এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সবুজ চোখের আফগান কিশোরী

    AR Barki লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৬ এপ্রিল ২০২২ | ৫১৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • স্টীভ ম্যাককুরে নামে একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারকে ১৯৮৪ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয় পাকিস্তান-আফগানিস্তান বর্ডারে শরণার্থী শিবিরগুলো ঘুরে তাদের জীবনযাত্রার কিছু ছবি তুলে আনার জন্য।
    .
    নাসিরবাগ শরণার্থী শিবিরে পৌঁছে স্ট্রীভ একটি তাঁবুতে অস্থায়ী স্কুল দেখতে পান। টিচারের অনুমতি নিয়ে তিনি একটি ক্লাসে ঢুকে কিছু ছবি তুলতে চান। সেখানে প্রায় পনেরটির মত কিশোরী বসা ছিল কিন্তু একটু দূরে বসা সবুজ চোখের এক কিশোরী তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
    .
    স্টীভ ক্যামেরা নিয়ে এগিয়ে যেতেই কিশোরীটি উঠে দাঁড়ায় এবং চলে যেতে উদ্যত হয়। স্টীভ মাত্র কয়েক মুহুর্ত সময় পান। দক্ষ হাতে স্টীভ ক্লাসরুমের আলোছায়ার ভেতরেই কিশোরীটির চোখে মুখে ফুটে ওঠা অদ্ভুত আবেগ ও জিজ্ঞাসার কয়েকটি ছবি তুলে নিতে সক্ষম হন। এই ছবিগুলোই পরে বিখ্যাত হয় The Afghan Girl নামে।
    .
    নিউইয়র্কে পৌঁছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক অফিসে ছবিগুলি জমা দিলে সবাই বুঝতে পারে এটা ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। রীতিমতো এডিটোরিয়াল প্যানেল বসে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের কভার পিকচার নির্বাচিত করা হয়। পরের দিন ম্যাগাজিন প্রকাশিত হলে রীতিমতো হৈচৈ পড়ে যায় এবং সবাই কিশোরীটির পরিচয় জানতে চায়।
    .
    বোদ্ধারা ছবিটির কম্পোজিশন , আলোক সঞ্চালন , তার চোখে মুখে ফুটে ওঠা বক্তব্য নিয়ে অনেক গবেষণা করে। অনেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে এই ছবিটিকে "মর্ডান মোনালিসা" হিসেবে অভিহিত করে। এত হইচই এর মধ্যে হঠাৎই স্টিভের মনে পড়ে কিশোরীটির নাম জেনে নেওয়া হয়নি।
    .
    17 বছর পরে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক আবার স্টিভকে একটা টিমসহ পাকিস্তান আফগানিস্তান বর্ডারে পাঠায়। এবারের মিশন মেয়েটির পরিচয় উদ্ধার করা। এর ভেতরে সোভিয়েতরা আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিয়েছে , টুইন টাওয়ার ধ্বংস হয়েছে , আমেরিকান সৈন্যরা আফগানিস্তানে প্রবেশ করায় নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
    .
    পুরনো শিবিরে পৌঁছে স্টিভ সবাইকে ম্যাগাজিনের কভার দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলে অনেক মহিলাই নিজেকে ওই ছবিটির মেয়ে বলে দাবি করে। স্টিভ বুঝতে পারেন এই দাবির পেছনে সামান্য কিছু আর্থিক সুবিধার আশা আছে। কিন্তু তার মনে দাগ কেটে আছে ওই অদ্ভুত সবুজ চোখ আর নাকের উপর একটা ছোট্ট কাটা দাগ এর কথা।
    .
    অনেক খোঁজাখুঁজির পর স্টিভ ও স্থানীয় পশতুন সাংবাদিক রহিমুল্লাহ ইউসুফজাই যখন সমস্ত আশা ছেড়ে দিয়েছেন তখন এক অচেনা লোক খবর নিয়ে আসে। পার্বত্য অঞ্চলে 10 ঘণ্টা কঠিন জার্নি করে একটা ছোট্ট বস্তিতে পৌঁছান স্টীভ। দলের সদস্যদের উদ্দেশ্য ভালোভাবে জানার পরেই স্থানীয় মুরুব্বীরা তাকে মেয়েটির সাথে কথা বলার অনুমতি দেন। এই প্রথম স্টিভ মেয়েটির নাম জানতে পারেন "শরবত গুলা"
    .
    স্টিভ তাকে ব্যাখ্যা করেন এই ছবির কারণে সে কিভাবে বহির্বিশ্বে বিখ্যাত হয়ে আছে। কিন্তু মনে হলো এসব কিছুই তাকে স্পর্শ করে না। শরণার্থী শিবিরের কঠোর জীবন তার কিশোরী চোখ থেকে সমস্ত আশার আলো কেড়ে নিয়েছে। সে এখন তিন সন্তানের জননী। অনেক আলাপের পরে সে তার অবগুন্ঠন সরিয়ে আর একটি ছবি তোলার অনুমতি দেয়। স্টিভ ও তার দলের মিশন সফল হয় কিন্তু বুকের ভেতরে এক অদ্ভুত বেদনা নিয়ে স্টীভ নিউইয়র্কে ফেরেন।
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন