এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ঘোড়ার সঙ্গে ঔরঙ্গজেবের এক কাল্পনিক কথোপকথন

    upal mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৩৩৪ বার পঠিত
  • ষোলোশো ছত্তিরিশের প্ৰথম দিক দ্বিতীয় বুন্দেলা বিদ্রোহ দমন অভিযানে সফল  নেতৃত্ব  দেওয়ার পর বাবার সঙ্গে ওরচা থেকে  দাক্ষিণাত্যে আসছেন শাহাজাদা ঔরঙ্গজেব। পথে কত কেল্লা, পাহাড়ে ঘেরা সব আঁকাবাঁকা দুর্গম রাস্তা, অপূর্ব লেক, শ্বাপদ সংকুল অরণ্য পড়েছিল। একবার আগে কখনো দেখা যায়নি এমন আশ্চর্য এক জায়গায় বিশাল লেকের ধারে শাহী তাঁবুর পাল পড়েছে। গান বাজনা শুরু হয়েছে দুপুরের পর থেকে। খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে স্থানীয় রাজা রাজড়ারা। পাশেই  ছোট পাহাড়ি, অনামী এক কেল্লা। সে দেখে শাহজাদার প্রাণে পুলক জেগেচে। এমনিতে বিশাল শাহী বহর থেকে মাঝে মাঝে উধাও হয়ে যাওয়া ছোট বয়েস থেকে শাহজাদার নেশা। ঘোড়ায় চড়ে  কয়েক জন মধ্য এশীয় তুর্কি দেহরক্ষী নিয়ে, ঘোড়ার পিঠে ঔরঙ্গজেব  লেকের পাড় ধরে ঘোরাঘুরি করে ওই পাহাড়ের ধারে চলে যাচ্ছেন, ধরে ফেললেন প্রচণ্ড চড়াই - কেল্লার আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ। অনেকটা দলছুট হয়ে কয়েকজন দেহরক্ষী নিয়ে এগুচ্ছেন শাহাজাদা আর পড়ছেন বেশ ঝামেলায়। বাঁক ফিরতেই ঝাঁকে ঝাঁকে তীর ছুটে এল অতর্কিতে। ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে কোন রকমে পালিয়ে আসার পর, এক বড় ফৌজ সে পথে পাঠানো হলে জানা যাচ্ছে -কেল্লার মোঘল ফৌজদারের জওয়ানরা হঠাৎ একটা ছোট  ঘোড়সওয়ার  টুকরাকে দেখে ভেবেছিল- বাগি বুন্দেলারাই ছন্নছাড়া হয়ে ঘুরতে ঘুরতে এসে পড়েছে। ফৌজদার মাফ চাইলে, শাহাজাদা ঔরঙ্গজেব অন্যমনস্ক হয়ে হঠাৎ ঘোড়ার সঙ্গে কথোপকথন শুরু করে দেন এমন ভাষায়, যা কেবল ঘোড়ারাই বুঝতে পেরেছিল ।
    ------  কী করা যায় ?
    ------ কী আবার করবেন হুজুর।
    ------ তবে ?
    ------ পারলে কেল্লাটা একবার ঘুরে আসি চলুন হুজুর।
    ------ অরে তাই তো চাইছিলাম ! মাঝ থেকে এই বেটা ফৌজদার…..
    ------ লোকটা বুড়ো হয়ে গেছে হুজুর।
    ------ বুড়ো ?
    ----- দেখছেন না সেলাম ঠুকতে গিয়ে হাত কাঁপছে হুজুর।
    ------ এতসব দেখলে কখন !
    ------ আমরা সবই দেখি হুজুর।
    ----- তাই ?
    ----- হ্যাঁ হুজুর।  তবে এ লোকটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে এ খুব যত্ন করে।
    ----- কাকে যত্ন করে ?
    ----- ওর যত ঘোড়া আছে হুজুর।  সবাইকে।
    ----- তা হলে ছেড়েই দিই ?
    ----- হ্যাঁ হুজুর।
    ----- তবে কেল্লার অনেক ওপর থেকে শাহী তাঁবুগুলো কীরকম লাগে একবার দেখে আসি চল।
    ----- জো  হুকুম।
    লোকজন দেখল শাহাজাদা ঔরঙ্গজেব তার দুধর্ষ দেহরক্ষী বাহিনী নিয়ে, ফৌজদারের সঙ্গে খুবই ভালো ভাবে কথা বলতে বলতে, আবার ওই দুর্গম কেল্লার পথেই চলেছেন। সবাই মনে করে এই না হলে বাহাদুর, তীর খেতে খেতে বেঁচে ফিরেও আবার দিব্বি চলেছে! কোন ভয়ডর নেই বা প্রাণের মায়া। কেমন বশ মানিয়ে ফেলতে পারে। তারা বোঝে না আসলে ঘোড়ার কথাই শুনে চলছেন শাহাজাদা, এমন ঘোড়া যে ছুটতে ভালোবাসে পাহাড়ি চড়াই উৎরাইয়ে। সেটাই আসল কিস্সা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:2c74:f455:e08c:bec0 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৫৯523683
  • এরকম আরও আছে, যেমন গৌমাতার সঙ্গে প্রধানসেবকের এক আন্তরিক কথোপকথন। বাল নরেন্দ্রর কীর্তিগাথায় পাওয়া যায়। 
  • &/ | 107.77.234.111 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:৫২523692
  • সলোমনও কথা কইতেন ঘোড়ার সঙ্গে ।ঘোড়ার নাম ছিল শামস (আবুল বাশার এর 'রাজাবলি ' তে )
  • xor | 182.69.178.222 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:৫৩523693
  • 'ঘোড়ার সঙ্গে ঘোরাঘুরি'
  • :|: | 174.251.162.60 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:০১523695
  • গৌমাতার সঙ্গে প্রধান সেবকের কথোপকথন বিষয়ক লেখাটি আঠারোটা ৫৯-কে দেবার একান্ত অনুরোধ রইলো। 
  • upal mukhopadhyay | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০১:৫৪523697
  • ঔরঙ্গজেব জীবনের অধিকাংশ সময় ঘোড়ার পিঠে কাটিয়েছিলেন। উদহারণ দিচ্ছি, ওনাকে কান্দাহার অভিযানে যেতে হয় দুবার। আগ্রায় ওনার বাড়ি থেকে কান্দাহারের দূরত্ব গুগল ম্যাপে পনেরোশো তিপান্ন কিমি। জোস্ গম্মনসের মতে শাহী ফৌজের এভারেজ গতি ছিল দিনে আট কিমি। তার মানে একবার কান্দাহার যেতে ওনার সময় লেগেছিল কমবেশি তিন মাসের বেশি। একবার যাতায়াতেই ছ মাস। দুবারে এক বছর। এ ছাড়াও উনি বাপের  বাবরের জন্মভূমি অধিকারের খেয়ালে মধ্য এশিয়ার বা বালখ, বাদাখশানেও যান। বালখের দূরত্ব উনিশশো কিমি আর বাদাখশানের দূরত্ব আঠেরোশো কিমি - সেখানে যাতায়াতে কতদিন লেগেছিল হিসেবে করুন। মধ্যে এশিয়ার কথা আর ধরছি না। শেষের দিকে বৃদ্ধ বয়সে পালকিতে চড়ে দাক্ষিণাত্যের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন ছবি আছে। সেখানে দুটো সেনা শিবিরে ওনার রাজধানী ছিল। গালগালার শিবিরটা গোলকুণ্ডার কাছে। সেখানের যা বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে দেখা যাচ্ছে শিবিরটায় আড়াইশো বাজার ছিল। সেখানে পাঁচ লক্ষ লোক থাকত পারত, চলমান শহর। এসব আমি খেরোর খাতায় লিখেছি - পড়তে পারেন। সব তথ্য সূত্র দেয়া আছে, গুলগাপ্পা নয়।
  • upal mukhopadhyay | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০২:০০523698
  • ঔরঙ্গজেবের বুড়ো বয়েসের কঠিন দাক্ষিণাত্য অভিযানে নিয়া খিস্তিবাজ ব্যঙ্গ কবি জাতেল্লি লিখলেন 
    কী কারবার ! মহান আওরং শা পীর- ওয়ালি 
    যাঁর জন্য দাক্ষিণাত্যে যত খলবলি 
    এ বয়েসে যখন মুখের চামড়া গেছে ঝুলে 
    নাছোড় তিনি, দাক্ষিণাত্যে যত ক্যাঁচালের মূলে। 
  • :|: | 174.251.162.60 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৩:১৮523699
  • একটা চুয়ান্নর "বাপের বাবরের জন্মভূমি"-টা আবার কী? 
  • upal mukhopadhyay | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:১৫523704
  • শাজাহানের জন্ম বছর ছিলো পনেরোশো বিরানব্বই। সেটা আবার ইসলামী সহস্রাব্দের শুরুর বছর। ওই জন্য তিনি নিজেকে পবিত্র গ্রহ যোগের দ্বিতীয় সম্রাট - সাহিব-কিরান ই সানি ঘোষণা করেন। প্রথম সম্রাট ছিলেন তাঁর পুর্বপুরুষ তৈমুর। তাই শাজাহানের উচ্চাভিলাষ ছিল বাবরের জন্মভূমির তুরানি রাজাকে পটকে দিয়া ৰাজ্য দখলে। যেই পূরো উদ্ভত পরিকল্পনার দায়িত্বে ছিলেন শাহাজাদা ঔরঙ্গজেব। ঘোড়ার পিঠে হাজার হাজার মাইল গিয়ে ল্যাজেগোবরে হয়ে ফিরে আসাটাই ঔরঙ্গজেবের মতো জেনেরাল ছিলেন বলেই সম্ভব হয়েছিল। এটাই বলেছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন