এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ডাউন মেমোরি লেন - অন্তিম পর্ব

    Rajat Das লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ নভেম্বর ২০২৩ | ১৫৪ বার পঠিত
  • একটা গান লিখো আমার জন্য
    নাহয় আমি তোমার কাছে
    ছিলেম অতি নগণ্য... 

    কিংবা

    ধন্য আমি ধন্য যে, পাগল তোমার জন্য যে...

    এইরকম মন মাতাল করা গান যদি একবার কানে যায়। তাহলেই বুঝবে সন্ধ্যে পৌনে ছয়টা বেজে গেছে। এটাই হুকুম ছিল, বাড়ি ফেরার। তখন প্রায় সব বাড়িতেই বড় বা মেজো রেডিও থাকত। সেই রেডিওই ছিল পারিবারিক বিনোদনের একমাত্র প্রাণভোমরা। ভোর থেকে মানুষের জীবনে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিল আকাশবাণী অর্থাৎ সরকারি রেডিওর নানান অনুষ্ঠান। সেইসব অনুষ্ঠানের মধ্যে সন্ধ্যে পৌনে ছয়টায় বসত অনুরোধের আসর। সেই আধঘন্টার অনুষ্ঠানের চোটে মা কাকিমা জেঠিমা কিংবা কাকু জেঠুদের বিভোর হয়ে যেতে দেখেছি। হেমন্ত, মান্না, কিশোর, শ্যামল, দ্বিজেন, সন্ধ্যা, আরতি, প্রতিমা, উৎপলা, লতা, আশারা পাড়াময় দাপাদাপি করতেন। আকাশ বাতাস হয়ে যেত অন্যরকম। ওই অনুরোধের আসরের গানই ছিল আমাদের খেলা ছেড়ে বাড়ি আসার সময়ের ঘণ্টা। পাড়াময় রেডিও। তাই কোনো না কোনো রেডিও থেকে আমাদের কানে অনুরোধের আসরের গান যাবেই। তাই বিনাবাক্য ব্যয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসে উদ্ধার করা হোক। তারপরই বাড়ি ঢুকে হাতপা ধুয়ে টিফিন খেয়ে পড়তে বসা। পড়া চলত রাত দশটা বা সাড়ে দশটা অবধি। একান্নবর্তী বাড়িতে এই পড়তে বসা নিয়ে শরৎ চাটুজ্যের শ্রীকান্ত উপন্যাসের মেজদা পর্বও বিলক্ষণ ঘটত বৈকি। 

    গ্রীষ্মের দুপুর। স্কুলে ছুটি পড়ে গেছে। সেই ছুটিতে গাছগাছালিতে ভরা বাড়ির বাইরেটার অমোঘ টান। বাড়ির বড়রা যখন ভাতঘুম দেওয়ার তালে। আমরা ফাঁকফোকর খুঁজতাম বাইরে বেরিয়ে কাঁচা আম কিংবা কুল পেড়ে খাওয়ার। মনে পড়ে, জোর করে ঘরের জানলা দরজা বন্ধ করে মেঝেতে কিংবা বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার মায়েদের অপচেষ্টা। অন্ধকার ঘর। মাথার ওপরে ঘড়ঘড় করে সিলিং ফ্যান ঘুরছে। তারই মধ্যে শুনতে পেতাম হ্যামলিনের বাঁশির মত ডাক, "আ ই স্ ক্রিম!" বাড়ির বাইরে দুচাকাওলা বাক্স গাড়ি নিয়ে আইস্ক্রিম বিক্রেতা হাজির। খুব বেশি দাম ছিল না। সস্তার বরফ আইস্ক্রিম। মুখে রং লেগে লাল হয়ে যেত। তবুও সেই অরেঞ্জ বা নারকেল আইস্ক্রিমের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। বাবামায়েরা সেইসব রাস্তার আইস্ক্রিম বাচ্চাদের খাওয়া বন্ধ করার জন্য এক ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়ে যেতেন। বলতেন, নর্দমার জল দিয়ে নাকি গাড়ির আইস্ক্রিম তৈরি হয়। বলাই বাহুল্য যে, সেই ভয়ঙ্কর ভয় দেখানো কথাবার্তা আইস্ক্রিম খাওয়ায় বাধ সাধতে পারত না।

    আমাদের সময়টায় বাবাগুলো খুব গরীব ছিল। দামী দামী খেলনা, চকলেট ইত্যাদি পাওয়ার কথা ভাবতেও পারতাম না। সুপারি গাছের পাতার পিছনের ছালের ওপর একজন বসে পড়তাম। আর একজন বা দুজন লম্বা পাতার ঝাড়ি ধরে টানত। পাথুরে মাটির রাস্তার ওপর দিয়ে সুপারি পাতা চড়ে আমরা পৌঁছে যেতাম তেপান্তরের মাঠ। রূপকথার দেশে। ফুটবল খেলতাম কাগজের বল দিয়ে। একসাথে অনেকটা কাগজ দলা পাকিয়ে গোল করে প্লাস্টিক প্যাকেটে ভরে বল বানানো হতো। সত্যিকারের ফুটবল পেয়েছিলাম অনেক পরে।
    এবার পুজোর কথা বলে এই স্মৃতিচারণ শেষ করব। আমাদের ছোটবেলায় পাড়ায় পাড়ায় এতগুলো দূর্গা পুজো তখনও শুরু হয়নি। বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটি বাড়ির পুজোই ছিল একমাত্র পুজো। একমাস আগে কাঠামো বাঁধা থেকে শুরু হত আমাদের দেবী দর্শন। প্রতিদিন স্কুল যাওয়া আসার পথে একবার করে ঢুঁ মারবোই। বিশ্বকর্মা পুজোর ঘুড়ি ওড়ানো ছিল পুজোর আগের মহোৎসব। আগের দিন রাত জেগে ল্যাম্প পোস্ট ঘুরে ঘুরে মাঞ্জা দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলত। আর আসল যুদ্ধ হত পরদিন সকাল থেকে। ছাদে ছাদে। মাঠে ময়দানে থাকত লাটাই। আর রং বেরংয়ের পেট কাটা চাঁদিয়াল কিংবা দোতেরা আকাশে। ভোকাট্টা ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠত ছাদ থেকে মাঠ। এরপরই এক ভোরবেলা এসে পড়ত মহালয়া। রেডিওর মহিষাসুর মর্দিনী, সেই অবিস্মরণীয় অনুষ্ঠান। যা আজও একইভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে। সেদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে রেডিওর দিকে তাকিয়ে বসে পড়তাম। আর ঘুমে ঢুলতাম। দেখতে দেখতে পুজো এসে পড়ত। সাকুল্যে দুই কি তিনটি জামা প্যান্ট পরে চারটে দিন কাটিয়ে দিতাম। তখন পকেটে পাঁচ কি দশ টাকার নোট থাকলে বড্ড বেশি ভারী মনে হত। পাড়ার আশপাশের মোট চার কি পাঁচটি ঠাকুর আট দশবার করে দেখে আসতাম। মণ্ডপের বাহার ছিল না। প্রতিমাতে ছিলনা কোনো কেরামতি। তবুও থাকত এক অমোঘ আকর্ষণ। যার টানে আমাদের ছোটবেলা বারে বারে দৌড়ে যেত দেবী দর্শনে। সকলে ভাল থাকবেন। দুগ্গা দুগ্গা।

    __________
    ©রজত দাস 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন