, আর কতক্ষণ খেলা হবে মন্দিরে!
    জানালার ধারে গেটের কাছে কতগুলো সাইকেল নড়াচড়ার ধাতব শব্দ, কারা যেন কথা বলছে। উঠে দাঁড়িয়ে ওপরের খোলা পাল্লায় চোখ রাখে, একটু আড়াল রেখে।
    "কিরে জয় কী করবি? তোর মেহবুবাকে তো কোথাও পাওয়া গেলনা। মন্দিরে নেই, রোহিতদের বাড়িতে নেই, এখন শেষমেশ ওদের বাড়িতে এলাম, সেখানেও নেই। জিন পরী নাকি, উবে গেছে? এবার কোথায় যাবি?"
    "চল, একবার শেষ বোট ক্লাবে দেখি। রোহিতের বোনকেও দেখলাম না। হয়ত দুজনে কোথাও লুকিয়ে আছে। কিন্তু রোহিতকে বলা যাবেনা, ও বোনেদের ব্যাপারে প্রচুর সেনসিটিভ।"
    উত্তর কী এল শোনা গেলনা, তবে কিছু একটা এল। আবার একটা অন্য গলা শোনা গেল,
    -"আরে না ইয়ার, তোর জন্যে জান হাজির। এসব ব্যাপারে ফেলে রাখতে নেই, মওকা দস্তুর সব হ্যায়, আজকেই বলে দে যা বলার। এরপরে তো বাইরে চলে যাওয়া, রিস্ক নিয়ে লাভ নেই।"

    ঝিমলি চুপ, ঝিমলি অসাড়। সাইকেল চলে যাওয়ার আওয়াজ আসে। "তাহলে বোট ক্লাব তো?" "হ্যাঁ, বোট ক্লাব"।
    ...........
    "....একি, সাইকেল নিয়ে রেডি? এখন আবার কোথায় বেরোবি? মন্দিরে সব শেষ, ওখানে কেউ নই। তোমার বন্ধুরা কেউ আসেনি, সবাই পড়ছে। একবছর হোলি না খেললে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবেনা।
    ....................
    ...একি, একি, দ্যাখো কান্ড মেয়ের! হুড়মুড় করে, পড়ে যাবি। দ্যাখো, কী জোরে সাইকেল চালালো, একটা কথা যদি শোনে, আজকের দিনে পরীক্ষার সময় পড়েটড়ে গেলে কেলেংকারি হবে। আচ্ছা ও হোলি খেলল কখন, দরজা তো আমরা এই খুললাম? ওর সারা মাথায় গালে লাল আবীর কে মাখালো?.........."
  • Debashis | 89.147.0.172 | ১৩ মার্চ ২০১২ ১৫:০৯469198
  • শ্রাবণী

    আপনার সব লেখাই অসাধারণ। কে যেন দেখলাম বুলবুলভাজায় লিখেছেন, আপনি আজকের যে কোনও প্রতিষ্ঠিত লেখকের কান কাটতে পারেন, তিনি একশ পারসেন্ট সত্যি।

    আর ঐ আন্টির ফল্গু নদীর বর্ণনা পড়ে খুব হাসলাম অফিসে বসেই :)।
  • PM | 195.229.224.10 | ১৩ মার্চ ২০১২ ১৬:০২469199
  • শ্রাবনী , অসাধারন। টুপি খুল্লাম। আপনার পুর্ন সময়ের লেখিকা হোয়া উচিৎ। রসায়নের রস থেকে বেড়িয়ে আসুন :)
  • Netai | 121.241.98.225 | ১৩ মার্চ ২০১২ ১৬:০৭469200
  • কি সুন্দর
  • Manish | 59.90.135.107 | ১৩ মার্চ ২০১২ ১৮:১৪469201
  • শ্রাবনী, অসাধারন।

  • siki | 122.177.11.185 | ১৩ মার্চ ২০১২ ২১:২১469202
  • আলাদা করে আর কিছু বল্লাম না। কলার নাচিয়ে গেলাম। :)
  • Nina | 12.149.39.84 | ১৩ মার্চ ২০১২ ২১:৩৪469203
  • শ্রাবণী---একেবারে স্তব্ধ/মুগ্‌ধ/
    ওরে তোর হাতে জাদু কি ছড়ি আছে--সত্যি ফুল টাইম লেখক হয়ে যা---অজস্র রেকোগনিশন/টাকা/ সারি সারি ফ্যান--সব তোর জন্য অপেক্ষা করে আছে----
    আর দেরি করিস না !!!!!!!
    উফ!
  • shrabani | 117.239.15.28 | ১৪ মার্চ ২০১২ ০৯:৪৬469204
  • হোলি এবার একটু দেরী করে এল...বুরা না মানো!:)
    সবাইকে ধন্যযোগ, আমার মা বলত যে যাকে ভালোবাসে তার সব ভালো দেখে....এর বেশী আমার আর কিছু বলার নেই!
    আবার পরের বছর, আরো হোলি কথা...
  • a | 65.204.229.11 | ১৪ মার্চ ২০১২ ১০:৩২469205
  • শ্রাবণীদি, ফুল টাইম লেখিকা হয়ো না। কাজের মাঝে মাঝে এরকম মণি মুক্তো ঝরে পড়ুক নিজের খেয়ালে।

    সিকি হে, গ্যাঁড়া এদ্দিন চুপ কেন? কয়েক পদ হয়ে যাক?
  • kumu | 122.160.159.184 | ১৪ মার্চ ২০১২ ১০:৫৬469207
  • শ্রাবণী এবং ওর সাথে আমরাও ঝিমলি হয়ে গেছি তো!এমন যাদুকরী,এমন মায়াময়,এবং ডিটেলের অনবদ্য কারুকাজ খচিত লেখা দেখা যায় না,সত্যি!
    অ শ্রাবণী গো,জয় যেন অন্য কাউকে প্রোপোজ না করে!!
  • siki | 155.136.80.36 | ১৪ মার্চ ২০১২ ১১:২৩469208
  • গ্যাঁড়ার গপ্পো তো শেষ!

    আর এই মণিমুক্তোর টইতে অমন সব অর্বাচীনের নাম না-ই বা নিলে :-)
  • de | 203.197.30.4 | ১৪ মার্চ ২০১২ ১৬:৫৮469209
  • আম্মো বলি, শ্রাবণী ফুলটাইমের লেখিকা হওয়া উচিত -- এতো অসাধারণ লেখে!
    আমি শ্রাবনীর লেখার মৃত শক্ত পাখা!

    কিন্তু আঠেরো বছর এগোয় না ক্যান? অপেক্ষায় আছি যে!
  • Nina | 12.149.39.84 | ১৪ মার্চ ২০১২ ১৮:৫৬469210
  • মৃত শক্ত পাখা :-)))
    দেবু বেড়ে বল্লি তো :-))))))
    আম্মো তাই!
  • shrabani | 59.94.101.107 | ১৪ মার্চ ২০১২ ১৯:০৪469211
  • দে, নিনাদি..:))
    আঠের বছর পুন্ন হবে এই সামনের সতেরোতে...মনে হল, গত বছর আমদের অর্থাৎ সতেরোতম একজিকিউটিভ ব্যাচের সতেরো বছর পুন্ন হয়েছিল সতেরোই মার্চ....সবাই মিলে মানে যারা আশেপাশে আছি তারা একত্তর হয়েছিলুম...
  • শ্রাবণী | 134.124.244.107 | ২০ মার্চ ২০১৩ ১৬:১৭469212
  • প্রথম বর্ষায় একলা থাকার বৃষ্টি ভেজা অনুভব, প্রথম পুজোয় বাড়ি না যাওয়ার বিষাদ, বন্ধুত্বের উত্তাপে ভরে থাকা প্রথম শীতের মন খারাপের সন্ধ্যা, এসব পার করে পৌঁছলাম প্রথম বসন্তে........এদেশে দেখি মাঘেই ফাগুন আসে, পৌষ সংক্রান্তির পরদিন থেকে একটু একটু করে শীত চলে যায়, সকাল বিকেল বসন্তবায়, দুপুরে গরম, চড়া লাগে রোদের তাপ................
    সরস্বতী পুজো এল, নবাগতদের হাত বাড়িয়ে ডেকে নেবে এমন উদার লোকজন বিশেষ দেখা যায়না টাউনশিপের দূর্গাপূজা কমিটির দ্বারা পরিচালিত বাঙালীদের জাঁকজমকের পুজোর আসরে। এর ওর মুখে যখন শুনি বছরের পুজোর খাওয়াদাওয়ার মেনু, খিচুড়ি বেগুনি টমেটোর চাটনির গল্প, তখন মনে হয়, বিনা আমন্ত্রনেই চলে যাই। কী আর হবে, পুজো তো আসলে সবার। তবু প্রথমবার একজনও কেউ মুখে না বললে, না ডাকলে যেতে কেমন পা ওঠেনা............
    সঙ্গীনি উড়িষ্যার, তাদের ওখানেও বিদ্যাদেবীর পুজো হয় ধুমধাম করে....বাঙালীদের পুজোতে যেতে অনিচ্ছে তার নেই, কিন্তু আমার সংকোচে সেও দ্বিধাবিহ্ব্ল.........শেষমেশ ঠিক করি নিজেদের ছোট্ট ঘরে সরস্বতী পুজো করব, বইয়ের পুজো। একটি ছোট চৌকিতে তার ভগবান রাখা আছে, সকাল বিকেল ধুপ জল দেয়....সেখানেই হবে পুজো। মন্ত্রের জন্যে ভাবনা নেই, আমি বলে কবে সেই আধো আধো বুলির বয়স থেকে “কুচযুগ শোভিত মুক্তা হারে” আওড়াতে পারি, এ পুজোয় আবার বেশী মন্ত্র লাগে নাকি!
    আসল তো হল খিচুড়ি, বেগুনি আর চাটনি..............দলের ছেলেদের ডাকা হল, সবাই রাজি রাজি.....মিটিং হয়ে শুরু হয়ে গেল তোড়জোড়......রান্না করব আমি, পুজোর দিকে থাকবে আমার ভুবনেশ্বরী বন্ধু, অন্যান্য ছেলে বন্ধুরা থাকবে যোগাড়ে..........
    পুজো যা হবে হবে, আলোচনা পরিকল্পনা (মূলত খাবার সংক্রান্ত) এসবে ভরে রইল দিন রাত। নতুনদের দলে দুজন বিবাহিত সংসারী সদস্যও ছিল....তারা বাকীদের মত হস্টেলে না থেকে পরিবার নিয়ে থাকত কোয়ার্টারে। সবচেয়ে জুনিয়র বলে কোয়ার্টার পেয়েছিল অনেক দুরে, সেই শেষ সীমানায়। যেখানে সচরাচর কেউ যেতে চায়না, বাবুদের বাস নয়, আশেপাশের বাসিন্দারা সবাই নীচের দিকের কর্মচারী। সেখানে সামনে টাউনশিপের পাঁচিল দেখা যায় আর তার গায়ে লেগে থাকা আলো আঁধারির ইউক্যালিপ্টাসের বন, দুরে উঁচু নীচু টিলা আর লালমাটির রাস্তা.............আমাদের আবার সেখানে যেতে বড় ভালো লাগে, একটু একটেরে, যাকে বলে খিড়কি দুয়ারে, পেছনের গেটের কাছে.....সেখান দিয়ে লোকজনের যাতায়াত কম, বন্ধ থাকে দুয়ার তাই সর্বদা। গেটের লাগোয়া সুরক্ষাকর্মীদের কুটির, চারপাশে অনাদরের গাছপালা, ব্যস আর কিছু নেই......
    প্ল্যান্ট থেকে ফিরে কফি হাউসে চা পর্ব শেষে রোজ বসন্তের বিকেলে ঝরা পতা মাড়িয়ে পথ চলা........গন্তব্য ওই দু বাড়ির যে কোনো একটি, উদ্দেশ্য বসন্ত পঞ্চমীর প্রস্তুতি.......তবে বেশিরভাগ সময়ই আগের দিনের লিস্ট হয়েছে যে কাগজে তা খুঁজে পাওয়া যেতনা, আবার নতুন করে তালিকা তৈরি হত.......রোজই ভেঙ্গে চুরে আবার গড়া হত রোজের প্ল্যান...........
    বাড়িতেও ফোনে এনিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সদ্য বিদ্যের পাট চুকিয়ে সাবালক হয়েছি সব তবু মায়েদের গলায় আনাড়ীদের হাতে বিদ্যাদেবীর পুজোতে ত্রুটি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। তেমনটা হলে ছেলেমেয়েগুলোর পাপ লাগবে না!
    শাঁকালু কুল ফলে দিতে যেন ভুল না হয়.......অন্জলি দেওয়ার আগে ভুলে যেন চায়ে চুমুক দিয়ে না ফেলি.....সবশেষে “ঠাকুর দেবতাকে নিয়ে ছেলেখেলা করতে নেই.....যেটুকু করবে ভালো করে শ্রদ্ধার সঙ্গে করবে”.......আমি শুধু খিচুড়ি আর বেগুনি বানাবার প্রক্রিয়া ভালো করে জেনে নিয়ে খালাস, বাকি কথায় অত কান দিই না, ও আমার ডিপার্টমেন্ট নয় !

    পুজোর দুদিন আগে এল পুজোর নেমন্তন্ন, না বাঙালী পুজো কমিটি থেকে নয়............আমাদের পাশে টেকনিশিয়ান ট্রেনিদের হোস্টেল ছিল, একই ক্যাম্পাসে....সেখানে তখন উড়িষ্যার এক নতুন প্রজেক্টের জন্য একদল আই টি আই পাশ করা ছেলেদের ট্রেনিং চলছিল, ওদের বলা হত আর্টিসান ট্রেনি বা এ টি।এই ছেলেরা সব উড়িয়া ছিল, তারা তাদের হোস্টেলে রীতিমত প্যান্ডেল বেঁধে মূর্তি এনে পুজো করছে। আমরাও তখন সদ্য ট্রেনিং শেষ করেছি, তাই এবং সম্ভবত দলে উড়িষ্যার মেয়ে থাকার কারণে ওরা আমাদের নেমন্তন্ন করে গেল। আমরা বলতে পারিনা যে আমরাও ঘরে পুজো করছি, তাহলে ওদেরকে ডাকতে হয়। এদিকে আমাদের আয়োজন খুব অল্প, ওরা আবার সব মিলে ষাটের ওপরে। শেষে তাই কারোকেই জানানো হয়না আমাদের পুজোর কথা.....
    মেয়েরা থাকতাম গেস্টহাউসে আর ছেলেরা ফিল্ড হোস্টেলে........গেস্ট হাউসে দু কামরার ফ্ল্যাট ছিল দুজনের আলাদা আলাদা.....একটা করে ঘর দুজনেরই খালি থাকত....একজনের খালি ঘরে হল পুজো ও অন্য জনের খালি ঘরে মাটিতে চাদর ভাঁজ করে আসন পেতে খাওয়া দাওয়া। বারান্দার খোলা দরজা দিয়ে পাশের এ টি হোস্টেলের পুজোর বড় বড় সাউন্ডবক্সে গানের আওয়াজ এসে পাড়ার মাইকের অভাব মিটিয়ে দিল, পুজো পুজো ভাব ছড়িয়ে গেল কেজো ক্যাম্পাসের চারপাশে........ফুলকপি মটরশুঁটি আর ঘি ছড়ানো খিচুড়ির ম ম সুগন্ধে ভরে উঠল পাড়া আর খেয়ে বিসি বেলে বাথ ওয়ালারা সব মুগ্ধ, এমনটাও হয়...এইসব মামুলি উপকরণ দিয়ে!

    ট্রেনিং সেন্টার, হোস্টেল, গেস্টহাউস, কফি হাউস এইসব মিলে ক্যাম্পাস চত্বর।টাউনশিপে ঢোকার মুখে, ঘরবাড়ি কোয়ার্টার মন্দির এসব থেকে অনেকটা আলাদা, তাই শান্ত পরিবেশ। এদিকে গাছপালা প্রচুর......সামনে দুধারে অমলতাস সাজানো রাস্তা, নাম অমলতাস এভিনিউ। হলুদ লাল কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়া ফুল বিছানো পথ, যেদিকে তাকাই শুধু হলুদ ঝরাপাতা, হলুদ ফুল........সেই হলুদ বন দিয়ে কাঁচা হলুদ রোদ গায়ে মেখে, সবুজ পাড় হলুদ জমির সরস্বতী পুজো স্পেশ্যাল শাড়ি পরে আমরা দুজন হাঁটি, পাশের পুজো, দুরের পুজো....কোথাও আন্তরিক জন ডেকে নেয়, হাতে দেয় পুজোর প্রসাদ, প্লাস্টিকের কাপে টকমিষ্টি নারকেলকুচি দইয়ের জল......কোথাও বা অচেনা সব, মানুষ চিনি না চিনি, বেদীতে বসানো ওই শ্বেতবরণীকে তো চিনি, বীণারঞ্জিত পুস্তক হস্তে........নিজেরাই যাই এগিয়ে, তখন চেনা হয়ে যায়, জানা যায় অজানাকে ..........হাতে আসে কুল শাঁকালু বাতাসা, আর আগামী বছরের আগাম নিমন্ত্রন!

    সখী আজি এ বসন্তে..............এ সময় তো ছুটি থাকত এই গত বছর অবধি, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে? অলস দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর গল্পের বই হাতে, রোদটা মিঠে লাগত, হাওয়াতে যেন কেমন মদির গন্ধ, ফুলের বোধহয়....রেডিওতে গান, একটার পর একটা, বসন্তের......অলি বার বার ফিরে আসে.......আমাকে আবার কেউ বসন্তের গান বলতে বললেই প্রথম মুখে আসে, “রোদনভরা এ বসন্ত” আর ওই “সখীর হৃদয় কুসুম কোমল”.......শুনলে বোনেরা খ্যা খ্যা করে হাসত আর বলত এই এলেন আমাদের বসন্তে বিরহিনী রাধা.......
    এবছর আর গান শোনা হয়না, সেও প্রথম, অনেকদিনের পরে যেন, ছুটি বলে কিছু নেই........ইস, চাকরি চাকরি করে মাথা খারাপ করার আগে এরকমটা কেন ভাবিনি, আর কোনদিন টানা ছুটি পাওয়ার আনন্দ বলে কিছু থাকবেনা জীবনে.....
    সংক্রান্তির পরের দিন থেকে যেমন বসন্ত আবার দোলের পরদিন থেকেই নাকি এখানে পাহাড়ে জঙ্গলে হুট করে গরম এসে যাবে। গরম তারপর বেড়ে বেড়ে এমন হবে যে সন্ধ্যে রাত্তির নামলেও শীতল হয়না চারধার, এমনি প্রখর দাবদাহ...তারপর আসবে সেই নদিন, যাকে এখানের ভাষায় বলে নওতপা.......অসহ্য গরমের,.জ্বলেপুড়ে যাওয়ার দিন......দাঁতে দাঁত চেপে এই নদিন কাটিয়ে দিলে, দশম দিনে নেমে আসবে শান্তির বারি, বৃষ্টিধারা.............যতদিন থেকেছি, প্রকৃতির এ নিয়মের অন্যথা হতে দেখিনি।

    পাহাড় জঙ্গলে বসন্ত যেমন সুন্দর তেমনি অপরূপ লাগে বর্ষাকে...তবে তার কথা এখন থাক......
    বিকেল অবধি দৈনন্দিনের চাকায় বাঁধা, কিন্তু একবার বিকেল হলে আর আমাদের পায় কে.............তখন থেকে রাত্তির অবধি বাইরে বাইরেই কাটে.....মন লাগেনা ঘরে.....কখনো রাতে খাওয়াদাওযার পরও সবাই এসে জুটত গেস্ট হাউসের সামনের ছোট্ট পার্কটায়........কেউ পাঁচিলের ওপর, কেউ ঘাসে, কেউ আবার রাস্তার পিচে বসে, আগড়ম বাগড়ম কত গল্প তার মাথামুন্ডু থাকত না..........পাশ দিয়ে কে চলে গেল, তারা কী বলে গেল, কে জানে..........বসন্ত দিনে বেহিসেবী সেসব সময়ের আজ আর ফিরে দেখলেও খোঁজ মেলেনা.......
  • শ্রাবণী | 134.124.244.107 | ২০ মার্চ ২০১৩ ১৬:১৮469213
  • হোলির আগে থেকেই এখানে ওখানে এমুখে ওমুখে নানা সাবধানবাণী....সেদিন ভালো করে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকবে, ওই চত্বরে একলা মেয়ে দুটি, ছেলেরা সব নানা নেশা করে ওদিন, মদ ভাং কোনো কিছু বাদ যায়না। হোস্টেলে শুধু যে আমাদের দলের ছেলেরা থাকে তাতো নয়, অন্যান্য বছরের, ব্যাচের অবিবাহিত ছেলেরাও থাকে, নাম তাই ফিল্ড হোস্টেল, ব্যাচেলরদের আস্তানা........বিয়ের আগে (বাবা মা কে নিয়ে থাকলে অবশ্য আলাদা কথা) এরা কোয়ার্টার পায়না........

    আগের দিন অর্থাৎ ছোটি হোলির দিন অফিসে, লাঞ্চের পরে আর কাউকে দেখতে পাইনা, ফাঁকা অফিস.........একজন একফাঁকে এসে বলে গেল....দরজা বন্ধ করে বসুন, দারুন হোলি খেলা হচ্ছে, বাবুরা সব এদিক ওদিকে লুকিয়ে পড়েছে, মজদুর টেকনিশিয়ানদের দল সবাইকে খুঁজে খুঁজে রং লাগাচ্ছে, কোথাও কোনো কাজ হচ্ছে না, ছুটির মেজাজ।
    একা মেয়ে, ভাবি বাড়ি চলে যাই কিন্তু কিভাবে যাব জানিনা, একটি মাত্র বাস চলে, সেও সেই বিকেল পৌনে ছটায়, নিজের গাড়ী নেই। এমনিতে রোজ বিকেলে লিফট নিয়ে ফিরি, বেশিরভাগ দিন যে লিফট দেয় সেই বসও অনুপস্থিত, ছুটিতে বাড়ি গেছে.........শুভানুধ্যায়ী পিওন ছেলেটি বারন করল,
    “এখন বেরোবেন না ম্যাডাম, রাস্তায় কোনো গাড়ী চলছে না...আর “সব পিয়া হুয়া হ্যায়, মস্ত”।
    সেই শুনে আরো আতঙ্ক, কেউ একটা আগে থেকে সাবধান করতে পারল না, কলীগরা। জানে একা একটা মেয়ে, নতুন, প্ল্যান্টের ভেতরে....বলতে পারেনি যে লাঞ্চের পরে আর এসোনা, আজকের দিনে এখানে এসব হয়.........................

    দরজা বন্ধ করে বসে আছি কতক্ষণ কে জানে? ভুবনেশ্বরীকে ফোন করি, তার এত সমস্যা নেই, সে পাশের ছোট ক্যাপটিভ প্ল্যান্টে, তায় আবার ভেতরে নয়, বাইরের বিল্ডিংয়ে। তার ডিপার্টমেন্ট ছোট, বসের জন্য অফিসের গাড়ী থাকে, সেই গাড়ী দরকারে সেও ব্যবহার করতে পারে...........পরামর্শ দেয় আপাতত দরজা বন্ধ করে বসে থাকতে.......ছুটির সময় নিশ্চয়ই অন্য লোকজন ফিরবে অফিসে, তখন দেখেশুনে বেরোলেই হবে................
    চারিদিক নিঃশব্দ, বন্ধ দরজা দিয়ে মাঝে মাঝে কানে ভেসে আসে উল্লাস....হোলি হ্যায়। তবে তা আমার কল্পনাও হতে পারে। সামনে ড্রইং খোলা পড়ে থাকে, একটা লাইনও মাথায় ঢোকেনা, অন্যদিন এতক্ষণে কত ফোন এসে যায়, এই সমস্যা সেই সমস্যা...এটা কর ওটা কর....আজ ফোন নিশ্চুপ।
    চা নিয়ে ক্যান্টিনের ছেলেটারও দেখা নেই। কেটে যায় সময় এমনি করে, শেষে মনে হয় বোধহয় কেটেই গেল ফাঁড়া। কান খাড়া করে থাকি লোকজনের ফেরার আওয়াজ পাই কিনা, ছুটির সময় হল, এবার তো বেরোতে হবে সবাইকে....
    আওয়াজ পেলাম, তবে লোকজনের আসার নয়.....দুমদাম দরজায় ধাক্কা আর তার সাথে কাকুতিমিনতি।
    “ম্যাডাম, দরজা খুলুন, আমরা আপনার অধম কর্মচারী সব, আমাদের ওপর দয়া করুন”
    কাঠের দরজার পোক্ত হওয়া নিয়ে সন্দেহ ছিল না তবে ওদিকের জনতার ভিড় ঠিক কী মাপের তা নিয়ে ছিল..........শেষকালে কিছু না পেয়ে এক হাতে একটা মোটা বাঁধানো সিমেন্সের জার্মান ভলিউম (ইংরেজীর থেকে জার্মানটাই কেন বেশী শক্তপোক্ত মনে হয়েছিল কে জানে!) আর অন্য হাতে গরম সোল্ডারিং আয়রণ নিয়ে দরজা খুলে দিলাম (স্বপনকুমার মোডে নয়, ওর মধ্যেই বইটাকে কায়দা করে চেপে ধরে)।

    চার পাঁচ জনের ছোট দল, সব আমারই ডিপার্টমেন্টের কর্মচারী, আমার নিজের একজনও আছে.......সবার আগে টারবাইনের টেকনিশিয়ান জৈন, সেই বোধহয় দলের লিডার, অবশ্য চট করে কাউকে চেনা যাচ্ছেনা, গোলাপী সবুজ রঙের বিচিত্র জীব সব..........হাতে গোলাপী আবিরের প্যাকেট...........সকলে ঠিক কিসে চুর বলতে পারব না, তবে বিনয়ে নুয়ে নুয়ে পড়ছে.....মানে রং বাদ দিলে এরকম বিনয় যদি কাজের সময় হত তাহলে আমি নিজেই ওই নেশা গুলো গিলিয়ে দিতাম ওদের রোজ!
    হানাদারদের অবস্থা দেখে হাতের অস্ত্র শস্ত্র টেবিলে রাখি, তারপরে বলি লাইন করে দাঁড়াতে......গোলমাল না করে এক জন এক জন করে এসে আমার কপালে আবির দিয়ে যাবে সবাই। আবির টাবির দিয়ে কেঁদে কেটে তারা বিদেয় হলে, এদিক ওদিক থেকে আমার সহকর্মীরা বেরিয়ে পড়ল, দাঁত বার করে.........তারা সব নাকি আশেপাশেই লুকিয়ে ছিল, ওরা বাড়াবাড়ি করলে বা অসভ্যতা কিছু করলে নাকি এরা বেরিয়ে এসে আমাকে বাঁচাত!
    তারপরে অবশ্য গরম সোল্ডারিং আয়রণ নিয়ে সবাই মিলে একপ্রস্থ হা হা হী হী করল.......ছুটির সময় হয়ে যেতে চুহারা সবাই বিল (চুহা – ইঁদুর, বিল – গর্ত ) থেকে বেরিয়ে এসে সিংহের মত ভাব করছে দেখে গা পিত্তি জ্বলে গেলেও কিছু বললাম না, কদিনের আর চেনা এরা, তার ওপরে সবাই সিনিয়র।
    একজন দৌড়ে এসে জানালো “হোলি টাইটেল” বেরিয়ে গেছে নোটিসবোর্ডে........এটাও আমার কাছে নতুন, জানলাম এদিন নাকি সমস্ত কর্মচারীরা মিলে একজিকিউটিভদের প্রত্যেকের নামের পাশে কিছু না কিছু লেখে মজা করে, হিন্দিতে। সুন্দর করে স্কেচ পেন দিয়ে ফুল, হোলির রং এসব এঁকে পোস্টারের মত বানায়, সেটা বোর্ডে লাগায়, এমনকি বড় কর্তাদেরও ছাড়েনা। ওপরে লেখা থাকে “বুরা না মানো হোলি হ্যায়”..........আমিও সবার পেছন পেছন গেলাম লিফটের উল্টোদিকে যেখানে নোটিসবোর্ড লাগানো আছে সেখানে, মনে মনে নার্ভাস, কে জানে কী উল্টোপাল্টা লিখে রেখেছে, আমার নামের পাশে! একা মেয়ে...খুব খারাপ কিছু লিখবেনা তো? পোস্টার দেখে একেবারে হতাশ, লিস্টে সবাই আছে, শুধু আমি নেই...................জানা গেল ডিপার্টমেন্ট হেড আগে থেকে বারন করে দিয়েছিলেন, মেয়েটির নামে যেন কিছু লেখা না হয়, মজা করেও নয়.........................ইস!

    এতলোকে বারন করে রাখলেও আমরা লোকের কথায় কান দিই না, কী করি, রঙ খেলতে যে খুব ভালোলাগে। বন্ধুরা আমাদের উত্সাহ দেখে ঠিক করল, তারা সঙ্গে থাকবে, মেয়ে দুজনকে ঘিরে আগলে রাখবে।
    খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল, টাউনশিপের ক্লাবে জড়ো হয়ে রঙ খেলার চল এখানে। ক্লাবে ভাঙ রঙ ছাড়া গুজিয়া ও ভাজিয়ার ব্যবস্থা থাকে একজিকিউটিভ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে, থাকে ঠান্ডাই।
    ঠিক হোলো আমরাও ক্লাবে যাব....দুপুরে আবার ওখান থেকে লাঞ্চের প্যাকেটও বিলি করা হয়.......ভালো ব্যবস্থা কারণ ছেলেদের মেস বন্ধ, রাঁধুনীরা সব ছুটি নিয়েছে, হোলি বলে সকালে কফি হাউসও বন্ধ থাকবে....................
    কমলা কুর্তা, হলুদ সালোয়ার আর সবুজ ওড়না...ভুবনেশ্বরী পরেছে সাদা......বেরিয়ে ফিল্ড হোস্টেলে গেলাম ছেলেগুলোকে ডাকতে......করিডর দেওয়াল সব গোলাপী সবুজ লাল , দেখেই বোঝা যায় প্রচুর রঙ খেলা হয়েছে। তুলনায় আমাদের দলের চার মক্কেল (বাকিরা ডিউটিতে) পরিস্কার, নতুন বলে বড়রা তাদের এবারে খানিকটা রেহাই দিয়েছে, আশার কথা.............
    তবে আমরা যখন বেরিয়েছি তখন চারদিক ফাঁকা, সবাই নিজের নিজের এলাকায় রঙ খেলা শেষে ক্লাবে চলে গেছে............আমাদের হাতে শুধু আবিরের প্যাকেট, নিজেদের মধ্যেই অল্প রঙ লাগিয়ে নিয়েছি, এর ওর মাথায় কপালে........আমার একটু মন খারাপ, এতদিন পরে বাংলার বাইরে এসে আবার খুব হোলি খেলব ভেবেছিলাম, সেই স্কুলের দিনগুলোর মত...........সেরকম কিছুই হল না.........ক্লাবে গিয়েও একই অবস্থা...... আমরা কজন নিজেরাই রঙের বালতি থেকে রঙ নিয়ে একটু আধটু ছড়ালাম, কেউ এলনা আমাদের রঙ লাগাতে। চেনা লোক দেখা হলে ওই বড়জোর আবিরের টিপ একটা, মুখে “হ্যাপী হোলি”, ব্যস! সঙ্গীরা বলল, দলে নতুন মেয়েরা আছে বলে তাদের সবাই ছেড়ে দিচ্ছে....এখন আমাদের সব সম্মান দেখিয়ে রং না দিলে আমরাই বা কী করে দিই..............

    রঙ তেমন ভাবে না খেলার দুঃখ ভুলতে ভরপেট গুজিয়া ভাজিয়া ও ঠান্ডাই খাই সকলে মিলে....অবশ্য সেখানেও হতাশা, সাধারণের জন্যে যে ঠান্ডাই তাতে নাকি ভাঙ নেই বললেই হয়, স্পেশ্যাল ঠান্ডাই আছে ভেতরে, স্পেশ্যাল লোকেদের জন্যে। তার হদিশ ছেলেরা অনেক চেষ্টা করেও বার করতে পারল না.................
    বেরিয়ে আসছি সামনে দেখি আমার ডিপার্টমেন্টের দল, আমার থেকে একটু সিনিয়র, আগের দিন প্ল্যান্টে ছোটি হোলির রঙের ভয়ে যারা লুকিয়ে পড়েছিল সেইসব জনতা। এখন আবার হাতে তাদের রঙের বালতি.....একটু দুরে দাঁড়িয়ে আমার বন্ধুদের ডেকে পাঠায়...কিরে তোরা সব এত সাফ সুতরা কেন, হোলি খেলছিস না?
    কী কথা হল, এবার সবাই মিলে আমাদের মেয়েদের দিকে এগিয়ে এল, “একটু রঙ দিতে পারি তোমাদের”?
    খুব নিমরাজী ভাবে ঘাড় হেলিয়ে সম্মতি জানাতে না জানাতে বালতি উপুড় আমাদের ওপরে। ওদিকে চতুর্দিকে সকাল থেকে মাইকে বেজেই যাচ্ছে.............আজ না ছোড়েঙ্গে বস হমজোলি........ চাহে ভিগে তেরি চুনরিয়া........
    ভিজে গায়ে আমরা হেঁটে হেঁটে যাই, টাউনশিপের শেষে অধিরাজ ভাইয়ার বাড়ি। সেখানেও তখন হোলি রঙে মাতোয়ারা সারা মহল্লা, একজিকিউটিভ ক্লাবের হোলির আভিজাত্য নেই বটে সেখানে, কিন্তু সহজ সরল আন্তরিকতা ভরা প্রাণে, সে হোলির রঙ অনেক বেশী গাঢ়। এবাড়ি ওবাড়ি থেকে থালায় ভরে ভরে মিষ্টি আসছে, মিষ্টি বলতে গুজিয়া (ক্ষীরের পুর, ময়দার ভাজা পিঠে), এছাড়া আছে ঘরে বানানো বেসনের লাড্ডু, কচৌরী, নমকিন ইত্যাদি। চড়া রোদে উঠোনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন আবির মাখানো চলে, বাচ্চারা পিচকারী তে রং ভরে নিয়ে আসে.....খুশীর হোলি।
    আমরা বাইরে ঘাসে ইউক্যালিপ্টাসের ছায়ায় বসি, ততক্ষনে গায়েই শুকিয়ে গেছে সকলের ভেজা কাপড়, রোদে গরমে.......গ্রীষ্ম দুয়ারে কড়া নাড়ে, এবার বিদায় নেবে বসন্ত!
    কেউ একটা গান ধরে, প্রথমে বোধহয় ভেঙ্কটেশ, তারপরে আমরা সবাই........কোথা থেকে একটা ঢোলক এসে যায়, অধিরাজ ভাইয়া আর ভাবী দুজনে দুদিক থেকে বোল তোলে, আর কী একটা গান গায় ওদের ছত্তিশগড়ের ভাষায়, লোকগীতির মত। গলাটা খুব সরু, সুরও নেই তেমন, তাতেই ভাইয়ার মুগ্ধ দৃষ্টি সরে না.......বারবার ঘুরেফিরে গাইতে বলে, “বীণা গাও, ওই জায়গাটা আরেকবার”......আর আমাদের দিকে তাকিয়ে বলে, “ছোট মেয়েটা হবার পর থেকে থাইরয়েডে গলাটা একটু খারাপ হয়ে গেছে, নাহলে বিয়ের সময় বীণার গান শুনে আমি দীওয়ানা হয়ে গেসলাম”।
    আমরাও উত্সাহ দিয়ে ভাবীকে আরও গাইতে বলি, ভাবী লজ্জা পায়, “না রে মিথ্যে কথা বলছে, আমি গাইতে পারিনা”। আমরা শুনিনা, জোর করতেই থাকি...রঙ যেন মোর মর্মে লাগে!
    ক্লাবের লাঞ্চের প্যাকেট নিতে আর কে যায়, ভাবীর হাতের খিচুড়ি খাই সবাই ভাগ করে, সাদা মাটা চাল ডাল সেদ্ধ, তাতে অনেকটা ঘি আর ঝাল ঝাল লঙ্কার আচার, মিষ্টি লেবুর আচার।

    রাতে ফোনে কথা হয় , আজ ট্রেনিং সেন্টারের পাশের এস টি ডি বুথ ফাঁকা, চলার পথে, বুথের ঘরের মেঝেতে গোলাপ রঙিন চিহ্ন, বাইরের দেওয়ালে রঙ ছড়ানো, লাইন পাওয়া যায় খুব সহজে......
    -“তুমি রঙ খেলেছ আজ?”
    -“না, তোমার কথা ভেবে এবারে বাদ দিলাম।”
    -“মানে? তোমাকে তোমার বন্ধুরা ছেড়ে দিল?”
    -“হ্যাঁ, ওদের আগেই বলে দিয়েছিলাম, শরীর ভালো নেই...ঘরে বসে ছিলাম...তারপর জানে তোমাকে মিস করছি।”
    এদিকে গলার কাছে কী একটা আটকে আছে, ব্যথা ব্যথা করে....
    ওদিকে ফোনে গলাটা পাল্টে যায়,
    -“এর কথা বিশ্বাস করিসনা তুই, তোর মত ভালো মেয়েটাকে বুদ্ধু বানাচ্ছে, জাহান্নমে যাবে.....এর মাথার চুলগুলো এখানো গোলাপী, শ্যাম্পু তেও যায় নি.....হাত পায়েরও একই অবস্থা। ঠান্ডাই খেয়ে ঘুমিয়ে এই উঠেছে।”
    আবার আগের গলা,
    -“আরে না, চেতন ঝুটমুট বলছে তোমাকে রাগাতে...ওই রমেশের বউ ছাড়ল না...তোমার নাম করে একটু আবির লাগিয়ে দিল...বেশী রঙ খেলিনি। গা মাথা বিলকুল সাফ। ঠান্ডাইয়ে ভাঙ ছিলনা, তাও খাইনি, ভালো লাগছিলনা। ”
    -“খেললেই বা কী। আমিও খেলেছি......মাথা থেকে পা পর্যন্ত রঙে পুরো ভিজিয়ে দিয়েছে আমাকে...এখনো রঙ যায়নি, শ্যাম্পু সাবান ঘষেও। ”
    গলায় কি উষ্মা? বোঝা যায়?
    -“সেকী, কে? কারা রঙ দিল?”
    -“তুমি আগে বল, তোমায় কারা রঙ দিয়েছে?”
    একটু চুপ,
    -“তুমি দিয়েছ।”
    -“মানে?”
    -“আমাকে তুমি ছাড়া আর কে রং দিতে পারে? দিলেও সে রঙ এতক্ষণ থাকে নাকি? শুনলে না রঙ এখনো আছে। তার মানে তুমিই রঙ দিয়েছ...আর তোমায়?”
    এদিকে অনেকক্ষন চুপ,
    -“আজ বসন্তের শেষ দিন, এখানের হিসেবে.......এমন দিনে তোমায় একটা কথা বলে যাই। এই যেন শেষ হোলি হয় যে হোলিতে তুমি নয়, অন্য কেউ আমায় রঙ দিয়ে গেল। তুমি পাশে না থাকলে আর কখনো খেলব না হোলি..........”.............................................................
  • নেতাই | 131.241.98.225 | ২০ মার্চ ২০১৩ ১৮:২০469214
  • ওফ্‌ফ্‌ফ

    দারুন
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ২০ মার্চ ২০১৩ ১৮:২২469215
  • সোনার কলম হবেই হবে, খুব ভালো লাগলো শ্রাবনিদী
  • kumu | 132.176.32.39 | ২০ মার্চ ২০১৩ ২০:০৪469216
  • সতীশ-শ্রাবণীর বসন্ত চিরস্থায়ী হোক।
  • শ্রাবণী | 69.94.104.132 | ২০ মার্চ ২০১৩ ২০:১১469218
  • কুমুদি :)
    দুই দুই চার...................
  • Sibu | 84.125.59.177 | ২০ মার্চ ২০১৩ ২০:৩৩469219
  • এমনিতে কারো লেখায় মন্তব্য করতে আমার ইচ্ছে করে না। কিন্তু শ্রাবনীর লেখায় কিছু না বলে পারা যাচ্ছে না। দুটো জিনিষ আমার বড্ড ভাল লাগে ওর লেখায়। এক তো একদম নিজস্ব স্টাইল, ধার করা কিছু নেই। দুই ওর সহজ অন্তর্লীন প্রসন্নতা ওকে বর্মের মত ঘিরে রেখেছে, ভেদ করে কোন তিক্ততা ছুঁতে পারে না। অথচ তিক্ততার উপকরন ছিল তো। বাঙালী ক্লাবের সরস্বতী পূজোয় আহ্বান না পাওয়া, বা ফোনের অন্যদিকে হোলি খেলা না খেলা নিয়ে অনুযোগ, এ সবই অন্যের হাতে অজস্র সেলফ-পিটির ও তজ্জনিত তিক্ততার জন্ম দিতে পারত।

    ভাল থাক, আরো লেখ।
  • ranjan roy | 24.96.44.127 | ২১ মার্চ ২০১৩ ০৬:২৫469220
  • শিবুর বক্তব্য ধার করে শ্রাবণীকে ছত্তিশগড়ের জমনীপালি-এন টি পি সি পাড়ার হোলির গল্পের জন্যে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কত পুরোনো কথা মনে পড়ে গেল।
    শ্রাবণীর কি মনে আছে ফেব্রুয়ারি থেকেই রতনপুর-পালি-কাঠঘোরা-গোপালপুর এলাকায় রাস্তার দুপাশে প্রথমে শিমূল তারপরে পলাশের ফুলে আকাশ কেমন লালে লাল হয়ে থাকতো? মার্চে গিয়ে শেষ হত?
  • a | 209.16.140.30 | ২১ মার্চ ২০১৩ ০৮:৩২469221
  • শ্রাবনীদি, অসাধারণ। গলার কাছে কি যেন আটকে গেছে!!! মনে পড়িয়ে দিলে অনেক ভুলে যাওয়া দিনের কথা!!!
  • a | 113.15.250.20 | ২১ মার্চ ২০১৩ ১০:২০469222
  • শ্রাবনীদির লেখার মুশকিল হল পড়ে মনে হয় বড্ড সহজ, এ আর এমন কি, লিখলেই হল... কিন্তু লিখতে গেলে বোঝা যায় কত কঠিন এরকম সহজ লেখা। এরকম একটা লেখা পড়ার জন্যে সারা মাস বসে থাকা যায়। সকালে হুড়মুড় করে পড়েছি, এবার সারা দিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়ব।
  • siki | 132.177.153.97 | ২১ মার্চ ২০১৩ ১০:২৯469223
  • সহজ কথা কইতে আমায় কহ যে
    সহজ কথা যায় না বলা সহজে।

    -- দাদু।
  • de | 190.149.51.68 | ২১ মার্চ ২০১৩ ১৩:০৩469224
  • বাঃ! খুব ভালো লাগলো -- কিন্তু প্রতিচ্ছায়া টইয়ের কি হবে?
  • শিবাংশু | 127.197.245.33 | ২১ মার্চ ২০১৩ ১৩:২৭469225
  • শ্রাবণী,

    ভারি সুন্দর লেখা। সহজ, প্রসন্ন, স্বতোৎসার।

    কোথাও কি একটু বর্ণনাত্মক লাগলো, অনুপুঙ্খতার ভার ছিলো কি কোথাও?

    অনেক লিখবেন... ঃ-)
  • কুমু | 132.176.32.39 | ২১ মার্চ ২০১৩ ১৪:১৩469226
  • শিবুর সঙ্গে একমত।
    সেলফ পিটির ফান্দে পড়িয়া বেশীর ভাগ বগাই কান্দে,কিন্তু শ্রাবণীর লেখায় কোথাও তার ছায়ামাত্র নেই।সুন্দর,সাবলীল লেখা,আবেগের সংযত স্পর্শ।
  • a | 113.15.250.20 | ২১ মার্চ ২০১৩ ১৫:২০469227
  • ইংরেজীর থেকে জার্মানটাই কেন বেশী শক্তপোক্ত মনে হয়েছিল কে জানে! - মুক্তো!!
    তুমি পাশে না থাকলে আর কখনো খেলব না হোলি - কমলহীরে!!!
  • শ্রাবণী | 127.239.15.104 | ২১ মার্চ ২০১৩ ১৭:৫৪469229
  • সবাইকে থ্যাঙ্কস.......সেভাবে ভেবে লিখিনি, প্রতিবছর ফাগুনে এই টইয়ে কিছু লিখে যাই, নানা সময়ে যেভাবে হোলি কেটেছে তা নিয়ে........

    শিবুদা, লেখা নিয়ে আমি মোটামুটি খুব বেশী ভাবিনা, যা আঙুলের ডগায় যেমন আসে, টাইপে যাই.....একেবারে শেষ হলে হয়ত একটু আধটু কারেকশন!
    কিন্তু আজ তোমার কমেন্টে বেশ অন্যরকম লাগল! থ্যাঙ্কস!

    অয়ন, :)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন