এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হরপার্বতীর সুখী পরিবার

    Manab Mondal লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৩ মে ২০২২ | ৫৫১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • বিপত্নীক মহাদেবের সঙ্গে সেদিন ভাগ্যিস পার্বতীর বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল দেবতারা, নয়ত ওঁর হাল খারাপ হয়ে যেত। দূর্গার মতো দজ্জাল বৌ মহাদেবকে একটু আধটু সংসারি করে তুলেছে। নয়ত চ্যালাচামুণ্ডা নিয়ে নেশাভান করে এখানে ওখানে পড়ে থাকত। পরনে একটা ভালো কাপড়চোপড় জুটত না, জীবজন্তুর ছাল পরে ঘুরে বেড়াতো এখানে ওখানে, একটা স্থায়ী ঠিকানা ছিলো না। পুরো শরৎচন্দ্রের দেবদাস।

    বাঁচানোর জন্য ছিল না কোনো চন্দ্রমুখী। যদিও বিয়ের পরে গঙ্গার সাথে একটু লটরপটরের গল্প শোনা যায়, কিন্তু পার্বতী ওগুলো পাত্তা দিতে চায় নি, কারণ শিব তো চাকরিবাকরি করে না, মাঝে মাঝে ওর মুখঝামটা খেয়ে হয়ত গঙ্গার কাছে যায়, কিন্তু পেটে টান পড়লেই চলে আসতে হয় এই ঘরেতেই। ঐ যে কথায় বলে না, 'যতই ঘুড়ি উড়াও, লাটাই তো আমার হাতে'।
    বাপের বাড়ি লোকজন বলে 'দূর্গা খুব বোকা নয়তো পেটমোটা ওই রকম বুড়ো অকর্মের ঢেঁকিকে কেউ বিয়ে করে'। মাঝে মাঝে ঝগড়াঝাটি হলে ডির্ভোস করার কথা বলেছিল ওকে, কিন্তু ও করে নি। বরং শিব যেহেতু কোনো পণটন নেয় নি, বাপের বাড়ির ভাগ চাই বলে কেসটেস করার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেল করে সংসারটা ভালো ভাবেই চালিয়ে নিলো পার্বতী এতদিন।
    এখন ছেলে মেয়েদের চাকরি হয়েছে, বলতে পারেন আইডিয়াল Happy family... বাংলায় সুখী পরিবার।

    অবশ্য পার্বতী মহালয়া করে ভালোই রয়্যালটি পেতো। সরস্বতী গান গাইত, টিউশনি পড়াতো। কার্তিক গণেশ ছোটোবেলায় টুকটাক অভিনয় করত বিভিন্ন চলচ্চিত্রে। লক্ষ্মীটা করত হাতের কাজ, মানে হস্তশিল্প। যাই হোক, এখন সরস্বতী তো কলেজে অধ্যাপনা করছে। ওর স্বামীও বৃদ্ধ, ছেলেমেয়ে নেই, টাকা পয়সা ভালোই আছে। তাই ঝাড়া হাত-পা, ভালোই টাকাপয়সা পাঠাতে পারে ও দূর্গার সংসারে। লক্ষীর তো বিয়ে হয়েছে একজন রাজনৈতিক নেতার সাথে, ওঁরও টাকাপয়সার অভাব নেই কোনো। কার্তিক মডেলিং করেছে, কিন্তু সলমনের মতো ওর বিয়েটা হচ্ছে না, এটাই চিন্তার। গণেশের ব্যবসা ভালোই চলছে, ফুলে ফেঁপে কলাগাছ। তাই কলাগাছকেই বিয়ে করে নেয়েছে।
    টাকা পয়সার সমস্যা নেই। সুখেই দিন কাটছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে দূর্গার স্বভাবটা বদলালো কই?

    গিরগির করতে থাকে সারা দিন। গাঁজা খাওয়া ছাড়িয়ে ইলেকট্রনিক সিগারেট এনে দিয়েছে। সাট্টা ছাড়ানোর জন্যেও উঠেপড়ে লেগেছে। কথা শোনায় খুব। আবার এখন ভুড়িটার পিছনেও লেগেছে। কোন কিছু খেতে দেয় না মহাদেবকে। কি যেন বলে - ডায়েট কন্ট্রোল।

    রোজ ভোরবেলা তুলে জিমে পাঠায় ওকে। লোকে বলে শিবের বেশি দাবিদাওয়া নেই - জল, বেলপাতাতে খুশি। তবে মা দূর্গা, মানে অন্নপূর্ণা অনেক হোটেলে রান্নার কাজ করতেন আগে, তাই অনেক কিছুই রান্না করে খাওয়াতেন। অভাবের সংসারেও সব পার্সেল করে আনতেন শিবের জন্য, ঐ সব খেয়েই তো শিবের অত বড় ভুড়ি। আজকাল টাকাপয়সা হয়েছে। মা ঘরেই বাবার জন্য সব খাবার করতে পারেন, কিন্তু তবুও করেন না। স্বাস্থ্য সচেতন। তেল মশলা বন্ধ। সিদ্ধ খেয়ে খেয়ে শিবের জীবনের নাজেহাল অবস্থা।

    দূর্গার অবস্হা খারাপ, এত বড় সংসার সামলাতে তারও নাজেহাল অবস্থা। দূর্গা এগারো হাতেও সংসার সামলাতে পারে না। আপনি বলবেন দশহাতের কথা আপনি জানেন। এগারো হাত বলছি কারন মেয়েদের আরো একটা হাত আছে যেটা আপনার চোখে পরে না। ওটা হলো অজুহাত।

    নন্দীভৃঙ্গী সাহায্য করার বদলে নেশা করে কাজ করে। ফলে কাজ আরও বাড়ে। আবোলতাবোল করে সময় নষ্ট করে।

    এদিকে পশুপ্রেমীদের আন্দোলনের ফলে বাহন ব্যবহারেও অনেক সমস্যা। সিংহ এর এ্যাটিচুট বেড়ে গেছে। রাজা বলে কথা। ইঁদুরের কথার যুক্তি আছে যে গনেশের চেহারাটা ভীষণ বড়, ও তো আর গাধা নয় যে অত বোঝা বইবে। কার্তিক আবার বায়না ধরেছে, রয়্যাল এনফিল্ড বাইক চাই, ময়ূর তো এখন জাতীয় পাখি, ও আর কার্তিকের কাছে কাজ করবে না। লক্ষ্মী এখন বিবাহিত, ওর কি রাতবিরেতে আর বেড়ানো চলে? পেঁচাকে নিয়ে তো দিনের বেলায় বেড়ানো যায় না। তাই লক্ষীর নতুন গাড়ি চাই। সরস্বতীর প্রবলেম হল হাঁসকে নিয়ে সব জায়গায় যাওয়া যায় না। তাই নতুন গাড়ি চাই। এদিকে পেট্রোলের দাম আকাশছোঁয়া, গাড়ি তো কিছুতেই কিনতে দিতে চাইছে না শিব। মহাদেবের সুখী পরিবার এখন আর সুখী নেই। ঝগড়াঝাঁটি মান-অভিমানের পালা চলছে। মহাদেব একটা জিনিস বুঝতে পারছেন যে টাকাপয়সা হলেই সুখ আসে না। সুখ আসে adjustment এ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন