এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দঃখিত

    কল্লোল
    অন্যান্য | ০৯ অক্টোবর ২০১৬ | ২১৬৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • কল্লোল | 116.216.188.164 | ৩০ অক্টোবর ২০১৬ ০৯:০১720981
  • বাসা লিখেছেন, "বার্লিনের ভাঙ্গা প্রাচীরের যে আপাত সুন্দর রঙিন একমেরু পৃথিবীর গল্প শুনিয়েছিল, তা আজ ধূসর। তাই হয়তো ৯০ কে গ্লোরিফাই করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। প্রয়োজন হয়ে পড়ে নস্টালজিয়ার রূপচর্চায় মুখের বলিরেখাগুলোকে ঢেকে দেওয়ার। তবে যে মোড়কেই ঢাকা হোক অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের লড়াইয়ের কথা বলে না, এ স্রেফ ভাল থাকা উচ্চ-মধ্যবিত্তের নস্টালজিয়া বিলাসিতার আখ্যান।"

    কিছু বোঝা গেলো না।
    শাক্য ৯০এ রাশি বিজ্ঞানী/উচ্চ মধ্যবিত্ত ছিলো না। ছিলো নেহাৎই নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। আজকের শাক্যের কোন দায় ছিলো না সেদিনের আখ্যানকে তুলে ধরে তার আজকের অবস্থানকে মান্যতা দেবার। শাক্য একা নয়, তার মতো অজস্র মানুষ (গুরুতেই আছেন এরকম অনেকেই, আমিও তাদের একজন) তার বাল্য-কৈশোরের অর্থনৈতিক অবস্থানে নেই। তো?
    এরা যদি ভালো-ই থাকবে তো তাদের স্মৃতিকাতরতার প্রয়োজন পড়ে না। আজ ভালো থাকলে "গতকাল" নিয়ে কেউ ভাবে না। যারা "গতকাল" নিয়ে ভাবে তারা আজ ভালো নেই বলেই ভাবে। তাই এই স্মৃতিপদাতিক হতে চাওয়া, শিকড়কে স্বীকৃতি দেওয়া।
    সবার সবকিছু ভালো লাগবে, এমন মাথার দিব্যি কেউ দেয়নি। কিন্তু এপ্রকার বিচারকসুলভ নিদান হাঁকারও কোন মানে হয় না।
  • পাঠকের প্রতিক্রিয়া | 233.231.54.198 | ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ২০:৪৮720982
  • অরুণাভ দে লিখেছেন,

    'শাক্যাজিৎ এর “অনুষ্ঠান প্রচারে ...” বই টা কিনেছিলাম প্রকাশের দিন ই, কিন্তু কয়েক পাতা উলটনো ছাড়া বিশেষ পড়া হয় নি, অনেকে পড়ে আবার তার সমালোচনা ও করে ফেলেছেন, আমি যাকে বলে একদম লাস্ট। চেষ্টা করে ও একটানা পড়া হচ্ছে না দেখে ঠিক করলাম সঙ্গে নিয়ে যাই, ঐ ৮০ পাতা র বই মুম্বাই যাওয়ার পথেই শেষ করে ফেলব।
    যেমন ভাবা, তেমন কাজ। যাত্রা সুরু হতেই বই খুলে পড়তে শুরু করলাম, ওদিকে বিমানবালা রা তাদের নিত্যকরমপদ্ধতি চালিয়ে যেতে লাগলেন, কিন্তু আমি আস্তে আস্তে ঐ প্লেন জলে নামলে বা আগুনে পড়লে কি হবে তার থেকে সরে এসে ডুবে যেতে লাগলাম ঐ বই এর মধ্যে। ঠিক যেন Alice এর মত ঐ কাঁচের মধ্যে দিয়ে চলে গেলাম আর একটা দেশ এ। তফাৎ শুধু একটা যে এই জগত টা একদম ই অচেনা নয়, এটা ত আমার জগত, আমার ফেলে আসা আশির দশক, নব্বই এর দশক। আমি যেন আমাকেই দেখতে পাচ্ছিলাম ঐ লেখা গুলোর মধ্যে দিয়ে আর কি আশ্চর্য, যদি ও শাক্য র বর্ণনা করা জায়গা গুলো আর আমার বেড়ে ওঠার জায়গা গুলো আলাদা (আমি বড় হয়েছি আধা মফঃস্বল এ), সময় টা ও একদম এক নয় (শাক্য আমার চেয়ে অন্তত ১০-১২ বছর এর ছোট), প্রায় প্রত্যেক পাতাএ আমি ফিরে যাচ্ছিলাম আমার সেই বড় হয়ে ওঠার দিন গুলোতে। শাক্য র লেখা কেমন হয়েছে সে ত অনেকে বলেছে, আরও অনেকে বলবে, আমার এই লেখা আমি খালি আমার সেই বেড়ে ওঠার দিনের গল্প গুলো বা ঠিক করে বললে সেই হঠাত চমকের মত মনে পড়ে যাওয়া খণ্ড চিত্র গুলো নিয়ে।
    শাক্য র বই টা পড়তে পড়তে প্রথমেই যে জিনিসটা মনে পড়ে গেল, আনন্দলোক এর ছবি দেখে প্রথম যৌনতার উন্মেষ। তফাৎ শুধু আমার ক্ষেত্রে জিনাত আমান আর শাক্য র মমতা কুল্কারনি। শাক্যর ’৯০ যেহেতু আমার ’৮০, তাই একটা জিনিস হুয়ত শাক্য পায় নি – VCP. আমাদের ছোটবেলায়ে যেটা অধিকাংশ পাড়া এ ভাড়া খাটত আর ভাগ্যবান কিছু লোকের বাড়ি তে থাকতো। খোলামেলা (আমাদের নিরিখে) হিন্দি সিনেমা র স্বাদ একমাত্র ওতেই পাওয়া যেত। প্রথম পানু র অভিজ্ঞতা ও ঐ দিয়েই। পেঙ্গুইন এর পেপারব্যাক এর সাইজের ক্যাসেট, মাঝে মাঝেই টেপ জড়িয়ে যেত। পানু র মাঝখানে টেপ জড়ালেই VCP ওয়ালার মা মাসি কে উদ্ধার করা হত। এই প্রসঙ্গে একটা গল্প – একবার এক বন্ধুর বাড়িতে পানু দেখা চলছে, বাড়ী তে থাকা একমাত্র প্রাণী ঠাকুমা জানেন যে সিনেমা র নাম “রাম বলরাম” (ঐ সিনেমা টা আগের দিন বাড়ির লোকজন দেখেছে), ওনাকে বোঝান ও হয়েছে যে ওটা ঠাকুর দেবতা র বই। বুড়ি বিশেষ নড়াচড়া করে না, চোখে ও কম দ্যাখে, তাই রিস্ক কম। কিন্তু ঐদিন কি যেন কারণে তুঙ্গ মুহূর্তে ঠাকুমা আমাদের ঘরের দরজা খুলে ঢুকলেন। ঘরে পিন পতন নিস্তব্ধতা, ঠাকুমা এক মিনিট চোখ কুঁচকে দেখার চেষ্টা করে বললেন, এটা কেমন সিনেমা? কন কথা নাই খালি উহ আহ করে??
    তবে তার পরে ও ঐ বাড়ী তে আমরা আরও পানু দেখেছি, কারন ওরকম সুযোগ আর কোথাও ছিল না। আমরা পরে ঐ বাড়ী র নাম দিয়েছিলাম পর্ণকুটির।
    আর একটা জিনিস যেটা শাক্য র বই মনে পড়িয়ে দিল সেটা হল কত কিছু ছিল আমাদের আনন্দ দিতে। খেলার মাঠ টা বরষা এ যে ব্যাং বাজি র অ্যারেনা হয়ে যেত আর শীত এর সকালে লেপ এর মধ্যে থেকে বেরিয়ে হিসি করতে গেলে যে হিসি থেকে ধোঁওয়া বের হত (কাটাকুটি খেল্লে আআর বেশি ধোঁওয়া হত) এগুলো কি কম মজা র ঘটনা ছিল? আবার ঐ সময়েই জেনেছি ব্ল্যাক করা কাকে বলে, তা সে চাল ই হোক বা সিনেমার টিকিট। একবার তো রেশন দোকানে গিয়ে বলে ও ফেলেছিলাম যে, বিমান কাকু, সকলে যে বলে তুমি ব্ল্যাক এ চাল বেচো, তোমার সব চাল তো সাদা ই দেখি। কিংবা, বারো ঘর এক উঠোন এর ভাড়া বাড়ী তে লোড শেদিং এর আনন্দ আর কারেন্ট এলে সমবেত চীৎকার, সেসব কি ভোলার জিনিস? সত্যিই, “তবু ও মায়া রহিয়া গেল”
    তবে শাক্যর এই বই কেন জানি না আমাকে ভীষণ ভাবে আমার বাবা র কাছে নিয়ে যাচ্ছিল। অন্য সব কিছু ছাপিয়ে বাবা র কথা মনে পড়ছিল, মানে সেই বাবা র সঙ্গে বিভিন্ন খণ্ড চিত্র। আমার ছোটবেলার খেলার সাথী দের মধ্যে দুজন ছিল আকবর আর নুরজাহান। দয়া করে কেউ মুঘল সাম্রাজ্যে চলে যাবেন না, এরা দুই ভাইবোন আমাদের পাড়ার ঘুঁটেউলি পিসী র ছেলে মেয়ে, আমাদের সঙ্গে খালি ডাংগুলি খেলতে আসতো, কারন আকবর ছিল যাকে বলে দুর্দান্ত hitter আর নুরজাহান ছিল দারুন catcher. সে যাই হোক, একদিন পাড়া র টম জ্যাঠা এসে আমাদের কয়েকজন এর বাড়িতে বাবা মা কে বলল যে আমরা ঐ সাজাহান (আকবর এবং নুরজাহান এর বাবা, মুরগি বিক্রি করতেন। পাঠক কে আবার অনুরধ মুঘল সাম্রাজ্য কে রেহাই দিন) এর বাড়িতে খাবার খেয়েছি, যেটা নাকি সাঙ্ঘাতিক অন্যায়। সেই প্রথম জেনেছিলাম যে জাত বলে একটা বস্তু আছে আর সেটা আসতে বা যেতে পারে। যাই হোক, এর ফলে কয়েকজনের বাড়ি থেকে ঐ মুঘল সাম্রাজ্যে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল, যদি ও সম্রাট সম্রাজ্ঞী দের সঙ্গে খেলা চলতে লাগলো, কিন্তু আর একটা মজার ব্যাপার হল। আমার বাবা শুধু বললেন …….. কি খেলি রে? হাত ধুয়ে খেয়েছিলি তো ? উত্তর শুনে সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, ঠিক আছে যা। কাজেই আমি ঐ মুঘাল সাম্রাজ্যে মাঝে মাঝেই যেতাম। কিছুদিন পরে জানতে পারলাম যে আমরা বাঙাল বলে নাকি জাত ধর্ম মানি না। অবশ্য কথা টা ঠিক বাঙাল বলে বলা হয় নি, পিঠে কাঁটাতার এর দাগ ইত্যাদি প্রভৃতি বিশেষণ সহযোগে বলা হয়েছিল। আরও একটা শিক্ষা হল। বাবা কে অবশ্য জিজ্ঞাসা করেছিলাম জাত কি আর সেটা মানা না মানায়ে কি এসে যায়ে? উত্তরে বাবা কিনে এনে দিয়েছিলেন রাহুল সাংক্রিত্যায়ন এর বই – “গঙ্গা থেকে ভল্গা”, “জয় জউধেও”। জানলাম বর্ণাশ্রম আর জাতিভেদ প্রথা। বাবা ই ক্লাস সেভেন এর ছেলের হাতে তুলে দিয়েছিলেন সুনীল এর “সেই সময়” যা দেখে অনেকেই তখন অবাক হয়েছিলেন।
    শাক্যর “বাবা কে না পাঠানো চিঠি” পড়তে পড়তে যেন কেমন অবশ লাগছিল। অথচ, এই খণ্ড চিত্র টা বোধহয় আমার ঐ বয়েসের ঘটনা র সঙ্গে সবচেয়ে কম মেলে। কারন, আমার বাবা যদি ও সিপিএম ছিলেন, আমি কখন নকশাল হই নি। কিন্তু ঐ ভোটের দিনের ছবি টা যেন হুবহু কাট কপি পেস্ট। কবে যে নিজে ভোট দিয়ে আঙ্গুলে কালি লাগাব সেই আশা এ দিন গুনতাম। কিন্তু ভোট না, ঐ অংশ টা পড়তে পড়তে যে ঘটনা গুলো পর পর মনে পড়তে লাগলো সেগুলো সব বাবা র co-ordination committee র সক্রিয় সদস্য হিসাবে কাজকর্ম। ’৮০ র দশকের প্রথমে committee র রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠান রবীন্দ্র সরোবর এ। উদ্বোধন করতে এলেন জ্যোতি বসু, সঙ্গে শৈলেন দাসগুপ্ত। উৎপল দত্ত র নাটক, শৈলেন ভট্টাচার্য র গান, সব মিলিয়ে দারুন মজা। বাবা সারাদিন দারুন ব্যস্ত, আমি দেখছি কত লোক এসে বাবার সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছে, কত আলোচনা। সেই বন্ধু বা ভাই দের সঙ্গেই মনোমালিন্য এবং অভিমান হবে পরবর্তী কালে, যার সুত্রপাত এক মিটিং এ যেখানে বাবা বলবেন, অনেক কষ্ট করে, লড়াই করে আমরা অধিকার অর্জন করেছি, কিন্তু অধিকারের সঙ্গে এসেছে দায়িত্বও, সেটা যেন আমরা ভুলে না যাই, কাজে যেন ফাকি না দি। সেখান থেকে মনোমালিন্য এবং বাবার সমস্ত পদ ত্যাগ করে সাধারন সদস্য হিসাবে বাকি দিন গুলো কাটানো। এগুলো বাবা কোনদিন বলেন নি, ওনার মৃত্যুর পরে দেখা করতে আসা কমরেড দের মুখে শুনেছি। তাদের অনেক কিছু প্রশ্ন করতে গিয়ে ও করা হয় নি
    মনে পরে, সেদিন রাত্রি বেলা বাড়ী ফিরতে ফিরতে বাবা কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বাবা কংগ্রেস কি খুব খারাপ? কেন? বাবা ’৭২, জরুরি অবস্থা থেকে সব কিছু বিশদে বলে শেষে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তোমার কি মনে হয় ভাল না খারাপ? বাবা চলে গেছেন ২০০১ এ, ২০১১ দেখা হয়ে ওঠে নি ওনার।
    যে কলেজ এ ভর্তি হলাম সেখানে সব আগুন খেকো বিপ্লবী। কয়েক দিন তাদের কথাবার্তা
    শুনলাম, ভয়ে ভয়ে দু একটা কথা বললাম ও। প্রনব দার ক্যান্টিন এর টেবিল এ ব্রিজ এর দলে প্রবেশাধিকার ও পেলাম। ঐ ক্যান্টিন এর ছাদে একদিন যখন গাঁজা র ধোঁওয়া এ জগত বেশ মায়াময় লাগছে, এরকম সময়ে আমি সিপিএম এর ভুমি সংস্কার নিয়ে কিছু মন্তব্য করলাম। যেন ভোজবাজী র মত হল, মুহূর্তে শিবনেত্র দাদা রা সটান এই ধরাধামে। আমার দিকে চোখ সরু করে তাকিয়ে প্রশ্ন, তুই কি সিপিএম করিস নাকি? আমি ঐ বাবা র সঙ্গে কিছু আলোচনার বাইরে আর কোন রাজনীতি “করি” নি, সিপিএম করা তো অনেক দুরের কথা। কিন্তু “অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী” প্রবাদ কি আর এমনি তৈরি হয়েছে? আমি গেলাম সেই দারুন জ্ঞান ফলাতে, ভুমি সংস্কার নিয়ে দু চার কথা বললাম (তার কয়েক দিন আগে বাবা কে আলোচনা করতে শুনেছি), শ্রোতা দের বড় বড় চোখ দেখে ভাবলাম বেশ ভাল বলছি। কিন্তু শেষ হতে না হতে তাদের হুঙ্কার শুরু হল এবং দশ মিনিটে বুঝিয়ে দেওয়া হল আমি কত বড় পাষণ্ড নরাধম। শাক্য যেমন একদিন হঠাত বিকেলে রাজনীতি তে জড়িয়ে গেছিল আমি সেরকম একদিন হঠাত বিকেলে রাজনীতি থেকে শতহাত দূরে ছিটকে গেলাম। অনেক পড়ে বাবা কে এই কথা বলে উত্তর পেয়েছিলাম, তোর যদি ওদের মতবাদ এর প্রতি সত্যি ভালবাসা থাকতো তাহলে ঐ হুঙ্কার কেন, মেরে ধরে ও তোকে সরান যেত না। এই কথার সুত্র ধরে অনেক পরে বাবা কে প্রশ্ন করেছিলাম, তুমি যাদের সমর্থন কর তাদের মতবাদ বিশ্বাস কর? খানিক্ষন ভাবার পরে উত্তর এসেছিল, প্রায় পুরোটাই তো করি রে, না হলে এতদিন বাঁচলাম কি করে? বাবা র ঐ খানিকক্ষণ চুপ করে থাকার সময় টা যেন দুজনের মাঝখানে শূন্যে ঝুলে ছিল।
    ঠিক এরকম সময়ে আমার সংবিত ফিরল ঘোষণা শুনে, “হামারা বিমান আভি মুম্বাই কে ছত্রাপতি শিভাজি আন্তর্জাতিক হাওয়াই আড্ডা পার উতারনে বালে হাঁয়, বিমান কে উতারনে সে পেহলে কৃপায়া আপনা কুর্সি কি পেটি বান লে ...”। জানলা দিয়ে তাকিয়ে নিচে বানিজ্য রাজধানী দেখতে পেলাম। হঠাত মনে হল, আচ্ছা, আমার মেয়ে যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করে, “তুমি কোন মতবাদ বিশ্বাস কর?’, আমি কি জবাব দেব? কিছু জবাব দিতে পারব কি? অনেক ভেবে ও বের করতে পারলাম না। এবার ও সময় যেন শূন্যে ঝুলে রইল। ভাবনা টা এক জায়েগা এ এসে ছিঁড়ে গেল প্রবল ঝাঁকুনি তে, বিমান এর চাকা মাটি ছুঁল।
    শাক্য র এই বই আমাকে অনেক কিছু মনে করিয়েছে, অনেক কিছু ভাবিয়েছে। কখন নিজের মনেই অল্প হেসেছি, কখনও বুকের নীচ টা একটু ভারী লেগেছে। কিন্তু সেই শূন্যতার অনুভব, পুত্র এবং পিতা হিসাবে – কেমন যেন একটা হঠাত ঠাণ্ডা অনুভুতি, কেমন যেন শীতের রাতে গা থেকে লেপ সরে যাওয়া। ...... বই টা আবার পড়তে হবে।
    '
  • Ranjan Roy | ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ২২:৩৩720983
  • অরুণাভ দে'র পাঠ- প্রতিক্রিয়া খুব ভাল লাগল।
  • robu | 213.132.214.83 | ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ১০:১৫720984
  • দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ না থাকলেও এই উপন্যাস পড়ে তা নির্মাণ করে নেওয়া যেত – বলেছিলেন সম্ভবতঃ ফ্রেড ডি’আগ্যিয়ার, মার্কেজ-এর ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অফ সলিচিউড সম্বন্ধে।
    যদি নব্বইয়ের দশক তার টানাপোড়েন, প্রেম, সান্ধ্য কুয়াশা, গ্যাট চুক্তির শ্যাম্পেন খোলার উল্লাস, বাবরি মসজিদ, হিরো কাপ ফাইনাল, বহুচর্চিত সুমন প্রতুল বোরোলিন বা স্বল্প-চর্চিত ব্যারিটোনিক তরুণ চক্রবর্তী, সোভিয়েত পতন বা বঙ্গে বামপন্থার স্খলন নিয়ে আজ যারা সদ্য বা মধ্য তিরিশ তাদের সারাজীবনের জন্য এলোমেলো শিকড়হীন করে রেখে না দিয়ে যেত, যদি সত্যিই নব্বইয়ের দশক মফঃস্বল শহরে হামারা বাজাজ আর হাতে গোনা দুটো পদ্মিনী প্রিমিয়ার থেকে ঝাঁ চকচকে সেডানে মাত্র এই কয়েক বছরে উত্তীর্ণ না-ও করে দিত, যদি বাংলার মফঃস্বলের নিম্নমধ্যবিত্ত ক্লাস সিক্স এবিসিডি কিশোরকিশোরীদের নব্বই দশক সেই ক-বছরেই টাইমমেশিনে চড়িয়ে যেন পঞ্চাশ বছরের পার না-ই করিয়ে দিত, যার মধ্যে হিরোরা বুড়ো হয়ে যান, মারাদোনা নিয়ে ফ্যালেন ড্রাগ, আজহার ঘুষ আর স্টেফি গ্রাফ অবসর তাহলেও সেই সময়টাকে নির্মাণ করে নেওয়া যেত “অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত” বইটা পড়ে। শাক্যজিতের বই নব্বইয়ের স্পষ্ট দলিল হয়ে থাকবে।
  • পাঠকের প্রতিক্রিয়া | 52.109.175.146 | ১৭ নভেম্বর ২০১৬ ০৯:৫৫720985
  • দেবদূত রায় লিখেছেনঃ

    "আজ সন্ধে থেকে শুরু করে এই সবে শেষ করলাম Sakyajit Bhattacharya এর "অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত"।নব্বই এর দশকের এক অদ্ভুত সাবলীল ডকুমেন্টেশন।অনবদ্য লাগলো।আমরা যারা নব্বই দশকের মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছি(যদিও নব্বই আমার শৈশব থেকে কৈশরের সময়কাল) এই লেখার সঙ্গে এক অদ্ভুত যোগ স্থাপন করতে পারবো। ভালোলাগা,প্রেম,স্বপ্ন,হতাশার মিশ্রণে নব্বই এর সমাজ,রাজনীতি,সংস্কৃতির স্বাক্ষর এই বই।সত্যি ভীষণ ভালোলাগল।"
  • pi | 176.62.53.94 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ ১৪:০৭720986
  • Kaushik Mukherjee : শাক্যজিৎ এর এই বই দেখছি আরো বেশ কিছু সমান্তরাল অসাধারণ স্মৃতিচারণার উদ্রেক করেছে। এই লেখাটা মন ছুঁয়ে গেল। অনুরোধ, 'অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত' বইটির পরবর্তী সংস্করণে বইটির শেষে এরকম কিছু মায়াবী স্মৃতিচারণ জুড়ে দেওয়া যায় কিনা একটু ভেবে দেখবেন।
  • cb | 127.213.187.34 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ ১৫:৩০720987
  • এই বইটা ২ কপি স্যাট করে কোথায় পাই বলুন তো?

    কোলকাতার মধ্যে
  • robu | 176.62.53.94 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ ১৭:৩৭720988
  • সিবির বাড়ি কোথায়?
  • robu | 176.62.53.94 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ ১৭:৪১720989
  • 'অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত' এবং 'আদালত মিডিয়া সমাজ এবং ধনঞ্জয়ের ফাঁসি'--গুরুচণ্ডালির এই দুখানা বই এখন থেকে যাদবপুরে পাওয়া যাচ্ছে, কাফে কবীরাতে।
    একতলায় চা-কফি-
    দোতলায় গেঞ্জি-পাঞ্জাবি-পোস্টার-সিডি-বইপত্তর-ক্যালাইডোস্কোপ-আরও বিবিধ উপস্থিতি।
    যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডের পাশে, চারু মেডিকাল হলের পাশের গলি। আড্ডা দেবার পক্ষে আদর্শ জায়গা।

    আগামী ২৪শে ডিসেম্বর, শনিবার দুপুর 3.30-e যাদবপুরের কাফে কবীরাতে 'অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত' বইটি নিয়ে এক আড্ডাচক্র বসবে। সেই সাথে আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হবে গুরুচণ্ডালি থেকে প্রকাশিত বিপুল দাসের নতুন বই 'কামান বেবি'র। সকলে চলে আসুন।
    @ Cafe Kabira, যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডের পাশেই।

    'অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত"--বইটি রুবানশপে চলে এসেছে যেখান থেকে অনলাইন কেনা যাবে। এছাড়া কলেজস্ট্রিট ডট নেট থেকেও অনলাইন কেনা যাচ্ছে।
    আর বই চলে এসেছে ধ্যানবিন্দুতে, রাসবিহারীতে কল্যাণদার বুক স্টলে, যাদবপুর ইউনিভার্সিটির মেইন গেটের সামনে মাণিকদার বুক স্টলে এবং যাদবপুর কফি হাউসের নিচের বই-এর দোকানে।
    দেজ এবং দে বুক স্টোরেও পাওয়া যাচ্ছে।
  • pi | 176.62.53.94 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ ২০:৩৮720991
  • হ্যাঁ, রোবু তো বলেই দিয়েছে।

    সিবি, পারলে ২৪, কাফে কবীরায় চলে আসুন না ! নব্বইয়ের কথকতাও চলবে ঐদিন।
  • পাঠকের প্রতিক্রিয়া | 176.62.53.94 | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ১০:০৯720992
  • তথাগত দাশমজুমদার লিখেছেনঃ

    "অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত পড়ছিলাম। কবে ডেলিভারি পেয়েছি আর অফিসের ব্যাগের কোনায় রেখে দিয়ে ভুলে গেছি। আজ অফিসের ব্যাগ পরিষ্কার করতে গিয়ে পেয়ে গেলাম আর পড়ে ফেললাম। ঘটনাটা বেশ সিম্বলিক কারন বইটার মেজাজও যে তাই।

    বইটায় পুরোই দক্ষিণ কলকাতা, উত্তর কলকাতা প্রায় নেই ই। তবে সেসব সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে কিন্তু বইটা সত্যিই ওই ধূলো ঝাড়তে ঝাড়তে হঠাৎ খুঁজে পাওয়া প্রিয় বইএর মতন অনেক পুরোন স্মৃতি ফিরিয়ে দেয়। আনন্দমেলা, মুনমুন সেন, লাল পতাকা, এককালের নকশাল বাবার শুধু ভূমিসংস্কারের কারনে সিপিএমকে ভোট দেওয়া থেকে ক্রমে তৃণমূল হয়ে ওঠা (এটা যদিও বইএ নেই), দূরদর্শনের ঝিমঝিমে সন্ধ্যার হঠাৎই সুপারহিট মুকাবিলায় সোচ্চার হয়ে ওঠা এসবেরই ক্যালিডোস্কোপ। চেনা মাঠে যেখানে ফুটবল খেলতাম, বল পড়ে গেলে তুলে আনতাম যে খালে ঝাঁপ মেরে, সেই খালে আজ কোটি টাকার ফ্ল্যাটের ছায়া। পুরোন খাটটার তলায় জমিয়ে রাখা বাঁধানো আনন্দমেলা থেকে প্রথম খেঁচা, যেখানে পর্নের দরকার হয়নি, অরণ্যদেবের বউই রসদ যুগিয়েছে, সেইসব ছেলেমানুষী স্মৃতি। লাল শালুতে মোড়া স্টল থেকে কেনা ফুচিকের ফাঁসীর মঞ্চ থেকে শুরু করে নিম্নবর্গের মানুষের ধীরে ধীরে তৃণমূল হয়ে ওঠা এইসব নিয়েই আমার নব্বই আবার শাক্যরও।

    প্রেডিক্টেবল? অবশ্যই, কিন্তু এ তো নব্বইতে কলকাতায় বেড়ে ওঠা নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অধিকাংশ ছেলেরই গল্প তাই তাতে খুব একটা কিছু এসে যায়না।

    ও হ্যাঁ নব্বইএর শুরু কিন্তু আশির শেষ থেকে আর নব্বইএর শেষ নব্বইএর মাঝামাঝি পেরিয়ে।"
  • cb | 127.213.187.34 | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ১০:৪০720993
  • ধন্যবাদ ধন্যবাদ, আমার বাড়ি খিদিরপুরে। রাসবিহারীতে বেটার হবে।

    কল্যাণদার বুকস্টলটা কিভাবে খুঁজে পাব?

    ২৪ তারিখ অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে :-)
  • কল্লোল | 176.62.53.94 | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ২২:১৭720994
  • সিবি। আপনি যদি চেতলার দিক থেকে আসেন তো রাসবিহারী মোড়ে এসে উত্তর-পূর্ব কোনে মেট্রোর দরোজার কাছে যে কোন দোকানে বইএর স্টলের খোঁজ করলেই হবে।

    ২৪এ এলে দেখা হবে।
  • cb | 176.62.53.94 | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ১৪:০৬720995
  • ওহ কল্লোলদা আসছেন। আমি তো বাজে ফেঁসে গেছি এদিকে। ৩ ৩০ থেকে কতক্ষণ চলবে জানি না। একটু দেরি হলে ভাল হত। আশা ছাড়ি নি
  • কল্লোল | 116.216.189.119 | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ২২:২৮720996
  • দরুন একটা আড্ডা হলো। শিবংশু আর সঞ্জয় যাদু বাস্তবতা আর ৯০ নিয়ে বললে। মন ভরে গেল। শিবাংশু যেভাবে মহাভারতের আখ্যান শুরুর প্রসঙ্গ টেনে আমাদের যাদু বাস্তবতার কথা পাড়লো, তা অনেক ভাবনার খোরাক যোগায়।
    সঞ্জয় ৯০ প্রসঙ্গে আমাদের কল্পনার সংকোচন আর সাহিত্যে ফিল্মের প্রভাব নিয়ে চমৎকার একটা আলোচনা বিছিয়ে দিলেন। ৯০এর বদলে যাওয়া সময়কে, বিশেষ করে উদারীকরণের পরের সময়কে যেভাবে সিনেমার ডিজলভের সাথে তুলনা করলেন তা অনবদ্য।
    আমিও খানিক বকবক করেছি। হ্যাঁ, অনেকদিন পর গান গেয়ে বেশ আনন্দ হলো। এমন মননশীল শ্রোতাদের গান শোনাতে পারলে ভীষণ স্ফুর্তি হয়।
  • রোবু | 55.123.162.247 | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ২৩:১৯720997
  • কারুর সাথেই ভাল করে আলাপ করা হল না, শাক্যজিতের সাথে ছাড়া।
  • রৌহিন | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:১১720998
  • কেন আমার সাথে হল যে রোবু?
  • রোবু | 55.123.162.247 | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৫১720999
  • খুবই অল্প হল। পরে ভাল করে হবে।
  • ভিডিও | 23.17.125.9 | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ১২:২০721000
  • ২৪শে ডিসেম্বর কাফে কবিরাতে বইটি নিয়ে সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, শিবাংশু দে, কল্লোল দাশগুপ্ত, অমর মিত্রদের কিছু কথাবার্তার ভিডিও

  • পাঠকের প্রতিক্রিয়া | 233.223.143.253 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ২২:২৪721002
  • মিঠুন ভৌমিক লিখেছেন ঃ

    শাক্যজিতের লেখা গুরুচন্ডালির ব্লগে যখন প্রথম আসে, তখন থেকেই পড়ছি। "শোক ও শস্যের ওয়াগন", "বাবাকে না পাঠানো চিঠি" মনে আছে। প্রথম শাক্যর লেখা পড়ার সময় খুব স্বস্তি পেয়েছিলাম একটা কথা ভেবে, যে আমার না লেখা কথাগুলোর কিছু কিছু লেখা হয়ে যাচ্ছে। ক্রমশই বিস্মৃতি ও ব্যস্ততা যেভাবে মানুষকে গ্রাস করছে তাতে কাজ কমে গেলে স্বস্তিই লাগে। ঐ পরিচিত মাঠঘাট আর পরিচয় অপরিচয়ের মাঝে হারিয়ে ঝুলে থাকা সময়কে কিভাবে ছোঁয়া হচ্ছে জানার আগ্রহ ছিলো। “কিভাবে” কথাটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ, আর তাই এই প্রতিক্রিয়া।

    তবে তার আগে কয়েকটি কথা, সাধারণভাবে বইটির আকৃতি-প্রকৃতি নিয়ে। প্রথমতঃ প্রচ্ছদ একেবারেই হতাশ করেছে। যে মায়াবী, প্রায়-কবিতার মত গদ্য শাক্যজিতের সম্পদ, তার পক্ষে বড্ড বেশি সাধারণ সাদা-কালো টিভির আঙ্গিক। ব্যাক কভারের টেক্সট প্রচন্ড খুদে অক্ষরে লেখা, প্রায় অপাঠ্য। কাগজ ও ছাপার ফন্ট ভালো। লেখাগুলির মধ্যে, আগেই বলেছি, কয়েকটি (সবকটাই?) পূর্ব প্রকাশিত। সেগুলোর প্রকাশের তারিখ দেওয়া নেই, ফলে লেখাগুলো কিভাবে সাজানো হয়েছে তার কোন হদিশ পাওয়া যায়না, যা লেখকের ভাবনার ক্রনোলজি হিসেবে খুবই দামি হতে পারতো পাঠকের জন্য। সময়কে ধরাছোঁয়াই যে বইয়ের উদ্দেশ্য সেখানে এই তথ্য কাজে লাগবে। অমিতাভ মালাকারের ভূমিকার প্রথমাংশ অপ্রাসঙ্গিক লাগলো, তবে সে আমার সীমাবদ্ধতাও হতে পারে।

    এবার মূল লেখায় ফিরি। "শুধু মায়া রহিয়া গেল" শুরু হয় অনবদ্য ভঙ্গীতে, চমৎকার ইমেজারি ফুটে উঠতে শুরু করে। এরপর যে সমস্ত ছায়াময় দৃশ্যকল্প ক্রমাগত আসবে তার অনেকগুলিই আমার পরিচিত। কুয়াশাজড়ানো গঙ্গার ধার, শ্মশ্মাণ, টালিনালা ও তার পাশের দখলিয়া কলোনির গল্পগুলো যথাযথ পাই। তবে যত লেখা এগোতে থাকে ততই ক্রমশ দেখতে পাই সামগ্রিকভাবে আমাদের দেখার মধ্যে মিল অমিল দুইই আছে, এবং তা স্বাভাবিক। শাক্যর আট থেকে আঠেরো হওয়ার নব্বই আমার কাছে তেরো থেকে তেইশ হওয়ার সময়, কাজে কাজেই অমিল থাকা স্বাভাবিক। যে বেফিকর, তেজি কৈশোরের আখ্যান শাক্যজিৎ লিখেছে, তা আমাদের সময়ে অনাগত ছিলো।

    সময় তো মানুষের কৈশোর-যৌবনে সবথেকে বেশি চাপ ফ্যালে, তাই পড়তে পড়তে মনে হয়েছে যে হাঁ-করা কৈশোর আমাদের কারো কারো সিগনেচার, এখানে তার কথা হচ্ছেনা। যে ক্যাবলামি আর বোকা ভয়ে মাখামাখি আনস্মার্ট সময়ে আমি বড়ো হয়েছি, সে সময় পাল্টে গেছে। শাক্যর সময়ের শিশু ও কিশোরেরা অনেক বেশি চৌকস। ম্যাডক্স স্কোয়ার, শরীরবোধ, রাজনীতি এইসব স্বাভাবিকতায় যখন ফিরছে শহর, সেই সময়ের কথা। চন্দ্রবিন্দুর এলোমেলো রঙ ও মেতে ওঠা উজ্জ্বল ক্যানভাস, এ সেই সময়ের গল্প। আদিগঙ্গায় বয়ে যাওয়া লাশ তখন খানিকটা প্রক্ষিপ্ত লাগে, সুমনের মত। প্রেম, হাসি আর আড্ডার কার্নিভাল, কবিতা রাগ ও দুঃখের কার্নিভাল, আন্দোলনের কার্নিভাল - সে সময়। আমার মনে পড়লো বিষন্ন বিগত যে সময়কে ছোঁব বলে পাতা উল্টেছি, সেটা অন্য। যা আসলে অবক্ষয় ও শাসনের ঘেরাটোপে ঢাকা বঙ্গজীবনের দমবন্ধকর সময়। শাক্যদের নব্বইতেও নিয়মের শাসন ছিলো, কিন্তু খোলা হাওয়ায় তার নখদাঁতের ধার অনেক কমে গেছে।যদিও ছাত্র পড়ানোর জন্য শাক্যদের নব্বইকেও আমার চেনা লাগে। খুবই আন্তরিক, যথাযথ ও উপাদেয় লাগে সে বর্ণনা। কারণ হাজার হোক একদিন তো আশির কৈশোর বিষন্নতার ডানা ঝাড়বে, সাপখোপের ভয় কাটিবে ক্রমশ।

    "বাবাকে না পাঠানো চিঠি" আমার খুবই প্রিয় লেখা। অরাজনৈতিক মানুষ তো আসলেই কেউ নেই, হয়না বলে আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু রাজনীতির রকমফের আছে। বোধশক্তির রকমফের। ভাবনার অভ্যাসের রকমফের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অনেক তফাৎ হয়। বাপ-মা থেকে সন্তান সন্ততি ক্রমাগত রাজনৈতিক বোধে ডাইভার্জ করতে থাকে, তারপর একসময় ফিরে তাকিয়ে আমরা বলি অমুক অরাজনৈতিক ছিলো। এখনকার মত তখনও, সক্রিয় রাজনীতি যাঁরা করেছেন তাঁরা দুই রকম। এলিট ও নন-এলিট। আশি-নব্বইয়ের বামপন্থী আন্দোলনের মানুষের এলিটিজম খালি চোখে দেখা যেত না, তবে সেটা এতই দিনের আলোর মত স্পষ্ট ছিলো যে তার থেকে নিস্তারও ছিলোনা। আমি মূলত সেই এলিটিজমের কথা বলছি যা পান্ডিত্য থেকে আসে। তাই শাক্যর এই লেখাটা খুবই দরকারি দলিল, অনেকের গল্প একজোটে বলা হয়ে গেল যেন।

    নব্বইয়ের মিডিয়া ও তার পরিবর্তন নিয়ে লেখা(গুলো) খুব একটা দাগ কাটলোনা। বরং "হারবার্ট সরকার যেখানে গেলেও যেতে পারতো" অনবদ্য। ঐ মায়াময় গদ্য ভিন্ন ঐ সময়ের ছবি আঁকা যায়না। চরিত্ররা খুবই জীবন্ত লাগে, খ্যাপাটে, বিষন্ন, দুঃস্থ ও সর্বোপরি পরাজিত। "ঘামের জলে নৌকো চলে.." আগে পড়েছিলাম, আবারো পড়লাম, বেশ ভালো। যদিও ঐ ল্যান্ডস্কেপ আমার কাছে অচেনা। চেনা মাঠঘাটপুকুর বুজিয়ে প্রোমোটিং এর সমস্যাটি আমাদের দক্ষিণ শহরতলির ব্যস্ততম এলাকায় আসলে ঘরোয়া। আমরা স্ট্যান্ড অ্যালোন শব্দজোড়া শুনিনি তখনও।

    "পান্ডুলিপি পোড়ে না" আগুনে বইমেলার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলো একদা। এই লেখাটা প্রথম যখন পড়ি, সাত আট বছরের খুব কষ্ট করে বই পড়ার সময়টা মনে পড়েছিলো সেদিন। আশাকরি ঐ ডিভান দীর্ঘজীবি হবে, এবং আরো বহুদিন শাক্যকে দিয়ে লেখালেখি করিয়ে নেবে।
  • পাঠকের প্রতিক্রিয়া | 233.223.143.253 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ২২:২৬721003
  • অভীক সরকার লিখেছেন ঃ

    শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের প্রতি খোলা চিঠি ★★★

    প্রিয় শাক্যজিৎ,

    আমার বই পড়ার একটা ক্রম আছে। আপাতত আজ আমার লিস্টে ছিল বৌদ্ধধর্ম নিয়ে একটি বই, এবং তার সঙ্গে সৈকত মুখার্জির একটি শিশুপাঠ্য গল্পসংকলন। তবুও অফিসে যাবার সময় যখন বইমেলা থেকে কিনে আনা বইয়ের ভিড় ঘাঁটতে গিয়ে আপনার লেখা "অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত " হাতে উঠে এলো, তখন কোনও অজ্ঞাত কারণে ভাবলাম এই চটি বইটিই আজকে পড়া যাক। এবার থেকে বইপড়াও নিয়তিনির্দিষ্ট কিনা, এই সংশয় আমাকে সবসময় ঘিরে থাকবে।

    আখ্যানের বিষয়বস্তু এবং সময়কাল থেকে ধারণা হওয়া অসম্ভব নয় যে বোধহয় আমরা দুইজন সমবয়সী। এবং আশ্চর্যজনক ভাবে দুজনেরই বড় হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতটি হুবহু এক। বেহালার বদলে হাওড়া শিবপুর, ব্যস এটুকুই যা তফাৎ। এছাড়া পারিবারিক ও আর্থসামাজিক স্থিতি, বড় হওয়ার অনিবার্য অনুষঙ্গ এবং নব্বইয়ে দাঁড়িয়ে বদলে যাওয়ার লক্ষণগুলিকে চিনে নেওয়া, কি আশ্চর্য সমাপতন।

    রাজনৈতিক বিশ্বাস, যা বিশেষ সময়ে বিশেষ পরিবেশে জন্মানোর জন্য আমাদের মধ্যে গ্রথিত হয়ে যায়, একমাত্র তার ব্যবধান টুকু বাদ দিলে, আমি স্বচ্ছন্দে একে নিজের ছোটবেলার গল্প বলে চালিয়ে দিতে পারি। আপনি যখন বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার পেছনে অবিমৃষ্যকারী ম্যানেজমেন্ট আর শক্তিশালী ইউনিয়ন না থাকাকেই কারণ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন, সেখানে আমি শাসকগোষ্ঠী পোষিত সিটু ইউনিয়নের গুণ্ডামিকে এর একমাত্র কারণ বলে মনে করি। আপনাকে বন্ধ কারখানা দেখতে কোথাও যেতে হয়, আমার বাড়ির বাউণ্ডারি ওয়ালের ওধারেই গেস্টকিন উইলিয়ামস, যার বিশাল এলাকাটা সন্ধ্যের পর থেকেই অন্ধকারের স্কন্ধকাটার মতন গোঙাতে থাকে। শ্রমিকদের বাবারা আত্মহত্যা করেন, আর ইউনিয়ন লিডারের ছেলে ক্যাপিটেশন ফি দিয়ে ব্যাঙ্গালোরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যায়!

    এটুকু বাদ দিলে, সত্যি বলছি, প্রথম বাক্যটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো প্রাত্যহিকী ক্লান্তি থেকে যেন অতীতের নির্বাণশূন্যতায় ঝাঁপ দিলাম। যত দিন যায়, স্মৃতির ছবিতে সিপিয়া রঙের টোন আরও গাঢ় হয়ে আসে। কে না জানে, মধ্যাহ্নের সূর্যেরও কখনও সকালের ছায়ার জন্যে বড় মন কেমন করে! সেই কালিমন্দির, নিম্নমধ্যবিত্ত পাড়ার মন খারাপ করা বিকেল, সাহাদের পুকুরপাড়, শীতের দুপুরে বাবাদের তাসের আড্ডা, রেললাইনের ধারের পাগলিটা, সমরকাকুর সিগারেটের দোকান, 'রাবাড্ডিউস' বলে ক্রিকেট, স্টেডিয়ামে গিয়ে ফুটবল, সবই কেমন হঠাৎ আসা ঢেউয়ের মতন বুকে আছড়ে পড়লো। বাবরি মসজিদ ভাঙার পর একসপ্তাহের ছুটি, সারা পাড়া জুড়ে গণআড্ডা এবং সেই সুযোগে পাড়ায় নতুন আসা ভাড়াটেদের বড় মেয়েটিকে দেখে কানে গলায় জ্বরজ্বর অনুভব করা ( পরে যখন জানতে পারি সে আমার থেকে তিনবছরের বড়, আহা, টানা তিনটে দিন 'নীলাঞ্জনা' গেয়ে গোপনে চোখের জল মুছেছি !), প্রথম পানু দেখা ( এবং তখন আমার মুখচোখের চেহারা দেখে পার্টনার ইন ক্রাইম পিসতুতো ভাইয়ের সুচিন্তিত উক্তি, "তোর বোধহয় একটা বাটি লাগবে"!), ছিয়ানব্বইয়ের ওয়ার্ল্ড কাপের সেই অভিশপ্ত সেমিফাইনাল ( ভারত বনাম অরভিন্দ ডি সিলভা), কি নির্মম মাখনমেদুরতায় আপনি আমার মগজের কোষপেটিকা খুলে তুলে এনেছেন এইসব স্মৃতিমাণিক্য, সে আপনি নিজেই জানেন না।

    যে সততার সঙ্গে আপনি নিজের প্রথম হস্তমৈথুনের অভিজ্ঞতা বর্ননা করেছেন, তার জন্যে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। আমাদের ছোটবেলার আধো যৌনতার অবদমিত প্রকাশের মেটাফর হিসেবে আপনি যেভাবে নব্বইয়ের বলিউড ললনাদের ক্লিভেজ ও দেহবল্লরীর প্রসংগ এনেছেন, তা অসামান্য। আহা, প্রথমবার যখন মাধুরীর 'ধক ধক করনে লাগা ' দেখেছিলাম, তার সঙ্গে কোথায় লাগে সানি লিওনের বেবি ডল? সতের বছর বয়সে খাওয়া প্রথম চুমু, তীব্র শরীরী চুমু, তাও আবার বোনের পনের বছর বয়সী সহপাঠিনীকে, সেই দ্বিধাথরথর অমৃতমুহূর্তটি কি আর কখনও ফিরে পাবো? প্রথম দেখা পুরীর সমুদ্রের ঢেউ কি আর কখনও তার পায়ের কাছে আছড়ে পড়ে?

    তবে আমার মতে এই বইয়ের সেরা অংশ হলো 'বাবাকে না পাঠানো চিঠি' এবং 'পাণ্ডুলিপি পোড়ে না'। আমি যেহেতু গ্র‍্যাজুয়েশনের সময় থেকেই কলকাতার সাহিত্যবৃত্তের অনেক বাইরে, তাই যাঁদের নাম করেছেন, তাঁদের অনেককেই পড়ে ওঠা হয়নি। সেই সময়টা আমি খুব মন নিয়ে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি, আর চাকরি করার প্রিপারেশন নিচ্ছি। এছাড়া দারিদ্র্যের অতলে তলিয়ে যেতে বসা পরিবারটিকে বাঁচাবার আর কোনও উপায় ছিল না। তবে আপনার দুটি অংশ পড়ে আমার এক প্রিয় বান্ধবীর কথা মনে পড়ে গেলো, যার দাদা প্রেসিডেন্সিতে পড়াকালীন সাংঘাতিক রকমের নকশাল ছিল, এবং তাকেই আর্মিতে চাকরি পাওয়ার পর তিনবছর বাদেই বলতে শুনেছি, "বালের ছাত্র আন্দোলন, হুকুম পেলে শুয়োরের বাচ্চাদের আধ ঘন্টায় ঠাণ্ডা করে দিতে পারি"!

    আজ যখন ফেসবুকে বগলে বিপ্লবের ডিও মারা কয়েকটি বিপ্লবস্রাবকে দেখতে পাই, শুধু সেই দাদার কথা মনে পড়ে। নব্বই শুধু মাঠঘাটের বামপন্থীদের মৃত্যুদশকই নয়, পাউডার পমেটম মাখা, সাউথ সিটিতে ফ্ল্যাট ওয়ালা ঘৃতব্রত মার্কা বামপন্থীদের জন্মদশকও বটে! বিড়ি থেকে সিগারেটে উত্তরণেরও কি অমোঘ রাজনৈতিক তাৎপর্য! ধন্যবাদ শাক্যজিৎ, এই নির্মম স্বীকারোক্তিটার জন্য।

    শত্রুদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কঠিন, আরও কঠিন বন্ধুদের বিচ্যুতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। ওতে শুধু সাহস নয়, বিবেক আর শিরদাঁড়াও লাগে।

    আমাদের সমস্ত মায়াভরা বিকেল, সমস্ত অপাপবিদ্ধ যৌনতা, সমস্ত বিজ্ঞাপনের প্রলোভন, আসন্নআগত নতুন শতকের চোখ ঝলসানি ঔজ্জ্বল্য, সমস্ত অসহায়তা, সমস্ত মুনমুন সেনেরা সবাই মিলে বেঁচে থাক আমাদের নব্বই, আধেক লাজুক আধেক নিলাজ নব্বই, বড় হওয়ার প্রথম আলোকসিঁড়ি নব্বই, প্রায় ভুলে আসা আশ্চর্য এক মায়াবী সময় নব্বই, আমাদের বুকের আধখানা নিয়ে স্মৃতির ভিয়েন বসানো মনকেমন করা অলোকসামান্য নব্বই!

    আমাদের নব্বই।
  • Ankur Chakraborty | ০৯ আগস্ট ২০১৭ ০৮:৪০721004
  • অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত : লেখকের নব্বই,আমার নব্বই

    -অঙ্কুর চক্রবর্তী
    ***
    গুরুর গ্রূপে গুরু ও চন্ডালদের আলোচনা উপভোগ করছি আজ প্রায় অর্ধেক যুগ ধরে। সেই ২০১১ এ ফেসবুকের নিয়মিত পোস্টদাতা হিসেবে এই গ্রূপে ঢুকলাম,তারপর থেকে বিনোদন,বিতর্ক সবেতেই জড়িয়ে পড়লাম।

    এরকমই একদিন হঠাৎ ঈপ্সিতাদি'র পোস্ট দেখে জানতে পারলাম একটা বইয়ের ব্যাপারে। উদ্ভট নাম হলেও যে কথাগুলো আমার বা নব্বইয়ের ছানাপোনাদের সাথে সুপরিচিত: "অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত"
    নাম আর সেই চিরপরিচিত hazy কাঠের বাক্স-টিভির ছবি দেখেই বইটার প্রতি কিনে পড়বার একটা অদম্য বাসনা,আর বইমেলায় গিয়ে টুক করে কিনে ফেলা।
    পড়তে বসেই বুঝলাম যে শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য্য উস্কে দিচ্ছেন নব্বইয়ের সেরা স্মৃতি গুলো।

    যদিও আমি নিজে জীবনের চার থেকে তেরো বছর কাটিয়েছি নব্বইয়ের দশকে,কিন্তু distant memory আমার বরাবরই খুউব sharp,তাই নব্বই আজও দুহাজারের দশকের থেকে বেশি কাছের।
    নব্বই মানেই এখনো সেই শচীনের মহাতারকা হয়ে ওঠা, সেই রোমারিও, জিদান,সেই ক্রিকেটারদের নিয়ে বিগ ফান বা সেন্টার ফ্রেশ চুইং গামের কার্ড জমানো। নব্বই মানেই বাবরি মসজিদ বিতর্কের মধ্যে হঠাৎই নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠ পাড়া ছেড়ে সংখ্যালঘু পাড়ায় আগমন। নব্বই মানেই "মুখ্যমন্ত্রী",জ্যোতি,বসু কথা তিনটি মিলেমিশে এক হয়ে যাওয়া, নব্বই মানেই বাটা দশী দেশের নস্ট্যালজিয়া।

    সেই নস্ট্যালজিয়া কে উস্কে দিলেন লেখক। যদিও শাক্য-বাবু দক্ষিণ কলকাতা আর আমি born and brought up in দমদম,তবুও কলকাতার উত্তর ও দক্ষিণ এর ছেলেবেলা দুটো কিভাবে জীব মিলেমিশে এক হয়ে গেল।

    তখনও কলকাতার পাড়া culture বদলায়নি। লেখক সেই এক থাকার সুযোগ নিয়ে মিলিয়ে যেতে লাগলেন একের পর এক স্মৃতির রঙ। সেই rubber deuce, কাঠের তক্তা দিয়ে বানানো bat,বিকেলে দুরদর্শনের পসেনজিত এর সিনেমা,superhit মুকাবিলা, তলাশ, তেহকিকাত, উত্তম retrospective
    যদিও শিল্পা শেঠীর যৌবন বোঝার বয়স হতে হতেই আমার নব্বই বিদায় নেয়,তবে দুহাজারের করিনার যৌবনসুধা পান করার মত বোধ হওয়ার বীজ নব্বইতেই বোনা হয়েছিল। ঠিক যেমনভাবে নকশাল প্রভাব মিলিয়ে যায়নি নব্বইতেও,তেমনি নব্বইয়ের প্রভাব বোধহয় আজও আমাদের প্রজন্ম বোধ করে। অভাবও সম্ভবত।

    এই mixture এ হঠাৎ এসে এক হয়ে গেল টারজান আর রেখাদি। নব্বইয়ের গোড়ায় যখন বাবরি কান্ড,আমার তখন বাঙ্গুর বয়েজ স্কুলে যাওয়া শুরু। নব্বইয়ের দ্বিতীয়ার্ধে লেখক যখন রাজনীতি বুঝছেন,তখন আমি টাইটান কাপ ফাইনালে বা নিরানব্বই বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে হ্যান্সি ক্রোনিয়ের দলের হার দেখে অঝোরে কাঁদছি।

    বেহালা,ঢাকুরিয়া lake বা triangular park এর নব্বই যদিও যুগীপাড়া রোড বা কৈখালীর নব্বইয়ের থেকে আলাদা,তবুও রেডিও থেকে পাড়ার মাইকে নচিকেতা,অঞ্জন,সুমন চাটুজ্জের গান উঠে আসা আলাদা নয়।

    যদিও জীবনে কোন রাজনৈতিক ঝান্ডা হাতে নিইনি বা স্কুল,কলেজ বা পাড়ার পার্টি অফিসের কোন দলের হয়েও মাঠে নামিনি,তবুও নব্বইয়ের লাল রঙ এর তার যে দুটো shade স্পষ্ট হয়ে ওঠে বইতে,সেটা তখনও আন্দাজ করতে পারতাম,আজও পারি।

    লেখক টিনকাল পেরিয়ে যৌবনে ঢুকলে আমরা পা দিচ্ছি টিনকালের দোরগোড়ায়। মুনমুন সেনের কিংবদন্তী "পানু" না চিনলেও,শরীর জাগার উপলব্ধির সময়কাল হয়তো সেই নব্বইয়ের শেষ বছর।
    কিন্তু,কোথায় যেন এতক্ষন ঠিক মিলছিল না, শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য্য মিলিয়ে দিলেন waterberries compound এর ad jingle দিয়ে। সেই প্রতীক চৌধুরীর "পাগলা হওয়া আয় রে আয়" আর সেই সাদাকালো টিভিতে দেখা দেওয়ালে হেলান দেওয়া সাইকেলটা পড়ে যাওয়া যেন আজও চোখে অমলিন। নব্বইয়ের স্মৃতিমেদুরতা এসে ধরা দিল টেলি সিরিয়ালের হাত ধরে। কোথায় যেন "কানামাছি"র অরুণ ব্যানার্জি আর "তেরো পার্বনের" সব্যসাচী চক্রবর্তী এসে দাঁড়ান মনের এক কোণে। সঙ্গে ছিল "আবার যখের ধন"এর পীযুষ গাঙ্গুলি বা "ব্যোমকেশ বক্সী"র রজিত কাপুর। নব্বই শেষলগ্নে এনে দাঁড় করালো "জননী" সুপ্রিয়া দেবী থেকে "মোহিনী" লাবনী সরকারকে

    ঠিকই,নব্বইয়ের দশক ছিল আমাদের প্রস্তুতিপর্ব।
    হারবার্ট সরকার কে চিনলাম যদিও কলেজ জীবনে,মধ্য দুহাজারে, কিন্তু "ঘাটের কাছে গল্প বলে নদীর জল" সেই নব্বইয়ের সমুদ্রেই মিশে যায়। মিশে যায় লকাউট হওয়া কারখানা,রেললাইনের ধারের বস্তি।

    লেখকের যে magic place আজ হয়তো হারিয়ে গেছে,আমি সযত্নে তুলে রেখেছি। শেষপাতার ছবির সেই A থেকে Z লেখা ছবি দেওয়া eraser, সেই আনন্দমেলা,সেই খেলা বা চোলি কে পিছে বিতর্ক তৈরি করে বন্ধ হয়ে যাওয়া টেলিভিশন পত্রিকা। সঙ্গে মিলেমিশে আছে তিনটাকা দামের হি-ম্যান, বা আনন্দমেলা থেকে আলাদা আলাদা করে কেটে জুড়ে বানানো টিনটিন কমিক্স।

    সব মিলিয়ে "অনুষ্ঠান প্রচারে..." বিঘ্ন তো ঘটালোই না,বরং ৭৮ নম্বর পাতায় পৌঁছে মনে হল,এই অনুষ্ঠান আর একটু চলল না কেন? বইও থামল,নব্বইও থামল।
    কেবল চলছে স্মৃতি রোমন্থন।
  • h | 194.185.177.155 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৯:১২721005
  • ভাষাবন্ধনে প্রকাশিত শাক্যর বই য়ের রিভিউ।

    অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত
    শাক্যজিত ভট্টাচার্য্য
    প্রকাশক - গুরুচন্ডালি, কলকাতা
    ঈণ-৯৭৮-৮১-৯৩২০২৪-৮-৭
    অক্টোবর ২০১৬
    মূল্য - ৬০ টাকা

    শহরের মধ্যে থেকে যাওয়া গঞ্জ-মফস্বল, মফস্বল মানেই সকরুন প্রতিভা, শহরে এসে বিপন্ন গ্রাম-অথবা গঞ্জ,শহর থেকে পালাতে চাওয়া গ্রাম, শহর মানেই মোহিনীমায়ায় বিপন্ন মানবচরিত্র, আগ্রাসী শহরের কবলে পরিবেশ তথা গ্রাম্য সাধারণ স্বনির্ভর নির্মল গ্রাম-অভ্যাস-প্রথা-সংস্কার-জ্ঞান-গ্রামীন সম্পর্ক, যেখানে লোকে কেবলই বাঁশী বাজায়-- এ মানে আমাদের দেশের জনমানসে প্রায় স্থায়ী কয়েকটি চিত্র। অতীত অর্থাৎ সারল্য, অতীত অর্থাৎ নীতিনিষ্ঠ বিশ্বাস নির্ভর মঙ্গল-কাব্য, বর্তমান বা বিশেষতঃ অদূর নাগরিক অতীত মানে চালিয়াতির সঙ্গে বোঝাপড়ার গদ্য, অথবা সৌখীন দুর্বোধ্য আধুনিক কবিতা।
    যে ভাবে আধুনিকতা এসেছে সাম্রাজ্যবাদের হাত ধরে, যে ভাবে অসাম্য-র ভুগোল তৈরী হয়েছে স্বাধীনতার পরেও, কলোনিয়াল শহরগুলোতে, তাতে হয়তো এই পরিণতি খুব একটা অস্বাভাবিকও না। আমাদের সংস্কৃতির অনেকটা জুড়ে শহর প্রায় ভিলেন অথবা আশ্চর্য্য উচ্চাশার বাগদাদ, ভোগে নিমজ্জিত, প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগে অভ্যস্ত। যেখানে প্রতিষ্ঠা কিংবা যশের জন্য কান্ডজ্ঞানহীন এবং নিরবচ্ছিন্ন যাত্রার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অপরদিকে শহরের দিক থেকে দেখা গ্রামও হয়তো একধরণের অতি সরলীকৃত মানব সমাজ, এক ধরণের অপরাধ বোধ, বিচ্ছিন্নতার ধারণার সঙ্গে যা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। কিন্তু শুধু সময়ের বৈশিষ্ট্যকে ধরতে চেয়েই লেখালিখিটা বলতেই হয় আপাতত পেশাদারী ঐতিহাসিক দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কারণ সংস্কৃতি হয় সমাজ কে নিয়ে নয় রাজনীতিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, সময়ের জন্য তার সময় কম। অথচ শিবনাথ শাস্ত্রী কিংবা হুতোমের কিংবা গালিবের ঐতিহ্য যে দেশে রয়েছে সেখানে এটা হওয়ার কথা না। দেশভাগের আগে-পরের স্মৃতিচারণ কে পেরিয়ে একটু ইচ্ছে করেই পিছিয়ে গেলাম, কারণ দেশভাগ সংক্রান্ত লেখালিখি, যেখানে স্মৃতি ই মূল বিষয়, সেখানে ফেলে আসা সময়ের চিহ্ন হিসেবে নগর বা নাগরিকতা একটু দুর্লভ। বুদ্ধদেব বসুর ঢাকাও বলতেই হচ্ছে মফস্বল মাত্র।
    অবশ্য দিল্লী ব্যতিক্র্ম। কারণ অন্য বড় ব্রিটিশদের তৈরী শহরগুলোর তুলনায় তার পুরোদস্তুর নাগরিক ইতিহাস দীর্ঘতর। কিন্তু আধুনিক রোমের তলায় যেমন শোনা যায় প্রায় নাকি ছটা আস্ত শহরের স্তর আছে বিভিন্ন সময়ের, আমাদের শহর গুলোও প্রৌঢ়ত্ত্বে না পৌছলেও একেবারে কচি নেই, তারও নানা পরত হয়েছে। তাদের প্রতিটি বদলই নানা ভাঁজে নানা ফাটলে বিদ্যমান। সাহিত্যে সবটা -শহর বা শহরের সবটুকু এসেছে কিনা তাই নিয়ে যে বিতর্ক সে বিষয় নিয়ে নবারুণ ভট্টাচার্য্য প্রতিষ্ঠিত পত্রিকাতে নতুন করে অযথা কন্ডুয়ন করার কোনও অর্থ হয়না। সে বিতর্ক চলছে, কিন্তু স্মৃতিচারনে এই সমস্যা তীব্রতর। একটা আস্ত দেশ কে শুধু স্মৃতি দিয়ে রক্ষা করার মত ভয়ানক পরিস্থিতি হয়ত এখনকার প্রজন্মে বা প্যালেস্তাইন ছাড়া আর কোথাও আসেনি, আবার স্মৃতিবিভ্রমের মহামারিতে আক্রান্ত হওয়ার আগে পারিবারিক ভূতেদের বাসস্থান খুঁজে দেওয়ার জন্য একটা আস্ত কল্পিত শহর বসিয়ে নিয়ে ছোট কলোনী শহরের নতুন ইতিহাস রচনার পরিসরও থাকে না। তাছাড়া নব্বই দশকে বসে সত্তর দশকের শোনা গল্প এবং আগের প্রজন্মের স্মৃতিচারণার মধ্যেকার স্মৃতি বিষয়্টা নানা ভাবে গোলমেলে। শান্তিকালে লিখিত বিপ্লব-বিক্ষোভকালীন স্মৃতি সবসময়েই কিছুটা প্রতিযোগিতামুলক।, তবে এমন স্মৃতিচারণ একটু দূর্লভ যেখানে লেখক নাগরিক ঘটনাক্রম শুধু না, নিজের ভাষ্যটিকেও লেখক স্মৃতিতে আসা আস্ত জগতের প্রতিটি মানুষ প্রতিটি কণার সংগে পরিসর ভাগ করে নিতে আগ্রহী। দেখায় ফাঁকি পড়তে দেয় না সময় নিজেই, তবে বলার ফাঁকি থেকে নিজেকে রক্ষা করা খুব সোজা না। প্রতিষ্ঠিত স্মৃতিচারণ রীতি অতিক্রম করার কাজে বিমুখ হলে চলে না। শহর জুড়ে বিশেষতঃ মানব বৈচিত্র বিস্মৃতির যা ঢল নেমেছে, তাতে অন্তত নথি না হোক বিলাপ-রচনা জরুরী।
    ঐতিহাসিক মার্ক ব্লখ তাঁর ইতিহাস রচনাপদ্ধতিতে একটা অদ্ভুত জিনিস শুরু করেন। মহাফেজখানার কিম্বা গীর্জার নথি, পূর্ব লিখিত ইতিহাস ইত্যাদির বাইরেও নানা সূত্র খোঁজা আরম্ভ করেন। দক্ষিন এবং উত্তর ফ্রান্সের সংস্কৃতির জনজীবনের পার্থক্য খুঁজে পান তাদের চাষের পদ্ধতির ভিন্নতায়। বন্ধ হওয়া বা বিক্রি হয়ে যাওয়া কারখানার কাহিনীও একটা সময়ের সাক্ষী হতেই পারে। মীনা মেনন এবং নীরা আদকরকার, মুম্বাই শহরের বন্ধ হওয়া কটন মিল বা অন্যান্য উৎপাদন শিল্প গুলিকে কেন্দ্র করে মানজীবনের স্মৃতি নিয়ে, যা এখন সবটাই শপিং মল বা ফ্ল্যাটবাড়িতে পরিণত, অসাধারণ কাজ করেছেন নতুন শতাব্দীর গোড়ার দিকে। আশীর দশকের শেষ দিক থেকেই দুর্গাপুর আসানসোল অঞ্চলের জনজীবন, বিশেষতঃ উৎপাদন শিল্পের দুরবস্থা শুরু হওয়ার পরের জীবন নিয়ে ঠিক ইতিহাস না হলেও, গল্প উপন্যাস লিখছেন অসীম চট্টরাজ, নানা বিস্তারে এসেছে শিল্পাঞ্চল প্রসঙ্গ।
    আলোচ্য বইতে শাক্যজিৎ দক্ষিন পশ্চিম কলকাতায় শৈশব কৈশোর সম্পর্কে স্মৃতি চারণ করেছেন। নতুন ধরণের নগর পরিকল্পনা, নতুন ভাবে শহরগুলোকে শুধু উচ্চাশার ভাষ্কর্য্য করে তোলার যে প্রক্রিয়া চালু হয়েছে, সেটা যে শুধু আমাদের ভাষার একেবারে হালের সংস্কৃতিতে নতুন এক ধরণের স্মৃতিকাতরতার জন্ম দিয়েছে তা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শিল্পবিপ্লবের সময়ে গড়ে ওঠা অথচ এখন বিধ্বস্ত ইউরোপীয় বা ব্রিটিশ শহর বহু বহু নতুন রচনার বিষয়। লন্ডন অলিম্পিকের সময়ে যা ভাঙা পড়ছিল বা যা ঢাকা পড়ছিল সে বিষয়ে অসামান্য প্রবন্ধ লিখেছেন ইয়ান সিনক্লেয়ার, লন্ডনে পরিত্যক্ত কারখানা র স্থাপত্য কাজে লাগিয়ে আকাশছোঁয়া আরামের ফ্ল্যাট বানানো নিয়ে তীর্যক লেখা লিখেছেন উইল সেল্ফ। এই সব আধুনিক সময়ের লেখালেখিতে নিজেকে কিছুটা হারিয়ে ফেলার বোধ অনেকক্ষেত্রেই তৈরী হচ্ছে।
    প্রতিষ্ঠিত বা আন্তর্জাতিক বিখ্যাত লেখক দের পাশে বাংলায় প্রকাশিত নতুন প্রকাশনীর নতুন লেখকের নাম আসায় অনেকেই আস্চর্য্য হবেন। কিন্তু পাঠক হিসেবে বিষয়ের ও অভিজ্ঞতার নৈকট্যটাই একটা সময়ের ছাপ, এবং সে কারণেই তুলনীয় উল্লেখে কোন অন্যায় দেখি না। এটা বোঝা দরকার সারা পৃথিবী জুড়েই অনেক শহরেই সংকটের কারণ বিচিত্র বা নানা সময়ে সংঘটিত হলেও, তার সাদৃশ্য এক বিশেষ ধরণের প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিচ্ছে, যার সঙ্গে শিল্প বিপ্লবের শুরুর দিককার রোমান্টিক প্রতিক্রিয়ার বা গ্রাম কেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতির উদগাতাদের একটু কিছু পার্থক্য আছে। এই প্রতিক্রিয়া আধুনিকতা বা নাগরিকতা বিরোধী না, নগরকে মূলত সামাজিক অবস্থান ব্যতিরেকে আরেকটু সহনীয় করে তোলার পক্ষে।
    বইটির ব্লার্বের প্রথম লাইনটি এরকম - 'কেমন ছিল ভুলে যাওয়া নব্বইয়ের দশক?' লাইনটি পড়ে মনে হয়, ইন্টারনেটে বাংলা পড়ায় স্বচ্ছন্দ প্রধাণত তরুণ পাঠক পাঠিকাদের কাছে পৌছতে চাইছে বইটি, অন্তত প্রকাশকদের পক্ষ থেকে। মানে নব্বই দশককে এখনই ভোলা কঠিন, একেবারেই সেদিনের ব্যাপার। তবে তারচেয়ে বড় সমস্যা হল, ইতিহাসের এই দশক ভাগ, এতে ব্যক্তিগত ভাবে আমি খুব ভরসা রাখতে পারি না। গণমাধ্যমের কোন অংশের লোকেরা, ফ্যাশন ডিজাইনাররা, নাকি সঙ্গীত সমালোচকরা নাকি চিত্র সাংবাদিকরা - ঠিক কাদের হাতে বিংশ শতককে দশকের ভাগে দেখা শুরু হয়েছে আমার ঠিক জানা নেই তবে বিপদটা হল দশকের বৈশিষ্ট খুঁজতে গিয়ে এক ধরণের মুহূর্ত-সন্ধানে ব্যস্ত থাকার প্রবণতা দেখা যায়, তাতে পাঠক হিসেবে আমি খুব স্বচ্ছন্দ নই। এই বইয়ের মধ্যে এই সমস্যা একটা আছে। নথি বা পূর্বলিখিত ইতিহাসই শুধু না, সামাজিক ইতিহাস এবং সমস্ত ধরণের পর্যবেক্ষনকেই সূত্র হিসেবে ব্যবহার করার যে নিষ্ঠা লেখক দেখাচ্ছেন, সেই রচনাদর্শের সঙ্গে নাটকীয় মুহুর্ত সন্ধান প্রক্রিয়ার হয়তো একটা বিরোধ থেকে গেছে।
    তবু ভাগ্যক্রমে নানা মানুষের সঙ্গে জীবনটি জড়িয়ে থাকার যে স্মৃতি তার উল্লেখ কখনো-ই থামেনি, থামেনি প্রতিটি মানবজীবনের সম্ভাবনার সম্পর্কে ঔপন্যাসিকের চোখের মত স্বপ্ন সন্ধান, সে রিফিউজি দের বসানো কালীবাড়ির পুরোহিতই হোক , ফুটপাথবাসীই হোক, হিন্দীভাষী কিশোরী প্রতিবেশি হোক, মুসলমান বাম রাজনৈতিক কর্মীর জীবনের নানা গতিপ্রকৃতি হোক বা তার একটি ঘটনায় কুখ্যাত হওয়া ভাই হোক।
    একটা নাতিদীর্ঘ বই, স্মৃতিচারণই লিখিত উদ্দেশ্য, কিন্তু, বই পত্রের প্রতি নির্লজ্জ প্রেমে সম্পূর্ণ টইটম্বুর, জীবন-স্মৃতিকে পাঠের স্মৃতিতে থেকে আলাদা না করার একটা কিশোর সুলভ অনমনীয়তা, যার মূলে রয়েছে সময়ের সাক্ষী খুঁজে পাওয়ার একটা তাগিদ। প্রতিটি অধ্যায়ই একেকটি সমসাময়িক বিশিষ্ট রচিত সাহিত্য বা সাংস্কৃতিক জগতে সময়ের চিহ্ন নিয়ে আসা শব্দবন্ধ থেকে তৈরী। এ মানে একেবারে একটা ভাল বইয়ের দোকান সম্পর্কে একটা এক মিনিটের তথ্যচিত্রের পদ্ধতি। স্বল্প পঠিত বই, হারিয়ে যাওয়া, গুরুত্ত্ব না পাওয়া ছোটো পত্রিকার প্রতিভাবান লেখক জন্য একটা প্রায় অন্ধ ভালোবাসায় ভরা একটা আলাদা অধ্যায়ই রয়েছে বইটিতে।
    সেন্ট অগাস্টিনের কনফেসনই বলুন, জয়েসের অল্পবয়সী আর্টিস্টের পোর্ট্রেট ই বলুন বা রডি ডয়েল এর প্যাডি ক্লার্ক হা হা হা নামক বইটাই বলুন, কেরুয়াক, পল অস্টার যাই বলুন পস্চিমের স্মৃতিরচনা পদ্ধতিতে যৌনতাবোধ এর উন্মেষ, অভ্যাস ও তৎসংক্রান্ত অবসাদ সব কিছুই খুব বেশি পরিমাণে এসেছে। তো শাক্যজিতের লেখাতেও সেটা আছে। আত্মরতির বর্ণনাকে একটা সময়ে বলা হত সাহিত্যের শেষ ট্যাবু,। তো ক্লান্তি, একাকীত্ত্ব, অবসাদ, যৌনতার উন্মেষ অনেক ধরণের একাকী মুহুর্তে আত্মরতির বর্ণনা বাংলা লেখাতেও প্রায়ই আসে, সততার দিক থেকে সকলে সমান সফল নন । তবে এই লেখাটিতে এর সঙ্গে সমসাময়িক সিনেমার পত্রিকার প্রসঙ্গ এসেছে। এবং দূরদর্শন প্রসঙ্গে নব্বই দশকে ইলেকট্রোনিক মিডিয়ার চমকপ্রদ বিস্ফোরণের ঠিক আগে গণমাধ্যম বলতে কি বোঝা যেত সেটা বোঝার একটা চেষ্টা রয়েছে।

    বাংলা বা ভারতের বাম রাজনীতির স্মৃতিচারণ প্রসঙ্গে এটুকু বলতে পারি, বাম আদর্শ ও কর্মসূচী বা সংগঠন পরিচালনা সম্পর্কে যাঁরা মনে করেন যে ত্রিশ চল্লিশের দশকে বিশুদ্ধ আদর্শ ছিল , সাম্রায্যবাদীদের তাড়িয়ে সাম্য প্রতিষ্ঠার লড়াইতে অংশগ্রহণের ইচ্ছা ছিল, পঞ্চাশের দশকে সেটাই পরিণত হয় রাষ্ট্রের সঙ্গে সুবিধাগ্রহণের সম্পৃক্তিতে, তার প্রতিক্রিয়াতেই এবং চীন-সোভিয়েত সংঘর্ষের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসেবে কমিউনিস্ট পার্টিও দু-দুবার ভাগ হয় ষাট দশকে, তার পরে সত্তর দশকীয় বিপ্লব স্বপ্ন যা এতটাই বিশুদ্ধ যে তাতে ভ্রাতৃহত্যা অপরাধ না, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মুখে বাম ঐক্য গড়ে তুলতে না পারার ব্যর্থতা কোনও ব্যর্থতা না, বিশুদ্ধতা চর্চার অবশ্যম্ভাবী ফল মাত্র, তার পরে একদিকে শুধুই হতাশা, আরেকদিকে নির্বাচিত রাজ্য সরকার হিসেবে ক্রমশ পাঁকে নিমজ্জিত হওয়ার শুরু এবং সোভিয়েত পতনের পরে বামপন্থার শবযাত্রা ছাড়া বিশেষ কিছুই আর নব্বইয়ের দশকে পড়ে ছিল না-- এই ভাবে যাঁরা ইতিহাস দেখেন, আমি তাঁদের সমর্থন করতে পারি না। আমার মনে হয় না প্রচুর স্মৃতিচারণ সত্ত্বেও নানা সমস্যায় প্রকৃত পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনার কাজ এখনো হয়েছে। এমনকি মতাদর্শের ইতিহাসও কোন একটা সময়ে বিশুদ্ধতার শূচিবায়ুগ্রস্ততা থেকে মুক্ত হবে আশা করি। এটা খুব পরিষ্কার করে বোঝা দরকার যে ভাবনার বিশুদ্ধতা কখনোই অন্তত নাগরিক ইতিহাসের মূল আধার হতে পারে না, ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকা জীবন ও ভাবনার বৈচিত্রই নগরের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।

    তাই এইসব প্রসঙ্গ আসা নব্বই দশক সংক্রান্ত লিখিত স্মৃতিচারণায় আলাদা উত্তেজনা আমার খুব একটা নেই, তদুপরি শৈশব কৈশোর কলকাতার বাইরে থাকায় আমি শহুরে শৈশব, কৈশোর সম্পর্কে ঠিক অবহিত নই। কলকাতা কেন্দ্রিক স্মৃতি-সংস্কৃতিচর্চার সবটা আমার অধিকারে পড়ে না। তবে এটুকু বলতে পারি স্মৃতিচারণে একটা ভয়ানক প্রতিযোগিতা চলে। বিশেষ করে রাজনীতি প্রসঙ্গে, স্মৃতির বিভিন্নতাও সীমাহীন।

    বইটিতে এসব প্রসঙ্গ এসেছে ঠিকই কিন্তু কখনোই নতুন নতুন পরিবর্তনে যারা উচ্ছিষ্ট হল, তাদের সঙ্গে ইতিহাস ভাগ করে নেওয়ার ইচ্ছের ঊর্ধে উঠে আসেনি। সর্বোপরি হারিয়ে যাওয়া, স্বল্প পঠিত, প্রতিভার বিচারে যথেষ্ট সম্মান না পাওয়া লেখকদের প্রতি একটা শ্রদ্ধা দিয়েই বইটি সাজানো হয়েছে। ভাষাবন্ধনের বই প্রেমী পাঠক পাঠিকাদের ভালো লাগার কথা। ব্যক্তিগত ভাবে আমি পাঠক মাত্র। আমার কোনও ধারণা নেই, কি ভাবে তীব্র অর্থসংকটের মধ্যে নতুন প্রকাশনা গুলি চলে। তবে বই পত্র ভালোবাসেন যাঁরা তাঁদের কাছে নতুন লেখকরা জীবনদায়ী পথ্যের মত। এই কাজ যেন থেমে না যায়, এ ছাড়া কি আর আশা করতে পারি।

    বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
  • pi | 7845.29.9008912.171 | ২১ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:০৮721006
  • "দুই দশক, দুই সময়। মাতাল ঝড়ের পর অপার নিস্তব্ধতা। বীরেন চাটুজ্যের আগুনে কবিতার সিঁড়ি বেয়ে সুমনের গান। শান দেওয়া কাস্তের ধার কমতে থাকা, কমতে দ্যাখা.. ভুলতে চাওয়া সত্তর, ভুলে যাওয়া নব্বই। দুই দশক, দুই সময়.... গোরা নকশাল, অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত।

    -কল্লোল লাহিড়ী ও শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য, দুই লেখকের সঙ্গে ফেলে আসা দিনগুলোর চারণে মৈনাক সেনগুপ্ত..

    ২৩শে নভেম্বর, শুক্রবার সন্ধ্যেয়
    আরশির আড্ডা জমজমাট !

    এলে ভালো লাগবেই ..."

    আরশি,18 জনক রোড, কোলকাতা 29 (লেক মলের পাশের রাস্তা)

    লিখেছেন Anasuya Gupta
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন