এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড এবং চীনের মহাদুর্ভিক্ষ

    AR Barki লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৪ জুলাই ২০২২ | ৩৬৩ বার পঠিত
  • তিরিশের দশকে স্টালিন সোভিয়েত ইউনিয়নকে আমূল বদলে দিয়েছিলেন, তেমনই একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতেন কম্যুনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও। তারই সূত্র ধরে চীনে শুরু হয় ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড’ নামের এক বিরাট আন্দোলন। যার শুরু মাওয়ের পরিকল্পনা মাফিক হলেও পরিণতি ছিল তার নাগালের বাইরে।
    .
    মাও বিশ্বাস করতেন চীনের বিপুল জনশক্তিকে ঢেলে সাজিয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে এবং যৌথ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করানো গেলে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পর বাড়তি ফসল থেকে যে বিপুল আয় হবে, তা থেকেই শুরু হবে দেশের শিল্প বিপ্লব।
    .
    যার ফলাফল হিসেবে চীনজুড়ে স্থাপিত হবে প্রচুর কলকারখানা এবং লৌহ প্রস্তুত শিল্প। দেং জিয়াও পিং, ঝৌ এন লাই থেকে শুরু করে পার্টির অনেক প্রবীণ নেতাই মাওয়ের এই পরিকল্পনাকে সমর্থন দিলেন না। দেশের নীতিনির্ধারকদের অনেকের সাথে প্রকৌশলীরাও ভয় পেলেন , এত দ্রুত উৎপাদনে চীনের কলকারখানা আসলেই সক্ষম কিনা।
    .
    এতসব সমালোচনায় মাও সে তুং ক্ষেপে গেলেন। প্রচন্ড ক্ষিপ্ত মাও দায়ী করলেন সবাইকে। ঘোষণা করলেন, যারাই গ্রেট লিপের বিপক্ষে , তারা প্রকৃতপক্ষে সমাজতন্ত্র এবং মাওয়ের বিরুদ্ধে। এর ফলে দেশজুড়ে চাটুকারদের হাতে ক্ষমতা চলে যেতে শুরু করে।
    .
    গ্রেট লিপের প্রথম প্রভাব পড়ে কৃষিখাতে। চীনের সব গ্রামকে একত্র করে যৌথ চাষাবাদের আওতায় আনা হলো। সব মিলিয়ে গঠন করা হলো ২০ হাজারের বিশাল কমিউন। সামরিক বাহিনীর অধীন চলতো সকল কাজকর্ম। আলাদা ব্যারাকে রাখা হত প্রত্যেক চাষীকে।
    .
    গ্রামবাসীদেরকে বিউগল বাজিয়ে সকালে ডেকে তোলা হতো। প্যারেড করতে করতে এই বিরাট কর্মীবাহিনী, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মাঠে নামতো। বাচ্চা-কাচ্চারা থাকতো ডে কেয়ার সেন্টারে। এই কমিউনগুলোর বিশাল সব হলঘরে ছিল খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা। ব্যক্তিগত বাসা বা জমি বলে আর কিছু রইলো না চীনে।
    .
    চীনের সমাজে তখন সর্বত্র চাটুকার শ্রেণীর আনাগোনা। যেহেতু মাওয়ের কথাই ছিল শেষ আশ্রয়, মানুষ সেটাই মেনে নিলো। প্রাদেশিক নেতারা বেইজিংয়ে মাওয়ের আনুকূল্য পেতে বিরাট উৎপাদনশীলতার স্বপ্ন দেখাতেন।
    .
    তারপরে প্রদেশে ফিরে এসে কমিউনগুলোতে বিশাল পরিমাণ গম আর স্টিল উৎপাদনের জন্য চাপ দিতেন। কিন্তু চীনের পক্ষে এত বিপুল পরিমাণ গম ও স্টিল উৎপাদন তখন সম্ভব ছিলনা। মাওয়ের ভয়ে কিংবা মাওকে খুশি করতে কমিউন থেকে প্রাদেশিক নেতাদের মিথ্যে রিপোর্ট দেওয়া হত আর সেই খবর পৌঁছাতো মাওয়ের কাছে।
    .
    উৎপাদনের একটা অংশ কমিউনগুলো সরকারকে দিত। স্বভাবতই মিথ্যা রিপোর্টে ঊর্ধ্ব গতির উৎপাদন দেখে মাও উৎপাদনের বাড়তি অংশের চাহিদা জানিয়ে পাঠাতেন। মাওয়ের চাহিদা মিটিয়ে কমিউনগুলোতে খাওয়ার মতো কিছুই থাকতো না।
    .
    প্রাথমিকভাবে কিছু অঞ্চলে উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও গড় ফলাফল তখনও নেতিবাচকই ছিল। ফলস্বরূপ গ্রামাঞ্চলে জীবনযাত্রার মান কমলেও, বাড়তে থাকলো সরকারের চাহিদা। এটা ছিল যেন মিথ্যা রিপোর্টের দুষ্টচক্র। চাহিদা এবং যোগানের এই বিরাট ঘাটতি পরবর্তীতে ডেকে আনে এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ভিক্ষ।
    .
    কৃষকদের কাছে খাবার না থাকার পরেও কমিউন থেকে খাবার চলে যেতে থাকে বেইজিং এর উদ্দেশ্যে। যা বাকি থাকে, তাতে সবার ক্ষুধা মেটানো সম্ভব হতো না। মরতে থাকে মানুষ।
    .
    এসবের মধ্যে অহংকারী মাও রেড ক্রসের সাহায্যের আবেদন ফিরিয়ে দেয়। ঘটনার ভয়াবহতায় দুই দশক আদমশুমারী করেনি চীন। ১৯৮২ সালে আদমশুমারী করা হলে দেখা যায়, দুর্ভিক্ষের ফলে মৃতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ কোটি।
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন