এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হ্যাপি 'মাষ্টারমশাই' দিবস

    আফতাব হোসেন লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ৫৭৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • লোকগুলো হারিয়েই গেল প্রায়। সেই সাদা ধুতি পাঞ্জাবি, একরাশ গম্ভীর কিন্তু নরম মনের মানুষগুলো যারা ডাক দিয়েছিলেন প্রথম - 'দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান', তারা আজ আর নেই। সারা দিনের বকবকানির ধকল সামলে ঘোষেদের ছেলেটা আজ এলোনা কেন, কিংবা ঈদের পরের দিনও হোসেন কেন নতুন ড্রেস পরে আসে নি, সে কথা ভাবার লোকগুলো আজ লুপ্তপ্রায়। কয়েকজন আছেন। টিমটিম করে মিসিং লিংক হয়ে। মনে আছে কি ওনাদের?

    মনে করতে পারছেন, স্যাঁতসেঁতে ফ্যানবিহীন ক্লাসরুমে মেরে পিঠের ছাল তুলে নিলেও ঘরের লোকগুলো যাঁদের বলতেন বেশ করেছেন, আরো দু চার ঘা দেবেন, বড্ড বাঁদর হচ্ছে দিন দিন, ওনাদের কথাই বলছি। করপোরাল পানিশমেন্ট এর আইন বিহীন যুগে হাঁটু মুড়ে নিল ডাউন, তাও আবার হাঁটুর নীচে পাথর নিয়ে, বেঞ্চে দাঁড় করাতেন যাঁরা নিয়মিত, মুড়ি আর পান্তা খেয়ে স্বচ্ছন্দে শেলী আর কিটসকে গ্রামের ভাঙ্গা টালির ছাদে নিয়ে আসতেন। অগাধ ইতিহাসের জ্ঞান নিয়ে যারা সঠিক ইতিহাস বোঝাতেন ভ্রান্ত ভবিষ্যতকে বাঁচানোর জন্য কিংবা যাঁরা ভুগোল জ্ঞানে হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিতেন শুধুমাত্র মানুষকে জুড়ে দেবার জন্য। মাতৃভাষায় বানান ভুলের খেসারতে 'তিরিশ বার ঘরের থেকে লিখে আনবে' এর তালিবানি ফতোয়া মারতেন। যাঁরা বাংলা কিংবা ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলে গেলেও মুদ্রাদোষেও কখনো আধুনিক বাংরেজি বলেন নি একটিবারের জন্যও, ওনাদের কথাই বলছি। মনে করতে পারছেন ?

    মনে করতে পারছেন, যারা বোঝাতেন ভালো নম্বরের আগে ভালো মানুষ হও। যাঁরা চাষার ছেলেকে ডাক্তার, মুচির ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার আর মোল্লার ছেলেকে মাস্টার হতে বলার সাহস রাখতেন। আর যারা হাজার খানের স্বপ্ন দেখিয়েও নিজের সংসারের আব্রু ঢাকতে অসমর্থ হয়েও প্রতিনিয়ত নিজেদের চওড়া বুক দিয়ে আমাদের সব কিছু ঢেকে দিতেন...
    সওও ব...
    ওনাদের কথাই বলছি, যারা নেশা কে পেশা না করে, পেশা কেই নেশা করার সাহস রেখেছিলেন তাদের কথা। চিনতে পারছেন?

    ফাস্ট্রেক এই দামি ঘড়ি, সানগ্লাস আর ডেনিম জিন্স, নতুন দামী পার্সোনাল কিংবা শেয়ার এর চার চাকার "স্যার" রা ছাড়াও প্রত্যেক বিদ্যালয়েই কিছু প্রায় বার্ধক্য এর দোরগড়ায় পৌঁছান মাস্টারমশাইরা থাকেন। এন্ড্রয়েড, স্মার্ট ওয়াচ, ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ এর ফেক স্মাইলি ইমোজির ভিড়ে সারাজীবন আকাশবাণী কলকাতার মত অফলাইন থাকা সেই ওনাদের কথাই বলছি যাঁরা এখনো চুনো মাছের দাম দর করেন বাজারে। কচি রুই কে বাটা বলে বেচে দেওয়া মাছওয়ালার ফাঁকি ধরে ফেলে চোখে চোখ রেখে শাসন করেন। যারা এখনো সেই লাল কৌটাতে করে সামান্য চুন বা ভাজাদোক্তা দেওয়া পান রাখেন শখে। হালফিলের ম্যাগি বা চাউমিনের টিফিনের ভিড়ে স্টাফরুমের এককোনে এখনো শুকনো রুটি আর আলুভাজা আর কাঁচালঙ্কা দিয়েই টিফিন সারেন। ধরা পড়ে গেলে লজ্জা মুখে 'বুড়ি রান্না জানে না' বলে লজ্জায় মিশে যান। নিজের হাঁটুর বয়েসী 'স্যারদের' আধুনিকতাপনা নিয়ে হেঁও করেন আবার নিজের ছেলেমেয়েদের মত সব্বাইকে আগলেও রাখেন।
    সেই সব "মাস্টারমশাই" রা যাঁরা শিক্ষা বা শিক্ষকতা নিয়ে অনেকগুলো বিবর্তন দেখেছেন তারা কেমন আছেন এখন? খোঁজ রেখেছেন?
    সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন বিবর্তনের মুখে দাঁড়িয়ে ওনারা। খোঁজ নিন। খোঁজ পেলে সেলফি নেবেন অবশ্যই শিক্ষক দিবসের জন্য। কারন প্রায়ই শিক্ষক পেটানো যুগে সম্মানের চেয়েও এখন সেলফি উইথ শিক্ষকই বেশি জনপ্রিয়।
     
     
    #প্রকাশিত উত্তরবঙ্গ সংবাদ

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ঝর্না বিশ্বাস | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৯:৫১511804
  • খুব ভালোলাগলো...একটু দেরী  করে পড়লাম।.. 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন