এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অনন্যা নারী 

    Sayanti Mandal লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৩ অক্টোবর ২০২২ | ৩৮২ বার পঠিত
  • পর্ব  ৯ 

    ছুটির দিনে  দুপুরে জয়িতার অনেক সময়। খাতাপত্র নিয়ে জয়িতা জানালার ধারে বালিশটা কোলে টেনে নিয়ে আরাম করে বসল।নভেম্বরের মাঝামাঝি।অল্প অল্প ঠাণ্ডা পড়েছে। জানালা দিয়ে নরম রোদ এসে বিছানাতে পড়েছে। জয়িতাদের বাড়িটা গলির মধ্যে। নিচে রাস্তা দিয়ে ফেরিওয়ালার হাঁক শোনা যাচ্ছে মাঝে মাঝে। পায়ের কাছে কম্বলটা টেনে নিল জয়িতা। একটু ঘুম ঘুম পাছছে। কিন্তু ঘুমোলে চলবে না।  একটা লেখা শেষ করতে হবে। সামনের মাসিকে বেরবে। জয় বেশ কয়েকবার তাগাদা দিয়েছে।গতকালতো বেশ রাগারাগিও করে গেছে
    -লেখাটাকি এই মাসে পাব?
    -পাবিনা কেন। ওতো হয়েই গেছে। একটু বাকি আছে। যদিও জয়িতা শুরুই করেনি।
    -কত ছেলেমেয়ে একটা লেখা বেড়োনোর জন্য অনুরোধ উপরোধ করে জানিস?
    -তাদের ফিরিয়ে দিস কেন? নতুন ছেলেমেয়েরা তো বেশ লেখে ।
    -এমনিতো ফিরিয়ে দিই না। আমাদের পত্রিকার জায়গা কম।
     জয়িতা আজ কাল করে ঢিলেমি করছে। আসলে কলেজের দিনে জয়িতার বিশেষ লিখতে ইচ্ছে করেনা। কেমন যেন সব ঘেঁটে থাকে । তাছাড়া  সংসারের অনেক কাজও থাকে।তুতুলের স্কুল থাকে। তাকে রেডি করান।নিজে রেডি হওয়া। সন্ধ্যেতে মেয়েকে নিয়ে একটু বসা। একটু অবসর না হলে জয়িতার লিখতে ইচ্ছে করে না।জয়কে এসব  বোঝানো শক্ত।
    ছুটির দিনেই জয়িতা একটু অবসর পায়।তুতুল পাশের ঘরে মা র কাছে ঘুমোতে গেছে। এখনও ঘুমোয়নি। গলা পাওয়া যাছছে। মা র সাথে তুতুলের গল্পের শেষ নেই। মা ও পারে। সমানে পাল্লা দিয়ে যায়। জয়িতার অত এনার্জি নেই। মা র সাথেই তুতূল  ভালো থাকে। জয়িতা একটু কান পেতে শুনতে চেষ্টা করে
    -দিম্মা জানো আমাদের নতুন মিস এসেছে। নাম কি বলোতো?
     
     
     
    মা কি করে জানবে,তবু বলে
    -পায়েল মিস। মা আন্দাজে একটা নাম বলে দেয়।
    -উফফ দিম্মা। পায়েল মিস তো আগেই ছিল। নতুন মিস। সুতপা মিস। মিস না আমাদের রাইমস পড়াবে।
    -তাই নাকি।
    -দিম্মা তুমি একটা রাইমস বল? তুতুলের আব্দার।
    জয়িতা খাতা পেন টেনে নিল। মা ও ঠিক একটা রাইমস বলতে শুরু করেছে।যতক্ষন না ঘুমবে এই বকবক চলবে।  ইন্ডিয়া তে চলে এসে ভালোই করেছে জয়িতা। সিধান্তটা নিতে অনেক ভেবেছিলো জয়িতা। একটা সময় ভেবেছিলো আসবে না।যা লড়াই করার ওখানেই করবে।  মা ই বলেছিল “ কিছুদিন অন্তত চলে আয়। ভালো না লাগলে তখন ভেবে দেখিস।“ মা এমনিতে খুব শক্ত ধাতের ।কিন্তু বাবা হঠাৎ করে চলে যাবার পর মাও কেমন যেন দুর্বল হয়ে গেছিল। হয়তো একাও। জয়ও সাহস যুগিয়েছিল।“ আমি ইউনিভার্সিটি তে কথা বলেছি। একটা পার্ট টাইম কাজ হয়ে যাবে। চলে আয়।“আসলে জয়িতা মানসিক ভাবে সেই সময় খুব ভেঙ্গে পড়েছিল। এইভাবে যে জীবনে একটা ঝড় বয়ে যাবে সেটা জয়িতা বুঝতে পারেনি। অর্ণব তার বিশ্বাসের ভিতটা একেবারে আলগা করে দিয়েছিল।বাবার চলে যাওয়া আর অর্ণবের চলেযাওয়া জয়িতাকে ভেঙ্গে দিয়ে গেছিল।
    লেখাটা অনেকটা শেষ হয়ে এসেছে। দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল। শান্তামাসি এসে একবার চা দিয়ে গেছে। বাড়ির রান্নাঘরের বেশির ভাগ কাজ শান্তামাসিই দেখে। শান্তামাসির সব দিকে নজর । লিখতে বসলে জয়িতার যে চা লাগে সেটা মাসি বোঝে। তবে মাঝে মাঝে বেশি চা খাবার জন্য বকাও দেয়। একটু শুতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু উপায় নেই ।একটু পরেই জয় এসে হাজির হবে। তার আগে লেখাটা শেষ করতে হবে। জয়িতার নিজের মনে লিখতে ভালো লাগে । এই সব বাঁধাধরা নিয়ম একটু অস্বস্তি করে।আসলে এটাই জয়িতার মুক্তির জায়গা।। অর্ণবের কাছ থেকে পাওয়া বেদনাটা ভুলতে লেখাটা অনেক সাহায্য করেছে। নিজের একটা জগত তৈরি করতেও পেরেছে জয়িতা। কলেজে পড়ান,মেয়ের দেখাশোনা সবের বাইরেও একটা নিজস্ব জগত। লেখিকা হিসেবে একটা জায়গা জয়িতা ইতিমধ্যেই পেয়েগেছে। তবু জয়ের পত্রিকা দিয়ে জয়িতার যাত্রা শুরু হয়েছিল।তাই জয়ের দাবি একটা থাকেই।
    বাইরে অন্ধকার নেমে এসেছে। জয়িতা খাতা বন্ধ করে আর এক কাপ চায়ের জন্য শান্তামাসি কে ডাক দিতে যাবে। এমন সময় জয় ঢুকল।
    -দে ,হয়ে গেছে?
    -বোস… আগে চা খা।জয় বোঝে লেখা কমপ্লিট।
    -হাঁ জমিয়ে এককাপ চা খাওয়া। ভালো খবর আছে।এবার বইমেলা তে আমাদের পত্রিকার স্টল হচ্ছে।
    -বাহ ।তোদের তো পপুলারিটি দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে দেখছি।
    এমন সময় তুতুল ঘরে ঢুকল। এসেই দৌড়ে জয়ের কাছে চলে গেল। ঠাম্মির পর তার দ্বিতীয় বকবকের সঙ্গী। এসেই আগে জয়ের  ব্যাগ ধরে টান। জয় রোজ কিছু না কিছু নিয়ে আসে।জয়ের সাথে ভাবের  তুতুলের সেটা একটা কারন।
     
     
    -তুমি বোরনভিটা খেয়েছ?
    তুতুল জয়ের ব্যাগ হাতড়াতে হাতড়াতে মাথা নারে।তারপরই একটা চকোলেট তুলে দেখিয়ে বলে।
    -মা ……চকোলেট।
    -বোরনভিতা খেয়ে চকোলেট খাবে ,তার আগে নয়।মেয়ে নিমরাজি হয়। জয়ের সাথে বকবক শুরু করে। জয়িতা  শান্তামাসির  খোঁজে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায়।
     
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন