এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বাকিসব  মোচ্ছব

  • বয়েস একটা সংখ্যা বই তো নয়! (৩)

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    বাকিসব | মোচ্ছব | ১৪ আগস্ট ২০২৩ | ৩৮৩ বার পঠিত
  • বয়েস একটা সংখ্যা বই তো নয়! (৩)
    আপনাদের গতবারই  বলেছিলাম --বুড়ো বয়সে ছেলেবৌকে খুশি করে টিভি দেখার ফর্মূলা। আশা করি আপনারা তাতে হাতে হাতে ফল পেয়েছেন। যাঁদের কাজে লেগেছে তারা এই সফল ফর্মূলার কথা সবাইকে বলুন, দিকে দিকে ছড়িয়ে দিন। যাঁদের কাজে লাগেনি তারা পাবলিকে আমার ফর্মূলা নিয়ে কুচ্ছো না গেয়ে শুধু আমার কানে কানে বলুন।
    এবার দুনম্বর ফর্মূলা। আপনাকে একসপ্তাহ পরে বলতে হবে--বৌমা, তুমি যখন ব্যস্ত থাক, মানে টুকুনকে স্কুলে ছাড়তে গেলে, আনতে গেলে, কি পার্লারে গেলে--তখন যদি আমি বাংলা বা ইংরেজি খবরের চ্যানেলগুলো বা ফুটবল ক্রিকেট টেনিস একটু দেখি, আপত্তি আছে? তবে তুমি আসলেই আমি রিমোট ফেরত দিয়ে দেব। আর যখন রিয়েলিটি শো হবে, যেমন মাধা-গাধা-নিসা বা ধিতাং ধিতাং বোলে-- তখন তো অন্য কিছু দেখার প্রশ্নই ওঠে না, কী বল?
     তাতে আপনার -আমার কোন মোক্ষলাভ হবে?
       হবে, হবে। আগামী দুটো রোববার ছেড়ে তিননম্বর রোববারে এই পার্কে এসে আমাকে রিপোর্ট করবেন। আরে আমার ওপর ভরসা রাখুন। বিশ্বাসে মিলয়ে কৃষ্ণ। হারিয়ে যাওয়া টিভি রিমোট আপনার হাতে ফিরে এল বলে।
      ইয়েস, এইভাবে চললে লাইফ একদম হলিউড জলিগুড হয়ে যাবে। গ্যারান্টি দিচ্ছি।
    গতকাল একজন আমায় ফোন করে নিজের সমস্যার কথা জানালেন।
    ‘ আমার কোন ছেলে বা কেয়ারিং ছেলে-বৌ নেই। আসলে আমার বিয়েই হয় নি। দাদা অকালে চলে গেলেন। বৌদি আর দুটো বাচ্চার ভার আমি নিজের কাঁধে তুলে নিলাম। ওদের লেখাপড়া চাকরি, বিয়ে সব সামলাতে সামলাতে বয়স হয়ে গেছল। ধাক্কা খেলাম যখন বুঝলাম যে ওরা চাইছে কিছু টাকা নিয়ে আমি যদি বাড়িটা ছেড়ে চলে যাই। তাই করলাম, ওরা সুখী হোক। জানি দাদা ওপর থেকে আশীর্বাদ করবেন।
     ‘ এখন একটি বৃদ্ধাবাসে থাকি। মন্দ না। কিন্তু মাঝে মাঝে একঘেয়ে লাগে। সব বয়স্ক আর বুড়োর দল। সব পুরুষ। দিন গোণে কবে ওপরের ডাক আসবে। তাই বিকেলবেলা এখানে এই পার্কে চলে আসি। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের খেলা করতে দেখে আনন্দ পাই।  আসলে মনে মনে স্বপ্ন দেখি--আমার ছেলে, ছেলে বৌ, নাতি -নাতনি।
     স্বপ্ন দেখা তো বন্ধ করা উচিত নয়। কী বলেন’’?
    -- নিশ্চয়ই। নইলে ইউ আর ডেড। স্বপ্নগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় । আপনার কেস নিয়ে আলোচনা করব, তার আগে আর একটা ফোন এসেছে, একটু শুনে নিই। আচ্ছা, ওনাকে স্পীকারে রাখছি, আপনিও শুনতে পাবেন।
    --নমস্কার! আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত টিচার। আমারও একটা স্বপ্ন ছিল। সব পুড়ে ছাই।
      --না মাস্টারমশাই, আপনি বেঁচে আছেন যে! তার মানে আপনার স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয় নি। সবচেয়ে দুর্ভাগা সে যার কোন স্বপ্ন নেই। সে আসলে বেঁচে নেই। মুশকিলটা এই -- সে নিজেও জানে না যে কবে মরে গেছে।
     -- ও! সে নিজে জানে না বেঁচে আছে কিনা? অথচ আপনি জানেন! আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পড়া গেছে।
    -- ঠিক তাই; ও জানে না, কিন্তু আমি জানি ও কবে মারা গেছে।
     -- বেশ, বলে ফেলুন ও কবে মারা গেছে। কী হল মশাই, বলুন। কবে? যত্ত ঢ্যামনামি!
    - যেদিন ও স্বপ্ন দেখা ছেড়েছে।
       -- ধুত্তোর! জিগ্যেস করলাম-- কাগজ সহজে পুড়ে যায় কেন? উত্তর পেলাম-- কাগজ হল দাহ্য পদার্থ।
     আরে দাহ্য পদার্থ মানেই তো যেটা সহজে পোড়ে!  তেমনি আপনার কথা।  অমুক কবে মরেছে? যেদিন ও স্বপ্ন দেখা ছেড়েছে। এগুলো কোন উত্তর নয়। লজিকের ভাষায়--; নাঃ থাকগে।
      -- কী হল, বলুন--লজিকের ভাষায় এদের বলে--?
     - সার্কুলার রিজনিং। ফ্যালাসি। প্রশ্নটাকেই ঘুরিয়ে উত্তর বলে চালিয়ে দেওয়া- প্রমাণ নয়, প্রমাণের ভড়ং।
    -- আপনি লজিক পড়েছেন?
    -- পড়াতাম। গাঁয়ের স্কুলে। আমার পাশের গাঁয়ে।
     -- এটাই আপনার স্বপ্ন ছিল?
      -- হ্যাঁ, মানে না। আমি ফিলজফি পড়ে ভাবলাম সবার লজিক শেখা উচিত।  চাষী, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবি, আমলা, মন্ত্রী, দলগুলো--সবার।  বিশ্বাস করতাম --সবাই যদি যুক্তি দিয়ে ভাবতে শেখে তাহলে নিজেদের ভুল বা কুযুক্তিগুলো বুঝতে পারবে। খামোকা এঁড়ে তক্কো, গাজোয়ারি বন্ধ হবে। লোকে মিলেমিশে ভালভাবে থাকতে শিখবে।
     --তারপর?
      -- দিনে দিনে লজিকের ছাত্র কমতে লাগল। এটা পড়ে ছেলেপুলেদের কী লাভ হবে, কী রকম রোজগারপাতি হবে সেটা অভিভাবকদের বোঝাতে পারি নি।  একদিন স্কুল কমিটি আমাকে একমাসের আগাম মাইনে দিয়ে নোটিস ধরিয়ে দিল। ওদের দোষ নেই। কাছাকাছি দশটা গাঁয়ে কোন স্কুলে লজিক পড়ানো হয় না।
     -- তাতে আপনার স্বপ্ন দেখা থেমে গেল?
    -- এখন একটাই স্বপ্ন, ছেলে-বৌমার থেকে একটু ভাল ব্যবহার , নিদেন পক্ষে সংসারে একটু স্পেস, অর্থাৎ বলতে চাই-- আমাকে আমার মত থাকতে দাও! ইয়ে, লজিক্যালি দেখলে আমার স্টেটমেন্টেও একটা ফ্যালাসি আছে।
    আসলে বাস্তব ছবিটা ঠিক উল্টো। ছেলে-ছেলেবৌ কিছু করে নি। আমিই উল্টে ওদের দাবড়ে রেখেছি। লজিক পড়ানোর চাকরি চলে যাওয়ার পর ঘরে বাইরে অবহেলার শিকার হলাম। শেষে অংকের ট্যুইশন শুরু করলাম। ধীরে ধীরে সাফল্য এল, পয়সা হল। কিন্তু বড় বেশি হিসেবি হয়ে পড়লাম। পয়সার মহত্ব অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে বুঝেছি। কিন্তু ওটাও একটা ফ্যালাসি, রজ্জুতে সর্পভ্রম। ছেলে আর্থিক ভাবে সফল নয়। তাই ওকে লুজার ভাবি। আরে আমাকেও তো গোড়াতে সবাই তাই ভাবত।
    বাড়ি আমার, সংসার চালাতে আমার কন্ট্রিবিউশন কম নয়। তাই টিভি আমার ঘরে থাকে। আমি ঘরে না থাকলে কেউ ছুঁতে পারবে না। তবে ইদানীং নাতনিটাকে অ্যালাউ করেছি। আর ওকে এখন থেকেই বাড়িতে লজিক পড়াচ্ছি।
    -- এইসব করে আপনি আনন্দে আছেন তো? তাহলে লজিক্যালি ঠিক করছেন।                                
    -- না নেই। খালি মনে হয় কোথাও একটা ফ্যালাসি আছে। সেটা ঠিক ধরতে পারছি না। কী করি বলুন তো?
    --   এক কাজ করুন, আমার চেনা একটা ভাল বৃদ্ধাশ্রমে সীট খালি হয়েছে।  আপনি  চলে আসুন।  ছেলে ছেলেবৌকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন। ওদের এখন হাত পা ছড়িয়ে নিজের হিসেবে বাঁচতে দিন। মাঝে মাঝে গিয়ে দেখে আসবেন, তাতে শান্তি পাবেন।
     -- দেখুন। এটাও লজিক্যালি পারফেক্ট হল না। ফ্যালাসি আছে। বোধহয় আগে নিজের মন পরিষ্কার করতে হবে। নিজের জন্যে স্পেস চাইবার আগে অন্যদের জন্যে স্পেস ছাড়তে হবে। তাই আমি বাড়ি গিয়ে প্রথমে টিভিটা আমার ঘর থেকে বের করিয়ে বসবার ঘরের দেয়ালে ফিট করাবো; যে যখন ওখানে বসবে সে তার মত চ্যানেল ঘোরাবে, আমাকে জিগ্যেস করার দরকার নেই।
     আর বাড়িটা ছেলে ও ছেলেবৌয়ের নামে রেজিস্ট্রি করে দেব। রেজিস্ট্রির কাগজ আগামী মাসে ওদের বিবাহবার্ষিকীর দিন উপহার দেব। সেদিন বিরিয়ানি  হবে--খাসির মাংসের। আর আপনি সেদিন আমার বাড়িতে খেতে আসবেন।
    --সেরেছে! পরে যদি আপনাকে ওরা বের করে দেয়? বদলা নেয়?
    -- দিলে দেবে; তখন আপনি আছেন।
    --অনেক রিস্ক নিচ্ছেন কিন্তু। দিনকাল খারাপ।
    -- নিচ্ছি। প্রথম জীবনে একবার নিয়েছিলাম--এখন আবার নেব। নইলে জীবনটা বড্ড আলুনি আলুনি হয়ে যাচ্ছে মশাই । চেষ্টা করতে ক্ষতি কী? দিনকাল খারাপ হলেও সূর্য তো এখনও পূবদিকেই ওঠে। 
    --হ্যাঁ; আমাদের দাড়িদাদুও তাই বলে গেছেন।
    -- কী বলেছেন উনি?
    --- “মন্দ যদি তিন-চল্লিশ ভালোর সংখ্যা সাতান্ন”! ভালোর সংখ্যাই হরেদরে বেশি। তাই পৃথিবীটা ঘুরছে। চাঁদ তারারা হারিয়ে যাচ্ছে না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Bratin Das | ১৫ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৫৭740518
  • তুমি  কলকতায়  আসছো কবে? জমিয়ে আড্ডা  হবে।PM, পিটি দা ইত্যাদি  প্রভৃতি 
  • Ranjan Roy | ২৬ আগস্ট ২০২৩ ২০:৪২740663
  • ব্রতীন
     নভেম্বরের মাঝামাঝি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন