এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • কোনও এক বইমেলা ডায়েরি

    ঝর্না বিশ্বাস লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ৫৯২ বার পঠিত
  • (১)
    পুরনো বন্ধুদের মিলাপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল কলকাতা...খুব সুন্দর করে সেজে উঠছিল মেলা প্রাঙ্গন...গত পনেরো দিন ধরে নামী দামী স্টলেরা বিজ্ঞাপনে ভরিয়ে দিচ্ছিল সোশাল নেটওয়ার্কিংয়ের পাতা টু পাতা...আর যাদের এ বছর নতুন বই বেরোবে, তাদের জন্য এ বইমেলা খানিকটা স্পেশাল।
    কলেজ, এফবি ও ইন্সটা মিলিয়ে মোট ন-দশ জনের একটা গ্রুপ তৈরি হচ্ছিল হৈ চৈ এর জন্য। সবার একসাথে ইচ্ছেটা এবার বইমেলাতে দেখা হবে, তাই দায়িত্ব এবারও অনিকেতকে নিতে হলো।
     
    টানা চারদিনের শিডিউল। এদিকে বছর পর কলকাতা এলে আত্মীয় স্বজনের কাছে একবার যেতেই হয়। আর সে ব্যাপারটা খেয়াল রেখে ঠিক হলো, যারা বাইরে থেকে আসছে তাঁরা নিজেদের মত সময়ের কিছু বদল করতে পারে। মোটামুটি কথা, শুরুর দিন না পারলেও বাকি চারদিন এদের সবাইকে স্টলে পাওয়া যাবে। কালিপদদা এতেই খুশি। খুশি অহনা সান্যালও...
     
    অহনা এ প্রকাশনার মাথা। ওর লেখনী যেমন স্পষ্ট, তেমন কথাতেও...এফবি জুড়ে দাপিয়ে বেরাচ্ছে অহনা। শুরুতে সবার ভয় হত খুব। কিন্তু ভেতরের মানুষটা একদম আলাদা জানার পর থেকেই ও সবার কাছে অহনাদি। গ্রুপের এ নামটাও অহনারই দেওয়া...‘বজ্র’...

    কী আশ্চর্য! এমন নাম দেওয়ার পেছনে কারণ জানতে চেয়েছিল দেবারতী। এই দু’জনের বেশ ভালো মেলে...
    অহনাও সপাট জবাব দেয়,
    কথাটায় বেশ একটা ধার আছে বুঝলি...!
    এই প্রথম গম্ভীর অহনাকে হাসতে দেখল সবাই.....আয়তাকার উত্তর বাক্সগুলো তখন হলুদ হাসিতে ভরে যাচ্ছে।
     
    কালিপদদার কাছ থেকে ডিটেলস্‌ নিল অহনা, আর দায়িত্ব দিলো কে কতদূর পৌঁছলো জেনে নিও। মোবাইলে তখন পর পর মেসেজ ঢুকছে কলকাতা কলিংএর... ডেস্টিনেশন এক হলেও এক একজন এক জায়গায়...কারো ট্রেন থামবে শিয়ালদহে, কারো হাওড়ায়...কেউ স্পাইস জেটের লাল পাখায় উড়ে আসবে চেন্নাই থেকে, আবার কেউ হপিং ফ্লাইট, ফ্রম দেরাদুন...

    (২)
     
    গল্পের অনিকেত...
    দেখলে বোঝা যায়না, এত হুটোপুটি করা মানুষ অথচ ভেতরে এক চরম নরম মন। বাসা তাঁর দক্ষিণ বঙ্গ, ভালোবাসা কবিতা। পেশায় সরকারি ডাককর্মী হলেও নিজে দু কলম লেখার আপ্রাণ চেষ্টায় এখন এ গ্রুপের সদস্য।

    সৌরভ ও সোনালি একেবারে নতুন এই দলে। কলকাতাতেই থাকে...ক্লাস এক, বিষয় এক – কিন্তু ভাবধারা অন্য। এ বছর ওদের ওপর গুরুভার চাপিয়ে কিছুটা স্বস্তিতে আছেন কালিপদদা। সৌরভের গুচ্ছ কবিতা এবার ‘একুশ’ এর পূজো সংখ্যায়। কবিতার প্রতি ভালোবাসায় ও নিয়মিত লেখে ডটকমের পাতাতেও...

    আর সোনালি সেখানে শুধু কলেজ ম্যাগাজিন আর ফেসবুক। ইন্সটা পেজের পাতা ভরে যায় ওর নিজের ছবিতে। প্রচুর লাইক ও ফলোয়ারের হিসেব করতে করতে ও একসময় ভুলেও যায় কবিতার সব লাইন...যদিও প্রিয় কবি কে জিজ্ঞেস করলে, উত্তর আসে সৌরভের!
     
    শঙ্খ আসছে চেন্নাই থেকে...এবার ওর দুটো কাজ। এক অবশ্যই বইমেলা, ও দুই শতাব্দী মল্লিক। বাবা একপ্রকার মেয়ের বাড়িতে কথা দিয়েই দিয়েছেন, শুধু এসে মত দিতে হবে।
    তাই অহনাকে ফোনে আগে থেকেই জানিয়ে দেয়, একটা দিন অবশ্যই আসার চেষ্টা করবে। কবিতার মানুষ সে একদমই না...‘বজ্র’ গ্রুপের অনিকেত ওর বহু পুরনো বন্ধু। আর সেই সূত্রে এখন ও নিজেও এ গ্রুপের একজন হয়ে গেছে।
     
    অনীক দত্তগুপ্ত। থাকে পশ্চিমের এক শহরে। সারাদিন সফটওয়্যার-হার্ডওয়্যারের পরেও বইয়ের সাথে সময় কাটাতে ভালোবাসে। কথা বলে কম, লেখে বেশি। আর কবিতায় ব্যবহার করে ছদ্মনাম...
    এই নিয়ে দেবারতীর সঙ্গে একদিন তুমুল বিতর্ক হয়। এ ঘটনার পর টানা পাঁচ বছর কেউ কথা বলেনি...কিন্তু একদিন হঠাৎ ফেসবুকের পাতা খুলে দেবারতী দেখে, অনীক ওর লেখা শুরুর দিনগুলো নিয়ে লম্বা কাহিনী লিখেছে যাতে দেবারতীর নামখানা স্পষ্ট।
    সেখানে উত্তর দেয় না দেবারতী, পড়ে অফলাইন চলে যায়। তবে সারাদিন ভাবে, দোষটা তো ওরও ছিল। যেমন ভাবা তেমন কাজ...প্রত্যুত্তর আসে অনীকেরও...অবশেষে ভুল বোঝাবুঝির শেষ হয়।
    দেবারতীই প্রথম উৎসাহ দেয় বইয়ের জন্য...অনীকের নতুন বই ‘অনুগল্প’ নিয়ে...ডটকমের পাতায় ওর গল্পগুলো তুমুল প্রশংসা পায়।

    দেবারতী, দিল্লিতে আছে টানা পনেরো বছর...নিজের ভেতর বাংলাকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রান চেষ্টায় ওর কবিতা লেখা ও পড়া...ভালোবাসে অনুবাদ করতে, তাই সাহস করেছিল একবার একটা গোটা উপন্যাস অনুবাদের, কিন্তু মাঝ পথে আটকে গিয়ে এই আইডিয়া। এখন লিও টলস্টয়ের কয়েকটা ছোট গল্প নিয়ে সবে অনুবাদ করতে শুরু করেছে। সপ্তাহে ওর এক একটা গল্প আসে ফেসবুকের নীল পাতায়। ‘বজ্র’ গ্রুপের প্রতিটা মানুষের ভালোবাসা পায়, পায় কিছু অচেনা মুখের হাসি। তবে বই প্রকাশ – সে স্বপ্ন এখনও নেই।
     
    বইমেলায় আসছে শ্রীপর্নাও... কিন্তু কোন দিন বা কখন তা কেউ জানে না। তবে রুদ্র খুব করে চায় শ্রীপর্না আসুক...একবার অন্তত দেখা হোক...মাঝের গ্যাপটা বড্ড বড়, একটানা এগারো বছর।
    ইচ্ছে করলেও ওর কুশল জিজ্ঞেস করতে পারেনা রুদ্র...তবে গ্রুপে মেসেজ গেলে উত্তর দেয় শ্রীপর্না...এটুকু সৌজন্যতা বোধ ওর বরাবরই ছিল...যেমন কলেজের শেষ দিন চলে যাওয়ার সময় সবার সাথে দেখা করে গেছে, শুধু বাদ পড়েছিল রুদ্রই...ওই সময় ও দেরাদুনে, নতুন চাকরিতে। 
     
    রুদ্র,একেবারেই কবিতার মানুষ না। পড়তে ভালোবাসার টানে এখানে জড়িয়ে পড়েছে। বাড়ি বর্ধমান, কলকাতায় পিসির কাছে পড়তে আসা...আর তখনই কলেজে ঢুকে আলাপ হয়ে যায় শ্রীপর্নার সাথে...আলাপ ঠিক না, মেয়েটা এড়িয়ে যেত সকলকেই...তাই একদিন ক্যান্টিনে জোরদার শর্ত। শর্ত শ্রীপর্ণাকে নিয়েই,ওর বন্ধু হয়ে দেখাতে হবে। আর এ কাজের গুরুভারে রুদ্রই নাকি যোগ্য, বলে একচোট হেসে নিয়েছিল সবাই। তবে রুদ্র হারবার পাত্র নয়, তাই এক প্রকার রাজি হয়ে গেল। 
     
    শ্রীপর্নার বায়ো ক্লাস, রুদ্র বাংলা অনার্স...দুজনের দূরত্ব বেশি এমনিতেই হয়ে আছে, তাও হাল ছাড়া যায় না। বন্ধু মহলে প্রেস্টিজ বলে কথা! অতএব নিজেকে তৈরি করছিল রুদ্র...আয়নার সামনে এক গাল হেসে রাতের বেলাতেও চলত ওর প্র্যাকটিস...
    -          শুনছেন, আমি রুদ্র। আলাপ করতে এলাম...
     
    যদিও ওপাশ থেকে কী আসতে পারে ভেবে প্রস্তুত হচ্ছিল ও নিজেও। 

    সেদিন ছিল শনিবার। রুদ্রর ডায়েরিতে গোটা অক্ষরে লেখা এখনও সেই তারিখ ও দিন... ক্লাসের ছিল হাফ ডে...

    রুদ্র জানে শ্রীপর্না-র গাড়ি ঠিক সময়ে ওকে নামিয়ে দেবে কলেজের মেইন গেটে। তাই ওখানেই ও অপেক্ষা করছিল।
    কিছু পরেই সাদা চুড়িদার ও ফুলকাটা দোপাট্টায়, চুল খোলা শ্রী নেমে এলো গাড়ি থেকে।
    রুদ্র-র বুকে তখন যেন ছুটে চলেছে সব বায়ো ল্যাবের আরশোলা...কুরকুর করে ওরা যেন বলতে চাইছে, “এই কি সেই- এই কি সেই”...

    যদিও সেদিন সব ক’টাকে বুকবন্দী করে একাই বাড়ি ফিরেছিল রুদ্র। 

    (৩)

    ৩০ শে জানুয়ারি ফেসবুক আপডেট : অহনা সান্যাল
    তেত্রিশটা লাইক, চারটে হার্ট সাইন...

    অনিকেত মোবাইল খুলে একবার চোখ বুলিয়ে নেয় কে কে ছিল ওরা...ভাবটা এমন যেন অহনা সান্যালকে ও ছাড়া আর কেউই হার্ট দিতে পারে না...

    অহনা বোল্ড শুধু তাঁর কবিতায়, কথায়...কিন্তু ভেতর মানুষটাকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রাখে হাতছাড়া হবার ভয়ে।
    এ কথা অনিকেত খুব করে জানে...চেনা তো আর আজকের নয়!

    ৩১ শে জানুয়ারি, কলকাতা :

    থিম নিয়ে বইমেলা শুরু এবারেও... সময় দুপুর বারোটা থেকে সন্ধ্যে আটটা... যে যখন খুশি আসতে পারো...
    টেবিল পাতা হয়ে গেছে...বৃষ্টি হচ্ছে কলকাতায়...আর নার্গিস রাজকাপুর জুটির মত দূর থেকে দেখা যাচ্ছে সৌরভ ও সোনালিকে।

    বিশাল বড় এক কে.সি পালের ছাতায় দুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এলো...

    অহনাকে দেখে জাপটে ধরল সোনালি...
    • কত দিন পরে!  কোথায় থাক তুমি!

    অহনা হাসে...তবু ঠোঁটের কোণে কালো...কালি অনেকটা জমে গেছে চোখের নীচেও...

    আর বাকিরা...?
    • শনি রবি বাঁচিয়ে সবার ছুটি। তবে আসছে সবাই। এখন সেদিনটারই অপেক্ষা...
    বলে অহনাদি আবারও ব্যস্ত নিজ কাজে...

    বই সাজানোর দায়িত্বটা এবার সোনালি ও সৌরভের ওপর পড়ল...এসেছেন কালিপদদার বন্ধু ও খুব কাছের মানুষ উমাপদ বাবু। সবাই মিলে গুছিয়ে নিল স্টল...উদ্‌বোধনী ও সব মিলিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান খুব ভালো হলেও কোথাও একটা ফাঁক থেকেই গেল সেদিন...
    রাত আটটার পর আবার গুটিয়ে গেল সব... বইমেলা একাই থাকল বন্ধু মিলাপের অপেক্ষায়...

    এদিকে অপেক্ষা বাড়ল সৌরভের। দেবারতী আসছে। এই প্রথম দেখা হবে ফুলপাতা ঝোলানো প্রোফাইলের দেবারতী সেনকে...

    (৪)

    শনিবার। ফেব্রুয়ারী তিন.....অসময়ের বৃষ্টি আটকাতে পারল না বই ভালোবাসা মানুষগুলোকে....

    সেদিন অহনা সান্যালও রোজকার মত তৈরী করছিল নিজেকে...উস্কোখুস্ক চুল, কোনও মতে একবার আঁচড়ে দিলেই হয়...পোষাকেও রঙের ভাব বিন্দুমাত্র... ঘর সামলে তাঁর এই বইয়ের সাথে জুড়ে থাকা...আর মন জুড়ে, নাহ্‌, কেউ কোত্থাও নেই...এটা বোঝাতে গিয়ে নিজে বারবার ফিরে আসে কবিতার কাছে। বসার ঘরে উপচে পড়া বই...দেখলে মনে হয় এক ছোটখাটো লাইব্রেরী...মা আগে খুব চেঁচামেচি করতেন, এখন আর করেন না...
    এইগুলো তাঁর বাঁচার রসদ...চব্বিশ সাতের সাথী।

    মেসেজ ঢুকল মোবাইলে। একটা সুন্দর গীটারের সুর...অহনা আনরিড করে ছেড়ে দেয়...তবে জ্বলজ্বল করতে থাকে অনিকেতের নাম...

    অহনার বাঁ হাত – ডান হাত – গুরুজন, সবই এখন কালিপদদা। চাকরি করার সময় থেকেই ওনার এ বাড়িতে যাতায়াত। কোথায় বা কিভাবে আলাপ মনে নেই, তবে অহনা বলে, আমিই প্রথম আপনাকে ফোন করেছিলাম দাদা, মনে আছে...

    তারপর থেকেই যোগাযোগ। এখন অবসর গ্রহনের পর মাঝে মাঝেই বাড়িতে আসেন কালিপদদা। মায়ের সাথে তাঁর এন্তার গল্প। পছন্দ খুব মায়ের রান্নাও...তাই চচ্চরী, বাটি ঝাল সব টেস্ট করতে করতে মা তাঁর নিজস্ব দুঃখ ওনার সাথে ভাগ করে নেন।
     
    • কী করি বলোতো, ওকে নিয়ে। কিছুতেই বোঝেনা।

    কালিপদা বরাবরের মত একই উত্তর দেয়,
    কিছু ভাববেন না বৌদি, যতদিন না ওর একটা হিল্লে করতে পারছি, আমারও শান্তি নেই।

    অহনা দেখে সম্পর্কগুলো কত জটিল হয়েও সহজ...মা সেখানে বৌদি আর অহনার উনি দাদা...

    (৫)

    অনীক স্টলে ঢুকতেই হই হই শুরু হয়ে গেল...পাশের চেয়ারে বসা সৌরভ ছুটে এলো...
    • তোমারই অপেক্ষাতে ছিলাম গো...

    অনীক পিঠ চাপড়ায় সৌরভের,
     
    • বেশ তো জমিয়েছিস ভাই!...ভালো। খুব ভালো...

    সৌরভ বরাবরই লাজুক মতন... কথাও বলে কম। তাও জিজ্ঞেস করে বসে দেবারতীর কথা... অনীক আশ্বাস দেয়, তিনিও আসছেন।

    অহনাদির সাথে কথায় ব্যস্ত হয় অনীক...কালিপদদা সবার জন্য চায়ের ব্যবস্থা করেন আর সাথে সোনালির পকেট থেকে আসে ফিশ ফ্রাই...

    একটু পরে এক গোলমুখ চশমা আঁটা মানুষকে সেই স্টলে দেখা যায়। সে সব বই উলটে পালটে দেখে অনেকটা সময় নিয়ে। কথায় কথায় মনে হচ্ছিল উনি এ গ্রুপের সবাইকে চেনেন। আলাপ সারলেন অনীকের সাথেও। প্রশংসা করলেন ওর অনলাইন গল্পগুলোর। তারপর বেরোনোর পথে সৌরভকে দেখে বাহবাও দিয়ে গেলেন।

    সৌরভের মনে হলো, কবিতার সাথে জুড়ে থাকতে গিয়ে আজ এত আশীর্বাদ ও ভালোবাসা...জীবনের সঠিক পথটা ও এখানেই খুঁজে পেয়েছে।

    (৬)

    অনিকেত এলো। আকাশটা খুব মেঘলা হয়ে আসছে তখন। বিকেলে আবার বৃষ্টি হতে পারে। অন্য দিন হলে এই সময়টা ভিড় থাকে কিন্তু আজ লোক অন্যদিনের তুলনায় কম।
    কথায় কথায় জানা গেল শরীর মোটামুটি। বাকি কাজ চলছে ফ্যান্টাস্টিক, সাথে কবিতার চেষ্টাও...

    ব্যস্ত অহনার চোখ এড়িয়ে সে সটান উপস্থিত হয় তাঁর পাশের চেয়ারেই। ও বেশ অধিকারের সুরে,
    • কী করতে হবে বলো...! এই বসলাম...আজ শেষ অবধি থাকব।

    অহনা হাসল।
    • এত তাড়াতাড়ি এলি যে! আরেকটু সময় নিলে পারতিস...!

    অনিকেতের মন চাইল বলে, সময়ই তো দিয়েছি তোকে.....

    অহনা সামলে নিল। এ চোখের ভাষা ওর খুব চেনা...তাই একটা নোটবুক হাতে ধরিয়ে বলল, আমি একটু আসছি...

    অহনা বেরিয়ে গেল...অনিকেত দেখল ওকে, যতদূর দেখা যায়...

    (৭)
    বেলা তিনটে, স্টল নম্বর পাঁচশ বারো...

    শ্রীপর্না এসেছে...সঙ্গে ওর তিন বছরের কন্যাটিও...অবিকল এক মুখ।

    রুদ্র গল্প জমালো খুদেটির সাথে...মাঝে অল্প কিছু সহজ কথা সারছিল দুজনে। তাও মধ্যবর্তী শূণ্যতাটুকু একাই সামলে রাখল রুদ্র। জানালো, ফ্যামিলি নিয়ে শিফট করে গেছে দেরাদুন। মা এখন সঙ্গে থাকেন। এভাবেই সময় যাচ্ছে।

    হাসল শ্রীপর্নাও... একই কথা...সময় চলে যায়, তবু রেখে যায় কিছু স্মৃতি…
    রুদ্র অবাক হয় ও ভাবে এই সেই শ্রীপর্না যার সাথে একবার মন দেওয়া নেওয়ার কথা বুকে বেজেছিল! তাই ‘আসছি’ বলে উঠে যায় স্টলের আরেক কোণে যেখানে দেবারতী ও সৌরভ জুটিতে মস্ত হাসাহাসি চলছে।

    শঙ্খ এলো কিছু পর। সঙ্গে তাঁর হবু সাথী, শতাব্দী। খুব ছিমছাম মেয়ে, দুটিতে মস্ত জমেছে। একটা সময় ছিল যখন শঙ্খ-র লিস্টে থাকত প্রচুর বান্ধবীরা...সঠিক কার সাথে ওর প্রেমপর্ব চলছে তা জানতে গিয়ে সেদিন অহনাদির সাথেও একচোট হয়ে গেছিল মেসেঞ্জারে...

    তাই আজ মুখোমুখি হতেই শঙ্খ বলল,
    • তোমার সাথে আলাপ করাতে নিয়ে এলাম গো। অদ্য হতে ইনিই সব।

    অহনা হাসল। তারপর গল্প চলল অনেকক্ষন, তবে ভিড়ের মাঝে শঙ্খ ঠিক চিনে নিলো ই-পত্রিকার দেবারতী সেনকে...

    (৮)

    সৌরভ ও দেবারতী...দেবারতী ও শঙ্খ...কে কার বেশি বন্ধু জানা না গেলেও, শঙ্খ জানে এই সেই দেবারতী যাকে একবার উল্টোপাল্টা বলাতে মস্ত অভিমান হয়েছিল মেয়েটির...সে অবশ্য পুরনো কথা...তবে মেয়েরা মনে রাখে সব।

    শতাব্দীকে বসিয়ে শঙ্খ একবার আলাপ সারতে এলো...দেবারতীও যেন কিছুটি হয়নি ভাবে একটানা বকে গেল প্রায় আধ ঘন্টা... ওদিকে সৌরভ বই ওলোট পালট করতে করতে দেখছিল ওয়েবজিনের ছদ্মনামে থাকা মানুষটিকে আজ কত চেনা লাগছে...

    এদিকে গ্রুপ ফটো – গ্রুপ ফটো করে যখন অনিকেত চিত্‌কার করছে, অহনার সপাট জবাব এলো,
    তোরা যা... আমি এদিকটা সামলাচ্ছি...

    কিন্তু অনিকেতও ছাড়বার পাত্র নয়। ঠিক বাইরে এনে দাঁড় করালো রাশভারী অহনা সান্যালকে। আর সুযোগ বুঝে জায়গাও করে নিল তাঁর ঠিক পাশটাতে...

    এরপর ক্লিক ক্লিক, অনেকগুলো ছবি আর ফেসবুক জুড়ে পোস্ট...তাতে এখন অসংখ্য লাইক ছড়িয়ে পড়ছে... এদিকে শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রহরও...আবারও একটা বছর পর...
    স্টল প্রায় খালি করে চলে যাচ্ছে সবাই...এক এক করে, এক এক গন্তব্যে... আর ভেতরে একটা আশ্চর্য হু হু... শূন্য হয়ে যাওয়ার মতন অনুভব।

    যদিও এই তিন জুটির সমস্ত অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এবারের বইমেলা মনে রাখার মতন...

    রুদ্র কথা দিল, যোগাযোগ রাখবে...কথা দিল শ্রীপর্নাও...

    দেবারতীর সাথে নম্বর আদান প্রদান হলো সৌরভের...আর অল্প কথা কিছু…
    এবার থেকে প্রোফাইলে ছবি দেবে তো?

    দেবারতী হাসল শুধু...তারপর বেরোনোর পথে বলে গেল...
    • তোমার নতুন কবিতার অপেক্ষা থাকবে, সৌরভ। দিও ...

    আর তৃতীয় জুটির অনিকেত বেরোনোর পথে অহনা-র মুখোমুখি হলো আরও একবার। চোখে চোখেই কথা সারল দুজনে আর মোবাইলে একটা মেসেজ  –

    “তোর ফেরত আসার কথা ছিল, অপেক্ষায় থাকলাম।”।.. 
                                                                        
    ---- সমাপ্ত----
    – ঝর্না বিশ্বাস
    [প্রকাশিত- পত্রিকা 'ঘুঙুর']

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ৫৯২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    নবীন - Suvasri Roy
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন