চিরকালীন সমস্যার সমাধানে প্রতীচ্য ও প্রাচ্যের মেলবন্ধন – এক দার্শনিকের জীবন - প্রথম কিস্তি : শুভদীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিবিধ | ৩১ মে ২০২১ | ৩৪৮৮ বার পঠিত | মন্তব্য : ৮
মাদের দেশে ‘দর্শন’ বলে আলাদা কোনো বিষয় কখনও ছিল কি? বেদে, উপনিষদে যা আছে বা মহর্ষি কপিল, কণাদ, জৈমিনি, ব্যাস, মধ্বাচার্য, রামানুজম, শঙ্করাচার্য ইত্যাদিরা যা বলে বা লিখে গিয়েছিলেন তৎকালে তা ‘দর্শন’ নামে বিবেচিত হতো কি? সম্ভবত না। প্রকৃতপক্ষে বৃহৎ ও অপার বৈচিত্র্যময় এই জগতের দিকে তাকিয়ে যুগপৎ বিস্মিত ও কৌতূহলী হয়েছিলেন অগাধসলিলা সরস্বতী নদীর তীরের আমাদের সুপ্রাচীন পূর্বপুরুষেরা। তারই ফল স্বরূপ যেগুলি বিবেচিত হয়েছে সাংখ্য, বৈশেষিক, পূর্বমীমাংসা, উত্তরমীমাংসা, দ্বৈতবাদ, অদ্বৈতবাদ, বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ ইত্যাদি হিসেবে, এগুলির ভিতর দিয়ে তাঁরা যা বলতে চেয়েছিলেন নিজেদের জীবন-চর্যায় তাই তাঁরা প্রতিভাত করে গিয়েছিলেন, যার অন্ত বোধিতে বা মুক্তিতে। এমনকি বস্তুবাদী চার্বাকেরাও চর্যায় ছিলেন বস্তুবাদী দর্শনানুগ। অর্থাৎ, আদিতে দর্শন আসলে জীবন-চর্যার নামান্তর ছিল ও পরিশেষে জীবনের অন্তিম লক্ষের সন্ধানী। এসব দূর অতীত বা সুপ্রাচীন কালের কথা। স্বতন্ত্র একটি বিষয় হিসেবে ‘দর্শন’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বহু পরে মূলত পাশ্চাত্যের হাত ধরে। আমাদের নিকটবর্তী সময়ে বিংশ শতাব্দীর দর্শন বলে যা পরিচিত বলা বাহুল্য তা জোরালো ভাবে পাশ্চাত্যেরই অবদান। এর সূত্রপাত মোটামুটি ভাবে George Edward Moore-র আধুনিক বাস্তববাদের হাত ধরে, প্রসারিত হাল আমলের Slavoj Zizek পর্যন্ত।
চিরকালীন সমস্যার সমাধানে প্রতীচ্য ও প্রাচ্যের মেলবন্ধন – এক দার্শনিকের জীবন - দ্বিতীয় কিস্তি : শুভদীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০৯ জুন ২০২১ | ২৯৮০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৫
যুদ্ধ থেকে ফিরে তিনি আর দর্শন চর্চার মধ্যে যেতে চাননি। প্রথমত তাঁর ধারণা হয়েছিল ‘ট্রাক্টেটাস লজিকা-ফিলজফিকাস’ গ্রন্থে তিনি সমস্ত দার্শনিক সমস্যার সমাধান করে ফেলেছেন, দ্বিতীয় কারণ যুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। পূর্বে উল্লেখিত Tolstoy-এর গস্পেল এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শৈল্পিক সৃষ্টির সঙ্গে পরিচয় (যার কথা একটু পরেই আমরা বলবো) তাঁর মনে আগামী করণীয় ও তদুপরি জীবন সম্পর্কেও একধরণের আধ্যাত্মিক ধন্দ তৈরি করেছিল। এই সময় মঠে কিছুদিন মালির কাজ করার পর তিনি ঠিক করেন স্কুলে শিক্ষকতা করবেন। সেই মর্মে তিনি প্রশিক্ষণ নেন এবং ১৯২০-২৬ অস্ট্রিয়ার বিভিন্ন গ্রামে শিক্ষকতার কাজ করতে থাকেন। স্কুলের বাইরেও বিনা পয়সায় ছাত্রদের পড়াতেন, গরিব ছাত্রদের নানা ভাবে সাহায্য করতেন। স্কুলের মাইনে তাঁর কাছে যথেষ্ট বেশি বলে মনে হত। একবার স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে এত মাইনে নিয়ে তিনি কী করবেন। প্রকারান্তরে উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রধান শিক্ষককে নিজের পুরো মাইনেটাই দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সহজ, সরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনের এই স্পৃহা Wittgenstein-এর জীবনের একটা প্রধান দিক।
চিরকালীন সমস্যার সমাধানে প্রতীচ্য ও প্রাচ্যের মেলবন্ধন – এক দার্শনিকের জীবন - তৃতীয় কিস্তি : শুভদীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ১৬ জুন ২০২১ | ৩৮৫৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪
Wittgenstein মনে করতেন দর্শন ও জীবন বা জীবনযাপন সম্পৃক্ত! এই জন্য তাঁর দর্শন Liberation-এর দর্শন বা মুক্তির দর্শন হিসেবেও পরিচিত। Russell-কে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘How can I be a logician before I am a human being?’। এখানে এসে পূর্ব-পশ্চিম কোথাও একটা মিলে যায়। আদি ভারতে যাজ্ঞবল্ক্য, গার্গী, মৈত্রেয়ীরা তাঁদের নিজস্ব পথে দার্শনিক সমস্যাগুলির সমাধান খুঁজেছিলেন আর বিংশ শতাব্দীতে পশ্চিমে আরেকজন মনীষী দার্শনিক তাঁর নিজস্ব প্রতিভায় পৌঁছলেন প্রায় সেই একই পথে! সম্ভ্রমের ব্যাপার হল Wittgenstein আমাদের দেশে আধুনিককালে যার সঙ্গে তাঁর চিন্তা ও বুদ্ধির সবচেয়ে বেশি সাযুজ্য খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি তথাকথিত কোনো দার্শনিক বা ধর্মগুরু বা সমাজসংস্কারক ছিলেন না, ছিলেন মূলত একজন কবি। প্রকৃতপক্ষে যে উপনিষদীয় ভারত রবীন্দ্রনাথের আধুনিক উদার ও সংস্কারমুক্ত মনের অনুপ্রেরণা ছিল তার সাথে এসে মিশেছিল পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, অন্যদিকে যুক্তিবাদী ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন Wittgenstein-এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি ছড়িয়ে দিয়েছিল উপনিষদীয় প্রজ্ঞা। মৃত্যুর আগে তাঁর বলে যাওয়া শেষ কথা ছিল, ‘Tell them I have had a wonderful life’।
এ যুগের সংকট – ফ্রয়েড পুনর্পাঠ : শুভদীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বই | ২৩ জুলাই ২০২১ | ৩৪০৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সৌন্দর্য কোনো জন্মান্ধ মানুষকে ব্যাখ্যা করে বোঝানো যেমন অসম্ভব, তেমনি, মন যদি সঠিকভাবে গ্রহণক্ষম না হয়, তা হলে রসপোলব্ধি দুষ্কর। ধীশক্তিও সাধারণভাবে বুদ্ধি বলতে যা বোঝায় তা নয়। ধীশক্তি বলতে বোঝানো হচ্ছে প্রজ্ঞা। প্রজ্ঞা দুর্লভ বস্তু, বোধ ও বুদ্ধির এক অতি উন্নত স্তরকে প্রজ্ঞা বলে। বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার মধ্যে তফাতটা গুণগত, পরিমাণগত নয়। ধীশক্তির ফসল বিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি। রসের ফসল সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র ইত্যাদি। এটা খুবই আশ্চর্যের যে এই মাধ্যমগুলির উৎপত্তির মূলে যে সংস্কৃতি নামক জিনিসটি কাজ করছে, তা যে ‘জৈবিক’, নিছক আবেগের ব্যপার নয়, তা মানবসমাজ বহু যুগ পরেও বুঝতে পারে নি।
ওজুর চলচ্চিত্র- ফায়ার উইদিন, কাম উইদাউট : শুভদীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ০৯ জানুয়ারি ২০২২ | ৩৫৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১০
আমাদের প্রথম ওজু-অভিজ্ঞতা কিন্তু ওজুর নামকরা ছবি গুলির মধ্যে থেকে হয়নি। কোন উৎসব মনে নেই, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব হতে পারে আবার স্বতন্ত্র কোনো প্রদর্শনীও হতে পারে। এক দশকের একটু বেশি আগে হবে, সন্ধ্যা-বাসর, যতদূর মনে পড়ছে বিকেল চারটে বা সন্ধ্যা ছটার প্রদর্শনী, নন্দন দুই (তখন আলাদা আলাদা চেয়ার পাতা থাকত, এখনকার মত ফিক্স সুইঙ্গিং চেয়ার নয়)। ওজুর নামের সাথে পরিচিতি তখনও পর্যন্ত উপরের ঐ সত্যজিতের বক্তব্যটি।
মনিকা ভিত্তি – আন্তনিওনির মানসকন্যা : শুভদীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২৪০২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৬
মনিকা ভিত্তিকে আন্তনিওনির মানসকন্যা বলার কারণ শুধুমাত্র এই নয় যে ওঁর একক নির্দেশিত চোদ্দ পনেরটি ছবির মধ্যে পাঁচটিতেই মনিকা অভিনয় করেছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের প্রধানতম ছবি গুলির তালিকায় নিশ্চয়ই সব ছবি পড়বে না। পড়বে ‘অপুত্রয়ী’, পড়বে ‘চারুলতা’, পড়বে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ইত্যাদি। কারণ, এগুলিতেই সত্যজিৎ-বীক্ষার সর্বোত্তম প্রকাশ ও বিকাশ দেখা গেছে। একই ভাবে আন্তনিওনির ক্ষেত্রে নাম করতে হবে তাঁর প্রখ্যাত ট্রিলজি – ‘লাভেন্তুরা’(১৯৬০) , ‘লা-নত্তে’(১৯৬১), ‘লা-এক্লিপ্স’(১৯৬২)-এর, নাম করতে হবে ‘দি রেড ডেসার্ট’(১৯৬৪)-এর। মনিকা ভিত্তিকে ছাড়া এই ছবিগুলোর কথা স্রেফ ভাবা যায় না!
নুরি বিলজ সেলানের চলচ্চিত্র – দৃশ্য-শ্রাব্যের চূড়ান্ত : শুভদীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২৬২২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১১
মেহমুদের সংসার জীবন অনুল্লেখিত, বোঝা যায় তার সচ্ছলতা আছে কিন্তু চিত্তে শান্তি নেই। রাতের একটি দৃশ্যে দেখানো হয় – ইউসুফ ও মেহমুদ দুজনেই দেখছে রান্নাঘরে ইঁদুর-কলে একটা ইঁদুর আটকে পড়েছে। ব্যাস, আর কিছু বলা হয় না। ঘর গৃহস্থালিতে এ খুবই সাধারণ ঘটনা, ফলে দৃশ্যটিকে মূল গল্পে আরোপিত বলে মনে হয় না। অথচ বহুবিধ অর্থের ব্যঞ্জনায় পরিপূর্ণ দৃশ্যটি। এই সৌন্দর্য-ব্যঞ্জনা কিন্তু শুধুমাত্র বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে তৈরি হয়নি, বরং নির্মাণ রীতিই অনেকাংশে একে দিয়েছে মহার্ঘ্যতা। পরিচালকের নাম ‘নুরি বিলজ সেলান’ (Nuri Bilge Ceylan) (১৯৫৯-)।
অ্যালফ্রেড হিচককের ছবি – অপরাধের অন্তরাল : শুভদীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২২ আগস্ট ২০২২ | ২২৮২ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৫
ফিল্ম আর্কাইভের প্রতিশ্রুতি থাকতো প্রত্যেক বুধবার করে। প্রত্যেক বুধবার সন্ধ্যা ছ-টায় দেখানো হত ওয়ার্ল্ড ক্লাসিক, নন্দন তিন-এ। তবে সব বুধবার হত না। আর্কাইভের একটা ফোন নম্বর জোগাড় করেছিলাম আমরা। বুধবার শো-য়ের ঘণ্টা তিনেক আগে ফোন করে কি ছবি এবং তার থেকেও বড় হল আজ দেখানো হবে কিনা সেটা নিশ্চিত করে নেওয়া হত। ৯৮-৯৯ সাল ও শূন্য দশকের শুরুর দিকে নন্দনের অধিকর্তা ছিলেন অংশু শূর। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব, সিনে সেন্ট্রাল, আইজেন্সটাইন সিনে ক্লাব, আর্কাইভের শো ও আরো অনেক ফিল্ম সোসাইটি - এসব মিলিয়েও আমরা পরিমিত আহার পাচ্ছি না মনে করেই সম্ভবত নন্দনে শুরু হল মাসিক রেট্রোস্পেক্টিভ! নন্দনের অধিকর্তা বদলে গিয়ে তখন নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। প্রত্যেক মাসে না হলেও মোটামুটি নিয়মিতভাবেই মাসের শেষে নির্দিষ্ট পরিচালকের এক-গুচ্ছ ছবি দেখানো হত। নন্দনের মূল গেট দিয়ে ঢোকার আগে বাঁ-দিকের কাঁচের শোকেসে নতুবা ডান দিকে দাঁড় করানো স্ট্যান্ডে আটকানো থাকতো এই কর্মসূচির কাগজ। ছবিগুলি দেখানো হবে নন্দন দুই-এ। যারা দেখতে ইচ্ছুক তাদের উদ্দেশ্যে নির্দেশ থাকত নন্দনের লাইব্রেরি থেকে বিনি পয়সার পাস জোগাড় করে নেওয়ার! প্রথম রেট্রোস্পেক্টিভ দেখানো হয় অ্যালফ্রেড হিচককের (১৮৯৯-১৯৮০)! চারটি ছবির কথা পরিষ্কার মনে আছে, 'রোপ'(১৯৪৮), 'রিয়ার উইন্ডো'(১৯৫৪), 'সাইকো'(১৯৬০) এবং 'দা বার্ডস'(১৯৬৩)!
ছয়ে রিপু – পাঠ-প্রতিক্রিয়া : শুভদীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | পড়াবই : প্রথম পাঠ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৯৪০ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
'এই ধরনের অপরাধে সেদিনই ছিল আমার হাতেখড়ি, যেজন্য বিপদটা হল।...' (শীতবন্দরে)। 'গোলমালটা ঠিক কীভাবে শুরু হল বলা খুব কঠিন।..' (পাইথনের গপ্পো)। 'কেলোটা হল বড়দিনে।...' (বড়দিন)। 'আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ঝড় আসার কথাই ছিল।...'(ক্যাম্পফায়ার, আমাদের রাতের উৎসব)। এই জাতীয় সূচনা লেখকের একটি বিশেষ স্টাইল। শুরুর এই কৌতূহল না মেটা পর্যন্ত পাঠক স্বস্তি পাবেন না। কিন্তু চিত্তাকর্ষক হল সেটা মিটে যাওয়ার পরে পাঠক টের পাবেন অতিরিক্ত কি একটা যেন বলা হল, যা প্লটের চাইতেও বেশি করে বেরিয়ে আসছে লেখকের অননুকরণীয় নির্মাণকৌশল থেকে!
মায়ার জঞ্জাল – আত্মপরিচয়ের ভাবনা : শুভদীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ১০ মার্চ ২০২৩ | ১৭২৯ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
শ্রেণি বিভাজনে আজ যদি প্রলেতারিয়েত, লুম্পেন-প্রলেতারিয়েত, লুম্পেন-বুর্জোয়া, বুর্জোয়া, পেটি-বুর্জোয়া ইত্যাদি বলা হয় তাহলে মানুষ যার পর নাই বিরক্ত হবেন। আবার সেইসব বস্তাপচা বিশেষণ! এসব বিংশ-শতাব্দীর ব্যাপার, একবিংশ শতাব্দীতে এইসব চলে না। একবিংশ শতাব্দী হল উত্তরাধুনিকতার যুগ এবং উত্তরাধুনিকতা বামপন্থা বা মার্কসবাদকে আধিপত্যকামী বা হেজিমনিক মনে করে ও বিরোধিতা করে। ব্যাপার যে এখন আরও অনেক জটিল এবং উক্ত বিশেষণগুলি যে এখন আর এদের সম্যক পরিচয় বহন করে না জগার মত সিন্ডিকেট-বস বা বিউটি (দেশান্তরিত ও অত:পর স্বামী কর্তৃক বিক্রিত), মালাদের মত একবিংশ শতাব্দীর শহুরে যৌনকর্মীদের দেখলে অবশ্যই বোঝা যায়। সত্য বিউটিদের সঙ্গে জগা গণেশ এবং চাঁদু সোমাদের সঙ্গে সুধাময়দের পরিবার - দুটি আলাদা উলম্বে স্থাপিত।
ফেদেরিকো ফেলিনির চলচ্চিত্র – ধর্ম ও জীবন ভাবনা : শুভদীপ ঘোষ
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪৭০ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৩
স্টেট ও চার্চকে সম্পূর্ণ পৃথক করে দিতে হবে। রাজ্য পরিচালনার কাজে চার্চ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না এবং রাজ্যও চার্চের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না। রাজ্য পরিচালনার কাজে রোমান ক্যাথলিক চার্চ সরাসরি হস্তক্ষেপ করত। নিয়ম-শৃঙ্খলা বলবৎ ছিল, যাকে বলা হত খৃষ্টীয় অনুশাসন। কিন্তু পরবর্তীতে স্টেট ও চার্চের এই বিযুক্তিকরণই ছিল সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার আদি সংজ্ঞা। নিয়ম-শৃঙ্খলা অর্থাৎ অনুশাসনের ভাবনা নিশ্চয়ই আদিম যুগে ছিল না, গুহামানবের যুগে ছিল না। জৈবিক বিবর্তনের পথ ধরে সমাজ তৈরি হয় এবং সেই পথেই কোনো একসময় নিশ্চয়ই নিয়ম- শৃঙ্খলা বা অনুশাসনের ভাবনা এসেছিল। ধর্মের উৎপত্তি ও সামাজিক অনুশাসন কি যমজ সন্তান! প্রাচ্যের প্রাচীন ধর্মগুলিই হোক বা আব্রাহামিক (সেমেটিক) ধর্মগুলিই হোক, পাপ-পুণ্যের ভয় দেখানো ব্যাপারটা ধর্মীয় অনুশাসন কায়েম রাখার পিছনে কাজ করত, তা হয়ত অস্বীকার করা যাবে না।