এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  পড়াবই  বইপ্যাঁচা৯

  • কোভিড, সরকারি অপদার্থতা, সামাজিক আক্রমণ, পুলিশি হেনস্থা বনাম এক ‘খুপরিজীবী’ চিকিৎসক

    বিষাণ বসু
    পড়াবই | বইপ্যাঁচা৯ | ১৩ জুন ২০২১ | ৩০৩৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • কর্পোরেট নার্সিংহোম বা সরকারি হাসপাতাল নয়। পাড়ার একরত্তি চেম্বার। অতিমারির প্রবল প্রকোপেও খোলা। নিরন্তর লড়াই সেখান থেকেই। বিরল উদাহরণ। সেই লড়াইয়ের দিনলিপি। অভূতপূর্ব এক সময়ের অবশ্যপাঠ্য দলিল। একটি সদ্য প্রকাশিত বই। পড়লেন চিকিৎসক বিষাণ বসু


    সময়, সমাজব্যবস্থা ও অর্থনীতির নিয়ম মেনেই, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির রাস্তাটা চিকিৎসা-শুশ্রূষার প্রথাগত ধারণা থেকে খানিকটা পৃথক হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতাল এবং হাসপাতাল-ব্যবস্থার বাড়বাড়ন্ত, সম্ভবত, সেই পার্থক্যেরই দিকচিহ্ন। হাসপাতালের ধারণা সদ্য বাজারে এসেছে, এমন অবশ্যই নয়, কিন্তু চিকিৎসাব্যবস্থায় হাসপাতালের সর্বময়তার ধারণা খানিকটা নতুন। অসুস্থের চিকিৎসা স্রেফ হাসপাতালেই হবে, এমনকি হেঁটে চলে বেড়ানো রোগীকেও প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসক দেখবেন হাসপাতালের এক চেম্বারে বা লাগোয়া পলিক্লিনিকে, এই ধারণা তো পুরোনো নয়। নতুন এই ব্যবস্থায় অসুস্থ হওয়া মাত্রই মানুষকে শুশ্রূষা বা নিরাময় পেতে পৌঁছাতে হয় হাসপাতালে, তাঁর পূর্বতন দৈনন্দিন যাপনের প্রেক্ষিতে এক অপরিচিত পরিবেশে। অনিবার্য ভাবেই অসুস্থতার সাথে জড়িয়ে থাকা অনিশ্চয়তা ও অসহায়তার বোধের মুহূর্তে পরিবেশের এই অপরিচিতি উৎকণ্ঠায় বাড়তি মাত্রা যোগ করে। চিকিৎসকের পক্ষেও পরিবেশ থেকে উৎপাটিত রোগীকে আস্ত মানুষ হিসেবে না দেখে স্রেফ কিছু উপসর্গ ও অসুখের সমষ্টি হিসেবে ভাবার আশঙ্কা বেশি। বর্তমান চিকিৎসাবিদ্যার নৈর্ব্যক্তিকতা, যাকে অনেকেই শীতল অমানবিকতা বলে মনে করেন, তার পেছনে চিকিৎসা-পরিবেশের এই বাঁকবদলের ভূমিকা কম নয়।

    এমতাবস্থায় পাড়ার ডাক্তারবাবুরা চিকিৎসাব্যবস্থায় প্রান্তিক ও বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গিয়েছেন। বাড়িতে গিয়ে রোগী দেখার পারিবারিক চিকিৎসক আজকাল কতটুকুই বা চোখে পড়ে? অথচ, চিকিৎসার ক্ষেত্রে বা রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কের নির্মাণে এঁদের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সংশয় থাকলে দৃষ্টিকোণের ফারাকটুকু ভেবে দেখুন। ছবি তোলা কিংবা ছবি খুঁটিয়ে দেখার ন্যূনতম অভিজ্ঞতা থাকলেই বুঝবেন, একই দৃশ্য একই ক্যামেরায় বন্দি হলেও, স্রেফ পার্সপেক্টিভের বদলে ছবিটা আগাপাশতলা বদলে যায়। একই রোগ বা একই রোগীর রোগের আনুষঙ্গিক রূপ পাঁচতারা কর্পোরেট হাসপাতালের এসি চেম্বারের ডাক্তারবাবু এবং সরকারি হাসপাতালের ঘিঞ্জি আউটডোরের ডাক্তারবাবুর চোখে একই ভাবে ধরা দেয় না—দুজন ডাক্তারবাবুই অত্যন্ত সংবেদনশীল ও মানবিক হলেও, না। এবং এঁদের দুজনের দেখার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দৃশ্য ধরা দেয় পাড়ার চেম্বারের তথাকথিত ছোটো ডাক্তারবাবুর চোখে, যিনি কিনা রোগীকে তাঁর পরিবেশ-পরিজন-আবাস-বাসস্থান-পারিপার্শ্বিক মিলিয়ে সমগ্র হিসেবে দেখতে পান, যে সুযোগ সরকারি বা বেসরকারি, কোনো হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরই বরাতে জোটে না।

    কোভিডের দিনগুলোর অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেক চিকিৎসকই লিখছেন। এটি নতুন সহস্রাব্দের প্রথম অতিমারি (‘ক্ষুধা-অতিমারি’ বাদ দিলে—অনেকেই মনে করছেন—যেমন বিখ্যাত ‘নেচার পত্রিকা’, বা ‘অক্সফ্যাম’ এনজিও বা রাষ্ট্রপুঞ্জের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম—দারিদ্র‍্যজনিত খাদ্যের অভাব অতিমারি হয়েই বিশ্বের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে গ্রাস করছে)। কাজেই, বিভিন্ন বয়ানে সে অতিমারি ধরা পড়বে, এ তো প্রত্যাশিতই। সবাই অবশ্য নিজেদের কথা লিখে রাখতে পারবেন না, তাঁদের হয়ে লিখতে হবে বাকিদের। যেমন ধরুন, কাজ-হারানো অনাহারক্লিষ্ট মানুষ বা পরিযায়ী শ্রমিকরা নিশ্চিত ভাবেই কাগজে-কলমে ধরে রাখতে পারবেন না নিজেদের অভিজ্ঞতা—ধরে রাখা বয়ান তো সংশয়াতীত ভাবে শ্রেণিনির্ভর। তবু, চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা যেহেতু এই লড়াইয়ে প্রথম সারিতে রইলেন—রোগ, রাষ্ট্র এবং সমাজ, আক্রান্ত হলেন সবদিক থেকেই—দেখার সুযোগও পেলেন বেশি। নিজেদের কথা তো বটেই, সমাজের বাকি সব শ্রেণির আক্রান্তদের কথাও কাছ থেকে শুনতে পেলেন, পেশাগত কারণে এবং মানুষ হিসেবে। তাঁদের বয়ানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এবং যে কথা আগেই বললাম, এক অন্তরঙ্গ পার্সপেক্টিভ থেকে দেখা ও লেখা বলেই চিকিৎসকদের বিবিধ বয়ানের মধ্যে পাড়ার চেম্বারের ডাক্তারবাবুর বয়ানের তাৎপর্য ভিন্ন গোত্রের। সচেতন সিদ্ধান্ত হিসেবেই পাড়ার ছোটো চেম্বারের ডাক্তার হয়ে রয়েছেন ঐন্দ্রিল ভৌমিক—তাঁর নিজের ভাষায় খুপরিজীবী ডাক্তার। তিনি সুলেখক এবং কুশলী লেখকও বটেন। তাঁর আগের বইগুলোর মতো বর্তমানে আলোচ্য বইটিও খুবই সুখপাঠ্য। কিন্তু সুখপাঠ্য যদি নাও হত, এই বই, ‘করোনার দিনগুলি’, পড়ে দেখা জরুরি।

    মোট বাইশটি কিস্তিতে—বাইশ অধ্যায়ই ধরুন—বিন্যস্ত ছেষট্টিটি পর্ব। অধ্যায়ের বিন্যাস বিশেষ কোনো ভাবনা মেনে হয়েছে কি না, বলা মুশকিল, অন্তত ভাবনাটা আপাত-দৃশ্যমান নয়। প্রথম পর্ব গত বছরের বিশে মার্চ তারিখে লিখিত, যখন দেশে করোনা নিয়ে হইচই সবে শুরু হয়েছে, কিন্তু লকডাউন জারি হয়নি। শেষ পর্বটি লেখা হয়েছে গত বছরের পনেরোই অক্টোবর, দুর্গাপূজার ঠিক আগে আগেই। স্বাভাবিক ভাবেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের ঘটনাক্রম বা টিকা নিয়ে হইচই, কোনোটিই এই লেখায় আসেনি। তবে যা যা এসেছে, তা-ই বা কম কী!

    প্রথম ও শেষ পর্বের মাঝে গড়িয়ে গিয়েছে সাত-সাতটি মাস। জনতা কারফিউ থেকে লকডাউন। অজানা জ্বরের আতঙ্ক থেকে মানুষের নিয়ম না মানায় পৌঁছানো। রাজনৈতিক নেতা তথা প্রশাসনের কাজের কাজ করার বদলে অর্থহীন প্রলাপ ও আত্মপ্রচার। মৃত্যুর মিছিল—করোনায়, অনাহারে, হতাশায়, অন্যান্য অসুখে বিনা চিকিৎসায়। কাজ হারানো মানুষের মুখ। পরিযায়ী শ্রমিকের ঘরে ফেরার মরিয়া প্রয়াস। চূড়ান্ত অব্যবস্থা। রাষ্ট্রীয় অপদার্থতা, অসংবেদনশীল আচরণ। এসবের মাঝে ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দারদের—চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের—মরণপণ লড়াই। মরণপণ শব্দটা আক্ষরিক অর্থেই ব্যবহৃত। ছেষট্টি পর্বে টুকরো টুকরো দৃশ্যের কোলাজে ধরা রয়েছে এই দিনগুলো।

    সঠিক সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়া সংক্রামক অতিমারির বিরুদ্ধে যুদ্ধরত সরকারি কিংবা বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের যদি ঢাল-তলোয়ারহীন বলি, তাহলে ছোটো চেম্বারের খুপরিজীবী ডাক্তারবাবুদের ঠিক কী বলা উচিত, জানা নেই। অতিমারির শুরুর দিকেই মাস্ক বা স্যানিটাইজার সবই বাজার থেকে হাওয়া হয়ে গিয়েছিল—শুরু হয়েছিল চড়া দামে কালোবাজারি (আর পিপিই কিটের তো কথা ছেড়েই দিন)। কাজেই, ঠিক কেমন সুরক্ষা নিয়ে ঐন্দ্রিলের মতো খুপরিজীবী ডাক্তাররা লড়াই জারি রেখেছিলেন, বা রাখছেন, সে সহজেই অনুমেয়। সংক্রামিত বা গুরুতর অসুস্থ হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককের চিকিৎসার দায় সরকার নেবেন, এমন সম্ভাবনা ছিল না, এখনও নেই। নিরুপায় হয়ে এমন অনেক খুপরিজীবী চিকিৎসকই চেম্বার বন্ধ রাখতে বাধ্য হন। ডা. ঐন্দ্রিল ভৌমিকরা হাসপাতাল পরিকাঠামোর বাইরে বিরল কিছু খুপরিজীবী, যাঁরা অনিশ্চয়তা আতঙ্ক ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা বিষয়ে উৎকণ্ঠা জয় করে চেম্বার আগাগোড়া খোলা রেখেছিলেন—এক চেম্বার থেকে আশেপাশের চেম্বারে গিয়ে রোগী দেখেছেন। অনেক চিকিৎসক চেম্বার বন্ধ রাখায় রোগীর ভিড় সামলানো কঠিন হলেও বিরক্ত হননি। আশেপাশে কেউ কোভিড-আক্রান্ত হওয়ায় কোনো চেম্বার বন্ধ হয়ে না গেলে এই বইয়ের ডাক্তারবাবুর রোগী দেখা জারি থেকেছে। আর এই অপরিসীম চাপ সামলে সন্ধেবেলায় বাড়ি ফিরে কোভিড-সংক্রমণের ভয়ে আদরের মেয়েদের থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন, মনোকষ্টে ভুগেছেন—তারপর অকপটে লিখে রেখেছেন নিজের অভিজ্ঞতা, নিজের অনুভূতি, অনেকক্ষেত্রে নিজের অভিমান, হতাশাও—প্রায় স্বগতোক্তির ঢঙে।

    “প্রায়োরিটি বস্তুটা কী? এদেশে যার বেশি অর্থ আছে, তার ইচ্ছাটাই হল প্রায়োরিটি। বেশি পরিমাণে অর্থ উপার্জনের কৌশল শেখাই সবচেয়ে বড়ো শিক্ষা। সেই প্রায়োরিটির চাপেই N95 মাস্ক বাজার থেকে রাতারাতি হাওয়া হয়ে যায়।”

    “আমি খুবই ভীতু মানুষ। তাই আর বিতর্কিত বিষয়ে যাব না। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই নিয়ে গলা ফাটানোর জন্য এক ডাক্তারবাবুকে পুলিশের হাতে নাকাল হতে হয়েছে। অতএব আমি পিপিই নিয়ে কিছু লিখব না। আমি চিকিৎসক। চিকিৎসা করতে গিয়ে টিবি, হেপাটাইটিস, করোনা সব কিছুতেই আক্রান্ত হতে পারি। সেটা অকুপেশনাল হ্যাজার্ড। তাতে আমার তেমন আপত্তি নেই। কিন্তু পুলিশ-টুলিশ আমার তেমন সহ্য হয় না। এমনিতেই করোনায় না মরলেও পাবলিকের হাতে মরতেই হবে।… ওই যে বললাম, প্রশাসনকে বড়োই ভয় পাই। পুলিশের সামনে নির্ভয়ে ডাক্তারকে চড় মারা যায়। কিন্তু সেই চড় খাওয়া নিয়ে উচ্চবাচ্য করলেই প্রশাসন ডাক্তারকেই ধমক লাগায়।”



    ডা. সুধাকর রাও। বিশাখাপত্তনম শহরে চিকিৎসক। প্রথমে সাসপেন্ড করা হয়, পরে গ্রেপ্তার। অভিযোগ, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য অধিকতর সুরক্ষা-পোষাক দাবি করে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন তিনি। ২০২০-র মে মাসের ঘটনা।


    ঘোর অতিমারিকালে প্রশাসনিক অপদার্থতা, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা জোগানোর ব্যাপারে প্রশাসনের ব্যর্থতা, এমনকি সংকটকালে পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে অনীহা—স্বাস্থ্যক্ষেত্রে লাগাতার সরকারি অবহেলার চিত্র এই অতিমারির দিনে একেবারে বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। লেখাগুলোর মধ্যে ঐন্দ্রিলের অভিমান-হতাশা-ক্রোধ-বিরক্তি স্পষ্ট। জানিয়ে রাখা যাক, এই বইয়ের চমৎকার একটি পদ্য-ভূমিকা লিখেছেন কবি অরুণাচল দত্ত চৌধুরী, যিনি বছর কয়েক আগেই ডেঙ্গু-মোকাবিলায় সরকারি অবহেলার চিত্র প্রকাশ্যে এনে চূড়ান্ত হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন।

    আবার অপরদিকে, বিপদের ঝুঁকি নিয়ে নিরন্তর লড়ে যাওয়া চিকিৎসক-নার্স-সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি বৃহত্তর সমাজের ন্যূনতম সংবেদনশীলতার অভাব, স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থা করার ঘটনা, কোভিড মোকাবিলায় যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের পাড়াছাড়া করার একাধিক ঘটনা, খ্যাতনামা অভিনেতা-নেতার এই অতিমারিকালে চিকিৎসকদের প্রতি বিদ্বেষ উগরে দেওয়া—ক্লান্ত ও হতাশ ঐন্দ্রিল লেখায় ধরেছেন সেসবও।

    তবু এই বই শুধু তিক্ততা বা হতাশায় সীমাবদ্ধ থাকে না। সবকিছুর শেষে এ বই মানবিকতার, নিরন্তর ভালোবাসার। চিকিৎসক হিসেবে সামনের অসুস্থ মানুষটিকে ভালোবাসার—রোগগ্রস্ত অসহায় মানুষটির হাত না ছাড়ার—অতিমারির আতঙ্কে কিংবা কর্মহীনতার হতাশায় বিপর্যস্ত মানুষকে ছুঁয়ে থাকার—এবং ঘোর অনিশ্চয়তার কালে, সেই ভালোবাসা বহু গুণে ফিরে পাওয়ার। অনেক বছর বাদে, কোনো চিত্রপরিচালক যদি এই অতিমারির দিন নিয়ে সিনেমা বানাতে চান, ‘করোনার দিনগুলি’-র খণ্ডদৃশ্য জুড়েই তিনি চমৎকার একখানা চিত্রনাট্য লিখে ফেলতে পারবেন।

    আবার বইটা পড়তে পড়তে আলব্যেয়ার কামু-র বিখ্যাত উপন্যাস দ্য প্লেগ-এর একটি সংলাপের কথাও মনে পড়ে যায়। সেখানে এক হতাশ সাংবাদিক উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র চিকিৎসককে বলেন, “না, আপনি বুঝতে পারছেন না। আপনি শুধুই যুক্তির ভাষায় কথা বলছেন, হৃদয়ের ভাষা বা ভালোবাসার ভাষায় নয়। আপনি এক বিমূর্ততার দুনিয়ায় বাস করছেন।” এমন আশ্চর্য সংকটের দিনে, চিকিৎসককে যুক্তির ভাষা বাদে বাকি ভাষা সরিয়ে রেখেই কথা বলতে হয়—মৃত্যু-অসুস্থতা-হতাশার ক্রমবর্ধমান স্রোতের মুখে, সম্ভবত, কিছুটা বিমূর্ততা ভিন্ন তাঁর পক্ষে দায়দায়িত্ব সামলে কাজ চালিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। তবু, বিশ্বাস করুন, হৃদয়ের ভাষা কিংবা ভালোবাসার ভাষা চিকিৎসক ভোলেন না, ভুলতে পারেন না। সে ভাষা বিস্মৃত হলে তিনি কি আর চিকিৎসক থাকতে পারেন!! এই বই সেই যুক্তির ভাষা ও ভালোবাসার ভাষা একাকার হয়ে যাওয়ার দলিল।

    বইটির ছাপা-বাঁধাই চমৎকার। সুন্দর প্রচ্ছদ এঁকেছেন সায়ন কর ভৌমিক। অক্ষরবিন্যাসও দিব্যি। এমন দৃষ্টিসুখকর ও অবশ্যপাঠ্য বই মাত্র একশো দশ টাকায়, সত্যিই ভালো উদ্যোগ।




    করোনার দিনগুলি
    ডা. ঐন্দ্রিল ভৌমিক
    গুরুচণ্ডা৯
    মুদ্রিত মূল্য : ১১০ টাকা
    প্রাপ্তিস্থান: কলেজস্ট্রিটে গুরুচণ্ডা৯ বইঘর, দে'জ, দে বুক স্টোর(দীপুদা)


    বাড়িতে বসে বইটি পেতে হোয়াটসঅ্যাপে বা ফোনে অর্ডার করুন +919330308043 নম্বরে।



    গ্রাফিক্স: মনোনীতা কাঁড়ার
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • পড়াবই | ১৩ জুন ২০২১ | ৩০৩৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ১৫ জুন ২০২১ ০৮:২৩494950

  • খুবই গুরত্বপূর্ণ দলিল, বলাভাল, কলেরকণ্ঠ। গুরুচন্ডালিকে সাধুবাদ বইটি প্রকাশে। 



    যদিও সীমান্তের ওপারের ঘটনা, কিন্তু এপারেও যেন একই সব ঘটনার পুনাবৃত্তি। ভাবতে ভাল লাগছে, বিচ্ছিন্নভাবে হলেও এর কিছু লেখা পড়েছি। 



    স্যালুট ডাক্তার ঐন্দ্রিল!


    ধন্যবাদ বিষাণ বসু, প্রিয় লেখক।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন