এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হংসেশ্বরী - হে পূর্ণ তব চরণের কাছে 

    Utpal Debnath লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৩ আগস্ট ২০২৩ | ৩৮৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • হংসেশ্বরী পড়লাম। এক বসায় বলা চলে। বহুদিন পরে কোনও একটা লেখা আমায় এমন মশগুল রেখেছে। সেই থেকে একটা ঘোরের মধ্যে আছি। নারায়ণ সান্যাল লিখেছেন। কী আছে এই আখ্যানে? -- ভালোবাসা, উপেক্ষা আর অপেক্ষা। বস্তুত এরাই নিয়ন্ত্রণ করছে নৃসিংহদেব, মহামায়া, শঙ্করী আর পুরোহিত শঙ্করদেবের জীবন এবং যাবতীয় বিস্তার। 
     
    সাতাশ বছরের সফল দাম্পত্যের সীমারেখা শেষে দুরারোগ্য রোগশয্যায় নিঃসন্তান মহামায়া নাকি খানিক মহান হতে চেয়েছিল, স্বামী নৃসিংহদেবকে সে নিখাদ ভালোবাসে। স্বামীর দ্বিতীয়া স্ত্রী, সেই নির্বাচন করেছে। ত্রয়োদশবর্ষীয়া শঙ্করী। অনাথা, একদিন নৃসিংহদেবই ভীষণা পরিস্থিতি থেকে বাঁচিয়ে মূর্ছাহত শঙ্করীকে মহামায়ার হাতে তুলে দিয়েছিল। বছর ছয়ের শঙ্করীকে মহামায়া কন্যা স্নেহে মানুষ করেছে। রোগশয্যায় থেকে তাকেই করলেন বংশবাটীর (অধুনা বাঁশবেড়িয়া) কনিষ্ঠা রাজমহিষী, তাঁর সতীন।
     
    স্বামীর সঙ্গে শঙ্করীর বয়সের পার্থক্য ছিল অনেক। তাহলে কী শঙ্করী নৃসিংহদেবকে ভালোবেসে উঠতে পারেনি? অবশ্যই বেসেছিল। অপরদিকে তাঁর প্রতিও নৃসিংহদেবের 'মুগ্ধ চোখের তারায় তাঁর অন্তরের কামনা বাসনার প্রতিবিম্ব'কে দেখেছিল। কিন্তু কাঙ্খিত বাসররাতে তাদের সম্পর্কে কন্দর্পের মহামৃত্যুদৃশ্যকেও অনুভব করেছে সে। দেখেছে অজানা কারনে নৃসিংহদেব তাঁর থেকে পালিয়ে থেকেছে। ব্যর্থ দাম্পত্যে তিলে তিলে শেষ হয়েছে ওরা। একরকম বিফল যৌনতা ও মাতৃত্বের টানেই কুলপুরোহিত কাব্যতীর্থ শঙ্করদেবের কাছ থেকে শুনতে চেয়েছে কুমারসম্ভবম্। অধীর প্রতীক্ষায় থেকেছে কুমার কবে আসবেন উমার গর্ভে। কিন্তু অষ্টম সর্গে হর-পার্বতীর দৈহিক মিলনের নিরাবরণ বর্ণনা থাকায়, সপ্তম সর্গ শেষ করেই পাঠ থামিয়ে দেন ইতস্তত শঙ্করদেব। শঙ্করী বোঝে তার কোল জুড়ে সোনার চাঁদ কুমার আসবে না কোনোদিন। উপেক্ষাই তাঁর ভবিতব্য। অথচ শঙ্করদেব ও শঙ্করী জানে উভয়েই উভয়ের প্রতি অনুরক্ত। তাই সঙ্গত কারণেই শঙ্করদেবও সবসময় শঙ্করীকে এড়িয়ে থাকতে চেয়েছে, অপরদিকে শঙ্করীও হৃদয়ের পথটি অবরুদ্ধ রেখে শঙ্করদেবের মন্ত্র শিষ্যা হতে চেয়েছে। যে মেয়ে সারাজীবন উপেক্ষা পেয়েছে, অবহেলা যার জীবনের একমাত্র সত্য -- তাঁর এই চাওয়াটিও পূর্ণ হবে না সে তো নতুন কিছু নয়। 
     
    দাম্পত্য জীবন ব্যর্থ, ভালোবাসা ব্যর্থ, মাতৃত্ব ব্যর্থ, সহমরণে সতী হতে চাওয়া ব্যর্থ -- এতবিদ ব্যর্থতার মধ্যে তবে শঙ্করীর জীবনে কী কিছু ছিল না? ছিল তো। একটি জিনিস ধ্রুবতারার মতো তাঁর জীবনে সত্য ছিল। সে হল, অপেক্ষা। নৃসিংহদেবের জন্য অপেক্ষা শেষ হয়েছিল মৃত্যুতে। যে গুরুপদে শঙ্করী প্রাণ সপেছিল, সেই শঙ্করদেবের জন্য অপেক্ষা শেষ হয়েছে তাঁর নিজের মৃত্যু দিনে। গঙ্গাতীরে শঙ্করীর শীর্ণ কন্ঠ আলিঙ্গন করে শঙ্করদেব নিভৃত কুজনে অবশেষে দিয়েছিলেন ব্রহ্মজ্ঞানের বীজমন্ত্র। পারানির কড়ি! মৃত্যুপথযাত্রিণীর একটি অপেক্ষা তো তবে পূর্ণ হল, তাই বা কম কিসের। এ যেন --
     
    দিবসশেষে ডেকে নিয়ো চরণে–
       তুমি ছাড়া আর কী আছে আমার মৃত্যু-আঁধার ভব।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kaktarua | 192.82.150.104 | ২৪ আগস্ট ২০২৩ ২১:৩০522900
  • অনেকদিন আগে পড়েছি। শুধু ভালো লাগার রেশ আজও রয়ে গেছে। অপূর্ব লেখা। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন