এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আইনের হাত, ধর্মের পা

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৪৯৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ভারতবর্ষের চালু দন্ডবিধি কিংবা এমনি আইন-টাইনও যদি খুঁটিয়ে পড়েন, তো দেখবেন, তাতে নানা জটিল ধারা-উপধারা সাপের ফনার মতো মাথা উঁচিয়ে আছে। এই সিডিশন আইনই ধরুন। রাজদ্রোহী কে? মন শক্ত করে বসুন। যে বা যারা, উচ্চারিত শব্দ কিংবা লেখায়, কিংবা কোনো চিহ্ন দিয়ে, কিংবা অন্য কোনোভাবে ভারতের আইনসঙ্গত সরকারের প্রতি ঘৃণা কিংবা অবজ্ঞা দেখায়, কিংবা দেখানোর চেষ্টা করে, কিংবা মমতার অভাব (disaffection) দেখায়, কিংবা দেখানোর চেষ্টা করে, সব্বাই রাজদ্রোহী। 

    এই আইনটা পড়ে আপনি কী বুঝবেন? ১। এটা মোটেই গণতান্ত্রিক নয়। ২। এতে নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা, অধিকার ইত্যাদি দেবার পরিবর্তে, রাষ্ট্রকে সেই অধিকার দেয়, যাতে সে স্রেফ যাকে-খুশি জেলে বন্দী করতে পারে। নাগরিকত্ব আইনেও দেখবেন, একই গপ্পো। বিশদে যাবার দরকার নেই, কিন্তু এই এন-আর-সি, সি-এ-এর বিপুল আয়োজন, কাউকে শরণার্থী কাউকে অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দেওয়ার কলাকৌশল, স্রেফ যাকে খুশি বাদ দেবার জন্য। কাউকে অধিকার প্রদান করার জন্য না। 

    এর অন্যদিকে আছে জনসমাজ, বা ধর্ম, বা যাই বলুন, অন্য কিছু ধারণা। তা আইনকে কাঁচকলা দেখিয়ে, মাঝে-মাঝে ক্ষমতার অলিন্দ থেকেও উঁকি মেরে যায়। যখন রোহিঙ্গাদের ভারতে আগমন নিয়ে প্রবল হইচই, তখন, হঠাৎই নরেন্দ্র মোদী সরকারের নগর উন্নয়ন মন্ত্রকের স্বাধীন ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী, সমাজমাধ্যমে বার্তা দিয়েছিলেন, ভারত চিরকালই আশ্রিতদের স্বাগত জানিয়েছে। তাই রোহিঙ্গিয়া শরণার্থীদের রাখা হবে দিল্লির বক্করগঞ্জে নিম্নবিত্তদের জন্য তৈরি সরকারি ফ্ল্যাটে। রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিচয়পত্র পাবে তারা, নগর-বাসিন্দাদের নিতান্ত প্রয়োজনীয় পরিষেবা পাবে, আর পাবে চব্বিশ ঘন্টা পুলিশি সুরক্ষা। 

    না, সে ঘোষণা সাকার হয়নি। হবার কথাও না। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, সরকারি আবাসন রোহিঙ্গিয়াদের দেওয়ার কোনও ছাড়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেয়নি। বরং দিল্লির মদনপুর, যে এলাকায় রয়েছে রোহিঙ্গিয়ারা, সেটাকে ডিটেনশন সেন্টার ঘোষণা করুক দিল্লির আপ সরকার। তাতে আপ বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, দিল্লির করদাতার টাকায় কেন রোহিঙ্গিয়া ডিটেনশন সেন্টার তৈরি হবে? কেন্দ্র রোহিঙ্গিয়াদের ফেরত পাঠাক। ইত্যাদি-প্রভৃতি। 

    এই রাজদীপ সিং পুরীর ঘটনাটা আমি প্রায় হুবহু তুললাম, স্বাতী ভট্টাচার্যের প্রকাশিতব্য একটি বই থেকে, যার নাম, "আইনের হাত, ধর্মের পা"। তিনি এই প্রসঙ্গটি লিখেছেন, বইয়ের একদম শুরুতে। শুধু এইটুকু দেখাতে, যে, নৈতিকতা, বা ঔচিত্য বস্তুটা অত সোজা না। তা সতত রাষ্ট্রনির্দেশিত কঠিন-কঠোর পথে তো চলেইনা, বরং রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট পথে চলতে গেলে চালু নৈতিকতা থেকে একরকম করে বিচ্যুতও হতে হয়। যেমন, রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেবার উপক্রম করলে, বা নাগরিকত্ব আইনে শরণার্থী-অনুপ্রবেশকারী ভাগাভাগি করলে সনাতন "অতিথি" ধারণাটাকেই উল্লঙ্ঘন করতে হয়। 

    এই শেষ বাক্যটি উনি লেখেননি। কিন্তু গোটা বই জুড়েই রাষ্ট্রের কঠোর নির্দেশ এবং নৈতিকতার দ্বৈতকে চিহ্নিত করেছেন, নানা আখ্যান দিয়ে। রাষ্ট্রের অভাবটা কিসের? নৈর্ব্যক্তিক কঠোর আইনের সমস্যাটা কী? নৈতিকতা কাকে বলব? কাকে বলব ধর্ম? শুশ্রূষা কি রাষ্ট্রের কর্তব্য না? তার পুরোটাই এই কয়েকটি অনুচ্ছেদে বলে ফেলা সম্ভব না। তার জন্য বইটি পড়তে হবে। 

    এই বইটি গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশ করছে এই বইমেলায়। বিষয়টিতে আগ্রহ থাকলে পড়ে ফেলবেন। আর, যদি আগ্রহ আরও বেশি থাকে, বইটির তৈরি হয়ে ওঠায় আর্থিক সাহায্য করে অংশীদার হতে চান, যাকে আমরা বলি দত্তক নেওয়া, তাহলে এখানে জানান। কিংবা মেল করুনঃ [email protected]  এ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন