এপারে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানের আলীকদমের পাহাড়ে মাতামুহুরি নদীর শুকনো খাতে এবার চমৎকার হয়েছে চাষবাস, যতদূর চোখ যায়, শুধু সবুজ, আর সবুজ। শেষ বিকালের মিষ্টি রোদে চিকচিক করে গাছের পাতাগুলো। মন মেদুর করে দেয় বসন্ত বাতাস। হঠাৎ ডেকে ওঠে নাম না জানা এক বুনো পাখি!
তবে এই সবুজের সমারোহের ভেতরে রয়েছে প্রাণঘাতী বিষের আয়োজন। সবই আসলে বিষাক্ত তামাকের ক্ষেত। আর মারাত্নক প্রকৃতি বিরূদ্ধ এই চাষে জুম চাষী পাহাড়িদের উস্কে দিচ্ছে ব্রিটিশ-আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি।
খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তারা জুমিয়াদের বীজ, সার-কীটনাশক, কিছু নগদ অর্থও আগাম দেয়। আবার তামাক পাতা কেটে ধুয়ে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করার উপযোগী করে তৈরি করলে কোম্পানির লোকেরাই এসে কিনে নিয়ে যায়। অর্থাৎ ফসল বাজারজাত করার ঝামেলা নাই। বেচাকেনায় লোকসানেরও ভয় নাই।
আর ধান চাষের চেয়ে তামাক চাষে লাভ অনেক বেশী। চাষের ঝামেলাও কম।
তবে শেষ পর্যন্ত কিছু ঝামেলা থাকেই। কিন্তু এর কোনটিই কোম্পানিকে পোহাতে হয় না। তাই এ নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নাই।
তামাকজাত বিড়ি-সিগারেট-জর্দার স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ছাড়াও রয়েছে আরও নেতিবাচক দিক। তামাক পাতা যে নদীতে ধোয়া হয়, এর বিষে ছোট মাছ, কাঁকড়া, ব্যাং, শামুক-ঝিনুক, পোকামাকড়সহ পরিবেশের জন্য উপকারী বিভিন্ন অনুজীব মারা পড়ে।
এছাড়া দীর্ঘদিন তামাক চাষের ফলে অনেক চাষীই ভোগেন শ্বাসকষ্টসহ ফুসফুসের রোগে। আবার অনেকের হাত-পায়ের নখও খসে যাচ্ছে। কিন্তু নগদ অর্থের জন্য, ছেলেমেয়ের মুখে দুটি অন্ন তুলে দিতে হত-দরিদ্র প্রান্তিক চাষীর এ ছাড়া কোনো বিকল্প উপায়ও নাই।
শুধু আলীকদম নয়, বান্দরবানের লামায় মাতামুহুরির কোলে, আর রুমার শংখ নদীর ধারেও দেখেছি তামাকের অবাধ চাষাবাদ। আসলে বান্দরবানে তো বটেই, এমনকি কক্সবাজারের চকোরিয়ারও আনাচে কানাচে চলছে অবাধে তামাক চাষ।
এ নিয়ে একদা প্রচুর সরেজমিন সংবাদ করেছি। বন্ধু, সহকর্মী বুদ্ধজ্যোতি চাকমারও বেশ কিছু সাড়া জাগানো প্রতিবেদন চোখে পড়েছে। গুগল করলে ইংরেজি-বাংলায় এ সংক্রান্ত আরো খবর খুঁজে পাওয়াও হয়তো কঠিন হবে না।
তবে প্রকৃতি বিরূদ্ধ-স্বাস্থ্য বিরূদ্ধ এই চাষাবাদ কিছুতেই থামছে না। আর এসব দেখারও যেন কেউ নাই।