এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সুন্দরবন ত্রাণ চায় না তোমার কাছে

    Manab Mondal লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৬ মে ২০২১ | ১৩৭৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • আয়লা, আম্ফান থেকে আমরা শিক্ষা নিই নি, শুধু ভিক্ষা নিয়েছি - সমীরণ মন্ডল সুন্দরবনের মানুষের মনের কথা বলেন তার পোষ্টে, সেখান থেকেই এ লেখাটির কথা মনে হল।

    বিনামূল্যে আপনি চাল পাবেন, ডাল পাবেন, সব পাবেন কিন্তু শিক্ষা পাবেন না, কারণ, শিক্ষিত মানুষরা প্রশ্ন করতে পারেন। গিয়েছিলাম ওখানে তিন বছর পর। দেখেছিলাম তখন ধান চাষ করতে পারছিলো মানুষরা। সেই স্মৃতি এখনও ফিরে আসছে বারে বারে। ত্রাণ এবার জুটবে বা জুটবে না - সেই প্রশ্নর উত্তর আছে নেতাদের কাছে। টাকা নাকি কম এসেছে। ঐ অঞ্চল দিয়ে ঝড়টা ঠিক যাচ্ছিল না বলে। রাজনৈতিক নেতারা রাজনীতি করবে। লড়াইটা একাই লড়বে সুন্দরবনের মানুষ। ওরা এখনও লড়ছে।

    ইয়াশ সাথে লড়াই এর প্রস্তুতির ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাঘুরি করছে, আপনার চোখেও পরেছে নিশ্চিত। কিছু বলার নেই! আবাস যোজনায় ঘর কেন পায় নি লোকে এতদিনেও! প্রশাসন বলে কিছু আছে ওখানে? এত বছরেও বদলানো না সুন্দরবনের ভাগ্য। এদিকে মাটির বাঁধ মেরামত কাজ করছে স্থানীয়রা। সুন্দরবনের একাধিক জায়গায় একাধিক দ্বীপে চলেছে লাগাতার বাঁধের কাজ, বাঁধের অবস্থা প্রতিটি জায়গায় ভীষণ খারাপ, আমফানের এক বছর পরেও কিন্তু সব জায়গায় বাঁধ মেরামত হয় নি, এক বছর ধরে পরে থাকা বাঁধ মেরামত হচ্ছে এই মুহূর্তে, এই মুহূর্তে হাজারে হাজারে মানুষ বিভিন্ন দ্বীপের বিভিন্ন বড় বড় এরিয়াতে বড় বড় বাঁধের যে ফাটল ধরেছে এবং যে ফাটল দিয়ে জল আসছে, সাথে সাথে বাঁধ ছাপিয়ে জল ঢুকছে এলাকায় - তা সামাল দেবার জন্য ভাটার সময় হাজার হাজার মানুষ কাজ করছে ।

    ভরা কোটাল ও ঝড়ের জন্য চারিদিকে বাঁধের অবস্থা ভীষণ খারাপ। কিন্তু এই সময় যেভাবে কাজ হচ্ছে সেটা হল সমুদ্রের মাঝে বাঁধ তোলার মত (বালির বাঁধ) ক্ষণস্থায়ী। কারণ নোনামাটির শক্তি কম তাই তার ধারণক্ষমতা কম। এখন যেখানে যেখানে বাঁধ হচ্ছে, মাটি দেওয়া হচ্ছে সে সব জায়গায় আবার ফাটল ধরছে, ধ্বস নামছে। সব জায়গায় নদীর বাঁধ নীচু আর সরু যার কারণে আজ এই দুর্ভোগ দুর্দশা। এখন কাজ হচ্ছে রাতেদিনে কিন্তু এই কাজগুলো যদি আগে হত তাহলে হয়তো এত ভাবনা হত না।

    একদিকে বিশাল ঝোড়ো হাওয়া, আর এক দিকে রায়মঙ্গল নদীর বিশাল জলস্রোত - বাঁধকে ভেঙে ফেলতে চাইছে। আসলে এইভাবে প্রতিটি বছর এমন চলতে থাকলে সুন্দরবনের মানুষ আরো অসহায় হয়ে পড়বে, তাদের উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকবে না।

    ত্রাণ কার্য কখনোই স্থায়ী সমাধান নয় - চাল, ডাল স্থায়ী সমাধান নয়। সুন্দরবনের এই দুর্দশা, দুর্ভোগের স্থায়ী সমাধান হতে পারে একমাত্র ভালো কংক্রিটের বাঁধ আর প্রচুর ম্যানগ্ৰোভ এর ব্যবস্থা করতে পারলে।

    তাই সুন্দরবন ত্রাণ চায় না, চাল ডাল চায় না, চায় না কোন ক্ষতিপূরণ ---------

    কোনো কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ পরিকল্পনায় সুন্দরবনের মান উন্নয়ন সম্ভব নয়। সুন্দরবনের জন্য চাই স্পেশাল কিছু ভাবনাচিন্তা, স্থায়ী পরিকল্পনা এবং নিরপেক্ষ বাস্তবায়ন। যার মধ্যে কংক্রিটের বাঁধ নির্মান একটি অন্যতম বিষয়। ইউপিএ সরকার এবং রাজ্যের বাম সরকার যে প্রয়াস গ্রহণ করেছিল ৫০০০ কোটি টাকার প্রাথমিক বাজেট বরাদ্দ করে। সুন্দরবনের জনজীবন বাঁচাতে এটিই প্রাথমিক কর্তব্য। তাহলে এখানে বিকল্প পেশা হিসেবে কৃষির প্রভাব তৈরি হতে পারে নচেৎ নয়। কৃষির প্রভাব বৃদ্ধির সাথে সাথে জঙ্গল নির্ভরতা কমতে পারে। প্রতিটি বাড়ি পাকা করা উচিৎ আবাসযোজনার মাধ্যমে আর এটি হতে হবে সম্পূর্ণ পক্ষপাতিত্বহিন ভাবেই। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জায়গায় সরকারি প্রকল্পের তেমন পক্ষপাত দেখা না গেলেও সুন্দরবনে সেটা সম্ভব হচ্ছে না নচেৎ সরকার পরিকল্পনা করছে দুয়ারে রেশন কর্মসূচি, আর, এখানে সাধারণ মানুষের রেশন কেড়ে নেওয়া হচ্ছে কী করে? জমিদারি চলছে, রাজতন্ত্র চলছে নাকি গণতন্ত্র চলছে - বোঝা মুশকিল। সুন্দরবনের উন্নয়ন হতে পারে সম্পূর্ণ একটি নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র প্রশাসন দ্বারা। আর এটাও চালান সম্ভব নয় এত বেকার ঝান্ডাবাহির জন্ম হলে। বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সুন্দরবনকে নিজের সম্পর্কে ভাবতে শিখতে হবে এবং আসছে বছর আবার হবে মানুষ আবার ত্রাণ পাবে - এই কর্মসূচি সম্পূর্ণ বাতিল করে দিতে হবে, রাজনৈতিক মতবিরোধ দূরে রেখে সুন্দরবনের নুন্যতম উন্নয়নে একমত হতে হবে।

    আসলে মূল সমস্যাগুলো বোধহয় বোঝা দরকার। কেন্দ্রীয় সরকার প্রচুর টাকাও পাঠান খবরে আপনারা দেখেন, কিন্তু নীচের স্তরের স্বার্থান্বেষী, প্রতিহিংসাপরায়ণ মানুষরা কখনই ভালোভাবে ভালো কাজের কথা ভাবছে না, ভাবেই না। তাদের কাজের কোন পরিকল্পনা নেই, তারা কখনোই গ্ৰামকে নিয়ে, গ্ৰামবাসীদের নিয়ে ভাবেই না। নিজেদের আখের গুছিয়ে চলেছে সারাটি জীবন, যাদের জন্য এই দুর্দশায় থাকে সুন্দরবন।

    এদিকে নদী লাগোয়া প্রচুর ফিসারী এবার সুন্দরবনের বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢোকাবে। এই সব মুনাফালোভী পরিবেশের শত্রু অবৈজ্ঞানিক ফিসারীগুলো অবিলম্বে বন্ধ হোক। নন্দকুমারপুরে ফিসারীর ঠুনকো ফাটল ধরা বাঁধ ভেঙে মৃদঙ্গভাঙা নদীর জল ঢুকছে পুরাতন বাজারের কাছে!!! কাছেই অজস্র মাঠে সব্জির চাষ! সব গেলো বলে!

    একথা গুলো আমার নয়, সুন্দরবনের মানুষ এর হৃদয়ের কথা।

    উপকূলবর্ত্তী অঞ্চ‌লের মানু‌ষের স‌ঙ্গে এই বাঁধ নামক মস্করা‌টির ক‌বে অবসান ঘট‌বে জানা নেই? ত্রান নামে ভিক্ষার দরকার নেই তাই সুন্দরবনের।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন