এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • "প্রহার'' ও "এ ওয়েন্স ডে'' : ঈশ্বর-ঈশ্বর খেলা

    হরিদাস পাল
    আলোচনা | বিবিধ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ | ৬২৫ বার পঠিত
  • শিব্রাম চক্কোত্তি মশাইয়ের "কিশোর সংকলন''এ ছিল একটি অনন্য স্বাদের কবিতা। ছোট্ট মেয়ে শিবি কিছুতেই "পৃথিবী'' বানান লিখতে পারছে না। ওর খামখেয়ালে ওটা কখনো হচ্ছে পৃথীবী, কখনো পৃথিবি বা কখনো প্রিথীবি। অনেক চেষ্টার পর ও অনায়াসে বলে- " --- থ'য়ে হ্‌স্বই, বয়ে হ্‌স্বই বসিয়ে দেব 'থিবি' "। তখন হতাশ গুরুজন ওকে বোঝান যে "পৃথিবীর একটা নিজস্ব নিয়ম আছে। তুই সেটা না বুঝে পৃথিবীকে ইচ্ছেমত বানাতে পারিস নাকি? কেন নয়? শিবি পাল্টা প্রশ্ন করে --
    "যেমন করে কার্ল মার্কস্‌, বুদ্ধ, লেনিন, গাঁধি। ---- আরও অনেকে, ইত্যাদি, আমিও যদি তেমনি করে বানাই?''- প্রশ্ন করে শিবি।

    ছোটবেলা থেকেই শিব্রামের ছোট্ট মেয়ে শিবি'র বকলমে করা ঐ প্রশ্ন আমাকে ডিস্টার্ব করে। সব মহাজনই নিজের নিজের মত করে নির্মাণ করতে চান এক নিজস্ব ভুবন। তাতে কার বাবার কি এল-গেল। হ্যাঁ, কিচ্ছু কি এল-গেল না? যদি উনি ওই ভুবনটি নিজের মনোজগতে নির্মাণ করতে চান তাহলে কার কি বলার থাকতে পারে? উনি তো কারও পাকাধানে মই দিচ্ছেন না। উল্টে ফাউ হিসেবে পাওনা হতে পারে কিছু চমৎকার সাহিত্য-শিল্প। কিন্তু একই ভাবে নিজস্ব ভুবনটি যদি বাইরের দুনিয়ায় নির্মাণ করতে চান তাহলে আপনার-আমার-পদিপিসীদের অনেককিছু বলার থাকতে পারে।

    ধরুন, সালভাদোর দালির ঐ আকাশ থেকে গলে গলে পড়া নানান মাপের ঘড়িগুলো দেখে কেউ উদ্দীপিত হতে পারেন, আবার আমার মতন যাঁদের কাছে পেন্টিং ক'অক্ষর গোমাংস, তাঁরা ক্লান্ত হতে পারেন। এ'নিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামার কোন সম্ভাবনা নেই। কিঞ্চিৎ বচসা হলেও হতে পারে, তার বেশি নয়। কিন্তু যদি কেউ যদি বলেন যে আমি এই রাষ্টৃকে হিন্দুরাষ্ট্র বানাবো, ফলে আমার বানানো কোড্‌ অফ কন্ডাক্ট যাঁরা মানতে রাজি নয় তারা এদেশ ছেড়ে চলে যাক। তখন? অথবা, এইদেশ পাকিস্তানের বা বাংলাদেশের মত একটি ইসলামিক রাষ্ট্র হবে। ফলে যারা ইসলামিক আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় তাদের ভবিতব্য দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে থাকা। একই ভাবে যদি কেউ তার নির্দিষ্ট ভূভাগ খালিস্তান বা কেরেস্তান করতে চায় তো?
    আবার অন্য কেউ, ধরুন আমার মত কিছু হরিদাস পাল, যদি ভাবে যেমনি চলছে চলুক না, পরিবর্তন আপনা-আপনি নিজের নিয়মে হবে, তোমার সাধ্যি কি যে কিলিয়ে কাঁঠাল পাকাও--- তাকে কি বলবেন?

    কি বলবো? প্রথম মতের লোকেদের জন্যে কিছু ছিঁটে ফোঁটা শ্রদ্ধা থাকলে বলবো-- বিপ্লবী! আর অশ্রদ্ধা হলে -- সন্ত্রাসবাদী! কি, বিশ্বাস হল না? খেয়াল করুন গত শতকে, বা বছর ষাটেক আগেও ইংরেজদের চোখে আইরিশ বিপ্লবী বা 'সিন ফিন'রা, ক্ষুদিরাম- ভগৎ সিং- সুর্য সেনেরা, মালয়-বার্মা- ফিলিপাইনের জঙ্গলের ক্‌ম্যুনিষ্ট গেরিলারা-- সব, সব টেররিষ্ট! এমনকি কাঠমান্ডুতে রাজগদিতে বসা পুষ্পকুমার দহল বা "প্রচন্ড'' আজও আম্রিকার টেররিষ্টদের সূচীতে আছেন। নাম কাটা যায় নি। আজ নয় কাল যাবে হয়তো। আর তামিল ইলমের জন্যে নিরন্তর কয়েক দশক ধরে যুদ্ধচালানো প্রভাকরণ? সবাই কিন্তু টেররিষ্ট। কাদের চোখে? অত্যন্ত অব্‌ভিয়াস উত্তর--- যাদের রাস্তায় এরা কাঁটা বিছিয়েছে বা নিজেরা কাঁটা হয়ে যন্ত্রণা বাড়িয়ে চলেছে। তালিকা দীর্ঘ করে লাভ নেই। কিন্তু, সমর্থক বা ভক্তদের চোখে? এরা বীর, রূপকথার নায়ক, একাই একশ'। এরাই ন্যায়হীন ধরার ধুলিতে ন্যায়ের আশা,"ভগবানের চাবুক''। পরিত্রাণায় চ সাধুনাম্‌, বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম, ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।

    আমাদের চোখে তাজ হোটেলের হামলার পর জীবিত অবস্থায় ধরা পরা একমাত্র হামলাকারী কাসভ হয়ত ঘৃণ্য বা বিপথগামী আতংকবাদী। কিন্তু "লশ্‌কর'' সমর্থকদের কাছে ও হয়ত জীবনপণ করে আল্লার স্বর্গরাজ্য স্থাপন করার অন্তহীন সংগ্রামে এক সম্ভাব্য শহীদ। যেমন ভিন্দ্রনওয়ালে এক উন্মার্গগামী মেগালোম্যানিয়াক্‌ না হয়ে খালিস্তানপন্থীদের মনে শহীদের স্থান পেয়েছেন। অন্যে পরে কা কথা! প্রথমবার বাবরি মসজিদ ভাঙার অসফল প্রয়াসের সময় পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়া কোলকাতার বড়বাজারের কোঠারি ভাইয়েরা - পরবর্তী সময়ে মসজিদভাঙার তারিখ পর্য্যন্ত আর এস এস এর প্রচারে হিন্দুরাষ্ট স্থাপনার লড়াইয়ে শহীদ ছিলেন!

    এখানে একটা খেলা আছে। জনগণ বিজয়ীর পক্ষে, ইতিহাস বিজিতকে মনে রাখে না।

    জিতলে আপনি দিগ্বিজয়ী আলেকজেন্ডার, হেরে গেলে লুটপাট করনে ওয়ালা ডাকু। বিজয়ী হলে হিজ্‌ হাইনেস চিফ অফ স্টেট - হারলে টেররিস্ট্‌। তাই কালকে এল কে আদবানি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, তখন বাবরি ভাঙার কোর্টকেস আস্তে করে চোরাপথে (হিন্দিতে পতলী গলী সে) গুটিয়ে নেয়া হবে।তাই হে স্বতন্ত্র তামিল ঈলমের স্বপ্নদ্রষ্টা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ! আপনাকে মশায় জিততেই হবে, যে করে হোক। নইলে আপনি টেররিষ্ট। আপনার নাম ইতিহাসের পাতায় উঠবে না। হয়তো আপনাকে নিয়ে থিলার লেখা হবে, "'শৃগালের দিনগুলি''-র মত সিনেমা হবে।

    আর দ্বিতীয় মত? অর্থাৎ, হরিদাস পালদের মত? হিন্দিতে---"যথাস্থিতিবাদী'', বা আড্ডার লিংগোতে স্ট্যট্যাস্‌কুয়োর পক্ষে। পরিবর্তনএর বিরুদ্ধে। তাহলে হরিদাসবাবু, আপনি একজন পদিপিসি অর্থাৎ শেষবিচারে এস্টাব্লিশমেন্টের লোক। আপনি মনে করেন ঈশ্বরের দুনিয়ায় সবকিছু ঠিকঠাক চল্‌ছে? মানে ছোটখাটো অসংগতি-বিসংগতি সব "মেলাবেন, তিনি মেলাবেন''? বা যেমন কমলকুমার মজুম্‌দার মশাই বিক্রমন নায়ারকে বলেছিলেন---- অসাম্যই ঈশ্বরের অভিপ্রেত!!
    ---- না রে ভাই! আমি আদৌ মনে করি না যে সব্‌ কুছ্‌ ঠিকঠাক্‌ চল রহা হ্যায়। আমি পরিবর্তন চাই, অনেককিছু পাল্টাতে চাই।
    ----বিশ্বেস হচ্ছে না। ঝেড়ে কাসুন্‌, যেমন?
    ---- আমি চাই অনেকগুলো অসাম্য-বৈষম্য দুর হোক। ধরুন- লিঙ্গবৈষম্য, জাতিবৈষম্য, আর্থিক বৈষম্য, এলিট ও সাব অল্টার্ন বৈষম্য।
    ----খোলসা করে বলুন দিকি! লিঙ্গবৈষম্য থাকবে না মানে কি ছেলেমেয়ে সব ঐ ইউনিকোড্‌ ভার্সান গোছের কিছু হবে? ছেলেদের ছেলে, আর মেয়েদের মেয়ে বলে চেনা যাবে না?
    --- আরে না, না! চেনাটেনা সব যাবে, খালি ওদের জন্যে সামাজিক-নৈতিক মাপকাঠিগুলো একই হবে। চটবেন না, বুঝিয়ে বলছি। ধরুন, চাকরি সুত্রে বাইরে আসা একা একটি ছেলের মাথাগোঁজার জন্যে বাড়ি খোঁজা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। দরদামটা হয় ভাড়া ও স্পেস্‌ নিয়ে। ওকে নিজের পেডিগ্রি, আইডেনটিটি, রেফারেন্স দিতে হয় না। কিন্তু মেয়েদের বেলায় এ'সব লাগে। ওর সঙ্গে বাবা-মা কেন নেই, ও বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে কি না--- এ'সব জানাতে হয়। ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে জানার চেষ্টা থাকে আয়ের উৎসটি কি? মেয়েটি কলগার্ল্‌ নয় তো?
    --- আর জাতের ব্যাপরটা? রিজার্ভেশন তুলে দিতে চান?
    --- ওসব বড় বড় নেতারা ঠিক করবেন, আমি বুঝিনে। যেটুকু বুঝি---- মানুষ জন্মায় বাপ-মার ইচ্ছেয়। তাহলে ব্যাঙাচির লেজের মতন তার দায় নিয়ে লোকের ঘেন্না কুড়োবে কেন? লিঞ্চ হবে কেন? এই ধরুন, বেশ কয়েক বছর আগে তেলেগুভাষী এক শহরে একটি ছেলে সিনেমা দেখতে গিয়ে সামনের সারিতে বসা একটি মেয়ের বুকে হাত দেয়। ঘটনাচক্রে মেয়েটি ছিল ব্রাহ্মণ, ছেলেটি অস্পৃশ্য নীচুজাতের। ছেলেটিকে গাঁয়ের বাড়িতে ফিরে গেলে লিঞ্চ করে মারা হল, ওর বিধবা মাকে নগ্ন করে গোটা গ্রাম ঘোরানো হল। আমি সেটা নিয়ে কিছুকথা বলায় বন্ধুবিচ্ছেদ হওয়ার উপক্রম।
    --- আচ্ছা! আপনার মতে মেয়েদের বুকে হাত দেয়াটা খারাপ না!
    --- ব্রাহ্মণ ছেলে নীচুজাতের মেয়ের বুকে হাত দিলে সেইছেলে ও তার মায়ের সঙ্গে একই ব্যবহার করা হবে কি না! এই আর কি? আরে, কাল-পরশুর গপ্পো। একটি ছ'বছরের দলিত পরিবারের মেয়েকে ২৮০ টাকা চুরির মিথ্যে অভিযোগে পুলিস বাজারের মধ্যে চুলের মুঠি ধরে পেটায়। আমার কথা , অভিযোগ যদি সত্যিও হয় তো উঁচুজাতের বাচ্চামেয়েকে পুলিস অমন পেটাবে কি না!
    --- আর আর্থিক বৈষম্য? আপনার ও অফিসের চাপরাসির একই মাইনে হবে? কি হল মশায়? একটু মিইয়ে গেলেন যেন! নিজের ওপর এলে সব শালাই----।
    --- না মানে, আলাদা কাজের আলাদা মাইনে তো হবেই। তবে তফাৎটা? ঐ তফাৎটা একটু , মানে খানিকটে কম হওয়া উচিৎ। (নিজের কানেই কেমন যেন মিন্‌মিনে শোনাল)।
    --- এলিট-ফেলিট কিসব বলছিলেন?
    ----এই দেখুন না, ২৬জানুয়ারিতে মুম্বাই হামলায় শহীদ ক'জনকে অশোকচক্র দিল। কিন্তু গেরো কি জানেন? ওদের অনাথ পরিবার পাবে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে মাসে ১৪০০ টাকা পেন্সন। রাজ্যসরকার কিছু দিতে বাধ্য নয়। ব্যস্‌, শহীদের পরিবার ঐ টাকায় রোটি-কাপড়া-মকানের সমস্যার সঙ্গে যুদ্ধু করবে। বিশ্বাস হল না? ২৬ জানুয়ারির সক্কালে এনডিটিভি বল্লে যে! টিভি চ্যানেল কি মিথ্যে বলতে পারে? এই তো সাব অল্টার্ণের গপ্পো। আর একবার ফাটাকেষ্ট এম এল এ বা এম পি হোক, তখন আজীবন পেন্সন পাবে পাঁচ অংকে। এ'ব্যাপারে চটপট বিল পাশ হয়ে যায়।
    --- বুঝলাম হরিদাসবাবু। তা এসব অসাম্য দুর করতে আপনি কি করবেন? বাসে-ট্রেনে বক্‌বক্‌, মিটিং -মিছিল, খবরের কাগজে চিঠি আর গুরুচন্ডালীতে লেখা? এতে ভয় পেয়ে আপনার ঐ অসাম্য-বৈষম্য পাততাড়ি গুটোবে?
    --- তো কি একে-৪৭ নিয়ে বস্তার যাবো? না কাঠমান্ডুর রেডগার্ডদের মত প্রেস আর মন্দিরে হামলা চালাবো? পরিবর্তন একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া। ওঠ- ছুঁড়ি-তোর-বিয়ে
    গোছের ব্যাপার নয়। উদোম্‌ ক্যালালে যদি বিপ্লব হয় তাহলে গাধা- পিটে-ঘোড়া হবে না কেন?
    ---দেখুন, এসব হল দায়িত্ব এড়ানোর কায়দা। আপনি বড় বড় বুকনি ঝাড়বেন, সমস্যার রুট কজ খুঁজতে গিয়ে পাতালে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করবেন- তদ্দিন হ্যাভ্‌ নটের দল ঝাড়ে বংশে সাফ হয়ে যাক্‌! ল্যাঠা চুকবে। আর হরিদাস পালেরা এম্পিরিক্যাল প্রমাণসহ পাতি থিওরি খাড়া করবে যে কিছু সমস্যা আপনা-আপনি নিজের সমাধান খুঁজে নেয়! এমারজেন্সিতে সার্জারি দরকার।
    --- তার মানে?
    --- মানে খুব সহজ; যারা আমাকে মারবে আমিও তাদের মারবো,ডেবিট-ক্রেডিট সমান হবে।
    --- আচ্ছা? কি করে বুঝবেন কারা আপনাকে মারছে?
    --- হরিদাসবাবু, আপনি না মশাই সাত-ন্যাকার-এক-ন্যাকা; একেবারে বালস্য বাল, হরিদাস পাল। আর-এন-টি স্যারও বলে গেছেন যে পিঠে কিল পড়লে সেটা যে কিল, তা বোঝাতে পন্ডিত ডাকতে হয় না। সেখানে কিলটা কে মারলো তা বোঝা যাবে না? আপনি কি? পাগল না তালিবান?
    --- যেমন?
    --- ধ্যেৎত্তেরি! আরে মশাই , এই যে মুম্বাই হামলা হোল, তা' কে করলো বোঝা যায় নি কি?
    --- হ্যাঁ, কাসভ ও তার ন'জন সঙ্গী। ন"টাকে দোজখে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে পচে মরবে শালারা! কিন্তু এরা তো রোবট, "ইউনিভার্সাল সোলজার' সিনেমার মত ব্যাপার। কিন্তু রিমোটটা কার হাতে? সেটা কি বুঝতে পেরেছেন?
    --- এটা কি কথা হল মশাই? সারা দুনিয়া জেনে গেছে আসল মাদারি হল পাকিস্তান। সরকার ওদের গরমেন্টকে এভিডেন্স পাঠিয়েছে।
    --- তা সেই এভিডেন্সের জোরেই আবার পাকিস্তান বলছে যে মুম্বাই হামলার ষড়যন্ত্র পাকিস্তান বা ইউনাইটেড কিংডম এর মাটিতে বসে করা হয় নি। সায়েবরা সেটাও দেখছে শুনছে। ইদানীং শুনছি বাংলাদেশের ঘাড়ে দায় চাপানো হবে। আম্রিকা- ইউকেরাও হুয়া-হুয়া শুরু করলো বলে!
    --- তা হরিদাসবাবু, একটা হুয়া-হুয়া তো শুরু হয়েছে। ভারতবন্ধু, ভারতবংশীদের হদৃয়েশ্বর ও আম্রিকায় হ্যাভ নট্‌দের প্রতিনিধি বারাক হুসেন ওবামা দেশের আর্থিক সংকট কাটানোর প্রাথমিক দাওয়াই হিসেবে আউট সোর্সিং এর ওপর ট্যাক্সো বাড়িয়ে কর্মচারীদের মাইনেপত্তর কমিয়ে আপনার প্রবাসীবন্ধুদের মধ্যে "গেল-গেল'' রব তুলিয়ে ছেড়েছেন। ওঁয়াদের "দেশের কুকুর ধরি, বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া'' সংগীতসরিতা শুরু হয়ে গেছে।
    --- তাহলে?
    --- তাইতো বলছি, মেইনস্ট্রীম রাজনীতি আসলে উচ্চবর্গের নাটক। ওতে কিস্‌সু হবে না। চাই--দম্‌দম্‌ দাওয়াই। ক্যানো, মহামতি লেনিন বলে গেছেন--"যে নিপীড়িত জাতি অস্ত্র ধরিতে জানে না, তাহারা দাসের ন্যায় জীবনযাপনের যোগ্য''। জনগণ হাতে অস্ত্র তুলে নিন। খুন কা বদলা খুন, মার কা বদলা মার।
    তুমি আমার ঘরে আগুন লাগালে, আমি তোমার ঘরবাড়ি, ধানের গোলা -সব পুড়িয়ে ছাই করে দেবো। বুঝবে ঠ্যালা! আমার একচোখ গেলে দিলে, তোমার দু'চোখ গেলে দেবো। আজকের রাজনীতি পাব্লিককে বোকা ঠাওরানো। দেখুন, কল্যাণ সিংহ নামের রাজনীতিবিদ সুপ্রীম কোর্টের আদেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাবরি মসজিদ ভাঙ্‌লো, আর গো-বলয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার ঠিকেদার, সিপিএমের সঙ্গে তৃতীয় ফ্রন্ট করনেওলা সমাজবাদীদল আজ ভোটের রাজনীতির খেলায় ওকে, ওর সুপুত্তুরকে মাথায় তুলে নিয়েছে-- ইয়ার্কি নাকি! আবার আগমার্কা বাম রাজনীতির দলটি ওদের নিয়ে সেকুলার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মোর্চা গড়ার স্বপ্ন দেখে। ছো:!
    --- অত ছো-ছো-ছি-ছি করার কিছু নেই। আপনার আদর্শবাদ হল বালখিল্য অপোগন্ডদের উপযুক্ত। আরে মশাই, মুলায়েমই হোক, আর সিপিএমই হোক, আর মমতাই হোক,--- ক্ষমতায় আসলে তবে তো জনগণের জন্যে পজিটিভ কিছু করতে পারবে। নইলে খালি মিটিং,মিছিল,ধর্ণা করেই মানবজীবন কেটে যাবে, সোনাফলানো হবে না। আসল কথা হল ক্ষমতা, ক্ষমতা চাই! ছলে-বলে-কৌশলে যেমনি করেই হোক। এই হল মশায় রিয়েল পলিটিকিং।
    --- আপনি থাকুন মশায় আপনার রিয়েল পলিটিকিং নিয়ে। আমার ঘেন্না ধরে গেছে। খালি কথা, কথা আর কথা। কাজের মধ্যে নিজেদের পকেটভরা। কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাপারটা দেখুন না! এর চেয়ে বস্তারএর মাওবাদীদের রণনীতি দেখুন, পুলিশের চোখ উপড়ে নিয়েছে। আমাদেরও তাই করা উচিৎ। বৃহত্তর অর্থে। এই কাসভ-টাসভদের জনগণের ট্যাক্সোর পয়সায় জামাইআদরে না রেখে সোজা-----। আর পাকিস্তান? ওদের জমিতে প্রশিক্ষণ শিবির? সোজা উড়িয়ে দাও।
    --- সে কি মশায়, আপনিও ? ডেমোক্র্যাটিক পদ্ধতির ওপর বিশ্বাস হারিয়ে উগ্রবাদীদের রণনীতিকে মাথায় তুলছেন?
    --- হ্যাঁ, ওদের হারাতে হলে ওদের মতই হতে হবে। শার্লক হোমস্‌ ভাল করে পড়ুন। অপরাধীদের মনস্তত্ব বুঝতে হলে নিজেকেও---। হোমস্‌ আফিংখোর ছিলেন খেয়াল করেছেন? সীমান্তে বিদ্রোহী নাগাদের আটকাতে অত্মসমর্পণ করা প্রাক্তন বিদ্রোহীদের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সে রাখা হয় কেন, জানেন না?
    --- হে ভগবান! এইসব শর্টকাট রাস্তা বা চট্‌জলদি সমাধানের পথ ধরলে আমাদের দেশের ডেমোক্র্যাসির ভিৎ নড়ে যাবে যে!
    --- ফাক্‌ ডেমোক্র্যাসি! না-খেতে-পাওয়া জনতাকে বা জঙ্গী হামলায় মারা যাওয়া লোকজনের পরিবারকে কি দিয়েছে আপনার ডেমোক্রাসি? হরিদাসবাবু, আমাদের চেয়ে অনেক শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আম্রিকার সিস্টেম। তা' ঐ দেশে একটি বাচ্চাছেলে বাপের কাছে জানতে চাইলো ডেমোক্রাসির মানে। বাবা বল্লো-- বুঝিয়ে দিচ্ছি। ধরো আমাদের এই ফ্যামিলি। তাতে পুঁজি কে আনে ? তোমার ড্যাড্‌।
    তাই ড্যাড্‌ হল ক্যাপিটালিস্ট। প্রশাসন কে দেখে? মাম্‌। মা হল গভরন্‌র্মেন্ট। তুমি খালি এটা চাই, সেটা চাই বলো, তুমি হলে পাব্লিক। আয়া বা মেড্‌ সারাদিন খেটে মরে। ও হল ওয়ার্কিং ক্লাস। আর তোমার ছোট্ট চারমাসের বোনটি? সে হল ফিউচার। রাত্তিরে সেই ছেলেটির বোনের কান্নায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। দ্যাখে -বোন চাদরে হাগু-হিসু করে কাঁদছে। ও আয়াকে ডাকতে গিয়ে দেখলো দরজা বন্ধ। কী-হোল দিয়ে দেখ্‌তে পেলো-- ওর বাবা মেড- এর সঙ্গে শুয়ে। ও গিয়ে মায়ের দরজায় খট-খট করলো, চেঁচালো-- মায়ের ঘুম ভাঙ্গলো না। সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে ও বাবাকে বল্লো-- ড্যাড্‌, কালকে আমি আমাদের বাড়ির উদাহরণ দিয়েই ফাংশন অব ডেমোক্র্যাসি বুঝে গেছি। "when capitalist was screwing the working class, Government was in deep slumber, paying no heed to public demand, and the future was submerged in shit'' .
    এই তো মশাই আপনার ডেমোক্রাসি, ওতে আর আমি নেই।
    --- বেশ, তা' আপনি কিসে আছেন, তাই একটু খোলসা করে বলবেন?
    --- আরে মশাই, দুটো সিনেমা দেখুন। একটা "এ ওয়েন্সডে'' আর নানা পাটেকরর "প্রহার''। দারুণ! এক্কেবারে আমার মনের কথা। একা নাসিরুদ্দিন শাহ আর একটি কম্পুটার। সমস্ত হামলাকারীদের ওদেরই ফাঁদে ফেলে উড়িয়ে দিলো। আর ওর লক্ষ্য মুসলমান নয়, ভারতবর্ষ। একটু ইশারা আছে যে ও নিজে কিন্তু মুসলমান। সব মুসলমানই কি আর পাকিস্তানী? এমনি চাই। মিন্‌মিনে সেকুলারিজম নয়,জঙ্গী সেকুলারিজম। সেই হবে জঙ্গী ফান্ডামেন্টালিজমের সঠিক জবাব। "দে উইল বি পেইড ইন দেয়ার ওন কয়েন''। আর প্রহারে দেখুন, কম্পাল্‌সারি মিলিটারি ও কমান্ডো ট্রেনিং। তার থেকে মন্ত্রীর ছেলেও বাদ যাবে না।
    --- দেখলাম মশাই! এও একরকম ঈশ্বর-ঈশ্বর খেলা। নিজেকে অসংখ্য মানুষের জীবনমরণের নিয়ামক,ভাগ্যবিধাতা ভাবা। আমি মানবশ্রেষ্ঠ, আমি ঠিক করে দেবো বাকি পিপীলিকাসদৃশ জনগণ কেমন করে বাঁচবে। এক দিকে এটা শিব্রাম চ্‌ক্কোত্তি মশায়ের বাচ্চামেয়ে শিবি'র ঢঙে নিজের মতো করে দুনিয়াকে ভেঙ্গে গড়ার তাগিদ। আর এক মেরুতে এটি জঙ্গীউগ্রবাদীদের দর্শনেরই প্রতিরূপ। ইতিহাস গড়বে এক সুপারম্যান। খালি ওরা টেবিলের একদিকে দাঁড়িয়ে, আমরা আরেকদিকে। না মশাই, তার চেয়ে আমি শাকভাত্‌খাওয়া হরিদাস পাল হয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবো।

    ফেব্রুয়ারী ২২, ২০০৯
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ | ৬২৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন