এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেমন্তের খাতা 

    Chirasree Debnath লেখকের গ্রাহক হোন
    ১১ অক্টোবর ২০২০ | ৯১৫ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  •  
    চিরশ্রী দেবনাথ
     
    হেমন্তের খাতা 
     
    বেশ কয়েক বছর পর একজন কবি নোবেল প্রাইজ পেয়েছে। 
    এ উপলক্ষে আজ সকালেই হেমন্ত  খুঁজে পেল দুটো নতুন    রকমের নক্সাকাটা প্রজাপতি, ঘাসের ডগায় দুলছে।
    এ  তবে  পৃথিবীর আনন্দ উৎসারণ। কোথাও নতুন কিছু সৃষ্টি হলে, আনন্দের  কিছু হলে পৃথিবী উপহার দেয়। হয়তো যে 
    উপহার পেয়েছে সে জানলই না, তার জন্য জমা হয়েছে
    শিশিরের চিঠি।
    টি ভির খবরে বার বার ভেসে এসেছে কবির নাম, যেন কোথাও অর্ন্তদহনের রেজাল্ট বেরিয়েছে। 
    সেই কবি কেমন কবিতা লেখে তা জানে না হেমন্ত। হেমন্তও    কবিতা লেখে। তার কবিতার ভাষা অনাধুনিক। বহু পুরনো শব্দ ব্যবহার করে পুরনো ঢং এ লেখা লাইন। এইসব  লাইন বৃষ্টি থেকে পাওয়া, দুগ্ধলালিত, নরম পলির আলপথের মতো। চারপাশে মাঠ, দূরে দূরে বাড়ি, একটি মাত্র পিচ ঢালা রাস্তা আর একজন অনিয়মিত ডাক্তার সহ গ্রামীন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, দুর্বল গ্রাম্য স্কুল, ভুল উচ্চারণে ছাত্ররা শেখে প্রিয় মাতৃভাষা, মায়ের কাছে যেমন শিশুর ভাষা লেপ্টে থাকে ধুলোর মতো সহজ হয়ে। 
      এ গ্রামের কোন নবীন যুবা আয়ত্ত করতে পারেনি নতুন ভাষা, বুক ফেটে বেরিয়ে আসা ঝিনচাক নেশাগ্রস্থ  শব্দ।  হেমন্তের কাছে কবিতা মানে রবীন্দ্রনাথ, কবিতা মানে মাঠে জমে থাকা হাঁটুজল, পাশের বাড়ির কল্যানী নামে মেয়েটির অগোছালো মুখ, কাল রাতে যার বাবা বলেছে তার বিবাহ ঠিক হয়েছে। সেই থেকে কোথাও একটি ঝর্ণা রোপিত  হয়েছে, নোনা জল গড়িয়ে যাবে আজন্ম এমনই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাকে মাটি দিয়ে গড়া এক ক্ষয়িত জরায়ু।
    হেমন্তের কবিতার খাতা রুলটানা কাগজের। সাদা সুতো দিয়ে সেলাই করা, বাইরে যত্নে লাগানো মলাট, স্কেচপেনে লেখা নাম,
    "হেমন্ত সরকারের কবিতার খাতা "
    এই ঠিকানা নৌকোর ছই এর মতো, যার ভেতর রাখা আছে দু বস্তা আতপ চাল, তাজা সব্জি, পান সুপুরি আর অবকাশ।
    কবিতা শোনাতে তাকে যেতে হয় নদীর কাছে।
    সেখানে গরু চরায় কানাই।
    কানাই হেমন্তের কবিতা শোনে।
    পৃথিবীর বুকে তখন একজন লেখক, তার নাম হেমন্ত। একজন শ্রোতা, তার নাম কানাই।
     
    হেমন্ত লিখেছে,
    "ধান মারাই শেষ হলে তুমি নিয়ে এসো ধূপ
    আমি জ্বালাবো বাতি, তোমার চোখে ধারা "
     
    কানাই মাথা নাড়িয়ে বলে, কি সুন্দর লিখেছো দাদা, তা এবার    মনে হয় ভালো ধান হবে, কত টাকার সার লেগেছে জানো? 
    হেমন্ত খাতা থেকে মাঠে আসে, ঝাপসা চোখে ভাবে, বন্যা না হলেই ভালো। ফসলের দাম উঠুক। 
     কানাই এর তিন ছেলে, পড়াশোনা শেখে গ্রামের স্কুলে, তাদের জন্যও নতুন কবিতা লেখা দরকার।
    কিন্তু হেমন্তের যে নতুন কবিতা আসে না, তার শরীর ফেটে কেবলি ভাসে বহু মথিত ভাব। তার কাছে নতুন পংক্তি নেই,
    জমাট বাঁধা স্বপ্ন নেই, আবেগের প্রকৌশুলীজনিত প্রচার নেই।
    সে যেন গ্রামের সন্ধ্যার কীর্তন, হরির লুট কিংবা বহুদিন আগে যে দূরদর্শনে শুরু হতো সকালের প্রথম খবর, তার মতো।
    কত কবি কত কিছু নাকি লেখে, সভা হয়, পাঠ হয়, বাক্য ঝরে
    বিশ্ব চেতনা নিয়ে,
    গভীর সুখ আর নিজের সৃষ্ট হীনম্মন্যতার পতাকা নিয়ে হেমন্ত সরকার লেখে,
     
    "পৃথিবীর কত ক্ষতি হলো, আজ ধীরেন কাকা চলে  গেলো। 
    একমাত্র কাকা জানতো, আমন ধানের উপচে ওঠার কৌশল, 
    কাকা-ই জানতো, বিড়ি পাতার পোড়া গন্ধে, আমি লিখি জাহানারার নাম "
    নীচে লিখল, ধীরেন দাস স্মরণে 
     
    গ্রামের নাম : আলপনা
    নদীর নাম : লক্ষ্মীপুর 
    শরৎকাল, দুর্গা পুজো আসন্ন
    কুয়াশা পড়া এখনো শুরু হয়নি
    তারিখ : তেইশ আশ্বিন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ 
     
     
     
     
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন