এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  স্মৃতিচারণ   স্মৃতিকথা

  • এল ডোরাডো

    যোষিতা লেখকের গ্রাহক হোন
    স্মৃতিচারণ | স্মৃতিকথা | ৩০ নভেম্বর ২০২৩ | ৮৯১৮ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৬ জন)
  • এখানে লিখব সোনার দেশ সুইটজারল্যান্ডের নানান অভিজ্ঞতা ও মানুষের কথা।
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • যোষিতা | ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:৩৮742086
  • সম্ভবত জানুয়ারিতেই ঘটে গেল আচমকা একটা ঘটনা। জানুয়ারিই কি? নাকি ফেব্রুয়ারির গোড়ায়?
    আমার পাঠানো সেই পাওয়ার অফ অ্যাটর্নির কাগজ ব্যাংক অ্যাকসেপ্ট করে নি সম্ভবত। এর কারণ, আমি এনারাই বনে গেছি। একজন এনারাইয়ের সঙ্গে রেসিডেন্ট ভারতীয়র জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খুলবার নিয়ম আইনে নেই। অতয়েব তাকে বারবার টেলর মেশিন থেকে দৈনিক লিমিট মেনে টাকা তুলতে হচ্ছে। কিন্তু এত টাকা তুলবার দরকারটা কী? সেটাই আমার বোধগম্য হয় না। জিজ্ঞাসা করলে সে রেগে যেতে পারে, তাই টপিকটা চেপে যাই। সংসারের খরচ তো লক্ষ লক্ষ টাকা হতে পারে না। বাড়ির ভাড়া বলে কিছু নেই, মেয়ের ইস্কুলের একবছরের বেতন এক থোকে জমা করে দিয়ে এসেছি, যাতে বারে বারে সময় নষ্ট করে ক্যাশিয়ারের সামনে লাইন দিতে না হয়, বইপত্র খাতা পত্র সব কিনে দিয়ে এসেছি। প্রাইভেট টিউটর বলে কিছু নেই। ইস্কুলে যাবার গাড়ির ভাড়াও একবছরের জন্য দিয়ে এসেছি। এসব সত্ত্বেও এত খরচ করবার দরকারটা কীসের? 
    মেয়ে আমাকে নিয়মিত বাঁধা ছকে ভুল বানানে ইনেইল লেখে। তাতে শুধু আমার স্বামীর কথা, ব্রেকফাস্টে কী কী খেয়েছে, পরীক্ষায় কত নম্বর পেল, কবে আইসক্রীম খেতে নিয়ে গেছল বাবা। 
    মেয়েটা এত বোরিং হয়ে গেল এ কদিনে?
    কোলকাতায় থাকতে সে অন্যরকম ছিল। অসম্ভব হাসিখুশি, মজার মজার কথা বলত, কত রকমের কাল্পনিক অ্যাডভেঞ্চারে যেতাম আমরা, গোটা কন্ডোভিলের আনাচে কানাচে সন্ধেবেলায় আমরা ঘুরে ঘুরে চটজলদি আলকাপ ডিটেকটিভ গল্প বানাতাম। সেই মেয়ে মনেও রাখত না ব্রেকফাস্টে কী খেয়েছে। তার বন্ধুদের গল্প, তার ইস্কুলের গল্প, সমস্ত হারিয়ে গেল? 
    আমি খরচের চিন্তা না করে মেয়েকে ফোন করি। ফোন ধরে সে, কথাও বলে, কিন্তু সেই কথার মধ্যে জড়তা। আমি ভালো আছি, তুমি কেমন আছ, এই নাও বাবার সঙ্গে কথা বলো, এটুকু বলেই সে ফোন হস্তান্তর করে দেয়। আমি হ্যারি পটার বলে একটা সিনেমার কথা বলব বলে ভেবেছিলাম, কিন্তু সেই সুযোগই পেলাম না।
    মাত্র এগারো বছর বয়সে মেয়েটা এমন গম্ভীর টাইপ হয়ে গেল? জানি, ওর জীবনের ওপর দিয়ে অনেক ঝড় ঝাপটা গেছে। ত্রহস্পর্শে জন্ম যার, যার জীবনে প্রথম দিন থেকেই মানুষের দুর্ব্যবহার বর্ষিত হয়ে চলেছে, সে হয়ত এখন অনাত্মীয় পরিবেশে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।
    কিন্তু আমি তো এখন হুট করে দেশে যেতে পারি না। খরচটা বড়ো কথা নয়, এখানে সব কিছু জোগাড় যন্ত্র করে ওঠার জন্য একটু সময়ের দরকার। আমি নিজেই এখনো সেটল হতে পারছি না ঠিকমতো। আর কটা মাস সময় তো লাগবেই। এদিকে  স্বামীর জন্য চাকরি খুঁজেছি নানান জায়গায়। সমস্ত এজেন্টদের অফিসে গেছি। নয় নয় করে গোটা আষ্টেক জব এজেন্সীতে নিজে গিয়ে কথা বলেছি সমস্ত ডকুমেন্ট সহ। সবাই ফিরিয়ে দিচ্ছে। ইন্টানেটেও খুঁজে চলেছি কাজ। সাভ কিছুই হচ্ছে না।
    এবার সেই মোক্ষম খবরটা এলো। ইমেইলে। আমার মেয়েকে ইস্কুল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
    তাড়িয়ে দিয়েছে মানে? আমি সরাসরি ফোন করি বাড়িতে। ফোন বেজে যায়।
    আমার মাথা ঝিমঝিম করে।
  • যোষিতা | ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৪১742087
  • মহা ঝামেলায় পড়া গেল। মাথাটা কেমন যেন ঘুরছে। ইস্কুল থেকে তাড়িয়ে দেবার মত অপরাধ করল মেয়েটা? কী করেছে? ফেল করেছে? কিন্তু হঠাৎ এই সময়ে তো কোনও পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোবে না। মারামারি করল নাকি? কী অপরাধ করল? আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। 
    আমারই দোষ। সব দোষ আমার। কর্পোরেশনে ঘুষ দিয়ে কোলকাতার বার্থ সার্টিফিকেট বানিয়ে বাংলা ইস্কুলে ভর্তি করেছিলাম মেয়েকে। রমেশ মিত্র ইস্কুল। অবৈতনিক। সেই ইস্কুলের প্রাইমারির টিচার্স ইন চার্জ বিদেশের বার্থ সার্টিফিকেট নিতে রাজি না হওয়ায় আমাকে ঘুষ দিয়ে কর্পোরেশন অফিস থেকে ঐ কাগজ বের করতে হয়েছিল।
    রমেশ মিত্রয় মেয়ে দিব্যি পড়াশোনা করছিল। যখন আমি বাড়ি কিনলাম, মেয়েকে বাড়ির কাছে একটা নতুন ইস্কুলে কিচুদিন পড়িয়েছি। সেই ইস্কুলের রেজিস্ট্রেশন ছিল না, তাতে আমার কিছুই এসে যেত না। কিন্তু অ্যামেরিকা যাবার দুমাস আগে ওকে পরীক্ষা দিইয়ে দোলনা ইস্কুলে ভর্তি করি ক্লাস ফাইভে। ভর্তির সময়ে বাবামায়ের ইন্টারভিউ ম্যান্ডেটরি। বাবা কোত্থেকে জোগাড় করব? আমার স্বামী তখনও স্বামী হন নি, তাকেই নকল বাবা সাজিয়ে দিব্যি ইন্টারভিউ দিলাম আমরা। মেয়েও ভর্তি হয়ে গেল ফাইভে। দিব্যি ইস্কুল যাচ্ছিল। সব খরচ, সব ব্যবস্থা বন্দোবস্ত করা ছিল, ঝামেলা হবার তো কোনও কারণই দেখছি না। এই ইস্কুল ইংলিশ মিডিয়াম। তবে কি ইংরিজি পারছে না বলে তাড়ালো? ইমেইলে প্রচুর ভুল ইংরিজি লেখে দেখেছি।  আমার মাথায় কিছু আসছে না। 
    আমি আবার ফোন করি। এখন সকাল এগারোটা, মানে কোলকাতায় সাড়ে তিনটে, মেয়ে যদি ইস্কুলে না যাবে, তবে তো বাড়িতে থাকবে, সে ফেন ধরল না কেন?
    আবার ফোন করলাম। বেজে বেজে কয়েকবারের পর ফোন ধরল মেয়ে।
    — হ্যাঁরে আমি মা।
    — মা তুমি?
    — ফোন ধরছিলি না কেন?
    — আমি একটু বাথরুমে গেছলাম, শুনতে পাই নি। শোনো মা, তোমার বর আমার ইস্কুলে গিয়ে আন্টিমাসীর কাছে বলে দিয়েছে যে তুমি বিয়ে করেছো, আর সেই জন্য সে আমার বাবা হয়ে গেছে। তাই এখন তার পদবী আমার পদবী হবে, তার নাম আমার ফাদার্স নেম হবে।  তারপর...
    — তারপর কী? তাড়াতাড়ি বল।
    — তারপর আন্টিমাসী বলল, আমাকে আর ইস্কুলে যেতে হবে না।
    — তারপর? তারপর কী হলো? 
    — তারপর আমি , আমি দিদিমাকে হললাম ফোন করে। তারপর দিদিমা ইস্কুলে গিয়ে আন্টিমাসীর সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু দিদিমা বলেছে, দিদিমা জানে না তোমার বিয়ে হয়েছে কি না।
    — কেন? তোর দিদিমা তো জানে।
    — কিন্তু দিদিমা তাও বলল, সে জানে না... তখন আন্টিমাসী বলল যে আমাকে ইস্কুলে না যেতে। আমি এখন কী করব?
    — তুই কতদিন ইস্কুলে যাস নি?
    — তিন দিন, না না চারদিন হয়ে গেছে। তুমি কিন্তু বাবাকে বোলো না যে আমি তেমাকে এসব বলেছি।
    — বলব না। তুই চিন্তা করিস না।
    — না না, আমি চিন্তা করছি না। তুমি কাজ করো।
    — আচ্ছা, শোন শোন, তুই এত ভুল ইংরিজি লিখিস কেন রে?
    — আমি কখনো ভুল বানান লিখি না মা। আমি তেমাকে ইমেইল করি না তো। ও ই তো আমার নাম করে ইমেইল লেখে। ইচ্ছে করে করে ভুল বানান লেখে, যাতে তুমি মনে করো ওটা একটা বাচ্চা লিখছে। আমি ওরকম বাজে বাজে বানান কোনওদিনও লিখি না। 
  • যোষিতা | ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:২২742088
  • আমি কম্পিউটার স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে আছি। অফিসের ইমেইলের ইনবক্সটা সামনে, অনেকগুলো কাজের মেইল এসেছে, কিন্তু আমি মনযোগ দিয়ে পড়তে পারছি না। আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে একজন লোক। হেরমান। হেরমান সিগ্রিস্ট। ও অন্য ডিপার্টমেন্টের লোক, কিন্তু আমার বন্ধু। কোলিগ নয়, প্রকৃত বন্ধুর মত আচরণ হেরমানের। 
    ও আমাকে ডাকছে একসঙ্গে কফি খাবে বলে। আমি সিগারেটের প্যাকেটটাও সঙ্গে নিলাম, ওভারকোট পরে নিলাম, ব্যালকনিতে গিয়ে আমরা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সিরিয়াস আলোচনা করছি। হেরমান অনেক সিনিয়র আমার চেয়ে, বয়সে। শান্তশিষ্ট অমায়িক হাসিখুশি মানুষ। 
    পুরো ঘটনাটা সামারি করে খুলে বলেছি হেরমানকে। চারতলার ব্যালকনি থেকে দেখছি নীচে একটা সরু ব্রীজের ওপর দিয়ে একদল ইস্কুল পড়ুয়া টিনেজার টিফিনের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছে খেতে। কাছেই একটা ইস্কুল আছে নিশ্চয়। 
    হেরমান হাত তুলে তর্জনী অল্প বাঁকিয়ে দেখিয়ে দেয় ইস্কুলটার সম্ভাব্য অবস্থান।
    — তুমি তোমার ফ্যামিলিকে এদেশে নিয়ে এসো।
    — সেই ব্যবস্থাই তো করছি। কিন্তু আমার স্বামী কি তাকরি না পেলে এখানে আসবে?
    — তোমার মেয়ের এখানে ইস্কুল নিয়ে ঝামেলা হবে না। এখানে সব বাচ্চাকেই ইস্কুলে যেতে হয়।
    — আমি জানি হেরমান। সোভিয়্ত দেশে থেকেছি, সেখানেও একই নিয়ম। 
    — ভারতে শিক্ষা বাধ্যতামূলক নয়, তাই না?
    — প্রিভিলেজ।
    আমরা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকি।
    — আসলে যে কটা দিন ওদেরকে নিয়ে আসতে না পারছি, ও তো ইস্কুলে যেতে পারবে না। কী মুশকিল বলো তো?
    — উফ্! দুনিয়ায় কতোরকমের অদ্ভূত জিনিস হয়। 
    এবার হেরমান শুরু করে ওর বৌয়ের গল্প। ওর বৌ আলভার। সে ইরাণের মেয়ে কিন্তু জাতে আর্মেনিয়ান। ধর্মে খৃষ্টান। একবার ইরাণে বেড়াতে গেছে ওরা আলভারের বাবা মায়ের কাছে। ভুল করে ইরানী পাসপোর্ট সঙ্গে নিতে ভুলে গেছল আলভার। ফিরবার পথে আলভারকে আটকে দিল তেহরানের এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন। দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে আলভার রয়ে গেল ইরানে। হেরমান জুরিখ এলো একা। আলভারের ইরানী পাসপোর্ট সঙ্গে নিয়ে পরের ফ্লাইটে ফের তেহরান। সেই পাসপোর্ট জমা দিয়ে, তবেই আলভার ফিরতে পারল জুরিখে।
  • যোষিতা | ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০২:৪০742106
  • আমি অফিসের মধ্যেই আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম এখন এই মুহূর্তে আমার কী করা উচিত। যেন হেলেনকে, গশাকে, শেরীকে। এরা বুঝতেই পারে না যে বাচ্চাদের ইস্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়াটা ভারতে বেআইনি নয়। শিক্ষার অধিকার তো প্রাথমিক অধিকার একজন শিশুর কাছে। এই পরিস্থিতিতে তারা কখনও পড়ে তো নি ই, শোনেও নি কস্মিনকালে। একেই সম্ভবত বলে কালচারাল ডিফারেন্স, জার্মানে কুলটুরউন্টারশীড। হেরমান বলল, এখানে একটা সংস্থা আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলো, যদি তারা তোমাকে কোনও সলিউশন বাতলাতে পারে। হেলেন বলল, ইস্কুলে ফোন করে সরাসরি কথা বলতে। 
    এই বুদ্ধিগুলো একে একে ট্রাই করলাম। ইস্কুলে ফোন করাটা তখনই সম্ভব, যদিও তখন দেরি হয়ে গেছে। পরের দুটো দিন ক্রমাগত ইস্কুলে ফোন। সম্ভবত ক্যাশিয়ারবাবু ফোন ধরেন। যেই আন্টিমাসীর সঙ্গে কথা বলতে চাই, অমনি "একটু ধরুন" বলে উনি ফোনটা হোল্ড করান। মিনিটে পাঁচ ফ্রাংক করে আমার বিল উঠতে থাকে অপেক্ষা করবার জন্য। আমি অপেক্ষা করতে করতে শেষে অধৈর্য হয়ো ফোন কেটে দিই। একবার বললাম, আমি পাঁচমিনিট পরে ফোন করব আবার, আপনি প্লিজ আন্টিমাসীকে খবর দিন। পাঁচ মিনিট পরে দেখলাম ফোন কেবলই এনগেজড, সেদিন আর কানেক্ট করা গেল না। এরপরে চিঠিতে সমসিত কিছু জানিয়ে ফ্যাক্স করা শুরু করলাম। ফ্যাক্স ওকে হচ্ছে, মানে পৌঁছচ্ছে, ইস্কুলের কোনও ইমেইল অ্যাড্রেস আছে কি না জানা নেই।
    প্রত্যেক দিন এই চলতে থাকে। সেই সঙ্গে আমার স্বামীর সঙ্গেও এরমধ্যে ফোনে কথা হয়েছে।
    — তুমি কেন ইস্কুলে গিয়ে ওরকম কাগজ দিতে গেলে?
    — এতে আমার দোষ কোথায়? বাচ্চাটার আমিই তো বাবা লিগ্যালি।
    — না। 
    — অফকোর্স আমি। ওর কোনও বাপ নেই।  ফাদার্স নেম ছাড়া পাসপোর্ট পেয়েছে। ইটস এ শেম। তোমাকে আমি বিয়ে করেছি। এখন তোমার সন্তান আমারও সন্তান। ওর সারনেম আমাদের মতই হওয়া উচিত।
    — আমি জানি না। কিন্তু এই করতে গিয়ে ওকে তো ইস্কুল থেকে তাড়িয়ে দিল।
    — ওর জন্য আরও ভাল স্কুলের ব্যবস্থা করেছি। কোলকাতার নাম্বার ওয়ান স্কুল।
    — নাম্বার ওয়ান স্কুল আবার কোনটা?
    — হেরিটেজ।
    — সে তো নতুন ইস্কুল, গতবছর খুলেছে মাত্র। তখন বিল্ডিং ও ছিল না। তার ওপর ওখানে পড়ানের খরচ তে সামঘাতিক বেশি। বছরে একদেড় লাখ টাকা লেগে যাবে।
    — অফকোর্স লাগবে। বেস্ট জিনিসের জন্য তে বেশি প্রাইস দিতেই হবে।
    — এত খরচ শুধু শুধু করবার কী দরকার? 
    — তুমি আরও একটু বেশি টাকা পাঠালেই ও ভালো স্কুলে পড়তে পারবে। 
    আমার মাথা আবার ঝিমঝিম.....
    — আমি তো পুরো টাকাটাই পাঠাচ্ছি, এর থেকে বেশি তো আমি উপার্জন করি না।
    সে হো হো করে হাসতে থাকে, বলে, ওকে আইল ম্যানেজ সামহাউ।
    এরকম কথোপকথনের পরে আমি আরও দিশেহারা।
    কাজকর্মের শেষে নীচে কাফেটেরিয়ায় হেলেনের সঙ্গে বসলাম।
    হেলেনের আজ মন খারাপ। ও একটা বাচ্চা চাইছে। ওর বর বলছে এখন কেরিয়ার তৈরি করার টাইম। তাতে হেলেন বলেছে, না আমি আগে বাচ্চা চাই, তুমি আমাকে প্রেগন্যান্ট করে দাও।
  • যোষিতা | ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:৪৬742108
  • হেরমান আমায় যে অফিসটাতে যেতে বলেছিল, একদিন টেলিফেন করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে আমি সেখানে গিয়ে উপস্থিত। ওখানে মানুষজন অমায়িক এবং ভাঙা ভাঙা ইংরিজিও বলতে পারে। আমার সমস্যার কথাটা বলতে তারা জানালো, এর একমাত্র সমাধান পরিবারটাকে এদেশে নিয়ে এনে এসমস্ত ভুলভাল ঝামেলা থেকে মুক্তি। শিক্ষা এখানে অবৈতনিক, শিক্ষার অধিকার তো সকলের আছেই, শিশুদের জন্য শিক্ষা আবশ্যিকও। তবে যত শীঘ্র এদেশে এনে ফেলা যায়, তত শীঘ্র শিশুটি ভাষা শিখে পড়াশুনোয় উন্নতি করতে পারবে।
    এই কথাটা আমার মনে ধরল। আমি এর পরেই চলে গেছলাম ইমিগ্রেশন অফিসে। সেখানেও একই কথা। যে কোনও সময়ে ফ্যামিলি রিইউনিয়ন সম্ভব, কেবল দুটো জিনিস চাই। এক, তিনজনের পরিবারের জন্য কম করে তিনঘরের একটা বাসস্থানের ব্যবস্থা, দুই, পরিবারের কদন সদস্য সেটা স্থানীয় নোটারি অফিস থেকে লিখিয়ে আনা। দ্বিতীয়টির জন্য খরচ সামান্যই, কিন্তু জুরিখ শহরে সাড়েতিন কি চারঘরের অ্যাপার্টমেন্ট পাওয়া তুমুল কঠিন কাজ। ভাড়া নিয়ে আমি ভাবছি না, দুহাজারের কম বেশি কিচু হবে মাসে, কিন্তু পাবো কোথায়? শহরের বাইরে শহরতলীতেও অবস্থা খারাপ। শহরতলীতে ইনকামট্যাক্স জুরিখের তুলনায় কম হওয়ায় সেখানে ঘর পাওয়া আরও মুশকিল। আবার একেবারে গ্রামে গিয়ে থাকারও ইচ্ছে নেই, জুরিখের মত গমগমে শহরে থাকার পরে গ্রামে গিয়ে থাকতে আমার মন চাইবে না। গ্রামের দিকে আবার অন্য সমস্যা। কৃষ্ণবর্ণ মানুষদের তারা বাড়ি ভাড়া দিতে না ও চাইতে পারে।
    অতয়েব জুরিখের মধ্যেই খোঁজাখুঁজি সীমিত রাখলাম।
    এদিকে খবর পাচ্ছি ওয়ার্ল্ডকম স্ক্যান্ডাল বলে কী একটা ব্যাপার ঘটেছে। বিশাল কিছু টাকা পয়সার ঘাপলা। সেই সঙ্গে আর্থার অ্যান্ডারসন তথা অ্যান্ডারসন কনসাল্টিং এর ও নানানরকমের ঘোটালা ধরা পড়েছে। এইসব বিগ ফাইভ, কি বিগ ফোর মার্কা কোম্পানীগুলোর ভেতরে চুরিচামারি যে এই রেটে হয় তা আমার মত কনিষ্ঠ কেরাণী এই প্রথম জানল। ঘটনাচক্রে আমিও একটি বিগ ফোর কোম্পানীতেই কাজ করছি।  অ্যামেরিকাতে কীসব সাবর্ণ অ্যান্ড অক্সলি কমপ্লায়েন্সের ব্যাপার আছে, সেসবে এরা ডাহা ফেল করেছে। এদেশেও অনুরূপ আইন আছে, শুধু নামটা ভিন্ন। তাই কোম্পানীর ভেতরে চাপা উত্তেজনা।
    তবে আমি আদার ব্যাপারী, জাহাজের খবর নেবার বদলে আমি খোঁজ নিলাম ছুটি কদিন পাওনা আছে।
    স্বামীকেও জানালাম যে আমি কদিনের জন্য কোলকাতা যাচ্ছি। আমায় সশরীরে যেতে হবে ওখানে। যা পাকিয়ে রেখেছে, সেই জট ছাড়ানোর জন্য আমার ওখানে উপস্থিত হওয়াটা জরুরী।
    এয়ার ইন্ডিয়া থেকে টিকিট কিনতে বেশীক্ষণ লাগেনি। মার্চের মাঝামাঝি দিল্লি হয়ে পৌঁছে গেছি কোলকাতা।
    মাত্র সাতদিন ছিলাম সেবার কোলকাতায়। কিন্তু ঐ সাতটিদিনে কত যে রঙ্গ দেখলাম, আহা!
  • ক্রম  | 165.225.8.111 | ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:০১742109
  • সার্বেন- অক্সলি কি ওয়ার্ল্ডকমের সময় ছিল?
  • যোষিতা | ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৩২742114
  • ঠিকই ধরেছেন, ওটা মাস দুয়েক কি তিনেক পরে হবে।
  • যোষিতা | ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:০৮742115
  • কোলকাতা নামার পরেই ঝড়ের বেগে নানান কাজ। এয়ারপোর্ট থেকে আমাকে পিক আপ করতে এসেছিল স্বামী এবং কন্যা। কন্যা এই কমাসেই কিছুটা লম্বা হয়ে গেছে, এবং আমাকে দেখে একটু একটু লজ্জাও পাচ্ছে! বোঝো কাণ্ড!
    তবে সরাসরি বাড়ি যাওয়া হলো না, পথে থামা হলো এক ডেন্টিস্টের চেম্বারে। আমার স্বামীর সেদিন ডেন্টিস্টের অ্যাপয়েন্টমেন্ট। এই কমাস ধরে দাঁতের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রচুর অর্থব্যয় করেছেন। মানে, ডেন্টিস্টের খুবই প্রিয় রোগী তথা ক্লায়েন্ট। আমার চেকবুক তিনি সঙ্গে করেই এনেছিলেন। সই করে দিলাম বাকি পেমেন্টটুকু, চব্বিশ হাজার টাকা।
    তারপরে বাড়ি, সুটকেস খুলে উপহার বিতরণ, সবই প্রায় মদ এবং চীজ এবং চকোলেট যদিও।
    শনিবার দুপুরে জুরিখ থেকে উড়ান ছেড়েছে। গভীর রাতে পৌঁছেছি দিল্লি, ফের রবিবার সকালে কোলকাতার ফ্লাইট। অতয়েব আজ সব কিছুই প্রায় বন্ধ, ছুটি।
    পরের দিন সকালেই ফের কোর্ট, আদালত।
    উনি কাগজপত্র সব তৈরী করেই রেখেছিলেন, অ্যাডপশন ডীড। আমার মেয়েকে আমি দত্তক দিয়ে দিচ্ছি আমার স্বামীর কাছে।
    কোর্টে যারা হাতে করে দলিল লেখে, তারাই দত্তকের কোবালা লেখে। কিন্তু সরাসরি কোর্ট চত্ত্বরে নয়। কিরণশঙ্কর রোডের একপাশে যে সার দিয়ে খুপরি খুপরি উকিলের চেম্বার আছে, সেগুলোর বাইরে, ফুটপাথের ওপরেই এই লেখকেরা বসে থাকে। এই লেখাগুলোর নিজস্ব কিছু ফর্ম্যাট থাকে, নিজস্ব ভাষা, এমনকি হালকা সবজেটে যে কাগজে লেখা হয়, সেগুলোও উদ্ভট সাইজের। লেখক লোকটি তৈরিই ছিলো। সবই আমার স্বামী আগে থেকে ব্যবস্থা করেছেন, আমি আগে থেকে কিছুই খবর পাই নি। কাগজে যা যা লেখার তাইই লেখা হয়ে গিয়েছে। পড়ে দেখবার মতো সময়ও নেই হাতে। আমার মেয়েও সঙ্গে, সে ই তো আসল ব্যক্তি আজকের এই দত্তক সেরিমোনি তে।
    সিটি সিভিল কোর্টের পেছনের দিকটায় সম্ভবত সেই রেজিস্ট্রি আফিস। হয়ত ইংরেজ আমলে এটা ছিল মুহুরি পেশকারদের ঘর। যেমন পুরোনো, তেমন নোংরা এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন। সেই ঘরটার ভেতরে ছায়া ছায়া মানুষেরা যেন চকচকে চোখে আমাদের দিকেই চেয়ে রয়েছে। আমার মেয়েটাকে কায়দা করে দু একজন মুহুরি পেশকার গোছের লোকজন দেখে গেল আড়ে।
    কাগজটায় একবার চোখ বুলোনো দরকার। অন্ততঃ টিপছাপ দেয়ার আগে দেখে নেওয়া উচিৎ কীসের ওপর টিপছাপ দিচ্ছি। এর আগে মোটামুটি আন্দাজ ছিলো, সেই পাসপোর্টের টাইমে এফিডেভিট বানানোর সময়ে, কিন্তু এই অ্যাডপশন ডীড সেই সব ভাষার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
    মোদ্দা কথা, এক বেজন্মা শিশুকে নিয়ে তার মা, খুবই বিপদে পড়েছিল। তখন এই ব্যক্তি দয়াপরবশ হয়ে মহিলাটিকে বিবাহ করে সামাজিক লজ্জার হাত থেকে রক্ষা তো করেইছেন, তিনি এতটাই মহানুভব যে ঐ জন্মপরিচয়হীন শিশুটিকেও আজ দত্তক নিতে এগিয়ে এসেছেন। এই দত্তকএর মাধ্যমে শিশুটি পাবে তার জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় পিতৃপরিচয়।
    পেশকার লোকটা তেরছাভাবে কাগজের কোণে কী একটা লিখল, তারিখ বা ছ্টো সই গোছের, আমার বাঁ হাতটা টেনে নিয়ে তুশের কালিতে লেপে আঙুলের ছাপ চেপে দিল ঐ হালকা সবুজ কাগজে। আর কী চাই? আজ মহা আনন্দের দিন। বেজম্মা পিতৃপরিচয় পেয়ে যাচ্ছে, রক্ষিতাটি কয়েকমাস আগে বিয়ে করা বৌ হয়ে গেছে। এই সবই তো সমস্যা সমাধানের জন্য। কাল এই দলিল নিয়ে সোজা যেতে হবে দোলনা ইস্কুলের আন্টিমাসীর কাছে। এখন তিনি নিশ্চয় পিতৃপরিচয়যুক্ত শিশুদের সঙ্গে একই ক্লাসে আমার মেয়েকেও পড়তে দেবেন। কে বলেছে এই দেশে শিক্ষার অধিকারকে "প্রিভিলেজ? আমি বলেছিলাম বুঝি কদিন আগে? ওটা আবেগের কারণে বলে ফেলা। সবরকম ব্যবস্থাই আছে, আমরা জানি না কিনা, তাই।
  • | ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:২৫742116
  • সর্বনাশ! 
  • যোষিতা | ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:২৯742117
  • ফাল্গুন মাস শেষ হতে চলেছে, তাই বিয়ের সীজনের হুড়োতাড়া। মঙ্গলবারেই একজন ধনীব্যক্তির ছেলের বিয়ের রিসেপশন। আজকাল আর কেউ বৌভাত বলে না, ফুলশয্যা বলে না। লোকটার কয়েকটা চা বাগান আছে ডুয়ার্স ও আসাম মিলিয়ে। রিসেপশন ক্যালকাটা ক্লাবে। লোকটা কৃপন, যতটুকু শুনলাম, নইলে অনায়াসে বেঙ্গলক্লাবে পার্টি দিতে পারত।
    কিন্তু রিসেপশনের নেমন্তন্ন তো মঙ্গলবারে, সোমবারের ঘটনাটা হেভি ইন্টারেস্টিং। চা খেয়ে এসে লিখছি।
  • যোষিতা | ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:১২742118
  • এঁকে আমি জীবনে এই প্রথম দেখলাম। মেয়েকে ভর্তির টাইমে ইনি দেখা দেন নি। এঁর জামাই কিংবা পুত্র গোছের কেউ সেই পেরেন্ট্স' ইন্টারভিউয়ে আমার এবং সাজানো স্বামীর শিক্ষা, জ্ঞান, টাকাপয়সা, টেস্ট করে নিচ্ছিলেন। কিন্তু ইস্কুলের আসল মালিক ইনি। মূল বিল্ডিংএ ঢুকলে ডানহাতে অফিস এবং সেই ডানদিকেই কোণাকুণি গেলে এঁর ঘর। বেশ বড়ো ঘর, ঢুকলেই বেশ শ্রদ্ধামিশ্রিত ভয় ভয় ব্যাপারটা হয়। দরজাটা ঠেলে ঢুকবার সময়ে ভাবছিলাম, এই ভারতবর্ষে যদি শিক্ষাটাকে কম্পালসারি করে দিত, আর কিচ্ছু না, জাস্ট কম্পালসারি, তাহলে এত ব্যবসা, এত হারামিগিরি, সব ফুস হয়ে যেত।
    চারিদিকে দেখেছি তো, কীভাবে শিশুটির ওপর চাপ দেওয়া হয়। সে কথা বলতে শিখছেই যেন ইস্কুলের অ্যাডমিশন টেস্ট দেবে বলে। কত ইস্কুলে বাপের ইনকামট্যাক্স রিটার্ণ দেখতে চায়, আমি নিজে ফর্ম তুলতে গিয়ে দেখে ঘাবড়ে গেছি। তার ওপর যে ইস্কুলের যত বেশি ফি, তার তত পোজপাজ। বাপমায়েদেরো এসব ইস্কুলে বাচ্চাকে ভর্তি করিয়ে যে আনন্দ হয়, তা অর্গ্যাজমের সঙ্গে তুলনীয়। এখন তো গোদের ওপর বিষফোঁড়া হেরিটেজ। সেই চক্র থেকে বাঁচার জন্য আজ আমাকে টিপছাপ দিতে হলো। এরা মানুষকে শান্তিতে বাঁচতে দেবে না।
    আন্টিমাসী ঘরের এক্কেবারে ভেতরের দিকটায় মস্ত টেবিলের পেছনে বসে আছেন। আমরা তিনজনে ঘরে ঢুকে শ্রদ্ধায় গদোগদো হয়ে গেলাম। ভক্তিভরে দাঁড়িয়ে রইলাম যতক্ষণ না উনি আমাদের বসতে আদেশ করেন। আমার কন্যাকে উনি আদেশ করলেন ঘরের বাইরে যেতে।
    আমি আপত্তি করেছিলাম, ওও থাকুক না, ওতো সবই জানে।
    কিন্তু না, ও এসব ব্যাপারে কিছু জানবে না। ও বাইরে থাকবে। থাক। বাইরেই থাক।
    আর কতক্ষণ ধরে ছেনালি করতে হবে জানি না। এখানে কাজ সেরে আমার গড়িয়াহাটে শপিং করা আছে।
    আমরা অ্যাডপশন ডীডটা টেবিলের ওপর রাখলাম, ঐ আজকাল যে শব্দটা খুব চালু হয়েছে, "বিনম্র" শ্রদ্ধার সঙ্গে।
    উরিন্নারে, উনি সেটি ধরেও দেখলেন না। পুউরো আনন্দময়ী মা অ্যাটিটিউড। আসলে মেয়েকে কেন ইস্কুল থেকে তাড়িয়েছেন, সেই টপিকটা নিয়ে এখন ঘাবড়েছেন। মেয়ের মা চলে এসেছে চাকরির জায়গা থেকে ছুটি নিয়ে, রাতারাতি বাপ জোগাড় করে তাকে দত্তক টত্তক করে, পুরো ফুল প্রুফ কেস। এখন আরও বাড়াবাড়ি করলে কী হবে সেটা উনি হয়ত কিছু গেস করেছেন। কিন্তু আসলে কিছুই হবে না। আমি এসব জিনিস নিয়ে এনার্জি নষ্ট করব না। তবে উনি সেটা কেমন করে বুঝবেন? এনারা তো সবসময় এক্সপেক্ট করেন পেরেন্টস গদোগদো বিহ্বল হয়ে এইসব টিচারদের মুখের দিকে কৃপাপ্রার্থীর মতো চেয়ে থাকবে। আমিও তখন আর ঝামেলা চচ্ছি না, বিহ্বল টাইপ্স লুক দিলাম একটা, উইথ করুণ করুণ ভাব। হালকা করে আমার বিদেশী বিজনেস কার্ডটা ঠেলে দিলাম তাঁর দিকে।
    মেয়ে কাল থেকেই ইস্কুলে আসতে পারবে। আর কী চাই?
    এই না হলে ভারতবর্ষ!
  • যোষিতা | ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:৪৩742119
  • প্রথমে আমি শুধুই মেয়েকে নিয়ে চলে গেছলাম গড়িয়াহাটে। সেখানে একটা বইয়ের দোকান থেকে কেনা হলো চার খণ্ড হ্যারি পটার। এত দামী বই সে কখনও হাতে পায় নি। তার ওপর এখন সে ইংরিজি পড়তেও শিখেছে। ওদের ক্লাসের বেশ কয়্কজন ছেলে মেয়ে হ্যারি পটার পড়েছে, সেই নিয়ে আলোচনাও হয়, কিন্তু যারা পড়ে নি তারা সেই আলোচনাগুলো বুঝতে পারে না। 
    বই কিনে তার কী আনন্দ! আজই  বিয়েবাড়ির নেমন্তন্ন আছে। যদিও বিয়েবাড়ির লোকজন বা নিমন্ত্রিতদের আমার চেনার কথা নয়। আমার ওখানে শাড়ি টাড়ি পরবার দরকার নেই, ড্রেস আছে। মেয়্র দন্য এই প্রথম ভালো কোনও পোশাক কিনতে চলেছি। গড়িয়াহাটের দোকানের জিনিস আমার সাড়ে সাতমাস জুরিখে থাকা চেখে রুচল না। চলে গেলাম পার্কস্ট্রীটের দিকে। শেষে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে পেয়ে গেলাম বেনেটনের দোকান। একসেট জামা প্যান্ট মেয়ের জন্য। সে কিন্তু জামা প্যান্ট্র জন্য কতটা খুশি হয়েছে বুঝলাম না, সে বাড়ি ফিরতে চাচ্ছে যত শিগগির সম্ভব।
    সন্ধেবেলা বিয়েবাড়িতে সে আমাদের কী কদর! বিদেশে থাকি তো, তেল মারার লোকের অভাব নেই। এখানে আমার স্বামীর অফিসের কোলিগ, বস, নানানরকমের লোক। কয়েকজনকে আগে দেখেছি ক্রিসমাস পার্টি টার্টিতে। আগে তারা আমাদের মা মেয়েকে পাত্তা দিত না মোটে, এখন নুয়ে নুয়ে কত বিনয় করে হেসে হেসে কথা বলছে। 
    এর পরের দিনগুলো আরও সব অদ্ভূত নাটকে পরিপূর্ণ। 
    নিভাশশীকে মনে আছে হয়ত পাঠকদের। বিশেষ করে চাগ্রীর গপ্পোতে ( যা পরে বই হয়েছিল) নিভাশশীর উল্লেখ আছে ( এটা সেল্ফ রেফারেন্সিং নয়)।
    বাড়ি ফেরা ইস্তক মাঝে মাঝেই ফোন আসছে, আমি রিসিভার তুলে কথা বললেই ওপাশ থেকে কেটে দিচ্ছে।
    এগুলোকেই বোধহয় ব্ল্যাঙ্ক কল বলে। 
    তো ঐ বিয়াবাড়ির দিনেও এরকম কল আসছিল, এবং আমি ধরলেই কেটে দিচ্ছিল।
    এবার ফোন ধরল আমার স্বামী। না, এবার ফোন কেটে গেল না। সে কথা বলছে কারো সঙ্গে বাংলায়। তুমি তুমি করে বলছে কথা। কথা বলতে বলতে আমার দিকে তাকেচ্ছে। এবার বলল — জানি না, তোমার সঙ্গে কথা বলবে কি না।
    আমি তখন লাফিয়ে উঠেছি, কে?
    স্বামী বললেন — নাও কথা বলো।
    আমি কালে রিসিভার নিয়ে শুনলাম ওপাশে নিভাশশী।
    — নিভাশশী, তুমি কেমন আছ?
    সে কেমন আড়ষ্ট হয়ে কথা বলে। ক্রমশ সহজ হয়ে যায় অবশ্য।
    — তুমি খবর পেলে কবে যে আমি এসেছি?
    — না, আমি তো এই এখনই জানলাম যে তুমি এসেছ। তুমি কি আবার চলে যাবে যোষিতা?
    — আমি মাত্র সাতদিনের জন্য এসেছি।
    নিভাশশী খুশি হয় না একথা শুনে। সে আমার বাড়ি আসবে এর মধ্যে একদিন। তার দরকারি কীসব বলবার আছে আমাকে।
  • যোষিতা | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:৪৭742124
  • আমার ননদিনী যেদিন সগর্বে সকলকে জানাচ্ছিল, যে সেদিন তার বাড়ি অগোছালো ক্লিনিং ওম্যান না আসবার কারনে, সেদিন আমার খটকা লাগেনি। খটকা লাগবার তেমন কোনও হেতু নাই, আমরা অভ্যস্থ। ক্লিনিং ওম্যান বলে কোনও শব্দ ইংরিজিতে আছে কিনা জানি না, তবে জার্মানে ঘর ঝাড়পোঁছ করবার ঝিকে পুট্সফ্রাউ (Putzfrau) বলে। এর নিশ্চয়ই একটা পুংলিঙ্গবাচক শব্দ থাকা উচিৎ, হয়ত ব্যাকরণগতকারনে থেকেও থাকবে, কিন্তু যত রাজ্যের ঠিকে-ঝি মেয়েমানুষেই হয়, এ নিয়ে আমরা কখনও আশ্চর্য হই না। ইহাই নিয়ম। এই পেশায় শ্রমের মূল্য কম। আর কে না জানে শ্রমের মূল্য মেয়েদের জন্য কম করেই বরাদ্দ। এবং এই বিষয়ে নারীপুরুষ নির্বিশেষে প্রায় সকলেরই অভিমত অভিন্ন। যদিও আমরা তা সর্বসমক্ষে অস্বীকার করবার অভিনয়টা রপ্ত করে ফেলেছি। বৌয়ের ইনকাম বরের ইনকামের চেয়ে বেশি হলে, সেটা মানতে অসুবিধে হয়।
    নিভাশশীরও কি তাই হচ্ছিল? বা নিভাশশীর বরের?
    যে নিভাশশী আমার বিয়ের কাগজে সই না করলে আমার বিয়েটাই ভেস্তে যেতে পারত, যে নিভাশশী আমার বড্ড কাছের বন্ধু, যে আমার বিপদে আপদে পাশে দাঁড়িয়েছে নানান সময়ে, সে এমন বদলে গেল মাত্র এই কটা মাসের মধ্যে?
    প্রথমত সে গোড়া থেকেই আমার বয়ফ্রেন্ডের (তখনও তিনি স্বামী হন নি) সঙ্গে দূরত্ব রেখে আলাপচারিতা করত। নিভাশশীর গোপন অভিসারের কথা আমি আমার বয়ফ্রেন্ডকে কখনই বলি নি। নিভাশশী সমস্ত পরপুরুষকে আপনি করে বলত, বরাবর। সে হঠাৎ আমার স্বামীকে তুমি তুমি করে ফোনে কথা বলছে, আমার স্বামীও তুমি তুমি করছে, কানে লাগছে সম্বোধনটা। 
    নিভাশশীর স্বামী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম ব্যাচের স্ট্যান্ড করা ছাত্র। কাগজে ফোটো বের হওয়া লেভেলের। এবং সে প্রচণ্ড পিউরিটান। আমি যেহেতু বিয়ে নি করে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে সহবাস করতাম, সেই কারনে সে কখনও আমার বাড়ি আসে নি, সমস্ত নিমন্ত্রণ কায়দা করে নানান অজুহাতে প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি আমি যখন নিভাশশীর বাড়ি যেতাম, তার পিউরিটার বর সেটা পছন্দ করত না। তবে এখন আমি পবিত্র হয়ে গেছি, কাগজে সইসাবুদ হয়ে গেছে। এখন সহবাস বৈধ, যেহেতু সইসাবুদ করবার পরে সহবাস করা হচ্ছে, আগেরগুলো পাপের কাজ ছিল, তবে এখন সেসব পাপ নাল অ্যান্ড ভয়েড। তাই নিভাশশী একা এলো না, সেই স্বামীটিও সঙ্গে এসেছেন। ইনি তুখোড় পন্ডিত মানুষ। সেই সময়ে অ্যান্ড্রু ইউল কোম্পানীতে টপ পদের অফিসার, অভিজিৎ বিনায়ক ( পরে যিনি নোবেল পেলেন) এর ক্লাসমেট ছিলেন কলেজে এবং আরও নানান লেভেলে প্রচুর জানাশোনা। সেই হিসেবে সত্যি সত্যিই এঁরা গরীবের কুটিরে জোড়ে পদার্পন করলেন।
    সে এক সন্ধ্যা। আমার ফিরবার ফ্লাইটের তখন দুদিন মত বাকি। আমি নিভাশশীকে বেডরুমে এনে নতুন কেনা জিনস দেখাচ্ছি, সব শপিং আমি নিজের পছন্দমত করেছি। সে কিছু দেখতে চায় না, কেবল আমায় যেতে নিষেধ করে।
    কিন্তু কেন যাব না আমি? ভাল চাকরি করছি। ভাল বেতন। ওদেশে সংসার নিয়ে গেলে আমার সন্তানেরো ভাল ভবিষ্যৎ। অন্ততঃ ইস্কুলে ভর্তি করবার ঝামেলা নেই। শিক্ষা সম্পূর্ণ অবৈতনিক। চিকিৎসা ব্যবস্থাও ভালো। না যাবার পেছনে যুক্তিটা কী? এই কমাস ধরে ওদেশে দিব্যি রয়েছি তো। আমার তো কোনও কষ্ট হচ্ছে না।আমি খাটতে রাজি। তবে তোমরা পিছু টানছ কেন? নিভাশশী কেমন যেন হেরে যাওয়া মানুষের মত ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। আমি তাকে নতুন কেনা একটা ব্লাউজ দেখাই, সে ব্লাউজটা দূরে সরিয়ে দেয়।
    অন্য ঘর থেকে নিভাশশীর স্বামীর গলা শোনা যাচ্ছে। সে কথা বলছে আমার স্বামীর সঙ্গে। সিরিয়াস আলোচনা। ঠিক করে কথাগুলো আমার কানে যাচ্ছে না, তবে টপিক গুরুতর কিছু, ভয়ঙ্কর একটা বিপদের আশঙ্কা, আমার মেয়ে পারিজাতের নামটাও একদুবার শুনলাম মনে হলো। এবার নিভাশশী আমায় নিয়ে চলল বসবার ঘরে। তার স্বামী বেশ উত্তেজিত। আমার দিকে চোখ পাকিয়ে বলল, তাহলে তোমার ডিসিশানটা কী? তুমি জুরিখেই ফিরে যাবে?
     
    এরকম হুংকার এর উত্তরে চেঁচানো যায়। তবে সেটা করলে ঝামেলা বাড়বে। আমি সত্যিই আমার জীবনে পরীক্ষায় স্ট্যান্ড করা লোকের সঙ্গে আগে কথা বলি নি। কাগজে ফোটো দেখেছি, ব্যস ঐ অবধিই। এরকম হুংকার শুনে বুঝলাম,  তিনজনেই আমার বিপক্ষে, আমি একা। 
  • যোষিতা | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:৪৫742125
  • আমি চুপচাপ পরিস্থিতিটা বুঝবার চেষ্টা করছিলাম। আমার মর নিকৃষ্ট একটা মানুষ কী করবে না করবে, তাতে এদের কীই বা এসে যায়? এ নিয়ে এরা এত মাথা ঘামাচ্ছে কেন?
    ওরা নিজেদের মধ্যে ফের আলোচনায় ডুবে গেল। যি বুঝলাম আমার স্বামীও চান না আমি জুরিখে ফিরে যাই। 
    ওরা কথা বলছিল, আমার কানে কিছুই ঢুকছিল না, আমি মনে করবার চেষ্টা করছিলাম, এই সেই লোক, যার ফোটো সহ সাক্ষাৎকার ছেপেছিল কাগজে। আমরা ঝুঁকে পড়ে সাগ্রহে পড়েছি এর কৃতিত্বের কাহিনি। পরে এরই বৌ আমার বন্ধু হয়ে গেল। এর বৌ অন্য লোকের সঙ্গে মেশে, শোয়। আহারে, লোকটা কিচ্ছু জানে না। লোকটা আজ ভিখিরির মত আমার কাছে এসেচে একটা অনুরোধ নিয়ে, আমি যেন জুরিখে ফিরে না যাই। তবে তার কাকুতি মিনতির স্বর ভিন্ন, হুংকারের মত শোনাচ্ছে। 
    লোকটা বলল — ঐখানে গিয়ে তোমার মেয়ে পড়াশোনায় খারাপ করলে? তখন কী করবে তুমি?
    এ জিনিসটা তরজার আকার নিল। আমি বললাম, ও তো কখনই পাড়াশুনোয় ভালো নয়, সেটা আমার প্রায়োরিটিও নয়। ভালো মানুষ তৈরি হলেই চলে যাবে।
    — তোমার যদি চাকরি না থাকে? তখন তো ফিরে আসতে হবে। তখন কী করবে?
    — ফিরে আসব।
    — আর মেয়ে? ও তো তখন স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না এখানে।
    — তা ঠিক। কোনও ইস্কুলই নেবে না ওকে?
    — না, নেবে না। প্রাইভেটে মাধ্যমিক দিতে হবে। তারপর কী করবে?
    — বিয়ে দিয়ে দেব।
    — ইয়ার্কি হচ্ছে!
    আবার হুংকার মিস্টার স্ট্যান্ড করা ছাত্রর।
    এবার তিনি অন্য চাল চাললেন। আমার স্বামীকে এখুনি একটা ভাল দেখে মোটা মাইনের চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। সুবারু কেনিয়াতে। চায়ের প্ল্যান্টেশনে ও ফ্যাক্টরির লাইনে। আমার স্বামী আমাদের নিয়ে কেনিয়া যাবেন । সেখানে আমরা থাকব।
    বলতে গেলে চাকরিটা তখুনি হয়ে যায় আর কি।
    আমি মনে মনে ভাবছি, কেনিয়ার ইস্কুল আর সুইটদারল্যান্ডের ইস্কুলের মধ্যে কোথায় পড়লে আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ বেটার হবে। আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে ওই লোকের এত চিন্তা কেন? ওর নিজেরও তো একটা ছেলে আছে, কোলকাতার নামকরা ইস্কুলে পড়ে। ওর যদি অপশন থাকত নিজের, যে কোন দেশে যাবে, ওকি সুইটজারল্যান্ডের বদলে কেনিয়া বেছে নিত? নিজের ছেলের  ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ও কেনিয়া চলে যেত সপরিবারে?
    বিদ্যুতের মত মাথার মধ্যে এই পুরো ব্যাপারটার কার্যকারনের উত্তর আমার মাথার মধ্যে খেলে গেল। যতদিন আমি তোমাদের চেয়ে ছোট ছিলাম, গরীব ছিলাম, করুণার পাত্রী ছিলাম, তোমরা আমাকে ভালোবেসেছো। আজ আমি তোমাদের ছাড়িয়ে গেচি, যা তোমরা হয় আগে গেস করতে পারো নি, কিন্তু এখন আমায় যে করে হোক টেনে নামাতে চাচ্ছো। আমায় কি তোমরা একেবারেই বোকা ভাবো?
    আমি উত্তর রেডি করে ফেলেছি।
    — এটা কিন্তু ভালো অপশন। কেনিয়ায় গেলে উনি ভালো রোজগার করতে পারবেন, আমিও সংসারের কাজ করতে পারব। মেয়ের পড়াশুনোর জন্যেও বাড়িতে যতটা পারি হেল্প করব আমি। 
    — তাহলে যাচ্ছ না তো জুরিখ?
     — আমার সব অরিজিনাল ডকুমেন্ট ওখানে রয়ে গেছে। আমার বর কেনিযার চাকরিটা পেলেই আমি ওখানের পাট চুকিয়ে ফিরে আসব। আমিও আর একা একা ওখানে পেরে উঠছি না।
    ব্যস। সব সমস্যা মিটে গেল। আমার স্বামীও এখন দু এক লাইন যোগ করলেন — আমি বলেই বিয়ে করা বৌকে বিদেশে যাবার পার্মিশান দিয়েছি। 
    ওরা সঙ্গে সঙ্গে সায় দিল — তাইত! সেতো বটেই।
    স্বামী বললেন — আমার অফিসের জুনিয়র এক কোলিগ আছে নাম গৌরব। তার ওয়াইফ ইংল্যান্ডে যায়, শাড়ি নিয়ে। বিক্রি করে আবার ফিরে আসে। যোষিতা যদি ঐরকমের কোনও বিজনেস করে আমার আপত্তি নেই। আদারওয়াইজ হেরিটেজ  স্কুলে পড়াতে পারে, আমার চেনা আছে, চাকরি পেয়ে যাবে।
    ওরা আবারও সায় দিল।
    আমি মিষ্টি মেয়ের মতো বড়োদের উপদেশ শুনে নিলাম। মাইরি! আমি হেরিটেজ ইস্কুলের টিচার হবো? কী পড়াবো? আমি তো ইংরিজিই ভালো করে বলতে পারি না। মনে মনে হাসি পাচ্ছে। হাসা চলবে না। আমাকে বাধ্য মেয়ের মত সব কিচু মেনে নিয়ে যে হোক করে বেরিয়ে যেতে হবে।
    চলে যাবার আগে নিভাশশীর বর আমায় জ্ঞান দেবার লোভ সামলাতে পারল না। 
    — আমি তোমার হাজবেন্ডকে রেসপেক্ট করি। পারিজাতকে অযাডপ্ট করবার জন্য। আজকাল এরকম মহানুভবতা বিরল।
    সবাই বিনয়ে গদোগদো হয়ে গেল।
     
  • যোষিতা | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৪৪742126
  • এর মধ্যে একদিন ব্যাঙ্কে যেতে হলো। দোতলায় ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের ঘরে বসেই কথাবার্তা। যা পাঠিয়েছি এই কমাসে তার প্রায় অর্ধেক টেলর মেশিন দিয়ে ক্যাশ হিসেবে তোলা হয়েছে বা কার্ড দিয়ে ট্রান্সফার হয়ে গেছে স্বামীর অ্যাকাউন্টে। ছলাখ মতো পড়ে আছে আমার অ্যাকাউন্টে। ওটা কি ফিক্সড ডিপোজিট করতে পারি?
    আমার স্টেটাস পাল্টে এনারাই করা হলো। স্বামীর সঙ্গে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট হবে না, স্বামী হওয়া সত্ত্বেও না। স্বামী অবশ্য এতে অসন্তুষ্ট হয়েছেন বলে মনে হলো না। কিছুদিন পরে তো উনি নিজেই এনারাই হবেন, হয় কেনিয়ার নয় সুইটজারল্যান্ডের। কিন্তু আরও প্রায় সাতলক্ষ টাকার কী হলো? আমি হিসেব চাই নি। আমি জানি টাকার চেয়েও অনেক বেশি দামি জিনিস ছড়িয়ে আছে দুনিয়ায়। সেসব মণিমানিক্য একটা দুটো পেলেই জীবন সার্থক হয়ে যায়। 
    স্বামী অবশ্য নিজেই সত্যটা খুলে বলল। কিছু খরচ হয়েছে তার দুই ছেলের জন্য। বাইক কেনার জন্য কত যেন লেগেছে, বড়ো ছেলে বাইকের বায়না করছিল। কিছুটাকা মার গেছে পনজি স্কীমে। তার অফিসের মধ্যেই এরকম একটা চক্র শুরু হয়েছিল, প্রথমে ভাল সুদ দিয়েছে, তারপরে আরও টাকা ঢোকানের পরে সব ভোঁ ভা। বাকি টারা নিজের নামে ফিক্সড ডিপোজিট করেছেন তিনি। 
    এই হচ্ছে গল্প। 
    আমার এনারাই অ্যাকাউন্টে জিরো ব্যালেন্স। আমি আমার স্বামীকে নিয়ে শপিং এ গেলাম আবার। তার যত জিনিসের শখ আছে কিনুক। আমার কাছে বিদেশের ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। মাসের শেষে মাইনে পেলে সে বিল চুকিয়ে দেব।
    সত্যি, টাকা এত মজার জিনিস? টাকা ছড়ালে মানুষের মুখের হাসি কত সহজে কেনা যায়।
    আমার অন্য বন্ধু, মিতা। বিয়ের কাগজের দ্বিতীয় সাক্ষীর সইটা যার, তার মা অসুস্থ। পিজি হাসপাতালে মিতার মা কে দেখতে গেছলাম।
    ভিজিটিং আওয়ারের পর মিতার সঙ্গে বাইরে একটা গাছতলায় বসেছিলাম। মিতা আমার অনেক কাছের বন্ধু ছিল। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছিল, আজ মিতাকেও মনের সব কথা খুলে বলা যাবে না।
    নিভাশশীর মতই, মিতাও আমার থেকে দূরে সরে গিয়ে আমার স্বামীর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। আমার কথাবার্তায় সতর্কতা বজায় রাখতে হবে। এরা দুজনেই আমার পেট থেকে কথা বের করবার চেষ্টা করেছে। 
    যাবার আগে এরিকার জন্য প্রেজেন্ট কিনলাম। সে মোরগ ভালবাসে। একটা ছোট পুতুল  মোরগ। 
    আমার মেয়েকেও আমার প্ল্যান বলতে পারছি না মন খুলে। ছোট বাচ্চা তো, কখন বেফাঁস কিছু বলে দেয়।
    ফেরার সময়ে এয়ারপোর্টের পথে ট্যাক্সি থামিয়ে হলদিরাম থেকে মুগের লাড্ডু কিনলাম। নিজের জন্য নয়, মিস্টার ভটচাজের জন্য। ওঁকে বলে রেখেছি মেয়ের ইস্কুলের ব্যাপারে খোঁজ নিতে। আমার অফিসে ঠিক এইসময়েই ছিল স্কিয়িং এর জন্য ছুটি। এবং সেই ছুটিতে অফিস থেকেই নিয়ে গেছল আরোজা। Aroza.
    আমার আরোজা যাওয়া হলো না। সোভিয়েত ইউনিয়নে থাকতে স্কিয়িং করেছি। এখন জীবনটাই স্কিয়িং এর মতো। প্রতিটি মুহূর্ত সতর্ক থাকতে হবে।
  • যোষিতা | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:২৫742127
  • Arosa
  • যোষিতা | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩২742128
  • এই বাড়িটায় আমি থাকতাম।
    আমার ঘরটা দাগ দিয়ে দেখালাম ছবিতে।
  • যোষিতা | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৩:৪৫742137
  • জুরিখে উড়ান ল্যান্ড করল ভোরে। বাড়ি এসে দেখি এরিকা বাড়িতেই। কদিন আগে এই বাড়িতে চুরি হয়ে গেছে! এরিকার চাকরিতে একটা ট্রান্সফার হয়েছিল এই বছরের গোড়ায়। এয়ারপোর্টের দোকানে। ওর নাইট শিফট ছিল। সেই রাতেই চোরেরা বাগানের দিকের কাচের দরজা ভেঙে চুরি করে নিয়ে গেছে ওর মুল্যবান গয়না, সবই দামি দামি পাথর দিয়ে বানানো। পুলিশ এসেছিল, ফিংগারপ্রিন্ট নিয়ে গেছে। চোর ধরা পড়বে না, কিন্তু ইনশিওরেন্স ক্ষতিপূরণ দেবে। ক্ষক্ষ লক্ষ ফ্রাংকের গয়না। টেইলর মেড। 
    গয়নার কোনও রসিদ ওর কাছে নেই। সমস্ত গয়নাই ওর প্রাক্তন প্রেমিকের থেকে পাওয়া উপহার।
    এখন প্রাক্তন যদি নথি পাঠায়, তবেই বীমা কোম্পানি ক্ষতিপূরণ দেবে।
    আমার ঘরে ফ্যাক্স মেশিনটা রাখা থাকে। রাত দুপুরে ফ্যাক্স আসে অস্ট্রেলিয়া থেকে। এরিকার সেই পর্াক্তনের নাকি স্যাফায়ার মাইন ছিল অস্ট্রেলিয়ায়। এরিকা আমাকে বলে, একসময়ে এই বাড়িতে ভাড়াটে বসিয়ে সে পুত্রকন্যী সহ প্রেমিকের কাছে চলে গেছল অস্ট্রেলিয়ায় থাকবে বলে। সেখানে নাকি কয়েক বছর থেকেওছে, তারপরে বনিবনা না হওয়ায় ফিরে এসেছে জুরিখে। সেই খনিতে এরিকাকে একটা চাকরিও দিয়েছিল সেই ব্যক্তি। শ্রমিকদের তদারকি করবার কাজ করত এরিকা।
    বেশ কয়েকদদিন ধরে অনেক ফ্যাক্স এসেছিল, এরিকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিল কি না আমায় জানায় নি।
    অফিসে গিয়ে হেরমানকে আহত অবস্থায় দেখলাম। এটা বেশ কমন এই দেশে, স্কি করতে গিয়ে পা ভেঙে ফেলা। আরোজাতে স্কি করতে গিয়ে বেশ কয়েকজনেরই এই হাল হয়েছে। এদেশে স্কি করে পা ভাঙা ব্যাপারটা বেশ প্রেস্টিজের ব্যাপার। স্কিয়িং এদেশে বেশ খরচসাপেক্ষ ব্যাপার। 
    এবারে আমি উঠে পড়ে লেগেছি সমসার গুছোনোর কাজে। এপ্রিলের গোড়াতেই অ্যাপার্টমেন্ট পেয়ে গেলাম। জুন মাস থেকে সেখানে শিফট হতে পারব। এরিকাকেও জানিয়ে দিয়েছি যে মে মাসই আমার শেষ মাস হবে ওর বাড়িতে। ফ্যামিলি বুক বানানো হলো। এবং এপ্রিলের মাঝামাঝি আমি সরকারি কাগজ হাতে পেয়ে গেলাম আমার পরিবারকে নিয়ে আসার জন্য।
    আমার স্বামীকেও জানানো হলো। তাকেও তো প্রস্তুত হতে সময় নিতে হবে। 
    বলা হয় নি, ঐ সাতদিনের কোলকাতা সফরের টাইমেই অ্যাডপশন ডিড দেখিয়ে মেয়ের নতুন পাসপোর্ট হয়ে গেছে। সেখানে তার নতুন পদবী। বাপের নামের জায়গাটা ব্ল্যাঙ্ক নয়। জ্বলজ্বল করছে সেখানে ফাদার্স নেম, যেটা আমার স্বামীর নাম। 
  • যোষিতা | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:২২742139
  • নতুন বাড়িটা জুরিখের সঙ্গে ডুয়েবেনডর্ফের সীমান্তবর্তী এলাকায়। ক্রাইস ১২। গোটা জুরিখ শহর বারোটা ক্রাইসে ( ডিস্ট্রিক্ট) বিভক্ত। এই জায়গাটার নাম শমেনডিঙ্গেন। শমেডিঙ্গেন এবং জেবাখ, এই দুটো অঞ্চল মিলিয়ে ক্রাইস ১২। শমেনডিঙ্গেন অপেক্ষাকৃত কম কুলীন অঞ্চল, এখানে মূলতঃ শ্রীলঙ্কা থেকে আগত তামিল উদ্বাস্তুদের আধিক্য। এখানে ফ্ল্যাটের ভাড়া কম। হাজারদুয়েকের কমেই এখানং ভালো সাইজের সাড়েতিন ঘরের ফ্ল্যাট মিলে যায়। আমি ঐ ক্রাইসে গিয়ে জুন মাসের জন্য আগাম রেজিস্ট্রেশনও করিয়ে এলাম। 
    প্রচুর আসবাব কিনতে হবে। একার পক্ষে সম্ভব নয়। হেরমান এসব শুনে একপায়ে খাড়া আমায় সাহায্য করতে। সে আমার সঙ্গে যাবে আসবাব কিনতে। আমরা একটা গাড়ি ভাড়া করে নেব। ছোট ভ্যান হলেই চলবে। হেরমান ড্রাইভ করতে পারে। ওর দুটো ছেলেও আছে। দুজনেই টিনেজার এবং চাইলে আরও গোটাকতক বন্ধুবান্ধবকে জুটিয়ে নেওয়া যাবে। হৈ হৈ করে নতুন বাড়িতে ওরা আমাকে পৌঁছে দেবে।
    এর মধ্যে এরিকা তার পুরোন আসবাব আমায় বেচতে চাচ্ছে। হেরমান সতর্ক করে দিল, পুরোন আসবাবের কোনও মূল্য নেই এখানে, বরং ফেলতে গেলেও খরচ আছে, বিনা পয়সায় দিলে নাহয় কথা ছিল তবু। ওসব ঝামেলায় মোটেই যেও না। ভাঙা চোরা পুরোন জিনিস তুমি নেবে কেন? নিজের পছন্দমত জিনিস কিনবে। সস্তার একটা দোকান আছে শহরের বাইরে, ইকেয়া (IKEA), সেখানে ঘরের জন্য দরকারি সব জিনিসই একবারে কিনে নিতে পারবে। 
    ইকেয়াতে আমি আগেও গেছি একবার গশার সঙ্গে। জুরিখের দোকানের তুলনায় প্রাযয় জলের দরে ওখানে নানান জিনিস পাওয়া যায়, হয়ত টেকসই হবে না, তবে তাতে আমার কিছু এসে যায় না। 
    আমি মন চনমন করছে আনন্দে। মিস্টার ভটচাজকেও সুসংবাদ দিয়েছি টেলিফোনে। উনি বললেন, চিন্তা নেই, মেয়ের স্কুলের ব্যাপারে কথা বলেছি এখানে, বারো বছর বয়সের ভেতরে এদেশে চলে এলে অনায়াসেই ইস্কুল পাশ করে উচ্চশিক্ষা বা কোনও প্রোফেশন বেছে নিতে পারবে।
    আমার স্বামীর তাও মনে খুঁতখুঁত। সে ছুটি নিয়ে আসবে না চাকরি ছেড়ে আসবে সেই নিয়ে দোটানায় ভুগছে।
    নিভাশশীর বর সেই যে কেনিয়াতে বিশাল ম্যানেজারের চাকরি প্রায় দিয়েই দিচ্ছিল, এই এতগুলো দিন কেটে যাবার পরেও সে নীরব, খোঁজখবর করেছিল আমার স্বামী, তবে এখন সেদিন থেকে সাড়া মিলছে না।
    তাহলেই বোঝো, আমি যদি তখন সিদ্ধান্ত পাল্টাতাম, তাহলে সেটা কি ঠিক হতো?
    পেছন দিক থেকে এত টেনে ধরলে, সবসময় কিছু না কিছু নিয়ে অশান্তি করলে, সামনের দিকে এগোব কেমন করে?
    এপ্রিলের শেষের দিকে টুপ করে আমার চাকরিটা চলে গেল। হ্যাঁ, চাকরি চলে গেল। কোনও অপরাধে নয়। কোম্পানীর রিস্ট্রাকচার হচ্ছে। আইনি কিছু জটিলতা আঁচ করা গেছে। কদিন থেকেই একটু একটু করে লোক কমে যাচ্ছে মনে হচ্ছিল।
    হেরমান আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে গেল। দুপুরবেলা, সবে চাকরি নট হবার কাগজ হাতে ধরিয়েছে ম্যানেজমেন্ট, মে জুন নোটিস পিরিয়ড। আলভার এবং হেরমানের সঙ্গে লাঞ্চ করতে করতে ভাবছি, এখন কী আমার ভবিষ্যৎ।
    যতবার কিছু গড়ে তুলতে চাই ততবার শেষ মুহূর্তে সব ভেঙে যায়। এই কি আমার সিসিফসের জীবন?
  • প্রশ্ন  | 165.225.8.111 | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:০০742140
  • "এই বাড়িটায় আমি থাকতাম।" - ঐটি কি এরিকার বাড়ি ছিল?
  • যোষিতা | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:১৯742142
  • হ্যাঁ
  • যোষিতা | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:৩৭742144
  • ইতোমধ্যেই কোলকাতায় ফোন করে স্বামীকে জানিয়েছি ঘটনা। আমি হেরে গেলাম, সেটা প্রমাণিত। এত লড়াই করছিলাম প্রতিকুলতা সত্ত্বেও, চাকরিটা ছিল বলেই তো। পুরো ভিতটাই নড়ে গেছে। নড়ে যাওয়া তো কম কথা, আমার পায়ের নীচে জমিটাই নেই। আমি তলিয়ে যাচ্ছি যেন চোরাবালির ভেতর। সমস্ত প্ল্যান, স্বপ্ন, উচ্চাশা, আশা আকাঙ্খা দাঁড়িয়েছিল একটা ভিত্তির ওপরে, যেটা আমার চাকরি, আমার উপার্জন, এদেশে থাকতে পাবার অধিকার। নিভাশশীর বরের ভবিষ্যৎবাণী এখন মিলে গেছে। ওহ! ভাগ্যিস পরিবারকে এখানে আনার পরে এই ঘটনা ঘটে নি। এটাই মেঘের গায়ে সিলভার লাইনিং বলে পজিটিব চিন্তাধারায় নিজেকে সাবস্ক্রাইব করে নেব?
    হেরমান বলছে, আমাদের এখানে ওয়ার্ক কালচার কিন্তু এমনটা ছিল না আগে। গ্লোবালাইজেশনের ঢেউ যত আছড়ে পড়ছে আটলান্টিকের ওপার থেকে, অ্যামেরিকার হায়ার অ্যান্ড ফায়ার কালচারও এখানে ঠেলা মারছে। তবে ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়নে অতটা প্রভাব ফেলতে পারে নি এই কালচার। কিন্তু সুইটজারল্যান্ড তো গোঁ ধরে বসে আছে যে না ঢুকবে ইয়েরোপিয়ান ইউনিয়নে, না ঢুকবে শেংগেন জোনে, ফলাফল এইরকমই হবে জানা ছিল।
    হেরমান মনে করে এই দুমাসের মধ্যে আমি অন্য চাকরি পেয়ে যেতে পারি। কিন্তু আমার কেমন যেন নিস্তেজ লাগে। আমার স্বামী টেলিফোনে প্রায় হুকুম করে দিয়েছেন, ইমিজিয়েটলি ফিরে যেতে। আমি কি কালই ফিরে যাব?
    হেরমান বলে, তোমার দেশের কেউ এখানে থাকে? চেনো কাউকে?
    চিনি। বোসকে চিনি, ভটচাজকে চিনি।
    ফোন করে কথা বলে নাও।
    ফোন করলাম মিস্টার ভটচাজকে — দাদা, চাকরিটা চলে গেল।
    উনি খবরটা পেয়ে দুঃখ পেয়েছেন মনে হলো। দেখা করতে চাইলেন।
    সেই দিনই সন্ধেয় হেরমানের সঙ্গে গেলাম মিস্টার ভটচাজের বাড়ি। দেশ থেকে ফেরার পরে মিষ্টি নিয়ে গেছলাম হাসিমুখে। আজ ভগ্নদূতের মত হেরমানকে সঙ্গে নিয়ে গুটিগুটি গেলাম শুকনো মুখে। এদেশের নিয়ম আমি জানি না। চাকরি চলে যাওয়া মানে আমাকে নিশ্চয় দেশ থেকে বের করে দেবে এরা। 
    আমরা তিনজনে বসে পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করতে লাগলাম। এদের দুজনেরই মাথা ঠাণ্ডা। এরা যে শুধু বয়সে আমার চেয়ে বড়ো, তাই ই নয়, এরা আমার ভালো চায়। ফার্স্ট প্রায়োরিটিতে আমাকে বাঁচাতে চাচ্ছে। চোরাবালিতে ডুবতে দেবে না।
  • যোষিতা | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ০২:৫৩742145
  • সেদিনের আলোচনায় কী কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল আমার মাথায় ঢোকে নি। তবে পরেরদিন সকালে নিজের অফিস কামাই করে হেরমান আমাকে নিয়ে উপস্থিত হলো জুরিখের পারাডেপ্লাৎস এলাকার এক সরকারি অফিসে। পারাডেপ্লাৎসে ট্রাম থেকে নেমে হেরমান আমাকে বলল, এটা জুরিখের পাকস্থলী, উঁহু সুইটজারল্যান্ডের পাকস্থলী। চারিদিকে অনেক ব্যাংক। এখানে অবশ্য আগে এসেছি শেরী ওয়াং এর সঙ্গে। মাত্র একটা দুটো ব্যাংক ছাড়া অন্য ব্যাংকে জনসাধারণ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে না। ওগুলো প্রাইভেট ব্যাংকিং এর ব্যাংক, যেগুলোয় নাম্বার অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। মিনিমাম ব্যালেন্স কোথাও চার লাখ, কোথাও এক মিলিয়ন, ইত্যাদি। এই ব্যাংকগুলোই "সুইস ব্যাংক" হিসেবে পরিচিত। এরকম ব্যাংক যে শুধু সুইটজারলযান্ডেই যে আছে তা কিন্তু নয়। তবে ঐ যে কথায় আছে, সব পাখীই মাছ খায়, দোষ হয় সুইস ব্যাংকের।
    আরও আছে বিশাল এবং বিস্তৃত ভল্ট এই অঞ্চলে মাচির নীচে। কত য়িহুদীর সোনা দানা রয়েছে সেখানে, মা সিদ্ধেশ্বরীই জানে। সেসবের উত্তরাধিকারী পাওয়াও কঠিন নাটক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাস্ট উবে গেছে যেসব মানুষ, তাদের ডেথ সার্টিফিকেট নেই, তাই উত্তরাধিকারও সম্ভব নয়। আর এইখানেই আছে গোল্ড রিজার্ভের একটা বড়ো অংশ।  শুধু সোনা নয়, অন্য প্রেশাস মেটালের বারও। রূপো, প্যালাডিয়াম, প্ল্যাটিনাম।
    যাগ্গে, আমরা আদার ব্যাপারীরা চললাম সেই অফিসে। আমি বিশেষ কথা বলি নি সেখানে। হেরমান হুড়হুড়িয়ে সুইস জার্মানে কথোপকথন চালিয়ে গেল আমার তরফে। একটু পরে বেরিয়ে এলাম আমরা। মোটকথা, খবর তেমন কঠিন নয়, চাকরি একটা পেয়ে গেলেই আমার চিন্তা করার কারন নেই।
    আমি অফিসে গিয়ে কম্পিউটার অন করে চাকরি খুঁজতে শুরু করে দিলাম। 
  • যোষিতা | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৩:১৪742146
  • আমি যে চাকরি খুঁজছি, এবং মোটামুটি সাড়া পাচ্ছি আমার অ্যাপ্লিকেশনের, সে খবর রোজই জানাই আমার স্বামীকে। কখনও ইমেলে, কখনও ফোনে। কিন্তু তিনি ভয়ানক রেগে রয়েছেন আমার ওপরে। অবিলম্বে আমি দেশে ফিরে না গেলে তিনি হুলুস্থুল পাকাবেন গোছের শাসানি দেন। যত বুঝিয়ে বলতে চাই যে নোটিস পিরিয়ডে ফেরা যায় না, নানানরকমের আইনি নিয়ম আছে, তিনি শোনেন না। খালি ধমক ধামক আর ভয় দেখানো।
    এদিকে ঐ বাড়ি, যেটা ভাড়া নেওয়া ঠিক হয়ে গেছে, কন্ট্র্যাক্ট সই করা হয়ে গেছে সেটাও অবিলম্বে নাকচ করা হয়েছে। বাড়ির জন্য ভাড়াটে জোগাড় করা সহজ যেমন, তেমন কঠিনও। এক্ষেত্রে তেমন কঠিন হলো না, একটা কিউ ছিল। কিউয়ে আমার পরেই ছিলো একটি পরিবার। শুধু স্বামী-স্ত্রী। তবে সমস্যা আছে। উভয়েই উকিল। উকিলদের কেউ বাড়িভাড়া দিতে চায় না। কিন্তু আমি বাড়িটা ছেড়ে দেওয়ায় উকিল দম্পতি বাড়িটা পেয়ে গেল। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম একটা সমস্যার হাত থেকে।
    এখন কথা হচ্ছে যে মে মাস শেষ হবার পরে আমি এমনিতেই বাস্তুহারা হয়ে যাব। এরিকাকে নোটিস দেওয়া হয়ে গেছে। মে মাসের মধ্যে চাকরি পেয়ে গেলেও আমি কোথায় থাকব? চাকরি কি এত তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে? এপ্রিলের বেতন পাবার পরেও আমি দেশে টাকা পাঠাই নি। 
    কয়েকটা জায়গা থেকে চাকরির আশি মিলেছে, তবে ইনিটারভিউ দিতে দিতে জানা যাবে চাকরি পাবো কিনা আদৌ।
    আমার মন আবার ভেঙে যাচ্ছে।
    একটা খাতায় আমি লিখে রাখি আমার দেশে ফিরে কী কী করণীয় সেই সব পয়েন্ট।
    এয়ারইন্ডিয়া অফিসে ফোন করে মে মাসের শেষের একটা তারিখের বুকিং করেছি টিকিটের। টিকিট কেনা হয় নি। সময় আছে এখনও।
    মিস্টার ভটচাজকে ফোন করে নিমন্ত্রণ করলাম তিরিশে এপ্রিল সন্ধেবেলায় ডিনারের জন্য। চলেই যখন যাচ্ছি, ওঁর বাড়িতে গিয়ে কত বার খেয়ে এসেছি, উনি নানানভাবে চেষ্টা করেছেন আমায় নানান ইনফরমেশন দিয়ে সাহায্য করতে, কৃতজ্ঞতা বলে একটা জিনিস তো আছে, তাই না?
    তিরিশে সন্ধেবেলা এরিকা থাকবে না, ওর নাইট ডিউটি। ভালোই হলো, জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে ঐ মস্ত হলঘরে।
  • মত  | 165.225.8.111 | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:২৫742147
  • পড়ছি 
     
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০১:৪৩742151
  • বেশ কিছু পোস্ট পড়া হয়নি। পড়ে ফেলতে হবে। একটানা কঠিন লড়াইয়ের এক অসামান্য দলিল। 
  • যোষিতা | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:২১742155
  • পয়লা মে যেহেতু কান্টন জুরিখে ছুটির দিন, তাই আমার অতিথির তাড়া থাকবে না চটজলদি খেয়ে দেয়েই ফিরে যাবার। দেশ থেকে ফিরবার পরে হলদিরামের মুগের লাড্ডু নিয়ে যেদিন ওঁর বাড়ি গেছলাম সেদিন ওঁর ভগ্নীপতি ছিলেন সেখানে। ভগ্নীপতি পেশায় পাইলট, একটা বিশাল সময় চাকরি করেছেন ভারতীয় বায়ুসেনার উচ্চ পদে। তিনি বেড়াতেই এসেছিলেন, আমি মিষ্টি নিয়ে উপস্থিত হওয়ায় সেই সন্ধায় ভালোই আড্ডা গল্প হয়েছিল। তবে আমার কেন জানি না মনে হচ্ছিল, এরা দুজনে সম্পূর্ণ দুই জাতের মানুষ। ভগ্নীপতি আমার সঙ্গে ফ্লার্ট করবার চেষ্টা করছে, তার চোখ মেপে নিচ্ছে আমার শরীর, এসবে আমি অভ্যস্থ, এসব বুঝেও না বোঝার ভান করতে হয়। অন্যদিকে হোস্ট চিন্তিত রান্না ঠিক মত হয়েছে কি না, কোলকাতায় গিয়ে আমার সমস্যাগুলোর সমাধান হলো কি না, এইসব নিয়ে।
    আমিও কম পাজি নই, ভগ্নীপতিকে প্রশ্ন করে নাজেহাল করে দিই, বিমান কেমন করে ওড়ে সেই জিনিসটা বুঝিয়ে বলবার জন্য। অত ভারী একটা জিনিস লোকজন মালপত্র একসেস ব্যাগেজ খাবারদাবার নিয়ে কেমন করে হুশ করে টেক অফ করে বাতাসে ভাসতে ভাসতে ইত্যাদি ইত্যাদি। ঐ টা বোঝাতে গিয়ে বৈমানিক আমার ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স মাপবার মনোযোগ হারিয়ে ফেলে বারবার।
    যাইহোক, তিরিশে এপ্রিল আমি চাইনিজ খাবার রান্না করবার জন্য বাজার করলাম, দুবোতল রেডওয়াইনও কেনা হলো। কাগজের ব্যাগে মাল নিয়ে হেঁটে হেঁটে ফিরছি বাড়ি। দুপুরবেলা। টুপটুপিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ছাতা খুলব বলে ব্যাগটা ফুটপাথে রেখেছি, লক্ষ্য করিনি ব্যাগের তলাটা ভিজে নরম হয়ে গেছে। দুপা চলবার পরেই একটা ওয়াইনের বোতল ব্যাগের তলা ছিঁড়ে বেরিয়ে রাস্তায় পড়ল, সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্ল, এবং সারা ফুটপাথ লালে লাল। আমি ব্যাগ বগলদাবা করে দে দৌড় বাড়ির দিকে। এক বোতল মদেই হয়ে যাবে।
    সেদিন সন্ধায় আলাপ জমেছিল দীর্ঘক্ষণ। রান্নার স্বাদ তেমন জমেনি যদিও। এরই মধ্যে একটা ফোন এসেছিল জনৈক এজেন্টের থেকে। আমার ইন্টারভিউ নিতে চায় কোন একটা কোম্পানী, তবে জুরিখে নয়।
    কিন্তু এখন এসব নিয়ে ভেবে কী হবে? আমি তো ফিরেই যাচ্ছি। মন স্থির করে নিয়েছি। গোটাকতক ফর্মালিটি আছে, সেগুলো আবশ্যিক। 
    আমি অতিথিকে বোঝাচ্ছিলাম আমার ভবিষ্যতের প্ল্যান। টাকা যেটুকু জমাতে পেরেছি এবং যেটুকু এখান থেকে নিয়ে যাব, সবটুকু ফিক্স করে ব্যাংকে রেখে সামান্য কিছু মাসিক সুদ হবে, আর চাকরির পেছনে ছুটব না, ঢের হয়েছে এই জীবনে খাটাখাটনি, মন দিয়ে সংসার করব, কতটুকুই বা খরচ আমাদের? আমার স্বামীর রোজগার, আমার টাকার সুদ মিলিয়ে চলে যাবে ভালই। জীবনে শান্তি খুব জরুরি। ডাল ভাত খেয়েও সুখে থাকা যায়। এই কথাটা ক্লিশে হয়ে গেলেও আমরা মন থেকে কজন মানি? লোভ  আমাদের এ কথাটা মানতে দেয় না। মুখে এরকম বলি বটে, কিন্তু মনে মনে তো আরও চাই আরও আরও আরও চাইয়ের আকাঙ্খা। 
    তবে আমি পারব। 
    মিস্টার ভটচাজও তাঁর জীবনের নানান কথা বলছিলেন। আত্মীয় স্বজন দায়িত্ব স্নেহ ভালোবাসা বন্ধু বান্ধব থেকে শুরু করে জীবনের খাতা থেকে ছোট ছোট করে কিছু সারাংশ বলে যাচ্ছিলেন। উনি বারবার বলছিলেন এদেশে একবার এলে কেও ফেরে না, অন্ততঃ আমার কেসটা অদ্ভূত। তবে আমি ফিরে যাচ্ছি স্বামী সন্তানের কাছে, টান আমার দেশে ফিরবার দিকেই থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। সত্যিই তো, এখানে কী আছে আমার? থাকার মধ্যে ছিল একটা চাকরি, যেটার ভরসায় স্বপ্নের প্রাসাদ তৈরি করে ফেলেছিলাম। একটা ঝাঁকুনিতে স্বপ্ন ছুটে গিয়ে নিমেষে চুরমার হয়ে গেছে স্বপ্নের প্রাসাদ, এ আমি বুঝতে পেরেছি।
    বড্ড লোভ তোর, না রে?  কেবল উচ্চাকাঙ্খা, কেবল ভালো ভালো জিনিসের স্বপ্ন! দেখ এবার দেশে ফিরে, কত ধানে কত চাল।
    আড্ডা শেষ হতে হতে মধ্য রাত। পয়লা মে পড়ে গেছে। এখন আর ট্রাম চলবে না। ভদ্রলোক তবে ফিরবেন কেমন করে? উনি তো গাড়ি আনেন নি আজ।
    ট্যাক্সি ডাকা হলো ফোন করে। সাতটা সাত বা সাতটা চার ডায়াল করলেই জুরিখের ট্যাক্সি চলে আসে। এলোও অবিলম্বে।
    যাবার আগে উনি আমায় নিমন্ত্রণ করে গেলেন ফেয়ারওয়েল ডিনারের জন্য, আটুই মে।
    মন্দ নয়। শেষ কটা দিন আনন্দ করব না তো কি ঘরে বসে কাঁদব নাকি?
     
  • যোষিতা | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:৫৫742156
  • জঁ-ক্লদ নামের একজন লোক আমাকে চাকরির ইন্টারভিউয়ে নিয়ে যাবার জন্য জ্বালিয়ে মারছে। লোকটার খটোমটো একটা পদবী, তাই ওকে সংক্ষেপে সকলে জেডি বলে ডাকে। কী কুক্ষণে এই জেডির এজেন্সীতে অ্যাপ্লাই করেছিলাম মনে নেই, লোকটা প্রায় রোদই ফোন করে, আর নানান কোম্পানীতে ইন্টারভিউ দেবার জন্য পেড়াপিড়ি করে। কখনও রোলেক্স, কখন নেসলে, কখনও জিভদঁ, কখনও ফিলিপ মরিস, সবকটাই ফরাসীভাষী সুইটজারল্যান্ডে। কোনওটা কান্টন ভ, কোনওটা কান্টন জনেভ ( মানে বাংলায় জেনিভা)। অতদূরে যাবার ইচ্ছে আমার আছে কি নেই, তা প্রশ্নাতীত, লোকটাকে যত বলি যে আমি ফিরে যাচ্ছি, ও লোক নাছোড়বান্দা।
    আর কদিন পরে অবশ্য ও আমাকে ফোনেও পাবে না, ফোনের কানেকশন অফিসের, চাকরির মেয়াদ ফুরোলে কানেকশন থাকবে না। আমি চাইলে এই নম্বরটা নিজের জন্য রেখে দিতে পারতাম, তবে আমার শখ মিটে গেছে মোবাইল ফোনের।
    সেদিন এয়ারইন্ডিয়া থেকে ফোন করে তাগাদা দিচ্ছে টিকিট কিনে নেবার জন্য। যত বলি সাতটা দিন সবুর করো, কেবল কিট কিট কিট কিট করে, কিনে নাও কিনে নাও এখনই।
    জেডি ফোন করে বলছে, কালকে তোমার দেনিভায় ইন্টারভিউ, কী একটা কনসাল্টিং কোম্পানীতে।
    আমি দুম করে বলে দিই, টিকিটের দাম দিলে যাবো ইন্টারভিউ দিতে।
    জেডি লাফ দিয়ে ওঠে প্রায়। রাজি।
    আমি ভাবি, মন্দ কী? মাগনায় জেনিভাটা ঘুরে আসি কাল।
    তবে আজ যেতেই হবে প্রভিডেন্ট ফান্ড তুলে নেবার জন্য আবেদন করতে। যে কটা টাকাই হোক, দেশে ফিরে ঐ টাকাই অনেক আমার কাছে।
    আমি প্রভিডেন্ট ফান্ড যে কোম্পানীতে রেখেছে আমার অফিস, সেই ঠিকানায় তড়িঘড়ি পৌঁছতে চেষ্টা করি।
    প্রথমে ট্রাম, তারপর আবার ট্রাম বদল করে জুরিখ মেইন স্টেশনের প্রায় গা ঘেঁষে সেই অফিস। 
    ওখানকার ক্লার্কটি অতীব মিষ্টভাষী ভদ্রলোক। সমস্ত হিসেব আমায় বুঝিয়ে বলেন। গোটা দুয়েক ফর্ম দিয়ে দেন ফিলাপ করবার জন্য। দুটো জরুরি ডকুমেন্ট লাগবে। এক, হেলথ ইনশিওরেন্স আমার কাছে কোনও টাকাপয়সা পায় না, দুই আমার এদেশের রেজিস্ট্রেশন ক্যানসেল করবার কনফারমেশন। হেলথ ইনশিওরেন্সের কাগজটা পেতে দুটো দিন লাগতে পারে, আর রেজিস্ট্রেশন ক্যানসেল করার কাজটা আজই হয়ে যাবে। বেশি দূর নয় এখান থেকে ষ্টাডহাউস, শেরী ওয়াং এর সঙ্গে কমাস আগেই গেছি ঐ বাড়িতে। ঐ রাস্তা আমার চেনা।
  • যোষিতা | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:২৫742157
  • ষ্টাডহাউসটা লিমাট নদীর ধারে, আরেকটু দক্ষিণে গেলেই জুরিখ লেক। এই লেকে মিশে রয়েছে লিমাটের জল। একটু উত্তরে আবার লিমাটের সঙ্গে সীল নদীর সংযোগের স্থান। জুরিখে এই দুটোই মোটে নদী, আর দীর্ঘ লেক, সেই লেক কান্টন জুরিখ পেরিয়ে দক্ষিণে বিস্তৃত। 
    আমি গটগটিয়ে ষ্টাডহাউসে পৌঁছে গেলাম।
    এই সেই বাড়ি।
     
    ভেতরে ঢুকে দেখি বিলকুল ফাঁকা। 
    এই নীচের ছবিটায় যেমন।
     
     
    আমার দরকার গ্রাউন ফ্লোরের একটা কাউন্টারে। সেখানেও জন মনিষ্যি নাই।
    এই ছবিতে যেমন দেখা যাচ্ছে।
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন