এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সিঁড়ির নিচে বিড়ির দোকান

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২৮৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ছিল পাড়ার মোড়ের ফুলের দোকান, অনলাইন কারবার ​​​​​​​করতে  গিয়েই ​​​​​​​আমার ​​​​​​​সব্বোনাশ ​​​​​​​হল। 

    প্রথম ​​​​​​​দিকে ​​​​​​​ভালই ​​​​​​​চলছিল। অর্ডারের ​​​​​​​চোটে ​​​​​​​ফুলে-ফেঁপে ​​​​​​​ঢোল। দোকানে নতুন লোক রাখতে হল। ডেলিভারি আমি ​​​​​​​নিজেই ​​​​​​​করতাম। ফুল ​​​​​​​নিয়ে ​​​​​​​গেলে ​​​​​​​গোমড়া-খিটখিটে ​​​​​​​লোকেরাও ​​​​​​​ফিল্টার ​​​​​​​দেওয়া ​​​​​​​সেলফির মতো ​​​​​​​মোলায়েম ​​​​​​​হয়ে ​​​​​​​যায়। ​​​​​​​সুন্দরী ​​​​​​​মেয়েরা ​​​​​​​লজ্জায় লাল ​​​​​​​হয়ে ​​​​​​​হাসি ​​​​​​​দেয়। ​​​​​​​পয়সার ​​​​​​​সঙ্গে ​​​​​​​সেসব ​​​​​​​ফাউ।

    তখন ​​​​​​​কে ​​​​​​​জানত, ​​​​​​​ওসব ​​​​​​​মধুচন্দ্রিমার ​​​​​​​গপ্পো। আসলে সব্বোনাশ মাথায় নাচছে। ​​​​​​​প্রথম কেলোটা ​​​​​​​হল ​​​​​​​নভেম্বর ​​​​​​​মাসে। ​​​​​​​এক ​​​​​​​ভদ্রলোক ​​​​​​​প্রথমে মেসেজ, তারপর ফোন ​​​​​​​করে ​​​​​​​বললেন, ​​​​​​​দুপুরবেলায় এক বাড়িতে ফুল দিতে হবে। কী ফুল? তিনি বললেন, ভালো কিছু। আমি নিষ্পাপ মনে সবচেয়ে দামী গোলাপের যে তোড়াটা ছিল, তার দাম বললাম। সঙ্গে পৌঁছোনোর খরচ। তিনি বললেন ঠিক আছে। আমিও দুপুরের দিকে নাচতে নাচতে ইয়াব্বড়ো একটা গোলাপের বোকে, সঙ্গে আমাদের তরফ থেকে শুভকামনার কার্ড লাগিয়ে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি লোকে কীরকম সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছে।  কে জানে কী ব্যাপার। বাড়ির কর্ত্রীকে খুঁজে-পেতে ফুলগুলো দিতে, তিনিও ঠোঁট বাঁকালেন। তারপর বললেন - শ্রাদ্ধবাড়িতে গোলাপ ফুল? তার সঙ্গে এইসব লেখা? 

    এতেই সমঝে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু অনলাইনের নেশা। তাই পরের ঘটনাটা ঘটল সাতদিন পরে। আর এক ভদ্রলোক বললেন তিন জায়গায় ফুল দিতে হবে। তখন আমি সেয়ানা হয়ে গেছি। কী ফুল জিজ্ঞাসা করে নিলাম। - শ্রাদ্ধটাদ্ধের ব্যাপার নয় তো? জিজ্ঞাসা করতে ভদ্রলোক খুব হাসলেন। আমিও নিশ্চিন্ত। প্রথম বাড়িতে খুব চমৎকার অভিজ্ঞতা। লাল টুকটুকে একটা মেয়ে, এত গলে গেল, যে, পারলে জড়িয়েই ধরে আর কী। পরের বাড়িতেও আরও একটা মেয়ে। সুন্দরী। সেও হাসিখুশি।  ফুলটা নিয়ে বলল, আরও একটা আছে দেখছি। ওইটা আরও ভালো লাগছে।  একবার হাতে নিয়ে দেখা যাবে? 

    নিশ্চয়ই যাবে। ফুল তো ক্ষয়ে যাবেনা। কিন্তু মেয়েটার হাতে দিতেই দেখা গেল, কথাটা ঠিক না। ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে দেখে বলল, রুচিরা? দত্ত? রহস্যজনক কিছু না, নাম তো লেখাই ছিল। মেয়েটা ভুরু কুঁচকে বলল, সুলক্ষণা অ্যাপার্টমেন্ট? আমি বললাম হ্যাঁ। বলতেই কেলো। চিৎকার করে মেয়েটা বলে উঠল - আপনার এত সাহস? 
    আমি আবার কী করলাম? - অরিন্দম রুচিরাকেও ফুল পাঠিয়েছে, আর আপনি একসঙ্গে দিতে এসেছেন? এতো সাহস পান কোথা থেকে? 
    দুটো ফুলের তোড়াই কুচিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দিল। তারপর সিকিউরিটি-সিকিউরিটি বলে ডেকে প্রায় ঘাড়ধাক্কা দেয় আর কী। ফুলগুলো যে নষ্ট হল বলার সাহসই করলামনা। আপনি বাঁচলে বাপের নাম। 

    এমনি লোক হলে এতেই শুধরে যেত। কিন্তু মাথায় তখন অনলাইনের নেশা। ভাবলাম, ব্যবসায় তো ছোটোখাটো গোলমাল হয়ই, এত লাভ হচ্ছে, এক আধটা ক্ষতি হলে সমস্যা কী। ব্যস, হাতে-হাতে ফল। তিনদিন পর আবার অর্ডার। অন্য একটা লোক। আবার এক মহিলাকে ফুল পাঠাতে হবে। আমি পরিষ্কার বলে দিলাম, একাধিক জায়গায় ফুল আমরা একসঙ্গে দিইনা। সে খুব অবাক হয়ে বলল, এক জায়গাতেই দেবেন তো। একটু বড় বড় করে লিখে দেবেন, "তোমায় নিলাম" ।

    তাতে আর কী সমস্যা। আবার ফুল দিতে গেলাম। বাড়িটা বাংলো ধরণের। ইউনিফর্মধারী দারোয়ান। সে দেখে-টেখে বলল, "অ্যাই পচা ম্যাডামের কাছে নিয়ে যা।" পচা আরেকজন গার্ড। সে একটা ঘরে নিয়ে গেল। ম্যাডাম এলেন একটু পরে। এসেই বললেন, ফুল আপনি এনেছেন? 
    আমি বললাম হ্যাঁ। 
    তিনি বললেন, এত বড় সাহস, নিজেই নিয়ে চলে এসেছেন? তাও ডিএসপির বাড়ি? 
    মহিলা পুলিশ নাকি? ওরে বাবা। কিন্তু এতে সাহসের কী আছে? আমি আমতা আমতা করে বললাম, কিন্তু আমি তো আর কাউকে ফুল দিইনি।
    মহিলা আরও চোখ পাকিয়ে বললেন, তবে সেগুলো কে দিয়েছে? অনেক সিরিয়াল কিলার বেরিয়েছে? 
    সিরিয়াল কিলার? আমি বললাম, আমি তো শুধু অনলাইন কারবার করি। 
    অনলাইন কারবার? বটে? আমাকে ওরা ধরে থানায় নিয়ে চলে গেল। বড়বাবু লোক ভালো। বুঝিয়ে বলতে পুরোটা বুঝলেন। সেখানেই জানা গেল কেসটা। শহরে নাকি সিরিয়াল কিলার বেরিয়েছে। মেয়েদের ফুল পাঠিয়ে "তোমায় নিলাম" লিখে দিচ্ছে। তার পরেই ঘ্যাচাং। এবারের ফুলটা সোজা গেছে ডিএসপির কাছে। আর নিয়ে গেছি আমি।
    আমি এখন থানায় বসে আছি। বড়বাবু বলেছেন, আমার হাতে কিছু নেই, দেখুন ম্যাডামকে বোঝাতে পারেন কিনা। মোবাইলটা উনি বাজেয়াপ্ত করেননি, তাতেই পুরোটা লিখে ফেললাম। ফাঁসি কিংবা যাবজ্জীবন কিছু একটা হলে তো আর লেখার সময় পাবনা। 
    -------------         
    গপ্পোটা ফালতু। একেবারে গুলবাজি। কিন্তু নীতিশিক্ষা খুবই পরিষ্কার। বইপত্তর কিনতে হলে অনলাইন কারবারে যাবেন না। খুব বিপজ্জনক। পেড প্রোমোশন, হাজার টাকায় একটা বই কেনা, আর পড়ে হাত কামড়ানো। তার চেয়ে, সামনে একগাদা বইমেলা। সিধে চলে আসুন গুরুচণ্ডা৯ তে। ফুর্তি, মোচ্ছব, সব হবে। বই কী নেবেন? সে আমরা কী জানি। গুরুতে আর আলাদা করে নাম কী দেব, কিন্তু এই লেখা পড়ে যদি বুঝতে না পারেন, কী পাবেন, কীভাবে আমরা বদলে দিচ্ছি লেখালিখির চালচিত্র, তাহলে আপনি বরং অনলাইনেই যান। ফাঁসি কিংবা যাবজ্জীবনে।

    পুঃ আমরা অনলাইনে বই বেচিনা তা নয়। হোআ নম্বর টম্বর সবই আছে। কিন্তু আগে তো মেলায় এসে নেড়েচেড়ে দেখুন।
    ​​​​​​​

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ১২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:০১527571
  • কাম সারছে! সেরাম বিজ্ঞাপন হইছে! 
    জ্জয় গুরু broken heart
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন