এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • নোম্যাড

    কৌশিক ভাদুড়ী. লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৬ অক্টোবর ২০১২ | ৭৯০ বার পঠিত
  • http://50.57.147.171/default/images/000_blog_mri/993.jpg

    অত:পর বইতে থাকে, সবাই জানে জড়ো হলেই বইতে থাকে জল। ভিজতে চায় তেমন আঙ্গুলই  বা কই, কে দেবে তেমন স্নেহ আসঞ্জন, সময় নেই, সময় নেই। এই বহমানতার পাশে দাঁড়িয়ে আছে গুবরে পোকা, ছায়া দ্যাখে, দ্যাখে নিজের প্রিয়টিকে। এই ভাবেই একদিন দেখল আকাশের ছবি, প্রবাহের বুকে- ইস এতটা এলানো, উড়তে পেলে প্রজাপতি হতাম। স্পষ্টতই গুবরে পুংলিঙ্গ, যেমন রাষ্ট্রপতি সতত পুংলিঙ্গ, প্রজাপতি ত্রীলিঙ্গ ছাড়া হয়না। জলের বুকে দ্যাখে অনেক রং, আলাদা আলাদা খোপে। ঝাউপাতা মৃদু মৃদু দোলে। দুলতে দুলতে ছুঁয়ে নেয়ে ভূমিজ তরল,ছিটিয়ে দেয়ে আকাশের গায়ে। হলেই হয়না মেঘের কোলাজ, যতক্ষণ না উপযুক্ত পাখির পালক কোথাও ঘন কোথাও ফিকে করে লেপে দেয়ে রং। এরকম সময়ে গুবরের ভারী হিংসে হয় ঝাউ পাতার ওপর- ন্যাকা! আবার গুমোট রাতে গাছের নিচে ডাকে! আলতো ছুঁয়ে বলে স্বপ্ন দেখবি ? আমি দেখাবো!  গুবরের লিঙ্গ পরিবর্তনের ইচ্ছে হয়, সেটাই স্বাভাবিক ও সহজ, বহিরঙ্গের লিঙ্গচিহ্ন তো বিকল জলের কল অথবা কল হারিয়ে যাওয়া নল। প্রকৃত লিঙ্গ মানুষের মাথার ভেতর থাকে। হঠাত নক্ষত্রের ঢিমে আলোয়ে কৃষ্ণএকাদশীর আকাশের দিকে চায় নিরুপায় গুবরে, দেখে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ গুলো আসলে নোম্যাড, চরে বেরায়, চরে বেরায় কেবল। মেঘেদের তো পুংলিঙ্গ স্ত্রীলিঙ্গ হয়না। প্রজাপতি নয়, মেঘই প্রকৃত স্বাধীন চারণিক, আকাশের চাদরে। নোম্যাড হতে হবে।

     
    ইদানিং পরজন্ম একটা অভ্যাস রপ্ত করেছে। ফুটোস্কোপ আবিস্কার হওয়ার পরে পরেই যে ধারাটা এসেছে- বর্ণালি বিশ্লেষণ। প্রায় নির্ভুল ভাবে পড়া যায় পূর্ব জন্মের যুক্তিমন ও ভাবমন। মনন-গ্রাফ প্লেটটা তৈরী হওয়ার পর, যেমন এমআরআই হওয়ার পর কোমা সেন্টার জানেন সরাসরি চিকিত্সা সম্ভব নয়, পরজন্ম আ্যন্টিক শপে পাঠিয়ে দেন বিক্রির জন্য। মনন-গ্রাফ সেখানেও অকৃতকার্য্য হলে পাঠান হয় জাদুঘরে। দলে দলে হোমো স্যাপিয়েন্স সুপিরিয়রো এসে দেখতে থাকেন হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স-এর মননগ্রাফিক প্লেট।

    এভাবে চলতে চলতে একদিন চাঞ্চল্যকর একটি তথ্য প্রকাশ পায়। ফুটোস্কোপ যেহেতু পূর্বজন্মের উদ্ভাবিত আগলপাগল তত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এবং তদানিন্তন প্রযুক্তি যথেষ্ট কুশলী নয়, ওটিতে ব্যবহৃত একটি লেন্স যথেষ্ট মজবুত ভাবে লাগেনি, ফলে ওটি খসে যায়। পরজন্মের যন্ত্র ব্যাপারি পরজন্মোচিত তত্পরতায় লেন্সের স্থলে একটি ভাঙ্গা আয়নার টুকরো বসিয়ে দেয়ে। পরজন্মের অবজার্ভার পরজন্মোচিত আচরনবিধি অনুসারে আনুপুঙ্খিক নিরীক্ষণ ছাড়াই যন্ত্রটি বীক্ষণের কাজে ব্যবহার করেন। ফলত মননগ্রামটি পরজন্মের প্রতিবিম্ব হয়ে পড়ে। এই অবসরে কটি জীববৈজ্ঞানিক সংকেত পরিচিত হওয়া যাক।
    ক) হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স : হসস, খ) হোমো স্যাপিয়েন্স সুপিরীয়রো : হসসু, গ)পূর্ব জন্ম : পূজ, ঘ)পরজন্ম : পজ। 

    যাই হোক হোসসু-এর আবির্ভাব বিষয়ে সুমেরিকার জ্ঞানি সমাজে কোনোও দ্বন্দ্ব নেই, শুধু নথি হিসেবে মননগ্রামের একটি অনুলিপি রাখা দরকার। ডেড লাইনও নির্দ্দিষ্টকৃত। ফুটোস্কোপ মেরামতির পরিকল্পনাও শেষ। সে বিশদ অন্যত্র। ইতিমধ্যে পূজ-র সাপুরে খবরওলা যে খেলা দেখাতে এসে পজ-কে খবর সরবরাহ করত, পজর আদালত তাকে জেলে পাঠিয়েছেন। নির্বিষ রাখা পজ-এ জামিন অযোগ্য অপরাধ। কার্য্যত ঝাঁপি বন্ধ আজ।

    শোনা যাচ্ছে সাপুরের যাবজ্জীবন হয়ে গেছে। সুতরাং ঝাঁপি খোলার বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে । এই অবসরে ফুটোস্কোপ মেরামতির বিষয়টি, সুমেরিকার সুরক্ষা কেন্দ্র মোনোগনের চোখ এড়িয়ে উইকিলিকি যতটা বার করতে পেরেছে-

    পজ বিলেতের বিজ্ঞানী যিনি ‘সময়ের ছোট্ট গল্প’ নামক কবিতা গ্রন্থের লেখক, অতি প্রসিদ্ধ তুফান হাকিমকে, যোগাযোগ করে। বাণী প্রকরন নামক যন্ত্রটির মাধ্যমে তিনি যা বলেন-

    অতি গোপনীয়তায় ফুটোস্কোপের আবিস্কারকের কাছে নাড়া বেঁধে শিখে নিতে হবে মেরামতির বিষয়টি। যেহেতু তিনি অতীতে আছেন পৌঁছনোর জন্য তুফান হাকিম মোনোগনকে অতীতে যাবার জন্য একটি কেঁচো-যন্ত্রও দিয়েছেন। কিন্তু গোল বেধেছে অন্য জায়গায়-

    যন্ত্রটির অতিশয় সফল ট্রায়াল হয় মোনোগনের গবেষনাগারে। ইঁদুরেরা অতি সচ্ছন্দে বর্তমান বৃত্তদ্বারে প্রবিষ্ট হোয়ে অতীত বৃত্তদ্বারে বেড়িয়ে আসছে। কিন্তু, একটি কিন্তু আছে-

    ওপাশে খাদ্য রাখলে তবেই পরিক্ষাটি সফল হচ্ছে। ওইটিই যন্ত্রের সুত্র। পজ-এর নয়ত প্রযুক্তিও আছে হসসু-কে ইঁদুর করে দিয়ে আবার ফিরিয়ে আনবার। এটি আসলে হসস-এর ‘পুণঃ মুষিক-অ ভব’-এর বিপরীত প্রযুক্তি।

    পজ-এর অতীত-অভিযাত্রীদের ইঁদুর হোতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু অতীত ভ্রমন সেরে এলে যে জাগতিক বস্তু কিছু পাবে, মোনোগন যে তাদের দেবে, সে ভরষা নেই, কারণ ক) হসসু-এর মননের জেনেটিক মেকআপ অনুযায়ী আশাকৃত ফেনোটাইপোলজি সে রকম সাক্ষ রাখেনা খ) কথা রাখা পজ-এর আচরন বিধিভুক্ত নয়।

    খোলোসার দাবী উঠেছে।

    পজ একটি আইকন। পূজ একটি আইকন। একই দেশ কালে চতুর্মাত্রা বহির্ভুত মাত্রাতে পরস্পর ভিন্ন হয়ে থাকে। হসস যখন অভিলাষ করে পূজ থেকে পজএ যায় হসসু হয়ে যায়। অবশ্য বিপরীত গমন গুবরের নথীভুক্ত নয়। উভয়ের ব্যবহারিক বিনিময় চলতে থাকে।

    আরম্ভ করা যাক।

    সাপুরেও নেই। এদিকে নির্বিষ না থাকার জন্য বিষাক্ত যখন তখন আক্রমণ আরম্ভ করছে। কিছুকাল আগে সুমেরিকার নতুনকাক সহরের বাজারে ভীষন ভাবে বিকিয়েছে একটি পান্ডুলিপি। এইরে একটা বিষাক্ত ঢুকে পড়েছে। ছবি তুলে দিয়ে দিই- Rant: An Oral Biography of Buster Casey

    শুদ্ধ-জিন(genetic) হ.স.সু সত্তা। বালক চরিত্রের নাম র‍্যান্ট। তা র‍্যান্ট পান্ডুলিপি জুড়ে যে শাকের আঁটিই বাঁধুননা কেন বাজারে বিকিয়েছে ভাল। ঘটনাবলী এই রকম-

    র‍্যান্টের শৈশব স্বপ্ন পুর্ণ হল যখন তাকে একটি বিষাক্ত মাকড়সা কামড়াল। সেখান থেকে কাহিনী শুরু। অন্তর্বর্তী হল র‍্যান্ট কোন এক শহরে স্পোর্টস কার রেসিং করে বেড়ান এবং কর্ম্ম হল ইচ্ছাকৃত কার ক্র্যাশ। র‍্যান্টের মৃত্যুও কার ক্র্যাশেই। এর পর কি হবে? পজ–র লেখক পজ উচিত ভাবেই যথেষ্ট সেন্টিমেন্টাল। নাইভ একেবারেই নন। বিভিন্ন অনুমান পজ মহলে। র‍্যান্ট অমর হয়ে যাবে। সমগ্র হসস স্বত্তাদের নিধন করবে। স্বগমন করবে। নিজস্ব জেনেটিক সত্তার সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটাবে। ইত্যাদী, ইত্যাদী। আগ্রহী ও সংশয়ি উভয় পাঠকই বেস্ট সেলার পেপার ব্যাকটি পড়ে নিতে পারেন।

    অন্যদিকে পূজ–র পেপার ব্যাকের ধরণ সদ্য শেষ হওয়া যুদ্ধের পটভূমি। যেমন ওডেসা ফাইল, এ্যান ফ্র্যাংকের ডাইরী, রোজেনবার্গ পত্রগুচ্ছ, ইত্যাদী। ধীরে ধীরে ৬০-এর দশকে এল হ্যারল্ড রবিন্স, ইয়ান ফ্লেমিং। পেপার ব্যাক হিসেবে এগুলির পাশাপাশিই চলত ক্ল্যাসিকাল, তখনও বেস্ট সেলার। তারপর আশীর দশকে এল আর্থার হেলী, দ্য এয়রপোর্ট, দ্য হোটেল, ইত্যাদী।

    মানুষের পাঠ্য রুচিও মানুষের সেট অফ মাইন্ডের পরিচায়ক। অনিশ্চয়তা, ভয়, সংশয়, বাড়ছে, এরাই মানুষের কাছে বেশী চেনা হয়ে উঠছে। এখানেই বলে নেওয়া ভাল, পজ ও পূজ, মেটাফোর দুটি কখনই প্রজন্ম সূচক নয়, ও দুটি হল মাইন্ড সেট। আমরা যারা দীর্ঘ সময় ধরে বেঁচে থাকি একটা সমজে, আমাদের অনেক গুলি প্রজন্মের সাথেই চলে বার্তা বিনিময়, সেক্ষেত্রে প্রজন্মের ব্যবধান, বার্তা বিনিময় সঠিক না হওয়ারই ফসল। সেটা নোম্যাডের বিষয়বস্তু নয়। গোটা সমাজের পরিবর্তিত মাইন্ড সেটটিই বিষয়। মননশীলতার  একটি মেরুকরণ স্পষ্ট ও অনস্বীকার্য। বিশ্বাস ও যুক্তিবাদ। বিশ্বাসী ও যুক্তিবাদী বৃত্তের মধ্যে কোনও সংঘাত উদ্ভব হয় কি না, সেটিও নোম্যাড-এর বিষয় নয়। নোম্যাডের বিষয় হল নিজের নিজের সস্কৃতির বৃত্তে যে সংশয়, অনিশ্চয়তা এবং তজ্জনিত শঙ্কা।

    গুবরেকে বিশ্বাস অন্তর্গত করেনি অথবা গুবরে মশারির অনুশাসন মানেনি, তাই গুবরে যুক্তিবাদী। প্রসঙ্গ যখন গুবরে কেন্দ্রিক সেখানে পৃথিবীর একটি বড় অংশের ক্যানোনিকাল সমাজ নীতি নোম্যাডের বিষয় বহির্ভুত।

    যে অংশ যুক্তিবাদের ভিত্তিতে চলে, সেখানে ভাবমনের বন্ধন শীথিল, বস্তুতান্ত্রিক স্বার্থের লেনদেনের সম্পর্ক দৃঢ়, হৃদয়ে চলেছে লাগাতার শৈত্য প্রবাহ, ক্রমশঃ তীব্রতর। সেখানে ব্যবহার বিধি নির্দিষ্ট নয়, প্রত্যেকে স্বাধীন ভাবে স্বিদ্ধান্ত নেয়ে নিজের নিজের নীতি বোধের অনুসারে। যদিও কিছু সনাতন মূল্যবোধ, আত্মস্বার্থ অনুগামী হয়ার পরে অপরাধ বোধ হয়ে ক্রিয়া করে, তবে সে গ্রাহ্য নয়, প্রকৃত ভালবাসা অপসারী হয়, একাকিত্বের কূপমন্ডুকতায় বুকের ভিতর একটু কষ্ট হলেও আখেরে জাগতিক স্বার্থের মেওয়া ফলে। আত্মকেন্দ্রিকতা প্রখরতর হয়ে চলে, জনক জননী বিস্মৃত বস্তু, স্বামী স্ত্রী কারে কয়, সন্তান সেই বা কে, পরম বিস্ময়! সেক্যুলার র‍্যাশিওনালিস্‌ম-এর মধ্যেও লুকিয়ে থাকে এক ধর্ম্ম নামক সর্ষেভুত। ভারতের যে কোনোও হিন্দু মন্দির দেবস্থানে গেলেই দেখা যাবে ধর্ম্ম বেসাতি।
    দেবতা অন্তর্হিত অভিমানে, বিগ্রহ বাণিজ্যের গ্রাসে
    যা আছে উলঙ্গ দেউল।
    সাগর বেলায় পেলে জীবন্ত বালু,  গড়াগড়ি দিই, কিছুটা
    মন হবে সোনার নেউল।

    মানুষের সুকুমারবৃত্তি ক্রমশঃ আশ্রয় নিচ্ছে আলো ছেড়ে প্রচ্ছায়ায়, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, নান্দনিক বৃত্তগুলি তার অনুগামী হাওয়া। এখন আমরা অনেকেই ভুলেছি ডস্টয়ভস্কি, লিও টলস্টয়ের নামটাই মনে রাখি, কতটুকু মনে রাখি রেজারেকসন, এ্যানা কারেনিনা, ক্রয়েটজার সোনাটা। এমন কি এরিখ মারিয়া রেমার্ক বা আর্নেস্ট হেমিংওয়েও আজকাল কল্কে পাননা। একবার অ্যামস্টারডামে রামব্রান্টের লাস্ট সাপার ছবিটির সামনে দাঁড়িয়ে অন্যমনস্ক হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল গুবরে। অতবড় সগ্রহশালাটিই দেখছিল। গুবরে ভিস্যুয়াল আর্ট বিষয়ে তত জ্ঞানী নয়, তাই ভাবে হয়তো অতবড় সংগ্রহশালা আমাদের দেশে এখনও তৈরি হয়নি। ডাচ গাইড মহিলা ওকে বললেন ‘ভারতীয়রা বোধ হয় চিত্রকলা ততটা  বোঝেননা!’ গুবরে স্বপ্রতিভ হওয়ার চেষ্টা কোরে যা বলল- ভ্যানগগের ছবিই আমার বেশী ভাললাগে, যদিও তখনও পর্যন্ত (এবং এখনও পর্যন্ত!) নাম শোনা ছাড়া ভ্যানগগের কোন ছবিই সে দেখেনি। আশ্চর্য লাগল শুনে যে অ্যামস্টারডামের পেশাদার সিটি ট্যুর গাইড ভ্যানগগের নামটিও শোনেননি, ভারতীয় যামিনী রায় তো দূরস্থান। অর্থাৎ যতটা স্বার্থসিদ্ধির(পেটপপোষা) জন্য প্রয়োজন ততটাই জানা দরকার, অথচ সেটুকু দিয়েই করা যাক সমগ্র বিষয়ক ধারণা পোষণ, আদর্শ পজোচিত মানসিকতা!

    জ্যাঠামশাই বা মাস্টারমশাই কোনোটাই হওয়া নয়, নাইভ নয় যথেষ্ট সেন্টিমেন্টাল হয়েই গুবরে দেখে ক্রমশঃ, ক্রমশঃ ভালবাসার পরত মন থেকে আবছা হয়ে আসছে। মনে ঘোরা ফেরা করে নোয়াম চমস্কির উক্তি। এত মানুষ, এত বিপুল লোভ (সম্পদ,প্রতিপত্তি,খ্যাতি), ভার নিতে পৃথিবী পারবে কী?
    গুবরের মনে ভাসে রবার্ট ফ্রস্টের  Fire and Ice,
    Some say the world will end in fire;
    Some say in ice.
    From what I've tasted of desire
    I hold with those who favor fire.
    But if it had to perish twice,
    I think I know enough of hate
    To say that for destruction ice
    Is also great
    And would suffice.

    রং আছে, প্রচুর রং, তরঙ্গের সব কম্পাঙ্ক আজ দৃশ্যমান, এখন প্রেম মানে  আর্ট এক্সিবিশন। এতদিন ধরে যত সূর্যরশ্মি বিঁধেছিল মুখে সেগুলির বিপরীত নিক্ষেপ, আর্চারী- পাখির চোখ ভেদ  নয়, ভ্রষ্ট হওয়ার আর কোনো ভয় নেই, কারণ লক্ষ্যই তো নেই। চোখের সামনে দেখতে দেখতে তিনতলা বাড়িটা- স্নেহ-রিরংসা-স্নেহ, দুতলা হয়ে গেল, অথচ উচ্চতায় গগনচুম্বি হচ্ছে। গুবরের ভেতরও সব অনুভুতি এক হয়ে যেতে চাইছে। এক মহা সঙ্কোচন। ইদিপাস- কোটোর থেকে মুখ বার করছে গিরগিটির জিভ, পালাও, পালাও, হারিয়ে যাও অনন্ত প্রসারে।

    পোকাটা উড়তেই থাকলো
    বসা সমীচীন কিনা বুঝতে না পেরে।
    পোকাটা উড়তেই থাকলো
    বসবে কি ভাবে? পাখা মেলে না গুটিয়ে?
    পোকাটা উড়তেই থাকলো
    পাখা রঙিন না রং হীন  অনিশ্চিত বলে।
    পোকাটা উড়তেই থাকলো
    শিকারের পিছনে নয়
    গিরগিটির জিভের ভয়ে।
    পোকাটা উড়তেই থাকলো
    নিশ্চিন্ত হয়ে নয়,
    বাতাস স্বচ্ছ হলেও নিষ্কলুষ নয়।
    পোকাটা উড়তেই থাকলো
    অনুপায় হয়ে, হয়ত বসত
    আশ্রয় পেলে বত্সল  স্তনসন্ধিতে।
    নিশ্চিত ভাবে ডানা মেলে।

    অতঃপর শ্রান্তি আসে, রিঙ্গণে রিঙ্গণে চরে নিতে চায় আকাশের মুক্ত দেওয়াল, প্রিয় ডিস্টেম্পর রঙ, একদিন হয়ত ক্যামেলিয়ন হয়ে যাবে, হয়ত পুরাতাত্বিকরা খুঁজে পাবেন শিলায়ীত শিরদাঁড়া ও করোটি, তখন আকাশের দেওয়াল বলবে, আমিই ওকে ডেকেছিলাম, আমিই ওকে দেখতে শিখিয়েছিলাম আমার দিকে, দেখ আজও আগলে রেখেছি, ওর আঁকড়ানোর প্রতিদান।

     

    চিত্রঃ মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়



     


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৬ অক্টোবর ২০১২ | ৭৯০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন