এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ছোটগল্প: ভূমিপুত্র

    বাড়ু
    অন্যান্য | ০৯ এপ্রিল ২০১৭ | ৫২৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বাড়ু | 24.139.219.242 | ০৯ এপ্রিল ২০১৭ ১৯:৫২366219
  • ছোটগল্প লেখার চেষ্টা করছি। সকলে মতামত দিবেন।
    ডিসক্লেইমার: গল্পের সব চরিত্র এবং সব ঘটনা কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে কোথাও মিল থাকলে তা অনিচ্ছাকৃত
    **********************************************
    ভূমিপুত্র
    **********************************************

    বিকেলের আলো আস্তে আস্তে কমে আসছে। চওড়া রাস্তার এককোণে শুধু একটি জায়গা আলোয় আলোয় ঝলমলে - বিশাল একটি ফরাসী রেস্তোরা। তার পাশেই একদলা জমাট বাঁধা অন্ধকারের মতো বেঢপ সাইজের একটি কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে। একনজর দেখেই বলে দেওয়া যায় বেশ বড়লোক কেউ রেস্তোরাটিতে খেতে এসেছে।

    রেস্তোরায় ঢুকার সাথে সাথেই চক্রবর্তীবাবুর উদ্দেশ্যে ভরাট গলায় ডাক ছাড়লো দূরে ডানদিকের কোণার টেবিলের লোকটি - হাই ব্রো, খবর কী? সব ভালো ত?

    সুটের কাঁধের কাছ থেকে দুটি-তিনটি ধূলিকণা ঝেড়ে ফেলে চেয়ারে বসতে বসতে চক্রবর্তীবাবু বিরক্ত স্বরে বললেন, “আর ভালো! আমার গ্যারাজে কয়েকটা শুয়োরের বাচ্ছা হেগে দিয়ে গ্যাছে।”

    - সেকি! ক্যানো?

    - কে জানে! নিশ্চই আমি ওদের বালছাল বর্ণবাদী প্রচারের বিরুদ্ধে বলেছি বলে। আরে আপনিই বলেন, অশিক্ষিত চাড়াল মেথরানীর পুতগুলা স্রেফ আমেরিকায় জন্মেছে বলেই যা ইচ্ছা তাই করবে? আমাদের পায়ের নখের যোগ্য নয় বালগুলো, আবার আমাদের দেশে ফেরত পাঠাতে চেয়ে রাস্তায় আন্দোলন চুদাচ্ছে! হুরি ল্যাওড়া।

    এর মধ্যে রেস্তোরার একজন কর্মচারী এসে অর্ডার জানতে চাইলো। নাক কুচকে মুখ দিয়ে থুতুর বৃষ্টি করে ঘৃণাভরে অর্ডার দিলেন চক্রবর্তীবাবু। তারপর টেবিলের সামনে ফিরে আবার বলতে লাগলেন-

    - দেখছেন? এই তো এদের অবস্থা। আমাদের পায়ের কাছে কুত্তার মতো লু লু করে আমেরিকান শুয়োরের বাচ্ছাগুলো। আবার সাহস হয় কীকরে আমাদের বিরুদ্ধে গলা তোলার? তোরা আমাদের চাকর আছিস, চাকরের মতো থাক।

    - কিন্ত ওরা তো এখন বেশ সংগঠিত।

    - সে তো বটেই। এয়ারপোর্টে অফিসারগুলো পর্যন্ত এদের এসব বালছাল ভূমিপুত্র আইডিওলজিতে প্রভাবিত। এদের বালের জাতীয়তাবাদের গাঢ় মারি। দেখুন না কি করি, ওদের দেশে ওদের তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক করে রাখবো। ওদের অওকাত বুঝিয়ে দিতে হবে।

    -এয়ারপোর্টের কথা বলতে মনে পড়লো। আপনাকে একবার ... মানে একটু ... স্ট্রিক্ট ভাবে সার্চ করা হয়েছিলো না?
    চক্রবর্তীবাবু এই প্রসঙ্গ আসলে চুপ করে যান। আসলে আমেরিকার একটি স্টেটের এয়ারপোর্টে তাঁকে একবার এক মুষকো চেহারার অফিসার ক্যাভিটি সার্চ করেছিলো। ক্যাভিটি সার্চ বিষয়টি বেশ বিতর্কিত। কিন্তু তাঁর চেহারা দেখে কোনও কারণে সেই অফিসারের কিছু সন্দেহ হয়েছিলো। ফলস্বরূপ তাঁর প্রতিটি ছিদ্রই হাতড়ে দ্যাখা হয়েছিলো। শেষপর্যন্ত পুটকির ছিদ্রে কিছু লুকানো আছে কিনা টেস্ট করার জন্য একটি ঘরের মেঝেতে কোঁত পেড়ে কিছুটা হাগতে বলা হয়েছিলো। যা হৌক, সে প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে চক্রবর্তীবাবু এবং উনার দেশী বন্ধু সদ্য পরিবেশন করে যাওয়া দামী খাবারে মনোনিবেশ করলেন, কাঁটা চামচ দিয়ে দক্ষ হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে লাগলেন খাবারের এক-একটি অংশ।

    দেশটির তথাকথিত ভূমিপুত্ররাও আসলে ক্যানো বহিরাগত, এবং এদের কিভাবে চাবুকের উপর রাখা উচিত সেসব বিষয়ে টুকিটাকি তাত্ত্বিক কথাবার্তা বলতে বলতে খাওয়াদাওয়া শেষ করে উঠে চক্রবর্তীবাবুর আর ধৈর্য হলোনা বেশিক্ষণ কথা চালানোর। বেশ দামী মাল খেয়েছেন। এবার উনাকে ঘুমাতে যেতে হবে। সঙ্গীকে জড়ানো গলায় বললেন,

    -আমার গাড়ি আমি ড্রাইভ করে চলে যাবো। কাল দেখা হবে। গুডনাইট ব্রো।

    - গুডনাইট।

    রেস্তোরা থেকে উড়ন্ত ছাগলের মতো বেগে বেরাতে গিয়েই ধাক্কা লেগে গ্যালো একজন মানুষের সঙ্গে। মানুষটি ধাক্কা সামলাতে না পেরে মাটিতে বসে পড়লো। চক্রবর্তীবাবু খানিকটা চমকে দাঁড়িয়ে গেলেন। “সরি” বলবেন কিনা ভাবতে ভাবতে মানুষটির মুখের দিকে একনজর তাকিয়েই তাঁর ভুরু কুঁচকে গ্যালো। একেবারে রোগা মানুষটির মুখে এবং গোটা চেহারায় কায়িক পরিশ্রমের ছাপ স্পষ্ট। প্রকৃত বয়সের বিচারে হয়তো কেবল প্রৌঢ় বলা চলে। কিন্তু মুখের সাদা ধবধবে চামড়া মুখের পেশির সঙ্গে আর শক্ত হয়ে লেগে নেই, কিছুটা আলগা হয়ে এসেছে। অল্প কাঁপছে। এসব ভিখিরি টাইপের আমেরিকানদের দেখলে চক্রবর্তীবাবুর চরিত্রের একটি বিকৃত দিক ট্রিগারড হয়ে যায়। তাঁর খুব হিন্দিতে গালাগাল দিতে ইচ্ছা হয় এদের।

    - আবে ওয় মাদারচোদ! আঁখমে লন্ড ঘুসাকে রাখা হ্যাঁয় ক্যা?

    মাটিতে বসে থাকা মানুষটি ঘড়ঘড় করে কিছু বললেন - শোনা গ্যালো না। ক্যাঁত করে একটি লাথি মেরে সরিয়ে দিয়ে চক্রবর্তীবাবু গাড়িতে উঠে এঞ্জিন স্টার্ট করলেন।

    অস্তগামী সূর্যের আলো হঠাৎ করে এক সেকেন্ডের জন্য নিভে গিয়ে জ্বলে উঠলো, সাথে ভেসে এলো তীব্র কর্কশ এক শব্দ। গাড়িটা ঘষটাতে ঘষটাতে থেমে গ্যালো রাস্তার কিনারে। পেছনের একটা চাকা পাংচার।

    নাহ। পাংচার নয়। ফর্দাফাঁই। আওয়াজটা ছিলো গুলির আওয়াজ।

    গাড়ির ভেতর থেকেই পেছনে তাকিয়ে দেখলেন চক্রবর্তীবাবু, শীর্ণকায় একটা চেহারা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে। ধীরে ধীরে, কিন্তু নিশ্চিতভাবে। লোকটির ডান হাতটা বাইরে ছিলো। আস্তে আস্তে আবার পকেটে ঢুকে গ্যালো।

    আচমকা রাগে জ্বলে উঠলেন চক্রবর্তীবাবু! বাইরে বেরিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইলেন ভিখিরির বাচ্ছাটার উপরে। মদের ও বিপ্লবের নেশায় মত্ত অবস্থায় তিনি লক্ষ্য করলেন তাঁর সোনার গিড়ায় গিড়ায় একটা টাইট ভাব জাগতেছে! জয় লিলীন!

    একমুহূর্তের মধ্যেই অস্বাভাবিক মুড সুইং হলো তাঁর! মাথার মধ্যে কিসের একটা অজানা ভয়ে পুরোপুরি অবশ হয়ে গেলেন তিনি। বিপদজনক পরিস্থিতিতে এরকম বিপরীত মানসিক অবস্থায় আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা।

    প্রৌঢ় লোকটির কম্পমান ছায়া ততক্ষণে দীর্ঘায়িত হতে হতে পুরো গাড়িটাকে ঢেকে ফেলেছে।
  • তাতিন | 233.231.29.245 | ১০ এপ্রিল ২০১৭ ০৭:৪৬366220
  • লাভলি স্টোরি। চক্রবর্তী এবং তার ভাই বেরাদররা আবার এই পেজ এ মাঝেমাঝেই অস্ত্রমিছিল করেন।
  • বাড়ু | 57.29.135.245 | ১০ এপ্রিল ২০১৭ ১০:০৪366221
  • চক্রবর্তীরা লুজিং সাইডে আছে। কোনও আগ্রাসনকারী শক্তিই জিততে পারেনি। চক্রবর্তীরা দাঁতও ফোটাতে পারবেনা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন