এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  স্মৃতিচারণ   স্মৃতিকথা

  • এল ডোরাডো

    যোষিতা লেখকের গ্রাহক হোন
    স্মৃতিচারণ | স্মৃতিকথা | ৩০ নভেম্বর ২০২৩ | ৮৯১৬ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৬ জন)
  • এখানে লিখব সোনার দেশ সুইটজারল্যান্ডের নানান অভিজ্ঞতা ও মানুষের কথা।
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:৪২742158
  • আগে বলেছিলাম - চলচ্চিত্র, এখন মনে হচ্ছে, ওয়েব সিরিজ আরো ভাল হতে পারে।
  • অন্য মত | 2001:67c:6ec:203:192:42:116:212 | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৪৪742160
  • এ মনে হচ্ছে একটু বেশিই exaggeration হচ্ছে। পাঠকের করুণা জাগাতে বেশি বেশি।
  • যোষিতা | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:৪৩742161
  • ছবিতে যেমন দেখা যাচ্ছে, অনেকগুলো জানলা। প্রত্যেক জানলার কাছে লেখা আছে কোনটা কোন পরিষেবার জন্য।  আমি রেজিস্ট্রেশন বাতিল করবার জানলার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে। কেউ নেই ভেতরের চেয়ারে। অপেক্ষা করতে করতে উঁকি দিচ্ছি, পাশে একটা ঘন্টি আছে যেটায় চাপ দিলে কেউ চলে আসবে। প্রয়োজন পড়ল না, একজন ভদ্রলোক ভেতর থ্কে আমায় দেখতে পেয়ে চলে এলেন জানলায়।
    — হ্যাঁ, বলুন।
    আমি সমস্ত নথিপত্র এগিয়ে দিই।
    — রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দিন প্লিজ।
    — বাতিল করতে চাচ্ছেন?
    — হ্যাঁ।
    — কেন?
    — আমি ফিরে যাচ্ছি আমার দেশে। প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাগুলো তুলে নেব, সেজন্য এটা দরকারি।
    ভদ্রলোক যেন বেজায় আশ্চর্য হয়েছেন মনে হলো। তারপরে কেমন যেন অনিচ্ছায় বাধ্য হয়ে একটা ফর্ম বের করলেন, সঙ্গে একটা পেমেন্ট স্লিপ।
    — এই ফর্মটা ভরে আনবেন, সঙ্গে দশ ফ্রাংক জমা দেবেন ঐ পেমেন্ট স্লিপের সাহায্যে পোস্ট অফিসে।
    — পোস্ট অফিস আছে আশে পাশে কোথাও?
    — হ্যাঁ। এইখান থেকে বেরিয়ে পাশের রাস্তায় কিছুটা হেঁটে উল্টোফুটে।
    — ধন্যবাদ, আমি এখুনি পেমেন্ট করে ফর্ম নিয়ে আসছি।
     
    ষ্টাডহাউস থেকে বেরিয়ে পোস্ট অফিসে পৌঁছতে তিন মিনিটও লাগল না। পেমেন্ট স্লিপ নিয়ে কাউন্টারে পৌঁছে ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে দেখি মানিব্যাগ নেই। গায়েব!
    ঐ মানিব্যাগে আমার টাকা পয়সা ছিল, ব্যাঙ্কের কার্ড ছিল, বাসের টিকিট ছিল। কোথায় পড়ে গেল মানিব্যাগ? আমি ব্যাগ থেকে সমস্ত কিছু বের করে তন্নতন্ন করে খুঁজি মানিব্যাগ। আমি তো এখন বাসেও উঠতে পারব না!
    হারিয়ে গেল?
    ফের চললাম ষ্টাডহাউসে। নাহ, ঐ হলঘরে কিছুই পড়ে নেই।
    মে মাসের দুপুরে গরম নেই, ঠাণ্ডাও নেই। বাড়ি ফিরব এখন কেমন করে?
    হেঁটে হেঁটে প্রায় তিনকিলোমিটার কি আরও বেশি ঘরে ফিরতে ফিরতে বিকেল। বাড়ি ফিরে দেখি টেবিলের ওপরে ফেলে রেখে গেছি মানিব্যাগ, এত তাড়াহুড়ো করে বেরিয়েছিলাম আজ। তার মানে আজ সকালে সব ট্রামে আমি বিনা টিকিটে ঘুরেছি। চেকার ধরলে আজ খবর ছিল।
    ফোনটা বেজে ওঠে। ল্যান্ডলাইনে। মিস্টার ভটচাজ।
    — জানেন, আজ কী ভয়ঙ্কর কাণ্ড হয়েছে!
    — কী হয়েছে?
    — আজ আমি ষ্টাডহাউস গেছলাম তো, রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে— তো হ্য়েছে কি...
    — অ্যাঁ! রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে ফেলেছ নাকি? সর্বনাশ!
    — কী করে করব, মানিব্যাগ নিতে ভুলে গেছলাম।
    — না! রেজিস্ট্রেশন বাতিল করবে না। একবার বাতিল করে ফেললে কিন্তু আর থাকতে পারবে না। ভুলেও বাতিল করবে না!
    মিস্টার ভটচাজ ভয়ানক উত্তেজিত ফোনের ওপারে।
    — আচ্ছা, ঠিক আছে, বাতিল করব না।
    — না, বাতিল করবে না। একদম বাতিল করবে না।
  • যোষিতা | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০২:০৭742162
  • পরেরদিন জেনিভার রেলস্টেশন থেকে আমায় রিসিভ করল জেডি। তার গাড়িতেই গেলাম ইন্টারভিউ দিতে। গাড়িতে যেতে যেতে জেডি তার নিজের কথা বলে চলে। তার বৌ থাইল্যান্ডের মেয়ে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মানুষজন সম্পর্কে তার অনেক নলেজ। ভারতীয় অবশ্য সে এই প্রথম দেখছে। একটু অভিভাবক টাইপ ভাব করতে লেগেছে সে। যে কোম্পানীতে আমায় নিয়ে গেল, সেটা একটা কনসাল্টিং কোম্পানী। তারা আমাকে ফিলিপ মরিস নামের একটা কোম্পানীতে পাঠাতে চাচ্ছে। ফিলিপ মরিস অবশ্য জেনিভাতে নয়, তার পাশের কান্টন ভ তে। সেই শহরের নাম লোজান, জেনিভা লেকের ধারে সেই শহর। আমার বেতনও হবে বর্তমান কোম্পানীর চেয়ে বেশি। মোটকথা আমি মন দিয়ে ইন্টারভিউটা দিয়েছিলাম। যদিও আমি ফিলিপ মরিসের সরাসরি কর্মচারী হবো না, মানে এরা কমিশন রাখবে আমার বেতনের ওপর, তবুও বেতন বেশ ভাল। তবে ফাইনাল ডিসিশন এরা পরে জানাবে জেডি মারফৎ। জেডিরও এককালীন কমিশন থাকবে। 
    জেডি আমায় ফিরিয়ে দিয়ে যায় রেল স্টেশনে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর জেনে নেয় ট্রেনের টিকিটের দাম পাঠিয়ে দেবার জন্য।
    আমি দোটানায় পড়ে দাঁড়িয়ে আছে ট্রেনের অপেক্ষায়।
    যদি চাকরিটা পাই লোজানে থাকতে হবে। আবার একটা নতুন শহর, নতুন ভাষা, নতুন করে ঘর খুঁজতে হবে। অবশ্য এত জলদি এত শত না ভাবাই ভাল, স্বপ্ন বার বার ভেঙে যায় আমার। বর্তমানটা নিয়ে ভাবছি। জুন মাসে আমার বাসস্থান থাবে না। এরা কি আমায় জুন মাসেই নতুন চাকরিতে নেবে? মানে, যদি নেয় আর কি।
    কাছেই একটা কাপল জড়াজড়ি করে খুব চুমু টুমু খাচ্ছে। ট্রেন এসে গেল। ঐ কাপলটার মধ্যে মেয়েটা আমার সঙ্গেই ট্রেনে উঠল, ছেলেটা হাত নেড়ে বিদায় দিল মেয়েটাকে।
    কম্পার্টমেন্টে মানুষ কম। মেয়েটার সঙ্গে আলাপ করে গল্প জমালাম। প্রায় সাড়ে তিনঘন্টার পথ, এই ট্রেন কয়েকটা জায়গায় থামবে। মেয়েটা রাশিয়ান, তাই আমার ভাষার সমস্যা হচ্ছে না।
    যে ওকে বিদায় দিল, সে মেয়েটার স্বামী। মেয়েটা অবশ্য জুরিখ অবধি যাবে না। ও নেমে যাবে কান্টন আরগাওয়ের সদর শহর আরাও এ। আজ শুক্রবার। প্রত্যেক শুক্রবার ও আরাও এ যায় কাজ করতে, ফিরে আসে রবিবারে। ওর উপার্জনেই সংসার চলছে মূলতঃ। স্বামী তেমন কিছু করে না বললেও ভুল হবে, স্বামী ওর জন্য কাজ খুঁজে দেয়। 
    মেয়েটা আজ চলেছে আরাও এর একটা নাইটক্লাবে। ওর সঙ্গে একটা ব্যাগ, তাতে ভরা আছে ওর পোশাক, সাজগোজের জিনিস। উইকেন্ড শুরু হয়ে গেছে, নাইটক্লাবে ভিড় হয় উইকেন্ডগুলেতেই। আমাদের যখন ছুটি, ওর তখন কাজ। ওর কাজ সব সময় শুধু রাতে।
  • যোষিতা | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৪:২৮742164
  • এই দুটো দিনে যে সব কাণ্ড ঘটে গেল, তার প্রেসি করলে আমার অবস্থা "ঘেঁটে ঘ"।
    আমার স্বামী এখন কনসাল্টেন্সির কাজে ফ্যাক্টরি ভিজিট করতে গেছেন অন্য রাজ্যে। সেখানে টেলিফোন সংযোগ সম্ভব নয়। মেয়ে রয়েছে বাড়িতে একা। আমি এদেশে আসবার পরে বাড়িতে একজন ঠিকে কাজের বৌ রাখা হয়েছে, সে ই সম্ভবত মেয়ের দেখাশোনা করতে ঢুঁ মেরে যায় ওখানে। 
    যে দোটানার মধ্যে পড়ে গিয়েছি তার সমাধান করতে চাই নিজের সঙ্গে কথা বলা, চাই একটা লম্বা রাস্তা ধরে একা হেঁটে চলা।
    শনিবারে আমি প্রচুর হেঁটেছি। রবিবারেও। কোন কিছু নিয়ে ভাবব বলে ঠিক করে নিয়ে হাঁটতে বের হই নি। মাঝে মাঝে নানান চিন্তা ঢুকে গেছে মাথার ভেতরে।
    স্বামী একদিন রাগের মাথায় বলছিলেন — তুমি প্রচণ্ড অ্যাম্বিশাস! মেয়েদের বেশি অ্যাম্বিশান থাকলে সে সংসার করতে পারে না।
    আমি সেই সময়ে কথাটা সেভাবে ভেবে দেখি নি। শনিরবিবারে রাস্তা দিয়ে হাঁটবার সময়ে একটা জুতোর দোকানের ভেতরে ঢুকে হঠাৎ এই কথাটা আমাকে হন্ট করল। জুতো আমার একটা অবসেশন। এরই মধ্যে ছ সাত জোড়া কেনা হয়ে গেছে, তবু আমি জুতোর নেশা ছাড়তে পারি না। এরকম নেশা অনেক মেয়েরই আছে। আলমারি ভরা শুধু জুতো জুতো জুতো আরও জুতো। কিংবা বাঙালি মেয়েদের কাঁড়ি কাঁড়ি শাড়ি। আরও আরও আরও শাড়ির জন্য তাদের আরও আলমারি কিনতে হয়। এগুলো সমাজে স্বীকৃত নেশা। এ নিয়ে পুরুষেরা হাসি ঠাট্টা করতে পারে ড্রইংরুমের মজলিশি আড্ডায়। মেয়েদের আশা আকাঙ্খা অ্যাম্বিশনগুলো এরকমই থাকবে। তারা শাড়ির লোভে স্বামীর পকেট মারবে, জুতো উপচে পড়বে শেল্ফ থেকে, তারা জড়োয়া সেটের গয়নার জন্য আবদার করবে, গয়না কিনে কিনে স্বামীর টাকা বা নিজের উপার্জনের টাকা খরচ করবে, বেড়াতে যাবার বায়না করবে, এ সমস্ত স্বীকৃত। পরিস্থিতির প্রয়োজনে স্বামী চাকরিতে বদলি হলে সেও সঙ্গে যাবে, স্বামী বিদেশে বদলি হলে বা স্বল্প মেয়াদি কাজে গেলেও সে সঙ্গে যাবে, এটা তার বেসিক অধিকারের মধ্যে যেমন পড়ে, তেমনি এগুলো একেবারে স্বতঃসিদ্ধের মত ব্যাপার। মাঝে মধ্যে কয়েকজন বিদ্রোহী মেয়ে প্রতিবাদী হয়ে নিজের চাকরি বা কাজ ছেড়ে স্বামীর সঙ্গে যেতে চায় না, তাদের তখন বিয়ে ভেঙেও যায়। পরমা সিনেমায় অপর্ণা সেনের রোলটাইতো অমন ছিল। ডিভোর্সী। স্বামীর সঙ্গে যায় নি অন্য শহরে। এসব মেয়েদের অ্যাম্বিশাস বলা হয়। সত্যিই জিনিসটা আগে খতিয়ে দেখি নি কিন্তু।
    এই সব অ্যাম্বিশাস মেয়েরা ঘর ভেঙে ফেলে, সংসার ধর্ম এদের জন্য নয়। আজ যদি আমি স্বামীর সঙ্গে ভ্যানিটি ব্যাগের মতো কেনিয়া চলে যেতাম, ধরে নিচ্ছি সেই কাল্পনিক প্রতিশ্রুত চাকরিটা যদি আমার স্বামী পেয়েই যেত, তবে আমি কত ভালো মেয়ে। সেই কাল্পনিক চাকরিস্থলে চাকরবাকর ম্যানেজ করতাম সংসারে। জুতো, শাড়ি, গয়না, পারফিউম, বেড়ানো, আর কী বেশি চাইবার থাকতে পারে একজন মেয়ের জীবনে? চাইলে ঐখানেই হয়ত একটা সুটেবল চাকরি, টিচার হবার মতো কিছু, হয়ত বাচ্চাদের ইস্কুলে। জানি না।
    অথচ আমি উল্টোপথে চলেছি। যোষিতা ইউ আর টুউউ অ্যাম্বিশাস।
    আচ্ছা, একটা সহজ প্রশ্ন নিজেকেই করি এবার। আমি কি আমার স্বামীকে ভালোবাসি?
  • যোষিতা | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:০০742165
  • কঠিন প্রশ্ন করে ফেলেছি নিজেকে।
    আসলে বিয়ে হয়ে গেছে তো আমার। এখন স্বামীকে ভালোবাসা আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে হয়ত। তার অনুগামিনী হওয়াও কর্তব্য। তাকে না ঠকানো আমার কর্তব্য। সংসারের মঙ্গলসাধনে নিয়েজিত হওয়াও আমার কর্তব্যের মধ্যেই পড়বে বলে মনে হচ্ছে।
    তোমরা বলো নারীচরিত্র বড্ড জটিল, দেবতারাও নাকি মেয়েদের বুঝতে পারেন না। এটা কথার কথা। তোমরা অন্তর থেকে সেটা মানো না। নারীপুরুষ নির্বিশেষে তোমরা মনে করো মেয়েরা তুলনায় একটু বোকা, তাদের ব্রেইনের ওজন বা আয়তন পুরুষের তুলনায় কিঞ্চিৎ কম, তারা ইমোশনাল, তারা একটু প্রোটেকশনে থাকলেই তাদের জন্য মঙ্গল, তারা একটা সংসারের ভার নিজের কাঁধে নেবে না। মানে সংসারের দায়িত্ব যদি নিজের কাঁধে নেয়, তখন তার নির্দিষ্ট কিছু জাস্টিফিকেশন থাকবে, যেমন বিধবা, কিংবা স্বামী যখন মদ্যপ, কর্মক্ষমতাহীন, জুয়াড়ি, জেলে গেছে, এই ধরণের পরিস্থিতিতে সে সংসারের আর্থিক দায়িত্ব নেবে কাঁধে। পেছনে একটা করুণ কাহিনি মাস্ট। কিংবা ডিভোর্সী। এরকম স্টেনসিল তৈরি আজে আমাদের সমাজে। স্টেনসিলের বাইরে ফ্রি হ্যান্ড ড্রয়িং করবার পার্মিশান মেয়েদের নেই। সেসব করতে হলে লুকিয়ে চুরিয়ে করতে হবে। যেমন নিভাশশী লুকিয়ে একটা প্রেম করে, লুকিয়ে একটা ফ্ল্যাট কিনেছে। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। খুল্লম খুল্লা পারছে না। ও কি ওর স্বামীকে ভালোবাসে? বাসে না। নিভাশশী আমাকে বলেছিল, ও ওর স্বামীকে ভালোবাসে না। কিন্তু একটা ছেলে আছে তো ওদের, তাই ছেলেটার ফিউচারের কথা ভেবে ও স্বামী সংসার ছাড়তে পারবে না। 
    হম্ যে কথা ভাবছিলাম, আমি আমার স্বামীকে ভালোবাসি কিনা। বাসতাম এক সময়ে সেটা পরিস্কার মনে আছে, বিয়ের আগে। 
    কিন্তু এখন? আমি পাজল্ড। আমার অবস্থাটা হয়েছে নিভাশশীর মতই। ও বলেছিল ও ওর বরকে মায়া করে। আমি ও সম্ভবত আমার স্বামীর প্রতি মায়া করছি এখন। 
  • যোষিতা | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:০৯742166
  • আমি আমার স্বামীর ভ্যানিটি ব্যাগ হয়ে কোথাও যেতে রাজি হই নি। সেজন্য আমাকে তিরস্কার করেছে মানুষ জন। কিন্তু আমার স্বামী আমার ভ্যানিটি ব্যাগ হয়ে আমার সঙ্গে এদেশে এলেও আমিই হয়ত আবারও তিরস্কৃত হবো। সে চাইছে একটা রেডিমেড চাকরি। নিজে খুঁজবে না, আমাকেই খুঁজতে হবে। আমিও এতদিন ধরে ঝোঁকের মাথায় খুঁজেই চলেছি তার জন্য। খুঁজে কিছু পাচ্ছি না, সেটাও আমার দোষ। 
    যে মানুষের প্রতি ভালোবাসা একটা সময়ে ছিল, কিন্তু এখন নেই, তার সঙ্গে আমি এদেশে একত্রে থাকব কেমন করে? হয়ত শিগগিরই আরেকটা চাকরি আমি পেতে চলেছি, কিন্তু সেটা আসল সমাধান নয় আমার সমস্যার, চাকরি পেলে তো স্বামী ও কন্যাকে এখানে এনে ফেলতে হবে। কাগজ তো রেডিই আছে। এমনকি এখনও আনা যায়। কিন্তু ঐ মানুষের সঙ্গে কি আমি সংসারটা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারব? টু বি অনেস্ট, আমি কি সত্যিই তা চাই?
    আমার মন কিন্তু সম্ভবত অন্য কারোর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে।
    তবে দুশ্চিন্তা একটাই, বিয়ের বাঁধন যে কী নাগপাশ তা বুঝতে পারছি। নিজে তো জড়িয়ে গেছিই, সঙ্গে সঙ্গে আমার মেয়েকেও অ্যাডপশনে দিলাম। 
    এমন হারামি সমাজব্যবস্থা! মানুষকে শান্তিতে বাঁচতে দেবে না।
  • যোষিতা | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:০১742167
  • মে মাসের ন তারিখে কী একটা পরব ছিল খৃষ্টানদের। এ দেশ যেহেতু খৃষ্টান দেশ, তাই নয়ুই মে ছুটি পড়েছিল। আট তারিখ সন্ধেবেলা আমার জন্য ফেয়ারওয়েলের যে নিমন্ত্রণ ছিল মিস্টার ভটচাজের বাড়িতে, তার পরিনতি ফেয়ারওয়েল রইল না। কী একটা রেড ওয়াইন এনেছিলেন তিনি, বেশি দামী কিছু না। ঐ রেড ওয়াইনের ঝোঁকেই মনে কথা হুড়হুড়িয়ে বেরিয়ে আসে। সন্ধে থেকেই আমার জীবনের অনেক গল্প বলে চলেছিলাম, শেষে যা হয় আর কি, খাওয়া দাওয়ার কিছু একটা আয়োজন ছিল নিশ্চয়, নিশ্চয় খেয়েওছিলাম তবে তা মনে নেই। থ্যাংকস টু সস্তার রেডওয়াইন, কথা বলা অনেক সহজ হয়ে গেছল। অদ্ভূত ভাবে অন্য পক্ষের মনের ভাবও এক। ব্যস, সমস্যার সমাধান হয়েই গেল যেন। 
    আমি ফিরছি না দেশে। আমি এদেশেই থাকব। তিনি বলেই ফেলেছিলেন, যে অন্তর থেকে চান নি যে আমি ফিরে যাই।
    আমি ফিরছি না দেশে। কিন্তু আমাকে তো এদেশে থাকতে গেলে চাকরি পেতে হবে। জেডি নামক লোকটা আর যোগাযোগ করে নি। যদি সত্যিই জুন মাসের ভেতর চাকরি না জোটে, তবে কি আমাকে কি এরা তাড়িয়ে দেবে?
    উত্তরটা সরকারি অফিস থেকে জানা দরকার। 
    পরবর্তীকালে তাঁর সঙ্গে গেলাম সরকারি দপ্তরে। সমসিত নিয়ম ভালো করে জেনে নিতে হবে। তারপরে একে একে সন্তর্পনে এগিয়ে যেতে হবে সঠিক পথে। চিন্তা তো চাকরি নয়, চিন্তা মেয়েকে কেমন করে আনব সেই নিয়ে।
    মেয়ের লিগাল গার্জেন তার বাবা। মাদার কিন্তু লিগাল গার্জেন নয়, মাদার হচ্ছে ন্যাচারাল গার্জেন। এই লিগাল এবং ন্যাচারালের মধ্যে কোনটার শক্তি বেশি, ক্ষমতা বেশি, সেইটে আমি জানি না। মাদার কেন লিগাল গার্জেন নয়? ফাদার কেন ন্যাচারাল গার্জেন নয়?
    এ কি কোনও এক সামাজিক ইনসিকিওরিটি থেকে উদ্ভূত নিয়ম? তফাৎটা কী এবং কেন?
    কেউ কিন্তু সোজাসুজি এটা বলতে চায় নি ভারতবর্ষে। হয়ত তারা তফাৎটা জানেই না। শুনে শুনে মুখস্থ করে ফেলেছে, মেনে নিয়েছে স্বতঃসিদ্ধের মতো।
  • যোষিতা | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩৮742168
  • বেসিকালি মানি স্পীকস্, প্যায়সা বোলতা হ্যায়। ধরেই নেওয়া হয় যে ফাদার টাকা ইনকাম করে, মাদার ঘরের কাজ সামলায়। তো টাকা অবশ্যই শক্তির শিখরে, তাই ফাদারের অধিকার বেশি। ভারতীয় আইনে মাইনর চাইল্ডের ওপর সবার আগে অধিকার ফাদারের। সে লিগাল গার্জেন তো বটেই, ন্যাচারাল গার্জেনও। মাদার শুধুই ন্যাচারাল গার্জেন। তাই গার্জেনি ফলাবার বেশি অধিকার ফাদারের। হিন্দু বিবাহ, হিন্দু দত্তক, এই সকল আইনে স্বামী এবং  ফাদার অবিসংবাদিত ক্ষমতাবান লোক। সেইজন্যই কি বিয়ে এবং দত্তক হিন্দুমতে হয়েছিল? নাকি ভারতের সব আইনেই ঘুরেফিরে সবই তেরে কেটে তাক্?
    জানি না। জানার দরকারও নেই। আমার লক্ষ্য ষোলো বছর বয়স হবার আগে মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে আসা। 
     
    সরকারি দপ্তরে আমার ওয়ার্ক তথা রেসিডেন্স পার্মিট নিয়ে প্রশ্ন করলেন মিস্টার ভটচাজ। উঁহু, এরকম দুমদাম লোকজনকে দেশ থেকে তাড়ায় না এরা। একজনকে তার দেশ থেকে এরা নিয়ে এসেছে, চাকরি চলে যেতেই পারে, আনলিমিটেট পার্মিট যদিও তা বছর বছর রিনিউ করতে হয়, হুট করে ঘাঢ় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে কেন? চাকরি খুঁজবার অধিকার আছে, পার্মিটের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত নতুন চাকরি না পেলে পার্মিট বাড়ানোর জন্য আবেদন করতে হবে। সিম্পুল।
    আমরা দুজনেই কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। এখন চাকরি পেয়ে গেলে সবচেয়ে ভালো হয়। সহজতম উপায়টা উনিই বাতলালেন। কাগজে বিজ্ঞাপন। আমার জন্য উনি খরচ করে ক্লাসিফায়েড কলামে বিজ্ঞাপন দিলেন, কিছুতেই দাম নেন নি।
    ব্যস আর যাই কোথায়?  দুতিন দিন পর থেকে ওঁর বাড়িতে চিঠি আসতে শুরু করেছে। 
    পাত্র তাই, পাত্রী চাই , এরকম বিজ্ঞাপন ভারতে থাকতে দেখেছি, কিন্তু চাকরি চাই বিজ্ঞাপন এদেশে এমন শক্তিশালী  হতে পারে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে জানলাম। 
  • যোষিতা | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:৩২742187
  • এই একটা বিজ্ঞাপন আমার মনের মধ্যে গেঁথে যাওয়া একটা প্রায় চিরস্থায়ী ভুল কে ভেঙে দিল।
    আমি এ যাবদ জানতাম প্রাইভেট ব্যাংকিং এর কালো টাকার দৌলতেই এই দেশটা এত ধনী। এমনকি, কদিন আগেও হেরমান যখন আমায় পারাডেপ্লাৎসে ব্যাংকগুলো দেখিয়ে নানান বিবরণ দিচ্ছিল, আমার মনের মধ্যে সেই পূর্বনির্ধারিত ধারণাই গেঁড়ে বসছিল আরও বেশি করে।
    কিন্তু ঘটনা তো দেখছি অন্য। এত বৈভবের উৎস অন্য। 
    লেটারবক্স উপচে পড়ছে যখন জব এজেন্সী তথা সরাসরি নানান কোম্পানীর নানান সাইজের খামে, তখন আমাকে আশ্চর্য করছে এই সত্য, যে এত বড়ো বড়ো কোম্পানী রয়েছে এই দেশে? ফার্মা ইন্ডাস্ট্রির কথা নয় ছেড়েই দিলাম, ব্যাংকও প্রচুর ( ওদের কথা পরে হবে) তবে তারা তো সেভাবে দেখলে ম্যানুফ্যাকচরিং কোম্পানী নয়, ইনশিওরেন্স এবং রি-ইনশিওরেন্সও প্রচুর, রয়েছে যাবতীয় ফরাসী সুগন্ধ তৈরির কোম্পানী, সার, পেস্টিসাইড, কলকব্জা, মেশিন, মেডিক্যাল ইন্ট্রুমেন্ট, হেভি মেশিনারি, মদ, বিয়ার প্রসেসড ফুড, চকোলেট, ঘড়ি, সিগারেট, সিগার, বলে লিখে শেষ করা যাবে না এতরকমের কোম্পানী, এত রকম্র ইন্ডাস্ট্রি।
    এজেন্টরা জিজ্ঞাসা করছে, তোমার সিভি কি অমুক অমুক কোম্পানীতে পাঠাবো? তুমি যদি অনুমতি দাও, তবেই... ইত্যাদি। তখন আমি দিশেহারা। তবে হ্যাঁ, অনেকেই চাচ্ছে খুব ভাল জার্মান জানা ক্যান্ডিডেট। সেগুলোকে প্রথমেই নাকচ করলাম। বেছে বেছে কয়েকটা কোন্পানী পছনিদ করেছিলাম। মোট চারটে। সেই চাটেতেই আমার ইন্টারভিউ হয়েছিল। এদের মধ্যে একটা বিদ্যুৎ উৎপাদক কোম্পানী, তবে পাশের কান্টনে। তাদের আমাকে পছন্দ হলেও, তাদের বেতন কাঠামো আমার পছন্দ হয় নি, এবং তারা কালো মেয়ে দেখে একটু অপ্রতিভ হয়ে গেছল। আরেকটা কোম্পানী ছিল হিয়ারিং এইড তৈরির কোম্পানী, শহর থেকে দূরে তবে আমাদের কান্টনেই। তারা আমার সঙ্গে ইন্টারভিউ নেবার পরে জানায় যে আমায় নিতে পারছে না একটা কারনে, কুলটুরউন্টারশীড — কালচারাল ডিফারেন্স।
    এই পয়েন্টটা লিখে তারা বিপদে পড়ে গেল। চাকরিটা আমি পাচ্ছি না জেনেও, পাল্টা জানতে চেয়েছিলাম ঐ শব্দটা বলতে তারা কী বোঝাতে চাচ্ছে। আসলে এটা রেসিজমের প্রকাশ। তারা সরাসরি লিখিতভাবে ক্ষমা চেয়েছিল — ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
    এবার বাকি দুটো কোম্পানীর মধ্যে একটি এদেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক, অন্যটি কনসাল্টিং কোম্পানী।  প্রথমটিতে বেতন দ্বিতীয়টির চেয়ে বেশি। 
    আমি ব্যাংক পছন্দ করলাম। পাশের শহরে। জয়েনিং ডেট জুলাইয়ের প্রথমে। এর মধ্যে শিফট হয়ে গেছি আমার প্রিয় মানুষটির বাড়িতে।  আমার ব্যাংকের চাকরিতে জয়েনিং এর সময়টা অবশ্য তিনি এদেশে ছিলেন না, ছুটিতে বেড়াতে গেছলেন আত্মীয় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে ইংল্যান্ডে। 
    সেই সময়টা আমার কেটেছে নানান ঝামেলায়। কনসাল্টিং কোম্পানী আমাকে নেবেই নেবে। তাদের বেতন ব্যাংক্র চেয়ে কম এবং নানান ক্লায়েন্টের অফিসে নানান সময় পোস্টিং হতে পারে। আমি ইনহাউস জবে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ, কিন্তু তারা আমায় ফোন করে করে নাজেহাল করছিল। শেষে তাদের আমি ধমক দিয়েছিলাম বেশ মনে আছে, তারা তখন পাল্টা আমায় ব্ল্যাক লিস্টেড করল বলে জানালো।
    এদিকে জেডি শুরু করল ফোন করা। ফিলিপ মরিস আমায় জয়েন করতে বলেছে। কিন্তু অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার জেডি দেখাতে পারে না। আমার কাছে তখন আর মোবাইল কানেকশনও নেই, তাই ঐ নতুন বাশস্থান্র ল্যান্ড লাইনেই ফোন করে সে। আমিও তখন সরাসরি বারন করতে পারিনি, সে লোককে মিথ্যে কথা বলেছি যে আমার স্বামী চান না যে আমি এদেশে থাকি, তাই আমি ফিরে যাব। যদিও আমার ফোন নম্বর বদলে যাওয়ায় সে বুঝেছে যে আমি ফিরছি না। সে নম্বর চেক করে দেখেছে ফোন কালেকশন কার নামে। আমি বলেছি আবারও মিথ্যে কথা — মাই ব্রাদার!
    জেডি বলছে — ইয়োর হাজবেন্ড ইজ নট ইয়োর প্রবলেম, ইয়োর ব্রাদার ইজ ইয়োর প্রবলেম।
    বেচারা কমিশনের লোভে এরকম করছিল, কমিশন হাতছাড়া হয়ে গেছে বুঝতে পেরে রাগের মাথায় এমনটা বলেছে।
    এসব কথার উত্তর দেওয়া মানে তরজা করতে যাওয়া।
    জুলাই মাসের প্রথমে যেদিন নতুন চাকরিতে জয়েন করলাম, সেদিনই সন্ধেয় এয়ারপোর্টে গেছলাম ওঁকে রিসিভ করতে। এই প্রথম কেউ ওঁকে জুরিখের এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করল।
    সে এক অদ্ভূত দোলাচল মনের ভেতরে। সেপ্টেম্বরের শেষে নতুন কোম্পানীতে পার্মানেন্ট হবার সঙ্গে সঙ্গে যে করে হোক মেয়েকে নিয়ে আসতেই হবে। গত দুমাস আমি দেশে টাকা পাঠাই নি। আমার স্বামী ইমেইলে নানান হুমকি দিয়ে চলেছেন ক্রমাগত। তাও ভালো যে আমার এখন নিজস্ব কোনও ফোন নেই, কিন্তু আমার চিন্তা মেয়েটাকে নিয়ে। চাইলে আমি হয়ত এখনই দেশে গিয়ে মেয়েকে তুলে আনতে পারি, কিন্তু এখন প্রোবেশন পিরিয়ড, অতদিনের ছুটি নেওয়াটা উচিত নয়।
     
     
  • যোষিতা | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:০১742188
  • কর্মস্থলে একজন অত্যন্ত সজ্জন ভালো কোলিগ পেয়েছিলাম — আন্দ্রেই। সে পোল্যান্ডের মানুষ, কৈশোরের শেষে এদেশে এসেছে, এমন কোলিগ আমি খুব কম পেয়েছি আমার কর্মজীবনে, হেরমানকে বাদ দিলে। 
    আন্দ্রেই তখন প্রায় পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই। ও আমাকে জানালো যে তিনজন কর্মচারীকে বিদায় দিয়ে, সেই শূন্যস্থান ভরাট করা হয়েছে আমাকে দিয়ে। এরা তিনজনই লন্ডন থেকে আসত প্রতি সোমবার, বৃহস্পতিবার লাঞ্চের পরেই ছুটত এয়ারপোর্ট, শুক্রবারে ইংল্যান্ডেই নিজ নিজ বাড়ি থেকে রিমোটলি কাজ করত, যদিও সেসব সময়ে তারা আদৌ কিছুই করত না। ফের সোমবার দেরি করে অফিসে আসা, ফ্লাইট যখন ল্যান্ড করবে, তখন আসবে। এসেও কাজ কম করে, আড্ডা মারে, বিকেল হলেই বিয়ার খেতে বেরিয়ে যায় আগে ভাগে। ওরা ছিল তিনজন। দুজন পুরুষ একজন মেয়ে।
    — হ্যাঁ, মেয়েটিকে আমি দেখেছি ইনিটারভিউয়ের সময় ও ছিল, নাম অ্যালিসন না?
    — অ্যালিসন। ওর বর লন্ডনে পুলিশে চাকরি করে। সে চাচ্ছিল না বৌ সারা সপ্তাহ সুইটজারল্যান্ডে থাকুক।
    — তা এরা পুরোটাই রিমোটলি করলে ক্ষতি কী ছিল আন্দ্রেই?
    — উঁহু, ওভাবে হয় না। ব্যাংকিং সিক্রেসি (বাংকগেহাইমনিস) বলে একটা ব্যাপার আছে সুইস ব্যাংকিং আইনে। দ্বিতীয়তঃ এখানে পোস্টেড হলে বেতন অনেক বেশি পাবে ইংলন্ডের তুলনায়।
    — তাই?
    — হ্যাঁ। এটা হচ্ছে এল ডোরাডো। এদেশে বেতন বেশি, গরীব নেই। লোকে কি এমনি এমনি এদেশের পানে ছুটে আসে?
    — আর জিনিস পত্রের দাম? জমির দাম? সেগুলোতো বেশ বেশি।
    — সেসবও দামে চড়া। 
    — সত্যিই তো, এদেশে অধিকাংশ লোকই ভাড়া বাড়িতে থাকে। অথচ জার্মানিতে, ইংলন্ডে, বাড়ি কত সস্তা, কত লোকের নিজস্ব বাড়ি।
    আন্দ্রেই কিন্তু ব্যাংকের সরাসরি কর্মী ছিল না। ও ছিল এক্সটার্নাল কনসাল্টেন্ট। ও প্রতিঘন্টায় পেত আড়াইশো ফ্রাংক। আমি জয়েন করবার ছমাস পরে তা কমিয়ে করা হয়েছিল ঘন্টায় একশো সত্তর ফ্রাংক। ওর বৌ ছিল ঐ ব্যাংকেরই স্থায়ী চাকুরে। তবে বৌয়ের অফিস ছিল জুরিখ শহরের ভেতরে। 
     
     
  • যোষিতা | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:৩১742189
  • এই ব্যাংকে কিছু নতুন জিনিস আমাকে শিখতে হচ্ছিল, বা বলা উচিৎ ঐগুলো শেখা আবশ্যিক। তাই অক্টোবরে আমাকে পাঠানো হয়েছিল ব্রাসেলস শহরে দু সপ্তাহের ট্রেনিং কোর্সে। অত্যন্ত সাধারণ মানের একটা হেটেলে থাকতাম। সেখান থেকে হাঁটা পথে ট্রেনিং এর বাড়িটা। সেটা অবশ্য বিশ্বের নামকরা একটা কোম্পানীর এডুকেশন সেন্টার। সেই সময়ে হয়ত এক নম্বরে ছিল।
    আমার নিজস্ব কোনও ফোন নেই। কিছুদিন ধরেই আমরা ভাবছি যে একটা মোবাইল ফেন কানেকশন নেব। আসলে সুইটজারল্যান্ডে লোকজন বিশেষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে চায় না। অল্প বয়সীরা বা বড়ো বড়ো চাকুরেরা মোবাইল রাখতে শুরু করেছে সবে।
    এডুকেশন সেন্টার থেকে বের হয়ে সন্ধেবেলা পড়াশুনো ঝালিয়ে নিতাম, পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি এইটুকুই। 
    ক্লাস চলাকালীন ইন্টারনেট থাকে কম্পিউটারে। সেখানে ইমেইল চেক করতে গিয়ে আমি চোখে অন্ধকার দেখছি। এই প্রথম, হ্যাঁ এই প্রথম আমার মেয়ে আমাকে ইমেইল করেছে। জেনুইন মেইল। আমার স্বামীর করা ফেক ইমেইল নয়। সেই ইমেইলের মধ্যে মাত্র তিনটে লাইন। তাকে মেরেছে আমার স্বামী। স্বামী বলেছে যে সে আমাকে ডিপোর্ট কববার চেষ্টা করছে এদেশ থেকে। তিন নম্বর বাক্যে মেয়ে লিখেছে — মা তুমি খুব সাবধানে থেকো।
     
    ব্রেক শুরু হবার আগে পর্যন্ত ক্লাসে কী আর পড়ালো আমি শুনিনি। ব্রেক হতেই আমি সকলকে জিজ্ঞাসা করছি, এখানে টেলিফোন আছে কোথায়। ওরা দেখিয়ে দিল। দাম টামের ব্যাপার নেই, ফ্রি কল। 
    ফোন করতেই মেয়েকে পেয়ে গেছি। 
    — মা, ও আমাকে মেরেছে। রোজ তোমার নামে গালাগালি করে আর আমাকে বসে বসে শুনতে হয়। কালকে আমি বলেছিলাম, আমার মাকে রোজ এত গালাগাল দেবে না! তখন আমাকে ঠাশ করে চড় মেরেছে। ও বলেছে যেমন করে হোক তোমাকে ডিপোর্ট করবে। মা তুমি পাালিয়ে যাও কোথাও, ও কোমাকে খুন করবে বলেছে।
    — নারে পারিজাত। ও কিচ্ছু করতে পারবে না। 
    — না মা, ও তোমাকে শেষ করে দেবে, তুমি ওকে চেন না। আমি তোমার সঙ্গে ফোনে কথা বললে ও রান্নাঘরে অন্য রিসিভারটা তুলে কথা শোনে। তোমাকে ইমেইলটা লিখে আমি ডিলিট করে দিয়েছি, ডিলিটেড ফোল্ডার থেকেও ডিসুট করে দিয়েছি।
    — শোন। মন দিয়ে শোন। আমি কোলকাতায় গিয়ে তোকে নিয়ে আসব। আমি একটা চাকরি পেয়েছি। 
    — মা, ও আমার পাসপোর্ট নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। পাসপোর্ট না থাকলে আমি কী করে সুইটজারল্যান্ড যাব?
    — আমি সব বযবস্থা করছি। একথা তুই আর আমি ছাড়া আর কেউ জানবে না। তুই নিশ্চিন্তে থাক। আমি আসছি।
    — জানো মা, আমি হ্যারী পটার চারটে বই ই পড়ে ফেলেছি।
  • যোষিতা | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:০৯742190
  • ট্রেনিং ও পরীক্ষা চমৎকারভাবে মিটে গেছে। আমি সন্ধেবেলা উপস্থিত হলাম জুরিখ এয়ারপোর্টে। শুক্রবারের সন্ধে। আমায় রিসিভ করতে এসেছে আমার প্রিয় মানুষটা। 
    শনি রবি আমরা চিন্তা করেছি, আলোচনা করেছি কীভাবে মেয়েকে যত শীঘ্র সম্ভব এখানে নিয়ে আসব। সোমবারে কি দুজনেই ছুটি নিয়ে নেব? ঐ দিন চলে যাব ইমিগ্রেশন অফিসে দুজনে। ইনভিটেশনের কাগজ তো রয়েছে সঙ্গে। ওখানে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেব, স্বামী নয়, শুধু মেয়েকে আনা যাবে কি না, ঐ কাগজের জোরে।
    সোমবারে দুজনেই যাই ইমিগ্রেশন অফিসে। এক্কেবারে সকাল সকাল। সমস্ত প্রশ্ন একে একে করি ঐ কাগজ দেখিয়ে।
    কিন্তু যা জানা যায়, তা মন খারাপ করে দেওয়া উত্তর। ঐ কাগজ ছমাসের বেশি আগে দেওয়া হয়েছিল, ওটা তামাদি হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত ফ্যামিলি রিইউনিয়ন বলতে বোঝায় গোটা পরিবারটাকেই নিয়ে আসার ব্যাপার, বেছে বেছে একজন দুজনকে নয়।
    তাহলে উপায়? আমরা মরিয়া হয়ে আবারও প্রশ্ন করি, কোনও উপায়ই কি নেই?
    —আছে। উপায় আছে। ডিভোর্স।
    — সে তো অন্ক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আমার স্বামী যদি ডিভোর্স দিতে না চান, তখন তো মামলা চলতেই থাকবে।
     এই প্রশ্নের উত্তর জানলার ওপারের ভদ্রমহিলাটির কাছে নেই। তাছাড়া উনি বুঝতেই পারছেন না, ডিভোর্স দিতে আপত্তি ব্যাপারটার কী তাৎপর্য। একজন যদি ডিভোর্স চায়, সেটাই যথেষ্ট। কারওকে জের করে বিবাহ বন্ধনে বেঁধে রাখা যায় নাকি?
     
    আমি তো জানি, ভারতবর্ষে যায়। বছরের পর বছর সেদেশে ডিভোর্সের মামলা চলে, মানুষ মরে যায় ডিভোর্সের জন্য অপেক্ষা করতে করতে। তারপরে এত দূর দেশ থেকে মামলার শুনানির জন্য বারবার করে আমি কোলকাতা যেতেও পারব না। খরচ তো আছেই, আর আছে ছুটি পাবার ব্যাপার। সে লোক তো আমায় নাজেহাল করবার জন্য ক্রমাগত নানান ফিকির করবে।
    ডিভোর্স পাবার পরেও সন্তানের কাস্টডি পাওয়া নিয়েও সমস্যা থাকবে। লিগ্যাল গার্জেন ও ন্যাচারাল গার্জেনের টানাপোড়েনে সারাটা জীবন আদালতের চক্কর কেটে মরব নাকি?
    — আচ্ছা শুনুন, ডিভোর্স না করে অন্য কোনও উপায় কি আছে?
    — আপনি চিঠি লিখতে পারেন। বুঝিয়ে লিখবেন আপনার সমস্যার কথা। যদি নাকচ না হয়, তবে আপনার বাচ্চাকে নিতে আসবেন স্বামী ছাড়াই। তবে, এতে কোনও গ্যারান্টি নেই। একবার নাকচ হয়ে গেলে পরে সে নিয়ে আবেদন করলেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবার সম্ভাবনা কম।
     
    আমরা দুজনেই এসব শুনে বেশ দমে গেছলাম।
    তবে চেষ্টা তো করতেই হবে। এখন যেটা আমার দরকার, তা হচ্ছে একজন ভালো উকিল। চিঠিই বানাবো, তবে নিজে নয়, উকিলের সাহায়্যে। 
    কথা হচ্ছে যে ভালো উকিলের সন্ধান কে দিতে পারবে আমাদের?
    মনে পড়েছে, মিস্টার বোসের মেয়েই তো উকিল। ওর ছোট মেয়ে। রিকোয়েস্ট করলে কি সে আমায় সাহায্য করবে না?
     
    মিস্টার বোসকে ফোন করে জানালাম ব্যাপারটা। উনি শুনেই আমাকে বকাবকি শুরু করলেন — আমি গোড়া থেকেই তোমাকে বলেছিলাম, বিয়েটা না করে এদেশে এলে তোমার এসব সমস্যা হতো না!
    দুমিনিট বকুনি শুনে গেলাম চুপচাপ। তারপর জানা গেল ওঁর মেয়ে কোম্পানী আইনের উকিল, ফ্যামিলি বা ইমিগ্রেশন আইনের কাজ সে করে না। তবে চিন্তা নেই, তার বন্ধুবান্ধবরা আছে ওকালতির নানান শাখায়। ভালো একজন ইমিগ্রেশন উকিলের সন্ধান সে নিশ্চয় দিতে পারবে। ছোট মেয়ের ফোন নম্বর দিলেন, সরাসরি কথা বলতে বললেন।
    ছোট মেয়ে চমৎকার বাংলা বোঝে, বলতেও পারে অল্প।
    সে আমার চেয়ে বছর দুয়েকের ছোট। তার চেনা বান্ধবী আছে, সে বলে রাখবে। তবে সাবধান করে দিল কয়েকটা ব্যাপারে। প্রথমতঃ উকিলের সঙ্গে অল্প কথায় গুছিয়ে সমস্যা জানাতে, নইলে খরচের মিটার হু হু করে চড়বে। আলোচনা শুরুর আগেই তার ফি কত সেটা নিতে। দ্বিতীয়ত, এদেশে যদি মেয়েকে নিয়েও আসি, মেয়ের অসুখে বিসুখে আমি তো মা হিসেবে কোনও ছুটি পাব না। তদুপরি এদেশে মেয়েদের আলাদা ইস্কুল নেই, কোএডুকেশন স্কুল সবকটাই। সেখানে ছেলে মেয়ে সকলেই একত্রে সাঁতারের ক্লাসে যায়, সাঁতারের পোশাক পরতে হবে কিন্তু মেয়েকে।
     
    তাকে অনেক ধন্যবাদ দিলাম। বললাম ইস্কুলের ব্যাপারে আমার বা মেয়ের উভয়েরই সমস্যা নেই। উকিলের কাছ থেকে একটা চিঠি চাই শুধু, খরচটা কোনও ফ্যাক্টরই নয়।
     
    আমি ফুলস্কেপ কাগজে ইংরিজিতে লিখতে শুরু করলাম চিঠি। লম্বা ছিল চিঠিটা। প্রতিটি পয়েনিট ছিলো সময়ানুক্রমিক এমং যুক্তিযুক্ত। মূল বক্তব্যের সারাংশ বাংলা করলে দাঁড়ায়, এইরকম।
    আমার পনেরো মাস যাবদ বিয়ে হয়েছে। আমার স্বামী সাতমাস আগে আমার মেয়্কে দত্তক নিয়েছেন। দুজনেই ভারতে একই বাসস্থানে থাকে, তবে তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছে না এবং আমারও বৈবাহিক সম্পর্ক ভাঙনের দিকে। এই অবস্থায় অবিলম্বে আমার মেয়েকে আমার কাছে নিয়ে আসতে চাই। সে নিজেকে বিপন্ন বোধ করছে। আমার কাছে থাকলে সে যত্নে ও শান্তিতে থাকবে।
     
    লম্বা চিঠিটা ইমেলে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম মিস বোসের চেনা উকিলকে। ইংরিজিতেই।
    দিন তিনেক পরে পুরো চিঠিটা ডাকে এল। সঙ্গে শতিনেক ফাংকের বিল।
    উনি আমার চিঠির সমস্ত বক্তব্য অপরিবর্তিত রেখে পুরো চিঠিটা জার্মানে অনুবাদ করেছেন এবং প্রত্যেকটা পয়েন্টের সঙ্গে সুইস আইনেরধারার কত নম্বর আর্টিকল. সেগুলো জুড়ে দিয়েছ্ন। 
    সেই চিঠি নিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসে গিয়ে দরখাস্ত জমা দিয়ে এসে অপেক্ষায় দিন কাটে। 
     
  • | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:১৭742191
  • এইবারে আস্তে আস্তে সব ঠিক হবে আশা করি। 
  • সমরেশ মুখার্জী | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৫৭742192
  • — অ্যাঁ! রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে ফেলেছ নাকি? সর্বনাশ!
    — কী করে করব, মানিব্যাগ নিতে ভুলে গেছলাম।
     
     এইটা ছিল নিয়তির একটি চমৎকার মোচড় - জীবনে এমন কয়েকটি তুচ্ছ ঘটনা জীবনের গতি‌পথ বদলে দেয় উল্লেখযোগ্য দিশায় - এবং এসবের ফলেই হয়তো প্রবল অবিশ্বাসী মানুষ‌ও ক্রমশ Dance of Destiny তে বিশ্বাস করতে শুরু করে।
     
    এই পর্বটি ছিল দারুণ টানাপোড়েন‌পূর্ণ - যাকে ঝেলতে হয়েছে এসব - সেই বোঝে। খুব টেনে রেখেছে লেখাটি।
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:৫৪742194
  • ঐখানের মোচড়টা সত্যি টান টান ছিল। দারুন লাগছে লেখাটা। 
  • kaktarua | 192.82.150.102 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০২:০৬742195
  • খুব মন দিয়ে পড়ছি। এগিয়ে চলুক। 
  • যোষিতা | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৪:০৯742196
  • নভেম্বর কেটে যায়। কোনো সাড়া শহ্দ পাই না Migrationsamt (অভিবাসন দপ্তর) থেকে। প্রাণ পনে চেপে রাখি সমস্ত উৎকণ্ঠা। আমার বয়ফ্রেন্ডের অফিসে এক ইহুদি কোলিগ আছে জঁ পিয়ের হাদাৎ। তার গোটা পাঁচ কি ছটা পাসপোর্ট। তার প্রাক্তন স্ত্রী ওদের ছেলেকে সামলাতে নাজেহাল হয়ে যাচ্ছিল ইজ্রায়েলে। সে জঁ পিয়ের কে বলে ছেলে তুমি নিয়ে যাও সুইটজারল্যান্ডে, এই বাঁদর ছেলেকে তুমি নিয়ে গেলে আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। জঁ পিয়ের  অত সরকারি কাগজপত্রের ঝামেলায় গেল না। সে ছেলেকে নিয়ে সোজা চলে এল এখানে, তারপর ইস্কুলে ভর্তি করে দিল। ছেলে বাপকে সমঝে চলে, তার বাঁদরামিও এখন কন্ট্রোলের মধ্যে। তা সেই জঁ পিয়ের কে উনি আমার মেয়েকে নিয়ে আসার সমস্যার কথা বলেছিলেন। জঁ পিয়ের এসর সমস্যার সমাধান নিমেষে করতে জানে। সে বলল, গিয়ে নিয়ে এসো মেয়েকে, পার্মিশান পরে বের করা যাবে। ও বোঝেই না যে ভারতীয় পাসপোর্টে ভিসা নিতে হয়, ভিসার সমস্যা ওকে বোঝানো সম্ভব নয়। তখন বলছে, টুরিস্ট ভিসায় নিয়ে এসো। তারপরে দেখা যাবে। ওর ভাবনা চিন্তায় ভয়ডর নেই। 
    আমরা ভারতীয়রা বড্ড ভীতু। হয়ত দীর্ঘ কলোনিয়ালিজমের কারনে। সাদা সাহেব দেখলে গদোগদো হই, অ্যাটেনশন পাবার চেষ্টা করি, মোসাহেবি করবার চান্স পেলে যেমন ছাড়ি না, তেমনি ধরে আনতে বললে বেঁধে আনি। এগুলো আমাদের মজ্জায় মজ্জায় শিরায় ধমনীতে রক্তস্রোতে বয়ে চলেছে। স্বজাতির লোকে বাহবা দিলে তেমন পাত্তা দেব না, কিন্তু সাদা সাহেব কোনও কিছু অ্যাপ্রিশিয়েট করলে আনন্দে মরি মরি হবো। দীর্ঘ ব্রিটিশ শাসনের ফলে আমরা ভয় পাওয়াটা হয়ত একটা অভ্যাসে পরিণত করেছি। 
    ঐ যেমন আমি ঘাবড়াচ্ছিলাম, চাকরি নট হলেই আমায় এরা পেছনে লাথ মেরে তাড়াবে, তেমনি জঁ পিয়ের এর মত ডোন্ট কেয়ার অ্যাটিটিউড আমরা রপ্ত করতে পারব না। এক্কেবারে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সে অন্য কথা। 
    আমি ভেবেই রেখেছিলাম, এরা পার্মিশান না দিলে টুরিস্ট ভিসায় নিয়ে আসব, তারপর দেখব কে ওকে তাড়ায়।
  • যোষিতা | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:০৩742197
  • উন থেকে চুন খসলেই পানিশমেন্টের আতঙ্ক আমরা আতঙ্কিত হয়ে থাকি। এটা করা ঠিক, ওটা করা বেঠিক। এটা করলে পুরস্কার, ওটা করলে প্রহার তিরস্কার — এই বাইনারির অনুশাসনে ছোটবেলা থেকে এত বেশি সীজনড হয়ে যাই যে, ভালো মানে সাদা, মন্দ মানে কালো , এই করতে করতে মধ্যিখানের অসংখ্য রং আমরা মিস করে গেলাম। অথচ পুরো সাদা বা পুরো কালো বলে তো সত্যই কিছু নেই। অথচ অসংখ্য নিয়ম মানতে মানতে নিজেদের স্বাধীনতাকে বেঁধে ফেলেছি। সেদিন বাসে ট্রামে অজান্তেই বিনা টিকিটে ঘুরে যেমন পরে আতঙ্কিত হয়েছি। ইশ্, যদি আমায় ধরে ফেলত, ধরে ফেললে জরিমানা হতো, পানিশমেন্ট। কিসুই হয় নি। ইচ্ছে করে একদিন বিনা টিকিটে ঘুরবার অ্যাডভেঞ্চার কিন্তু করা হলো না। আমরা ল অ্যাবাইডিং মানুষজন।
    আমার মা আন্টিমাসীকে বলতে পারে নি আমি বিবাহিত কি না। সে ম্যারেজ সার্টিফিকেট দেখে নি বলে তার মনে দ্বিধা ছিল, যদি মিথ্যা হয়, ল অ্যাবাইডিং নাগরিক কী করে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে? তার ফলে যদি একটা শিশুকে ইস্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, সেটা নিয়ে এদের কোনও বক্তব্য থাকে না। 
    অফিসে আরেকজন মেয়ে ছিল, দানিয়েলা। রোমানিয়ার মেয়ে। আমারই সমবয়সী কি একটু বড়ো হলেও হতে পারে।
    ওর শৈশব থেকে প্রথম যৌবন কেটেছে চাউশেস্কুর শাসনকালে বা আরও পরিস্কার করে বললে সেই কঠিন সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায়। তখন ঘরে ঘরে শিশুরাই গুপ্তচরের কাজ করত নিজের অজান্তে। বাড়িতে বাবামা কী কী কথা বলছে সমস্ত ইস্কুলে গিয়ে আন্টিমাসীদের জানাতে হতো। দেয়ালে হয়ত পিঠ ঠেকে গেছল ওর ও। নব্বই একানব্বইয়ের দিকে দেশটা যখন স্বাধীনতা পেয়ে গেছে ও বিয়ে করে নিয়েছিল এক ক্যানাডিয়ানকে। বেশ কয়েকবছর ছিল ক্যানাডায়, নাগরিকত্ব পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তারপরে ডিভোর্স নেয়। ঐ পাসপোর্টের জোরে সে অনেক দেশে অনায়াসে যেতে পারে, যেমন এখন চাকরি করছে এই কোম্পানীতে আন্দ্রেই এর মতো এক্সটার্নাল কনসাল্টেন্ট হয়ে, প্রতি ঘন্টায় পাচ্ছে ১৮০ ফ্রাংক। আন্দ্রেই এর সঙ্গে ওর প্রচ্ছন্ন রেষারেষি রয়েছে। তবে তুলনায় দানিয়েলা কাজ জানে অনেক বেশি।
    দানিয়েলা আমাকে বলেছিল অনেক খুঁটিনাটি।  দেখ, তুই একটা মেয়ে এবং সাদা নোস, কালার্ড। তোকে বেতন সবসময় কম দেবে এরা, তোর কাজের জন্য উপযুক্ত স্বীকৃতিও দেবে না। ও সোজা সাপটা বলেছিল, এরা বেসিকালি রেসিস্ট, এবং এরা জানেও না যে এরা রেসিস্ট।
    আমি এই জিনিসটা কিছু বুঝি। আমি ভারতবর্ষ থেকে এসেছি। যেদেশে সমাজের পরতে পরতে নানান ধরণের রেসিজম। রং, জাত, এসব তো সরাসরিই সর্বদা চোখে দেখা। নিষ্ঠুরতা দেখে দেখে চোখ আমাদের এতটাই সয়ে গেছে যে ওগুলোই স্বাভাবিক মনে হয়। সেই সঙ্গে সেক্সিজম। সেও সম্ভবত দুনিয়ার প্রত্যেকটা সচেতন মেয়ে জানে। স্থানাঙ্ক জ্যামিতির ছক কাগজে এক্স এবং ওয়াই অক্ষ আঁকলে আমার অবস্থান নীচে বাঁদিকের কোথাও, যেখানে এক্স এবং ওয়াই, দুই চলরাশির মানই ঋণাত্মক। চলরাশি এক্স ধরে নিচ্ছি আমার জেন্ডার, এবং চলরাশি ওয়াই গাত্রবর্ণ। 
  • Kaktarua | 2607:fea8:4a9e:7fe0::691e | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:২৯742209
  • একদম সঠিক বিশ্লেষণ। ১৭ বছর 3 দেশে চাকরি করে বুঝে গেছি আমরা দৌড় শুরুই করি 3 লাপ্ পেছনে। প্রথমে ওই 3 ল্যাপ অতিক্রম করা তবে তো এগোনো। 
  • যোষিতা | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৪:৪৪742228
  • আমি একটা ফোন কার্ড কিনেছি সুইসকম এর। একটা কার্ডের দাম কুড়ি ফ্রাংক। রাস্তার ফোনবুথ থেকে এই কার্ড দিয়ে ফোন করা যায়। একবারে পাঁচ মিনিট মতন কথা বললে কার্ডের ব্যালেন্স শেষ হয়ে যায়। তবু আমি নভেম্বরের শেষে একদিন অফিসের লাঞ্চব্রেকের টাইমে হেঁটে হেঁটে চলে গেছলাম গ্লাটব্রুকের নির্জন রেলস্টেশনের কাছে। ওখানে একটা ফোনবুথ আছে। এই সময়টা ভারতে বিকেল, আমার মেয়ে বাড়িতে একা থাকবে এই সময়ে, যদি না সে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায় বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে।
    আমার মেয়েকে আমি কখনও আতুপুতু করে বড়ো করার কথা ভাবি নি। আমি নিজেও বড়ো হয়েছি নিজের মতো, আতুপুতু হয়ে একেবারেই নয়।
    কোলকাতায় দেখতাম, আমার মেয়্র সহপাঠীদের মায়েরা সব সময় তাদের বাচ্চাদের পেছনে জোঁকের মত লেগে রয়েছে। ইস্কুলের পড়া, হোমওয়ার্ক, টিফিনবাক্স, সমসিত কিছুতে তাদের এত বেশি নজর, যে বাচ্চাগুলো দম নিতে পারে না সহজভাবে, সবসময় মায়ের কাছে তাদের জবাবদিহির একটা তাগিদ থাকে। আমার দীর্ঘ বিদেশবাসের অভিজ্ঞতায় আমি নিজের মত করে বুঝেছি যে ইস্কুলের পড়ায় বা পরীক্ষায় রেষারেষি করে বেশি নম্বর পাবার খেলায় বাচ্চাদের মাতিয়ে রাখলে তাতে আদতে সুফল শূন্য। নাইবা পেল ভাল নম্বর, নাইবা হলো টিচারের প্রিয় বা বাধ্য, এতে কিস্যু এসে যায় না ভবিষ্যতের চরিত্রগঠনে। বরং চাপ সামলাতে না পেরে সে কৈফিয়ৎ দেবার ভয়ে মিথ্যে বলতে শিখবে বেশি করে, বন্ধুদের বন্ধু না ভেবে প্রতিযোগী ভাববে। কটা শুকনো নম্বরের লোভে হারিয়ে ফেলবে মনুষ্যত্ব। বাইরে থেকে ছদ্ম পোলাইটনেসের আবরণে সে ঢেকে রাখবে নিজের চেহারা, সেই আপাত ভদ্রতার মুখোশের ভেতরে আসল চামড়াটা সূর্যের আলো না পেয়ে পেয়ে অসুস্থতায় ভরে উঠবে। এমন ভাবে বেড়ে উঠলে সে ভালো মানুষ কখনই তৈরি হতে পারবে না। 
    মেয়েকে ফোন করে জানালাম যে ওর আসবার জন্য দরখাস্ত করা হলেও এখনও উত্তর আসে নি। তবে তাকে বেশিদিন ধৈর্য ধরতে হবে না, কিছু একটা পথ আমি বের করবই। কিন্তু যতদিন না গ্রীন সিগনাল পাচ্ছি, একটু সবুর করতে হবে কষ্ট করে।
    মেয়ে আমার অবুঝ নয়, বারো বছর বয়সের মধ্যেই সে জীবনের অনেক অনভিপ্রেত ঘটনা ও অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছে। এর কুফল যেমন আছে, তেমনি সুফল বলতে একটাই, সে প্রচণ্ড সাহসী।
    আমি ভরসা পেলাম তার সঙ্গে কথা বলে।
    অবশ্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হলো না। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই পেলাম চিঠি মিগ্রাৎসিওন্সাম্ট থেকে। আমাকে ডেকে পাঠিয়েছে।
    চিঠিতে ডেকে পাঠানোর অর্থ পজিটিভ। যদি তারা আমার আবেদন নাকচ করত, তবে সেকথা চিঠিতেই লিখে সাফ জানিয়ে দিত যে সরি  এটা সম্ভব নয়।
     
  • যোষিতা | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:২৯742229
  • আমার অনুমান সঠিক। এখনই আমার মেয়েকে নিয়ে আসতে হবে। কাগজ হাতে পেয়ে গেলাম সেই অফিস থেকে। হাতে সময় বেশি নেই। মাত্র এক মাস।
    আমরা পরবর্তী প্ল্যান তৈরি করলাম যত্ন করে।
    প্রথমে অফিস থেকে ছুটি নিতে হবে। সেটা সহজ কাজ। ক্রিসমাসের ছুটির সঙ্গে আগে আরও দুসপ্তাহের ছুটি আমার এমনিতেই পাওনা রয়েছে। দ্বিতীয়ত টিকিট এখান থেকেই কিনে নিয়ে যাব। হ্যাঁ, দাম অবশ্যই প্রচুর বেশি পড়বে এখান থেকে টিকিট কিনলে। কিন্তু ভারতে গিয়ে পরিস্থিতি কেমন থাকবে সেটা যেহেতু জানি না, তাই সেখান থেকে টিকিট কেনার কাজটা বাদই থাকুক। এটা এক ধরণের রেসকিউ মিশনের মত কাজ। অজানা বিপদ যে কোনও মুহূর্তে আসবে, সেই মতো মোকাবিলা করতে হবে।
    টিকিটের তারিখটাও ঠিকমত হওয়া ইমপরট্যান্ট। মেয়ে তো একা ট্র্যাভেল করবে না, আমরা থাকব ওর সঙ্গে।
    আবার এয়ার ইন্ডিয়ার অফিসে গেলাম। ওখানকার মানুষদের সঙ্গে মুখ চেনা  হয়ে গেছে। আমর দুজনেই যাচ্ছি মেয়েকে নিয়ে আসতে। মেয়ের বয়স যেহেতু বারো, তার টিকিটের দাম পুরোটাই দিতে হবে, কনসেশন নেই।
    তেরই ডিসেম্বর রওনা দেবার আগে দিল্লির সুইস এমব্যাসীর কনসুলার সেকশনে ফোন করে জানতে চাইলাম কত তারিখ অবধি ভিসা সেকশন খোলা। ফোন যে ধরেছিল, সে সম্ভবত মালী। কিংবা দারোয়ান। অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে জানালো যে চব্বিশ তারিখ পর্যন্ত খোলা আছে।
    ব্যস, আর চিন্তা কীসের? 
    যাবার আগে আমি আমার প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে একটা অঙ্গীকার করে নিয়েছিলাম। অলিখিত অঙ্গীকার। তাকে সুইস নাগরিকত্ব নিতে হবে। বত্রিশ বছর বিদেশবাসের পরেও কেন সর্বত্র যাতায়াতের জন্য ভিসার ঝামেলা পোয়াতে হয়?
    সে কথা দিল, সুইস হবে। ইন্ডিয়া থেকে ফিরে এসে দরখাস্ত করবে। তার দেশে ফিরে যাবার পিছুটান ফুরিয়েছে। এখন এইখানেই আমাদের জীবন, এখানেই ভবিষ্যৎ। শুধু বাচ্চাটাকে নিয়ে আনতে পারলেই ষোলোকলা পূর্ণ হয়।
    কিন্তু আমার স্বামী কি অত সহজেই বাচ্চাকে ছেড়ে দেবে আমার হাতে? সেই সমস্যার সমাধানে এই মানুষটা কিচ্ছু করতে পারবে না। গোটা ঘটনায় তার উপস্থিতি কেউ জানবে না।
    যাবার আগের দিন মেয়েকে ফোন করে ওঁর সঙ্গে আলাপ করালাম।
    মেয়েতো মহা খুশি। হ্যারি পটারের চেম্বার অফ সিক্রেটস এর সে নিজস্ব বাংলা নাম দিয়েছে — হরি কুমোর ও তার গোপন কক্ষ!
  • যোষিতা | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:৪৪742230
  • আমার কোলকাতায় কী কী করবার আছে তা একটা লিস্ট করে নিই মনে মনে। 
    রান্নাঘরের ফুড প্রোসেসরের ব্লেডটা খুলে গেছে, ওটা চাঁদনিচকের মিস্তিরিকে দিয়ে রিভেট করিয়ে আনলে নতুন ফুডপ্রোসেসর কিনবার খরচটা বাঁচবে। এদেশে মেরামতির খরচ এত বেশি যে, তার সঙ্গে অল্প টাকা যোগ করলে নতুন জিনিস কেনা যায়।
    আর বাকিটা হচ্ছে বাচ্চার জামাকাপড়, তার অরিজিনাল জন্ম নিবন্ধের পুস্তিকা, যা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে প্রাপ্ত, সঙ্গে ভারতীয় দূতাবাস থেকে দেওয়া জন্ম নিবন্ধের ইংরিজি অনুবাদ। আর তো কিচ্ছু চাই না। আমার কটা গয়না পড়ে আছে ব্যাংকের জয়েন্ট লকারে। ব্যাংকের টাকা থাক পড়ে, কিছু তুলতে হবে যেটুকু খরচাপাতি হবে কোলকাতায় সেসবের জন্য। আর? আর কী কাজ বাকি?
    সবার সঙ্গে শেষবারের মতো মেয়েকে দেখা করিয়ে আনা। বিদায় সম্ভাষণের জন্য।
    সবচেয়ে জরুরি সঠিক সময়ে কোলকাতায় এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিল্লির ফ্লাইট ধরা।
    কোলকাতা পৌঁছব চোদ্দই সকালে। কোলকাতা ছাড়ব তেইশে ডিসেম্বর। মেরেকেটে নটা দিন।
    ঐ নটা দিন, নটা রাত আমাকে কাটাতে হবে স্বামীর সঙ্গে। সে কি রাত্রে আমাকে জোরাজুরি করবে?
    আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে। সে কি বুঝতে পেরে যাবে যে মেয়েকে নিয়ে আমি চিরতরে পালাচ্ছি ভারতবর্ষ ছেড়ে?
    এই কটা দিন আমাকে সত্য মিথ্যা মিলিয়ে নানান অভিনয় করতে হবে, জাস্ট আত্মরক্ষার্থে, আর আমার মেয়ের জীবনের জন্য। 
    আমি কি সব ভালো মত করতে পারব?
    আমার অভিনয়ে সামান্যতম ভুল হলে সব প্ল্যান ছারখার হয়ে যাবে। কারোকে বোকা ভাবা উচিত নয়, শত্রুপক্ষকে তো কখনই নয়।
    তবে একটা দুর্বলতা তার আছে, সে লোভী। তার জন্য বাক্স ভরে নিয়েছি প্রচুর উপহার। দামী মদ, সুন্দর সুন্দর বোতলে, কাপড় দিয়ে মুড়ে সুটকেসে করে নিয়ে যাচ্ছি। দিল্লির কাস্টমসে অনায়াসে বেরিয়ে যাবে।
    চোদ্দই দিল্লিতে পৌঁছে, কয়েকঘন্টা অপেক্ষার পরে ডোমেস্টিক এয়ারপোর্টে গেলাম। ভোরের ফ্লাইট জেট এয়ারওয়েজের। 
    সক্কাল সক্কাল কোলকাতায় পৌঁছে আমরা দুজনেই চললাম আমার মায়ের বাড়ি। সেখানে জিনিসপত্র রেখে, পাশেই দোলনা ইস্কুল। বাচ্চারা সব ইস্কুলে আসছে। ক্রুশিয়াল টাইম। একবার ইস্কুলে ঢুকে গেলে সারাদিনে মেয়েকে সেখান থেকে বের করা যাবে না। সেদিন শনিবার।
    ওকে আগেই জানানো ছিল, ইস্কুলের গেটের কাছেই থাকব আমি।
    একে একে বাচ্চা বেঝাই গাড়ি থেমেছে ইস্কুলের দরজার কাছে রাস্তার ওপর সার দিয়ে। তারই একটা থেকে নেমে আসে আমার মেয়ে। একরাশ ইউনিফর্ম পরা ছেলেন্য়ের ভেতর থেকে কাকে আমি স্পষ্ট চিনতে পারি। সে ডানদিকে তাকাতেই গাছের নীচে আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। তার আশেপাশে সহপাঠিনীরা রয়েছে। একজন সম্ভবত আমায় চিনতে পেরে পাশের বন্ধুটিকে দেখিয়ে ভ্রূভঙ্গী করে ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে, পারিজাতের মা। পারিজাত মেয়েটির পেছনে। সে আমার দিকে তাকাতেই আমি তাকে হাত তুলে ডাকি। ঐ মেয়েটি মনে করেছে তাকে ডাকছি আমি, একটু ঘাবড়েছে। কিন্তু ততক্ষণে মেয়ে ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। জিনসের প্যান্ট পরা মা কিনা আমি, বাচ্চা বাচ্চা ক্লাস সিক্সের মেয়েরাও আমাকে দেখে মুখ টিপে হাসবে, চেখে চোখে কৌতুক বিনিময় করবে। এটাই দস্তুর। বড্ড অল্প বয়স থেকেই সমাজ অনেক কিছু শিখিয়ে দেয় শিশুদের। মাত্র ছবছর আগে এই পাড়াতেই একদল শিশু আমাকে ঢিল মেরেছিল সে কথা কি এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলবে আমার?
    সেসবও তো বড়ো একটা কারণ আমার এ দেশ পুরোপুরি ত্যাগ করার পেছনে।
    আসলে ছোটবেলা থেকেই দেখেছি কোলকাতার মানুষ প্রশংসা শুনতে বড্ড ভালোবাসে।
    তবু তুমি সুন্দরী কতো, কতো, কতো— কোওলকাতা!
    অথচ, এর উল্টোটা আমি নানান বিদেশী পর্যটকের মুখে শুনেছি। সত্যটা কোলকাতাবাসীরা সহজে অ্যাসেপ্ট করতে পারে না। তারা মিথ্যের স্বর্গে বাস করাটাই প্রেফার করে।
    এসব নিয়ে আমার এখন বিন্দুমাত্র চিন্তা করবার সময় নেই। মেয়েকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে চলে এলাম। সে ইউনিফর্ম বদলে অন্য জামা পরে নিল।
    এবার সে গল্প করছে তার মায়ের বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে। সে সাবলীলভাবে গানের সুরে শিখে নিচ্ছে জার্মান অ্যালফাবেট। আর তো মাত্র কটা দিন। জানুয়ারি মাসে তাকে যেতে হবে জার্মান ইস্কুলে। 
     
  • যোষিতা | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:২২742231
  • আমরা নিউ মার্কেট গেছলাম, চাঁদনিচক গেছলাম। ফুডপ্রোসেসরের ব্লেড মেরামত করা থেকে মেয়ের জন্য দুটো পুলোভার, দুটো প্যান্ট, গোটাকতক টিশার্ট কেনা, এই কটাই তো কাজ। সন্ধেবেলা পারিজাতের নতুন বাবা, পরবর্তীতে যাকে ও বাবু বলে ডাকবে, তিনি চলে গেছলেন নিজের বাড়ি, কোলকাতার উত্তরদিকে। আমি মেয়েকে নিয়ে চলে গেছলাম আমার নিজের বাড়িতে লাগেজপত্র সহ। সুটকেস খুলে উপহার সাজিয়ে রেখেছিলাম টেবিলে, দেরাজে। অপেক্ষা করছিলাম আমার স্বামী কখন ফিরবেন সেইজন্য।
    তিনি রাত করে ফিরে আমায় দেখে চমকে উঠেছিলেন।
    আমি বলেছিলাম দু সপ্তাহের ছুটিতে এসেছি, মেয়েকে এখন নিয়ে যাব, চাকরি পেয়েছি, তোমাকে কদিন পরে নিয়ে যাব।
    তিনি আমার কথা বিশ্বাস করেছিলেন বলে মনে হয় না।
    তিনি সতর্ক হয়ে গেছলেন।
    সমস্ত উপহার একটা একটা করে তাকে দেখচ্ছিলাম। কিন্তু তার মেজাজ চড়ছিল ক্রমাগত। সেটা পরিণত হয়ে গেল চিৎকারে, ঝগড়ায়।
    ফলতঃ রাত্রের জন্য আমার যে আশঙ্কা ছিল, সেই ভয় রইল না। যে কটা দিন কোলকাতায় ছিলাম, ঝগড়া করেই কাটিয়েছি রাতগুলো। ঝগড়াই আমাকে বাঁচিয়েছে।
    এর মধ্যে কয়েকটা ঘটনা ঘটেছিল যেগুলো অপ্রত্যাশিত নয়।
  • সমরেশ মুখার্জী | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৪৫742232
  • "হরি কুমোর" - এটা হেব্বি দিয়েছে পারিজাত! টান টান টেনশন পর্বের মাঝে একটু কমিক রিলিফ হোলো।
     
    "হরি কুমোরের চোরকুঠুরি" - বললে জমে ক্ষীর হয়ে যেতো। laugh
     
    যে বাবা জন্ম দিয়েছে তাকে চোখে দেখেনি। যে বাবা দত্তক নিয়েছে সে গালে থাপ্পড় মারে। নতুন এক বন্ধু বাবা গানের সুরে জার্মান অক্ষর পরিচয় করাচ্ছে। 
     
    অনন্য অভিজ্ঞতা হচ্ছে বটে পারিজাতের!  অপেক্ষা‌য় থাকবো জানা‌র - দুধেভাতে বড় হ‌ওয়া‌র পরিবর্তে এমন অভিজ্ঞতা স্বর্গীয় ফুলের পরবর্তী জীবনে কেমন প্রভাব ফেলে।
  • যোষিতা | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৪:৫০742255
  • ছক কাগজে আঁকা যে বিন্দুগুলোর অবস্থানের কথা একটু আগে লিখেছিলাম। সেই অবস্থান যে সমাজে আমাদের প্রত্যেকের স্থানাঙ্ক মোটামুটি ঠিক করে রেখেছে তা পদে পদে বুঝতে হয়। 
    আমি যতই চেষ্টা করি না কেন আমার স্থানাঙ্কের পরিবর্তন ঘটাতে, সেটা একটা বিফল চেষ্টা ছাড়া আর কিছু হবে না, ছক কাগজটা ঐভাবেই তৈরি। চলরাশি গুলোর মানও ঐরকমই।
    আমার স্বামীও মনে করেন যে আমাকে বিয়ে করে উনি একটা চমৎকার ভালো কাজ করে ফেলেছেন, কিন্তু এই চমৎকার ভালো কাজটা উনি তখনই করলেন, যখন এর পেছনে দুটো জিনিস প্রায় পুরস্কারের মত পেয়ে যাবার আশা করছিলেন। এক, আমার কেনা সম্পত্তি অর্থাৎ অ্যাপার্টমেন্ট, এবং দুই হচ্ছে আমার সঙ্গে বিদেশযাত্রা। দ্বিতীয়টিতে সময়ের সঙ্গে ওঁকে আশাহত হতে হচ্ছিল, যেহেতু এদেশে ওঁর পক্ষে নিজের প্রোফেশনে চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়, এবং নতুন একটা ভাষা ভাল করে শিখে নেওয়ার ক্ষেত্রেও উনি সফল হচ্ছিলেন না। কোলকাতার ম্যাক্সমুয়েলার ভবনের জার্মান ভাষার কোর্সে প্রায় বছর খানেক ক্লাস করেও মনে হয় না ভাষার শ্খায় কোনও উন্নতি হয়েছিল। উনি প্রথম থেকেই ঘরে বাইরে ইংরিজি বলা সমাজের মানুষ। খোদ কোলকাতা শহরে জন্মে এবং বড়ো হয়ে উঠেও বাংলা পড়তে জানেন না, বাংলা বলেনও ভেঙে ভেঙে, স্থানীয় ভাষা সম্পর্কে কোনও টান তৈরি হয় নি ছোটবেলা থেকেই। আমি ওঁর আত্মীয় কুটুম্ব বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে এইরকমের বেশ অনেককে কাছ থেকে দেখেছি, তারাও ঐরকম। তারা মনে করে ইংরিজি ভাষাটা একবার শিখে গেলে দুনিয়ায় আর কোনও ভাষা জানতে হয় না, ঐ এক ভাষাতেই সব দরজার তালা খোলা যায়। কথাটা হয়ত ভুল নয়, কারন তাদের দুনিয়াটাই অতটা, যতটাতে ইংরিজি চলে। কিন্তু তার বাইরেও দুনিয়া আছে, যেখানে স্থানীয় ভাষা জানতে হয়, শিখতে হয়।
    এইটাও একটা কারন আমার স্বামীর হঠাৎ করে বেঁকে বসার। এইটে আমি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বুঝছিলাম। কিন্তু এখন তো সব চুকিয়ে ফেলার সময় এসে গেছে। 
    ব্যাংকে গিয়ে দেখলাম কার্ডের পিন নম্বর কাজ করছে না, খবর নিয়ে জানলাম অ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স শূন্য। লকারে গিয়ে দেখলাম লকারের ভাড়া দেয় নি সে। বকেয়া ভাড়া মিটিয়ে জয়েন্ট লকারের দরজা খুলে আমি আমার গয়না এবং মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের শংসাপত্র মার্কশিট বের করে নিলাম। গয়না অতি সামান্য কটা, সোভিয়েত দেশ থেকে কেনা আংটি, কানের দুল। ব্যাংকের টাকা সব গেছে, কিন্তু এই নিয়ে কথা তুললে ঝামেলা পাকাবে সে, হয়ত এমন কিছু করে বসল, যে আমার ফিরে যাওয়াটা সমস্যা হয়ে গেল। 
    সে কিন্তু পুরুষেচিত দাপটে আমাকে তার সম্পত্তি মনে করছে। তার চোখে আমি একজন স্বাধীন মানুষ নই। সে মনে করে একজন ছত্রিশ সাঁইত্রিশ বছরের নারীর সে গার্জেন, হেড অফ দ্য ফ্যামিলি।
    তার নানান রকমের আস্ফালন আমাকে শুনতে হচ্ছে। একদিন সে আমাকে সল্ট লেকে নিয়ে গেল, তার বসের বাড়ী। বস আমাকে যদি বুঝিয়ে সুঝিয়ে থামাতে পারে।
    সে বাড়িতেও তার বসের হাজারো জেরা। তারাও সুইটজারল্যান্ডে বেড়িয়ে গেছে, অতয়েব প্রচুর জানে দেশটা সম্পর্কে।  তুমি এটা দেখেছো? ওটা দেখেছো? এখানে গেছো? ওখানে গেছো?
    এসব প্রশ্নের সামনে আমি হাঁদার মতো তাকিয়ে থাকি। 
    আমার প্রিয় মানুষের সঙ্গে যবে থেকে এক সঙ্গে থাকা শুরু করেছি, প্রতিটি শনি রবিবার আমরা কত কত নতুন জায়গায় বেড়াতে চলে যাই, সব তো টুরিস্টদের অবশ্য দ্রষ্টব্য জায়গাও নয়, এমন এমন সব পাহাড়ঘেরা ঠাণ্ডা শান্ত লেক, যেখানে মানুষই আসে না, কিংবা এমন সব পুরোন গ্রাম বা পরিত্যক্ত পাথরের বাড়িতে গিয়ে থাকি যেখানে থাকতে অনেকেরই ভয় করবে এমন নির্জন অপ্রাকৃত।
    কোলকাতা থেকে ফ্লাইট সকালে।
    তার আগের দিন আমার নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে আমার মেয়ের বিদায় নেবার দিন। 
    আগে যে মেয়ে ছিল অবহেলিত, অনাদরের পাত্রী, আজ তার কী সম্মান! এর নাম পৃথিবী।
  • যোষিতা | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:১৪742256
  • আমার মনে পড়ছে সাড়ে তিন বছর আগের ঘটনা। জুলাই ১৯৯৯, কোলকাতায় নতুন চাকরিতে ঢুকেছি। জুলাইয়ে ট্রেনিং চলছে। তখন আমি অন্য জায়গায় থাকি। মেয়ে তখনও আমার মায়ের বাড়িতে রয়েছে। ওর জন্মদিনের সন্ধেয় ওকে দেখতে মায়ের বাড়ি গেছি অফিসের পরে। সেখানে জন্মদিন পালন হচ্ছে। আমার মেয়ে ছাড়াও অন্য নিকটাত্মীয়ের শিশু ছিল সেই উৎসবে, আত্মীয় ছিল, আয়া ছিল। সবার সামনে আমাকে অপমান করা হচ্ছিল। আমার মেয়ে আমাকে দরজার কাছে টেনে নিয়ে গিয়ে রিকোয়েস্ট করেছিল, মা তুমি চলে যাও, তুমি থাকলেই এরা ঝামেলা করবে। মেয়ের নবছরের জন্মদিনে তাকে দেখতে গেছলাম, এই আমার অপরাধ। আজ তারাই উপস্থিত, আজ আমার মেয়ে নায়িকার মত প্রধান চরিত্রে, আমাকে কেউ অপমান করছে না। 
    আমরা বিদায় জানিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছি। এখনও সন্ধে নামছে, সেদিনএ সন্ধে নামছিল ১৯৯৬ এর তিরিশে জানুয়ারী, যেদিন অমলেন্দু নামের সিপিয়েমের কাউন্সিলার এই সিঁড়িতেই আমার চুলের মুঠি ধরে উল্টো করে হিঁচড়ে টেনে নামাচ্ছিল, কামিজ ছিঁড়ে দিয়েছিল, রেপ করবে বলে নিজের প্যান্টের বেল্ট খুলছিল। চারিদিকে সিঁড়িতে কুল ললনাদের সে কী উৎসাহ, সে কী উচ্ছাস ছিল সেদিন। ঘরে ঘরে শাঁখের আওয়াজ সন্ধে দেবার পুন্যক্ষণ। 
    ইকী রে! সাতটা বছরও পূর্ণ হবার টাইম পেলাম না। এখনও দুহাজার দুই চলছে, সেই সিঁড়ি দিয়ে মেয়েকে নিয়ে আমি নেমে যাচ্ছি। নানান ফ্ল্যাট থেকে সসম্ভ্রমে আমাদের দিকে উঁকি ঝুঁকি মারছে সেই বৌঝিয়েরাই। সেদিনের হিরো অমলেন্দু কাউন্সিলারইবা কোথায় গেল? 
    ধুস্, আজ কারও মুখে আনন্দ নেই। আজ পারিজাত তার মায়ের সঙ্গে বিদেশ যাচ্ছে, চিরতরে।
  • যোষিতা | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:১৩742257
  • মা মেয়ে মিলিয়ে আমাদের একটাই সুটকেস, তাও তার অর্ধেক ফাঁকা। আমি সব কিছু রেখে যাচ্ছি। সমস্ত স্থাবর এবং অস্থাবর। 
    জেট এয়ারওয়েজ ফোন করল সন্ধেবেলা। কাল সকালে প্রচন্ড ফগ থাকবে  তাই তারা অনেক ভোরে ফ্লাইট ছাড়তে চায়। প্রত্যেককে ফোন করে করে জানাচ্ছে। তেইশে ডিসেম্বর অত ভোরে ট্যাক্সি পাবো? 
    না, আমার স্বামী পৌঁছে দেবে আমাদের ড্রাইভ করে এয়ারপোর্টে। যাবার আগে সে আমার সুটকেস চেক করে, কিছু চুরি করে পালাচ্ছি কিনা। হায় রে! এই বাড়ির প্রত্যেকটা জিনিস আমার টাকায় কেনা। শুধু কম্পিউটার সে কিনেছে। 
    সেই কম্পিউটারও এবার আমি অন করি নি। মেয়ে বারন করেছে। মা! কম্পিউটার খুলো না!
    —কেন?
    সে যা জানায়, তা অকল্পনীয়! প্রতি সন্ধায় ঐ কম্পিউটার অন হতো, আরও ভদ্রজনেরা আসত কন্ডোভিলের, সবাই বিবাহিত। কম্পিউটারে চলত পর্নোগ্রাফি।
    আমার মেয়েকে বের করে দেওয়া হতো বাড়ি থেকে। ঘন্টা দুয়েক মাঠে ঘুরে সে ফিরত। 
    আমিও এবার লক্ষ্য করেছি সন্ধের দিকে কয়েকজন ঢুঁ মারার চেষ্টা করে, আমাকে দেখে, "কবে ফিরলেন? কেমন আছেন" বলে কেটে পড়েছিল।
    যাইহোক, ভোররাত্রে বেরোনের আগে স্বামী আমার কাছ থেকে বাড়ির কাগজটা চেয়ে নিলেন। ওটা ঠিক দলিল নয়, দলিল এখনও আমরা পাই নি। তবে ঐ কাগজটাই সব।
    নিক। সামান্য একটা ফ্ল্যাটের লোভে ও আমাকে বিয়ে করেছিল। এটাই তো এই সমাজের প্রথা। পন, যৌতুক, সোনা, জমি, বাড়ি, এসব তো ছেলেরা নেয় বিয়ে করবার শর্তে। বেচারা। লোভীর মতো তাকিয়ে আছে কাগজটার দিকে। ঐটা দিলেই ও আমাদের এয়ারপোর্ট পৌঁছে দেবে। দিলো ও।
    একবার এয়ারপোর্টে আমরা মা মেয়ে ঢুকে পড়তে পারলে আর ভয় নেই। এই বাড়িটার লোভে ও আমার মেয়েকে দত্তক নিয়েছিল। মানুষ লোভে কী না পারে!
    কিন্তু ফ্লাইট তো ভোরে ছাড়ল না। সবাই উপস্থিত। আমার প্রিয় মানুষটিও এয়ারপোর্টে। কিন্তু ফ্লাইট ডিলে হলোই।
    দিল্লি পৌঁছে সে এক নতুন ঝঞ্ঝাট, সেদিন ট্যাক্সি স্ট্রাইক।
    অটো ছাড়া গতি নেই।
    অটোকে বললাম সোজা চাণক্যপুরী। আমার মন বলছে, সবার আগে মেয়ের ভিসার অ্যাপ্লিকেশন, তার পরে হোটেল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন