এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পুজোর ডায়রি - ষষ্ঠী

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ অক্টোবর ২০২৩ | ২৪৩ বার পঠিত
  • পুজো আমি একদম মিস করিনা। পুজো একটা বিভীষিকা। তার একটা কারণ নারীঘটিত। পুজো এলেই আমাকে মেয়েদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে হয়। তাতে আমার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের একটু ভূমিকা থাকলেও মূল দোষটা অবশ্যই মেয়েদের। প্রথমত, পুজোয় মেয়েরা সাজে। সাজাটা বড় কথা নয়, এমন সব জিনিসপত্তর পরে, যা অকল্পনীয়। হয়তো একটা শাড়ি পরল, যেটা দেখতে গামছার মতো। কিংবা একটা অদ্ভুত-দর্শন বস্তু, যা দুহাজার বছর আগে ক্লিওপেট্রা পরতেন। একটা পাজামার নামই হল হারেম প্যান্ট। তা, এইসব পরে মিউজিয়ামে ঢুকে থাকলে কোনো সমস্যা ছিলনা, কিন্তু সেগুলো পরে তারা রাস্তায় বেরোয়। এবং মধ্যরাত্রে রাস্তায় বেরোয়। সেই রাস্তায় আবার কত-কিলোওয়াটের-কে-জানে হ্যালোজেন কিংবা নিয়ন আলো জ্বলে। আলোটা অবশ্য মেয়েদের দোষ না, কিন্তু সব মিলিয়ে যে ব্যাপারটা হয়, সেটা খুব বিপজ্জনক। আপনি রাত বারোটায় বেরোলে হয়তো দেখবেন, হলুদ আলোর নিচে মহারানী ক্লিওপেট্রা রকে বসে থাকার ভঙ্গীতে কোনো এক মণ্ডপের চেয়ারে বসে ঠ্যাঙ দোলাচ্ছেন। কিংবা স্বয়ং নূরজাহান রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছেন। ডাইনে কাদম্বরী দেবী আর বাঁ দিকে মেরিলিন মনরো।

    এর কোনোটাতেই কোনো সমস্যা ছিলনা, যদি তাঁরা সব্বাই অচেনা হতেন। কিন্তু পৃথিবীতে আধচেনা, মুখচেনা, পাড়াতুতো, কলেজতুতো মেয়ে প্রচুর, তারাও ওই দঙ্গলে ঢুকে থাকেন। কোন স্বরস্বতী আসলে ও-পাড়ার বুঁচকি, এবং কোন মেহেরুন্নিসা আসলে একদা কলেজের সহপাঠী ছিলেন, চেনার কোনো উপায় নেই। তার উপর মধ্যরাত এবং মায়াবী আলো। এঁরা এসে পরিচয় দিয়ে গেলে কোনো সমস্যা ছিলনা। কিন্তু তা তাঁরা করেননা। মুখোমুখি বা পাশ থেকে দেখা হলে, একবার কেউ একটু হাত নাড়লেন, কেউ তাও না, একটু ফ্যাকাশে মতো হেসে দিলেন। বাকিদের ব্যাপার আমি জানিনা, কিন্তু আমি কস্মিনকালেও চিনতে পারিনা, ইনিই হলেন সুজাতা সান্যাল, কিংবা এই সেই রঞ্জাবতী চাকি চক্রবর্তী। এছাড়াও আমার অগাধ আত্মবিশ্বাস, যে, কোনো অচেনা সুন্দরী মেয়ে কখনও আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে পারেনা। ফলে যা হবার তাইই হয়। আমি আধচেনা, সিকিচেনা, কাউকেই আর চিনতে পারিনা, এবং হাত নাড়লে ভাবি অন্য কাউকে নাড়ছে। ফলে সটান মুখ ঘুরিয়ে উল্টোদিকে চলে যাই।

    এবার এইটা স্পোর্টিংলি নিলেই হয়। আমি যদি ধরুন আরবী আলখাল্লা পরে চুরুট খেতে খেতে রাত্তিরবেলা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই, কুকুরে তাড়া করবে সেই ঝুঁকি নিয়েই, তাহলে আমি কক্ষনো প্রত্যাশা করবনা, সবাই আমাকে চিনে ফেলবে। কিন্তু মেয়েদের দাবী সেটাই। এবং যদি আপনি চিনতে না পারেন, তাহলে আপনার দোষ। আপনি খারাপ লোক। অহঙ্কারী, কুচুটে, দুর্ব্যবহারকারী, পিতৃতন্ত্রের দালাল, ইত্যাদি প্রভৃতি। কেউ বুঝবেই না, যে, না চিনে আমার কোনো লাভ নেই। বরং ক্ষতি প্রচুর। এইভাবে সারা জীবনে আমি কত যে সম্ভাব্য বান্ধবী হাতছাড়া করেছি, কত সুন্দরী মহিলা যে মুখদর্শন করবেননা ঠিক করেছেন, তার গোণা-গুনতি নেই। এই করে আমার কোনো লাভ হয়েছে? হয়নি। কিন্তু ওই, ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলার উপায় নেই, আমিই শহীদ এবং আমিই বাজে লোক, ক্লাসিক ভিক্টিম-ব্লেমিং আর কাকে বলে। 

    তো যাই হোক, এই হল পুজোকে বিভীষিকা মনে হবার কারণ। যাঁরা মুখ দেখা বন্ধ করেছেন, তাঁরা যদি এক-আধজন পড়ে ক্ষমা-ঘেন্না করে দেন, তো ভালো। কিন্তু চান্স কম। সেই জন্যই পুজো এলে আমি আতঙ্কে থাকি। কলকাতায় থাকলেও বাড়ি থেকে বেরোইনা। তার অবশ্য আরও কারণ আছে, কিন্তু একদিনে এইটুকুই। ষষ্ঠী সর্টেড।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন