এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সৌপ্তিক কান্ড - ১২ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৮ মে ২০২২ | ৮৮৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ( দ্বাদশ ও অন্তিম পর্ব ) 
     
    দীপ্সিতার ফোনের জন্য সকাল থেকে অপেক্ষা করে বসে আছে কলতান । সে নিশ্চিত ছিল এ ফোনটা আসবেই । দীপ্সিতার কল এল এগারোটা নাগাদ । 
    ------ ' হ্যা বল দীপ্সিতা ..... কিছু এসেছে ? '
    ----- ' হ্যা স্যার ..... রিপ্লাই এসেছে ।  সাড়ে চারটের সময় লেকের পাশে দেখা করতে রাজি হয়েছে ..... '
    ----- ' ওহ্ ....  ফ্যান্টাস্টিক ।  তুমি তৈরি হয়ে যাও .... '
    ----- ' কিন্তু .... আমার খুব ভয় করছে স্যার ....এরকম তো কখনও করিনি .... ভীষণ টেনসড ফিল করছি .... '
    ----- ' আরে বাবা ..... তোকে কিছুই করতে হবে না । তুই শুধু ওখানে গিয়ে একটু দাঁড়াবি .... তাও মিনিট পাঁচেকের বেশি নয় । সেই জন্যই ঠিক সাড়ে চারটেয় টাইম দিয়েছি ।'
    ----- ' তবু স্যার .... ভীষণ ...'
    ----- ' আবার একই কথা বলে ! .... একটা কথা জেনে রাখ ..... তুই আমাদের দেখতে না পেলেও তোকে ঘিরে আমরা দাঁড়িয়ে থাকব ..... বিন্দুমাত্র ভয়ের কোন কারণ নেই । অপারেশানটা যদি ঠিক ঠিক ক্লিক করে মিনিট পাঁচেকের বেশি সময় লাগা উচিত নয় । '
    ----- ' ঠিক আছে স্যার .... আপনি যখন বলছেন ..... '
    ------ ' ওক্কে .... অল দা বেস্ট '

        স্বস্তিকের ফোন এল মিনিট পনের বাদে ।
    -----' বল স্বস্তিক ...কি দাঁড়াল শেষ পর্যন্ত  .... '
    ----- ' না স্যার .... আজ দেখা করতে চাইছে না .... এমনকি অন্য কোন টাইমেও না ....'
    ----- ' অ্যজ অ্যন্টিসিপেটেড ..... '
    ----- ' কি বললেন স্যার ? '
    ----- ' না কিছু না ..... ও তোমরা বুঝবে না ..... অ্যকচুয়ালি এ বার্ড ইন দা হ্যান্ড ইজ ওয়ার্থ টু ইন দা বুশ  ..... '
    ----- ' হ্যা .... কি ? ' 
    -----' না কিছু না ..... ওয়েল ওয়েল .... লিভ ইট ফর নাও । তোমাদের এখন আর কিছু দরকার নেই ..… ঠিক আছে ? জাস্ট রিল্যাক্স .... '
    ----- ' আচ্ছা .... ঠিক আছে স্যার ...'
    স্বস্তিক এবং রুদ্রা আপাতত হাঁফ ছেড়ে বাঁচল ।
      কলতান নিশ্চিত হল যে রুদ্রা এবং দীপ্সিতা দুজনের মেসেঞ্জার একই লোক । একজনের পক্ষে একই সময়ে দু জায়গায় আসা সম্ভব নয়।
         হাতে বেশি সময় নেই । দু জায়গায় ফোন করতে হবে এখন । প্রথমে মোহন সিং, তারপর সলিল হালদার । 
    মোহন সিং-কে জানাতে হবে গ্র্যান্ড হোটেল অপারেশান বাতিল হয়ে গেছে । নিউ মার্কেট থানার কোন সহযোগিতা লাগবে না । 
    কলতান দেরি না করে মোহন সিং-কে সেটা জানিয়ে দিল ।
    মোহনজি বললেন , ' তাহলে তো ভালোই হল .... আমাদের কাজ অর্ধেক হয়ে গেল ... ওকে কলতানবাবু .... গো অ্যহেড .... '

      তারপর সলিল হালদার । 
    ----- ' হ্যালো ..... মিস্টার হালদার ... কেমন আছেন ? '
    ---- ' এ..ই আপনি যেমন রেখেছেন ..... কাজ কিছু এগোল ? '
    ----- ' সেটা আশা করি আজই বোঝা যাবে .... '
    ----- ' আ ...চ্ছা !  '
    ----- ' আজ আপনাদের এলাকাতেই যাব । আপনার অতিথি হবার ইচ্ছে আছে । আপত্তি নেই তো ? কাজটা আপনারই ।'
    ----- ' মানে  ? '
    ------ ' মানেটা  না হয় সন্ধেবেলায় বোঝাব ..... আপনার বাড়িতে চা খেতে খেতে .... '
    ----- ' তাই নাকি ? এত দূর ! '
    ----- ' আশা তো করছি ..... এখন দেখা যাক .... আমার সঙ্গে আরও দু একজন আসতে পারে কিন্তু .... '
    ----- ' আরে আসুন  আসুন .... আমি এখন থেকে তৈরি হয়ে বসে থাকছি .... '

                             **********
    দীপ্সিতা সোয়া চারটে থেকে একটা গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছে । বৈশাখী মাসের বিকেল। রোদ্দুর এখনও জমজম করছে ।  দু চারজন এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছে । চার পাঁচ জোড়া ছেলে মেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে পড়েছে এর মধ্যেই । তারা নিজেদের মধ্যে মশগুল ।  আশপাশের  আর কোন কিছু  এই মুহূর্তে তাদের আছে বিরস বিস্বাদ ।  
          মাঝে মাঝে ঝিরঝির করে হাওয়া দিচ্ছে ।
    দীপ্সিতার শরীরে ঘাম দিচ্ছে নানা অস্বস্তি আর উৎকন্ঠায় । এভাবে একা একা দাঁড়িয়ে থাকতে সে ভীষণ অসহায় বোধ করছিল । কলতান স্যার বলেছিলেন তাকে ঘিরে নাকি ওনারা দাঁড়িয়ে থাকবেন । কিন্তু কোথায় কি ! কে নাকি তার ফাঁদে ধরা দেবে । সে যদি এখনই এসে হাজির হয় তাহলে সে কি করবে ..... এইসব ভেবে সে দুশ্চিন্তায় আকুল হতে লাগল ।
        সাড়ে চারটে বেজে গেছে । দীপ্সিতা মোবাইলে সময় দেখল । চারটে তেত্রিশ ।  দীপ্সিতা অস্থির এবং বিভ্রান্ত চোখে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল । ভাবল কলতান স্যারকে একটা কল দেবে কিনা । তারপর মনে হল এখন বোধহয় ফোন করাটা ঠিক হবে না । তাহলে ওনার প্ল্যানটা হয়ত ভেস্তে যেতে পারে । কিন্তু এখানে কতক্ষণ এভাবে ......
    হঠাৎ দেখতে পেল প্রায় চল্লিশ গজ দূরে নেভি ব্লু রঙের টি শার্ট পরা একটা তেইশ চব্বিশ বছরের 
    ছেলেকে । হাঁটতে হাঁটতে এদিকেই আসছে । দীপ্সিতার বুক কেমন ধক্ করে উঠল । সেই শ্যামবর্ণ,  মাঝারি উচ্চতার , পাতলা দাড়িওয়ালা যুবক দীপ্সিতার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল । আর কুড়ি গজের মতো ফারাক । দীপ্সিতা অবাক হয়ে দেখল .... আরে ! এতো মৃদুল .... সৌপ্তিকের বন্ধু মৃদুল ব্যানার্জী । 
    মৃদুল দিশাহারা এবং সন্ত্রস্ত দীপ্সিতার সামনে এসে দাঁড়াল । দীপ্সিতার মুখের কথা আটকে গেছে । মৃদুল সপ্রতিভ ভঙ্গীতে হেসে বলল , ' এতদিনে মন ভিজল ? আমি জানতাম তুমি আসবে ...... ' 
    ঠিক এই সময়ে কোথা থেকে যেন ভূঁইফোড় হয়ে এক ভদ্রলোক তার কাঁধে হাত রেখে হাসিমুখে বলল , ' আমিও জানতাম তুমি আসবে মৃদুল ...'
    মৃদুল ডানদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে চমকে উঠল , তার কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে কলতান গুপ্ত । বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল মৃদুল ।
    খানিক দূরে রাস্তা । সেখানে কুড়কুড় করতে করতে ধীরে গতিতে এসে দাঁড়াল একটা পুলিশের জিপ । তাতে বসে আছে মোহন সিং আর দুজন কনস্টেবল । 
    কলতান মৃদুলের হাত ধরে বলল , ' চল মৃদুল .....সৌপ্তিকদের বাড়িতে কথাবার্তা হবে । চলে আয় দীপ্সিতা ..... '
     ------ ' আ... আমি .... কেন .... কি জন্য...'
    মৃদুল আপ্রাণ সামলাবার চেষ্টা করল অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিটা । 
    ------ ' কথা এখানে নয় ..... ওখানে হবে .... চল...... ' কলতান মৃদুলের কাঁধ জড়িয়ে ধরে জিপের দিকে এগোতে থাকে । 
                    
                         ****************
    কলতান,  মোহন সিংরা সলিল হালদারের বাড়িতে গিয়ে বসল । সঙ্গে মৃদুল এবং দীপ্সিতা। 
    হালদারবাবু বলেন, ' চা টাগুলো বলি ? '
    কলতান বলল, ' চা এবং টা দুটোই বলবেন .... আমার বলা শেষ হয়ে যাবার পর । এখন থাক সলিলবাবু ।' সলিলবাবু ওখানে উপস্থিত সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কোন এক তদন্তে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ।
    সন্ধে প্রায় ছটা বাজে । মোহন সিং দুবার ঘড়ি দেখলেন । একটু অধৈর্য গলায় বললেন , 
    ' এখনও তো এল না ..... ছটা বেজে গেল .... '
    কলতান তাকে আশ্বস্ত করল ----- ' আসতে যখন বলেছেন , ঠিকই আসবে .... অত বড় বুকের পাটা হবে না যে পুলিশকে ..... '
    কথাটা শেষ হওয়া মাত্র নীচে কলিং বেল বেজে উঠল ।
    হালদারবাবু হাঁক পাড়লেন ---- ' গোবিন্দ ..... দেখ তো কে ..... '
    গোবিন্দ নীচে গেল দরজা খুলতে । কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ওপরে এসে দরজার কাছে দাঁড়াল সুর ফার্মেসির দোকানদার পরেশ দাস ।মুখে তিনদিনের দাড়ি । শুকনো হতশ্রী চেহারা । চোখে ভয়ার্ত ভাব । ভীতু গলায় বলল, ' আসব স্যার ? '
    ----- ' আসুন আসুন ..... চলে আসুন  .... আপনার জন্যই ওয়েট করছি ..... ' মোহন বলে ওঠে । পরেশ দাস একপাশে একটা চেয়ারে এসে বসল জড়সড় হয়ে । মৃদুল বসে আছে পাথরের মতো । কি ভাবছে কিছু বোঝা যাচ্ছে না । 

       কলতান মৃদুলের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল ----- ' একগাদা সিম ব্যবহার করে কি আর টেকনোলজির চোখকে ফাঁকি দেওয়া যায় । অভিষেকের নামে যে সব সিম তুমি ব্যবহার করতে এবং দীপ্সিতা এবং রুদ্রাকে ফোন করতে সেগুলো সব তোমারই বানানো ।  একসময়ে কোনভাবে অভিষেকের আধার এবং প্যানকার্ড এবং ছবি তোমার কাছে এসেছিল । খুব সম্ভবত কোন ব্যাঙ্কে অ্যকাউন্ট খুলে দেবার অছিলায় ..... উঁচু হারে সুদের প্রলোভন দেখিয়ে ওগুলো নিয়েছিলে । সিম রেজিস্ট্রেশানের সময়ে ফটো তোলার নিয়ম তখনও চালু হয়নি । এখন হলে এটা করা যেত না । এই নম্বরগুলোর মধ্যে যেগুলো স্বস্তিক বা রুদ্রার মোবাইলে সেভ করা ছিল না সেগুলো থেকে ফোন করলে আননোন নাম্বার দেখাত ।আর যেটা অভিষেকের নামে করেছিলে তুমি সেটা থেকে কল বা মেসেজ গেলে রিসিভার ভাবত  অভিষেক করছে ।  এটা শুধু মানসিক বিকৃতি নয় , ইমম্যাচিওরিটির পরিচায়কও বটে । কারণ, টেলকম ডিপার্টমেন্টের সাহায্য নিলে এই জালিয়াতিগুলো বার করে ফেলা একেবারেই কঠিন কাজ নয় , এটা তোমার অজানা থাকার কথা নয় । আসলে , তুমি  বেপরোয়া ছিলে । আর একটা কথা হচ্ছে,  সলিলবাবু  যে হঠাৎ তার ছেলের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করার জন্য আমাকে অ্যপয়েন্ট করে বসবেন সেটা তোমার হিসেবের বাইরে ছিল । তোমার সমস্যার শুরু সৌপ্তিকের মৃত্যুর ব্যাপারে আমি নাক গলানোর পর থেকে । 
    তুমি বেশ কয়েক মাস ধরে সৌপ্তিককে হাই ডোজের সিডেটিভ সাপ্লাই দিয়ে আসছিলেন, তার ইনসমনিয়াঘটিত সমস্যার সুযোগ নিয়ে ।তোমার জানা ছিল, নাগাড়ে অ্যটিভ্যান টু বা থ্রি কনসিউম করে গেলে কোন এক সময়ে হার্ট অ্যটাক অবশ্যম্ভাবী ----- যেটা সৌপ্তিকের হল দীঘায় গিয়ে । খুব সম্ভবত  এসব ব্যাপারে ও একদম আনাড়ি ছিল , যেটা শিক্ষিত কোন ছেলের পক্ষে প্রায় বিরল ব্যাপার । এই বিরলতার সুযোগই তুমি নিয়েছিলে মৃদুল ।  আর এ ব্যাপারে তোমার সাহায্যকারি ছিল এই পরেশবাবু । পরেশবাবু গরীব মানুষ । তিনি টাকার লোভ সামলাতে পারেননি । মৃদুলের কাছ থেকে তিনি টাকা নিতেন । দোকানের স্টক মেলাবার ভার ছিল তার ওপর । তিনি গোঁজামিল দিয়ে হিসেব মিলিয়ে রাখতেন । অভাবে স্বভাব নষ্ট । সৌপ্তিকের জন্য অ্যটিভ্যান টু বা থ্রি কেনার জন্য কোন প্রেসক্রিপশান ছিল না ।  কি ...... পরেশবাবু  .....ঠিক বলছি তো ?
    আপনার স্বীকারোক্তি আদায়ের কৃতিত্ব অবশ্য মিস্টার মোহন সিংজির । অভিষেক মাঝে মাঝে সুর ফার্মেসিতে যেত । কিন্তু সেটা অন্য কোন  কারণে । সুর ফার্মেসির মালিকের ছেলে কিশোরের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল ।  কিশোর দোকানে কমই আসত । অভিষেক মাঝে মাঝে দোকানে গিয়ে কিশোরের ব্যাপারে খোঁজখবর নিত পরেশবাবুর মাধ্যমে  ।  তার কিছু পাঠাবার দরকার থাকলেও সে পরেশবাবুর হাতে দিয়ে দিত । কি ..... পরেশবাবু তাই তো ?  '
    পরেশবাবু ক্ষীণ স্বরে বললেন , ' হ্যা .... ' । মৃদুল কোলের ওপর দুহাত জড়ো করে রেখে মাথা নীচু করে থম মেরে বসে ছিল । দীপ্সিতা চুপচাপ কলতানের মুখের দিকে তাকিয়ে একমনে তার কথা শুনে যাচ্ছিল । 
    কলতান বলে যাচ্ছে ---- ' সুর ফার্মেসির এসব তথ্য সংগ্রহ করার জন্য আমাকেও ঘুষ খাওয়াতে হয়েছে কিছু টাকা ..... হাঃ হাঃ হাঃ ..... আপনারই সহকর্মী মানিক সাহাকে । এসব আপনি জানবেন না ...... কারণ মানিককে একজন মহিলার টোপ দিয়ে বাইরে বার করে আনা হয়েছিল । আপনারা কেউ এগুলো জানেন না । এই মহিলা টোপের কাজটি
    করেছিল আমার ভাগ্নী কাম অ্যসিস্ট্যান্ট । ...... যাক ওসব কথা ...... এখন আসল প্রশ্ন হল ---- মৃদুলের এসব কুকর্মের পিছনে মোটিভটা কি ? মোটিভ কিন্তু খুব সহজ এবং সরল । আদি ও অকৃত্রিম প্রথম রিপু । তার সঙ্গে মিশেছে প্রবল অপরিণতমনস্কতা এবং বেপরোয়া মনোভাব  । এরকম কীর্তি তার আরও আছে নিশ্চয়ই  যেগুলো আমি অবশ্যই বার করে ফেলব । অপরিণত বলছি কেন ? কারণ তার এটা বোঝার মতো বয়েস হয়েছে যে কারো  প্রেমিককে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলেই মেয়েটার দখল পাওয়া যায় না । কিন্তু বিকৃত বুদ্ধিসম্পন্ন মৃদুল এটা বুঝতে পারেনি । সে স্বস্তিককেও খুন করতে চেয়েছিল  রুদ্রাকে পাবার জন্য । কি বুদ্ধি বুঝুন !  সেদিন তার সামনে আচমকা সুযোগ এসে গেল । তার আত্মীয়ের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল । দেখল যে বারান্দার
    তলা দিয়ে স্বস্তিক যাচ্ছে । ব্যস ..... মৃদুলের মাথায় খুনি জেগে উঠল .... কপাল ভাল যে ও প্রাণে মারা পড়েনি । এটা বোধহয় মৃদুলের বেসিক অ্যবারেশান । ' 
    এবার মৃদুলের গলা শোনা গেল ।
    ------ ' স্যার ...... আপনি যে এত কথা বললেন, খুন খারাপি ..... কত কি ..... কোন প্রমাণ আছে  যে আমি সৌপ্তিককে মেডিসিন দিতাম এবং পিসীর বাড়ির বারান্দা থেকে টবটা আমি ইচ্ছা করে ফেলেছি ...... '
    ------ ' ও বাবা ..... হাতে নাতে ধরা পড়ার পরও
    এত কথা !  প্রমাণ তো একদম হাতে গরম আছে । তুমি কি জান না .... তোমার পিসীর বাড়ির সামনে সি সি ক্যামেরা লাগানো আছে ? তার ফুটেজটা চাইলে দেখতে পার থানায় গিয়ে ।আর .... সৌপ্তিক হত্যার সরাসরি প্রমাণ নেই ঠিকই । তবে  জাননা হয়ত ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া ডাক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে কাঁথির এস ডি ও-র  তত্ত্বাবধানে। একটু চাপ দিলেই সব কিছু বলে দেবে শিগগির .... নিশ্চিন্ত থাক ।   
    মৃদুল কেমন সম্মোহিত ভঙ্গীতে নিষ্পলকে তাকিয়ে রইল সামনের দেয়ালটার দিকে । তারপর তার শরীরটা হঠাৎ পিছন দিকে হেলে পড়ল নিষ্প্রাণ কোন বস্তুর মতো । 
    হালদারবাবু হৈ হৈ করে উঠলেন ------ একি ... কি হল .... স্ক্রাউন্ডেলটাকে পালাতে দিলে চলবে না ..... অ্যরেস্ট হিম ....অ্যরেস্ট হিম .....' ।
    মোহন সিংজি তৎপর পুলিশি প্রতিক্রিয়ায় ঝট করে উঠে মৃদুলের কাছে গেলেন । তার শরীর সংক্রান্ত জ্ঞান অনুযায়ী তিনি মৃদুলকে নানাভাবে পরীক্ষা করে দেখতে লাগলেন । শেষে কোমরে হাত রেখে দাঁড়ালেন । 
    ----- ' না .... কিছু হয়নি । রেজাল্ট অফ অ্যকিউট মেন্টাল স্ট্রেস আর কি ..... একজন ডাক্তারের দরকার আছে ..... ' মোহন সিং বললেন ।
    কলতান বলল , ' হ্যা ..... ডক্টর ফর বোথ ফিজিক্যাল অ্যন্ড মেন্টাল ট্রিটমেন্ট ..... '
    সলিল হালদার মশাইয়ের  সহধর্মিনী নির্বাক হয়ে হাঁ করে মৃদুলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন । 
    তিনি অস্ফূট স্বরে বললেন, ' এইটুকু ছেলে .... কি করে যে এসব ..... ভাবতে পারিনা  .... '
    সলিলবাবু মোহন সিং-এর দিকে তাকিয়ে বললেন , ' আগে ওকে থানায় নিয়ে যান .... তারপর ওর বাড়িতে খবর দিন .... কোর্টে কেসটা উঠুক তারপর আমি দেখছি .... আমি ইমিডিয়েটলি লইয়ার অ্যপয়েন্ট করছি .... '
    মৃদুল এতক্ষণে খানিকটা সুস্থ হয়েছে । সে এক অদ্ভুত কারুণ্য ও বিষাদ মাখা সমর্পণী দৃষ্টিতে সামনে বসে থাকা দীপ্সিতার দিকে তাকাল । দীপ্সিতার মনের ভিতর কেমন তোলপাড় করতে লাগল ।  
    দীপ্সিতা হঠাৎ উঠে পড়ে বলল, ' আমার তো আর কোন কাজ নেই এখানে ..... আমি আসছি..... দরকার হলে ডাকবেন আমায় ..... '

           দীপ্সিতাকে  অবশ্যই দরকার হয়েছিল এ মামলায় । কিন্তু তাকে আর পাওয়া গেল না কোনভাবেই ।  

       ( সমাপ্ত )
    ************************************************************************************

        

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ১৯ মে ২০২২ ১০:৪৪507837
  • বাঃ, শেষটা বেশ লেগেছে।
  • Anjan Banerjee | ২১ মে ২০২২ ০৮:৩৪507902
  • অনেক ধন্যবাদ 
  • উজ্জ্বল | ২৩ মে ২০২২ ১৫:২৬508006
  • নাগাড়ে অ্যটিভ্যান টু বা থ্রি কনসিউম করে গেলে কোন এক সময়ে হার্ট অ্যটাক অবশ্যম্ভাবী - এটা কি ঠিক? যতদূর জানি লোৱাজিপাম বেশি দিন ব্যবহার করার অনেক কুফল আছে ঠিকই, তবে হার্ট অ্যটাক তার মধ্যে পড়ে না । অবশ্য খুব বেশি মাত্রায় খেলে হয়তো হতে পারে। ডাক্তারবাবুরা একটু মতামত দিন। লেখাগুলো জমজমাট হচ্ছে, নিয়মিত পড়ছি, তবে পর্বগুলো পরপর খুঁজে সাজিয়ে পড়তে অসুবিধে হচ্ছে।
  • বিপ্লব রহমান | ১৬ জুন ২০২২ ০৬:৩২509050
  • "পর্বগুলো পরপর খুঁজে সাজিয়ে পড়তে অসুবিধে হচ্ছে।" 
     
    এ ক ম ত।  এই ধারাবাহিক পড়ার প্রধান বাধা এই।  জমজমাট পরিসমাপ্তি। 
    লেখককে সাধুবাদ। 
     
    আরও লিখুন।  বিনীত অনুরোধ থাকবে, 
     
    ১) একেকটি পর্ব ধীরে সুস্থে বিস্তারিত লিখুন,  কোনো তাড়াহুড়ো নয়। রহস্য  উপন্যাসিকা বা উপন্যাস চাই, বড়্গল্প নয়। 
     
    ২) কোন পর্ব কোথায় থামতে হবে, পাঠক চাহিদা বুঝে থামুন,  টইটম্বুর থ্রিল পেলেই পাঠক খুশী, 
     
    ৩) অহেতুক ইংরেজির যথেচ্ছ প্রয়োগ পাঠ বান্ধব নয়।  পড়তে বা গল্পের খেই ধরতে খুব অসুবিধা হয়! 
     
    অনেক শুভ কামনা ও ধন্যবাদ heart
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন