এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • উপকথা (২)

    Tim
    বইপত্তর | ০২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ২৭৫০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • tan | 131.95.121.132 | ১৬ নভেম্বর ২০০৭ ২২:৪৫391880
  • টিম,
    খুব সুন্দর উপকথাগুলো। আরেকটা শোনাবে?
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৭ নভেম্বর ২০০৭ ০৫:৫৩391881
  • (৩)
    এক আইনো জাদুকরের রাগ ছিলো জনৈক গ্রামবাসীর ওপর। তাই সে সুযোগ খুঁজছিলো, কেমন করে লোকটিকে নিকেশ করা যায়। সেই গ্রামবাসী কিন্তু এসব কিচ্ছু টের পায়নি। সে জাগতিক যেকোনো সুখ-দু:খ- সমস্যা অকপটে জানায় জাদুকরের কাছে। বিরাট উঁচু এক পাহাড়ের মাথায় কুঁড়েঘর বানিয়ে থাকতো সেই জাদুকর। আর সেখানে সময়ে অসময়ে এসে দুদন্ড গল্প করে যেত ঐ সরল গ্রামবাসী যুবক। একদিন কথায় কথায় জাদুকর জানালো, পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিচে যে সমস্ত মেঘ দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলো সব জাদু-মেঘ। কেউ যদি ওপর থেকে লাফ দিয়ে সেগুলোতে চড়ে বসতে পারে, তাহলে সহজেই সে আকাশপথে পৃথিবী ভ্রমণ করে ফেলতে পারবে। এই কথা শুনেই তো সেই ছেলেটি ভয়ানক উত্তেজিত হয়ে উঠলো। তার বয়সও কম, মনে কৌতূহলের সীমা নেই, সর্বদাই অজানকে জানার স্বপ্নে মশগুল। তৎক্ষণাৎ সে ছুটলো চূড়ার দিকে। সেখানে উঠে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে সাদা আর নিলচে মেঘ ওড়নার মত করে ঘিরে রেখেছে, ঠিক যেন একটা আংটি পরিয়ে দিয়েছে কেউ। বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে সে ঐ মেঘ লক্ষ্য করে লাফ দিলো। পলকেই ঘন মেঘের রাজ্যে হারিয়ে গেল তার অবয়ব। আড়াল থেকে এইসব দেখে জাদুকর বেজায় খুশি হল। সে এটাই চেয়েছিলো। এখন নিশ্চিন্ত হয়ে সে ফিরে গেল নিজের আস্তানায়।
    ওদিকে সেই ছেলেটি কিন্তু মারা যায় নি। সে মুহুর্তকালের জন্য অজ্ঞান হয়ে ছিলো। তারপর চোখ মেলেই নিজেকে একটা প্রকান্ড মেঘের ওপর আধশোয়া দেখে সেস বুঝলো, জাদুকরের কথা নির্ভুল। সত্যি সত্যিই সে মেঘে চড়ে পৃথিবীর ওপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। এইভাবে বহুদিন সে ঘুরলো। সারা পৃথিবীর মানচিত্র এঁকে, বহু মানুষের সাথে আলাপ করে, অগাধ অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এলো সে একদিন। এসেই জাদুকরকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানালো। গ্রামের মানুষের কাছে তার খাতিরও গেল বেড়ে।
    এইসব দেখেশুনে জাদুকর তো রেগে আগুন। সে অবিলম্বে ঠিক করে ফেললো, সেও ঐভাবে বিশ্বভ্রমণে যাবে। সেদিন বিকেলেই সে পাহাড়ের মাথায় উঠে লাফ দিলো। আর নিজের স্বভাবের উপযুক্ত শাস্তি-ই পেল সে। নিমেষের মধ্যে তার ছিন্নভিন্ন দেহ খাদে ছড়িয়ে পড়লো। সেদিনই রাত্রে গ্রামের সেই সরল সাহসী যুবককে স্বয়ং ঈশ্বর স্বপ্নে দেখা দিলেন। আইনোদের শাসনের ভার পেল ঐ সৎ, অকপট যুবক।
    ----------------
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৭ নভেম্বর ২০০৭ ০৬:৪২391882
  • * নীলচে
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৭ নভেম্বর ২০০৭ ১০:৩৮391883
  • (৪)
    অনেকদিন আগের কথা, পৃথিবী তখনও মানুষের বাসযোগ্য হয়নি। বেশিরভাগ জায়গাই পাথুরে, প্রধানত শিকার করেই খাবার সংগ্রহ করতে হত আইনুদের তখন। একবার হল কি, এক বীর যোদ্ধা ও দক্ষ শিকারী, নাম তার ধরা যাক তাকিওশি, সেই দুর্গম পাহাড়ের ঘন অরণ্যে শিকার খুঁজছিলেন। কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ব্যর্থ ঘোরাঘুরি করে, এক সময় দেখা মিলল এক ভালুকের। তাকিওশি ভালুকটার পিছনে ধাওয়া করে পাহাড়ের এক সংকীর্ণ গুহামুখে পৌঁছলেন। কিন্তু তীর ছোঁড়ার আগেই সেই ধূর্ত ভালুক গুহার ভেতরে অদৃশ্য হল। বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে সেই বীর শিকারীও ঢুকে গেলেন গুহায়। কিন্তু কোথাও জন্তুটাকে দেখা গেল না। বরং অনেক দূরে আবছা আলো দেখে বোঝা গেল অন্যদিকেও একটা মুখ আছে গুহাটার।
    গুহার অন্য মুখটা দিয়ে বেরিয়ে তাকিওশি তো অবাক। সেটা একেবারেই অন্যরকম এক জগৎ। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিলো এসব মানুষের তৈরী নয়। কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার মত সময় ছিলোনা তাকিওশির। তিনি ভালুকটার খোঁজ করতে লাগলেন। বহুক্ষণ খুঁজেও অবশ্য সেটাকে আর পাওয়া গেল না। শিকারী নিজেই তখন ক্লান্ত ও হতাশ। তার ওপরে খিদেও পেয়েছে বেশ। সামনেই ছিলো অদ্ভুৎ এক গাছ, আঙুরের মত থোকা থোকা লোভনীয় ফল ঝুলছিলো সেথায়। সেই ফল খেয়ে, ঝর্নার জলে তৃষ্ণা মিটিয়ে, গাছতলায় ঘুমিয়ে পড়লেন তাকিওশি।
    ঘুম থেকে উঠে তো তাঁর চক্ষুস্থির! কোথায় সুঠাম স্বাস্থ্যবান এক যুবক তাকিওশি, তার জায়গায় হিলহিলে এক ময়াল সাপ পড়ে আছে গাছতলায়! কি আর করেন, মনের দু:খে সেই স্বর্গসম বাগান ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে লাগলেন তিনি। বেশ কিছুদূর যেতে দেখা গেল এক বিশাল পাইন গাছ, তার মাথা এত উঁচু যে মেঘে ঢেকে আছে, ভাল দেখা যায় না। পথশ্রমে ক্লান্ত ছিলেন তাকিওশি, আর রাত্রীও হয়ে গেছিলো। তাই সেখানেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন তিনি। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখলেন এক দেবীকে, তিনি এসে জানালেন, সাপজন্ম থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই উপায়- ঐ পাইনগাছের চূড়া থেকে লাফাতে হবে। এর পরের মুহুর্তেই তাকিওশির ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। দেবীর কথা মত মগডালে উঠে লাফানো মাত্র ফিরে পেলেন মানুষের চেহারা। যথানিয়মে দেবীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন তাকিওশি।
    এর ঠিক দুদিন পরে আবার সেই দেবী স্বপ্নে দেখা দিলেন। জানালেন, মানুষের চেহারা ফিরে পেলেও সাত দিনের বেশি পৃথিবীতে থাকতে পারবেন না তাকিওশি। স্বর্গের ফল খাওয়ার জন্য তাকিওশির মানুষজন্ম পূর্ণ হয়েছে। পৃথিবীতে থাকার আর অধিকার নেই তাঁর। অতএব, পরিজনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফিরে যেতে হল তাকিওশিকে। সেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষায় ছিলেন এক অপূর্বসুন্দরী অপ্সরা। ইনি-ই ভালুকের ছদ্মবেশে তাকিওশিকে ভুলিয়ে নিয়ে এসেছিলেন স্বর্গের পথে। এরপর তাঁদের মহা ধূমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল, আর তারপরে রূপকথায় যেমন হয়... তাঁরা মহানন্দে... ইত্যাদি ইত্যাদি।
    ----------
  • Tim | 204.111.134.55 | ২০ নভেম্বর ২০০৭ ১২:৩৪391884
  • প্রচুর টাইপো হয়েছে, দু:খিত।
  • Tim | 204.111.134.55 | ২০ নভেম্বর ২০০৭ ১৩:১৪391885
  • (৫)
    এক গ্রামের সর্দার হঠাৎ করে মারা যাওয়ায় ভয়ানক হইচই শুরু হল। অনেকেই সর্দার হওয়ার দাবিদার, কেউই এক ইঞ্চিও জায়গা ছাড়তে রাজি নয়। তখন বৃদ্ধ ও অভিজ্ঞ গ্রামবাসীরা মিলে ঝাড়াই বাছাই শুরু করলেন। অনেক পরীক্ষার পরে লড়াইটা দুজনের মধ্যে এসে ঠেকল। এর মধ্যে একজন নদীর স্রোত সম্পর্কে অনেক কিছু জানত বলে তার নাম হয়েছিলো ""খরস্রোত""। অন্যজন আবার নদীমোহনা সম্পর্কে অনেক খবর রাখত, তাই তার নাম ছিলো "" সাগরমুখ""। দুজনের কেউ কাউকে সহ্য করতে পারত না। দুজনেই নানান ফন্দি আঁটত কি করে অন্যজনকে জব্দ করা যায়।
    তো, গ্রামের মাথারা অনেক চেষ্টা করেও এই দুজনের থেকে একজনকে বেছে নিতে পারলেন না। দুজনেই যাকে বলে ""সেয়ানে -সেয়ানে""। তখন হাল ছেড়ে দিয়ে তাঁরা ওদেরকেই দায়িত্ব দিলেন একে অন্যকে পরীক্ষা করার। মহানন্দে দুজনে রওনা দিলো শেষ বোঝাপড়া করার জন্য। অনেকটা পথ চলে তারা মোহনার কাছে এসে পৌঁছলো। সাগরমুখ তখন চালাকি করে খরস্রোতকে বলল, "" এই সমুদ্র আমাদের অনেক অপকার করে। যখন তখন ঝড়ে আমাদের গ্রাম কে গ্রাম নষ্ট হয়, কত মানুষের প্রাণ যায়। তুমি যদি সমুদ্রের সমস্ত জল শুষে নেওয়ার কোন ব্যবস্থা করতে পারো, তবে বুঝবো তুমি যথার্থই সর্দার হওয়ার যোগ্য। আর না পারলে স্বীকার করে নাও যে আমিই সর্দার।""
    খরস্রোত একটূ ঘাবড়ে গিয়েও সামলে নিল। সে তক্ষুনি ঝুলি থেকে একটা ছোট পাত্র বের করে তাতে এক আঁজলা সমুদ্রের জল ভরল। তারপর দুয়েক ফোঁটা পান করেই বাকিটা ফেলে দিয়ে সাগরমুখকে বলল, "" আমি পরীক্ষা করে দেখলাম, সমুদ্রের জলে কোন দোষ নেই। যে সমস্ত নদী এসে এতে মিশেছে, তারাই স্থলের অভিশাপ বয়ে এনে এতে মেশায়। তাই এত ঝড় হয়, তাই আমাদের এত কষ্ট। এখন, তুমি যদি একটু কষ্ট করে নদীর মুখগুলো বন্ধ করে দিতে পারো তাইলে আমার একটু সুবিধে হয়। তখন আমি সমস্ত দুষ্ট জল শুষে গ্রামকে বিপন্মুক্ত করে দেবো।"" খরস্রোতের এই উপস্থিত বুদ্ধিতে সাগরমুখ মহা মুশকিলে পড়ে গেল। কিন্তু লোক হিসেবে সে মন্দ ছিলো না, তাই নিজের ভুল বুঝতে পেরে তক্ষুনি স্বীকার করে নিল যে খরস্রোতেরই সর্দার হওয়া উচিত। দুজনে খুব একচোট কোলাকুলি করে নিয়ে বন্ধু হয়ে ফিরে চলল গ্রামের দিকে। গ্রামে আবার শান্তি ফিরে এল।
    -----------

  • tan | 131.95.121.132 | ২১ নভেম্বর ২০০৭ ২৩:৩৭391886
  • টিম,
    উপকথার কি হলো?
  • Tim | 204.111.134.55 | ২২ নভেম্বর ২০০৭ ০০:২৩391887
  • উপকথা রান্না হচ্ছে। নেমে গেলেই ডাক পড়বে। ততক্ষণ.... :-)))
    আর কেউ কিছু লিখছে না দেখে খুবই দুক্‌খু পেলুম।
  • Tim | 204.111.134.55 | ২০ ডিসেম্বর ২০০৭ ১১:৩৭391888
  • হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পঞ্চম বৃহত্তম দ্বীপ মোলোকাই। সেখানকার ভূমিকন্যা হ্যারিয়েট নি মুখে মুখে ফেরা গল্পগুলো একসুতোয় গেঁথেছিলেন Tales of Molokai বইতে। সেখান থেকে কয়েকটা গল্পও জমা হয়ে থাকুক এখানে।
  • Tim | 204.111.134.55 | ২০ ডিসেম্বর ২০০৭ ১২:২৮391890
  • প্রথমেই মোলোকাই এর জাতীয় নায়ক, মহান দৌড়বীর কাওহিলির গল্পটা শুনে নেওয়া যাক।
    কাওহিলি অবিশ্বাস্যরকম জোরে মাইলের পর মাইল দৌড়োতে পারতো। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটে ছুটে খবর আনা নেওয়ার কাজে তার জুড়ি ছিলোনা। দ্বীপের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা ছোটখাটো খাঁড়ি বা গভীর ফাটলগুলো সে পেরিয়ে যেত অনায়াসে, কখনও বা এক এক লাফেই।
    মজার ব্যাপার হল, একেবারে ছোটবেলায় কাওহিলি মোটেই সেরকম দুর্দান্ত কিছু ছিলোনা। খুবই মৃদুভাষী, লাজুক ও বাধ্য ছিলো সে। অসম্ভব শক্তিশালী হয়েও সে উদাসীন ছিলো শিকার বা যুদ্ধবিগ্রহের মত বিষয়ে, এমনকি খেলাচ্ছলে গাঁয়ের ছেলেরা রোজ বিকেলে যে দৌড়োনোর প্রতিযোগিতা করে, তাতেও সে কোনদিন অংশ নেয় নি। তার দিন কাটতো মাছ ধরে, বন থেকে কাঠ কুড়িয়ে আর অবসর সময়ে অন্যান্য ফাইফরমাস খেটে।
    কাওহিলির বাবা ছেলের ওপর খুব খাপ্পা ছিলেন, তিনি চাইতেন ওঁর ছেলেও সবার সাথে পাল্লা দিয়ে দস্যিপনা করবে। কিন্তু শত বুঝিয়েও কাওহিলিকে বারমুখো করা গেল না। তখন তিনি হুমকি দিলেন, আগামী তিনমাসের মধ্যেও যদি কাওহিলি গাঁয়ের ছেলেদের সাথে খেলাধুলো না করে, তাহলে তাকে পাশের দ্বীপে আত্মীয়দের কাছে রেখে আসা হবে। এতে কাওহিলি আর তার মা দুজনেই মহা বিপদে পড়লেন। অনেক ভেবে ওঁরা একটা উপায় বের করলেন। ঠিক হল রাতের অন্ধকারে চুপিচুপি কাওহিলি শিখবে কিভাবে জোরে দৌড়োতে হয়।
    দেখা গেল, কাওহিলির মা শিক্ষিকা হিসেবে অসামান্যা। ছেলেও তার মা-বাবার কাছছাড়া হতে চাইছিলো না। রাতের পর রাত তাই কঠোর পরিশ্রম করে অভ্যেস করতে লাগলো সে। অচিরেই দেখা গেল সমুদ্রতীরের দুর্গম জায়গাগুলো দিয়েও সে অনায়াসে দৌড়োতে পারছে। একই গতিতে লম্বা লম্বা পা ফেলে সে ছুটে যেতে পারতো ঘন্টার পর ঘন্টা। মা বুঝলেন, সময় হয়েছে ছেলের পরীক্ষা দেওয়ার।
    তিনমাস পূর্ণ হলে পর কাওহিলি তার বাবার কাছে গিয়ে জানালো যে সে দৌড়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চায়। অত্যন্ত খুশি হয়ে সম্মতি দিলেন বাবা। সেদিন বিকেলে গাঁয়ের মাঠে হাজির হল কাওহিলি। তাকে দেখে তো ছেলের দল হেসেই অস্থির। কস্মিনকালে যে মাঠে পা দেয়নি, সে কিনা আসে দুর্দান্ত সব দৌড়বাজের সাথে লড়তে! তারা অনেক টিটকিরি দিলো। শুনেটুনে তো কান গরম করে কাওহিলি প্রায় ফিরেই যায়, শেষে মা এসে বকেঝকে আবার পাঠালেন।
    অবশেষে সবাই তৈরী হল দৌড়ের মাঠে। বিচারক সঙ্কেত দিতেই সবাই অবাক হয়ে দেখলো ঐ সাতচড়ে রা নেই লাজুক ছেলেটা পাখির মত যেন উড়ে বেরিয়ে গেল সবার সামনে দিয়ে। চোখের পলক ফেলার আগেই কাওহিলি জিতে গেল। নিয়ম ছিলো, জয়ী দৌড়বাজ বাড়ি ফিরে প্রথমেই যে বাসনটা হাতের কাছে পাবে, সেটা পেটাবে, আর সবাই সেই সঙ্কেতে বুঝে নেবে কে জিতলো। কাওহিলি বাড়ি ফিরে সেইরকম করতেই ওর বাবা-মা আনন্দে আত্মহারা হলেন। কাওহিলিও কাঁদছিলো তখন।
    এরপর কারুর আর সন্দেহ ছিলোনা যে কাওহিলি দিনে কালে একটা মস্ত কিছু হবে। সমস্ত দ্বীপ মিলিয়ে যে দৌড়ের প্রতিযোগিতা হত সেখানেও সে জিতেই ফিরতো। কিন্তু তার আসল কীর্তি ছিলো আরো বড়ো, যার জন্য তাকে মোলোকাইতে পুজো করা হতো পরবর্তীকালে।
    একবার, তখন কাওহিলি সবে কুড়িতে পা দিয়েছে, অনাহিকি গ্রামের সর্দার যুদ্ধঘোষণা করলেন। অনাহিকি আরো দুর্দান্ত একরোখা জাতি, কাওহিলিদের গ্রাম কাইনালুর থেকে বেশ কিছুটা দূরেই তাদের বাস। খবর পেয়েই কাওহিলি ছুটে গেল অনাহিকিতে। রাতের অন্ধকারে অনাহিকির সবথেকে ভালো অস্ত্রগুলো চুরি করে যখন সে পালাতে যাবে, তখনই তাকে দেখে ফেললো রাতপ্রহরীরা। শুরু হল রোমাঞ্চকর এক দৌড়। অস্ত্রের বোঝা পিঠে ফেলে কাওহিলি দুরন্ত গতিতে ছুটে চললো পাহাড় ঝর্না নদী পেরিয়ে। একেবারে ওয়ইলাপাই উপত্যকায় পৌঁছে তবে থামলো সে। সেখানে একটা গুপ্ত জায়গায় চোরাই অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখতে না রাখতেই অনাহিকির লোকজন এসে পড়ায় আবার শুরু হল তার দৌড়। এইভাবে মাইলের পর মাইল দৌড়ে একসময় অনাহিকির সৈন্যেরা নাজেহাল হয়ে গেলে পর, কাওহিলি ঘুরপথে বাড়ি ফিরে এলো। যুদ্ধ থেমে গেল। অনাহিকির লোকজন আর কোনদিন আক্রমণ করেনি।
    সেই থেকে কাওহিলি হাওয়াইএর রূপকথার নায়ক। ছুটতে ছুটতে ওয়ইলাপাই এর একটা চওড়া স্রোত সে এক লাফেই পেরিয়ে গেছিলো বলে সেই জলধারার নাম হয়েছে কাওহিলি'স লিপ।
    --------------
  • tan | 131.95.121.132 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০২:৫৪391891
  • তুলে দিলাম,নতুন গপ্পো দাও।
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ১০:০৫391892
  • -:মরক্কোর উপকথা:-
    ( এই গল্পটার সাথে আমাদের দেশের রূপকথার গল্পের প্রচন্ড মিল রয়েছে দেখে অবাক হলাম। গল্পটা Moroccan Folktales থেকে নেয়া, আরবি থেকে অনুবাদ করেছেন Jilali El Koudia। আরো অনেক গল্পের মতই এটিও অনুবাদক প্রাচীন কথকদের থেকে পেয়েছেন।)

    অনেকদিন আগে এক গ্রামে পাশাপাশি তিন বাড়িতে তিনটি মেয়ে থাকতো। একসাথে খেলাধুলো করে বড়ো হয়েছে, তাই তাদের মধ্যে ভারি ভাব, সর্বদাই একসাথে ঘোরাফেরা করে। একদিন তিন বান্ধবী মিলে পোষা ছাগলের জন্য ঘাস তুলতে গিয়ে বনের মধ্যে পথ হারিয়ে ফেললো। যেদিকেই যায়, খালি জঙ্গল ঘন থেকে ঘনতর হয়! শেষে অনেক হাঁটার পরে, খানিকটা খোলামতন জায়গায় এসে ওরা বিশাল একটা প্রাসাদ দেখতে পেল।
    ঐ প্রাসাদে এক ধনী ব্যবসায়ী থাকতেন। তিনি তখন সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়ে তিন বান্ধবীকে দেখতে পেলেন। তাদের তখন কাঁদো কাঁদো অবস্থা। ওরা কিনা কোনোদিন বাড়ি থেকে বেশিদূর যায় নি, তাই কেউই ঠিক করে বলতে পারলে না বাড়ি কোনদিকে। তখন ঐ ভদ্রলোক বললেন, "" বাড়ি ফিরে যেতে না পারলেও তোমাদের চিন্তা নেই, এখানেই কাছেপিঠে তোমরা সুপাত্র দেখে বিয়ে করে ঘর-সংসার করো""। এই পরামর্শটা সবারই মনে ধরলো। কিন্তু মুশকিল হলো যখন তিনজনেই ঐ ভদ্রলোককেই বিয়ে করতে চাইলো। আসলে ঐ অগাধ ধনসম্পদ আর প্রতিপত্তি দেখে তিনজনেরই মাথা ঘুরে গেছিলো। তাই একে একে তিনজনে প্রস্তাব দিলো:
    ১ম: আমাকে বিয়ে করলে আপনার অন্নচিন্তা থাকবে না। আমি এক দানা গম থেকে বিশাল রুটি বানাতে পারি।
    ২য়: আমাকে বিয়ে করলে আমাকে বিয়ে করলেও আপনার খাবারের অভাব হবে না। আমি একটুকরো সব্জি থেকে এক গামলা সুপ বানাতে জানি।
    ৩য়: আমার সাথে বিয়ে হলে আপনাকে এক অলৌকিক গুণসম্পন্ন ছেলে উপহার দেবো। তার কপালে স্বর্ণতিলক আঁকা থাকবে।

    এইসব শুনে ব্যবসায়ী মনস্থির করতে না পেরে তিনজনকেই বিয়ে করে ফেললেন। তখন দেখা গেল অলৌকিক ক্ষমতার গল্পগুলো বেশিরভাগই ভুয়ো। প্রথম আর দ্বিতীয়জন কিস্যু বানাতে পারলো না। তবে তৃতীয়জন একবছর পরে সত্যি সত্যি কপালে সোনার চিহ্নযুক্ত একটি সন্তানের জন্ম দিলো।
    এই দেখে বাকি দুজন তো হিংসায় জ্বলেপুড়ে ছারখার। শিশুটি জন্মাবার পরেই তার কড়ে আঙুল কেটে নিয়ে আঁতুড়ঘরের খাটের নিচে রেখে দেওয়া হলো। তারপর বাচ্চাটিকে অন্ত:পুরের এক কর্মচারীকে দিয়ে জ্যান্ত কবর দিতে পাঠানো হলো। এসবই হলো যখন তৃতীয় মেয়েটি গভীর ঘুমে অচেতন। পরদিন বাড়ির কর্তা ফিরলে তাকে বলা হলো ঐ জাদুকরী নিজের ছেলেকে খেয়ে ফেলেছে। প্রমাণস্বরূপ কাটা আঙুল দেখানো হলো। একে অসুস্থ, তায় ছেলে হারানোর দু:খে দিশেহারা, মেয়েটি নিজের স্বপক্ষে কিছু বলতেই পারলো না। তার কঠোর শাস্তি হয়ে গেল। তার নতুন ঠিকানা হলো গ্রামের বাইরে এক পর্ণকুটির।
    এরপর অনেকদিন কেটে গেছে। সেই যে দৈবশক্তিসম্পন্ন ছেলে, সে কিন্তু মরেনি। কবর থেকে কিভাবে যেন তার কান্নার শব্দ এক কাঠুরের কানে যায়। তিনি সেই শিশুকে সন্তানস্নেহে মানুষ করেন। তারপর একদিন পালকপিতার কাছে নিজের কাহিনী শুনে ছেলেটি বেরিয়ে পড়ে শিকড়ের টানে। সঙ্গী হয় একটা নেকড়ে, একটা ভেড়া আর একটা শিকাড়ি কুকুর।
    দিন যায়। পোষ্য জন্তুদের নিয়ে ছেলেটি দেশ থেকে দেশান্তরে ঘোরে। সবাই ওদের দেখলেই অবাক হয়ে বলে:

    ইয়াল্লা! আজব তোমার দস্তুর
    নেকড়ে-ভেড়ার দোস্ত শিকারি কুকুর?

    তাইতে ছেলেটি হেসে গেয়ে ওঠে :

    মধুর স্বভাব এদের, হোক না পশু
    মায়ের খাদ্য কভু হয় কি শিশু?

    লোকে হেঁয়ালিতে মজা পেয়ে হাত মিলিয়ে চলে যায়, কিন্তু কেউ কোনো খোঁজ দিতে পারেনা ওর হারিয়ে যাওয়া মায়ের। এইভাবে আরো কিছুদিন কাটলো। তারপর একদিন হঠাৎ একজন অবাক হয়ে বললো, "" হ্যাঁ আমি জানি এরকম হয়। আমি নিজে এরকম একজন মাকে দেখেছি।"" এইকথা শুনেই তো ছেলেটি চললো সেই ব্যক্তির সাথে। তারপর যথানিয়মে মা-ছেলের মিলন হলো। সমস্ত গল্প শুনে দুজনে গেল ঐ ব্যবসায়ীর কাছে। কপালে ঝকঝকে সোনার রেখা দেখে একপলকেই চিনলেন তিনি হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে। খুব একপ্রস্থ কান্নাকাটির পরে সবাই মহানন্দে ঐ প্রাসাদে থাকতে লাগলো, অবশ্য দুই দুষ্টু সৎমা কে শাস্তি পেতে হলো নিজেদের কৃতকর্মের।
    ----------------

  • arun | 60.48.204.12 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ১০:২৪391893
  • এইসব গল্পের কোনো বই পাওয়া যায় কি? যদি একত্রে না পাওয়া যায় আপনি সংকলন করে একটা বই বাজারে ছাড়ুননা ছোটদের জন্য বেশ চলবে।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন