এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • নানান জ্বালায় জ্বলে মরি

    Rajat Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১২৯ বার পঠিত
  • "নানান জ্বালায় জ্বলে মরি, তাইতো একটু নেশা করি..." নানান জ্বালায় জ্বলে নেশা নাহয় নাই করলেন। নেশা করতে গেলেও তো পয়সা লাগে। কিছু না পেলে, বিনেপয়সায় জল মেলে। তাই খেয়ে থাকব। সে কথাও অতীত। এখনই জলের লিটার কুড়ি টাকা। এমন একদিন খুব বেশি দূরে নেই যেদিন জল আর সোনা একই মূল্যে বিকোবে। জ্বালানি গ্যাসের দাম এখনই হাজার ছুঁয়েছে। বিদ্যুতের পুরো ব্যবস্থাটাই তো এ রাজ্যে চিরকালই এক মনোপলি ঘাপলার চোরাগলি। ভারতবর্ষের আর সব রাজ্যের থেকে এই রাজ্যে বিদ্যুৎ মূল্য সবচেয়ে বেশি।

    খুব বেশিদিন পিছাতে হবে না। দুহাজারের দশকেও এক বা দুটাকা কেজি প্রতি শীতকালে আলু মিলত। বারো টাকা কেজি মিনিকেট চাল বোধহয় অনেকেরই মনে আছে। আমার বেশ মনে আছে ২০০৪ বা ২০০৫ সালেও বহু মানুষ ২৫০০-৩০০০ টাকা বেতনে চাকরি করতেন। হয়ত সেই বেতনের চাকরি করা কাউকে স্বচ্ছল ছিলেন বলা যাবে না। কিন্তু ওই বেতনের মানুষও সংসার চালিয়ে নিতেন। মাত্র পনেরো ষোল বছরে বাজারের মূল্যবৃদ্ধিটা আকাশের থেকেও মনে হয় ওপরে উঠে গেছে। একটি একশো টাকার নোটের ক্রয়মূল্য দশটাকা আর দশটাকাটা এক নাকি দুই টাকা!! শুনেছি, বামপন্থীরা পাঁচ পয়সা বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজপথে বাস জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। আজ শয়ে শয়ে টাকার মূল্যবৃদ্ধি সকলের গায়ে সয়ে গেছে।

    এই প্রসঙ্গে স্ট্যালিনের একটি ছোট্ট গল্প মনে পড়ে গেল। গল্পটি এইরকম... একটি পোষা মুরগীকে দু হাতে ধরো। তারপর তার শরীর থেকে একটি একটি করে পালক টেনে ছিঁড়তে থাকো। প্রতিটি পালক ছেঁড়ার সময়ে মুরগীটা তীব্র যন্ত্রণায় খুব চিৎকার করবে। ছটফট করবে। তুমি তার ছটফটানিতে থামবে না। যতক্ষণ খুশি ওর পালক ছিঁড়তেই থাকো। বেশ কিছুক্ষণ পর যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুরগির সামনে খাবার ভর্তি পাত্র রাখো। খাবার দেখে মুরগীটা সব যন্ত্রণা নিমেষে ভুলে যাবে। একটু খাবারেই সে সন্তুষ্ট । মুরগির স্থানে জনগণ শব্দটি বসিয়ে নিন। এই হল দেশের জনগণ। শাসক আপনার ছাল ছাড়িয়ে নুন মাখিয়ে দেবে। আপনি যন্ত্রণায় কাতর হবেন। তারপর আপনার সামনে হতভাগ্য মুরগীটার মত খাবাররুপী একটি জনমোহিনী প্রকল্প আনলেই আপনার সব যন্ত্রণা আপনি ভুলে যাবেন। বাহ্ বাহ্ করতে করতে রোদে পুড়ে জলে ভিজে ভোটটা দিয়ে আসবেন।
     
    স্বামী স্ত্রী একটা বাচ্চা, সঙ্গে বৃদ্ধ পিতামাতা। যদিও আজকের সংসারে পিতামাতার স্থান কজনের সংসারে আছে তা দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয়। পরমাণু সংসারে একটি বাচ্চার আজকের বাজারে নার্সারি থেকেই পড়াশোনার খরচ তিন থেকে চার হাজার টাকা দিয়ে শুরু হয়। এরপর পদোন্নতির সঙ্গে সেই ব্যয় যে কোথায় গিয়ে ঠেকে, সকলেই হাড়ে হাড়ে বোঝেন। হাত পা ছড়িয়ে আজকের দিনে মধ্যবিত্তের সংসার চালাতে ত্রিশ হাজার টাকাও কম পড়ে। অবশ্যই যদি না কোনো লোন থাকে। ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেয়, আগামী দশ বছরে কি হাল হবে?

    কয়েকদিন আগে সরকারি বাসে চড়েছিলাম। সেই বাসেই ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। কথায় কথায় জানতে পারি, উনি প্রাইভেট একটি ফার্মের চাকুরে ছিলেন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই পেনশনের কোনো ব্যাপার নেই। মেয়ের বিয়ে দিয়ে সঞ্চয় বলতে তেমন কিছুই নেই। একমাত্র ছেলে খুবই কম বেতনের একটি চাকরি করেন। স্বল্প সঞ্চয়ের কিছু সুদ আর অবিবাহিত পুত্রের রোজগারে সংসার চলে না। মেয়ের বিয়ে হয়ে চলে যাওয়ায় একটি পেট কম হয়েছে বটে। কিন্তু বেড়ে গেছে দুই বৃদ্ধ বৃদ্ধার চিকিৎসা ও ওষুধপত্রর খরচ। একটু কম খরচে মুড়ি চিঁড়ে খেয়ে হয়ত দুদিন কাটানো যেতে পারে। কিন্তু চিকিৎসা...! সে তো আজকের যুগে মহার্ঘ্য। ডাকাতের মত ডাক্তাররা আপনার গলা কাটবে বলে চেম্বার খুলে বসে রয়েছে। একটু পসার জমানো ডাক্তারের আজকাল পাঁচ ছয়শ কিংবা হাজার টাকার নিচে ফিস্ নেই। তার ওপরে তো রয়েছে নানাবিধ টেস্ট আর ওষুধপত্র। একজন ডাক্তারের সরকারি মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়ার মেধাটুকু তার নিজস্ব। পড়ার ব্যয়ভার বহন করে কিন্তু সরকার, অর্থাৎ আমার আপনার করের টাকায়...। আমাদের টাকায় পড়ে ডাক্তার হয়ে আমাদেরই জীবন বাঁচাতে নানা ছলে ব্যবসার ফাঁদ... কি আশ্চর্য, তাই না? সেই ভদ্রলোক, কম রোজগারের জন্য ছেলের বিয়ে দিতে পারছেন না। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বৃদ্ধ ভদ্রলোক অবসর গ্রহণের পরেও কিছু রোজগারের আশায় তাই অফিসে অফিসে ঘুরে ঘুরে লোন, ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি ফিনান্স প্রোডাক্ট বিক্রি করে বেড়ান। জানিনা কতদিন ওনাকে রোজগারের ধান্দায় ঘুরে বেড়াতে হবে! উনি আরো বৃদ্ধ হবেন। শরীর আরো অশক্ত হবে। খরচ আরো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে। রোজগারের রাস্তাগুলো আরো ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে যাবে। যাঁরা সরকারি চাকরি করেন না, সেই হতভাগ্যরা নিজেদের বৃদ্ধ বয়েসের কথা ভাবুন... একটু ভাবুন কি ভাবে বাঁচবেন!

    জ্যামে আটকে বাসটা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে পড়েছিল। সরস্বতী পুজোর পরের দিন, কোন প্যান্ডেলে মৌচাক ছবির মান্না দের গাওয়া গানটা বাজিয়েছে, "নানান জ্বালায় জ্বলে মরি...।"

    ___________
    ©রজত দাস 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন