এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সে | 198.155.168.109 | ১৫ জুন ২০১৬ ১৯:৩৪708140
  • এর আগে "বাপসোহাগী" নামে একটা টই খুলেছিল ঈশানীদি। সেখানে কেবল বাবাদের গল্প। মায়েদের জন্য এইটে খুললাম।
  • Ishani | 116.51.29.210 | ১৬ জুন ২০১৬ ০১:৪০708141
  • "সে" যখন নতুন টই খুললই, তখন প্রথম লেখাটা না হয় আমিই দিয়ে যাই |

    পূর্ণ বৃত্ত
    ..................

    এক মা ছিল | কিন্তু জন্ম থেকেই তো সে মা ছিল না | সে ছিল মেয়ে | অদ্ভুত যত বায়না ! ট্রামের টিকিট জমানোর নেশা | দুনিয়ার লোকের কাছে হাত পেতে ঘ্যানঘ্যান , "আমাকে দাও |" তখন টিকিটগুলো ছিল ভারী মজার | সাদা, লাল , গোলাপী , নীল আর সবুজ | একটু বড় মাপের | সে জমিয়ে রাখত | ছোট ছোট ভাগে | এক এক ভাগ এক এক রঙের | কালো বা লাল গার্টার দিয়ে বাঁধা | রোজ খোলে, রোজ গোনে | আর বেরোলেই ট্রামে চড়তে চায় | এমনকি অচেনা লোকের সঙ্গে ভাব জমে গেলে তার টিকিটও চেয়ে নেয় | তারপর বাড়ি বদল | সেখানে ট্রামলাইন নেই | শুধু বাস | বাসের টিকিট কে জমাবে ! ধ্যুত ! একবাক্স ট্রামের টিকিট প্রথমে কিছুদিন বুকের কাছে ; তারপর জায়গা পেল হাবিজাবি জিনিসের বাক্সে |
    শুরু হল রংচঙে কাচের কাগজচাপা জমানো | সে তো আর ট্রামের টিকিট নয় যে রোজ কয়েকটা জুটবে ! কয়েকদিন একটানা নাকে কাঁদলে একটা জোটে ! ভারী ; রাখতেও জায়গা লাগে | তবে যা চোখ জুড়োনো নকশা , আহা ! ভেতরে লাল নীল সবুজ হলুদ ফুল পাতা , কখনও নীল নীল জল জল | মা বকে খুব | জঞ্জাল ! ডজন চারেক জমানোর পর ক্ষান্তি দিল সে | এত ভারী পুঁটলি ..টানাই যায় না খুদে খুদে হাতে |
    এরপর পুতুল জমানো | সে এক নির্লজ্জ ব্যাপার ! কেউ একবার যদি জিজ্ঞেস করে , "তোর জন্য কী আনব ?” পাগলা খাবি ? না আঁচাব কোথায় ! সে মেয়ে পুতুলের ফরমাশ করেই থামে না ...আলমারিতে ঠেলেঠুলে জায়গা করে হাসিহাসি মুখে বলে, "ক'টা আনবে গো ? মাত্তর একটা ?"
    পুতুলের আলমারির চাবি ভুলেও হাতছাড়া করে না সে | অন্য কোনও বাচ্চা বেড়াতে এসে খেলতে চাইলে মায়ের লাল চোখ অগ্রাহ্য করে ঠোঁট উল্টে বলে , "খুঁজে পাচ্ছি না ! কোথায় যে ফেললাম !" মার , বকুনি ..কিছুতেই কিছু হবার নয় ! জন্ম -হিংসুটি !
    এর ওর তার আনুকূল্যে পুতুলের সংসারে নিত্য শ্রীবৃদ্ধি | | একটাই দোষ , এত্তগুলো মেয়ে..কিছুতেই বিয়ে দেবে না | শ্বশুরবাড়ি পাঠাবে না | ওই যে , বিয়ে দিলেই সংখ্যায় কমবে | গোঁজ হয়ে বলে, "ওদের ছেড়ে থাকতে পারব না | ঘরজামাই ভালো আমার |" ছেলে পুতুলদের বাপ মা-দের আবার প্রেস্টিজ খুব ! ছেলে বিক্রি করতে রাজি নয় | ফলে এ ঘরে পাল পাল অরক্ষণীয়া !
    বাড়িতে সবাই বকাবকি করে | জায়গা কই এত ? কে শোনে কার কথা ! পাঁচ সিকের প্লাস্টিকের মেয়ে পুতুল আর পঞ্চাশ টাকার বিলিতি মেম পুতুল দু’জনে একই ঝিনুক বাটিতে ভাগাভাগি করে দুধ খায় |
    মেয়েটি বড় হয় | তবে পুতুলের নেশা রয়েই যায় |
    বিয়ে হয়ে যায় তার | পুতুলেরা এখন তার নিজস্ব সংসারে |
    মেয়েটি যখন সন্তানসম্ভবা ..দু'বারই তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল , " ছেলে চাও , না মেয়ে ?"
    সে লাজুক মুখে বলেছিল , "ছেলেই ভালো "|
    " ও মা কেন ?"
    ছোটবেলার কথা মনে পড়েছিল তার | সেই হিংসুটিবেলার কথা |
    " তাহলে আর বিয়ে দিয়ে অন্য বাড়ি পাঠাতে হয় না ! "
    ' শুধু এইজন্যই ?"
    " না.. মানে ..তাহলে তো ব্যাট বল হুড়ুম দুড়ুম | আমার পুতুলগুলো চাইবে না |"
    ঈশ্বর অলক্ষ্যে মুচকি হেসেছিলেন , "তবে তাই হোক ! "
    দু'টিই ছেলে | মেয়েটি মা | কিছুটা ভদ্র সভ্য | বায়্নাবাটি কম | এখন বাচ্চাদের বায়নার সময় না ? ছি : !
    ছেলেরা বড় হয়ে গেছে | এতটাই বড় যে মাকে পুতুল কিনে দেয় এখন তারাই | দরকার হলে বাবার সঙ্গে ঝগড়া করেও | কোথাও বেড়াতে গেলে | নিজেদের জমানো টাকা থেকে | নিজেদের শখ না মিটিয়েও | এখন নেশা কম | ওই একটু ঝিরঝিরে জলের মতো ইচ্ছের চোরা স্রোত |
    একদিন খাটের তলা থেকে একটা পীচবোর্ডের বাক্স বেরোলো | বড় জন সবে চাকরিতে তখন | স্বাধীন জীবন তার | ছুটিতে এসেছে | আরও একটা কারণ , ছোট ভাই বাইরে চলে যাবে পড়তে ..একটিবার দেখা করা |
    বাক্সতে কী আছে কে জানে ! এই তো ! কয়েকটা কাচের কাগজচাপা , আধছেঁড়া ট্রামের টিকিটের বান্ডিল , দুটো চোখের মণি ঠিকরে বেরিয়ে আসা ছেঁড়া ফ্রক পরা নোংরা পুতুল , একগোছা পায়রার পালক | অবিশ্যি দুটো ময়ূরের পালক আর গুটি কয় ফ্যাকাশে সবুজ টিয়াপাখির পালকও আছে |
    বড়জন বলল , " মায়ের সেই প্যান্ডোরা'জ বক্স ! মা, এবার বিদেয় কর এটা | আর শোনো , সামনে তোমার জন্মদিন | একটা আই প্যাড দেব তোমাকে | লেটেস্ট মডেল | খবরদার , বাবা বললেও কিন্তু বদলাবদলি করবে না | বাবারটা পুরনো | ধুস , যা না..এটা ফেলে দিয়ে আয় (এটা ছোট ভাইকে )|"
    মেয়েটি , মানে ছেলে দু’টির মা মিনমিন করে বলল , "ও আমি ফেলে দেব'খন | তোরা আর হাত লাগাস না |"
    ছোট জন একদৃষ্টে তাকিয়েছিল তার মায়ের দিকে |
    কেটে গেছে ছ'মাস | আই প্যাড ! সেও তো এক খেলনাই ! দু’জনেই বাইরে থাকে | স্কাইপে আর টেলিফোনে ভাব ভালোবাসা |
    একদিন ছোট জন বলল , " মা ,ছুটিতে আসছি | তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে |"
    কী সারপ্রাইজ , কে জানে | মা তো এখন বড় ! হামলে পড়ে জানতে চাইলে লোকে হ্যাংলা ভাববে | হোক না কেন নিজের ছেলে !
    ছোট জন ফিরেছে | ছুটিতে | মা ছোঁকছোঁক করছে | কৌতূহলে মরে যাচ্ছে | উফ , সুটকেসটা কেন যে ছাই খোলে না !
    দুটো প্যাকেট | একটা একটু বড় | ভেতরে কোট প্যান্ট পরা ভালুকছানা | মিটমিটে গুল্লিগুল্লি চোখ আর ব্লেজারের পকেটে ইউনিভার্সিটির নাম লেখা | আর একটা ছোট্ট লম্বা বাক্স | ভেতরে একরাশ ধবধবে পায়রার পালক |
    ইউনিভার্সিটিতে অনেক অনেক বকমবকম পায়রা |
    মা তখন দু'চোখে দু'টো ছবি দেখছিল | একটিতে এক খুকি | হাজরা পার্কের পাশের রাস্তায় | লাল ফ্রক | উবু হয়ে বসে খুঁটে খুঁটে পায়রার পালক তুলছে | আর অন্য চোখে একটি ছেলে | আঠেরো বছর বয়স | ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের রাস্তায় ঝুঁকে পড়ে পালক কুড়োচ্ছে | একমনে | তার জ্যাকেটে কুচি কুচি হলুদ পাতা , কপালে লেপ্টে আছে রেশমকালো চুল |
    আসলে দু'চোখ স্পষ্ট করে কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না | ঝাপসা চোখে কি আর স্পষ্ট ছবি দেখা যায় ?
  • সে | 198.155.168.109 | ১৬ জুন ২০১৬ ০২:২৪708142
  • দারুণ!
  • ranjan roy | 132.162.161.160 | ১৬ জুন ২০১৬ ১২:০২708143
  • খানিকক্ষণ চুপ করে বসে আছি।
    রাত্তিরে মেয়েদের পড়ে শোনাব।
  • de | 24.139.119.172 | ১৬ জুন ২০১৬ ১২:৪৭708144
  • উঃ - ঈশানী - গলার কাছটা ব্যথা ব্যথা, কি করে কাজ করি!!
    খুউব সুন্দর!
  • | 213.99.211.81 | ১৬ জুন ২০১৬ ১২:৫২708145
  • ইয়ে মানে গার্গেল করতে পারো। খুব কাজে দেয় ঃ))
  • Titir | 138.210.106.129 | ১৬ জুন ২০১৬ ২০:২৩708146
  • কি যে মায়া দিয়ে লেখো তুমি। সব লেখাই অনন্য হয়ে ওঠে।
    তোমার নীল আকাশ এমন উজ্বল হয়ে থাকুক আর ঝুলি ভরে উঠুক পুতুলপ্রাপ্তিতে।
  • Bratin | 37.63.175.161 | ১৬ জুন ২০১৬ ২০:৫৬708147
  • ঈশানী দি/ দে ফচকেমো করার জন্যে সরি।

    ঈশানী দি তোমার লেখা নিয়ে আর কী বলবো। শুধু পড়ি আর মুগ্ধ হই। আর মাঝে মাঝে চুপ করে ভাবি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন