এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সেখ সাহেবুল হক | 57.11.9.255 | ১৭ জুলাই ২০১৭ ০৯:৩৩367299
  • আমি? আপনি? বা ভিড়ের কেউ!
    ------------------------------------------------------------
    কোনও এক ধর্ষণের খবরের নীচে ধর্ষকই লিখে গেছে - “শালাকে ক্ষতবিক্ষত করে লবনের স্তূপে শুইয়ে রাখা হোক”, অথবা “শুয়োরের বাচ্চার ধোন কেটে নেওয়া উচিত”।

    হয়তো আমিই সেই ধর্ষক। আমি নয়? তাহলে নিশ্চয় আপনি! বা এই ভিড়ের কেউ। আমাদের মধ্যেই মিশে আছে। তারাও খায় দায় ঘুমায়, আড়াল পেলে বিচি চুলকায়। রবিবারে বাড়িতে মাংস হয়, বাসে-ট্রেনে বাড়ি ফেরে...।

    হয়তো আমি ধর্ষক হয়ে বসে আছি, পাশের সিটের উনিও হয়তো ধর্ষক। কিন্তু কি আশ্চর্যজনক, খবরে না এলে ধর্ষক চেনা যায় না।
    শুধু চিনলে হয় না। প্রমাণ করতে লাগে।
    “কতটা ঢুকিয়েছিলো? নাকি উপর উপর”, “ভেতরে ফেলেছিলো?” বা “টাকা কম দিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন?” এইসকল ভদ্র প্রশ্ন, গাদাগুচ্ছের টেস্ট, প্রমাণ লোপাট ইত্যাদি পেরিয়ে যদিওবা প্রমান হয় মেয়েটি ধর্ষিতা হয়েছেন।
    কি হবে তাতে? মাসকয়েকের জেল! আরেকটা পুলিশ ফাইল বা ক্রাইম পেট্রোলের এপিসোড?
    ও হ্যাঁ বলা হয়নি। ধর্ষনের পরীক্ষা করতে করতে গিয়ে ডাক্তারবাবুও বাসি জিনিস ভেবে মজা নিয়ে নিয়েছেন। নিজের বউ তো আছেই, কিন্তু ধর্ষিতাকে চেখে দেখায় অন্য এক মজা।

    আমারই ক্লাসে পড়তো গোপাল হাজরা। কাকদ্বীপের স্কুলে এক বেঞ্চে বসেছি। সেক্সের কথা আলোচনা করেছি, মেয়েদের শরীর নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছি। তারপর স্কুল ছাড়লো গোপাল।
    একদিন শুনলাম সে এবং তার দলবল এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে গলায় তার জড়িয়ে মেরে ফেলেছে।
    আমি স্কুলজীবনে এমন ভাবিনি যে আমার পাশে বসা ছেলেটিই ধর্ষক হবে। কারন সেও একদিন প্রেমে পড়েছিলো কারো। সেই ঘটনায় নাকি মূল অভিযুক্তরা নাকি ফাঁকফোকর পেয়েছে...।

    ধর্ষকরা আসলে আমাদের মতোই দুপেয়ে। বাইরে থেকে চেনার উপায় নেই। ক্লান্ত বউয়ের অসম্মতির পরোয়া না করে চুলের মুঠি ধরে - “দিবি না মাগী…” বলে লেগে পড়া পাশবিকতার বিচার হতে শুনিনি। অথচ এমন ধর্ষক হয়তো আমার সাথেই সিগারেট খায়।

    বাসে, ট্রামে, অফিসে, পার্কে, গলিতে। আমারই মতো কেউ অপেক্ষা করে। টিউশন থেকে ফেরা আমার প্রেমিকার পোশাক ছিঁড়ে তাকে জোর করে ভোগ করবে। অথচ সেই আমির সাথে নিজেকে মেলাতে পারি না। কেমন যেন ধর্ষকামী চিন্তাভাবনা ছড়িয়ে যাচ্ছে। অনেকসময় যে জিনিস চাইলেই পাবো, সেখানেও তাকে কেড়ে নেওয়ার অদম্য ইচ্ছে।

    ধর্ষণটা আজকাল যেন দলবেঁধে শিকার করার মতো। কেমন লোমখাড়া রোমাঞ্চকর। শিকার করা পশুকে আয়ত্বে এনে ক্ষতবিক্ষত করে রক্ত দেখার সুখ যে বুঝেছে, তার অনুতপ্ত হওয়ারও কোনও সুযোগ থাকে না।

    লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করার সুবাদে একটা অন্য দুনিয়া দেখি। জনসমক্ষে চালিয়ে দেওয়া নীলছবি। বাবার বয়সী লোক, ছেলের বয়সীদের সাথে বসে হাসতে হাসতে দেখছেন, টিপ্পনি করছেন। ইয়ার্কি মেরে কারো যৌনাঙ্গ চেপে ধরা। অশ্লীল সব কথায় ভরে যাচ্ছে কামরা। “তাপস ওর বৌকে না এমন কুত্তার মতো…”, “তুই শালা জাপানি লাগাবি, তোর তো *** ক্ষমতাও নেই…”। পাশে দাঁড়িয়ে আমার সদ্য গোঁফ গজানো ভাই। এই সভ্য সমাজের হয়ে আমি ওর কাছে ক্ষমা চাইতে গিয়েও ওর দিকে তাকাতে পারি না!

    ভিড় ট্রেনে উঠেছেন অল্পবয়সী বউ, সাথে আগলে রাখার কেউ নেই। ভিড়ের সুযোগ নিয়ে যে মাঝবয়সী লোকটি বউটির পেছোনে যৌনাঙ্গ বুলিয়ে কিঞ্চিত সুখ খুঁজে নিচ্ছেন। তা আমার চোখে পড়ে। বৌটি কিছু বলতে পারছেন না লজ্জায়। আমি থাকতে না পেরে বলে উঠি, - “দিদি, জানলার দিকে কিছুটা ফাঁকা আছে। এদিকে চলে আসুন”। আমি জানি একচুল নড়বার জায়গা নেই, কিন্তু তবুও এই কথায় যদি কিছুটা প্রভাব পড়ে!

    জিআরপিকে বলবো? সে কথা বহুবার মনে হয়েছে। কিন্তু লাভের লাভ কিছু হবে না। বরং আমার দেহ পড়ে থাকবে গোচরণের কোনও জমির ধারে!
    এই যে কামরায় কামরায় গ্রুপবাজি, এই নোংরামির কাছে কোনও যুক্তিই খাটে না।

    কোনও কলেজছাত্রীর গায়ে হাত দিয়েছে কেউ। মেয়েটি চেঁচিয়ে উঠেছে। প্রতিবাদ করছে।
    - “আপনার ভিড়ে সমস্যা হলে, লেডিসে যাবেন। ঠ্যালা খেতেই তো জেনারেলে ওঠেন...।”
    তারপর থেকে মেয়েটি যতদূর যাবে, তাকে উদ্দেশ্য করে অপমানজনক কথা বলা হবে।
    প্রতিবাদ করে দেখেছি। “দাদা আপনার বোন হন নাকি? তাহলে আপনার চুলকাচ্ছে কেন! ভিড় ট্রেনে গায়ে একটু ধাক্কা লাগবে না নাকি...।”

    প্রেমিকাকে বলে ফেলি - “বিয়েবাড়ি যাচ্ছো ঠিক আছে, বেশি দেরি করে ফেলবে না। ওয়াশরুম বা লোকজন কম আছে এমন জায়গায় মাকে নিয়ে যেও। আলাদাভাবে কেউ কিছু খেতে দিলে ভেবেচিন্তে খাবে…”।
    এসব বলতে আমার পুরুষত্ব অপমানে ডুবে যায়। তবু পরিস্থিতির নিরিখে বলতে হয়। কারন আমি সুপারম্যান নই বলে নয়, এই দুনিয়াটা বিশ্বাস শব্দটাকে হারিয়ে যাচ্ছে বলে।

    কাল শুনলাম পুরুলিয়ায় তিনবছরের একটা বাচ্চার উপর অকথ্য অত্যাচার করেছে এক বয়স্ক ব্যক্তি। সেসব লিখতেও মন চাইছে না, রুচিতে বাঁধছে। ঠিক এরই পাশে নিজের ব্রাউজারের হিস্ট্রি ডিলিট করতে গিয়ে দেখেছি - ‘হার্ডকোর’, ‘পেইনফুল অ্যানাল’, ‘গ্যাং ব্যাং’, ‘ডবল পেনিট্রেশন’ ইত্যাদি শব্দে ভরে আছে। তখন কেউ জানে না আমার মধ্যেও একটা ধর্ষক মন বেড়ে উঠছে, বা বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। সঠিক পরিস্থিতি পেলে সে দাঁতনখ বের করবে। যে ছেলেটির সফট পর্ণ আর ভালোলাগে না, তার হিংস্রতা চাই। পর্ণ দ্যাখায় কোনও ভুল নেই, ভয় লাগে এই হিংস্রতার উপাসনা দেখলে।

    দোষ কাকে দেবো? একঝাঁক ধর্ষকের সাথে ওঠাবসা করতে করতে আমিও হয়তো তাদের দলে ভিড়ে যাচ্ছি। ভিড়ের সুযোগেও যেখানে একটা সাধারণ বাড়ির মেয়ের উপর যৌনচাহিদা মেটানোর চেষ্টা দেখি দেখানে নির্জনতা বা পোষাক আর ফ্যাক্টর নয়।

    কারো আধখোলা স্তন দেখে গায়ে শিহরণ জাগে। কিন্তু সেটা দিয়ে ধর্ষণকে ডিফেন্ড করাটা বড়ই সরলীকরণ। যে দেশে দুধের শিশুর উপর হিংস্রতা নেমে আসে। সেখানে পোষাকটা ফ্যাক্টর নয়।

    যে বোন বোরখা পরে কলেজ যায়। তার দাদাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের কটুক্তি করে! এসবও দেখি। যে বাবা কোনও ক্লাস নাইনের মেয়ের স্কার্ট হাওয়ায় কিছুটা উঠে যাওয়া দেখে জিভের আগার জল সুড়ুৎ করে টেনে নেয়, তিনি তাঁর ক্লাস টুয়ের মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে যাচ্ছেন...। ব্যাপারটা এমনই, অন্যের বেলায় সব শালীন। নিজের সাথে না ঘটলে এসব খবর পড়তেও ভালো, শোনাতেও ভালো।

    নিজের নিকট আত্মীয়দের কাছে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাই। তখন ভাবি বেশিদিন না বাঁচলেই বোধহয় ভালো। এক বান্ধবী একবার মাঝরাতের দুঃখ শোনাতে গিয়ে হাসতে হাসতে বলেছিলো, ওর মেসো ওকে ক্লাস ফাইভে...। মা চেপে যেতে বলছিলো। লোকলজ্জায় চেপে গ্যাছে। আমি বলেছিলাম দেখিস, বিচার একদিন হবে। মেয়েটির মেসোর মেয়ে ক্যান্সারে মারা গেলো কয়েকমাস আগে। সেদিনও মেয়েটি মনখারাপ করে বলেছিলো - “দ্যাখ মেসো আজ হয়তো মেয়ে হারিয়ে কাঁদছেন, আমিও তো তাঁর মেয়ের বয়সীই ছিলাম…”।

    পুলিশ ফাইলস, সাবধান ইন্ডিয়া বা ক্রাইম পেট্রোল দেখি না আমি। আমার ভয় লাগে, ঘেন্না লাগে। কত সহজে বিকিয়ে যায় সত্যঘটনা।

    রোমান্স শব্দটা হয়তো উতক্ত করায় নেমে এসেছে, স্বামী বা প্রেমিককেও তো ধর্ষক হতে দেখি। বাবা, ভাই, পড়শি কাকু...।
    আমার ভয় করে বর্তমানে দাঁড়িয়ে, আগামী ভেবে। আমার একটা মেয়ে হবে স্বপ্নটাকে সামনে রেখে।

    #হককথা
  • pi | 57.29.195.105 | ১৭ জুলাই ২০১৭ ০৯:৪৫367300
  • একেবারেই হককথা।
  • | 144.159.168.72 | ১৭ জুলাই ২০১৭ ১০:৩৪367301
  • কতকিছু যে খুঁচিয়ে মনে করিয়ে দিলেন!! #হককথা ট্যাগ সত্যিই আপনাকে মানায়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন