'এই দুর্ভাগা দেশকে আপনার কণ্ঠমাধুরী ও কলাসিদ্ধির দ্বারা আনন্দিত করুন, সুস্থ করুন। বিশেষত যখন রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি শ্যামার কথা ভাবি তখন আমি অভিভূত হয়ে যাই। এই সূক্ষ্ম জটিল নানা বিপরীত অনুভূতির টানাপোড়েনে ক্ষতবিক্ষত নারীকে আপনি ছাড়া আর কে এমন সার্থক রূপ দিতে পারত? এই পাপিষ্ঠাকে রবীন্দ্রনাথ আশ্চর্জ ট্রাজিক মহিমা দান করেছেন। কিন্তু আমাদের ও কবির মাঝখানে একজন interpreter আবশ্যক ছ্ল। সেই সুযোগ্য interpreter কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপনার কাছ থেকে আমরা অনেক পেয়েছি।' ... ...
আমারে তুমি অশেষ করেছো....
পার্থ দাশগুপ্ত নামে একজন তন্নিষ্ঠ রবীন্দ্রসঙ্গীতপ্রেমী'র লেখায় একটা মন্তব্য পেয়েছিলুম। "....রবীন্দ্রনাথের গানের সর্বকালের সফলতম অনুবাদক হিসেবে আমি যাকে মনে করি, তাঁর নাম সুবিনয় রায়। বুজুর্গরাও বলেন, যদি রবীন্দ্রনাথের গানের শুদ্ধতা আর অন্তর্নিহিত ভাবের হরগৌরী মিলনের সঠিক সুলকসন্ধান পেতে চাও, তাহলে সুবিনয় রায়ের গান শোনো। " পার্থ নিজেকে একযোগে রবীন্দ্রখ্যাপা, হেমন্তখ্যাপা ও সুবিনয়খ্যাপা হিসেবেও ঘোষণা করেছিলেন। উক্তিটা আমি ... ...
প্রিয় শিল্পী হয়ে ওঠার অবশ্যই কিছু ব্যাকরণ থাকে। কিন্তু শিল্পী যখন বন্ধু হয়ে ওঠেন, তখন তাকে যুক্তিগত ব্যাকরণের বাইরে একটা নৈসর্গিক মাত্রা ছাড়া আর কিছু বলা যায়না। সত্যিকথা বলতে কী, 'রবীন্দ্রসঙ্গীত' ছাড়া আর কিছু না গেয়ে (অন্যগানগুলি না গাইলেও কোনও ব্যাসকম হতোনা) বাঙালি শ্রোতার অস্তিত্ত্বের এতো গভীরে শিকড় নামিয়ে দেবার শক্তি ... ...
আমি যে গান গেয়েছিলেম, মনে রেখো…।
'.... আমাদের সময়কার কথা আলাদা। তখন কে ছিলো? ঐ তো গুণে গুণে চারজন। জর্জ, কণিকা, হেমন্ত, আমি। কম্পিটিশনের কোনও প্রশ্নই নেই। ' (একটি সাক্ষাৎকারে সুচিত্রা মিত্র) ... ...
সেই বাল্যকালে কবে থেকে গান গাইতে শুরু করলাম তা আমার মনেও নেই-- গান গাইছি-তো-গাইছি-তো-গাইছি। কোনো ওস্তাদ অথবা শিক্ষকের কাছে নাড়া বেঁধে বা রীতিমতো লেখাপড়া শেখার মতো করে গান আমি কখনও শিখিনি। ছোটবেলার দিনগুলি থেকে শুরু করে, বড় হয়েও শুধু গান শুনেছি আর গেয়েছি। কোনো সঙ্গীত-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গান শিখবার সৌভাগ্য আমার অদৃষ্টে কখনও জোটেনি।'' ১৯১১ সালে 'রবিবাবুর গান' শোনার সুযোগ যাঁরা পেতেন, তাঁরা আলো ... ...
'.... তখন এমনি করেই বাজবে বাঁশি এই নাটে'
১৯২৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পঙ্কজকুমারের যখন বছর বাইশ বয়স, তখন কেউ তাঁকে গার্স্টিন প্লেসে রেডিও কোম্পানির দফতরে নিয়ে যান। বৃহত্তর জনতার কাছে পৌঁছোনোর জন্য ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানির এই মাধ্যমটিই ছিলো একমাত্র উপায়। যদিও পঙ্কজকুমারের নাড়াবাঁধা গুরু ছিলেন দুর্গাদাস বন্দোপাধ্যায়, কিন্তু দিনু ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিলো। দিনু ঠাকুর ছিলেন সদাশিব প্রকৃতির মানুষ। কেউ ভালোবেসে রবিবাবুর গান শিখতে চাইলে ... ...
বাংলায় একটা শব্দ আছে, 'ট্র্যাডিশনাল', অর্থাৎ শিল্পের আদিরূপের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার প্রবণতা। আমার কিন্তু মনে হয় 'ঐতিহ্য' ব্যাপারটি নদীর মতো বহমান। তার প্রতিটি ঘাটের নিজস্ব ট্র্যাডিশন রয়েছে এবং সেটা সময় নিরপেক্ষ। তার প্রাসঙ্গিকতা শুধু মানুষের কাছে পৌঁছোতে পারার প্রয়াস থেকেই বিচার্য হওয়া উচিত। গঙ্গোত্রীর ঐতিহ্য বা গঙ্গাসাগরের ঐতিহ্য, দুয়েরই নিজস্ব গরিমা রয়েছে। তাদের সার্থকতা মানুষের তৃষ্ণাকে নিবারণ করতে পারার ক্ষমতা থেকেই নির্ধারিত হয়। এই কথাগুলি এই জন্য মনে এলো যে এই পাঁচজন শিল্পী নিঃসন্দেহে এই অ ... ...
বিংশ শতকের শুরুতে সম্ভ্রান্ত বাঙালির অন্দরমহলে আরো অনেক কিছুর সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে কেন্দ্র করে একটা অন্য ধরনের সামাজিক মন্থনও শুরু হয়েছিলো । অমলা দাশ ছিলেন বিখ্যাত দুর্গামোহন দাশের ভাই ভুবনমোহন দাশের কন্যা ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের ভগ্নী। এছাড়া তিনি ছিলেন কবিপত্নী মৃণালিনী দেবীর ঘনিষ্ট সহেলি। অমলা ও মৃণালিনীর অন্তহীন মেয়েকথার ধারাস্রোত কবিকে প্রেরিত করেছিলো একটি গান রচনা করতে, '' ওলো সই, ওলো সই, আমার ইচ্ছা করে তোদের মতো মনের কথা কই''। ইতোপূর্বে ঠাকুরবাড়ির দুই মেয়ে প্রতিভা ও ইন্দিরা চৌধুরীবা ... ...
প্রশ্নটা উঠতে দেখেছিলুম যখন বাংলা ১৪০০ সন এসে দুয়ারে কড়া নাড়ছিল। সিকি শতাব্দী আগে। তখন আমরা মত্ত ছিলুম কুসুমচয়নে। নব নব অনুষ্ঠান চারিদিকে। সঙ্গীত-সাহিত্য-ইতিহাস-পরিবেশ থেকে খুঁজে নিচ্ছিলুম ‘বাঙালিয়ানা’র সূত্রগুলি নতুন করে। কবি ভেবেছিলেন ১৪০০ সনে তাঁর লেখা সবাই ভুলে যাবে। দেখা গেল তাঁর লেখার কথা অনেকটা ভুলে গেলেও নামটাকে কেউ ভোলেনি। বাঙালিদের মতো কে আর মানে, ‘কলৌ নামৈব কেবলম।’ সবাই খোঁজে নিজের শিকড়। কিন্তু বাঙালিদের মতো আত্মপরিচয় খুঁজতে ব্যাকুল জাতি আমি ভারতবর্ষে আর দেখিনি। আসলে আমাদের পূর্বপুরুষ ... ...
'.. ফেরার পন্থা বন্ধ করে আপনি বাঁধো বাহু ডোরে
ওরা আমায় মিথ্যে ডাকে বারে বারে
জানি নাই....'
রবীন্দ্রনাথকে 'এলিটিস্ট' বলার প্রথাটি আধুনিক বাঙালি, অর্থাৎ বঙ্কিমপরবর্তী যুগের নব্যশ্রেণীর নাগরিক সমাজের কাছে একধরনের সেরিব্রাল কণ্ডূয়ণ হয়ে উঠেছে দীর্ঘকাল ধরে। হয় এই সৃষ্টিটিকে ‘ফুলের মালা, দীপের আলো, ধূপের ধোঁয়া’দিয়ে পুজোআচ্চা অথবা সঙ্গীতবোর্ডের সংরক্ষণ দিয়ে দিয়ে আবেষ্টিত রাখা হবে। নয়তো মাঠময়দান, চা'য়ের ঠেকে চীৎকৃত নানা অগভীর যুক্তিঝঞ্ঝায় ... ...