এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  গান

  • শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের নিরিখে বাংলা

    Sourav
    গান | ২১ মে ২০১০ | ৩৫১৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Shibanshu | 59.97.224.145 | ০৬ জুলাই ২০১০ ১৭:৪০446498
  • কল্লোল,

    ভীষ্মদেবের জীবনের নানা দুর্বিপাকের জন্য তিনি হয়তো নিজেই দায়ী। তাঁর রোগটি সেকালে লোকে ঠিক বুঝতে পারতো না এবং তাঁর নিজের স্বভাবেও কোনও অনুশাসনপরায়নতা ছিলোনা। পুদুচ্চেরিতে 'বাসন মাজা'র গল্পটা বহুল প্রচারিত। তবে তখন সেখানে নিজের বাসন নিজের ধোয়ার প্রথা ছিলো সবার জন্যেই। হ্যাঁ, ভীষ্মদেবের জন্য কোনও ব্যতিক্রম ঘটানো হয়নি। যেহেতু তিনি নিজগুণে দিলীপকুমারের স্নেহভাজন ছিলেন, তাই মূলত তাঁকে নিজের আশ্রয়ে রেখে অনুশাসিত জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্যই দিলীপকুমার নিয়ে গিয়েছিলেন। যাবতীয় সীমাবদ্ধতা সঙ্কেÄও আমাদের মনে রাখতে হবে দিলীপকুমার বঙ্গীয় রেনেসাঁসের শেষবেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব।
  • pi | 72.83.82.169 | ০৬ জুলাই ২০১০ ১৭:৫০446499
  • শিবাংশুদা, কীর্তনে 'আবেগ মালিক ' সেটা বুঝলাম, কিন্তু 'যুক্তি ভীরু পদাতিক' বলতে ?
  • kallol | 124.124.93.205 | ০৬ জুলাই ২০১০ ১৭:৫১446500
  • উঁহুঁ। সবেতেই। তবে এটা নিয়ে তক্কো চাই না। আলোচনা চলুক।
  • pi | 72.83.82.169 | ০৬ জুলাই ২০১০ ১৮:১৭446501
  • আর বাঙালীর সে অর্থে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতবিমুখতার একটা বড় কারণ ই কি রবীন্দ্রসঙ্গীতের মত এরকম একটা শক্তিশালী ধারার সমান্তরালে প্রচলিত হয়ে যাওয়া নয় ? এই বিমুখতা ঠিক কবে থেকে ?
    এর আগে 'পুরাতনী' বাংলা গানে তো শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অত্যন্ত সুস্পষ্ট ছাপ আর এসব গানের শিল্পীরা তো পুরোদস্তুর শাস্ত্রীয় সঙ্গীত চর্চা করতেন মনে হয়। নইলে এইসব গান গাওয়া তো সম্ভব বলে মনে হয়না।
    রামপ্রসাদীর কথা কি এসেছে ? অনেক রামপ্রসাদীতে ই তো টপ্পা অঙ্গের। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত অনুশীলন ব্যতিরেকে গাওয়া সম্ভব ?
  • nyara | 122.167.174.95 | ০৬ জুলাই ২০১০ ২১:১৩446502
  • কতকগুলো কথা বলার আছে। মাইনর কারেকশন বলা যেতে পারে।

    কল্লোলদা যে মুজতবার গল্প বললেন, সেখানে আবাসউদ্দীনের গান শুনে সঙ্গীতবেত্তা বন্ধু বলেছিল, 'অপূর্ব, কিন্তু গুল।' গুল কেন? না, এত নোট লাগছে যে গানে সে গান লোকসঙ্গীত হতে পারে না।

    লোকসঙ্গীত মিউজিকোলজিতে এথনো মিউজিক। সাঙ্গীতিক বিচারে খুব ডেভলপড নয়। সাঁওতাল গানই ধরুন আর চীনে ট্র্যাডিশনাল গানই ধরুন - পেন্টাটোনিক। পাঁচটা মাত্র স্বর লাগে। একঘেঁয়ে। সেদিক দিয়ে বাংলা (এবং মারাঠি) লোকসঙ্গীত মিউজিকালি খুবই ডেভলপড।

    শিবাংশুবাবু শচীনকর্তার ড্রাইভারকে দিয়ে গান পাশ করিয়ে নেবার যে ঘটনা বললেন, সেটা কর্তা বম্বে যাবার পরের ব্যাপার। তার আগে শচীনদেবের বাংলা গান যথেষ্ট অর্নেট। বম্বে যাবার পরে ওনার বাংলা গানও অনেক সহজ হয়ে আসে।

    মহারাষ্ট্র ও পঞ্জাবের সঙ্গে বাংলা গানের যে মূল তফাত, সেটা হল বাংলায় অষ্টাদশ শতকের শেষ থেকে নাগরিক সঙ্গীতের একটি সম্পূর্ণ নতুন জনরা তৈরি হয় মূলত: নিধুবাবু থেকে। এর আদত যদিও পাঞ্জাবী লোকগান এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মিশেল, ভারতের আর কোন জায়গায় এই মিশেল থেকে নতুন জঁরা তৈরির উদাহরণ পাওয়া যায় না। জায়মান কলকাতার নাগরিক সংস্কৃতি আর পশ্চিমি প্রভাবে এই গান আরও পত্রপুষ্পেপল্লবিত হয়।

    কেত্তন বা এই নাগরিক সঙ্গীত, এই দুইই - আজকের ভাষায় যাকে বলে - ফিউশন মিউজিক তার চুড়ান্ত প্রকাশ। এটাই কী বাঙালীর বৈশিষ্ট্য যে গানের পিউরিটির থেকে তার পরিশীলিত মিশেলে তার বেশি আগ্রহ?
  • Shibanshu | 59.97.224.172 | ০৭ জুলাই ২০১০ ১৮:৩৪446503
  • প্রথমে পাই,
    বাঙালিজীবনে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সর্বময় প্রভাব অতি অর্বাচীন ব্যাপার। সত্যি কথা বলতে কি গড় বাঙালি রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে শুরু করে গত শতকে পঞ্চাশ দশকের মাঝামাঝি। তার আগে ঐ গানের শ্রোতামন্ডলী খুব সীমাবদ্ধ ছিলো। আমার পিতামহ ও তাঁর পূর্বপুরুষেরা সাবেক কলকাতার লোক ছিলেন। আমি আমার পিতামহের কাছে শুনেছি বাল্যকালে তিনি ও তাঁর পিতৃদেব নিয়ম করে বিডন স্ট্রীট থেকে জোড়াসাঁকোয় যেতেন আদি ব্রাহ্ম সমাজে গান শুনতে, যদিও তাঁরা দীক্ষিত ব্রাহ্ম ছিলেন না। সেখানে তিনি রবীন্দ্রনাথের মধ্যবয়সের গান মুখোমুখি বসে শুনেছিলেন। সেই সব সভায় কিন্তু অব্রাহ্ম মানুষজন বিশেষ আসতেন না। এতোটা গানপাগলামি থাকা সঙ্কেÄও তাঁর বিপুল তৎকালীন রেকর্ড সংগ্রহে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সংখ্যা খুব বেশি ছিলোনা। চল্লিশ দশকের শেষদিকে এবং পঞ্চাশ দশকের প্রথমে আমার পিতৃদেব যখন কলকাতায় সেন্ট পলসে পড়তেন তখন ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট এবং এরকম দুচার জায়গায় সাধারণের জন্য রবীন্দ্রসঙ্গীতের আয়োজন হতো। রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার জোয়ার আসে একষট্টি সালে শতবর্ষপালনের সময় থেকে। তাই বাঙালির শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সম্পর্কে 'বিমুখতা' বলবোনা, কিছুটা ঔদাসিন্য বলা যায়, এবং তার জন্য রবীন্দ্রসঙ্গীতকে কোনমতেই দায়ী করা যায়না।

    এবার 'পুরাতনী' গান প্রসঙ্গে। অষ্টাদশ শতকের শেষ থেকে বাংলা 'আধুনিক' গানের উৎপত্তি দেখা যায়। সেই সময় বাঙালি যেসব গান শুনতো তার মধ্যে প্রধান ছিলো, কবিগান, তরজা, আখড়াই, ঢপকীর্তন, ঝুমুর ইত্যাদি। হাফ আখড়াই পরে এসেছে। নিধুবাবু যখন চাকরিসূত্রে প্রথম ছপরা যান তখন সেখানে শোরিমিয়াঁর চ্যালাচামুন্ডাদের মুখে পঞ্জাবি টপ্পা শোনেন। অবশ্য তার আগে কালিমির্জার পশ্চিমী উস্তাদদের কাছে তালিম নেওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। কালিমির্জা ব্রাহ্মন সন্তান কিন্তু যবনগুরুদের কাছে শিক্ষা নেওয়ার 'অপরাধে' তাঁকে 'মির্জা' উপাধি দেওয়া হয়। তিনি রাজা রামমোহনকেও ধ্রুপদের তালিম দিয়েছিলেন। যেহেতু সেসময়ে টপ্পাকে ঠিক "ভদ্রস্থ' গান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হতোনা, কারণ সে গান মূলত বাইজি শ্রেণীর শিল্পীরাই গাইতেন, নিধুবাবুর বাংলা টপ্পা গান অভিজাত সমাজে সেভাবে প্রকাশ্যে গৃহীত হতোনা। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সেকালের মূলস্রোতের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, অর্থাৎ ধ্রুপদ-ধামার বাঙালি বিশেষ চর্চা করতোনা। তাই 'পুরোদস্তুর' শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চা ছিলো একথা বলা একটু অতিশয়োক্তি হয়ে যাবে।

    রামপ্রসাদ সেনের যবন উস্তাদদের গান শোনার সুযোগ হয়েছিলো। তার কিছু প্রভাব তাঁর গানে অছে। তবে বর্তমানে রামপ্রসাদী গানে যে ধরনের কালোয়াতি অলংকরন দেখা যায় তা হয়তো অর্বাচীন ব্যাপার।

    ন্যাড়ার প্রসঙ্গে পরে আসবো।
  • SB | 115.117.248.206 | ০৭ জুলাই ২০১০ ১৯:১৬446504
  • ন্যাড়াবাবু, নাগরিক সঙ্গীতের একটি সম্পূর্ণ নতুন জঁরা তৈরি হল - একটু বিশদে বলতে পারবেন? বেশ ইন্টারেস্টিং!!

    শিবাংশুবাবু, এই প্রসঙ্গেই প্রশ্ন, নিধুবাবু গৃহীত নয়, আবার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত চর্চাও হচ্ছে না সেভাবে। তাহলে তখনকার নাগরিক মহল কিসের চর্চা করতেন? মানে ঐ ন্যাড়াবাবু বললেন একটা নতুন জঁরা, একটু ঘেঁটে আছি।
  • pi | 72.83.82.169 | ০৭ জুলাই ২০১০ ১৯:৩৭446505
  • মূলস্রোতের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত মানে খালি ধ্রুপদ ধামার নাকি ?
  • nyara | 122.167.174.95 | ০৭ জুলাই ২০১০ ২০:১৮446506
  • নিধুবাবু যখন তাঁর গান বাঁধতে আরম্ভ করলেন, তখন লোকে ধন্দে পড়ে গেল? এ কী গান? এ কালোয়াতি নয়, রামপ্রসাদী নয়, কেত্তন নয়, আখড়াই নয়, হাপ-আখড়াই নয়, খেউড় নয়, পালাগান নয়, কবিগান নয় - এ কী তবে? নিধুবাবু যদ্দুর মনে পড়ে আগে আখড়াই শিখেছেন। মোহনচাঁদ বসুর আখড়ায়। কিন্তু এই নতুন গানকে যখন কোন জঁরাতেই বাঁধা গেল না, তখন লোকের তার নাম দিল 'নিধুর গান'। তখনও কিন্তু 'নিধুবাবুর টপ্পা' মনিকার চালু হয়নি। কারণ বাংলায় আগে টপ্পা ছিল না। আর এ গান উত্তর ভারতের প্রচলিত টপ্পার মতনও নয়। যেহেতু এই গান, যা পরবর্তীকালে কাব্যসঙ্গীত বলে চালু হল, কোন জঁরাতেই পড়ে না, তাই তাকে স্রষ্টার নামে নাম দেওয়া হল। নিধুর গান, শ্রীধর কথকের গান, গোপাল উড়ের গান। এ নামকরণ চলল বিংশ শতাব্দী অব্দি। রবিবাবুর গান, দ্বিজুবাবুর গান, অতুলপ্রসাদের গান, রজনীকান্তর গান, নজরুলের গান ইত্যাদি।

    অন্যদিকে কুষ্ঠিয়ায় তখন লালন শাহ ফকির নিজের ভনিতায় গান বাঁধছেন। ফিকিরচাঁদ ভনিতায় গান বাঁধছেন কাঙাল হরিচাঁদ। সেগুলো তাঁদের নামে চললেও, তা লোকসঙ্গীতের নিয়ম মেনে ভনিতা দেওয়া গান।

    নিধুর গান শুরু হয়েছিল কৃষ্ণনগরে। তখনকার দিনে বাংলা কৃষ্টির পীঠস্থান। তারপর আস্তে আস্তে কলকাতা যখন প্রধান নগর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে, তখন এই গানের কেন্দ্র চলে এল কলকাতায়। মনে রাখতে হবে এসব গানের কোনরকম ছায়া এই দুই নগরের বাইরে পড়েনি। তাইজন্যে বলছি, এই প্রথম একটি জঁরা তৈরি হল যা নাগরিক মানুষের জন্যে নাগরিক মানুষের সৃষ্টি।

    এই বিষয়ে বিশদে জানতে পড়ুন ন্যাড়া বিরচিত 'নিধু থেকে সিধু : বাংলা শহুরে গানের বিবর্তন'।
  • nyara | 122.167.174.95 | ০৭ জুলাই ২০১০ ২০:১৯446508
  • *কাঙাল হরিনাথ
  • pi | 128.231.22.89 | ০৭ জুলাই ২০১০ ২০:২৪446509
  • ন্যাড়াদা, রামপ্রসাদী কিছু গানে টপ্পা আছে তো।
  • SB | 115.117.248.206 | ০৭ জুলাই ২০১০ ২০:২৭446510
  • ন্যাড়া বিরচিত 'নিধু থেকে সিধু : বাংলা শহুরে গানের বিবর্তন' - লিং চাই :-)
  • ranjan roy | 122.168.164.119 | ০৭ জুলাই ২০১০ ২৩:১৮446511
  • পাই,
    রামপ্রসাদী গানে টপ্পার কাজ? একটা-দুটো কংক্রীট উদাহরণ দাও। আমার চোখে ভণিতায় ""প্রসাদ বলে কৃপা যদি মা-আ-আ-আ-আ" গোছের কিছু গিটকিরি ছাড়া বা মূল রাগের স্ট্রাকচারের ছায়া( দেশ, খামাজ, মিশ্র ভৈরবী, শিবরঞ্জনী, পিলু ইত্যাদি) ছাড়া বিশেষ কিছু চোখে পড়ে।
  • ranjan roy | 122.168.164.119 | ০৭ জুলাই ২০১০ ২৩:২০446512
  • ও হ্যাঁ, "" স্বখাতসলিলে ডুবে মরি শ্যামা'' তে সামান্য কাজ আছে বটে, সেটাকে কি কমন ফ্যাক্টর বলা যায়?
  • pi | 128.231.22.89 | ০৭ জুলাই ২০১০ ২৩:৩১446513
  • আমার এমন দিন কি হবে মা তারা।
  • Shibanshu | 59.97.224.104 | ০৮ জুলাই ২০১০ ১২:১৬446514
  • 'স্বখাতসলিল' দাশরথি রায়ের। রামপ্রসাদের থেকে একটু দূর। আর 'এমনদিন কি হবে' , ছ' মাত্রার কীর্তনাঙ্গ। কোনও অর্থেই দুটি গান টপ্পা নয়।

    আমি যে সময়ের কথা বলছি সে সময় বাংলার জায়মান নাগরিক সমাজে খেয়ালের প্রচলন হয়নি, ধ্রুপদ-ধামারই স্বীকৃত কালোয়াতি গান ছিলো।

    মোহনচাঁদের আখড়ায় যে সব গানের চর্চা হতো তার মূল কিন্তু উত্তর ভারতে প্রচলিত উস্তাদি গানের মধ্যে ছিলো। এই জন্য সেই আখড়ায় বেশ নিষ্ঠাসহকারে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চা হতো। নিধুবাবুর সিরিয়াস গানে আগ্রহ সেখান থেকেই হয়। কিন্তু যেহেতু তিনি মূলত কবি ছিলেন তাই বাণীসম্পদবিযুক্ত কালোয়াতি গান তাঁকে তৃপ্তি দিতোনা।

    নিধুবাবু, শ্রীধর কথক, রাম বসু, গোপাল উড়ে এবং কখনো রূপচাঁদ ইত্যাদি, তাঁদের গানকে একযোগে 'রঙ্গীন গান' বলা হতো।

    ঊনবিংশ শতকের শেষভাগে প্রকাশিত এক রঙ্গীন গানের সংকলনে রবিবাবুর গান নিধুবাবুর নামে ছাপা হয়েছিলো। সম্ভবত যামিনী না যেতে। এতে বোঝা যাচ্ছে কাব্যসম্পদঋদ্ধ গানের ক্ষেত্রে জনমনে নিধুবাবুর মৌরসিপাট্টা ছিলো।

    নিধুবাবু বাংলার প্রথম নাগরিক কবি। তাঁর রুচিবোধ এবং নাগরিক সম্ভ্রান্ত স্বভাব, তৎকালীন সামন্ততান্ত্রিক মূল্যবোধের বিচারে অত্যন্ত অগ্রসর ছিলো। বলা যায় পরবর্তীকালে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের বাংলাগানের চালিকাশক্তি হিসেবে উঠে আসার লক্ষণ নিধুবাবুর গানের জনপ্রিয়তা থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

    কৃষ্ণনগর ও মোকাম কলকাতার অভিজাত সম্প্রদায় ( বাবু সম্প্রদায় নয়) রঙ্গীন গান বিষয়ে বিরূপ ধারণা পোষণ করতেন। যেহেতু অন্তপুরিকারা এই গানের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন, কোনও এক বঙ্গবীর 'অবাধ্য' গৃহলক্ষ্মীদের উদ্দেশ্যে একটি পদ্য লিখেছিলেন, যাতে আছে, " জুতো মেরে ভুলিয়ে দেবো নিধুর টপ্পা গাওয়া" । যদিও আলালের ঘরের দুলালরা রঙ্গীন গানের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, তবে তাঁদের রুচি অধিকতর ছিলো বাইজিসংস্কৃতির গানে, যা বাংলা বা হিন্দি উভয় ভাষাতেই প্রচলিত ছিলো।

    নিধুবাবুর টপ্পা মূল পঞ্জাবি টপ্পার থেকে একেবারেই ভিন্ন জাতের। সেখানে কাব্যগুণকে সশ্রদ্ধ স্থান ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও তালের ক্ষেত্রে মোটামুটি ভাবে যৎ, আড়াঠেকা ইত্যাদি তালফের্তাসহ প্রযুক্ত হয়, কিন্তু লয়ের দ্রুততা ও বোলকে অনেকগুণ ধীর করে ফেলা হয়। শ্রদ্ধেয় রাম কুমার চট্টোপাধ্যায়ের কাছে শুনেছি তিনি যাঁর কাছে টপ্পার তালিম নিয়েছিলেন তিনি মৌজুদ্দিনের ঘরের লোক। তিনি নাকি বলতেন মীড়-মুড়কি-দানা পুরো শেষ না করে নিশ্বাস নেওয়া মানা। ভাবা যায়, এক একটা ফেরা কখনো দুই, কখনো আড়াই, কখনো বা আরও বেশি। ছাত্ররা যখন বলতো অতোক্ষণ নিশ্বাস না নিলে মরে যাবো, তিনি বলতেন, তা যাও, ক্ষতি নেই।

    বাঙালির স্বভাবে সেধরণের গানের আদর হয়নি।

  • pi | 72.83.82.169 | ০৮ জুলাই ২০১০ ১৯:৪৪446515
  • শিবাংশুদা,'আমার কি হবে', আমার যেটি জানা, সেটিকে হুলিয়ে টপ্পা বলা চলে।

    একটা কথা শুনেছিলাম, জানিনা কদ্দুর ঠিক ভুল। নিধুবাবুর টপ্পা বলে প্রচলিত সব কটি গান ই নাকি নিধুবাবুর নয়। ঐ সময় বা তার পরেও আরো কেউ কেউ এরকম গান বেঁধেছিলেন, যেগুলি সব ই পরে ওনার নামে চলেছিল।
  • kallol | 115.184.72.227 | ০৮ জুলাই ২০১০ ২১:৪০446516
  • পাই - ওটা পূবের বৈশিষ্ট। পশ্চিমে অন্যের লেখা নিজের বলে চালায়। পূবে নিজের লেখা অন্যের লেখায় মিলিয়ে দিয়ে আনন্দ। রামায়ণ, মহাভারত থেকে লালন হয়ে নজরুল, ওমর খৈয়াম থেকে রুমী হয়ে মীর-তকি-মীর সবার রচনাই ওরকম মিশেলে ভর্তি। ব্যতিক্রম রবিবাবু তার অসম্ভব সংগঠিত থাকার কারনে, আর জ্ঞানীদের মুখে শুনেছি আমীর খসরু ও মির্জা গালিব। এঁদের রচনার এমনই গঠন ছিলো যা নকল করাও ছিলো দু:সাধ্য।
  • Shibanshu | 117.195.139.190 | ০৮ জুলাই ২০১০ ২২:০৬446517
  • খুব সত্যি কথা... নিধুবাবু স্বকালে এমন একটা প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন যে নিজের লেখাও তাঁর নামে চালিয়ে অন্যেরা খুশি হতো। আর গায়কেরা নিজের জানা সব গানকেই নিধুবাবুর নামে চালানোর চেষ্টা করতেন, যাতে মানুষ মন দিয়ে শোনে।
  • pi | 128.231.22.89 | ০৯ জুলাই ২০১০ ০৮:৩৪446519
  • শিবাংশুদা, 'বাঈজী সংস্কৃতির গান' বোলে তো ? ঠুমরী, দাদরা ?
    আরো কিছু কথা ও কোশ্চেন আছে। পরে করবোখন।
  • Souva | 125.18.104.1 | ০৯ জুলাই ২০১০ ১০:৩০446520
  • ব্যাপক থ্রেড। অনেক কিছু জানা যাচ্ছে আলোচনা থেকে।

    একটা প্রশ্ন।

    সুরের থেকে কথা-কে বেশি প্রাধান্য দেওয়াটা কি বাঙালি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতবিমুখতার একটা কারণ? যা দেখছি, কবিগান, কীর্তন (মানে বঙ্গে প্রচলনের পরবর্তী পর্যায়), আখড়াই, হাফ-আখড়াই, মায় গোপাল উড়ে, নিধুবাবু, রামপ্রসাদ, দাশরথি রায় হয়ে রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলাল, অতুলপ্রসাদ, নজরুল অবধি বাংলা গান কখনো লিরিকবিহীন হয়নি। অন্যদিকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে মাত্র দু-তিন চরণ ফিরিয়ে গাওয়া হয় (ভুল হলে সংশোধন করে দেবেন) ও মূল লক্ষ্য থাকে সুরের বিস্তারের ওপর। একমাত্র গজল বোধহয় কিছুটা ব্যতিক্রম।

    তো, গানের লিরিকের ওপর জোর দেওয়াটাই কি বাঙালিকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে?
  • kallol | 124.124.93.205 | ০৯ জুলাই ২০১০ ১২:৫৭446521
  • গজল, নজম, ঠুমরী, দাদরা, কাজরী, ভজন, গীত এগুলোকে ""পক্কা গানা"" বলেন না শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মহাজনেরা।
    ওগুলো মূলত: উ: ভরতের কাব্যগীতি। তাই এসব গানে বাণীর গুরুত্বও কম নয়।
    কিন্তু খেয়ালে বা ধ্রুপদ-ধামারের বন্দিশও বাণী দিক থেকে বেশ সম্বৃদ্ধ।
    স্মৃতি থেকে লিখছি - একটু ভুল হতে পারে
    য়মন ১
    গুরু বিনা ক্যায়সে গুণ গাওয়ে / গুরু না মানে তো গুণ নহি আওয়ে / গুণীজন মে বে-গুণী কহাওয়ে # মানে তো রিঝাওয়ে সবকো / চরণ লাগে সাহ ভিখনকে / যব আয়ে অচপল তাল সুর সো
    য়মন ২
    ম্যাঁয় ওয়রি ওয়রি জাউঙ্গী প্রিতম প্যারে / কব আওগে মোরে মন্দরওয়া # ফুলবন সেজ সওয়ারুঙ্গি ওয়াদিন / প্রাণ পিয়া যব মোরে ঘর আইলা / গর (গল) ডারুঙ্গি (ডালুঙ্গি) মোতিয়নকে হারওয়া

    পূর্বী
    জীতে জীতে দিন বহত বিতে
    জীত যাউঁ সব সুনা লাগে
    চয়ন নহি পাউঁ কছু ঋতে
    (গানটা আরও আছে মনে পড়ছে না)

    খেয়াল বা ধ্রুপদ ধামার এমন ভাবে গাওয়া হয় যে কথা বোঝা যায় না। ব্যতিক্রম (আমার শোনা) কৌশিকী।

    রাতে আবার আসছি।

  • kallol | 115.242.184.218 | ১১ জুলাই ২০১০ ১৫:১৮446522
  • ভৈরবী -
    বাট চলত নঈ চুণরী রং ডারি
    রে অ্যায়সো বেদর্দা বনোয়ারী
    অ্যায়সো নিপাট নিডর মানে নাহি লাঙ্গার
    আপনি ধিঙ্গা ধিঙ্গি করত বরা জোরী
    হে মোরেরাম

    হংসধ্বনি -
    লাগি লগন পতি সখী সন
    পরম সুখ অতি আনন্দন
    অঙ্গ সুগন্ধন চন্দন মাথে তিলক ধরে
    মৃগনয়ান অঞ্জন পওয়ন দেত
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন